#রেড_রোজ
পার্ট [১৩](লিভ ইন রিলেশনশিপ)
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
ঐশ্বর্য নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়,উৎসা ঐশ্বর্য কে প্রায় মিনিট পাঁচেকের মত জড়িয়ে আছে। এবার ঐশ্বর্য নিজ থেকে উৎসা কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
“স্টপ দিস ড্রামা।”
উৎসা কেঁপে উঠলো, ঐশ্বর্য উৎসার বাহু শক্ত করে চেপে ধরলো।
“আই নো ইউ অ্যা কল গার্ল,বাট লাইক দিস অন দ্যা স্ট্রিট?”
“প্লিজ চুপ করুন, না জেনে কেনো এসব বলছেন?”
ঐশ্বর্য নিজের রাগ সংবরণ করতে না পেরে উৎসা কে এক প্রকার গাড়িতে টেনে তুললো। খুবই স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়িতে পৌঁছায়।
ড্রয়িং রুমে গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা, এমনিতেই বাইরে যে পরিমাণ ঠান্ডা ছিলো তাতে তার শরীর জমে বরফ হয়ে গেছে। ঐশ্বর্য গর্জে উঠে।
“এত নি’ডস্ তাহলে তো আমার কাছেই আসতে পারতে?”
উৎসা যেনো নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না।এটা কী বলছে ঐশ্বর্য?
ঐশ্বর্য ফের বললো।
“আমি এখনও ভা’র্জিন আছি চাইলে চেক করতে পারো,কাম অন।”
ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর এহেন কথায় ছি’টকে দূরে সরে গেলো অষ্টাদশী কন্যা উৎসা।ওষ্ঠাদয় তীর তীর করে কাঁপছে তার,একটা মানুষ কী করে এত খারাপ হতে পারে তা জানা ছিলো না এই ছোট্ট মেয়ের।
ঐশ্বর্য উৎসা কে চুপ থাকতে দেখে ফের বললো।
“কী হলো সুইটহার্ট কাম অন,চেক করে দেখো তো একবার!”
উৎসার চোখ দুটো ইতিমধ্যেই অশ্রু কণায় ভরে উঠেছে, ঐশ্বর্যের থেকে দু হাত দূরে সরে গিয়ে মিনমিনে গলায় বলল।
“আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না ভাইয়া। আমি কিন্তু আপনার বোন!”
ঐশ্বর্য মূহুর্তে নিজের মুখশ্রী বদলে নেয়। চক্ষুদয় জ্ব’ল’জ্ব’ল করে উঠলো তার, কিয়ৎক্ষণ পূর্বের রাগ মূহুর্তে যেনো মাথা নাড়া দেয়। শক্ত হাতে সপাটে থা’প্প’ড় বসালো উৎসার নরম গালে।উৎসা ফ্লোরে পড়ে যায়, ঐশ্বর্য ফের উৎসা কে টেনে দাঁড় করিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“লিসেন মিস উৎসা না তোর বাপের সাথে আমার মায়ের কিছু ছিলো!আর না আমার বাপের সাথে তোর মায়ের কিছু ছিলো।সো ডোন্ট কল মি ভাইয়া, আমি তোর ভাই নই ইজেন্ট ইট ক্লিয়ার?”
উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“কী বলছেন আপনি এসব? আপনার বাবা আমার মায়ের খালাতো ভাই হয় তো! আপনি কী করে এত খারাপ ই’ঙ্গি’ত করছেন?যদি ওরা ভাই বোন হয় তাহলে তো সেই হিসেবে আপনি আমারো ভাই…
“জাস্ট শাট আপ বা’স্টার্ড।তুই আমার বোন টোন কিছুই না, আমার এসব বোন লাগে না,নাউ গেট লস্ট।”
ঐশ্বর্য কথাটা বলেই উৎসা কে ধাক্কা দিয়ে ড্রয়িং রুম থেকে মেইন ডোর দিয়ে বাইরে বের করে দিলো।
তুষারপাত হচ্ছে, ঠান্ডায় জমে যাওয়া উপক্রম হয়েছে উৎসার।সময়টা বছরের শেষ দিকে, বার্লিন শহরে আসার পর থেকেই উৎসা কে এই ঠান্ডার সাথে প্রতি নিয়ত লড়তে হচ্ছে। বছরের শেষ ডিসেম্বরের দিকে তাই ঠান্ডাটা বেশ জেঁ’কে বসেছে।
দরজায় বার কয়েক নক করা সত্বেও কেউ দরজা খুলল না। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে নিচে ফ্লোরে বসে পড়লো উৎসা।আপাতত রাস্তা পুরো তুষারের কারণে ডাকা পড়েছে, কোথায় যাবে কিছু বুঝতে পারছে না উৎসা।
নিজেই দু’হাতে ঘষে উষ্ণতা খুঁজছে,পরণের শুভ্র রঙা ওড়না ভালো করে শরীরে জড়িয়ে নিয়েছে সে।
হায় রে ভাগ্য তার! নিজের ভাগ্যের কথা ভেবে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো উৎসা।
“স্যার বাইরে তুষারপাত হচ্ছে আপনি যদি এখন ম্যাম কে এভাবে বাইরে রাখেন তাহলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে!”
“উফ্ শাট আপ মিস মুনা, প্লিজ আপনি গিয়ে নিজের কাজ করুন।”
মিস মুনা একজন কেয়ারটেকার,বহু বছর ধরেই এই দেশে তার বসবাস। ঐশ্বর্যের মা মিসেস মনিকা থাকা কালীন থেকে মিস মুনা কাজ করছেন।
হতাশ হয়ে মলিন মুখে জায়গা ত্যাগ করলেন মিস মুনা।
*বর্তমান*
বাইরে তুষারপাত হচ্ছে, ঠান্ডা যেনো আরো জেঁ’কে বসেছে। ঘুম কিছুটা হালকা হয়ে এলো উৎসার,শীতলতা কম লাগছে। উষ্ণ চাদরের নিচে তুলতুলে নরম শরীর টা নিথর হয়ে পড়ে আছে।উৎসা চমকালো, মস্তিষ্কে চাপ প্র’য়োগ করতেই কাল রাতেই সব ঘ’টনা মনে পড়ে গেল তার।লাফ দিয়ে উঠে বসলো উৎসা, ভালো করে আশপাশটা তাকিয়ে দেখলো। এটা সেই রুম প্রথম দিন যখন ঐশ্বর্য তাকে নিজের বাড়ি এনেছিল, ঠিক সেদিনও উৎসা ওই রুমে ছিলো।
উৎসা দ্রুত বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে গেলো,নিজেকে ভালো করে পরখ করে নেয়।কাল রাতে ঐশ্বর্যের আচরণে এখন উৎসার ভীষণ ভয় লজ্জা সব কিছু এক সঙ্গে ঘিরে ধরে।
না উৎসা ঠিকই আছে, কিন্তু ভেতরে এলো কি করে?সে তো বাইরে ছিলো?
উৎসা গুটি গুটি পায়ে বাইরে বের হয়, ড্রয়িং রুমের নিচে কার্পেটের উপর বসে আছে ঐশ্বর্য, কাউচের দিকে পিঠ হেলানো।পুরো ড্রয়িং রুম অন্ধকারে ডু’বে আছে,উৎসা রুম থেকে বেরিয়ে মিনমিনে গলায় বলল।
“ভভাইয়া?”
ঐশ্বর্য যেনো শুনেও শুনলো না। ঐশ্বর্য কে চুপ থাকতে দেখে উৎসা ফের ডাকে।
“ভাইয়া শুনতে পাচ্ছেন?”
ঐশ্বর্য বিরক্তের রেশ টেনে বললো।
“উফ্ ডোন্ট কল মি ভাইয়া।কল মি রিক!”
উৎসা মৃদু কন্ঠে শুধায়।
“আমি এখানে কী করে এলাম? আচ্ছা আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন না?”
ঐশ্বর্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো,উৎসার দিকে ঘুরতেই উৎসা চমকালো।এই আঁধারেও ঐশ্বর্যের অগ্নি চক্ষুদয় জ্ব’ল’জ্ব’ল করছে।উ ৎসা শুকনো ঢুল গিললো, ঐশ্বর্য এগিয়ে আসছে। উৎসা সেই হিসেবে পিছিয়ে যাচ্ছে,এক সময় দেয়ালের সাথে চেপে গেলো। ঐশ্বর্য এসে উৎসার মুখোমুখি দাঁড়ায়,এতটাই কাছে যে ঐশ্বর্যের তপ্ত নিঃশ্বাস উপছে পড়ছে উৎসার মুখশ্রীতে।
” আপনি এটা কি করছেন?”
