#হারানো_হিয়া (পর্ব ১৫)
১.
সকাল বেলা সাধারণত মাহিন চেম্বারে বসে না। বিকেল থেকে রাত অবধি রোগী দেখে। কিন্তু আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই চেম্বারে চলে এসেছে। নাফিসা নাকি ময়মনসিংহ আসছে। কী যেন জরুরি কথা আছে ওর সঙ্গে।
ভাবনার এই পর্যায়ে চেম্বারের দরজায় টোকা পড়ে। মাহিন উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে নাফিসা দাঁড়িয়ে আছে। চোখেমুখে রাত জাগার ক্লান্তি।
‘ভেতরে এসো’, মাহিন নরম গলায় বলে।
নাফিসা চেম্বারে ঢুকে চেয়ারে বসে। মাহিন নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বলে, ‘নাস্তা আনাই?’
নাফিসা মুখ খোলে, ‘আমি নাস্তা করে এসেছি। চা দিতে বলো কাউকে।’
মাহিন এবার বাইরে বেরিয়ে কাউকে চা আনতে বলে। নাফিসা পুরো চেম্বারে চোখ বোলায়। সুন্দর করে চেম্বার সাজিয়েছে মাহিন। দেখতে দেখতে এককোণে রাখা ছোট্ট একটা মেয়ের ছবির দিকে চোখ পড়তেই ও তাকিয়ে থাকে। মাহিনের মেয়ে ন্যান্সি?
মাহিন ফিরতেই ও জিজ্ঞাসু গলায় বলে, ‘তোমার মেয়ে বুঝি? খুব সুন্দর হয়েছে দেখতে।’
মাহিন মৃদু হেসে বলে, ‘হ্যাঁ, ওর জন্যই বেঁচে থাকা। আচ্ছা, এবার বলো তো এমন হুট করে একা চলে এলে যে? বাসায় কেউ কিছু মনে করবে না তো?’
নাফিসা স্থির চোখে তাকায়, ‘ব্যাপারটা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে কেউ কিছু মনে করল কি করল না তাতে কিছুই যায় আসে না। গতকালের আগেরদিন তুমি যখন মীরা আসার কথা বললে তখুনি মনে হয়েছে আমার আসা দরকার।’
মাহিন মাথা নেড়ে বলে, ‘মীরাকে আমি সব খুলে বলেছি। তোমাকে বিয়ে করলে যে ওর কপাল খুলে যাবে সেটাও। কিন্তু বোকা মেয়েটা কিছুতেই রাজি হলো না। বলল, ও কিছুতেই সুমনের সংসার ভেঙে যেতে দেবে না। ভাবো? মানুষ এমন বোকা হয়।’
এরপর মীরার কথাগুলো খুলে বলতেই নাফিসা স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে থাকে। মীরা এমনটা বলেছে? হঠাৎ করেই একটা অনুশোচনা ঘিরে ধরে ওকে। মিছেমিছি এই অসহায় মেয়েটাকে নিয়ে সুমনকে কত কত কথা শুনিয়েছে।
নাফিসা গম্ভীরমুখে বলে, ‘হ্যাঁ, সবাই তোমার মতো এত লাভ ক্ষতি হিসেব করে জীবন চালায় না। এসবের বাইরে মানবিক মূল্যবোধ বলে একটা কথা আছে। সেটা অনেকের কাছেই ভীষণ দামী। আমার কাছেও। আমি তোমাকে আজ এই কথাটাই বলতে এসেছিলাম। তুমি আমাকে যে লোভ দেখিয়েছিলে সেটা একটা লেনদেনের মতো। এই কটা দিন আমি ভেবেছি। তুমি আমার দিকটা ভেবেই দেখোনি। আমার দুটো বাচ্চা আছে। তুমি ওদের বাবাহারা করার পাঁয়তারা করেছিলে। আচ্ছা, তোমার কাছ থেকে তোমার মেয়ে ন্যান্সিকে কেউ আলাদা করতে চাইলে তুমি কি মেনে নিতে?’
