রেড রোজ পর্ব-০৩

0
6

#রেড_রোজ
পার্ট [০৩](লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইড)
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত)
শীতের স্নিগ্ধতায় সকাল সকাল গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে বার্লিনের বার্ড কলেজ বার্লিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা।ওর সাথে আছে সিরাত,উৎসার আজ ফার্স্ট ক্লাস ভীষণ এক্সাইটেড সে।
বাইরের দেশে এমন একটা কলেজে চান্স পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। হয়তো উৎসার ভাগ্য ভালো তাই সে পেয়েছে। মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া প্রকাশ করলো উৎসা।
কলেজের ভেতরে করলো দু’জনে, অতঃপর ক্লাস।যেহেতু উৎসা মানবিক নিয়েই ডিগ্রি করবে তাই নিজের ক্লাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

পাঁচ মিনিট হয়েছে হেলিকপ্টার এসে ল্যান্ড করেছে যথার্থ স্থানে। ঐশ্বর্য সেই কখন থেকে মুখে মাস্ক লাগিয়ে শুয়ে আছে। কেয়া আইস কিউব এনে ওর মুখে দিয়ে দিলো, ঐশ্বর্য হকচকিয়ে উঠে গেলো।
“হোয়াট দ্যা হেল?”

জিসান আর কেয়া হেসে উঠলো, ঐশ্বর্য বিরক্ত হয়।
“জাস্ট শাট আপ, জিসান আইস কিউব দে।”

জিসান ঐশ্বর্যের হাতে বরফ তুলে দিতেই ঐশ্বর্য গাড়ির ভেতরে গিয়ে জিন্সের ভেতরে রেখে দেয়।আপাতত তার শান্তি চাই। ঐশ্বর্যের এহন কা’ন্ডে তম্বা খেয়ে গেল জিসান।

“শা’লা তুইও না?ছে।”

ঐশ্বর্য চোখের উপর হাত রেখে নাক টেনে বলে।
“যা এখান থেকে না হলে তোর মুখেও বরফ দিয়ে দেবো।”

জিসান বললো।
“তুই পা’ক্কা মেয়েবা’জ।”

“রিয়েলি?”

জিসান দাঁত দেখালো, ঐশ্বর্য বললো।
“মেয়েরা জাস্ট ইউজ করার জন্য লাইক অ্যা ড্রেস অর টিস্যুজ।”

“আর কেয়া?”

জিসান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ,ঐশ্বর্য ছ উচ্চারণ করে বলে।
“সি ইজ মাই ফ্রেন্ড।”

“বাট সি ইজ অ্যা গার্ল!”

“সো হোয়াট? আমি কখনো দেখিনি কেয়া বাজে কিছু করতে,ওর মধ্যে এমন কোনো খারাপ নেই। হয়তো ফ্লার্টিং করে কিন্তু ওর মন খারাপ না।”
জিসান বেশ মজা নিয়ে বলে।
“তাহলে কেয়া কে বিয়ে কর।”

“বিয়ে মাই ফুট,বিয়ে নামক কোনো শব্দ ডিকশনারিতে নেই।”

জিসান পকেটে হাত গুজে বলে।
“কিন্তু আমি তোকে বিয়ে দিয়েই ছাড়ব, একমাত্র ভাবী ছাড়া কেউই তোকে ভালো করতে পারবে না,শেইমলেস একটা।”

ঐশ্বর্য গুরুত্ব দিলো না, বেচারি কেয়া এসে ঐশ্বর্যের পায়ের কাছে বসলো।
“ব্রো একটা পার্টি করি চল।”

ঐশ্বর্য কি একটা ভেবে বললো।
“তাহলে যাওয়া যাক।আজ নাইটে পার্টি হোক।”

জিসান আর কেয়া হৈ হৈ করে উঠে।
_____________
“হ্যা তুই ঠিক আছিস তো উৎসা?”

নিকি উৎসা কে কল করেছে,নিকির ফোন পেয়ে কী আনন্দ উৎসার।
“হ্যা আপু আমি ঠিক আছি, তোমরা কেমন আছো?আর মা?”

