রেড রোজ পর্ব-০৬

0
5

#রেড_রোজ
পার্ট [০৬]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)

“কেয়ারটেকার?”

“হুঁ।”
সিরাত বই রেখে উৎসার পাশে এসে দাঁড়ালো।
“মানে কী? অচেনা জায়গায় তুমি কী করে কেয়ারটেকারের কাজ নিলে?”

“না না ওদের আমি চিনি।ওরা আমাকে সেদিন হেল্প করেছিল, এরপর আমার জব দরকার জেনে বললো কেয়ারটেকার হতে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে,তবে তুমি নিজের খেয়াল রেখো। সেদিন কী হয়েছিল ভুলে যেও না।”

উৎসা মৃদু হেসে বলল।
“একদম। আচ্ছা তাহলে আমি যাই? তুমি কলেজে চলে যেও আমি কাজ শেষে ঠিক সময়ে কলেজে পৌঁছে যাবো।”

“ওকে।

উৎসা নিজের বই গুলো ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে ছোট্ট করে জবাব দেয়।

ঐশ্বর্যের ইয়া বড় আলিশান বাড়ির সামনে এসে তম্বা খেয়ে গেলো উৎসা।এত বড় বাড়ির কেয়ারটেকার সে?ওমা তাহলে তো অনেক কাজ করতে হবে!
উৎসা ভয় পেলো,তবে মেইন গেটের সামনে আসতেই সিকিউরিটি গেট খুলে দিলো। উৎসা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো,মেইন ডোরের সামনে এসে দাঁড়ায়, কলিং বেল বাজাতে জিসান এলোমেলো অবস্থায় এসে দরজা খুলে দিল।
জিসান কে এমনতর অবস্থায় দেখে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল উৎসার। জিসান ভারী লজ্জা পেলো।
“হ্যালো মিস বাংলাদেশী!”

উৎসা জোরপূর্বক হাসলো। জিসান ওকে ভেতরে আসতে বলে,উৎসা কচ্ছপের গতিতে ভেতরে প্রবেশ করে।চমকে উঠে সে, বাড়িটা বাইরে থেকে না যতটা সুন্দর তার থেকেও বেশি সুন্দর ভেতরের পরিবেশ।
ড্রয়িং রুম পুরোটা এক্সপেনসিভ জিনিস পত্র দিয়ে সাজানো। মধ্যে খানে সোফা সেট,তার পাশে ডাইনিং টেবিল।পিছন দিকটায় উপরে যাওয়ার সিঁড়ি, সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে দেয়ালের পাশের ছোট্ট অ্যাকুরিয়াম।
ভেতরে রঙিন মাছ, অদ্ভুত সুন্দর দেখতে,তার পাশেই কাঁচের দেয়াল দেওয়া। বাইরের দৃশ্য স্পষ্ট দেখা যাবে।
উৎসা পুরো বাড়ি চোখ বুলিয়ে নেয়, ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী ঠিক কতটা বড়লোক তা বাড়ি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
শুকনো ঢুল গিললো উৎসা,এর মধ্যে ঐশ্বর্য এলোমেলো অবস্থায় বেরিয়ে আসে।চুল গুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে,উৎসা আশ্চর্যের অষ্টম আকাশ পাড় করে ফেললো। ঐশ্বর্যের প্যান্ট পর্যন্ত ভেজা, ঐশ্বর্য ঘুম ঘুম চোখে তাকায় উৎসার দিকে।পরণে সিলভার কালারের টপস আর লেডিস জিন্স,তার উপর একটা স্কাফ পড়া।
ঐশ্বর্যের এমন অবস্থা দেখে জিসান ভি’ম’ড়ি খায়।
“আআপনি কী বিছানায় হি..

“আরে ধুর কী বলছো মিস বাংলাদেশী?ওই আসলে আমরা রাতে একটু পার্টি করেছিলাম তখনই ওর প্যান্টের জুস পড়ে গিয়েছিল,সে জন্য ভেজা।”

উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ঐশ্বর্য নিষ্পলক চেয়ে আছে উৎসার বোকা বোকা মুখখানিয দিকে। জিসান জোরপূর্বক হেসে ঐশ্বর্য কে টেনে ভেতরের ঘরে নিয়ে গেলো।
দশ মিনিট পর বেরিয়ে এলো ঐশ্বর্য। জিসান একে বারে অফিস গ্রেট আপেই আছে। কিন্তু ঐশ্বর্য একটু এলোমেলো, ঐশ্বর্য এসে সোফায় বসলো।ফোনে স্ক্রল করতে করতে বললো।
” তা মিস উৎসা তুমি তো দেখছি ঠিক সময়েই এসেছো।”

উৎসা নিজের মতো বললো।
“আচ্ছা আমাকে কী করতে হবে?”

ঐশ্বর্য ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে বললো।
“কিছু না তবে আপাতত মিস মুনার সঙ্গে পরিচিত হতে হবে।”

উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“মিস মুনা কে?”

তৎক্ষণাৎ মিস মুনা ভেতরে আসলেন।
“গুড মর্নিং এভরি ওয়ান।”

উৎসা দেখলো মিস মুনা কে, মেয়েটি বয়স্ক তবে দেখতে বেশ সুন্দর।মুখ জুড়ে ভুবন ভোলানো হাসি।
“মিস মুনা সি ইজ মিস উৎসা,নিউ কেয়ারটেকার।”

মিস মুনা এগিয়ে এলো।
“হ্যালো উৎসা।”

“হাই।”

“এই যে উৎসা উনি আমাদের পুরনো কেয়ারটেকার।”

উৎসা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একজন কেয়ারটেকার থাকতে তাকে কেন রাখলো?
“তো মিস মুনা আপনি ওকে কাজ বুঝিয়ে দিন, আমাদের অফিসে যেতে লেইট হচ্ছে।

ঐশ্বর্য আর জিসান বেরিয়ে গেলো,তবে ঐশ্বর্যের হাতে আছে আইপ্যাড।
“আচ্ছা আমাকে কী করতে হবে? উপ্স স্যরি।”

মিস মুনা হাসলেন।
“নো প্রবলেম আমি বাংলা বুঝি ডিয়ার।”

উৎসা স্বস্তি পেলো, মিস মুনা বললেন।
“আপাতত তোমাকে কিছুই করতে হবে না, শুধু এই ড্রয়িং রুম পরিস্কার করে দাও।”

উৎসা ড্রয়িং দেখে মিনমিনে গলায় বলল।
“ড্রয়িং রুম তো পরিষ্কার আছে,কত সুন্দর গুছানো। তাহলে আমি করব টা কি?”

মিস মুনা কিচেনে গেলেন,উৎসা ওনার পিছু পিছু গেলো।
“মিস মুনা আমি কী করব? ড্রয়িং রুম তো পরিষ্কার।”

মিস মুনা শব্দ করে হেসে উঠলো।
“তাহলে বসে থাকো ম্যাম।”

উৎসা গুটি গুটি পায়ে ড্রয়িং রুমে গেলো,গুছানো ড্রয়িং রুম কে ফটাফট অগোছালো করে দিলো।
“এবার আমি গুছাবো। কাজ খুঁজে নিয়েছি।”

উৎসা ফের কুসান গুলো উঠিয়ে উঠিয়ে গুছিয়ে রাখতে শুরু করে। এদিকে এসব দেখে হেসে কু’টি’কু’টি অবস্থা ঐশ্বর্যের। নিজের সাথে নিয়ে আসা আইপ্যাডে সিসিটিভি ফুটেজ দেখছে ঐশ্বর্য,আর জিসান গাড়ি ড্রাইভ করছে।
ঐশ্বর্য দেখছে উৎসা কেমন এদিক থেকে ওদিক করছে, একবার বসছে আরেকবার গুছিয়ে দিচ্ছে। এরপর পরেই আবার গালে হাত দিয়ে ভাবছে।
এর মাঝে মিস মুনার রান্না শেষ,তিনি ড্রয়িং রুমে আসতেই উৎসা ওনার হাত ধরলেন, দু’জনে দুষ্টুমি করে কাপল ডান্স করে। হঠাৎ হঠাৎ ফিক করে হেসে উঠে উৎসা। ঐশ্বর্য বেশ গভীর দৃষ্টিতে উৎসা কে দেখছে, মেয়েটা খুব চঞ্চল আর দেখতেও কিন্তু কিউট বাচ্চাদের মতো।
“অ্যা #রেড_রোজ।”

জিসান ড্রাই করতে করতে বলে।
“তুই কেনো বেকার মেয়েটা কে রেখেছিস?”

“ফিজি…..

“থাম, বুঝে গেছি আমি। ফিজিক্যাল নি’ডস্ তাই তো?”

“ইয়েস।”

“শেইম লেস ম্যান।”

“নতুন শব্দ খুঁজ।”

জিসান দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ঐশ্বর্য ফের আইপ্যাডের দিকে দৃষ্টি দেয়।উৎসা দুষ্টুমি করতে করতে সময় পাস করে, কিছুক্ষণ পর নিজের ব্যাগ নিয়ে মিস মুনা কে বাই করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
________________
“ভাইয়া তুই বিয়ে কবে করবি?”

নিকির প্রশ্ন শুনে রুদ্র ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“কেনো রে হঠাৎ আমার বিয়ে নিয়ে তুই চিন্তা করছিস কেন?”

নিকি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গালে হাত দিয়ে বললো।
“আর বলিস না!তুই কবে যে ভাবী নিয়ে আসবি সেটাই ভাবছি।আর সবচেয়ে বড় কথা কেউ আদেও কী তোকে বিয়ে করবে?”

রুদ্র তে’তে উঠল।
“কেনো করবে না?”

“তুই মহা বিজি মানুষ,কেই বা নিজের জীবন বিজিতে দেবে?”

“যা সর,যখন করব তখন দেখে নিস। আমার বউ হবে সেই মেয়ে যে আমাকে বুঝবে আর আমি তাকে।”

এদিকে কেয়া ফ্লা’র্টিং করতেই ব্য’স্ত।লাইফে সে আপাত এন’জ’য় করবে,আর পরে বিয়ে করবে।

রুদ্রের কথা শুনে শব্দ করে হেসে উঠলো নিকি।
“দেখা যাক কী হয়?”

“দেখে নিস।”

রুদ্র দ্রুত পায়ে রুমের দিকে গেলো। ওদিকে নিকি বারান্দায় গেলো, খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াতে ভালো লাগে।
_____________
“লিসেন রেড রোজ ভালো হয়ে যাও না হলে আমি খারাপ হবো।”

উৎসা বোকা বোকা চাহনিতে তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের দিকে।
একটু আগেই কলেজ থেকে সোজা ঐশ্বর্যের বাড়িতে এসে উৎসা। এখানে এসে ঐশ্বর্য কে খালি গায়ে দেখে পিলে চমকে উঠে উৎসার।
ঐশ্বর্য ভেতরে গেলো ডোর খুলে,উৎসা পিছন পিছন গেলো।ব্যাগ ঠিক করতে গিয়ে এগুতে থাকে, কিন্তু ওদিকে ঐশ্বর্য দাঁড়িয়ে গেলো। যার দরুন উৎসা এগুতে এগুতে ওর মাথা গিয়ে ঐশ্বর্যের বুকে ঠেকলো। আঁ’তকে উঠে উৎসা, ঐশ্বর্যের বুকের ভেতর প্রথম বার কেঁপে উঠলো।
আচমকা ঐশ্বর্য উৎসার দিকে খানিকটা ঝুঁ’কে গেল।উৎসা সোফায় পিছন দিক দিয়ে নিজের হাত দিয়ে ভর দেয়। ঐশ্বর্য উৎসার মুখে ফু দেয়,চোখ বুজে নেয় উৎসা।
ঐশ্বর্যের কথা গুলো শিহরণ তুলছে উৎসার শরীরে।
“যাও জুশ নিয়ে এসো।”

উৎসা দ্রুত পায়ে কিচেনে গিয়ে জুশ নিয়ে আসে, এদিকে ঐশ্বর্য সোফায় বসে ফোনে গেইম খেলছে।
“ফল কে’টে দাও।”

উৎসা টেবিলের নিচে বসে পড়লো, ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায়।
“তুমি চাইলে সোফায় বসতেই পারো।”

উৎসা কাঁপা গলায় বলল।
“নো থ্যাংকস।”
আপাতত বাড়িতে কেউ নেই,মিস মুনা পাঁচটার মধ্যে চলে যান। এদিকে উৎসার ভীষণ ভয় করছে ঐশ্বর্য কে, আচমকাই।
উৎসা ফল টুকরো করে দিচ্ছে, ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে নিজের।কিছুটা কন্ট্রোললেস হচ্ছে সে, সামথিং নি’ডস্।

চলবে…………….।✨