মাহিন মাথা নাড়ে, ‘নাহ, মেনে নিতাম না।’
নাফিসা হেসে বলে, ‘তুমি সারাজীবন এমন স্বার্থপর রয়ে গেলে। যখন যেভাবে তোমার ভালো হয় সেভাবেই ভেবে গেলে। কিন্তু কাছের যারা আছে তাদের কথা ভাবলে না। মীরা ঠিক বলেছে। তোমার সঙ্গে আমার একটা সময় ভালো লাগা ছিল। তারপর আমরা দুজনেই নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ একটা সময় কাটিয়েছি। ধীরে ধীরে আমাদের শিকড় বিস্তৃত হয়েছে। এখন ইচ্ছে করলেই সেই শিকড় উপড়ে ফেলা যায় না। তাতে গাছটাই মরে যাবে। তাই আজকে আমি তোমাকে মীরার মতো এটাই বলতে এসেছি জীবন আমাকে একটা সুযোগ দিলেও আমি আমার সংসার ছেড়ে তোমার কাছে ফিরে আসতে চাই না। তুমি মীরাকে বিয়ে করো, তাতে তুমি সুখী হবে।’
মাহিন চেয়ে থাকে। ধীরে ধীরে ওর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এর মধ্যে চা আসে। মাহিন যত্ন করে কাপটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নিজেও নেয়। নাফিসা চায়ের কাপ ধরে চুপ করে বসে থাকে।
মাহিন চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে, ‘তোমার কথাগুলো শুনে সত্যিই শান্তি পেলাম। মীরাও ঠিক এই কথাটা বলেছে। আমি শুধু নিজের লাভটুকু দেখছিলাম। কিন্তু কাল রাতে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যে এখন আমিও তোমাদের মতোই বলতে চাচ্ছি আমার আর কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না।’
নাফিসা চমকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘কী হয়েছে মাহিন?’
মাহিন লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে, ‘কাল রাতে ন্যান্সি ফোন করেছিল। কান্না করে বলল, পাপা তুমি এখুনি চলে আসো। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? ও যা বলল তাতে আমি স্তম্ভিত।’
নাফিসা চিন্তিত গলায় বলে, ‘কী হয়েছে? ওর মা আরেকটা বিয়ে করে ফেলেছে আর সেখানে ওকে নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে?’
মাহিন মাথা নাড়ে, ‘উহু। তূর্ণা অসুস্থ। কী অসুখ জিজ্ঞেস করতেই তূর্ণা স্ক্রিনে এসে হাউমাউ করে কাঁদল। বলল ব্রেস্ট ক্যান্সার, প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। বার বার করে ক্ষমা চাইল। বলল, আমার সঙ্গে অন্যায়ের কারণেই নাকি ওর এমন মরণব্যাধি হয়েছে। আমি যেন ক্ষমা করে দেই। আর ন্যান্সিকে যেন নিজের কাছে নিয়ে রাখি। তাই আমাকে আমেরিকা ফিরে যেতে হচ্ছে। এই অবস্থায় তুমি ফিরে আসতে চাইলেও আমি গ্রহণ করতে পারতাম না। তুমি, মীরা – দুজনেই ঠিক বলেছ। সংসারে জড়িয়ে পড়ার পর তার আনাচেকানাচে এত এত মায়ার উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে যে চাইলেই তাকে অগ্রাহ্য করা যায় না৷ আমাদের ফেলে আসা ভালোবাসা সেই পুরনো সময়েই ছবি হয়ে বন্দী হয়ে থাকে। তাতে মাঝে মাঝে বাতাস এসে দুলিয়ে দিয়ে যায় কিন্তু কখনই সেই বন্দী ছবি মুক্তি পায় না। নাফিসা, আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ, মীরার কাছেও। যাবার আগে ওনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। তোমরা ভালো থেকো।’
নাফিসা অবাক বিস্ময়ে ওর কথাগুলো শুনছিল। কী বিচিত্র এই জীবন। কত কত ঘটনা ঘটে। মাহিন আবার ওর প্রিয় পরিবারের কাছে ফিরে যাচ্ছে। যেখানে দিন শেষে সবাই ফিরতে চায়।
নাফিসা ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে, ‘তুমিও ভালো থেকো। দোয়া করি তূর্ণা ভালো হয়ে উঠুক। তুমি কবে যাবে?’
মাহিন নিচের ঠোঁট কামড়ে বলে, ‘আগামী সপ্তাহেই।’
নাফিসা টের পায় এখন খারাপ লাগছে। মানুষের চলে যাওয়া সারাজীবন ওকে কষ্ট দিয়ে এসেছে। মাহিন ওকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ছেড়ে গেল। এবার অবশ্য ও নিজেই ছেড়ে যাবার কথা বলতে এসেছিল।
নাফিসা অস্ফুটে বলে, ‘বোটানিক্যাল গার্ডেনটা দুটো সময় খুলে, তাই না?’
মাহিন তাকায়। তারপর বলে, ‘তুমি আমার সঙ্গে একটা ঘন্টা একটু বসবে সেই রেইনট্রি গাছটার নিচে?’
