#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব৪
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
নবীন বরণের জন্য পুরো ভার্সিটি সেজেছে নতুন রূপে। আশেপাশে সিনিয়র, জুনিয়রদের মেলা।রিহার্সাল রুমে প্রাকটিস চলছে। যে যার মতো প্রাকটিস করছে। এক কোণে মুখ বেজার করে দাঁড়িয়ে আছে আনায়া। ওর পাশে অর্ষা বসে আছে। বেচারি একটু আগে ইচ্ছে মতো ঝাড় খেয়েছে আনায়ার কাছ থেকে। গতকাল সিনিয়ররা ক্লাসে এসে নবীন বরণের কথা বললে অর্ষা হুট্ করে উঠে আনায়ার নাম নাচের জন্য সাজেস্ট করে। সিনিয়ররাও নাম লিখে নিয়ে গেছে। আনায়ার এক বিন্দুও ইচ্ছে নেই নাচে অংশগ্রহণ করার। ও চায়না সবার ফোকাসে যেতে। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চায়। তার ওপর ওর ভয় নিশান কে নিয়ে। কিন্তু অর্ষার জন্য তা আর হলো কই। তাও ভেবেছিলো উল্টোপাল্টা স্টেপ করবে, তাহলে বাদ পড়ে যাবে। কিন্তু সেটাও হলো না। সিনিয়রদের আনায়ার স্টেপস গুলো পছন্দ হয়েছে। আনায়ার অবস্থা এখন “ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি টাইপ”। মুখ লটকিয়ে একপাশে বসে রইল।
——-
ঘুম থেকে উঠে আনায়া এখনো বিছানায় ‘থ’ মেরে বসে আছে। ওর আজ ভার্সিটি যেতেই ইচ্ছে করছে না। ভার্সিটিতে গেলেই যে ওকে নাচে অংশগ্রহণ করতে হবে। তাই ভেবে নিয়েছে আজকে যাবে না। তবে ওর ভাবনায় এক বালতি পানি ফেলার জন্য শাড়ি পড়ে একদম ফিটফাট হয়ে মুখে ২৪ ক্যারেটের হাসি ঝুলিয়ে উপস্থিত হলো অর্ষা। আনায়ার ওর হাসি সহ্য হচ্ছে না। অর্ষা হাসি মুখে বলল,
“কিরে এখনো বিছানায় বসে আছিস কেন? উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হো। দশটায় অনুষ্ঠান শুরু হবে এখন অলরেডি ৮টা বেজে গেছে”
“আমি যাবো না”
“কেন?”
“হা*রামি তুই আর কেন জিজ্ঞেস করিস না! আমায় ফাঁসিয়ে নিজে তো দিব্বি আছো? ভার্সিটিতে গেলেই ওই হা*রামজাদা নিশানের মুখোমুখি হতে হবে। তাই আমি যাবো না”
অর্ষার হাসি মুখটা নিমিষেই কালো মেঘে ছেয়ে গেল। মুখটা কাঁদো কাঁদো করে বলল,
“দোস্ত প্লিজ এমন কথা বলিস না। নবীন বরণে কতো মজা হবে, আনন্দ হবে। প্লিজ চল,ওই নিশান, পিশান কে আমি দেখে নিবো”
‘তোর যা সাহসের শ্রী আমার সেইদিনই দেখা হয়ে গিয়েছে। আমি যাবো না, তুই একা গেলে যা”
“তুই এভাবে বলতে পারলি? আমি কখনো একা কোথাও গিয়েছি? প্লিজ চল না”
অর্ষার করুণ কণ্ঠ শুনে আনায়ার খারাপ লাগছে। অর্ষাকে দেখে মনে হচ্ছে বেচারি এই বুঝি কেঁদে দিবে। আনায়া মনে মনে ভাবলো এই মেয়েটা ওর সব সময়ের সুখ দুঃখের সাথী। ও মন খারাপ করলে আনায়ার নিজেরও ভালো লাগবে না। আনায়া যে মেয়েটাকে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসে। তাই কোনো কিছু না বলে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে রেডি হতে লাগলো। অর্ষা লাফিয়ে উঠে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুই যাবি?”