“হ্যা হ্যা আমরা সবাই ঠিক আছি।তুই কিন্তু নিজের খেয়াল রাখিস।”

“হ্যা আপু অবশ্যই।”

“আর শুন মিহির খুঁজ পেলে আমাকে জানাতে ভুলবি না।”

“আচ্ছা আপু।”

ফোন রেখে রুমের দিকে রওনা দেয় নিকি হঠাৎ আফসানা পাটোয়ারী বললো।
“নিকি তুমি একটু বেশি চিন্তা করছো না উৎসা কে নিয়ে?”

নিকি ফুস করে শ্বাস টেনে নেয়।পিছন ফিরে তাকালো সে,বুকে হাত গুজে বলে।
“মাম্মা তুমি উৎসা কে স’হ্য নাই-বা করতে পারো কিন্তু আমি?ও আমার বোন হয়,তাই ওকে নিয়ে অবশ্যই চিন্তা করব।”

“নিকি,, ভুলে যেও না তুমি কার সঙ্গে কথা বলছো? আমি তোমার মা!”

নিকি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।
“আফসোস, সত্যি তুমি আমার মা বলেই হয়তো চুপ আছি। না হলে,,,যাই হোক আর বলতে চাইছি না।”

আফসানা পাটোয়ারী হতাশ হলো,এই মেয়ে তার কথা মোটেও শুনে না।
নিকি রুমের দিকে চলে গেলো।
________________
বার্গহাইন নাইট ক্লাবের সামনে এসে ব্ল্যাক মার্সিডিজ কার দাঁড়ালো।এই ক্লাব বার্লিন শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্লাব।এই ক্লাবে ঢুকতে মিনিমাম কেউ কেউ তিন ঘন্টারও বেশী দাঁড়িয়ে থাকে।
ঐশ্বর্য আর ওর ফ্রেন্ডরা ক্লাবের সামনে আসে। নিজের আইডি কার্ড সো করতেই ঐশ্বর্য, জিসান এবং কেয়া কে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়।

“আপু আপনি রোজ রোজ কোথায় যান?”

হোস্টেলের একটি মেয়ে রোজ সন্ধ্যায় নিজের কাজে যায়, মেয়েটি কায়রা,তিন বছর ধরে এই শহরে আছে। এই হোস্টেলের অনেক মেয়েকেই সে নিজের কাজে লাগিয়েছে,কিছু দিন আগেই শুনেছে হোস্টেলে নতুন একটা মেয়ে এসেছে।

“হো আর ইউ?”

কায়রা প্রশ্ন করে উৎসা কে,উৎসা অধরে হাসি ঝু’লিয়ে বললো।
“হাই আমি উৎসা,মানে অ্যাম উৎসা।”

“বাংলাতে বলতে পারো, আমি বাংলা জানি।”
উৎসা কায়রার কথা শুনে স্বস্তি পেলো।
“বললে না তুমি রোজ কোথায় যাও?আর গার্ড তোমাকে সন্ধ্যায় বাইরে অ্যালাও করে?

কায়রা বাঁ’কা হাসলো,সে যে কোথায় যায় সেটা গার্ড ভালো ভাবেই জানে।কায়রা উৎসা কে ভালো ভাবে পরখ করে নেয়, মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর।মনে মনে ভাবলো ওকে যদি কাজে লাগানো যায় তাহলে অবশ্যই বস তাকে এক্সট্রা চা’র্জ দেবে।যেমন ভাবনা তেমনি কাজ।কায়রা উৎসা কে বলে।
“এক্সুয়েলি আমি একটা জব করি,বলতে পারো পার্ট টাইম জব। তাই যেতে হয়।”

উৎসা বেশ উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“জব?”

কায়রা ছোট ছোট চোখ করে বলে।
“ইয়েস,এনি প্রবলেম?”

“নো নো।”

কায়রা অপেক্ষা করলো না, হাঁটতে লাগলো।উৎসা ভাবলো সেও যদি একটা পার্ট টাইম জব করে তাহলে খুব ভালো হবে।
কায়রা অপেক্ষা করছে কখন উৎসা তাকে ফের ডাকবে?তার ভাবনা সত্যি করে উৎসা দৌড়ে ওর সামনে চলে এলো।
“আপু ক্যান ইউ হেল্প মি প্লিজ?”