নাফিসা টের পায় চোখ ভিজে উঠতে চাচ্ছে।
শরতের বিকেলে আজ তেমন একটা গরম নেই। বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতর সবুজ গাছের ছায়া। এবার বর্ষায় গাছগুলো আরও বেশি করে সবুজ হয়েছে। নদী থেকে ঠান্ডা একটা বাতাস আসছে। ওরা দুজন চুপচাপ বসে থাকে। মনের ভেতর দুজনের একই খেলা খেলে। পুরনো অতীত থেকে একটা উদাস বাতাস এসে মনের ঘুলঘুলিতে অযথা মায়ার অনুরণন তোলে।
২.
মীরা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ডিসেম্বর মাস চলে এল। দেখতে দেখতে একটা বছর পার হয়ে গেল ও এখানে এসেছে। আর এই একটা বছরে কত কত ঘটনাই না ঘটল। মিছেমিছি মনে ঝড় তুলল। মাহিন দেড় মাস আগেই আমেরিকা চলে গিয়েছে। যাবার আগে একবার ফোন করেছিল। নিজের অদ্ভুত ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাইল। মীরা হেসে বলেছিল, ‘আপনি যা করেছেন সেটা হয়তো সব মানুষই মনে মনে চায়। কিন্তু জানেন তো মানুষ আসলে সত্যিকারের অর্থে সেটা পেতে চায় না। কারণ সেটা পেতে গেলে এত এত সম্পর্কের কাঁটাছেড়া করতে হয় যে তাতে শুধু অযথা রক্তক্ষরণ হয়। সুখ হয় না। তাই মানুষ মনে মনে সেই ফেলে আসা ভালোবাসার জন্য গোপনে দুঃখ করতে ভালোবাসে। সংসারে তো অশান্তি হয়ই। তখন তার একমাত্র জায়গা সেই পুরনো অকৃত্রিম ভালোবাসা। আসলে ওই সময়টাতে মানুষের দায়িত্ব পালনের কোনো হ্যাপা থাকে না। ফলে সম্পর্কটা হয় অকৃত্রিম। কিন্তু যেই সংসারে পা রাখলেন তখন নানা চাহিদা এসে সামনে দাঁড়ায়। অনেক অনেক দায়িত্বের বোঝা এসে পড়ে। ঠিকঠাক সামলে নিতে না পারলে হাঁসফাঁস অবাস্থা। যাই হোক, আপনি ফিরে যাচ্ছেন খুব ভালো লাগছে। বিশেষ করে আপনার মেয়েটার কথা ভেবে আরও ভালো লাগছে। আর আপনার স্ত্রী নিশ্চয়ই ভালো হয়ে যাবে। একবার দেশে এসে ওদের নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে ঘুরে বেড়াবেন। আপনার জীবন সুন্দর হোক।’
সবার জীবন সুন্দর হোক, মীরা মনে মনে ভাবে।
একটা ফোন আসে। চেয়ে দেখে সুমনের ফোন। রাত দশটা বাজে। এই সময় তো ও বাসায় থাকে। ফোন দেবার কথা না। দ্রুত হাতে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে সুমন বলে, ‘একটু নিচে নামবি?’
মীরা ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘সুমন, ঠিক আছিস তো? দাঁড়া, আমি নামছি।’
মীরা দ্রুত একটা পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিচে নামে। আর অবাক হয়ে দেখে সুমন একটা ঝকঝকে নতুন সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মীরা অবাক গলায় বলে, ‘ও মা, এটা কার সাইকেল?’
সুমন হেসে বলে, ‘তূর্য সাইকেল চালাবে। গতকালই কিনে দিয়েছি। কিন্তু নতুন সাইকেল তো তাই এখনও গিয়ারগুলো মসৃণ না। একটু চালাতে হবে কটা দিন।’
মীরা তাকিয়ে থাকে। সুমনকে এখন সেই তরুণ বয়সের ছোট্ট একটা ছেলের মতো লাগছে। সেই পুরনো সময়। এখনই বুঝি ও সাইকেলে চড়ে বসবে।
মীরা হেসে বলে, ‘এটাই বলতে এসেছিস বুঝি?’
সুমন বোকার মতো হাসে, তারপর বলে, ‘সাইকেলে চড়বি মীরা?’