“না গিয়ে উপায় আছে? যেভাবে মুখ লটকিয়ে বসে আছিস মনে হচ্ছে এই বুঝি কেঁদে আমায় সহ ভাসাবি। আমি ভাই ভাসতে চাইনা, তাই রেডি হচ্ছি। ডিসটার্ব করিস না”
অর্ষা চুপচাপ বসে পড়লো। এখন আর আনায়াকে রাগানো যাবে না। এখন রাগলে বা ডিসটার্ব করলে দেখা যাবে ওর সাথে আর যাবেই না। আনায়া অল্প বিস্তর সেজে নিলো। সাজা শেষে চুড়িদার নিয়ে ওয়াশরুমে যাবে চেঞ্জ করতে এমন সময় অর্ষা আটকে দিলো। আনায়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি সমস্যা? আটকাচ্ছিস কেন?”
“আজকে অন্তত শাড়ি পড়। সবাই শাড়ি পড়ে আসবে”
আনায়া কিছু না বলে অর্ষার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।
“প্লিজ”
আনায়া ড্রেস রেখে আলমারির দিকে এগিয়ে গেল। বেছে বেছে নেভি ব্লু রঙের একটা শাড়ি সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো। আনায়া বের হলে অর্ষা ব্যা*ক্কেলের মতো ওর দিকে তাকিয়ে রাইল। আনায়া সে দিকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
“ব্যা*ক্কেলের মতো তাকিয়ে না থেকে এসে শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করে দে”
অর্ষা এগিয়ে গিয়ে আনায়ার কথা মতো শাড়ির কুচি ঠিক করে দিলো। রেডি হওয়ার শেষ হলে দুজনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো।
——-
ভার্সিটি প্রাঙ্গন নতুন রূপে পুরোপুরি নতুন ভাবে সেজেছে। সাথে সেজেছে আশেপাশের মানুষ গুলো। ছেলেদের পরনে পাঞ্জাবী, মেয়েদের পরনের শাড়ি। দেখতে সুন্দর লাগছে। আনায়া অর্ষা একসাথে প্রবেশ করলো। এমনি দিন গুলোতে ভার্সিটি সাদামাটা থাকলেও আজকে সেজে উঠেছে নতুনদের স্বাগতম জানাতে। সুবিশাল মাঠের মাঝখানে স্টেজ। স্টেজের সামনে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম আর দ্বিতীয় সারি শিক্ষক আর অতিথিদের জন্য। পরের দুই সারি সিনিয়রদের জন্য। তারপর যে যার মতো বসতে পারবে। আনায়া আর অর্ষা যেয়ে বসে পড়লো মাঝের সারিতে। যেন ওদের দেখা না যায়।
কিছুক্ষনের মাঝেই অনুষ্ঠান শুরু হলো। সিনিয়ররা সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠান উপস্থাপন করছে। আনায়া অর্ষা উপভোগ করছে। মাঝে হুট্ করে শুরু হলো হই হুল্লোড়। মানুষের মাঝে কেমন চাপা উত্তেজনা। কেউ কি এসেছে তবে? সবাই উঠে দাঁড়ালো অতিথিকে স্বাগতম জানানোর জন্য। আনায়ার উৎসাহ না থাকলেও অর্ষার মাঝে ভরপুর উত্তেজনা। সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা মেয়েদের মাঝে। তাঁদের আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছে তাঁদের স্বপ্নের পুরুষ এসেছে। আনায়ার কাছে বিষয়টা বিরক্ত কর লাগছে। একটু পরেই স্টেজে আগমন ঘটলো এমপি অর্ণব সিকদারের। মেয়েগুলো এক প্রকার চিল্লিয়ে উঠলো। অর্ষা আনায়াকে ডেকে বলল,
“এটা অর্ণব ভাইয়া না? ভাইয়া এখানে কি করছেন?”
“আমি কিভাবে জানবো বল! আমি কি ওনার বিয়ে করা বউ যে ওনার বেপারে আমায় জিজ্ঞেস করছিস?”
“এখন না হোস ভবিষ্যতে হতে কতক্ষন?”
