#রেড_রোজ
পার্ট [২১](ফিলিংস)
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
“আমাদের এত্ত বড় পার্টির আয়োজন করতে হবে তুই কী ভুলে গিয়েছিস রিক?”
বরাবরই ঐশ্বর্য জিসান,কেয়া আর ওদের ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে প্রতি বছর ডিসেম্বরের দিকে একটা বড়সড় পার্টির অ্যারেঞ্জ করে।এবারেও তাই,তবে ঐশ্বর্য সত্যি এবার ভুলে গিয়েছিল।
ঐশ্বর্য কপাল চুলকে বলে।
“স্যরি ইয়ার, আমার সত্যি মনে ছিল না।”
জিসান বিরক্তের রেশ টেনে বলে।
“এখন কী হবে বলতো?এত সব কিছু এত দ্রুত কী করে অ্যারেঞ্জ করব?”
“ডোন্ট ওয়ারি আই উইল ম্যানেজ এভরিথিং।”
জিসান আমতা আমতা করে শুধোয়।
“বলছিলাম কী রিক মিস বাংলাদেশী যাবে আমাদের সঙ্গে?”
“অভিয়্যাসলি,এটা আবার জিজ্ঞেস করার কী আছে?”
জিসান থতমত খেয়ে গেল, এরকম পার্টিতে কী উৎসা কখনও গিয়েছে?
“না মানে ও তো কখনও আমাদের এমন পার্টিতে যায়নি, তাই জিজ্ঞেস করলাম।তুই ওকে বলেছিস?”
“ডোন্ট ওয়ারি, আমি ওকে সময় মতো বলে দেব।”
জিসান খানিকটা আশ্চর্যই হলো। আদেও কি মিস বাংলাদেশী কথা শুনবে?”
_________________
ছোট ছোট ডিম লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে কটেজ।
কটেজ টি ঐশ্বর্যের বাড়ির পাশেই,এটা মূলত ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলের জন্য। এখানে সবাই মিলে পার্টি করে গেট টুগেদার হয়।
ডিম লাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে চারিদিকে। ভেতরে ছোট্ট ছোট্ট টেবিল রাখা,তার পাশেই ফ্লাওয়ার বাস রাখা আছে।
একটা টেবিলে অ্যালবার্ট, হ্যাভেন, হ্যারি, জিসান,কেয়া, ন্যান্সি সবাই বসে আছে।
অনেক গুলো মাস পরে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ডিসেম্বরের এই দিন গুলোতে যে যতই বিজি হোক না কেন,ঠিক সময়ে কটেজে এসে উপস্থিত হতেই হবে।এটা মূলত ওদের ফ্রেন্ডশিপের রু’ল’স।
হ্যারি সফট ড্রিংকস নিলো।
“জিসান,ওয়ার ইজ রিক?”
জিসান আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলে।
“আই ডোন্ট নো।মেবি ইটস্ স্টিল ইনসাইড,ইট উইল কাম।”
বড় বাড়ির ভেতরে ঐশ্বর্য কখন থেকে উৎসার পিছু পিছু ঘুরছে। উৎসা যেখানে যাচ্ছে ঐশ্বর্য সেখানেই যাচ্ছে। উৎসা বিরক্ত নিয়ে বললো।
“উফ্ কী সমস্যা আপনার?এত ঘুরঘুর করছেন কেন?”
“সুইটহার্ট তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেও না!উই আর টু লেইট।”
উৎসা বুকে হাত গুজে কপাল কুঁচকে বলে।
“আপনাদের ফ্রেন্ড সার্কেল, আপনাদের পার্টি, আমি গিয়ে কী করব?যান তো!”
“নো, তুমি আমার সঙ্গে যাবে।”
“নো নেভার।”
উৎসা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়, ঐশ্বর্য রাগে হাত টান দিতেই কাউচের উপর পড়ে গেলো উৎসা। ঐশ্বর্য বুকে হাত গুজে দাঁড়ায়,উৎসা হকচকিয়ে গেল।
“এটা কী হচ্ছে?”
” রেড রোজ, তুমি যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে না আসো তাহলে আমিই তোমাকে রেডি করে দেবো।”
উৎসা থতমত খেয়ে গেল, এটা কেমন কথা?
“আপনি কী ম্যাড?মনে তো হচ্ছে তাই-ই । আমি খুব রেগে যাচ্ছি।”
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো।
“তুমি যাবে কী না?”
উৎসা তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।
“চুপ করুন, অস’ভ্যতামো করার একটা লিমিট আছে।কী সমস্যা আপনার? ছেড়ে দিন আমাকে নিজের মতো করে।”
ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে বসলো।
“ওকে ফাইন, ছেড়ে দেব।বাট তোমার সিস্টারকে পাবে না।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কলার চেপে ধরল।
“আপনি এমন করতে পারেন না।”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল।
“আই ক্যান ডু এভরিথিং।”
উৎসা হাত ছাড়িয়ে নেয়, ঐশ্বর্য ফের ভাবলেশহীন ভাবে বলে।
“গো গো, সুইটহার্ট লেইট হচ্ছে।”
উৎসা না পারতে হনহনিয়ে উপরের রুমে চলে গেলো। ঘন্টা খানেক পরেই সবাই কটেজে ফিরে আসে, জমজমাট সন্ধ্যা। হ্যাভেন গিটার নিয়ে বসেছে। ন্যান্সি আর কেয়া গুনগুন করছে। হ্যারি রিক কে দেখে এগিয়ে গেলো।
“ব্রো,,কাম কাম আই হ্যাভ বিন ওয়েটিং ফর ইউ সীন্স ওয়েন।”
“ইয়া লেটস্ গো।”
ঐশ্বর্য ভেতরে প্রবেশ করে,ওর পিছু পিছু উৎসা কে ভেতরে ডেকে নেয়। অ্যালবার্ট এগিয়ে এলো,উৎসা কে ইশারা করে শুধায়।
“হো ইজ সি রিক?”
রিক আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে, মৃদু হাসলো।
“মাই ওয়াইফ!”
পিলে চমকে উঠে উৎসার,সবার সামনে বলে দিলো ওয়াইফ? আচ্ছা সে যদি শুধু ফিজিক্যাল রিলেশন করতে চায় তাহলে কেন বলবে সবাই কে এই ফে’ইক বিয়ের কথা? মস্তিষ্ক বেশি চাপ নিতে পারছে না উৎসার। এমনিতেই বিরক্ত লাগছে তার,খুব পেটে ব্যাথা করছে। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে।
রাতের প্রখরতা যেমন বাড়ছে ঠিক তেমনি গান বাজনায় জ’মে উঠেছে।এর মাঝে ন্যান্সি, কেয়া আর উৎসার বেশ ভালোই জমে উঠেছে।আড্ডা দিচ্ছে তিনজনে, অ্যালবার্ট গিটার দিলো হ্যারি কে। অতঃপর জিসান,হ্যাভেন ঐশ্বর্য আর অ্যালবার্ট গিয়ে বসলো।
“হেই রিক কী হাল ঠাল?”
অ্যালবার্টের কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো জিসান হ্যাভেন আর ঐশ্বর্য।
জিসান বললো।
“ব্রো ওইটা হাল ঠাল না,হাল চাল!”
“স্যরি,মাই মিস্টেক।”
ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।
“নো প্রবলেম।”
“তা টুই বিয়ে করলি বাট উই ডিড নট সে এনি থিং?”
ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে ড্রিঙ্ক চাইলো, জিসান সফট ড্রিংকস দিলো। ঐশ্বর্য নিলো না।
“উঁহু এটাতে হবে না।”
জিসান ভ্রু যোগল কুঁচকে নেয়।
“কেনো রে?”
ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকিয়ে হাস্কি টোনে বলল।
“আই ওয়ান্ট অ্যা হার্ড ড্রিংক।”
“এখন? তুই না বললি সব পজেটিভ থাকবে?”
“হুঁ হুঁ।”
ঐশ্বর্য হার্ড ড্রিংক নিলো।
সময়টা তখন আড়াইটার কাছাকাছি,পেট চেপে ধরে বসে আছে আছে উৎসা। সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো সে,কেউ এটা খাচ্ছে তো কেউ ওইটা। ন্যান্সি উৎসা কে গ্রিল চিকেন এনে দিলো।
“উৎসা টেক ইট।”
উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“নো থ্যাংকস ন্যান্সি আপু।”
কেয়া এগিয়ে এলো।
” উৎসা খেয়ে নাও,কখন এসেছো এখনো কিছু খাওনি?”
উৎসা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে।
“না আপু আমার খিদে নেই, আমি একটু আসছি।”
উৎসা উঠে বাইরে দিকে গেল, শহরটা সত্যি খুব সুন্দর। আফসোস শহরের মানুষ গুলো এতটাও সুন্দর মনের না।
আজ সব বন্ধু মিলে ঐশ্বর্যরা কত আনন্দ করছে! একটা সময় ছিল, যেদিন উৎসাও ওর বোনদের সঙ্গে চাঁদ রাতে ছাদে বসে আড্ডা দিতো।
সবাই মিলে কী সুন্দর হাসি মজা করতো! কিন্তু আজ? আজকে কেউ নেই,মিহি আপু ওর কাছে নেই।মা অসুস্থ,আর বাকিরা তো কত দূরে আছে এখন!
উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ঐশ্বর্য এগিয়ে এলো উৎসার দিকে।
“কী হয়েছে?”
ঐশ্বর্যের কথায় ভ্রুক্ষেপ নেই উৎসার,সে তো আকাশ দেখতে ব্যস্ত। ঐশ্বর্য অরেঞ্জ জুসের গ্লাস এগিয়ে দিলো উৎসার দিকে।
“খাও, ভালো লাগবে।”
উৎসা ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“আমি কী আপনাকে বলেছি?”
ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।
“না বলো নি। আমি নিজেই এনেছি।”
উৎসা মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“এত কিছু না করলেও চলবে।”
ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
“ঠিক আছে। এখন এটা খেয়ে নাও। না হলে কিন্তু আরো খাবার আছে, ওগুলো শেষ করতে হবে।”
উৎসা ভয় পেয়ে গেল, ফটাফট জুস শেষ করে। উৎসার অবস্থা দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো ঐশ্বর্য।
__________________
রাতবিরেতে একা জেগে জানালার পাশে বসে আছে নিনা।
“নিনা ইউ হ্যাভেন্ট স্লেপ্ট ইয়েট?”
“নো গ্রে মা,বাট ইউ ডোন্ট ওয়ারি। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।”
বয়স্ক মহিলাটি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিনার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
নিনা জানালার কাছেই বসে রইল, আপনদের জন্য মন খারাপ করছে তার।হয়তো আর কখনও কাউকে দেখতে পাবে না সে।
কথা গুলো ভাবতেই চোখ দুটো ভিজে উঠলো নিনার।
কিছু ভুল মানুষ কে তার আপনদের থেকে দূরে নিয়ে যায়, হয়তো তাই হয়েছে নিনার সঙ্গে।
চলবে……………।✨