ইদানিং সুমন প্রায়ই কারণ ছাড়া ওর কাছে আসে। বুঝতে পারে ওর মনের ভেতর একটা কষ্ট ঘুরপাক খায়। ভেবেছিল ও মাহিনকে বিয়ে করে নিলে ওর দুঃখ শেষ হবে। কিন্তু মাহিনও তার সংসারে ফিরে গেল। নাফিসাও। সবাই সবার প্রিয় গৃহকোণ ফিরে পেয়েছে। শুধুমাত্র ও একলা পড়ে রইল। তাই বুঝি ওর মন খারাপ হয়। বোকা ছেলে।
মীরা টের পায় বুকের ভেতরটা শুন্য হয়ে যাচ্ছে। ভীষণ ইচ্ছে করছে সুমনকে বলতে, হ্যাঁ তো। কিন্তু বলা হয় না। ও নরম গলায় বলে, ‘সুমন, বাসায় যা। এভাবে আর আসিস না। নাফিসা জানলে কষ্ট পাবে। দেখলি তো, শেষ পর্যন্ত মানুষ তার নিজের ঘরেই ফিরে যায়। তাই শুধু শুধু অশান্তি ডেকে আনিস না। আর একটা খবর আছে। তোকে অবশ্য দু’একদিনের মধ্যেই জানাতাম।’
সুমন আগ্রহের গলায় বলে, ‘কী খবর?’
মীরা লম্বা করে একটা নিশ্বাস নেয়, তারপর বলে, ‘ইহানের বাবার বন্ধু ওয়াকার ভাই আমার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করেছেন। ওনার ওখানেই। আমি তো একাউন্টিং থেকে পাশ করেছিলাম। ওদের বিশ্বস্ত একজন লোক লাগত। আমি বলেছি আগামী মে বা জুন মাসে ইহানের এসএসসি শেষ হলেই আমি জয়েন করব। ইহানকেও ঢাকার একটা কলেজে ভর্তি করে দেব। বেতন যা দেবে তা দিয়ে আমাদের বাসা ভাড়া আর খাওয়া খরচ হয়ে যাবে। আর বাকি খরচ সঞ্চয় পত্র থেকে মিটিয়েও হাতে অনেক টাকা থাকবে। তাই অর্থকড়ির দিক থেকে আপাতত মুক্তি। সেই সাথে তোকেও মুক্তি দিয়ে গেলাম। এখানে থাকলেই দুদিন পর পর তোর সংসারে অশান্তি হবে। কিন্তু আমি তো তা কখনোই চাইনি। তুই ভালো থাকলেই যে আমি খুশি।’
আচ্ছা, আজ কি খুব কুয়াশা পড়েছে? না হলে চোখের পাতা কেন ভিজে উঠছে। সুমন নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। কেন যেন কান্না পাচ্ছে। মীরা যা বলেছে ঠিক বলেছে। কিন্তু কেন যেন মেনে নিতে আজ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘আচ্ছা, তুই যা ভালো বুঝিস। কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস, কখনও বিপদে পড়লে নিজেকে একা ভাবিস না। আমি তোর পাশে এসে দাঁড়াব। কথা দে, আমাকে জানাবি সব?’
মীরা হাসে, ‘আচ্ছা যা কথা দিলাম। এখন মুখটা হাসি হাসি কর।’
সুমন হাসার চেষ্টা করে। মীরা ধমক দিয়ে বলে, ‘টোল ফেলে হাস। তুই যখন মন খুলে হাসিস তখন তোর গালে টোল পড়ে।’
সুমন অদ্ভুত গলায় বলে, ‘তাহলে শেষ একটাবারের জন্য আমার সাইকেলে চড়। চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে বসে পড়। কেউ বুঝবে না।’
মীরা হাসে, ‘তুই এখনও ছোটই রয়ে গেলি। বাসায় যা, রাত বাড়ছে।’
সুমন আহত চোখে তাকায়। তারপর মাথা নেড়ে সাইকেল ঘুরিয়ে উঠে প্যাডেল দিতেই পেছন থেকে মীরা ডাকে, ‘দাঁড়া একটু।’
সুমন পেছন ঘুরে দেখে মীরা গায়ের চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে নিয়েছে। কাছে এসে বলে, ‘তুই কি আগেরমতোই সাইকেল চালাতে পারিস, না ভুলে গেছিস? দেখিস, এই বুড়ো বয়সে আবার ফেলে দিয়ে হাত-পা ভাঙ্গিস না আমার।’
সুমন টের পায় একটা পুরনো সুখের বাতাস ওর বুকের অলিন্দ-নিলয়ে পরম মায়ায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অনেক দিনের জমে থাকা কষ্ট যেন মুক্তি পায়।
ডিসেম্বরের শীতের রাতে আজ ঘন সাদা কুয়াশা পড়েছে। আর সেই সাদা কুয়াশার চাদর গায়ে দুজন বিশুদ্ধ মানুষ কিছুক্ষণের জন্য সুদূর অতীতের একটা দারুণ সময়ে ফিরে যায়।
(সমাপ্ত)