“ওই খ’বিস, ৪২০ এমপিকে আমি এজীবনে বিয়ে করবো না”
“দেখা যাবে জানু”
আনায়া কিছু বলল না। অর্ণব স্টেজে গেলে ওকে মাইক দেওয়া হলো। অর্ণব বক্তৃতা দিচ্ছে। তবে ওর সেদিকে খেয়াল নেই। ওর সকল মনোযোগ তো এক রমণীর পানে। তাকে অবিরাম খুঁজে চলেছে অর্ণবের বে’হায়া আঁখিদয়। অবশেষে খুঁজে পেল কাংক্ষিত রমনীকে। নেভি ব্লু শাড়িতে মেয়েটাকে ‘মায়াবতী’ লাগছে। অর্ণবের পক্ষে তার মায়াবতীর থেকে চোখ সরানো দায় হয়ে পড়ছে। তবে অর্ণব নিজেকে সামলে নিলো। বক্তৃতা দিয়ে নেমে এলো স্টেজ থেকে। সে এখানে এসেছে অল্প সময়ের জন্য। অর্ণব যেয়ে বসে পড়লো ওর জন্য বরাদ্দ করা জায়গায়। তবে আঁখিদয় যে বড্ড বেশিই মায়াবতীকে দেখত চাইছে।
এর মাঝেই আনায়ার নাম ডাকা হলো। আনায়া ভিতরে ভিতরে নার্ভাস ফিল করছে। এর আগেও স্কুল কলেজে পারফরমেন্স করেছে তবে এখন কেমন যেন লাগছে। আনায়া বড় করে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো। নিজেকে প্রস্তুত করে উঠলো স্টেজে। স্টেজে উঠতেই চোখাচোখি হলো সামনের অতিথি সারিতে বসা অর্ণবের সাথে। আনায়া সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো। অতঃপর মন দিলো পারফরমেন্সে । কোনো মতে নাচ শেষ হলেই হুড়মুড় করে নেমে এলো স্টেজ থেকে।
অপর দিকে অর্ণব প্রথমে মুগ্ধ চোখে তাকালেও পরবর্তীতে যখন দেখলো আশেপাশের ছেলে গুলো তার মায়াবতীর পানে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে তখন তার মুখমন্ডল হয়ে উঠলো রক্তিম বর্ণ। হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিয়ে নিজের রাগ সামলানোর বৃথা চেষ্টা করছে।
একটু দূরে দাঁড়িয়ে নিশান। সকাল থেকে কাজের চাপে এদিকে ওদিক ছুটোছুটি করলেও আনায়ার নাম শুনে এসেছিলো স্টেজের কাছে। ঠোঁটের কোণে তার বিশ্রী হাসি লেগে আছে। গাল চুলকে হাসতে হাসতে বলল,
“পরী দেখি ভালোই নাচতে পারে। ভালো, অনেক ভালো”
বলে হাসতে হাসতে চলে গেল। আনায়া ঘাপটি মেরে বসে আছে অর্ষার পাশে। বসে বসে নখ কাটছে। স্টেজ থেকে নামার পূর্বে এক মুহূর্তের জন্য অর্ণবের ওপর চোখ পড়লে খেয়াল করেছিল তার রক্তিম আঁখিদয়। আনায়া ভয়ে ঢোক গিললো। অর্ষা ওকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে কি হয়েছে? স্টেজ থেকে নেমে হতে এতক্ষন এভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছিস কেন?”
“আরে বলসি না ওই অ*সভ্য এমপি রাগী চোখে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে। মনে হচ্ছিলো চোখের আগুনেই ভ’স্ম করে ফেলবে আমায়”
“তুই আবার তাকে ভয়ও পাস?”
“না পেয়ে উপায় আছে। তাকে এর আগে যতটুকুই দেখেছি এতটা রাগতে কখনো দেখিনি”
এই বলে নখ কাটতে শুরু করলো। অর্ষাও কথা না বাড়িয়ে অনুষ্ঠান দেখায় মনোযোগী হলো। আনায়ারা বসে আছে এমন সময় একজন পিওন এসে ওর নাম ধরে ওদের সারিতে বসা একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করছিলো। পাশে থাকা অর্ষা ফট করে বলে উঠলো,
“আঙ্কেল আপনি যাকে খুঁজছেন সে এখানে”
লোকটা আনায়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“প্রিন্সিপাল স্যার আপনাকে ডেকেছেন”
আনায়া অবাক স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“আমাকে? প্রিন্সিপাল স্যার আমায় কেন ডাকবে?”
“সেটা তো আমি জানি না। আপনি যেয়ে দেখা করে আসুন”
আনায়া লোকটার কাছে থেকে প্রিন্সিপালের রুম কোথায় সেটা জেনে নিলো। অতঃপর হাঁটা দিলো সেই দিকে। তবে ওর মনের মাঝে প্ৰশ্ন আসছে হটাৎ প্রিন্সিপাল ওকে ডাকলো কেন? ভার্সিটি জয়েন করছে সবে কয়েকদিন। এমন কোনো কারণ নেই যার জন্য ওকে ডাকতে পারে। আনায়া প্রিন্সিপালের রুমের সামনে গিয়ে অনুমতি চাইলো। ওপাশ থেকে ভরাট কণ্ঠে উত্তর ভেসে এলো। আনায়া ভিতরে যেয়ে মানুষটাকে দেখে চমকালো। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সামনের মানুষটার দিকে। ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো।
#চলবে?
(#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব৫
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
আনায়া ভীতু চোখে তাকিয়ে আছে সামনে বসা মানুষটার দিকে। মানুষটা রক্তিম চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে তার আগুন বের হচ্ছে। ওই আগুনের তাপে পুড়ে ভ’স্ম হয়ে যাবে আনায়া। অর্ণব চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। গায়ে জড়ানো সাফেদ রঙের পাঞ্জাবী। পাঞ্জাবীর ওপরের দুটো বোতাম খোলা, হাতা কনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা। হাতে সিলভার রঙের ঘড়ি। চুল গুলো একদম পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা। অর্ণবকে উঠে নিজের দিকে আসতে ঢেকে আনায়া ঘাবড়ে গেল। ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো। এই অ*সভ্য এমপি এখানে কি করছে? তাকে তো ডেকেছিল প্রিন্সিপাল স্যার। অর্ণব আনায়ার পাশ ঘেঁষে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। দরজা লাগানোর শব্দে আনায়া কেঁপে উঠলো মনে হচ্ছে রাগটা দরজার ওপর ফেলছে। আনায়া মনে মনে ভাবছে দরজার এই দশা হলে তার কি হবে? বেচারি ভয়ে কুপোকাত। অর্ণব এসে আনায়ার সোজাসুজি দাঁড়ালো। আনায়া তোতলানো স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি এখানে? কি করছেন? আর দরজাই বা কেন লাগালেন”
অর্ণব দাঁত দাঁত পিষে বলল,
“রোমান্স করবো তাই। দরজা খুলে তো আর রোমান্স করা যায় না, তাই না?”
“আমি বাহিরে যাবো”
অর্ণব খানিকটা এগিয়ে এসে বলল,
“সেটা তো হবে না। একটু আগে স্টেজে যেভাবে পারফর্ম করছিলে সেটা আরেক বার দেখাও দেখি? এতো মানুষের ভিড়ে ভালো করে দেখতেই পারিনি। তার ওপর তুমি আমার হবু বউ আমি তো দেখেতেই পারি, তাই না!”
কথা গুলো বলার সময় অর্ণবের চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছিলো। আনায়া নিশ্চুপে চেয়ে আছে অর্ণবের দিকে। মানুষটা যে মা*রাত্মক রেগে আছে সেটা বুঝতে সময় লাগলো না। অর্ণব আনায়ার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে এক প্রকার ধমক দিয়েই বলে উঠলো,
“কি হলো? দাঁড়িয়ে আছো কেন? নাচ শুরু করো”
অর্ণবের ধমক শুনে আনায়া কেঁপে উঠলো। চোখের কোণে পানি এসে জমা হলো। বাবা কিংবা ভাইয়াদের মধ্যে কেউ কখনো ওকে এতটা জোরে ধমকে দেয় নি। আনায়া মাথা নিচু করে নিলো। অর্ণব বজ্র কণ্ঠে বলে উঠলো,
“আমার সামনে নাচতে সমস্যা তাহলে স্টেজে সবার সামনে নাচলে কিভাবে? তখন সমস্যা হয়নি? তুমি জানো ছেলে গুলো তোমার দিকে কিভাবে তাকিয়ে ছিলো। ওদের দৃষ্টি দেখে ইচ্ছে করছিলো একেক টাকে মাটিতে পু’তে ফেলতে। আজকে প্রথম বার তাই তেমন কিছু বললাম না। এরপর যেন এমনটা না দেখি। তুমি অর্ণব সিকদারে বউ হোক সেটা ভবিষ্যতে। আমি চাইনা আমার বউকে আমি ব্যাতিত কেউ অন্য নজরে দেখুক। তোমার সকল কিছু থাকবে আমাকে ঘিরে। বাসায় যা ইচ্ছে করে বেড়াও আমার সমস্যা নেই। তবে ভার্সিটিতে শালীন ভাবে চলবে, মনে থাকে যেন”
আনায়া চুপচাপ অর্ণবের কথা গুলো শুনলো তবে কোনো উত্তর দিলো না। একটা বারও মুখ ফুটে বলল না যে ও নিজ ইচ্ছেতে নাচে নাম দেয় নি, অর্ষা দিয়েছে। অর্ণব এগিয়ে এসে আনায়ার থুতনিতে হাত রেখে মুখ উপরে তুললো। খেয়াল করলো আনায়ার চোখের কর্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া এক ফোঁটা অশ্রু বিন্দু। যত্নের সাথে তা মুছে দিতে দিতে বলল,
“আমি তেমন মানুষ না যে প্রেমিকা কিংবা বউয়ের ভুল দেখেও না দেখার ভান করবে। আমি যেমন ভালোবাসতে পারি, তেমন ভুল হলে শাসনও করতে পারি”
একটু থেমে বলল,
“এখন চুপচাপ যেয়ে গাড়িতে বসো, তোমায় বাসায় দিয়ে আমি পার্টি অফিসে যাবো”
আনায়া কথাগুলো শুনে দরজা খুলে চুপচাপ বেরিয়ে গেল। অর্ণব ভাবছে সেকি তবে মেয়েটাকে বেশিই বকে দিলো? দিলে দিয়েছে। ভুল করেছে তাই বকেছে এখানে ভালোবাসা দেখানোর কিছুই নেই। ভালোও সে বাসবে ভুল করলেও শাসনও সেই করবে। অর্ণব নিজেকে পরিপাটি করে বেরিয়ে পড়লো। সেই সময় অর্ণবকে রাগতে দেখে প্রিন্সিপাল স্যার তার রুমে অর্ণবকে পাঠিয়েছিলেন রেস্ট নেওয়া জন্য। শত হোক এমপি বলে কথা। সম্মানিত ব্যাক্তি। অর্ণব রুমে এসির নিচে বসেও যখন রাগ সামলাতে ব্যর্থ হলো তখন ডেকে পাঠালো আনায়াকে। ও জানে ও ডাকলে আনায়া আসবে না। তাই বুদ্ধি করে প্রিন্সিপালের নাম দিয়ে ডেকেছে। মেয়েটা যে কেন ওকে এতটা অবহেলা করে অর্ণব জানে না!
——-
আনায়া গট গট পায়ে হেটে গেল অর্ষার কাছে। অর্ষা হুট্ করে আনায়ার এমন পরিবর্তন দেখে অবাক হলো। একটু আগে ও তো মেয়েটার মুখে হাসি ছিলো। তবে হুট্ করে কি হলো যে মুখে এমন অমাবস্যার ঘনঘটা কেন? অর্ষা চিন্তিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,
“দোস্ত স্যার তোকে ডেকেছে কেন? কিছু কি বলেছে?”
আনায়া চুপ। অর্ষা ফের জিজ্ঞেস করলে,
“কিরে কিছু বলছিস না কেন? স্যার কি তোকে বকা দিয়েছে? আরে ভাই না বললে বুঝবো কিভাবে?”
“কিছু হয়নি। বাড়ি যাবো, ভালো লাগছে না। চল”
বলে অর্ষার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হতেই চোখে পড়লো অর্ণবের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে তাপস। আনায়া গাড়ির কাছে যেতেই সালাম দিয়ে পিছনের দরজা খুলে দিলো। আনায়া উঠে বসলো। ওর দেখা দেখি অর্ষাও উঠে বসলো। অর্ণব আসলো মিনিট পাঁচেক পর। ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে তাপস কে বলল গাড়ি স্টার্ট দিতে। গাড়ি চলতে শুরু করলো তার আপন গন্তব্যে। অর্ণব পিছু ফিরে অর্ষাকে জিজ্ঞেস করলো,
“অর্ষা কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া, আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো”
অতঃপর সবাই চুপ। নীরবতায় কেটে গেলে পুরোটা সময়। গাড়ি এসে আনায়াদের বাসার সামনে থামতেই আনায়া ঝটপট নেমে গেল। অর্ণব নেমে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে ডাক দিলো,
“আনায়া! দাড়াও”
আনায়া যেতে নিয়েও থেমে গেল। সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। তবে পিছু ফিরে তাকালো না একবারও। অর্ণব এগিয়ে গেল।
“আশা করবো এরপর আর কখনো আমার কথার অবাধ্যতা করবে না। ভালো থেকো আর নিজের খেয়াল রাখবে”
আনায়া কাঠ কাঠ কণ্ঠে জবাব দিলো,
“আমার চিন্তা আপনার না করলেও চলবে”
“তোমার চিন্তা আমি করবো না তো কে করবে বলো? শত হোক দশটা না, পাঁচ টা না একটা মাত্র হবু বউ তুমি আমার তার খেয়াল তো আমাকেই রাখতে হবে”
“আপনাকে তো আমি এ জীবনে বিয়ে করবো না”
বলে রাগে গজ গজ করতে করতে বাড়ির ভিতর চলে গেল। অর্ষা কিছুটা ঘটনা বুঝতে পারলো। অর্ণব আনায়াকে বকেছে বলেই বেচারির মন খারাপ তাহলে? অর্ণব গাড়িতে উঠতে নিবে এমন সময় অর্ষা আটকে দিয়ে পিছন থেকে ডেকে উঠলো। অর্ণব দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কিছু বলবে?”
অর্ষা ইতস্তত করে বলল,
“আসলে ভাইয়া আনায়া নাচে অংশগ্রহণ করতে চায়নি। আমিই ওর নাম দিয়েছিলাম। ও নাম কেটে দেওয়ার জন্য সিনিয়রদেয় রিকোয়েস্ট করেছিলো তবে তারা বলেছে লিস্ট ফাইনাল হয়ে গেছে। এখন কাউকে বাদ দেওয়া যাবেনা। ওর এখানে কোনো দোষ নেই ভাইয়া”
অর্ণব মন দিয়ে অর্ষার কথা শুনলো। অতঃপর বললো,
“বুঝলাম, এখন তুমি বাসায় যাও”
অর্ষা চলে গেল। অর্ণব একটুও সময় নিয়ে ভাবলো। মেয়েটাকে এতটা বকা ঠিক হয়নি। তবে আনায়ার ভুল তো ছিলো। ও চাইলে নাম ডাকা সত্ত্বেও না যেয়ে পারতো। ভাবনা বাদ দিয়ে অর্ণব গাড়িতে উঠে বসলো। তার এখন ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে।
——-
রাতের আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা। আনায়ার মনও আঁধারে ঢেকে আছে। সেই সময় বাসায় আসার পর যে রুমের দরজা দিয়েছে আর খোলেনি। আশালতা বেগম অনেক ডেকে বিকেল বেলা দরজা খুলিয়েছে। মেয়ের চোখ মুখে গম্ভীর ভাব দেখে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করেনি। মিহি এসেছিলো গল্প করতে কিন্তু আনায়া তাকে না করে দিয়েছে। ওর মন ভালো নেই। এখন কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। অর্ণব কিছু না জেনেই ওকে এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিলো? ও সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
আনায়া নিকষ কালো আকাশের দিকে এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় পাশে রাখা ফোন বিকট শব্দে বেজে উঠলো। আনায়া তাকিয়েও মুখ ফিরিয়ে নিলো। অর্ণব ফোন দিয়েছে। পরপর কতগুলো কল এলো তবে আনায়া রিসিভ করলো না। শেষে ম্যাসেজ টোনের শব্দ হলো। আনায়া বার্তা চেক করে দেখলো এটা একটা হুমকি স্বরূপ বার্তা,
“ফোন রিসিভ করো মেয়ে। নাহয় ৫ মিনিটের মাথায় তোমার সামনে এসে হাজির হবো। তখন চাইলেও ইগনোর করতে পারবে না। আর আমায় যদি আসতে হয় তাহলে তুলে নিয়ে সোজা কাজী অফিসে চলে যাবো। তোমার বাপ্-ভাই কেউ আমায় আটাকাতে পারবে না বলে দিলাম। তখন দেখবো কেমন ইগনোর করতে পারো? আর যদি সেটা না চাও তবে ভালোয় ভালোয় ফোন রিসিভ করো”
#চলবে?
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন। ধন্যবাদ)