ঐশ্বর্য উৎসার ডান হাত চেপে ধরে দেয়ালের সঙ্গে, শুধু চেপে নয় ঘ’ষতে লাগলো।উৎসা ব্যাথায় ক’কিয়ে উঠলো।
“ছাড়ুন প্লিজ!”
ঐশ্বর্য ছেড়ে দেয়, পাশের সুইচ অন করে। মূহুর্তে পুরো ড্রয়িং রুম আলোকিত হয়ে উঠলো। ঐশ্বর্য নিজেকে ধাতস্থ করতে বার কয়েক ঘনঘন নিশ্বাস টেনে নেয়।
উৎসা ফুঁপিয়ে কেঁদে দেয়, ঐশ্বর্য উৎসার পানে তাকিয়ে বলে।
“এদিকে এসো।কাম।”
উৎসার হাত পা কাঁপছে, তবুও কচ্ছপ গতিতে এগিয়ে গেলো। ঐশ্বর্য কাউচের উপর বসলো।
“সিট।”
উৎসা বসলো না,তার ভেতর কাঁপছে। ঐশ্বর্য কপাল চুলকে ফের উঠে গিয়ে উৎসার হাত টেনে ওকে বসালো।আচমকা ঐশ্বর্য উৎসার ঠিক সামনাসামনি সেন্টার টেবিলের উপর বসলো।
“লিসেন রেড রোজ আমি তোমাকে অন্য কারো সাথে স’হ্য করতে পারি না।আই রিয়েলি কান্ট ট্রলারেট দ্যাট।”
উৎসা মৃদু কেঁপে উঠে, ঐশ্বর্য উৎসার হাত চেক করে।দেয়ালে লেগে খানিকটা ছি’লে গেছে, ঐশ্বর্য গিয়ে কেবিনের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এলো।
উৎসার হাতে ক্রিম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে।
“অ্যাম নট অ্যা গুড পার্সন রেড রোজ। সত্যিই আমি ভালো মানুষ নই।”
উৎসা কাঁপা কন্ঠে শুধায়।
“আ,,আপনি হঠাৎ এমন করছেন কেন?”
ঐশ্বর্য বাঁ’কা হাসলো।
“আই রিয়েলি ডোন্ট নো। আই হ্যাভ অলসো বিলিভ ইন ফিজিক্যাল নি’ডস্ এন্ড সে’ক্সু’য়াল নি’ডস্।”
উৎসা আঁ’তকে উঠে, দ্রুত নিজের হাত সরিয়ে নেয়।
ঐশ্বর্য মাথা উঁচিয়ে উৎসার দিকে তাকিয়ে ভুবন ভোলানো হাসি হাসে। ফের উৎসার হাত কোমল ভাবে টেনে ফের ব্যান্ডেজ করে দেয়।
“লুক তুমি যদি আমার কথা মতো চলো তাহলে ট্রাস্ট মি রাণী হয়ে থাকবে।আর যদি অবাধ্য হও তাহলে…….
উৎসা সি’টিয়ে গেলো, কান্না পাচ্ছে তার।চোখ দুটো থেমে অনবরত পানি পড়ছে। ঐশ্বর্য ওর মুখশ্রী হাতের আঁজলায় নিয়ে বললো।
“বেইবি ওয়ার আর ইউ ক্রাইং?”
“আপনি হঠাৎ এমন কেন করছেন আমি বুঝতে পারছি না!”
“ডোন্ট ওয়ারি, আস্তে আস্তে বুঝে যাবে।আর হ্যা আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবে, মানে আমার সাথে লিভ ইন করবে।”
উৎসা আশ্চর্যে চিৎকার করে উঠল।
“কীই?”
তৎক্ষণাৎ কলিং বেল বেজে উঠে,মিস মুনা কিচেন থেকে বেরিয়ে এসে মেইন ডোর খুলে দিলেন। জিসান ভেতরে প্রবেশ করতেই উৎসা দৌড়ে ওর কাছে গেলো।
“জিসান ভাইয়া দেখুন না আপনার ফ্রেন্ড কী বলছে?”
জিসান ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে কী?
ঐশ্বর্য গিয়ে কাউচে গা এলিয়ে বললো।
“আজ থেকে আমি আর রেড রোজ লিভ ইন রিলেশনশিপে আছি।”
জিসানের চোখ দুটো যেনো বেরিয়ে পড়বে এমনতর উপক্র’ম।
“হোয়াট?”
ঐশ্বর্য বাঁ’কা হাসলো।
“ইয়েস ব্রো।”
“রিক আর ইউ সিরিয়াস?”
“ইয়েস।”
উৎসা বলে উঠলো।
“স্টপ ইট।কী হচ্ছে এসব? আমি থাকব না লিভ ইন রিলেশনশিপে! আপনার মাথা কী পুরোই গেছে চৌধুরী সাহেব?”
ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস টেনে নেয়।
“এক্সুয়েলি আমি তোমার ভালোর জন্যই বলছি। আমার সাথে লিভ ইনে থাকলে সেইভ থাকবে।আদারওয়াইজ….
ঐশ্বর্য ঠোঁট কাম’ড়ে মৃদু হাসলো।তাতে যেনো উৎসার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো।
“একদম না। আপনি এসব করতে পারেন না।”
“একশো বার পারি।লেটস্ ম্যাক অ্যা ডিল, তুমি আমার সাথে লিভিং করো তাহলে যদি আমার তোমাকে ভালো লাগে আই মিন টু সে যদি ভালোবেসে ফেলি তাহলে আমরা বিয়ে করব,তা না হলে….
জিসান তৎক্ষণাৎ উৎসা কে সাইডে টেনে নিয়ে গিয়ে বললো।
“এটাই সুযোগ মিস বাংলাদেশী, তুমি বরং ঐশ্বর্য কে প’টিয়ে বিয়ে করে নাও। যদি একবার ঐশ্বর্য কে মায়ায় ফেলতে পারো তাহলে আমি নিজ দায়িত্বে তোমাদের বিয়ে দেবো।”
উৎসা বেশ বিরক্ত নিয়ে বললো।
“এসব ঠিক নয় ভাইয়া, আমি তো এখানে পড়াশোনা করতে এসেছি।”
“ওহো তুমি বুঝতে পারছো না। বাইরেটা তোমার জন্য সেইভ নয়! তুমি ঐশ্বর্যের সঙ্গে থাকলেই ভালো থাকবে। অবশ্য ঐশ্বর্য কিন্তু খারাপ নয়।”
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়।
“তাহলে ফিজিক্যাল নি’ডস্ সে’ক্সু’য়াল নি’ডস্ এগুলো কী?”
জিসান বিব্রত হলো,তার মানে ঐশ্বর্য এতক্ষণে সব বলেই দিয়েছে? উফ্ ছেলেটা টু মাচ।
“ওগুলো কিছুই না। তুমি একটু দূরে থাকলেই হলো,ওই যে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড যেমন থাকে তেমনটাই থাকলে চলবে।”
উৎসা বেশ ভাবনায় পড়ে গেলো, এখানে তার থাকার জায়গা নেই।মিহি কে খুঁজতে হলে আগে নিজের থাকার জায়গা করতে হবে। কিন্তু ঐশ্বর্য তো কেমন একটা বিহেভ করে?আদেও এভাবে থাকা সম্ভব?
ঐশ্বর্য টেবিল থেকে আইপ্যাড নিয়ে ঘাঁ’টাঘাঁ’টি করছে।উৎসা কিয়ৎক্ষণ ভেবে বলল।
“ওকে ফাইন থাকবো আমি লিভ ইন রিলেশনশিপে,তবে আমার শর্ত আছে!”
ঐশ্বর্য কান খা’ড়া করে শুনতে চেয়ে বলে।
“হোয়াট?”
উৎসা আমতা আমতা করে বলল।
“আমাকে আপনি ছুঁতে পারবেন না।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কামড়ে হাসে,রেড রোজ ইজ অ্যা বিট মোর স্টুপিড।
“ওকে ডান।”
চলবে…………….✨