#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব১৬
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
❝যদি আপনি অন্তর থেকে কাউকে চান, জেনে রাখুন সেই মানুষটিও আপনাকে ভেবেই ঘুমাতে যায়❞
অর্ষা বিড়বিড় করে লাইন দুটো আওড়ালো। হুমায়ুন আহমেদের লেখা বিখ্যাত দুটি লাইন। ক্লান্ত বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা। তার মন মেজাজ কিছুই ভালো নেই। নিজেকে কেমন উন্মাদ উন্মাদ লাগছে। ইচ্ছে করছে পা*গলামো করতে। তাই নিজে নিজেই কীসব আবোল তাবোল বকে যাচ্ছে তার ঠিক নেই। বিড়বিড় করা শেষে হুট্ করে শব্দ করে হেসে দিলো। তাও উচ্চস্বরে। অতঃপর হাসতে হাসতে বলল,
“কবি আপনি কি নিদারুন মিথ্যা কথা টাই না বললেন। এতো মিথ্যা আশা কেন দেন আপনারা বলুন তো? করুনা হয় বলে? যারা এক পাক্ষিক ভালোবাসে তাঁদের সান্তনা দিতে? কিন্তু আপনি কি জানেন এ গুলো সান্তনার চেয়ে আকাঙ্ক্ষা বেশি বাড়িয়ে দেয়? এইযে আবির ভাই মানুষটা কখনো আমার দিকে ভালো করে তাকায় না, কথা বলে না, আমার চোখে চোখ রাখে না সে কিভাবে আমায় নিয়ে ভাববে? এটা কি আদোও সম্ভব? উহু, এ গুলো ডাহা মিথ্যা কথা। এতটা মিথ্যা না বললেও হতো কবি”
কথা গুলো শেষ করতে না করতে আবার হেসে দিলো। এই মুহূর্তে অর্ষাকে দেখলে নিঃসন্দেহে কেউ বলবে ওর ওপর জিনে আছর করেছে। নাহলে স্বাভাবিক কেউ এভাবে হাসতে পারে নাকি?
আনায়া খোলা চুলে দৌড়ে দৌড়ে ছাদে উঠছে। হুট্ করে তার ছাদে আসার শখ জেগেছে । যদিও ওর সব কিছু তো হুটহাট প্লেন ছাড়াই হয়। ছাদে পা রাখতেই কপাল কুঁচকে এলো। এতো জোরে জোরে হাসছে কে? তাও আবার এমন শব্দে? মনে হচ্ছে আশেপাশের কোন জায়গা থেকে আসছে। আনায়া এগিয়ে গেল। পাশের ছাদে দাঁড়ানো অর্ষাকে এভাবে হাসতে দেখে ভড়কে গেল। শান্ত, শিষ্ট মেয়েটা হটাৎ এভাবে উন্মাদের মতো হাসছে কেন?
“অর্ষা, এই অর্ষা? এভাবে পা*গলের মতো হাসছিস কেন?”
“মনের সুখে”
“পা*গল হলি নাকি?”
অর্ষা হাসি থামালো। মুহূর্তের ব্যবধানে নিজের আগের রূপে ফিরে গেল। সেই আগের অর্ষা।
“আরে তেমন কিছু না। হুট্ করে একটা হাসির ঘটনা মনে পড়ে গেল তাই হাসছিলাম”
আনায়া হাফ ছেড়ে বাঁচলো। পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় বাড়ির ছাদও কাছাকাছি। আনায়াদের ছাদে টপকে অর্ষাদের ছাদে যাওয়া যায়।
“আমি তো ভেবেছিলাম তুই বুঝি ভাইয়ার বিরহে পা*গল হলি”
“তুইও না। এখন তোর কথা বল?”
“আমার কথা কি বলবো?”
“প্রেম কেমন চলছে?”
“প্রেম? তাও আমার?”
“হ্যা। বান্ধবী তুমি যে লুকিয়ে লুকিয়ে অর্ণব ভাইয়ার সাথে লাইন মা*রো সেটা কি আমি জানি না ভেবেছো? আমাকে কি এতটাই বোকা মনে হয়?”
“আরে ধুর কি বলছিস। এসব কিছুই না”
“বিয়ে কবে করছিস?”
“দেখা যাক কখন করি”
অর্ষা এক প্রকার চিল্লিয়ে উঠলো। ওর চোখে মুখে খুশির ঝিলিক।
“সত্যি? তুই রাজি হলি অবশেষে?”
“রাজি কোথায় হলাম?”
“ঢং বাদ দে”
আনায়া বিপরীতে কিছু বলবে তার আগে ওর হাতের ফোন বেজে উঠলো। আনায়া একবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার অর্ষার দিকে তাকাচ্ছে। এই সময়ই অর্ণবকে কল দিতে হলো? কিন্তু অর্ণব তো কখনো এই সময় কল দেয়না। আজ হটাৎ দিলো যে? অর্ষা আনায়ার কাঁধে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“কল রিসিভ করতে পারিস। আমি কিছু মাইন্ড করবো না”
আনায়া অর্ষা কে কিছু বলল না। চোখ রাঙানি দিয়ে এক কোণে চলে গেল। ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে অর্ণবের পুরুষালি কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। আনায়া যথেষ্ট চেষ্টা করছে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার তবে পেরে উঠছে না। অর্ণবের কণ্ঠস্বর শুনলে কেমন যেন লাগে, বুকের মাঝে দ্রিম দ্রিম শব্দ হয়। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে যায়। আনায়ার সারা শব্দ না পেয়ে অর্ণব ডেকে উঠলো,
“মায়াবতী”
আনায়া মৃদু স্বরে জবাব দিলো,
“জি”
“বিরক্ত করলাম?”
“উহু”
“তাহলে চুপচাপ যে?”
“এমনি। আপনি হটাৎ এই সময় ফোন দিলেন?”
“তোমায় খুব বেশি মিস করছিলাম”
আনায়া চুপ। কোনো উত্তর করলো না। অর্ণব সুধালো,
“দেখা করতে পারবে?”
“এখন?”
“হ্যা”
“কিন্তু…”
“কিন্ত কি?”
আনায়া একটু সময় নিলো। অর্ণবের কণ্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে বড্ড আশা নিয়ে বলেছে ছেলেটা। এখন ও যদি বলে দেখা করতে পারবে না তাহলে অর্ণব নিশ্চই নিরাশ হবে। আনায়ার ইচ্ছে করলো না মানুষটাকে নিরাশ করতে। ইচ্ছে করলো তার পা*গলামতে নিজেও কিছুটা পা*গল হতে।
“কিছু না। আপনি বলুন কোথায় আসতে হবে?”
অর্ণবের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসি চওড়া হলো। আনায়া যে এতো সহজে মেনে যাবে ও সেটা ভাবেনি। তবে কি আনায়ার মনে ওর জন্য জায়গা তৈরী হয়েছে? আনায়া আসতে আসতে ওকে মেনে নিচ্ছে?
“তোমাদের বাড়ির কাছে যেই পার্ক টা আছে সেখানে চলে এসো”
“ঠিক আছে”
আনায়া কল কেটে দিলো। কিন্তু এখন যাবে কিভাবে? ওকে তো একা বের হতে দিবে না। কি করা যায়? মাথায় এলো অর্ষার কথা। অর্ষা কাছে যেতেই ও জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে কি বললো অর্ণব ভাইয়া?”
“বলল দেখা করতে”
“তো যা দেখা করে আয়”
আনায়া দোনা মনা করে বলল,
“কিন্তু কিভাবে যাবো বল? তুই তো জানিস আমায় একা যেতে দিবে না”
“তাহলে?”
“তুই চল না প্লিজ”
“আমি তোদের মাঝে কি করবো? কাবাব মে হাড্ডি হবো?”
“প্লিজ দোস্ত চল। আমি তোকে তোর পছন্দের ফুচকা খাওয়াবো”
“ডিল?”
“ডিল”
“ঠিক আছে তুই রেডি হতে যা। আমি রেডি হয়ে তোদের বাসায় আসছি”
আনায়া খুশি মনে নিচে নেমে এলো। গুন গুন করে গানও গাইছে। আনায়া পুরো ফুরফুরে মুডে আছে। আলমারির সকল কাপড় উলোট পালট করে ফেলেছে তাও মন মতো জামা পাচ্ছে না। অবশেষে কালো রঙের চুড়িদার সিলেক্ট করলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজগোজ করছে। হাতে মুঠোভর্তি কালো রঙের রেশমি চুড়ি, কানে ঝুমকো, চোখে গাঢ় কাজল। মুখে অল্প বিস্তর সাজ ব্যাস আনায়া তৈরি। নিজেকে শেষ বার আয়নায় দেখে নিল। খারাপ না ভালোই লাগছে। নিচে নেমে দেখলো অর্ষা এসে গেছে। রান্নাঘরে থাকা আশালতা বেগম কে হাঁক ছেড়ে বলল,
“আম্মু আমি আর অর্ষা পাশের পার্কে ঘুরতে যাচ্ছি। তুমি চিন্তা করো না”
“তাড়াতাড়ি ফিরিস”
দুজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। রিক্সা ডেকে উঠে বসলো। পার্ক টা আনায়াদের বাড়ি থেকে হেঁটে গেলে দশ মিনিটের রাস্তা। কিন্তু এখন হেঁটে গেলে দেরি হয়ে যাবে। রিক্সা এসে পার্কের সামনে থামলে দুজনে নেমে পড়লো। ভাড়া মিটিয়ে এগিয়ে চলল পার্কের ভিতরে। আনায়ার চোখ দুটো চাতক পাখির ন্যায় অর্ণবকে খুঁজছে। মানুষটা কি এসেছে? নাকি আসেনি? বিকেল টাইম হওয়ায় পার্কে মানুষ খুবই কম। যারাও আছে তারা তাঁদের মতো বসে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ বা হাটাহাটি করছে। কিছুটা এগোতেই দেখা হলো তাপস এর সাথে। তাপস বিনম্রতার সাথে আনায়াকে সালাম দিলো। অতঃপর জানালো অর্ণব কোথায় আছে। আনায়া অর্ষাকে বলে সে দিকে চলে গেল। বেঞ্চের এক প্রান্তে বসে কথা বলছে অর্ণব। পিছন থেকে দেখে আনায়ার ওকে চিন্তে ভুল হলো না। আনায়া নিঃশব্দে হেঁটে যেয়ে বেঞ্চের অপর প্রান্তে বসলো। অর্ণব কলে কথা বলছিলো পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে ফিরে তাকালো। অতঃপর অপর পাশের ব্যক্তিকে ‘রাখছি’ বলে কল কেটে দিলো। আনায়ার মাঝে উত্তেজনা কাজ করছে। লুকিয়ে প্রেম করলে যেমন অনুভূতি হয় ওর তেমন ফিল হচ্ছে। তবে আদতে সেটা মোটেও না। আনায়া খেয়াল করে দেখলো অর্ণবের মুখে মাস্ক পড়া। ওর ভ্রু কুঁচকে এলো।
“মাস্ক পড়ে এমন চোর মতো মুখ লুকিয়ে এসেছেন যে?”