কায়রা হাসলো, অবশ্যই তা অগোচরে।
“ইয়েস আ’ল বি ট্রাই।”

“আসলে আপু আমিও স্টুডেন্ট আমিও পড়াশোনার পাশাপাশি জব করতে চাই। তুমি কী আমাকে হেল্প করবে।”

কায়রা মনে মনে বললো।এটাই তো চাইছিলাম।
“হ্যা অবশ্যই, তুমি বরং আমার সাথে চলো, আমাদের বসের সাথে মিট করিয়ে দেই।”

উৎসা ভাবনায় পড়ে গেল,এই সন্ধ্যায় যাবে?
“এখুনি যেতে হবে?”

“হ্যা,তুমি বরং তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।আর অবশ্যই ভালো ড্রেস পড়বে।”

উৎসা অবাক হয়।
“অফিস গ্রেট আপ?”

“নো ওয়ে, এখন তো বসের সাথে দেখা করবে,অফিস যখন যাবে তখন না হয় তেমন ভাবে যেও!”

উৎসা হ্যা সূচক মাথা নাড়ল।

বার্গহাইন ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা,পরণে তার রেড গাউন। কেমন একটা হাঁ’সফাঁ’স লাগছে তার,কায়রা এই ড্রেস পড়তে বলেছে উৎসা কে।
উৎসার কেমন একটা লাগছে? মনেই হচ্ছে না এখানে অফিসের কোনো কথা হবে!
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো কায়রা এখানে আসার পর রেস্ট রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে খুবই পাতলা এবং ছোট মিনি স্কার্ট পড়েছে।
“লেটস্ গো।”

“আপু এখানে তো অনেক লোকজন, এখানে আমার যাওয়া কী ঠিক হবে?”

কায়রা উৎসার কথায় বেশ বিরক্ত হয়,এই মেয়েটা অতিরিক্ত প্রশ্ন করে।
“দেখো উৎসা স্যার ভেতরেই আছেন,আর তোমাকে অবশ্যই ভেতরে যেতে হবে। নিশ্চয়ই উনি তোমার সাথে বাইরে এসে দেখা করবে না!”

উৎসার আর কোনো কথাই শুনলো না কায়রা।উৎসা কে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
খুব জো’রে সাউন্ড বক্সে গান বাজছে ক্লাবের।কেউ কেউ কাপল ডান্স করছে,কেউ বা নিজেদের মধ্যে ক্লোজ হচ্ছে।উৎসা কে স্টেজের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে দিলো কায়রা।
ঐশ্বর্য একটা ব্রিটিশ এক মেয়ের সাথে ডেস্পারেটলি ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছে। হঠাৎ করেই হোস্টার বললো।
“লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান ওয়েল কাম টু বার্গহাইন ক্লাব।
টু ডে উই হ্যাভ বুথ অ্যা সারপ্রাইজ ফর ইউ।সো প্লিজ ড্রো
ইওর অ্যাটেনশন টু দ্যা স্টেজ।”

সবাই স্টেজের দিকে তাকাতেই এক কৃত্রিম আলো এসে উপরে পড়লো উৎসার।লাইটের আলোয় পরণের লাল গাউন জ্ব’ল’জ্ব’ল করে উঠলো।উৎসা চোখ মুখ খিঁচিয়ে বন্ধ করে নেয়।
ঐশ্বর্য বেখেয়ালি ভাবে তাকায় উৎসার দিকে, ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার।
উৎসা পিটপিট চোখ করে তাকালো আশেপাশে,এত এত মানুষ দেখে তার ভয় করছে খুব। আশেপাশে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে সে।

জিসান আর কেয়া উৎসা কে দেখে হা হয়ে গেল।কায়রা ফের বললো।
“ইফ দ্যা লাকী ম্যান ওয়েন্ট টু স্প্যান দ্যা নাইট উইদ দিস বিউটিফুল গার্ল প্রাইভেট টু নাইট দ্যান ড্রপ দ্যা মানি।”

উৎসা কায়রার কথা শুনে চমকে উঠে।
“কী বলছো তুমি এসব আপু? আমি যাচ্ছি বাই।”

কায়রা উৎসার হাত চেপে ধরে।
“স্টপ, তুমি এসেছো নিজের ইচ্ছায় যাবে আমাদের ইচ্ছায়।”

উৎসা কায়রা কে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।
“অস’ভ্য মেয়ে আমাকে মিথ্যা বলে এখানে এনেছে।”

ঐশ্বর্য তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করে উৎসার পানে। বিড়বিড় করে আওড়াল।
” #রেড_রোজ।”

উৎসা বের হতেই যাবে এর মধ্যে একটা ছেলে ওর হাত ধরে বললো।
“বেবী ল্যাটস্ হ্যাভ ফান।”

উৎসা রাগে দুঃখে ঠাস করে চ’ড় বসালো ছেলেটির গালে।
“স্টে ওয়ে ফ্রম মি।”

ঐশ্বর্য ঠোঁট কামড়ে ধরে, জিসান কে বললো।
“আইস কিউব নিয়ে আয়।”

ঐশ্বর্য নাক মুখ কুঁচকে বলে।
“মেয়ে তো আছে আবার আইস কিউব দিয়ে কী করবি?”

ঐশ্বর্য দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“প্যান্টের ভেতর দেবো তুই দিবি?”

কেয়া ফিক করে হেসে নিজের মতো এ’নজয় করতে লাগলো।
জিসান গিয়ে আইস কিউব নিয়ে আসে।
_______
চোখের পানি মুছে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে উৎসা, এখানের মানুষজন এত খারাপ সে আগে জানলে অবশ্যই ওই মেয়ের সাথে আসতো না। আসলেই সবাই ঠিক বলে,মেয়েরাই মেয়েদের শ’ত্রু।
হাঁটতে হাঁটতে অচেনা জায়গায় চলে এলো উৎসা,এটা ঠিক কোন জায়গা বুঝতে পারছে না সে। তৎক্ষণাৎ বুঝলো কেউ একজন তার পিছনে আছে।ঘাড় বাঁ’কিয়ে তাকালো উৎসা, ক্লাবের সেই ছেলেটি কে দেখে চমকে উঠে।

“বেবী ডিডেন্ট ফিক্স মি বাই স্লেপিং।”

উৎসা ভয় পেয়ে গেলো,ছেলেটি এসে ওর হাত ঝাপটে ধরে।উৎসা চিৎকার করে উঠে।
“লিভ মি, সেইভ সাম ওয়ান প্লিজ।”

“হেই লিভ হিম।”

পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে সামনের দিকে তাকালো উৎসা,ব্ল্যাক ট্রি শার্ট আর জিন্স পরে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য। পকেটে হাত গুজে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করেছে সে। ঐশ্বর্য কে দেখে উৎসা কাঁপা গলায় বলল।
“আমাকে বাঁচান,সেইভ মি প্লিজ।”

উৎসা নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে,তার মাঝে ছেলেটি চিৎকার করে উঠল।
“হো দ্যা হেলার ইউ ম্যান?”

“ইওর ফাদার।”

ঐশ্বর্য গর্জে কথাটা বললো, ছেলেটি উৎসা কে ফেলে ঐশ্বর্যের দিকে এগুতেই হক স্ট্রিক দিয়ে সজোরে মাথায় মা’রলো। মূহুর্তে ছেলেটির নি’থ’র দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
উৎসা শুকনো ঢুল গিললো, ঐশ্বর্যের দিকে তাকাতেই মাথা ঘুরিয়ে সেও পড়ে যেতে নেয়। ঐশ্বর্য এগিয়ে গিয়ে এক হাতে ধরে ফেললো তাকে, কপালের চুল গুলো মুখে এসে আছড়ে পড়ল তার। ঐশ্বর্য ফু দিয়ে বিড়বিড় করে আওড়াল।
“ইউ লুক লাইক অ্যা #রেড_রোজ।”

চলবে…………….✨।