অতঃপর গল্পটা তোমার পর্ব-১৪

0
2

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার
সমুদ্রিত সুমি
১৪
ড্রইংরুমে বসে তোহফা নখ খুঁটছে, সময় বিকাল তিনটে। ঘরের এককোণে দাঁড়িয়ে আছে ইলা ও লিমা। দু’জনে বারবার উঁকিঝুকি দিচ্ছে রান্না ঘরের ভেতরে। রান্না ঘরে জাহানারা বেগম টুকিটাকি হাতের কাজ শেষ করে নিচ্ছেন। জাহানারা বেগমকে ইলা, লিমা ও তোহফা পাহারা দিচ্ছে কখন তার কাজ শেষ হবে এবং সে ঘরে যাবে। তবে তার কাজ শেষ হচ্ছে না কেন এটাই ভেবে চলেছে বারবার। আজ নিঝুমের বিয়ে। ননদ ভাবিরা মিলে ঠিক করেছে নিঝুমের বরকে দেখতে যাবে জাহানারা বেগমকে লুকিয়ে, তাই তো তাদের এমন লুকোচুরি ভাব। অবশেষে জাহানারা বেগম আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। লিমাকে চোরের মতো এদিক ওদিক তাকাতে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,

“ওভাবে কী দেখছো?”

জাহানারা বেগমের কথায় তিনজনই চোখ তুলে তাকায়। সবাইকে নিজের দিকে ভীত চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে জাহানারা বেগম অবাক হলেন। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,

“কি হলো কথা বলছো না কেন? আর আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী? কিছু হয়েছে?”

মায়ের এমন রূপ দেখে তৎক্ষনাৎ তোহফা উঠে দাঁড়াল। কোনদিকে না তাকিয়ে বলল,

“ম–মা আ-আমি কিছু করিনি যা করেছে ভাবিরা করেছে, আমি নির্দোষ বিশ্বাস…”

“এখানে বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা কোথ থেকে এলো। আর তুমি কিছু করোনি মানে ওরা কি করেছে?”

“না আসলে, আসলে আমি কিছু জানি না।”

মেয়ের এমন বোকা বোকা কথায় জাহানারা বেগমের আরো সন্দেহ হয় সে রাগী দৃষ্টিতে তোহফার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

“জানো না মানে? ইলা যে আমায় বলল সব তোমার দোষ।”

“আমার, আমার দোষ বলেছে ভাবি বিশ্বাস মা আমি কিছু করিনি যা করেছে তোমার এই গুনধর পুত্রবধূরা করেছে আমি কিন্তু নিষ্পাপ।”

তোহফার কথায় ইলা ও লিমা বিষম খেল। চোখের ইশারায় তোহফাকে চুপ করতে বলল তবে তোহফার যে মায়ের ভয়ে অবস্থা নাজেহাল সে পারছে না দৌড়ে পালাতে৷ জাহানারা বেগম কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে তাকিয়ে দুম করে ইলা ও লিমার দিকে তাকায়। জাহানারা বেগমকে তাকাতে দেখে ইলা বলে,

“শেষ, আজ আমরা শেষ। কেউ বাঁচাতে পারবে না মায়ের হাত থেকে, নির্ঘাত এই বয়সে এসে শাশুড়ী মায়ের হাতে মার খেতে হবে।”

ইলার ফিসফিসানি শুনে লিমা বলে,

“ভীতুর ডিমকে দলে আনাই উচিত হয়নি। আজ আমরা শে….”

“এই কি বলছ বিরবির করে দু’জনে।”

“আসলে মা হয়েছে কী আমরা ভাবছি আমরা সবাই…”

“আমরা সবাই লুডু খেলব আপনি ঘুমিয়ে পড়তেই।”

ইলার মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে কথাটা বলল লিমা। আর অন্যদিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে তোহফা। তোহফা ফাঁক বুঝেই হঠাৎ মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভোঁ দৌড় দিয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। তোহফাকে ছুটে পালিয়ে যেতে দেখে জাহানারা বেগমের সন্দেহ দ্বিগুণ হয় তাই তিনি কিছু একটা ভেবে বলে,

“তোমরা তিনজনে নিঝুমের বর দেখতে যাবার প্ল্যান করেছিলে তাই না ইলা?”

নিজেদের বোকামির জন্য এভাবে ধরা পরে গেছে ভাবতেই ইলার কান্না আসে। এই তোহফাকে নিয়ে কখনো চুরি করা যায় না। হয় মেয়েটা কাঁদবে না-হয় এমন কিছু কাজ করবে যে তাদের ধরা পড়তেই হবে। আচ্ছা করে দিতে হবে সামনে পেলে। তবে এই মুহূর্তে তার শাশুড়ীকে ঠান্ডা করতে হবে। ইলা জব্বর একটা গল্প তৈরি করে বলে,

“আমি তো এখন ঘুমাব মা, আমার সেই আকারে ঘুম এসেছে বিশ্বাস কর। এই দেখেন আমি কেমন হাই তুলছি।”

এই কথা বলে ইলা হাই তুলতে তুলতে দেয় ভোঁ দৌড় আর একা বেচারি লিমা ওখানেই ফেঁসে যায়। মনে মনে নিজেকে গালি দিতে ভুলে না, “এদের দল ভারি না করলে-ও হতো এখন শাশুড়ীকে কী বলে সে এখান থেকে পগারপার হবে। ”

“আসলে মা হয়েছে কী? আমি কিছু জানি না এটাই হয়েছে।”

কথা শেষ হতে দেরি লিমা পালাতে দেরি করলো না। আর সবাইকে এভাবে পালিয়ে যেতে দেখে জাহানারা বেগম হা করে তাকিয়ে রইলেন। এদের হয়েছে কী? আর কী প্ল্যান করেছিল?

অন্যদিকে তোহফা দৌড়ে ঘরে আসতেই আওয়াদের ঘুম ছুটে যায়। অতিরিক্ত শরীর দূর্বলের জন্য তার হুট করেই ঘুমটা বেড়েছে। তোহফা বুক চেপে শ্বাস নিতে থাকে। আওয়াদ চোখ ডলতে ডলতে বলে,

“কী হয়েছে এভাবে হাঁপাচ্ছো কেন?”

তোহফা আওয়াদকে হাত দিয়ে ইশারা করে চুপ করতে বলে। কিছুক্ষণ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,

“জানেন না আজ জোর বাঁচা বেঁচে গেছি। মা যদি একবার সত্যিটা জানতে পারত আজ নির্ঘাত গণপিটুনি দিত।”

“মানে, কি হয়েছে?”

“বড় ভাবির মনে শখ জেগেছে নিঝুম আপুর বর দেখবে। অথচ তার মা গতকাল ভাবিকে যা নয় তাই বলল। তাই তো মা ওই বাড়ির মুখো হতে সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছে, কিন্তু বড় ভাবি তো বড় ভাবি তাকে কীভাবে মানাব। সে ছোট বেলায় নাকি কোনো বাড়িতেই নতুন বর এলে চুরি করে তাকে দেখতে যেত! সেই ছোট্ট বেলার ভূত এখন মাথায় চেপেছে। আমাদেরও তার দলে যোগ করেছে। অবশেষে মা’কে পাহারা দিয়ে যেতে চাইলাম, তবে মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোথাও যাওয়া তো দূর কিছু বলাও সম্ভব না। তাই ফলাফল এই অবস্থা।”

তোহফার গড়গড় করে বলা যাওয়া সব কথা শুনে আওয়াদ হাসে। আওয়াদকে হাসতে দেখে তোহফা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

“ওভাবে হাসছেন কেন?”

“হাসছি এটা ভেবে চোর গুলো একটাও জাতের না এবং পারদর্শী নয়।”

“এই আপনি আমাদের চোর বললেন, আপনার সাহস তো কম না।”

“সাহসের কি দেখলে, তোমরা নিচ তলায় গিয়ে বর দেখবে সেটার জন্য এত লুকোচুরির কী আছে! নিজেদের বেলকনিতে দাঁড়ালেই তো বর সহ সকল আত্মীয় স্বজনদের দেখা যায়, তাতে করে কী আন্টিকে এভাবে পাহারা দেওয়া লাগে নাকি।”

আওয়াদের কথা যুক্তিসঙ্গত। তোহফা কিছু একটা ভেবে বলল,

“দাঁড়ান এখনি আসছি।”

“কোথায় যাচ্ছো?”

“ভাবিদের বলতে।”

“আগে শুনো কথা আছে।”

“কী?”

“কাছে আসো বলছি।”

“কাছেই তো আছি বলেন।”

“কাছে কোথায়? তুমি দরজার কাছে আমি বিছানায় এখন কথা কী fly kiss মতো ছুঁড়ে দিব।”

” আপনি একটা যাতা, আচ্ছা আসছি।”

এই কথা বলে তোহফা খানিক এগিয়ে যায়। আওয়াদ ইশারায় আরো কাছে ডাকলে তোহফা চোখ মোটা করে বলে,

“আর কত কাছে আসবো, আসতে আসতে তো একদম কাছে চলে এসেছি।”

“ততটা কাছে আসবে যতটা কাছে আসলে দু’জন দু’জনার নিশ্বাস অনুভব করতে পারি।”

আওয়াদের কথায় তোহফা চমকপ্রদ হয়ে তাকায়। তোহফার চোখের কোণে লজ্জারা ভিড় করে, সে আমতা আমতা করে বলে,

“আমার কাজ আছে আমি আসছি।”

এই কথা বলেই তোহফা একছুটে দরজার নিকট চলে যায়। আওয়াদ নেশালো কন্ঠে বলে ওঠে,

“প্লিজ তোহফা একটু শুনে যা-ও”

এমন আকুলতা কন্ঠ উপেক্ষা করে তোহফা আর এগিয়ে যাওয়ার উপায় থাকে না। সে এক-পা দু’পা করে আওয়াদের নিকট ফিরে আসে। আওয়াদের মুখোমুখি বসতেই তোহফার বুক ধক করে ওঠে, হৃদপিণ্ড ওঠানামা করে অস্বাভাবিক ভাবে। কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই কেটে যায়। তোহফা মুখ নিচু করে আছে আওয়াদ তোহফাকে দেখে চলেছে। মেয়েটার এই লজ্জামিশ্রিত চেহারায় একরাশ মুগ্ধতা খুঁজে পায় আওয়াদ। আওয়াদ তোহফার থুতনি উঁচু করে তোহফার মুখখানা তার আঁখি জোড়ার খুব কাছে টেনে আনে। তোহফার আঁখি পল্লব জোড়া বন্ধ। আওয়াদ পলকহীন তাকিয়ে দেখে তোহফাকে। হুট করেই তোহফার বন্ধ চোখে চুমু খায়। তোহফার রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেগে ওঠে শিহরণ। তোহফার শরীর ঠান্ডা বরফের ন্যায় জমে যায়। তোহফা লজ্জায় নিজের মুখটা আরো নিচু করে নেয়। আওয়াদ হাসে। তারপর বলে,

“ভাঙাচোরা এই বুকে তোমায় জড়াবে তোহফা। অশান্ত বুকটা তোমায় একটু জড়িয়ে নিতে চাইছে, আসবে এই বুকে?”

তোহফা চোখ বন্ধ করেই আওয়াদকে নিজের বাহু দিয়ে জড়িয়ে নেয়। আওয়াদ তার ডান হাত দিয়ে তোহফাকে জড়িয়ে নিজেও পরম আবেশে চোখ বুজে। আওয়াদ অনুভব করে তোহফাকে বুকে জড়াতেই তার ব্যথাতুর শরীর অনেকটাই হাল্কা হয়ে গেছে। তার অশান্ত মনটা অনেকটাই শান্ত এখন। এই কয়েক দিনের মাঝেই মেয়েটা তাকে কী এমন জাদু করলো যে আওয়াদ তোহফার সঙ্গ না পেলে নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়। আওয়াদ আচমকা তোহফার ঘাড়ে নাক ডুবাতেই তোহফার পিলে চমকে ওঠে। তোহফা নড়েচড়ে বসতেই আওয়াদ হেসে বলে,

“মেয়ে তুমি সব কিছুতেই এত ভয় পাও কেন? আমি চাইলেও কিছু করতে পারব না! কারণ এই যে…”

আওয়াদের কথার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে তোহফা আওয়াদের কানের লতিতে কামড় দিয়ে দৌড়ে পালায়। আওয়াদ আহ করে আর্তনাদ করে উঠতেই তোহফার দরজার কোণে মাথাটা একটু বের করে বলে,

“আমাকে কারণে অকারণে লজ্জা দেওয়ার শাস্তি এটা। লাগামহীন পুরুষ আপনি মুখে কিছু আটকায় না।”

কথাটা বলেই তোহফা পালিয়ে গেল। আওয়াদ কানের লতিতে হাত বুলিয়ে বিরবির করে,

“কাছে এসে যতটা মন শান্ত করে, হুটহাট দূরে গিয়ে অষ্টাদশী কন্যার মতো হৃদয়টা ততটাই উদগ্রীব করে।”

তোহফা ইলার ঘরে উঁকিঝুঁকি মারছে। তবে ইলা ঘরের দরজা বন্ধ। অবশেষে উপায় না পেয়ে তোহফা দরজা নক করল। দরজার টোকা পেয়ে ইলা বলল,

“একদম জ্বালাবে না তোহফা, তুমি সব সময় আমাদের মায়ের সামনে ফাঁসিয়ে পালিয়ে আসো। আজ রাগ করেছি খুব।”

তোহফা ইলার কথায় মুখ ভার করে বলে,

“আমি খুব সরি ভাবি, আর হবে না সত্যি বলছি। একটা জব্বর প্ল্যান নিয়ে এসেছি এসো না প্লিজ। ”

“কোনো প্লিজে আর সরিতে কাজ হবে না তোহফা! আমি আগামী তিন মিনিটের জন্য রাগ হয়েছি আমি, কথা বলবো না আগামী তিন মিনিট।”

“ভাবি তিন মিনিট একটু বেশি হলো না।”

“তুমি কী আমায় খোঁচা মেরে কথা বলছো তোহফা? ঠিক আছে সময়সীমা নির্ধারণে থেকে আরো বাড়িয়ে দিলাম। তিন মিনিট থেকে আরো এক মিনিট যোগ করে চার মিনিট করে দিলাম ডান।”

“ও ভাবি, ভাবি গো, আমার সোনা ভাবি, লক্ষী ভাবি আর হবে না দরজাটা খোল প্লিজ।”

অবশেষে উপায় না পেয়ে ইলা দরজা খুলে দিলো। ইলা দরজা খুলে দিতেই তোহফা ইলাকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

“এই যে আমার সোনা ভাবিটা রাগ করে না। শোন, একটা সুন্দর আইডিয়া নিয়ে এসেছি, শুনলেই তুমি উপর তলা থেকে নিচ তলায় লাফ দিবা।”

“এ্যা কী বললে তুমি, উপর তলা থেকে নিচ তলায় লাফ দিলে আমার হাত-পা ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হবে না?”

” আরে শুনো, আমরা মায়ের বেলকনিতে দাঁড়ালেই তো নিঝুমের বরকে দেখতে পাব তাই না? মায়ের বেলকনির সোজাসুজিই তো নিঝুমদের ঘর।”

“এখন মায়ের রুমে গিয়ে যদি বলি নিঝুমের বরকে দেখার জন্য তার বেলকনিতে এসেছি তাহলে আর রক্ষে নেই।”

“আরে কিচ্ছু হবে না চলো মা নিশ্চয়ই এখন ঘুমাচ্ছে।”

“না তোহফা, একটু আগে মায়ের কাছে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছি! এবার ধরা পড়লে বকবে।”

“আরে কিছু বলবে না, আমি আছি না।”

“তুমি আছো বলেই তো ভয়, কারণ তুমি খুব খারাপ, হুটহাট রঙ বদলাও।”

“তুমি আমায় গিরগিটি বললে।”

“এ্যা মা এটা কখন বললাম।”

“বলেছো আমি বুঝতে পারছি।”

“সত্যি বলছি আমি এটা বলিনি। ”

“আমি বিশ্বাস করি না।”

“এখন বিশ্বাস করাতে আমাকে কী করতে হবে?”