“তোমার কাছে আমায় চোর লাগছে? এখানে যদি এভাবে না এসে সাধারণ ভাবে আসি তাহলে এখানে ভীড় লেগে যাবে। আশেপাশের যেসকল মেয়েদের দেখছো সব মেয়েরা আমাকে ঘিরে ধরবে। তখন নিশ্চয়ই তোমার ভালো লাগবে না? তোমার কথা ভেবেই আমি এভাবে এসেছি। আর তুমি আমাকে চোর বলছো?”
আনায়া মুখ ভেঙিয়ে বলল,
“ভীড় জমে যাবে না ছাই। ভাব নেওয়া বন্ধ করুন। মেয়েদের তো খেয়েদেয়ে কাজ নেই তারা আপনার পিছনে ঘুরবে”
“তাহলে মাস্ক টা খুলেই ফেলি। কি বলো?”
“থাক খোলা লাগবে না”
দুজনের মাঝে টুকটাক কথা হচ্ছে। পার্ক হলেও জায়গায়টা ভীষণ শান্ত। তেমন কোনো কোলাহল নেই। অর্ণব আনায়া দুজন দিব্বি সময়টা অনুভব করছে। কথার মাঝে আনায়া জিজ্ঞেস করলো,
“হটাৎ জরুরি তলবের কারণ?”
“মায়াবতীকে দেখার তৃষ্ণা জেগেছিলো মনে। ভয়ংকর রকমের তৃষ্ণা যাকে বলে”
“সেদিন না আমাদের দেখা হলো”
“সেদিন কোথায়? গুনে গুনে পাঁচ দিন আগে”
“পাঁচ দিনে এই অবস্থা?”
“বেহাল অবস্থা। তাই জন্যই তো খুব শীঘ্রই পার্মানেন্টলি তোমাকে আমার চোখের সামনে রাখার ব্যবস্থা করছি”
“বললেই হলো নাকি?”
“দেখা যাক হয় কি হয় না!”
আনায়া অর্ণবের কথা তেমন পাত্তা দিলো না। কেমন খাপ ছাড়া ভাব। তবে ও তো আর জানে না ওর জন্য সামনে কি অপেক্ষা করছে। অর্ণব এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আনায়ার দিকে। পলক ফেললেই যেন মূল্যবান কিছু হারিয়ে যাবে। তাই পলক ফেলা বারণ। আনায়া মৃদু স্বরে অর্ণবকে ডাক দিলো। তবে অর্ণবের কোনো সারা শব্দ নেই। আনায়া এবার একটু জোরেই ডাক দিলো। অর্ণব ভরকে গেল। আনায়া দুস্টু হেসে বলল,
❝এভাবে তাকাবেন না এমপি সাহেব। মায়াবতীর প্রেমে পড়ে ছারখার হয়ে যাবেন❞
❝মায়াবতীর প্রেমে ধ্বংস আমি। শুধু মায়াবতীকে আমার করে পাওয়াটাই বাকি❞
#চলবে?
#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব১৭
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম আকাশে। বিকেলের স্নিগ্ধ আলো ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে পশ্চিম আকাশে। নীল আকাশ ছেয়ে যাচ্ছে লাল রঙা আভায়। বাতাসে মৃদু শীতলতার ছোঁয়া। হালকা ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। রোমান্টিক ওয়েদার। এই ক্লান্ত বিকেলে প্রেয়সীর হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে হাঁটার মতো শান্তি বোধ আর কিছুতেই নেই। অর্ণবের মনে বইছে বসন্তের হাওয়া। প্রণয় দোলা দিয়ে যাচ্ছে মনে। অপর দিকে আনায়া সময়টা অনুভব করছে। ওর জীবনে প্রথম কোনো পর পুরুষের সংস্পর্শে আসা। সব সময় ভাই বা বাবার হাত ধরেই ওর পথ চলা হয়েছে। তবে ওর মনে হচ্ছে এই হাত টা বিশ্বস্ত। বাবা-ভাইয়ের হাত যেমন ওকে সব সময় আগলে রাখে তেমন এই হাত টাও ওকে আগলে রেখেছে। মনের মাঝে ভয় ও হচ্ছে আবার খুশি খুশিও লাগছে। ভয়, জড়তা, আনন্দ সব কিছুর সংমিশ্রনে মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে আনায়ার। দুজনই উপভোগ করছে সময়টা।
অপর দিকে অর্ষা নিজের মতো ঘুরছে। একা একা ঘুরার মজাই আলাদা। ওর তো আর কেউ নেই যে ও তার হাত ধরে ঘুরবে তাই একাই ঘুরছে। পার্কের প্রতিটা জায়গাই ওর চেনা। অর্ষা হাঁটতে হাঁটতে একপাশে চলে এলো। একটু এগোতেই দেখলো দুটো কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে। অবস্থা সুবিধার মনে হচ্ছে না। এই বুঝি দুটোর মাঝে মা*রা মা*রি শুরু হলো। অর্ষা ছোটো বেলা থেকেই কুকুর অনেক ভয় পায়। যখন ওর বয়স পাঁচ কি ছয় তখন একবার ওকে কুকুর কা*মড়েছিল। সেবার অর্ষার সেকি কান্না। গুনে গুনে ১৪ টা ইনজেকশন দিতে হয়েছিল। চোখের জলে নাকের জলে এক হয়েছিল ওর । অর্ষা ভাবলো টুপ্ করে কেটে পড়বে। সেই মতে আস্তে করে সরে আসতে নিলো। তার আগেই শুরু হয়ে গেল দুটোর মা*রা মা*রি। আশেপাশে তেমন মানুষ নেই। এ পাশটা একদম ফাঁকা। অর্ষা সরে আসার আগেই কুকুর গুলো ওর দিকে দৌড়ে আসতে নিলো। অর্ষার পা যেন ওখানেই আটকে গেছে। মনে হচ্ছে ঘাসের সাথে পা চিপকে আছে। এদিক ওদিক যে সরবে সেই খেয়াল নেই। ওর মাথা কাজ করছে না। কুকুরটা যখন অর্ষার খুব কাছে আর একটু হলে ওর গায়ে উঠে যাবে এমন সময় পাশ থেকে কেউ হাত ধরে টান দিলো। অর্ষা একটুর জন্য বেঁচে গেল। তবে শেষ রক্ষা হলো না। আচমকা হাতে টান পড়ায় ভারসাম্য বোঝায় রাখতে না পেরে সোজা গিয়ে পড়লো সামনের মানুষটার বক্ষস্থলে। মিনিটের মাঝে কি থেকে কি হলো অর্ষার মাথায় কিছুই ঢুকলো না! বাক্কেলের মতো তাকিয়ে রইল সামনের মানুষটার দিকে। মিনিট দুই গড়ালো অর্ষা এখনো ঘোরের মাঝেই আছে।
“এই মেয়ে! মাথায় কি ঘিলু নেই? নাকি জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পেয়েছে? ওভাবে বাক্কেলের দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন? আর একটু হলেই তো কুকুরটা আপনাকে কা*মড়ে দিতো। তখন কি হতো? ইনজেকশন খাওয়ার শখ জেগেছে? কথা বলছেন না কেন? কোন ধ্যানে ছিলেন শুনি?”
তাপস এর ধমকে অর্ষা ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো। মেজাজ খারাপ হলো ওর।
“বয়ফ্রেন্ড এর ধ্যানে ছিলাম, খুশি? কুকুর কা*মড়ালে আমায় কা*মড়াবে আপনার কি? কুকুরের হাত থেকে বাঁচিয়ে কোনো রাজ কার্য করে ফেলেননি যে এভাবে ধমক দিবেন”
“নিজে ভুলে করবেন। মানুষ সাহায্য করলে তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার বদলে তাকেই কথা শোনাচ্ছেন? বাহ্!”
“যে মানুষ সাহায্য করে খোটা দেয় তার সাহায্য আমার দরকার নেই”
অর্ষা চলে আসতে নিলো। তাপস বিড়বিড় করে বলল,
“এই জন্যই বলে কারো ভালো করতে নেই”
অর্ষা ঘুরে দাঁড়ালো। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“আপনাকে কে বলেছে ভালো করতে? আমি বলেছি? না তো! তাহলে ভালো করতে আসার দরকার নেই”
কথা গুলো বলেই গট গট পায়ে চলে এলো। তাপস বেচারা তাকিয়ে আছে অর্ষার যাওয়ায় দিকে। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“মেয়ে তো নয় যেন ধানীলংকা”
তাপস নিজের মতো দাঁড়িয়ে ছিলো। কল আসায় এদিকে এসেছিলো কথা বলতে। অর্ষাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়েছিল। যেখানে কুকুর দেখলে মেয়েরা চারটা লাফ মারে সেখানে অর্ষা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুই কুকুরের মা*রা মা*রি দেখছে? অবাক করা কাণ্ড। একটু এগিয়ে গিয়ে বুঝলো অর্ষা মা*রা মা*রি দেখছে না ভয় পেয়ে জমে গেছে। অর্ষা কে কিছু বলবে তার আগে একটা কুকুর ওর দিকে এগিয়ে আসতে নিলো। ওটার পিছনে অন্যটা। তাপস ওতো শত না ভেবে অর্ষার হাত ধরে টান দিলো। তাপসের মনে মনে দুঃখ হচ্ছে। আগে জানতো মেয়ে মানেই ঝগড়ুটে আজকে সেটা দেখেও নিলো। নিজেই নিজেকেই সান্তনা দিলো,
“মেয়ে মানুষ হইতে সাবধান”
অর্ষা আনায়াদের কাছে চলে এলো। গাল ফুলিয়ে বলল,
“ভাইয়া পড়ে প্রেম করবেন এখন আমার বান্ধবীকে ছাড়ুন। বাড়ি যাবো”
অর্ষার কথায় আনায়া লজ্জা পেলো। অর্ণব দুস্টু হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“কেন শা*লিকা? জিজু হিসেবে আমায় পছন্দ হয়নি?”
“হবে না কেন? অবশ্যই হয়েছে। একেবারে ঝাক্কাস যাকে বলে। এখন আপনার বউ রাজি হলেও কাজী কে ডেকে আনবো”
“বউ তো রাজি হবেই একদিন আগে বা পরে। জিজু হিসেবে পছন্দ হলে চলে যেতে চাইছো কেন?”
অর্ষা বিড়বিড় করে বলল,
“আপনার চ্যালা কে পছন্দ হয়নি”
অর্ণব স্পষ্ট শুনতে না পেয়ে সুধালো,
“কি বললে?”
“সন্ধ্যা হয়ে এসেছে তাই বাসায় যেতে হবে নাহয় টেনশন করবে”
অর্ণব হতাশ গলায় বলল,
“তাহলে আর কি করার যাও। চলো আমি তোমাদের ট্রিট দিবো”
অর্ষা হ্যাঁ বলতে যাবে তার আগে আনায়া ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় নাকোচ করতে বলছে।
“আজকে না ভাইয়া। অন্য একদিন। আজকে আমরা যাই তবে”
অর্ণব আনায়ার দিকে তাকিয়ে নমনীয় কণ্ঠস্বরে বলল,
“সাবধানে যেও। নিজের খেয়াল রেখো মায়াবতী। তোমার সামান্য কিছু হলে যে অন্য কারো হৃদয়ে দহন হবে”
অর্ণবের কথায় আনায়া সায় জানালো। অতঃপর আনায়া অর্ষা চলে এলো। অর্ণব যতদূর আনায়াকে দেখা যায় ততদূর তাকিয়ে রইলো। এ দেখার শেষ নেই। যতো দেখবে ততই কম পড়ে যাবে।
——-
তপ্ত দুপুরে রোদের প্রকোপে গাঁ জ্বলে যাওয়ার লক্ষণ। আনায়া নিজের ঘরে আয়নার সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে। একটু আগেই গোসল করে এসেছে। চুল গুলো ভালো করে মুছে এখন চুলের ভাঁজে চিরুনি চালাচ্ছে। সাথে গুন গুনিয়ে গান গাইছে। আয়নায় কারো প্রতিবিম্ব কল্পনা করে আঁকছে প্রণয়ের স্থির চিত্র। ঠোঁটে লেগে আছে মুচকি হাসি। এমন সময় রুমে আগমন ঘটলো মিহির। চুপিচুপি পা ফেলে আসছে সে। মনে হচ্ছে চুরি করতে এসেছে। আনায়ার পিছনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন ওর হাব ভাব পর্যবেক্ষণ করলো। তারপর ফিসফিস করে সুধালো,
“প্রেমে পড়ে গেছো নাকি আপু?”
“হু”
“কি! সত্যি?”
মিহি এক প্রকার চি* ল্লিয়ে উঠলো। আনায়ার হুস ফিরলো। এতক্ষন কল্পনার শহরে বিচরণ করছিলো। মিহির খুশি দেখে কে। আনায়া ওকে ধমক দিয়ে বসিয়ে দিলো।
“কি হয়েছে? এমন ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছিস কেন?”
“ফাইনালি তুমি প্রেমে পড়লে। তা কার প্রেমে পড়লে গো? অর্ণব ভাইয়ার?”
আনায়া মিহির কান টেনে ধরলো। মিহি ‘আউচ’ করে উঠলো।
“তোকে এত বেশি বুঝতে কে বলেছে? আমি বলেছি?”
“আমি কোথায় বুঝলাম। তুমিই তো বললে”
“আমি কি বলেছি?”
“এইযে আমি জিজ্ঞেস করলাম কারো প্রেমে পড়েছো নাকি, তুমি বললে হ্যাঁ”
“আরে গাধা আমি ‘হু’ বলেছি ‘হ্যাঁ’ না। আমি একটা বিষয়ে ভাবছিলাম তাই তোর কথা খেয়াল করিনি। ঘোরের মাঝেই উত্তর দিয়েছি”
“এই জন্যই তো বলি তুমি আর প্রেম? নিরামিষ একটা! তুমি বিয়ে টা করছো না তাই আমার বিয়ে টাও হচ্ছে না। এই পড়াশোনা আর ভালো লাগে না আমার”
“তবে রে। তাহলে এই ব্যাপার? আমার বিয়ের সাথে তোর বিয়ের কি কানেকশন?”
“বড় বোনকে রেখে আমি কিভাবে ড্যাং ড্যাং করে বিয়ে করি বলো? তাই আগে তোমাকে বিদায় করবো তারপর আমি”
“দাঁড়া আজই ছোটো মাকে বলছি তার মেয়ে বিয়ের জন্যই উতলা হয়ে গেছে। তোকে যেন আচ্ছা মতো দেয়। এইটুকু ক্লাস টেন এ পড়া মেয়ে আসছে বিয়ে করতে”
মিহি সোজা আনায়ার পায়ে পড়ে গেল। অসহায়ের মতো বলল,
“আপু প্লিজ এগুলো আম্মুকে বলো না তাহলে একটা মাইরও নিচে পরবে না। সব আমার পিঠে পড়বে। আর আমি তো ছোটো বোন হিসেবে তোমার সাথে একটু মজা করছিলাম আরকি, হিহি”
মিহির অবস্থা দেখে আনায়ার হাসি পাচ্ছে তবে এখন হাসা যাবে না। কারণ এখন হাসা মানে মিহিকে আরো আস্কারা দেওয়া। আনায়া গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“ঠিক আছে এবার বলবো না। পরের বার এরকম বললে তোর খবর আছে বলে দিলাম”
মিহি উঠে আনায়ার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমার কিউট আপু”
——-
নিকষ কালো আঁধারের চাদরে মোড়া কক্ষ। কোথাও নেই এক চিমটি আলোর হদিস। এক নিমিষেই হারিয়ে যাওয়া যাবে এই আঁধারের মাঝে। রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে এক মানব। কক্ষে শান্ত পরিবেশ বিরাজমান। কেমন গাঁ ছম ছম গুমোট পরিস্থিতি। মানবের মস্তিষ্কে বুনছে ষড়যন্ত্রের জাল। যেই জালে আটকা পড়লে নিমিষেই যেতে পারে কারো জীবন। ধ্বংস হতে পারে কারো অস্তিত্ব। পরিকল্পনা শেষে মানব টি উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর হেসে উঠলো উচ্চ স্বরে। কি বিচ্ছিরি, জঘন্য সেই হাসি। নিমিষেই কারো শরীরে কাঁপুনি ধরাতে পারে। নিস্তব্ধ কক্ষ হওয়ায় হাসির শব্দ প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছে। বিকট সেই শব্দ। তবে মানবের সেদিকে খেয়াল নেই। সে নিজের মতো উল্লাসে মত্ত।
#চলবে?
#প্রেমের_তাজমহল_২
#পর্ব১৮
#আফিয়া_আফরোজ_আহি
প্রভাতে কিরণ ছড়িয়ে পড়ছে ধরণীতে। নিকষ কালো আঁধারকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বিরাজ করছে সকালের মিষ্টি আলো। সময়টা অক্টোবরের শেষের দিকে। সকাল দিকটায় শীত শীত অনুভব হচ্ছে। গ্রাম অঞ্চলে কুয়াশাও পড়া শুরু হয়ে গেছে। ঘাসের ওপর বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে। সূর্যের আলোয় সেগুলো মুক্তোর মতো চিক চিক করছে। আনায়া চাদর জড়িয়ে আবেশে ঘুমিয়ে আছে। বেলা বাজে সকাল ৭ টা। ১০ টায় ওর ক্লাস। গত রাত অর্ণবের সাথে কথা বলে কাটিয়েছে। দুজন কথা বলতে বলতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেছে দুজনের কারোই খেয়াল নেই। ইদানিং অর্ণবের সংস্পর্শে এলে আনায়া যেন নিজের সত্ত্বা ভুলে বসে। এক নিমিষেই হারিয়ে যায় অর্ণবের কথায় খেইয়ে। মানুষটা এতো সুন্দর করে গুছিয়ে কেন কথা বলে? তার কণ্ঠ, কথা বলার ধরন আনায়াকে মন্ত্র মুগ্ধ করে। কখন যে সময় কেটে যায় সেই খেয়াল থাকলে তো! ঘুমিয়েছে ভোরের দিকে। গভীর ঘুমে আছন্ন আনায়া।
ওপর দিকে মেহনাজ বেগম ছুটেছে ছেলের ঘরে। ছেলে তার ভোর বেলায় উঠে। শরীর চর্চা করে, হাঁটতে বের হয়। অতঃপর এসে হাঁক ছাড়ে চায়ের জন্য। সেই ছেলে এতো বেলা অবধি ঘুমাচ্ছে কারণ কি? ছেলের আবার কিছু হলো নাতো? সারাদিন ছেলেটা বাহিরে বাহিরে থাকে ঠিক মতো নিজের যত্নও নেয় না। এই নিয়ে উনার আক্ষেপের শেষ নেই।
আঁধারে আচ্ছাদিত কক্ষ। হিম শীতল পরিবেশ। কক্ষের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক। বিছানায় উঁবু হয়ে উদাম শরীরে বুক পর্যন্ত চাদর টেনে গভীর ঘুমে মগ্ন যুবক। পুরা রুম অন্ধকার করে রাখা। রুমে প্রবেশ করতেই মেহনাজ বেগমের শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। এই ঠান্ডা পরিবেশে তার ছেলে এসির পাওয়ার এতো কম দিয়ে শুয়ে আছে কিভাবে? আবার জ্বর বাধিয়ে বসে নি তো! মেহনাজ বেগম রিমোট খুঁজে এসি অফ করলেন। জানালার পর্দা গুলো সরিয়ে দিলেন। অন্ধকার আছন্ন রুমে মুহূর্তেই আলোকিত হয়ে গেল। মেহনাজ বেগম গিয়ে বসলেন ছেলের মাথার কাছ টায়। দেখতে দেখতে ছোট্ট অর্ণব এখন কতটা বড় হয়ে গেছে। দুদিন বাদে বাড়িতে লাল টুকটুকে বউ নিয়ে আসবে। মেহনাজ বেগম ছেলের কপালে হাত ছোয়ালেন। না! তাপমাত্রা স্বাভাবিক। এতক্ষনে একটু শান্ত হলো মন। অনেক দিন হলো শান্তি মতো দু দন্ড ছেলের দেখা পাওয়া যায় না। ছেলে মেয়ে বড় হলে যা হয় আরকি। সে এখন এমপি হয়েছে দেশের সেবা করতে করতেই তার দিন শেষ। মেহনাজ বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অর্ণবের চুল গুলো এলো মেলো হয়ে আছে। ছেলের চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দিলেন। মৃদু স্বরে ডেকে উঠলেন,
“অর্ণব! এই অর্ণব। বাবা ওঠ। দেখ কতো বেলা হয়ে গেছে”
আধো আধো চোখ খুলে চাইলো অর্ণব। কতো দিন পর মায়ের মিষ্টি কণ্ঠে ঘুম ভাঙলো। মাথায় মায়ের হাতের উষ্ণ স্পর্শে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। উষ্ণতা পেয়ে বালিশ ছেড়ে মায়ের কোলে মাথা গুঁজে দিলো।
“কি হয়েছে বাবা? শরীর খারাপ লাগছে?”
অর্ণব মাথা নেড়ে ‘না’ জানালো। বলতে বলতে ছেলের গালে, মুখে হাত ছোয়ালেন।
“তাহলে কি হয়েছে? আজ এতো বেলা অবধি ঘুমিয়ে আছিস যে? এমনি দিন তো ভোর বেলা উঠে যাস”
অর্ণব ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল,
“তোমার বউমার রোগে ধরেছে আম্মু। তাড়াতাড়ি বউ এনে দেও নাহয় আমার অসুখ ভালো হবে না”
মেহনাজ বেগম ছেলের বাহুতে চাপর মা*রলো।
“আমি তোর মা হই সেটা ভুলে গিয়েছিস? অ*সভ্য ছেলে”
“দুজনই একই কথা বলছো?”
“আমি ছাড়া আর কে তোকে অ*সভ্য বলল?”
অর্ণব গাল ফুলিয়ে বলল,
“কে আবার তোমার বউমা”
মেহনাজ বেগম হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতে বললেন,
“একদম ঠিক বলেছে। বাবা-ব্যাটা দুজনই অ*সভ্য। কারোই মুখে লাগাম নেই। বেলাজ কোথাকার!”
“আমায় বলছো ভালো কথা আব্বু কে টানছো কেন? আমার সুপুরুষ আব্বাজান”
মেহনাজ বেগম বিড়বিড় করে বলল,
“সুপুরুষ না কি সেটা আমার জানা আছে”
“তুই ওঠ। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় আমি তোর খাবার রেডি করছি”
“আরেকটু ঘুমাই না!”
“তুই ঘুমাতে থাক ওদিকে সূর্য মাথার ওপর উঠে গেছে”
অর্ণব এক লাফে উঠে বসলো। বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল,
“না। এখন আর ঘুমানো যাবে না। শরীর চর্চা করতে হবে। এমনি তোমার বউমা পাত্তা দেয় না। মোটু হয়ে গেলে আরো পাত্তা দিবে না। তখন আমার কি হবে?”
অর্ণব হুড়মুড় করে ওয়াশরুমে চলে গেল। মেহনাজ বেগম কপাল চাপড়ে বলল,
“ব*জ্জাত ছেলে”
——-
আনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে তৈরী হচ্ছে। ঘুম থেকে উঠতে আজকে দেরি হয়ে গেছে। আশালতা বেগম একটু আগে এসে বকতে বকতে উঠিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখলো সকাল নয়টা বাজে। দশটা বাজে ওর ক্লাস আছে। রেডি হওয়া শেষে কোনো মতে ব্যাগটা নিয়ে ছুটলো। নিচে অর্ষা দাঁড়িয়ে আছে। এই পর্যন্ত বিশ টার ওপরে কল দিয়ে ফেলেছে। ওর জন্য মেয়েটার ও দেরি হচ্ছে। আনায়াকে নামতে দেখে আশালতা বেগম টেবিলে বসতে বলল। আনায়া একটু জোরেই বলে উঠলো,
“এখন সময় নেই আম্মু। দেরি হয়ে যাচ্ছে”
“তাই বলে খালি মুখে যাবি?”
“আমি ক্যান্টিন থেকে খেয়ে নিবো। তুমি চিন্তা করো না। আমি গেলাম”
আনায়া বেরিয়ে এলো। বাহিরে এসে দেখলো অর্ষা রিক্সা দাঁড় করিয়ে রেখেছে। রিক্সায় উঠতে উঠতে বলল,
“সরি ইয়ার। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে”
অর্ষা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। চুপচাপ রইল। পুরোটা রাস্তা দুজনের নীরবতায় কেটে গেল। ভার্সিটির সামনে এলে দুজন নেমে পড়লো। এগিয়ে গেলে ভিতরে। ক্লাসে বসে আনায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। রাইহা এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে আজকে এতো দেরি করে এলি?”
অর্ষা গাল ফুলিয়ে রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“মহা রানীর ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গিয়েছিল তাই”
“তুই আমার ওপর এখনো রেগে আছিস?”
অর্ষা আনায়ার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। বলবে না কথা ওর সাথে। আনায়া কিছু বলবে তার আগে ক্লাসে প্রফেসর চলে এলো।
পরপর তিনটে ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে এসে বসেছে আনায়া আর তার বন্ধু মহল। খিদেয় আনায়ার পেটে চু চু করছে। সকালেও কিছু খায়নি। খাবার অর্ডার দিয়ে সবাই আড্ডায় মজলো। অর্ষা এখনো আনায়াকে ইগনোর করছে। রাইহা, দিয়ার সাথে কথা বলছে তবে ওর সাথে না। আনায়া ভালো করেই জানে অর্ষা ওর সাথে বেশিক্ষন কথা না বলে থাকতেই পারবে না। নিজে এসেই কথা বলবে। তাই আনায়াও বিষয়টা তেমন পাত্তা দিলো না। গল্প করতে ব্যাস্ত হলো। খাবার আসলে সবাই খাওয়ায় ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। খাওয়া শেষে ক্যাম্পাস টা ঘুরে ঘুরে দেখছে। অনেক দিন হলো ক্লাস আর পড়াশোনার চক্করে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা হয়নি। আনায়া রাইহার সাথে আগে আগে আর অর্ষা দিয়ার সাথে পিছনে আসছে। কথা বলার এক পর্যায়ে একটা মেয়ে এলো আনায়ার কাছে। হুট্ করে সামনে কাউকে দাঁড়াতে দেখে আনায়া হাঁটা থামিয়ে দিলো। ভদ্র ভাবে জিজ্ঞেস করলো,
“কিছু বলবেন আপু?”
“তোমাকে একজন ভাইয়া ডেকেছে”
“কে ডেকেছে?”
“নাম তো জানি না তবে তার পরনে সাদা রঙের পাঞ্জাবী ছিলো”
আনায়ার কপাল কুচকে গেল। সাদা রঙের পাঞ্জাবী পরিহিত কে হতে পারে? এক সেকেন্ডের মাথায় মনে পড়লো অর্ণবই তো সব সময় সাদা রঙের পাঞ্জাবী পড়ে। কিন্তু ও এখানে আসবে কি করে? ওর তো এখন পার্টি অফিসে থাকার কথা। তবে কি আনায়াকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে? আনন্দে আনায়ার মন নেচে উঠলো। খুশি মনে জিজ্ঞেস করলো,
“কোথায় সে?”
“তিন নাম্বার ক্যাম্পাসের পিছনে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে”
মেয়েটা চলে গেল। আনায়া কিছু জিজ্ঞেস করবে সেই সুযোগ ও দিলো না। এতক্ষনে অর্ষাও এগিয়ে এসেছে। রাইহার কাছে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে রে?”
রাইহা অর্ষাকে খুলে বলল। রাইহা ফের বলে উঠলো,
“কিন্তু তিন নাম্বার ক্যাম্পাসের পিছনের জায়গাটা অনেক নীরব। সাধারণত সেখানে কেউ যায় না”
অর্ষা চিন্তিত মুখে বলল,
“তাহলে যাওয়ার দরকার নেই”
আনায়া মন মন করছে। একবার যেতে ইচ্ছে করছে আবার রাইহার কথা শুনে মনে প্রশ্ন জাগছে। অর্ণব কেন ওকে এমন একটা নীরব জায়গায় ডাকবে? দিয়া বলল,
“তাও যেয়ে দেখ হতে পারে চেনা কেউ”
“ঠিক আছে”
বলে আনায়া এগিয়ে যেতে নিলো। পিছন থেকে অর্ষা বলে উঠলো,
“আমিও তোর সাথে যাবো”,
অর্ষার সাথে তাল দিয়ে রাইহা আর দিয়াও যাবে বলল। তবে ওরা ক্যাম্পাসের পিছনে যাবে না। একটু আগে দাড়িয়ে থাকবে। যতই হোক অমন নীরব একটা জায়গায় বান্ধবীকে একা ছাড়া যাবে না। আনায়ার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। এইযে একটু আগে অর্ষা ওর সাথে রেগে ছিলো কথা বলছিলো না। সেই মেয়েটাই এখন ওর সেফটির কথা ভেবে ওর সাথে যেতে চাইছে। আনায়ার মনের মাঝে কেমন ভয় ভয় করছে। ক্যাম্পাসের সামনে এসে অর্ষা বলল,
“তুই যা আমরা এদিকটায় আছি”
আনায়া ভীতু মনে এগিয়ে গেল। মনের মাঝে কেমন কু গাইছে। হৃদস্পন্দনও অস্বাভাবিক মাত্রায় হচ্ছে। আনায়া এগিয়ে গেল। আশেপাশে কারো অস্তিত্ব নেই। দুরু দুরু বুক কাঁপছে। আচমকা কেউ পিছন থেকে আনায়ার নাকের ওপর কিছু চেপে ধরলো। আনায়া কিছু বলার সুযোগ পেল না। আস্তে আস্তে ভারসাম্য হারাতে লাগলো। লুটিয়ে পড়লো কারো বাহুডোরে।
#চলবে?