#রেড_রোজ
পার্ট [১৭](স্পেশাল)
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
স্নিগ্ধ সকালের মিষ্টি রোদ মুখশ্রী জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসার।নাক মুখ কুঁচকে নেয় সে, একদমই উঠতে মন চাচ্ছে না তার।এই শীত শীত ভাব তার মধ্যে খানিকটা উষ্ণতা, ঘুমের ঘোর কা’টছে না উৎসার।
কাছে থাকা জিনিসটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে উৎসা, আচমকা নিজের দেহে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে উঠে। পিটপিট চোখ করে তাকালো সে, যাকে জড়িয়ে আছে সে আর কেউ নয় ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে,ভারী নিঃশ্বাস টেনে নিচ্ছে।উৎসা চমকে উঠে ,এই ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখ দেখে মায়া কাজ করছে। কিন্তু পরক্ষণেই রাতের ঘটনা মনে পড়তেই উৎসা সরতে চাইলো। বলিষ্ঠ হাতের বাঁ’ধনে আটকে থাকার দরুন সরতে পারছে না উৎসা।
উৎসার নড়াচড়ার কারণে ঘুম হালকা হয়ে আসে ঐশ্বর্যের। নড়ে চড়ে উঠলো সে,ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে।
“সুইটহার্ট কী হয়েছে?”
উৎসার নিঃশ্বাস যেনো ভারী হয়ে আসছে,সে ঐশ্বর্য কে ঠেলে উঠতে চাইছে। ঐশ্বর্য ব্যাপার না বুঝতে পেরে হাতের বাঁধন আলগা করে দেয়।উৎসা ত্বরিতে উঠে দাঁড়ালো, বিছানা থেকে সরে গিয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ালো।চোখ দুটো ছোট্ট ছোট্ট করে তাকালো সে ।
ঐশ্বর্য বিছানায় উঠে বসে, অ্যালার্মে টাইম দেখে নেয়।সবে মাত্র সাড়ে আটটা বাজে। যেখানে ঐশ্বর্য দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠে।
“কী হয়েছে?”
উৎসা ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আশেপাশে। ঐশ্বর্য উঠে গিয়ে উৎসা সামনে দাঁড়ায়,উৎসা ভয়ে পিছিয়ে যেতে গিয়ে কাউচের উপর পড়ে গেলো।উৎসার পায়ের কাছে বসে পড়ল ঐশ্বর্য,ওর হাত ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে।
“জান এত প্যানিক করতে নেই। এভরিথিং ইজ অল রাইট।”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত সরিয়ে দেয়, শব্দ করে কেঁদে উঠলো সে।ধরা কন্ঠে বলতে লাগলো।
“কিছু ঠিক নেই, কিচ্ছু না। আপনি আমাকে খারাপ ভাবে ছুঁয়েছেন,আপ,,, আপনি আআমার সাথে…..
“ডোন্ট ক্রাই সুইটহার্ট প্লিজ। আমি খারাপ ভাবে ছুঁই নি।দেখো খারাপ ভাবে ছুঁতেও চাই না,তাই তো সরে গিয়েছি। প্লিজ ডোন্ট ক্রাই।”
উৎসার ঐশ্বর্যের কথা বুঝতে সময় লাগছে,সে চাইছে টা কী?
“আপনি কি চাইছেন? আমি থাকব না আপনার সাথে! আমি হোস্টেলে যাবো।”
ঐশ্বর্য দু তিন বার ঘাড় এদিক ওদিক দুলিয়ে বলে।
“থাকতে হবে আমার সাথে,অন্য কোথাও যেতে দিতো পারব।আই ক্যান নট লেট গো , ট্রাই টু আন্ডেস্ট্যান্ড।”
উৎসা ফুপাচ্ছে,এই মূহুর্তে ঐশ্বর্য কে তার কাছে ম্যাড মনে হচ্ছে।
“আপনি পাগল হয়ে গেছেন! আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড নই,আর না হতে চাই।আর না আমি আপনার ওয়াইফ যে আপনার সঙ্গে থাকব,আর না আমি কোনো বাজে মেয়ে! আপনি বোঝার চেষ্টা করুন।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কামড়ে ধরে, দৃষ্টি তার ফ্লোরের দিকে, মিনিটের মতো ভেবে উঠে তড়িঘড়ি করে কাভার্ড খুলে নিজের ড্রেস বের করে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
উৎসা কিছুই বুঝলো না,বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে।উৎসা এই সুযোগে বের হতে লাগলো, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য খক শব্দ করে দরজা খুলে বের হয়, একদম তৈরি হয়েই এসেছে। উৎসা থেমে গেলো , ঐশ্বর্য উৎসার হাত ধরে ওর রুমের দিকে যেতে নেয়।
“তাড়াতাড়ি।”
উৎসা কে রুমে নিয়ে গিয়ে কাভার্ড থেকে একটা ড্রেস হাতে দিয়ে দ্রুত ওয়াশ রুমে ঠেলে দিলো ঐশ্বর্য।
“গো গো হ্যারিআপ।”
উৎসা কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিকে ঐশ্বর্য কাউকে কল করে কনফার্ম করে নিলো, জিসান আর কেয়া দু’জন কে ডেকে নেয়।
_______________
নিজের সামনে রেজিষ্ট্রি পেপার দেখে থতমত খেয়ে গেল উৎসা। ঐশ্বর্য উৎসা কে কিয়ৎক্ষণ আগেই কোর্টে এনেছে, আচমকা এখানে আসার কারণ বুঝতে পারলো না সে।মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই জিসান আর কেয়াও চলে এসেছে।
জিসান ঐশ্বর্য কে জিজ্ঞেস করে।
“রিক এখানে কেন আমরা?হোয়াট হ্যাপেনিং?”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“বিয়ে করব।”
বিয়ের কথা শুনে কেয়া চিৎকার করে উঠল।
“ও মাই গড রিক সিরিয়াসলি?”
ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।
“স্টিল ইন ডাউট?”
কেয়া কী বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না, জিসান যেনো নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না। এদিকে উৎসার মুখ দেখে বোঝতে পারছে মেয়েটি ভয় পেয়ে আছে।
“রিক মিস বাংলাদেশী এত ভয় পেয়ে আছে কেন?”
ঐশ্বর্য কিছু বললো না , কোর্টের ভেতরে প্রবেশ করতেই লয়য়ার রেজিষ্ট্রি পেপার দেয়।
ঐশ্বর্য উৎসা কে উদ্দেশ্য করে বলে।
“সাইন করো।”
উৎসা পেপার গুলো চোখ বুলিয়ে নেয়,যখন বুঝতে পারে ওদের বিয়ের রেজিষ্ট্রি পেপার তৎক্ষণাৎ ভয়ে সিটিয়ে গেল।
“আপনি কী পাগল হয়ে গেছেন?বিয়ে মানে?হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস?”
ঐশ্বর্য বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে নেয়।
“সাইন করে নাও ভালোয় ভালোয় না হলে আই সয়ের কী হবে তুমি ভাবতেও পারছো না।”
উৎসা তৎক্ষণাৎ রেগে বলে।
“করব না সাইন, আপনার মতো চিপ মাইন্ডের একজন কে অন্তত আমি বিয়ে করব না।”
উৎসা পা বাড়ায় বের হওয়ার জন্য, ঐশ্বর্য ওর ওড়না টেনে ধরে।
“তুমি বিয়ে করবে, তোমার ঘাড়ও বিয়ে করবে।আর তা না হলে কিন্তু…
উৎসা কী করবে বুঝতে পারছে না, ঐশ্বর্য দু কদম এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বললো।
“অনেস্টলি ডোন্ট বিলিভ মি অ্যাট অল।”
উৎসা ঠোঁট চেপে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে, জিসানের দিকে অসহায় চোখে তাকায়।
“জিসান ভাইয়া প্লিজ ওনাকে সামলান, আমার এসব ভালো লাগছে না।”
ঐশ্বর্য চোয়াল শক্ত করে নেয়,উৎসার গাল চেপে ধরে।
“সাইন করবে কী না?”
“করব না আমি।”
ঐশ্বর্য ফের বাঁকা হাসলো।
“তোমার সিস্টার কোথায় আছে আমি কিন্তু জানি।”
উৎসা চমকে উঠে, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য কে টেনে সাইডে নিয়ে গেলো জিসান।
“ব্রো হোয়াটস হ্যাপেন্ড টু ইউ?হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?”
ঐশ্বর্য হাত ব্রাশ করে নেয় চুল গুলো কে, বেশ ভাব নিয়ে বলে।
“বিয়ে করছি।”
ঐশ্বর্য উৎসার দিকে যেতেই উৎসা অস্থির হয়ে উঠে।
“আপনি কি বললেন? আমার বোন কোথায় আপনি জানেন?কী হলো বলুন?”
“আগে বিয়ে।”
উৎসা কী করবে?মিহি কোথায় আছে সেটা সে জানে না কিন্তু ঐশ্বর্য? সে কী করে জানলো?
“প্লিজ বলুন আমার বোন কোথায়?”
ঐশ্বর্য বুকে হাত রেখে বলে।
“আই প্রমিজ বিয়ে করে নাও তোমার বোন কে এনে দেবো।”
উৎসা ফুঁপিয়ে উঠে, ঐশ্বর্য তার সুযোগ নিচ্ছে।
ঐশ্বর্য পেপার সামনে রাখলো উৎসার,উৎসা অসহায় চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্য চোখের ইশারায় বললো সাইন করতে,উৎসা কাঁপা কাঁপা হাতে পেন তুলে নেয়। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দ্রুত লিখে নিজেকে ঐশ্বর্যের নামে উৎসর্গ করলো উৎসা। বুক ফে’টে কান্না পাচ্ছে তার।
____________
“তোর কী উৎসার সঙ্গে কথা হয়েছে?”
রুদ্র অনেক বার উৎসা কে কল করেছে, কিন্তু উৎসা কে ফোনে পায়নি। রুদ্র অফিস থেকে বাড়িতে এসে নিকির রুমে গেলো,নিকি ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিল। রুদ্রের কথা শুনে কপাল কুঁচকে নেয়।
“কই না তো!কাল রাতে কল করেছি কিন্তু রিসিভ করেনি। কেনো ভাইয়া কিছু হয়েছে?”
রুদ্র কপাল চুলকে বলে।
“ওকে তো কাল রাত থেকেই পাওয়ার যাচ্ছে না!”
নিকি ল্যাপটপ রেখে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।
“কী বলছো এসব? তুমি আবার কল করো।”
রুদ্র বিরক্ত নিয়ে বললো।
“আরে আমি অনেক বার কল করেছি, এখনও সুইট অফ দেখাচ্ছে।”
নিকি চিন্তায় পড়ে গেলো,তার অবুঝ বোন টা কোথায় আছে? মস্তিষ্ক তৎক্ষণাৎ জানান দেয় ঐশ্বর্যের কথা।
“ভভাইয়া তুমি বরং ঐশ্বর্য ভাই কে কল করো, ওদের সাথেই তো গিয়েছে উৎসা।ওরা নিশ্চয়ই জানবে উৎসা এখন কোথায়?”
“ইউ আর রাইট নিকি।”
রুদ্র তাড়াতাড়ি ঐশ্বর্যের নাম্বারে কল করলো। ঐশ্বর্য সবে মাত্র গাড়িতে বসেছিল সবাই কে নিয়ে, তৎক্ষণাৎ রুদ্রের কল পেয়ে রিসিভ করলো।
“হ্যা বল।”
রুদ্র অস্থির কন্ঠে শুধোয়।
“ভাই উৎসা কোথায় তুমি জানো? আসলে উৎসার ফোন সুইট অফ দেখাচ্ছে।”
ঐশ্বর্য পাশে তাকিয়ে দেখলো উৎসা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।ফোন ওর হাতেই, ঐশ্বর্য ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সুইট অফ। ঐশ্বর্য বুঝলো, হয়তো চার্জ নেই।
“হ্যা ও ঠিক আছে, আমার বাড়িতেই আছে।হয়তো ঘুমে।”
রুদ্র যেনো প্রাণ ফিরে পেলো।
“ওকে তাহলে তো সেইভ আছে।”
“হুঁ, ওকে এখন রাখছি।আই উইল কল ইউ ব্যাক।”
ঐশ্বর্য দক্ষ হাতে ড্রাইভিং করতে লাগলো।
___________________
একটা বারের মধ্যে ড্রিঙ্ক সার্ভ করছে একটি মেয়ে। তৎক্ষণাৎ একটি ছেলে এসে হাত স্পর্শ করলো মেয়েটির, প্রথম দিকে আঁতকে উঠলেও পরক্ষণেই হাসলো। লোকটি
মেয়েটাকে কিছু বললো, মেয়েটি চিন্তিত হয় ।তবে যাওয়ার ছাড়া আর উপায় পেলো না।
কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই একটা বাড়িতে এসে পৌঁছায়, লোকটি মেয়েটা কে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।
✨
নিস্তব্ধ রাত্রি,তারার মেলা শুরু হয়েছে।তবে মাঝে মাঝে মেঘের আড়ালে চলে যাচ্ছে।
সূক্ষ্ম বরফের কণা গুলো ছড়িয়ে আছে রাস্তায়, রাস্তা চাপা পড়েছে বরফের নিচে। শীতের প্রকোপ বেড়েই চলেছে,তার উপর এই তুষারপাত।
ঐশ্বর্য নিজের মিনিবারে বসে একের পর এক বিয়ারের বোতল শেষ করছে।সাথে আছে জিসান ,কেয়া কে ড্রপ করে এখানে এসেছে ওরা।
“স্টপ রিক,হাউ মাচ মো’র?”
“জিসান ডোন্ট টক লাইক ক্র্যাজি! বিয়ে করেছি ইয়ার।
লেটস্ এ’ন’জয়।”
জিসান বুঝলো ঐশ্বর্য কে বুঝিয়ে লাভ নেই, ওদিকে উৎসাও ঘুমাচ্ছে।
“ওকে তুই এ’নজয় কর,আই হ্যাভ টু গো বাই।”
জিসান বের হতেই ঐশ্বর্য কিছুক্ষণ বসে রইল, প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে তার।এমন মনে হচ্ছে মাথা ফে’টে যাবে তার। কিন্তু কোথাও একটা আনন্দ কাজ করছে।
ঐশ্বর্য জিতেছে,উৎসা এখন তার সাথেই থাকবে। যতক্ষণ ঐশ্বর্য চাইবে ঠিক ততক্ষণ উৎসা ঐশ্বর্যের সঙ্গে থাকবে।আর ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী যা চায় তাই হবে,উৎসার কাছাকাছি থাকলে অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করে সে। যেটা আপাতত ঐশ্বর্যের প্রয়োজন।উৎসার নিষ্পাপ মুখ দেখলে ভীষণ ভাবে বুকে লাগে ঐশ্বর্যের। মেয়েটা কেমন জানি ঐশ্বর্যের মনে জায়গা করে নিচ্ছে।
এই সেই অভ’দ্র নোং’রা ঐশ্বর্য,যে কী না এখন একটি মেয়ে কে পাগলের মতো চাচ্ছে! উৎসা পাটোয়ারী, অদ্ভুত ভাবে তার আগমন ঘটলো। সব কিছুই কেমন অদ্ভুত ভাবে হচ্ছে।
ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে আওড়াল।
“#রেড_রোজ অ্যাম কাম ইন।”
চলবে…………….।✨