“এই তো ভালো মেয়ে, আমার সাথে গেলেই হবে আর কিছু করতে হবে না।”

“তাহলে লিমাকে ডাকি।”

“হুম ডাকো ডাকো।”

তারপর ননদ ভাবিরা মিলে জাহানারা বেগমের ঘরে এগিয়ে যায়। জাহানারা বেগমের ঘরে খুব সাবধানে উঁকি মারে জাহানারা বেগম ঘুমিয়েছে কিনা দেখার জন্য, তবে জাহানারা বেগম ঘরের কোথাও নেই দেখে তিনজনই ‘হুররেএ’ বলে চাপা চিৎকার করে। তারপর গুটিগুটি পায়ে তারা বেলকনির নিকট এগিয়ে যায়। আচমকা বেলকনিতে যেতেই জাহানারা বেগমের মুখোমুখি হয়ে যায় তিনজনই। জাহানারা বেগম ঘরে নেই দেখে ওরা ভুলে যায় তিনি বেলকনিতে থাকতেই পারে কোনভাবে। তখন তো এটা সেটা বলে রেহাই পেয়েছিল এবার কী বলে রেহাই পাবে তারা।

“এখানে কী করছো তোমরা?”

এবার জাহানারা বেগমের কন্ঠ একটু বেশিই গম্ভীর শোনা গেল। ইলা ও লিমা এদিক ওদিক তাকিয়ে কি বলবে ভাবছে আকস্মিক তোহফা এক প্রশ্ন করে বসে তার মাকে,

“মা তুমি নিচু হয়ে কী দেখছিলে তখন?”

তোহফার কথায় জাহানারা বেগম শুকনো কাশি দিলেন। গলা পরিষ্কার করার ভান করে বললেন,

“কই কিছু না তো।”

“কিন্তু আমি যে দেখলাম তুমি কিছু দেখছিলে।”

“একদম কিছু দেখছিলাম না।”

“মা তুমি লুকিয়ে নিঝুমের বর দেখছিলে।”

তোহফার আকস্মিক কথায় ইলা ও লিমা মুখ হা করে ফেলে। আর জাহানারা বেগম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে যায়। তোহফা কিঞ্চিৎ এগিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,

“আওয়াদ আমাদের চোর বলছে এবং বলেছে! আমরা একটাও জাতের এবং পারদর্শী চোর নই। তাহলে তোমাদের জামাইয়ের ভাষ্যমতে তুমিও জাতের এবং পারদর্শী চোর নও তাই আমাদের কাছে ধরা পড়ে গেলে বলো ঠিক বলেছি না? তো এখন একটা কথা বলি আসো সবাই মিলে গলা জড়াজড়ি করে কিছুক্ষণ কেঁদেকেটে তারপর একসাথে আজ সবাই বর দেখি, তাতে যদি দুঃখ কিছুটা কম অনুভব হয়। এতক্ষণ আমরা একে-অপরকে পাহারায় রাখছিলাম এবার লুকিয়ে নয় একসাথেই মিলেমিশে নতুন বর দেখি।”

তোহফার কথায় একসাথে সবাই হেসে দিলো। চারজনেরই একসাথে গলা জড়িয়ে হাসতে হাসতে বেলকনি থেকে নিচে তাকাল। কয়েক মুহূর্ত পর কান্নাকাটির আওয়াজ কানে আসতেই বোঝা গেল মেয়ে বিদায়ের সময় এসে গেছে। অবশেষে ওখান থেকেই সবাই নিঝুমের বরকে দেখে নিলো।

ইন শা আল্লাহ চলবে…..

অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ।