#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব১০
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
নিস্তব্ধ, শান্ত পরিবেশ। আশেপাশে নেই কোনো কোলাহল। শান্ত থেকেও পরিবেশ কেমন উত্তপ্ত। আনায়া মিশে আছে অর্ণবের প্রশস্ত বুকের সাথে। খামচে ধরে রেখেছে অর্ণবের পাঞ্জাবীর বুকের কাছটার কাপড়। মেয়েটার হাত পা কেমন অস্বাভাবিক গতিতে কাঁপছে। আনায়াকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা অনেক ভয় পেয়েছে। একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনায় এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। কিছুক্ষন আগের ঘটনা,
অর্ণব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে তার মায়াবতীর দিকে। আনায়াও লোকটাকে কিছু বলল না। ও দেখতে চায় অর্ণব কতক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারে। সময় গড়িয়ে চলেছে আপন গতিতে তবে অর্ণবের পলক পড়ছে না। মানুষটা যেন পলক ফেলতেও ভুলে গেছে। আনায়া মাঝে মাঝে ভেবে পায়না লোকটা কি ওকে ভালোবাসে? ভালো না বাসলে তার এতো পা*গলামো কিসের? আর উনি যদি ভালোবেসেও থাকে তাহলে আগে বলেনি কেন? আগে আবিরের সাথে প্রায়ই বাড়িতে আসতো। দুজনে আড্ডা দিতো, গেম খেলতো। হুট্ করে মাঝে উধাও হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আবিরের থেকে জানতে পারে অর্ণব বিদেশে গিয়েছে পড়াশোনার জন্য। আবিরকেও ওর সাথে যেতে বলেছিলো তবে আবির যাবে না। সে তার পরিবার ছেড়ে দূরে থাকতে পারবে না বলে যায়নি। আনায়া কখনোই অর্ণবের বিষয়ে মাথা ঘামায়নি। আবিরের মুখে একদিন শুনেছিলো অর্ণবদের রাজনৈতিক পরিবার। বাবা-দাদা রাজনীতির সাথে জড়িত। প্রথমে অর্ণব কে ভালো লাগলেও রাজনীতি নামটা শুনে আর কখনোই অর্ণবের দিকে ফিরে তাকানো হয়নি। কিশোরী বয়স ছিলো তখন। আবেগের বসে সুদর্শন অর্ণবকে ভালো লেগেছিলো। মাঝে কেটে গিয়েছিল পাঁচ পাঁচটা বছর। আনায়া ততদিনে স্কুল, কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। তবে ওর জীবনে কোনো পুরুষের আগমন ঘটেনি। আনায়া বরাবরই চেয়েছে ওর জীবনে একজন পুরুষের কর্তৃত চলবে। যে হালাল হয়ে আসবে ওর জীবনে। আনায়া হারামে বিশ্বাসী নয়। তাই কখনো প্রেম, ট্রেমে জড়ানো হয়নি। হুট্ করে একদিন অর্ণব তার পরিবার নিয়ে হাজির হলো। তারপর থেকে এই মানুষটার কর্তৃতই চলছে আনায়ার জীবনে।
আনায়ার ভাবনার মাঝে হুট্ করে হাতে টান পড়তে হুমড়ি খেয়ে পড়লো সামনে দাঁড়ালো অর্ণবের প্রশস্ত বুকে। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো সোজা বরাবর গাছটায় ছুরি গেথে গেছে। আনায়া কিছু বুঝে ওঠার আগে আরেকজন ছুরি হাতে এগিয়ে এলো। আনায়ার পিঠ বরাবর বসিয়ে দেওয়ার আগেই অর্ণব হাত দিয়ে ধরে ফেলল। লোকটার বুকে লা*ত্থি দিয়ে ফেলে দিলো। লা*ত্থি খেয়ে খানিকটা দূরে ছিটকে পড়লো লোকটা। এর মাঝেই দৌড়ে এলো তাপস। আশেপাশে ছিলো অর্ণবের দলের কিছু ছেলে। কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা ছিলো। সেটাই শেষ করে অর্ণব ওদের দূরে দাঁড়াতে বলেছিলো। এমপি মানুষ কোথাও একা যাওয়াটা ঠিক না। সেফটির ব্যাপার আছে। তাই ওদের সাথেই রেখেছিলো। তারাও দৌড়ে এলো। ছেলেগুলো লোকটাকে পাকড়াও করলো। ইচ্ছে মতো যে যেভাবে পারছে আঘাত করছে। তাপস এগিয়ে এসে দেখলো অর্ণবের হাত থেকে র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এক হাতে ছুরি ধরা। ওপর হাত আনায়ার পিঠে রেখে মেয়েটাকে আগলে রেখেছে নিজের সাথে। যাই কিছু হয়ে যাক সব ওর ওপর দিয়ে যাক। ও থাকতে মেয়েটাকে যেন কোনো কিছু স্পর্শ করতে না পারে। তাপস ছুরিটা ফেলে দিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করলো। অর্ণবের হাত বেঁধে দিতে দিতে ব্যাকুল কণ্ঠে সুধালো,
“ভাই আপনি ঠিক আছেন? আপনার কিছু হয়নি তো? ম্যামের কিছু হয়েছে?”
অর্ণব তাপস কে আস্বস্ত করে বলল,
“আমার কিছু হয়নি। তুই ওই কু**র বাচ্চাকে ধর। ওর কতো বড় সাহস ও অর্ণব সিকদারের কলিজার দিকে হাতে বাড়ায়। ওর কলিজা আমি ছিঁড়ে নিবো। হা*রামির বাচ্চা”
“আপনি চিন্তা করবেন না ভাই ওরা দেখছে ছেলেটাকে। আপনি গাড়িতে চলেন জায়গাটা সেফ না আপনাদের জন্য”
তাপস এর কথাটা অর্ণব ও ভেবে দেখলো। এখানে আর থাকা যাবে না। বুকের সাথে মিশে থাকা আনায়াকে মিহি কণ্ঠে ডাকলো,
“আনায়া! এই আনায়া!”
আনায়ার কোনো নড়চড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মেয়েটা একটু আগেও তো ভয়ে কাঁপছিলো। হটাৎ কি হলো যে এতটা চুপচাপ হয়ে গেল? অর্ণব আনায়ার মাথাটা সরালো। অবচেতন আনায়া হেলে পড়ে যেতে নিলো। অর্ণব ধরে নিলো। ওর বুঝতে অসুবিধা হলো না। মেয়েটা অতিরিক্ত ভয়ে হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। অর্ণব এক ঝটকায় আনায়াকে কোলে তুলে নিলো। তাপস কে জিজ্ঞেস করলো,
“অর্ষা কোথায়?”
“উনি গাড়িতে আছে”
অর্ণব আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। আনায়াকে নিয়ে সোজা হেটে চললো গাড়ির দিকে। পিছনের সিটে বসে আছে অর্ষা। আনায়াকে অর্ণবের কোলে দেখে ঘাবড়ে গেল। তাও আমার অবচেতন অবস্থায়। অর্ণব অর্ষার কোলে আনায়ার মাথা রেখে ওকে গাড়ির সিটেই শুইয়ে দিলো। নিজে বসলো আনায়ার পায়ের কাছটায়। তাপস সামনে থেকে এগিয়ে দিলো পানির বোতল। অর্ণব আনায়ার মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে, আলতো করে মুখে চাপর দিয়ে ডাকছে,
“আনায়া! এই আনায়া! এই মেয়ে, চোখ খোলো। চোখ খোলো প্লিজ। আনায়া, এই মেয়ে। ওঠো না”
আনায়ার কর্ণকুহর পর্যন্ত পৌছালো না অর্ণবের আহাজারী। মেয়েটা একদম শান্ত হয়ে পড়ে আছে অর্ষার কোলে। অর্ষা আনায়ার এই অবস্থা অর্ণবকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
“আনায়ার কি হয়েছে ভাইয়া?”
“ভয় পেয়েছে”
“আপনি থাকা সত্ত্বেও ও ভয় পেলো কি করে? আর আনায়া তো অল্পতে ভয় পাবার মতো মেয়ে না”
অর্ণব কিছু বলল না। তবে অর্ষাকে ধমক দিয়ে উঠলো তাপস।
“আপনি একটু চুপ করবেন। দেখছেন ভাইয়ের হাত দিয়ে র*ক্ত পড়ছে, ম্যামের এই অবস্থা তার মাঝে আপনাকে বক বক করতে হবে? ম্যামের জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করুণ নাহয় দয়া করে চুপ থাকুন”
অর্ষা তাপসের ধমকে চুপ হয়ে গেল। ভালো করে তাকিয়ে দেখলো অর্ণবের বাম হাতের রুমাল পেঁচানো। রুমাল প্রায় ভিজে গেছে র*ক্তে। তাও ছেলেটা নিজের দিকটা না ভেবে আনায়ার জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করছে। অর্ণব অবিরাম ডেকেই চলেছে আনায়াকে। সাথে যোগ হলো অর্ষাও। কিছুক্ষন পড় আনায়ার জ্ঞান ফিরলো। পিট পিট করে তাকালো। আশেপাশে তাকিয়ে নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করলো। আনায়াকে চোখ খুলতে দেখে অর্ণব সরে আসলো। আনায়া উঠে বসলো। এখনো মেয়েটা ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অর্ণব আনায়ার গালে হাত রেখে আদুরে কণ্ঠে সুধালো,
“এখন ঠিক আছো? ”
আনায়া কোনো রিয়েকশন দিলো না। শুধু অস্ফুস্ট স্বরে বলল,
“আমি বাড়ি যাবো”
এরপর অর্ষার সাথে মিশে রইলো। অর্ষাও আনায়াকে আগলে নিলো। আনায়া মেয়েটা বরাবরই সাহসী মেয়ে। কোনো ঝামেলা হলে অর্ষা ভয় পেলেও আনায়া খুব সহজে ভয় পায়না। তাহলে এমন কি হলো যে মেয়েটা ভয়ে এতটা গুটিয়ে গেল! অর্ষা ভাবনা বাদ দিয়ে আনায়ার দিকে খেয়াল দিলো। মেয়েটা জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। অর্ণব যেয়ে বসলো ড্রাইভিং সিটে। সিটবেল বাধঁতে লাগলো। তাপস বলল,
“ভাই আমি ড্রাইভ করি?”
অর্ণব গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“তুই এখানে থাক। ওই হা*রা*ম*জা*দাকে আমার ডেরায় নিয়ে যা। আমি আসছি একটুপর। ইঞ্চিটেপ দিয়ে মেপে দেখবো ওর কলিজা কতো বড়। এতো সাহস ও কোথায় পেল? আর এর পিছনেই বা কে আছে?”
“কিন্তু ভাই আপনার এই হাত নিয়ে….”
অর্ণব তাপস কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
“আমার কোনো সমস্যা হবে না। তুই এদিকটা সামলা”
অর্ণব গাড়ি স্টার্ট দিলো। পুরো রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলল না। অর্ণব একটু পর পর লুকিং গ্লাসে আনায়ার দিকে তাকাচ্ছিলো। তবে মেয়েটার সেদিকে খেয়াল নেই। ও চোখ বুজে রয়েছে। অর্ণবের মনে ভয় ঢুকলো মেয়েটা কি ওর কাছে আসার বদলে ওর থেকে আরো দূরে সরে যাবে? নাকি একেবারেই দূরত্ব টেনে আনবে দুজনের মাঝে। অর্ণব যে বহু কষ্টে আনায়ার মনে একটু একটু করে জায়গা করে নিয়েছিল। অর্ণব মনে মনে পণ করলো যে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তাকে ছাড়বে না। একটুও না।
আনায়াদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই আনায়া হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়লো। অতঃপর কাউকে কিছু না বলেই গট গট করে হাঁটা লাগলো বাড়ির দিকে। অর্ণব পিছন থেকে ডেকে উঠলো,
“আনায়া”
আনায়া শুনেও না শোনার ভান করে এগিয়ে গেল। অর্ষাও আনায়ার পিছু পিছু গেল। অর্ণব নিশ্চল চোখে তাকিয়ে রইল প্রেয়সীর যাওয়ার পানে। আনায়াকে যতদূর দেখা যায় অর্ণব ততক্ষণ তাকিয়ে রইল। আনায়া গেটের ভিতর ঢুকে গেলে অর্ণব হতাশ হয়ে গাড়িতে এসে বসে পড়লো। অতঃপর গাড়ি স্টার্ট দিলো।
#চলবে?
#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব১১
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
চারপাশে গুমোট পরিবেশ। তমিস্রায় ঢেকে আছে রজনী। রাস্তায় জ্বলছে ল্যাম্পপোস্টের আলো। ব্যাস্ত শহরে মধ্য রাত হওয়া সত্ত্বেও যানবাহন চলাচল করছে রীতিমতো। আকাশ অমাবস্যার নিকষ কালো আঁধারে ঢেকে আছে। পুরো আকাশ জুড়ে কোথাও একটু খানি আলোর ছিটা ফোঁটাও নেই। তেমনই আনায়ার মন আকাশে জমে আছে কালো মেঘের আচ্ছাদন। বিকেলে বাড়ি আসার পর দরজা দিয়েছে। এখনো দরজা খোলেনি। অর্ষা আনায়ার পিছু পিছু এসেছিলো ওকে বোঝাবে বলে। তবে অর্ষা কে সেই সুযোগ দেয় নি। তার আগেই দুম করে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। এক মনে ভেবে চলেছে বিকেলে ঘটা ঘটনা গুলো। ভাবতেই আনায়ার গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। ভয়ে গাঁ শিরশির করে ওঠে। হাত পায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়। আনায়া বরাবরই মা*রামা*রি, ঝামেলা জিনিসগুলো এড়িয়ে চলে। ওর এগুলো একটুও ভালো লাগে না। আজকে যেই পরিস্থিতি হয়েছে তারপর আনায়া আর কোনো মতে অর্ণবের আশেপাশে ঘেসবে না। রাজনীতি মানেই মা*রামা*রি, কাঁ*টা কা*টি, খু*ন অর্ণবও নিশ্চই এগুলোর সাথে জড়িত আছে। নাহয় ওই লোকগুলো ওকে মা*রতে আসবে কেন? আনায়া তো তাঁদের কোনো ক্ষতি করেনি। এমনকি চিনেও না তাঁদের। আনায়া মনে মনে পণ করলো কোনো মতেই অর্ণবের আশেপাশে যাবে না। অর্ণব হু*মকি, ধামকি দিলেও না। ব্যালকনিতে রাখা কাউচে গুটি সুটি মেরে বসে রইল। ও যতই চাচ্ছে ঘটনা গুলো ভুলে যেতে ততই যেন মস্তিষ্কে গেঁথে যাচ্ছে ঘটনা গুলো।
আঁধারে ঢাকা কক্ষে স্বল্প আলোর উৎস। কক্ষের এক কোণে টিম টিম করে আলো জ্বলছে। ফ্লোরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এক যুবক। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেটাকে নির্মম ভাবে মা*রা হয়েছে। আঘাতের ফলে কে*টে ছিঁড়ে গেছে শরীর একেক স্থান। ছেলেটার আশেপাশে আরো কয়েকটা ছেলে ঘুরঘুর করছে। এরাই মূলত নির্দয়ের মতো বেধড়ক মে*রেছে। মেঝেতে পড়ে থাকা ছেলেটাকে উঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলো তবে ছেলেটা মুখ খুলল না। অতঃপর ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলল সামনে চেয়ারে বসা মানুষটার পায়ের ওপর। চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে রক্ত চক্ষু নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে অর্ণব। ও পারেনা ছেলেটাকে খু*ন করে ফেলতে। এসে রাগের বসে চেয়েছিলো কিছু একটা করতে তবে ওকে আটকে দিয়েছে তাপস। ছেলেটাকে মেরে ফেললে তো জানাই যাবে না এর মূল হোতা কে! অর্ণব ছেলেটার চুল গুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। ছেলেটা ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো। তবে সেদিকে অর্ণবের খেয়াল নেই। ও হিংস্র রূপ ধারণ করেছে। দাঁতে দাঁত পিষে জিজ্ঞেস করলো,
“সত্যি করে বল তোকে কে পাঠিয়েছে? নাহয় অর্ণব সিকদারের যেই রূপ এখনো কেউ দেখেনি সেটাই দেখবি তুই। তবে সেই রূপ দেখার পর তুই আর এই পৃথিবীতে থাকবি কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। তাড়াতাড়ি বল”
“আমাকে কেউ পাঠায়নি”
অর্ণব হুংকার দিয়ে উঠলো। মিনহাজ নামের একটা ছেলেকে বলল,
“মিনহাজ আমার চা*পাতি টা নিয়ে আয় তো। ও যেই হাত আমার মায়াবতীর দিকে বাড়িয়েছে সেই হাত আমি আস্ত রাখবো না। কে*টে কুচি কুচি করে ফেলবো। ওর এতো বড় সাহস ও আমার মায়াবতীর দিকে হাত বাড়ায়। আর এমনিতেও ওর বেঁচে থাকার শখ নেই নাহলে এখনো ওকে কে পাঠিয়েছে তার নাম না বলে থাকে”
মিনহাজ নামের ছেলেটা অর্ণবের কথায় শায় জানিয়ে চলে গেল। মুহূর্তের মাঝেই ফিরে এলো হাতে এক খান চা*পাতি নিয়ে। অর্ণবের হাতে দিলো। অর্ণবের লক্ষণ ভালো ঠেকছে না। ওর মায়াবতীর জন্য ও সব কিছু করতে পারে। সেই মায়াবতী কে কেউ আঘাত করতে চাইলে অর্ণব সিকদার মোটেও তাকে ছেড়ে কথা বলবে না। অর্ণব হাতে চা*পাতি নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। চা*পাতির ধার পরীক্ষা করার জন্য পাশে রাখা টেবিলে আঘাত করলো। চা*পাতি টা টেবিলে অনেকটা গেথে গেছে। অর্ণব চা*পাতি দিয়ে ছেলেটার ওপর ধরলো। যেই আঘাত করতে যাবে এমন সময় ছেলেটা চেঁ*চিয়ে বলে উঠলো,
“বলছি, বলছি। আমায় কে পাঠিয়েছে তার নাম বলছি। আমার হাত কা*টবেন না দয়া করে”
অর্ণবের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো বাঁকা হাসি। অর্ণব সিকদার ভালো করেই জানে কার মুখে কিভাবে কথা ফোটাতে হয়। এমনি এমনি তো আর এমপি হয়ে যায়নি!
“বল তোকে কে পাঠিয়েছে”
ছেলেটা তোতলাতে তোতলাতে বলল,
“নিজাম আহমেদ”
“নিজাম আহমেদ” নামটা শুনে অর্ণব অবাক হলো না। লোকটা যে এমন কিছুই করতে পারে এটা ওর ধারণার মধ্যেই আছে। নির্বাচনে জিততে না পেরে এমন করছে। অর্ণব মনে মনে বলল,
“শা*লার বয়স হয়েছে তাও ওর তেল কমেনি? ওর তেল কমানোর ব্যবস্থা এবার আমি করবো। ওর শখ তো কম না! ও এসেছে অর্ণব সিকদারের কলিজায় হাত দিতে। নিজাম আহমেদ তোর ম*রার পাখনা গজিয়েছে হা*রা*ম*জা*দা। খুব শীঘ্রই তোর একটা ব্যবস্থা করতেই হচ্ছে”
ছেলেটা অর্ণবের পা জড়িয়ে বলল,
“ভাই আমায় এবারের মতো ছেড়ে দেন”
অর্ণব কুটিল হাসলো। ফের বলল,
“তোকে ছেড়ে দিবো? তোকে? যে কিনা আমার মায়াবতীকে আঘাত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে তাকে?ঠিক আছে যা ছেড়ে দিচ্ছি”
অতঃপর হাঁক ছাড়লো,
“এই মিনহাজ ওর হাতের রগ গুলো কেটে তার মাঝে মরিচ গুঁড়ে দিয়ে দিবি। যতক্ষণ ছটফট করবে ততক্ষন আটকে রাখবি। ছটফট করা থেমে গেলে বেটাকে ছেড়ে দিবি। এটা ওর শাস্তি”
ছেলেটাকে শাসিয়ে বলল,
“এর পর তোকে আমার আশেপাশে দেখলে সেখানেই কবর দিয়ে দিবো। কথাটা মনে রাখিস। অর্ণব সিকদার ছাড় দেয় তবে ছেড়ে দেয় না”
অর্ণব তাপসকে নিয়ে রুম থেকে বের হলো। বাহিরে দাঁড়িয়ে দুজন কথা বলছে। এমন সময় রুমের ভিতর থেকে ছেলেটার আর্তনাদ এর শব্দ ভেসে এলো। অর্ণবের ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো হাসি।
গভীর রাত্রি। ঘুমে বিভোর সবাই। অর্ণব শাওয়ার নিয়ে চুলের ভাঁজে তোয়ালে চালাতে চালাতে রুমে প্রবেশ করলো। খানিক্ষন আগেই বাড়িতে এসেছে। এসেই সোজা ওয়াশরুমে ঢুকেছে। বিছানা খুঁজে ফোন হাতে নিলো। অতঃপর ডায়াল করলো আনায়ার নাম্বারে। রিং হচ্ছে তবে রিসিভ হচ্ছে না। অর্ণব খুব ভালো করেই জানে মেয়েটা এখনো ঘুমায়নি। রিং হতে হতে কেটে গেল কিন্তু রিসিভ হলো না। অর্ণব ফের কল দিলো। একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে তবে আনায়া কল ধরছে না। প্রায় দশ বারের মাথায় ফোন বন্ধ বলল। অর্ণবের বুঝতে একটুও বেগ পেতে হলো না আনায়া ওকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু অর্ণব তো সেটা হতে দিবে না। ওর মায়াবতীকে চাই, সেটা যেভাবে হোক। আনায়া দূরত্ব বাড়াতে চাইলে প্রয়োজন পড়লে দড়ি দিয়ে মেয়েটাকে নিজের সাথে বেঁধে রাখবে তারপরও দূরে যেতে দিবে না। অর্ণব আরো দুইবার ডায়াল করলো। সেই একই কথা ফোন সুইচ অফ। অর্ণবের ক্লান্ত লাগছে। শরীর চলছে না আর! ক্লান্ত শরীরে এক বুক হতাশা নিয়ে পাড়ি জমালো ঘুমের দেশে।
——-
সকালের মিষ্টি আলো এসে চোখের ওপর পড়তেই আনায়া ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে চারিপাশে তাকিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করলো কাউচে। রাতে ভাবতে ভাবতে কখন যে কাউচেই ঘুমিয়ে গেছে জানা নেই। পাশে অবহেলায় পড়ে আছে ফোনটা। হাতে নিয়ে দেখলো ফোন অফ। ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো। অতঃপর মনে পড়লো কাল রাতে অর্ণবের ফোনে বিরক্ত হয়ে নিজেই তো ফোন বন্ধ করে রেখেছিলো। আরমোড়া ভেঙ্গে উঠে বসলো। এলোমেলো চুলগুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে কোনোমতে খোপা করে রুমে ঢুকলো।
আশালতা বেগম এসেছেন মেয়েকে ডাকতে। মেয়ে তার হয়েছে একজন। কখন যে কি হয় কাউকে বলেও না। হুট করে এসে দরজা দিবে। তারপর সারাদিনেও দরজা খোলার নাম নেই। দরজায় নক করলো।
“আনায়া দরজা খোলো”
আনায়া ভদ্র মেয়ের মতো দরজা খুলে দিলো। আশালতা বেগম কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। শুধু বললেন,
“খেতে এসো, তোমার বাবা-ভাইয়েরা অপেক্ষা করছে”
“তুমি যাও, আমি আসছি”
আশালতা বেগম চলে এলেন। তিনি ভালো করেই জানেন এখন আনায়াকর ওপর বো*ম ফাটালেও ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হবে না।
আনায়া নিচে নেমে আবিরের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। টেবিলে আশরাফ সাহেব, আয়ান, আবির। নীলিমা রান্না ঘরে, মিহি আরো আগে খেয়ে স্কুলে চলে গেছে। আনায়া কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো। আশরাফ সাহেব খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলেন,
“তোমার মায়ের কাছ থেকে শুনলাম কাল ভার্সিটি থেকে ফিরেই দরজা দিয়েছো? সারাদিনে খাবারও খাও নি?”
আনায়া আমতা আমতা করে বলল,
“ক্লান্ত লাগছিলো তাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। ঘুম ভেঙেছে মাঝ রাতে। তাই আর দরজা খুলিনি”
আর কোনো কথা হলোনা কারো মাঝে। পাশে বসা আবির আনায়ার চুল পিছন থেকে টেনে ধরলো। ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে পে*ত্নী কাল আবার কি কাণ্ড ঘটিয়ে এসে দরজা দিয়েছিস? তুই তো এমনি এমনি দরজা দেওয়ার মেয়ে না! সত্যি করে বল কি করেছিস?”
আনায়া দাঁত কিড়মিড়ি দিয়ে বলল,
“ভাইয়া চুল ছাড় নাহয় ভালো হবে না বলে দিলাম”
“কি করবি শুনি”
আনায়া কিছু না বলে আবিরের হাতের পশম টেনে ধরলো। আবির ব্যাথা পেয়ে আনায়ার চুল ছেড়ে দিলো। হাত ডলতে ডলতে বলল,
“পে*ত্নী একটা”
#চলবে?
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পর্বটা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ)