রেড রোজ পর্ব-২০

0
4

#রেড_রোজ
পার্ট [২০]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

বাইরে তুষারপাত হচ্ছে,রুমে ফায়ারপ্লেসে আ’গু’ন জ্ব’ল’ছে। শীতের প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে,গায়ে পিংক কালারের সোয়েটার জড়িয়ে বাইরে বের হয়েছে উৎসা।হাতে আছে সাইড ব্যাগ,একা কী হেঁটে চলেছে সে।
ঐশ্বর্যের বাড়িটা শহর থেকে খানিকটা দূরে হওয়ার দরুন এই জায়গায় তেমন মানুষজনের আনাগো’না খুব কম।
কুয়াশায় ঢেকে গেছে চারিপাশ, রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে গাছগুলো কে দেখে উৎসা ফোন বের করে ছবি তুলতে লাগলো। বার্লিন শহর কিন্তু সত্যি সুন্দর, কিন্তু উৎসার তেমন ভাবে ঘো’রা হয়নি।
উৎসা গাছের পাশে বেঞ্চে গিয়ে বসলো, নিজের ফোন নিচে সেট করে টাইমা’র লাগিয়ে দিলো।দু তিনটে ছবি তুললো সে, কিন্তু ভালো হচ্ছে না একটাও। বিরক্তিকর ব্যাপার,ছ উচ্চারণ করলো বিরক্ত নিয়ে।
তৎক্ষণাৎ কর্ণে পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।
“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি কী ছবি তুলে দেবো?”

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো উৎসা, ব্ল্যাক হোডি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য।উৎসা ইতস্তত বোধ করছে, আচমকা যে ঐশ্বর্য চলে আসবে তা ভাবতে পারেনি।আসার সময় ঐশ্বর্য অফিসে চলে গিয়েছিল , তাই তো উৎসা বের হয়েছে।
“আআপনি এখানে কেন? অফিসে যান নি?”

উৎসা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, ঐশ্বর্য ঠোঁট টিপে হাসলো।দু পা এগিয়ে গিয়ে বললো।
“গাড়িতে যেতে যেতে আই প্যাডে আপনার চঞ্চলতা দেখছিলাম।তার উপর আবার ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসলেন? যদি কিছু হয়?”

উৎসা আরেক দফা চমকে উঠে,তার মানে ঐশ্বর্য তাকে দেখে?নজর ব’ন্দি করেছে! মূহুর্তে নাকের পাটা ফুলে উঠে উৎসার।
“কেন এসেছেন? আমি বলছি আসতে? সবসময় আমার প্রাইভেসিতে নাক গলাতে হবে কেন?”

ঐশ্বর্য উৎসার থেকে দূরে গেল, পাশের উৎসার ফোন টা হাতে তুলে নেয়।
“সিট ডাউন! আমি ছবি তুলি।”

উৎসা বসলো না,রাগী মুখ করে তাকিয়ে আছে। ঐশ্বর্য আবার কাছে এসে উৎসার কব্জি ধরে টেনে বসালো।
“স্মাইল!”

উৎসা হাসলো না,অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। এই সুযোগে ঐশ্বর্য উৎসার ফোন রেখে নিজের ফোন বের করলো।
“রেড রোজ লুক অ্যাট মি সুইটহার্ট।”

উৎসা বেশ বিরক্ত, ঐশ্বর্য যদি তাকে ভালোবেসে এসব করত তাহলে কতই না খুশি হতো! কিন্তু কেউই তাকে ভালোবাসে না।বাবা চলে গেলো,মাও অসুস্থ,বোন ছেড়ে গেছে।মামী দেখতে পারে না, সবাই কত অবহেলা করে।তার মাঝে ঐশ্বর্য এসব করলো।
“তুলব না আমি ছবি,ফোন দিন আমার। ক্যারেক্টারলেস লোক একটা।”

উৎসা হাত বাড়িয়ে ফোন নিতে নিলো, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য উঁচু করে ফোন ধরে। অন্য হাতে উৎসা কে টান দিয়ে নিজের কাছাকাছি এনে চেপে ধরে। উৎসা হকচকিয়ে গেল, ঐশ্বর্য উৎসার গালে অধর ছুঁয়ে দেয়।সেই রকমেই দু তিনটে ফটো ক্লি’ক করে নিলো।
“ইয়েস এই দেখো কী সুন্দর এসেছে ছবি গুলো তাই না!”

উৎসা উঁকি দিয়ে দেখলো, সুন্দর তো লাগছে। তবে তা মোটেও বলবে না উৎসা। ফা’জিল লোক একটা

“ছাড়ুন তো, সবসময় বাড়াবাড়ি করেন কেন?”

“রিজেন হচ্ছে তুমি। তুমি বাড়াবাড়ি করো না বলেই আমি বাড়াবাড়ি করি। সবসময় পালাই পালাই করো কেন?”

উৎসা রিতিমত তম্বা খেয়ে গেল, ঐশ্বর্য কে ধমকের স্বরে বলল।
“চুপ করুন বেশ’রম, নির্ল’জ্জ, বেহা’য়া লোক একটা!”

“হোয়াট?”

“নাথিং।”

উৎসা ছু মে’রে নিজের ফোন দিয়ে হাঁটতে লাগলো। ঐশ্বর্য ওর পিছু যেতে যেতে বলে।
“সুইটহার্ট গাড়ি তো এখানে,কাম।”

উৎসা ঘাড় ঘুরিয়ে বললো।
“যাবো না আপনার সঙ্গে, আপনার চরিত্র ফুলের মত পবিত্র।”

ঐশ্বর্য সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে গাড়ি লক করে উৎসার পিছু পিছু দৌড়ে গেলো।
“একদম পিছু পিছু আসবেন না।”

ঐশ্বর্য পিছন থেকে সোজা সামনে চলে এলো, উল্টো হাঁটছে সে। হাত দুটো তার জ্যাকেটের পকেটে ঢুকানো।
“বেইবি তুমি কিন্তু নি’র্ভয়ে আমার কাছে আসতে পারো।”

উৎসা ধীর গতিতে এগোচ্ছে।
“হ্যা কেনো নয়? আমি আপনার কাছে আসি,আর আপনি সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন,তাই না! অস’ভ্য মানুষ একটা, একদম আমার কাছে আসবেন না।
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম:ড়ে ধরে
“ওকে,বাট যেদিন ধরবো চি’বিয়ে খাবো,গড প্রমিজ।”
উৎসা ভীত হয়ে গেল,কী শয়’তা’ন লোক রে বাবা।
“বেশরম?”
ঐশ্বর্য ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে বলে।

“হোয়াট?”

“ছাড়ুন তো! হাজার টা বাংলা ইংরেজি করতে পারব না আমি।”

ঐশ্বর্য উৎসার হাত টেনে ধরে।
“লেটস্ গো।”

“যাবো না, একদম। আপনি আমার কাছেও আসবেন না।”

ঐশ্বর্য উৎসা কে টান দিয়ে নিজের বুকে নিয়ে এলো।
“বেবস তুমি কাছে আসো না বলেই আমাকে আসতে হয়। একবার কাছে এসে দেখতেই পারো, ট্রাস্ট মি কাঁদিয়ে ছাড়ব।”

উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়। ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দক্ষ হাতে ড্রাইভিং করে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
_____________
” ইয়েস অ্যাম ইন লাভ।”

জিসানের কথায় ভ্রুক্ষেপ নেই কেয়ার, সে চিপস খেয়েই যাচ্ছে। বেচারা জিসান হতাশ হয়,এত সুন্দর এবং আশ্চর্যজনক কথা বললো অথচ এই মেয়ের কোনো ইন্টারেস্ট নেই!
“কী রে আমি তোকে বলছি কিছু!”

কেয়া আনমনে বললো।
“হুঁ বল।”

“আরে কেয়া অ্যাম ইন লাভ!”

“সো হোয়াট? আমি নাচব?লা লা লা।”

জিসান কপাল কুঁচকে নেয়।
“হোয়াটস গোয়িং অন ইয়ার, আমাকে অল দ্যা বেস্ট জানা।”

কেয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
“লিসেন জিসান তুই নিকি কে পছন্দ করেছিস? আর ইউ ক্র্যাজি?নিকি!রিকের সিস্টার।আর ওর মম কে দেখেছিস?সো চিপ।”

“সো হোয়াট? আমি কী ওনাকে বিয়ে করব?আই লাভ নিকি,আর নিকি সত্যি খুব ভালো মেয়ে।”

কেয়া জিসানের ঘাড়ে হাত রেখে বলল।
“ইয়া আই অ্যানডেস্টেন্ট।বাট….

“স্টপ,আই থিংক আমার রিকের সঙ্গে এই টপিকে কথা বলা উচিত।”

“ইয়া ইউ আর রাইট।”

“ওকে লেটস্ গো।”

“নো ইয়ার তুই যা আই হ্যাভ টু গো।”

জিসান গাড়িতে বসতে বসতে শুধোয়।
“কোথায় যাবি?”

“হোমে যাবো।”

“ওকে,টেক কেয়ার।”
____________________
বার থেকে বের হতেই একটা লোক মেয়েটির পিছু পিছু আসতে লাগলো।
“প্লিজ বেইবি কাম অন।”

ছেলেটি কখন থেকে তার সঙ্গে অস’ভ্যম করেই চলেছে।
যেখানে মেয়েটি বার বার বলছে সে এসবে থাকতে চায় না, সবসময় ভালো লাগে না।
“প্লিজ লিভ।”

ছেলেটি কে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বেরিয়ে গেলো মেয়েটি।
রাস্তায় যেতে যেতে তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল। ভাগ্যের পরিহা’স তাই তো আজ তাকে এরকম একটা জায়গায় নিয়ে আসতে বাধ্য করেছে।
কিছু দূর যেতেই ছোট্ট একটি বাড়ি দেখা যায়, আশেপাশে আরো দু তিনটে বাড়ি আছে।তবে মেয়েটির বাড়ি খুব ছোট, দরজায় কড়া নাড়তেই একজন বয়স্ক মহিলা এসে দরজা খুলে দেয়।
“নিনা কাম।”

নিনা ভেতরে প্রবেশ করে, আশেপাশে উঁকি দিয়ে দ্রুত দরজা বন্ধ করে দেয়।
“হ্যালো গ্রে মা আর ইউ ওকে?”

বয়স্ক মহিলাটি চমৎকার হাসলেন।
“ইয়েস মাই ডিয়ার অ্যাম অল রাইট।কাম সিট।”

“না গ্রে মা, ফ্রেশ হতে হবে।”

“ওকে মাই ডিয়ার, তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।”

ভদ্র মহিলাটি গুটি গুটি পায়ে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেলেন।নিনাও ওয়াশ রুমে চলে গেল।

“বাবা ঐশ্বর্য ভাইয়া আমাদের সঙ্গে থাকতে পারে না? ভাইয়া কে মিস করছি খুব।”

মেয়ে ছেলের নিজের বড় ভাইয়ের প্রতি এত টান বেশ শান্তি জোগায় শহীদদের মনে।
“কী জানি রে মা, ঐশ্বর্য খুব জে’দী! গিয়েছে যখন আর কবে ফিরবে কেউ জানে না।”

নিকি এসে সোফায় বাবার পাশে বসলো।
“বাবা তুমি জানো উৎসা, কিন্তু ভাইয়ার সাথেই আছে।যাক অ্যাটলিস্ট সেইভ তো আছে!”

শহীদ মিহি হাসলেন।

“লাইফ ইজ বিউটিফুল,
এ’ন’জয়,লা লা ইয়া ইয়া ইয়া।”

কলেজ থেকে বাড়িতে পা রাখতেই এমনতর গান শুনে নাক মুখ কুঁচকে নেয় উৎসা।
“থামুন তো! যত্তসব ফা’ল’তু গান।”

ঐশ্বর্য গিটার নিয়ে ফায়ার প্লেসের সামনে বসে গুনগুন করছিল। উৎসার কথা শুনে গিটার রেখে কাউচের উপর এসে বসলো।
“এটা সং।”

“হ্যা আমি তো শুনতেই পাচ্ছি,লা লা লা বলছেন তো , এটা কোনো গান?”

“সিরিয়াসলি!”

ঐশ্বর্য কে পাশ কা’টিয়ে যেতে গেলো উৎসা, ঐশ্বর্য দুষ্টুমি করে ল্যাং মা’রে।উৎসা ঐশ্বর্যের কোলে এসে পড়ল উৎসা।
ঐশ্বর্যের হাসি দেখে নাক মুখ কুঁচকে নেয় উৎসা।
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো।

“পারফেক্ট।”
উৎসার কান গরম হয়ে গেল,কী লাগামহীন কথাবার্তা!
“কী করছেন? ছাড়ুন। অস’ভ্য লোক, আপনি আমাকে ফেললেন কেন?”
ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে তুললো, লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নেয়।
“স্যরি সুইটহার্ট,অ্যাম রিয়েলি স্যরি।হা হা।”

“শ’য়তা’ন মানুষ, আমাকে ফেললেন কেন? আবার হাসছেন? আপনাকে তো…

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো,উৎসা নিজের জামা থেকে ধুলা ঝেড়ে নেয় । ঐশ্বর্য টি’পু’নি কেটে বললো।
“আমি যেখানে শান্তি ফিল করব সেখানেই যাবো। আমাকে বাধা দিলো জোর করব,বিকজ রিক চৌধুরী যা চায় তাই নিজের করে নেয়,বাইক হোক অর বাই ক্রুক।”

ঐশ্বর্য গুনগুন করতে করতে ভেতরে চলে গেল
উৎসা ফুস করে শ্বাস টেনে নেয়, তার কোনো বিশ্বাস নেই ঐশ্বর্যের উপর। তাড়াতাড়ি নিজের বোন কে নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যাবে সে। দরকার পড়লে আরো এক বছর গ্যাপ দিবে, তবুও এখানে থাকবে না। নতুন করে বাংলাদেশের যে কোনো কলেজে ভর্তি হয়ে যাবে।
“আপনার বাজে কথা ছাড়ুন,আর সোজাসুজি বলুন আমার বোন কোথায়? আপনি কিন্তু বলেছেন বিয়ে করলে আমার বোন কে এনে দিবেন।”

ঐশ্বর্য কিয়ৎক্ষণ ভেবে বললো।
“গিভ টু ডে, তুমি তোমার বোন কে পেয়ে যাবে।”

উৎসা আর কিছু বললো আর দু দিন অপেক্ষা করতে হবে নিজের বোনের জন্য।আরো দুদিন এই লোক টাকে স’হ্য করতে হবে, একবার মিহি আপু কে পেয়ে গেলে সে সব কিছু ছেড়ে চলে যাবে।ইভেন এই বাজে লোকটাকে ছেড়েও।
উৎসা রুমের দিকে পা বাড়ায় তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য বলে উঠে।
“সুইটহার্ট এক কাপ কফি প্লিজ! তাড়াতাড়ি হ্যা, প্রচন্ড মাথা ধরেছে।”

উৎসা রি রি করে উঠে।
“আমি কী আপনার বউ নাকি এতত অর্ডার করছেন?”

ঐশ্বর্য চোখ টিপে বলে।
“অভিয়্যাসলি ইউ আর মাই ওয়াইফ।”

ঐশ্বর্য উৎসার দিকে ঝুঁ’কতেই উৎসা সরে গেল।
“ডোন্ট টাচ।”

ঐশ্বর্য দুষ্টু করে উৎসার হাত ছুঁয়ে বলে।
“ইয়েস।”

“স্টপ ইট।”

ঐশ্বর্য থামলো না, বরং উল্টো উৎসার হাতে চুলে, গালে ছুঁয়ে ছুঁয়ে বলে।
“আই উইল টাচ।”

উৎসা অতিষ্ঠ হয়ে ছুটে কিচেনে চলে গেলো।
ঐশ্বর্যের বেশ ভালোই লাগে উৎসা কে বিরক্ত করতে।
“সুইটহার্ট সামথিং নিডস্,পি’চ পি’চ।”

চলবে…………..।✨