#রেড_রোজ
পার্ট [২৪]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
হিমশীতল আবহাওয়া, বাইরে তুষারপাত হচ্ছে। ফায়ারফক্সে আ’গু’ন জ্ব’লছে, কাউচের উপর শুয়ে আছে ঐশ্বর্য।
ওর পাশে এসে দাঁড়াল মিস মুনা, তিনি মৃদু স্বরে বলল।
“স্যার?বড় স্যার?”
মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো ঐশ্বর্য। চোখের সামনে মিস মুনা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হন।
মিস মুনা স্বভাব সুলভ হাসলো।
“গুড মর্নিং স্যার।”
ঐশ্বর্য ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে।
“গুড মর্নিং।”
মিস মুনা ভেতরের রুমে গেলেন পরিষ্কার করতে। ঐশ্বর্য ভালো করে বসলো, আশেপাশে চোখ বুলিয়ে উৎসা কে খুঁজতে লাগল। যতটুকু মনে আছে কাল উৎসা ঐশ্বর্যের সঙ্গে ছিল, তাহলে এখন কোথায়?
ঐশ্বর্য তৎক্ষণাৎ রাতের কথা মনে পড়লো, কী একটা ভেবে উৎসার রুমে গেল। উৎসা নেই রুমে, ঐশ্বর্য পুরো বাড়ি খুঁজলো। শেষমেশ উৎসা কে না পেয়ে মিস মুনার কাছে গেল।
“মিস মুনা আপনি কি উৎসা কে দেখেছেন?”
মিস মুনা খানিকটা ভেবে বললো।
“নো স্যার আজকে আমি দেখিনি ম্যাম কে।”
ঐশ্বর্য চিন্তা পড়ে গেলো,কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। উৎসা পুরো বাড়িতে কোথাও নেই!
ঐশ্বর্য হঠাৎ কিছু একটা ভেবে দৌড়ে উৎসার রুমে গেল। কাবার্ড খুলে দেখলো কোনো জামা কাপড় নেই। ঐশ্বর্য তম্বা খেয়ে গেলো, বিড়বিড় করে আওড়াল।
“শিট শিট,উৎসা চলে গিয়েছে?হোয়াট দ্যা হেল?”
ঐশ্বর্য পাগলের মতো করতে লাগলো,উৎসা কোথায় গিয়েছে? ঐশ্বর্য চিৎকার করে উঠল।
“উৎসা ড্যাম কোথায় তুমি?”
ঐশ্বর্য দ্রুত ফোন জিসান কে কল করলো।
“জিসান তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়,কুইক।”
জিসান কিছু বলার সুযোগই পেলো না, তার আগেই ঐশ্বর্য ফোন কা’ট করে দেয়।
_____________________
সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা আর মিহি। উৎসা খুব খুশি,তার মা কত দিন পর বোন কে দেখবে। এদিকে মিহির গলা শুকিয়ে আসছে, না জানি কী অপেক্ষা করছে তার জন্য।
উৎসা আর মিহি রাতের ফ্লাইটে বাংলাদেশ ব্ল্যাক করেছে। ডিরেক্ট বাড়িতে এসেছে ওরা, কলিং বেল বাজানো মাত্র দুতলা থেকে নেমে এলো নিকি। কাজের বুয়া কে ডেকে বললো।
“মিনতি দিদি দরজা টা খুলে দাও।”
মিনতির কোনো পা’ত্তা নেই, আবারও কলিং বেল বেজে উঠল।নিকি বিরক্ত হয়ে নিজেই গেল দরজা খুলতে।
দরজা খোলা মাত্রই চক্ষু দয় আ’টকে গেল নিকির। উৎসা আর মিহি দাঁড়িয়ে আছে,মিহি কে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে নিকি।
মিহি কে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো উৎসা,নিকি পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নেয় মিহির।
মিহি মিনমিনে গলায় বলল।
“ননিকি!”
নিকি হাফ ছেড়ে বাঁচল যেনো, তাহলে এটা তার ভ্র’ম না।নিকি আচমকা ঝাপটে জড়িয়ে ধরে মিহি কে।
“মিহি,তুই ফিরেছিস!ও মাই গড সত্যি তুই চলে এসেছিস?”
মিহি যেনো স্বস্তি পেলো,যাক অন্তত তার বোন তাকে ভুল বুঝেনি।
“হ্যা আমি সত্যি এসেছি।”
নিকি দৌড়ে ভেতরে গিয়ে রুদ্র কে ডাকতে লাগল।
“ভাইয়া, ভাইয়া তুমি কোথায়?দেখো কে এসেছে?”
রুদ্র ল্যাপটপে কাজ করছিল,নিকির কন্ঠস্বর শুনে ড্রয়িং রুমে আসলো। শেষ সিঁড়ির কাছাকাছি এসে পা দুটো যেনো থমকে গেল তার।
অস্ফুট স্বরে বলল।
“মিহি!”
রুদ্র দেখে চোখ দুটো ভরে উঠলো মিহির, রুদ্র নিচে আসতেই মিহি গিয়ে বুকে হা’ম’লে পড়ে।
“ভাইয়া,,,অ্যাম স্যরি।ভভাইয়া আমাকে মাফ করে দাও।”
এত দিন পর নিজের আদরের বোন তাকে ধরেছে, রুদ্রের বুকটা কেঁপে উঠলো। অজান্তেই মিহির চুলে হাত রাখলো, অস্ফুট স্বরে আওড়ালো।
“বোন কেমন আছিস তুই?”
মিহি হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো,তার ভাই।
“ভাইয়া আমি ভালো নেই। তোমাদের ছেড়ে ভালো ছিলাম না একটুও।”
রুদ্রের চোখে আজ পানি জমেছে, অগোচরে মুছে নিল সে।
“হেই মিহি তুই কাঁদছিস? পাগলী!”
মিহি সত্যি পাগল,তা না হলে এত সুন্দর ফ্যামিলি ছেড়ে ওই খারাপ মানুষটার সঙ্গে চলে যেতো? কখনও না।
“মিহি তুই!”
আফসানা পাটোয়ারীর কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে সবাই তাকালো,রেগে ফুঁ’সে উঠেছে উনি।বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এলো মিহির দিকে।হাত টেনে ধরে মিহির।
“অস’ভ্য মেয়ে তুই ফিরে এলি কেন?বের হো এখুনি বের হো।”
আফসানা পাটোয়ারী মিহি কে ধাক্কা দেয়,উৎসা ধরে ফেলল। চেঁচিয়ে উঠলো সে।
“মামী! তোমার সাহস হলো কী করে আমার বোন কে বের করে দেওয়ার?”
আফসানা দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
“চুপ, বেশী কথা বললে দু’জন কে বের করে দেবো।”
আজ যেনো উৎসা র’ণ চ’ন্ডী রূপ নিয়েছে।
“তুমি মুখ সামলে কথা বলো,এই বাড়ি আমাদের।এটা আমাদের বাড়ি, আমার বাবার তৈরি করা বাড়ি।”
আফসানা পাটোয়ারী রি রি করছেন, উৎসার কথা ওনার কানে ঝং’কার তুলছে।
“উৎসা! আমি কিন্তু…
“কী করবে তুমি? তুমি আমাদের ঘাড়ের উপর বসে খাচ্ছো।জানো আমরা তোমাকে কেন কিছু বলি না?কারণ তুমি অসময়ে আমাদের ব্যবসা শক্ত করে ধরেছো। সামলেছো, কিন্তু এখন দেখছি তুমি এসব করে যেনো সব কিছুর মা’লিক মনে করো নিজেকে।”
আফসানা পাটোয়ারী কিছু বলতে চাইলো, কিন্তু পারছে না। রুদ্র বলে উঠে।
“মা প্লিজ দয়া করে চুপ থাকো। তোমার এই রোজকার নাটক ভালো লাগে না।উৎসা তুই মিহি কে নিয়ে উপরে যা।”
আফসানা চিৎকার করে উঠল।
“একদম না,এই ন’ষ্ট মেয়ে কে আমি কিছুতেই এই বাড়িতে থাকতে দেব না। নির্ল’জ্জ মেয়ে কিছু দিন আগে কত কান্ড করে গিয়েছে। এখন আবার এসেছে।”
উৎসা আঙুল তুলে শা’সানোর সহিতে বলে।
“ব্যস মামী, আজকের পর আমার বোন কে নিয়ে একটা বাজে কথা বললে আমি ছেড়ে কথা বলব না। তুমি যদি আমাকে দুটো কথা বা দুটো থা’প্পরই মেরে দিতে তাহলেও কিছু বলতাম না। কিন্তু আমার মা বা আমার বোন কে নিয়ে কিছু বললে আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না।”
আফসানা পাটোয়ারী চমকালেন,এই কোন উৎসা?
উৎসা মিহি কে নিয়ে দুতলায় যেতে লাগে। এদিকে নিকি আর রুদ্র আফসানা পাটোয়ারী কে তাচ্ছিল্য করে বেরিয়ে গেল।
আফসানা পাটোয়ারী এক মুহূর্তের জন্য ভয় পেলেন,এমন মনে হচ্ছে সব কিছু যেন তার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।
✨
“সিরিয়াসলি! আচ্ছা মিস বাংলাদেশী এখন কোথায় আছে সেটা তো বল?”
কিছুক্ষণ আগেই জিসান ঐশ্বর্যের বাড়িতে এসেছে,সে একাই এসেছে,কেয়া হোমে গ্রে মা সঙ্গে কিছু জরুরী কাজে ব্যস্ত ছিল।তাই আসতে পারেনি।
এখানে আসার পর ঐশ্বর্য কাল উৎসার সঙ্গে ঠিক কী কী করেছে তা শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে জিসান।যখন জিজ্ঞেস করে উৎসা কোথায়? ঐশ্বর্য জবাব দিতে পারলো না,দিবেই বা কী? সে তো নিজেও জানে না উৎসা কোথায়?
ঐশ্বর্য বিরক্তের রেশ টেনে বললো।
“সিরিয়াসলি ভাই, সত্যি আমি জানি না,আই রিয়েলি ডোন্ট নো।”
“মানে টা কি? বুঝতে পারছি না মিস বাংলাদেশী গেল কোথায়?”
ঐশ্বর্য আচমকা বাঁ’কা হাসলো।
“যেখানেই যাক,খুব বড় ভুল করে ফেলেছে। একবার হাতে পাই ট্রাস্ট মি জান খেয়ে ফেলব।”
জিসান দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত,সে বলেছে দু’টো মিটিং আছে। জিসান বেরিয়ে গেল, ঐশ্বর্য ঠায় কিছুক্ষণ বসে রইল।
সময়টা তখন ২.৩০ এর কাছাকাছি , ঐশ্বর্য এখনও জেগে আছে। বারংবার মস্তিষ্ক হানা দিচ্ছে,উৎসা ঠিক আছে তো!।ডান হাতের শার্টের হাতা ফোল্ড করে নেয়। আপাতত তার ঘুম প্রয়োজন। ঐশ্বর্য ডক্টরের দেওয়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে নেয়,যার দরুন কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেল সে।বক্ষ স্থলে তীব্র য’ন্ত্র’না হচ্ছে, স’হ্য করার মতো নয়।
পুরোটা দিন ঘুমিয়ে পাড় করলো ঐশ্বর্য, পরের দিন সকালে ডক্টর নিয়ে আসে জিসান আর কেয়া। ঐশ্বর্যের অবস্থা সত্যি খুব খারাপ, ডক্টর মেডিসিন দিয়ে গেলো।
কেয়া ঝাঁ’ঝালো স্বরে বলল।
“রিক হোয়াট হ্যাপেন্ড?এমন কেন করছিস তুই?”
ঐশ্বর্য হাত উঠিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করার মতো পিছন দিকে ঠেলে দিলো।
জিসান প্রচন্ড রেগে গেলো ঐশ্বর্যের ভাবলেশহীন আচরণে।
“তুই কী শুনছিস?”
ঐশ্বর্য হামি তুলে বলে।
“আমাদের টিকিট রেডি কর, বাংলাদেশ যাবো।”
বাংলাদেশ যাবে? কথাটা বেশ অবাক করলো জিসান কেয়া দু’জন কে।
“হোয়াট?রিক আর ইউ ক্র্যাজি?”
কেয়ার কথায় মৃদু হাসলো ঐশ্বর্য।
“তাড়াতাড়ি কর,লেইট হচ্ছে।”
জিসান তর্জনী আঙ্গুল তুলে বললো।
“এক মিনিট বাংলাদেশ যাবি,তার মানে মিস বাংলাদেশী ওখানে আছে অ্যাম আই রাইট?”
ঐশ্বর্য ফের হাসলো।
“অফকোর্স।”
জিসান স’ন্দেহ নিয়ে শুধোয়।
“তুই কি করে জানলি?”
ঐশ্বর্য জুতো পড়তে পড়তে বলে।
“নিকি কে কল করলেই তুই কনফার্ম।”
জিসান তম্বা খেয়ে গেলো, এখন নিকি কে কল করা মানে বাঙালি গা’লি খাওয়া।
“কিন্তু ব্রো এখন কী ভাবে যাবো? আমি তো আমার প্যাকিং পর্যন্ত করিনি!”
কেয়ার কথায় ঐশ্বর্য অকপটে বলে।
“ওখানে গেলে তোকে নতুন ড্রেস দেব, এবার চল।”
কেয়া ভীষণ হ্যাপি হয়ে উঠে।
__________________
সময়টা তখন রাত ২.৪৫ ছুঁই ছুঁই, পাটোয়ারী বাড়ির সকলেই গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছে।
বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠা মাত্র তীক্ষ্ণ ভাবে তা কর্ণ স্পর্শ করলো উৎসার। বিছানায় উঠে বসলো সে,মাথা ব্যথা করছে তার।এর মধ্যে আবার কলিং বেল বাজলো,উৎসা চমকে উঠে।দেয়ালে টা’ঙ্গা’নো ঘড়িটা দেখলো।এত রাতে কে এসেছে? উৎসা বেশ আগ্রহ নিয়ে বাইরে বের হয়।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বার কয়েক বেল বাজলো।উৎসা বিরক্ত নিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলো,চক্ষু চ’ড়কগাছ বলতে গেলে। সামনে দাঁড়ানো মানুষটি কে দেখে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার।
“ঐশ্বর্য ভাইয়া….
উৎসা আর কিছু বলবে তার পূর্বেই শক্ত হাতের থা’বায় ছিটকে দূরে পড়ে গেল উৎসা।উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই তার আর, মাথায় ঝিম ধরে গেছে। সব কিছু ঝাপসা দেখছে সে,এমন মনে হচ্ছে কানেও কিছু শুনতে পাচ্ছে না। দূর্বল শরীর টা টেনে উঠাতে পারলো না আর,তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে রইল। মূহুর্তে বাড়ি জুড়ে নিরবতা ছেয়ে গেল,উৎসা জানেও না সামনে কী হতে চলেছে?
চলবে…………….।✨
#রেড_রোজ
পার্ট [২৫]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
দীর্ঘ একটি ঘন্টা পর হু’শে ফিরলো উৎসা, তবুও ঠিক করে তাকাতে পারছে না।একটু নড়েচড়ে,গালে হাত রাখতেই মৃদু ব্যথা অনুভব করলো সে।
উৎসা কে দেখে যে কেউ মনে করবে সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে মেয়েটা। পিটপিট চোখ করে তাকালো আশেপাশে, নিজের সামনে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বেশ রাজকীয় ভ’ঙ্গিতে বসে আছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী। ঐশ্বর্য কে দেখে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল উৎসার,হাত পা অটোমেটিক কাঁপছে।
ঐশ্বর্যের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে বাকিরা,নিকি, রুদ্র,কেয়া, জিসান, মিহি আর সবার পিছনে আফসানা পাটোয়ারী।
সবাই অসহায় চোখে তাকায় উৎসার দিকে, এদিকে উৎসার চোখ দুটো সামনে বসা সুদর্শন পুরুষের দিকে আছে। ঐশ্বর্য অগ্নি চক্ষুদয় জ্ব’ল’জ্ব’ল করছে, এমনতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
উৎসা শুকনো ঢুক গিললো, ঐশ্বর্য হিসহিসিয়ে বলল।
“তোরা সবাই বাইরে যা, আমার ওর সঙ্গে কথা আছে।”
একা কথা বলবে,এটা যেনো উৎসার কানে রিতিমত ঝং’কার তুললো।সে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু শরীর দূর্বল হওয়ার কারণে খানিকটা ঝাঁ’কুনি অনুভব করলো। ব্যা’লেন্স বজায় রাখতে, খাটের পায়ায় হাত রেখে শক্ত করে দাঁড়ালো উৎসা। অস্থির কন্ঠে বলে।
“না না আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব।”
ঐশ্বর্য চট করে উঠে দাড়ালো,উৎসার সামনাসামনি এসে পকেটে হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়ালো।
“তোরা সবাই যা,আই সেইড গেট আউট।”
ঐশ্বর্য শান্ত ভাবে কথাটা বললেও,কথার মধ্যে উ’ত্তাপ কাজ করছে। সবাই মূহুর্তে জায়গা খালি করলো,একে একে সবাই বেরিয়ে গেলো।
ঐশ্বর্য ফট করে গিয়ে দরজা লক করে দেয়।
উৎসা দু কদম পিছিয়ে গেল, ঐশ্বর্য সোজা হয়ে দাঁড়ালো, অধর বাঁ’কিয়ে বললো।
“এই মুহূর্তে তোর সঙ্গে আমার ঠিক কী করা উচিত বল তো রোজ?”
উৎসা ফুপাচ্ছে,ভয় লাগছে ঐশ্বর্য কে। ঐশ্বর্য এগিয়ে আসতে লাগলো, তৎক্ষণাৎ উৎসা পিছিয়ে যায়। ঐশ্বর্য আচমকা এসে উৎসা কে গালে আরেকটা থা’প্প’ড় বসালো। টেবিলের কোণে গিয়ে আ’ঘা’ত লাগলো তার,মুখ থেকে বেরিয়ে এলো অস্ফুট স্বরে “আহ্” শব্দটি।
ঐশ্বর্য এখানেই থামলো না,উৎসা কে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরল।
“হাউ ডেয়ার ইউ!তুই আমাকে না বলে ডিরেক্ট বাংলাদেশ চলে এলি? এত্ত সাহস কোথা থেকে আসে?”
ঐশ্বর্য খুব শক্ত করে চেপে ধরে আছে উৎসা কে, গলা ফে’টে কান্না পাচ্ছে।
“ব,,ব্যথা পাচ্ছি আমি।”
ঐশ্বর্য শুনলো তবে উৎসা কে ছাড়লো না। আরো খানিকটা চেপে ধরে।
“তুই জানিস আমার কী অবস্থা হয়েছিল? আজকে শুধু তোর জন্য ম্যাড হয়ে ছুটে এসেছি বাংলাদেশে।”
উৎসা ঠোঁট টিপে কান্না আ’টকানোর চেষ্টা করে।
“ককেন এসেছেন?আ,, আমাকে তো ভালোবাসেন না, তাহলে কেন আসবেন?”
ঐশ্বর্য উৎসার কথায় আরো রেগে গেলো,উৎসা কে নিজের দিকে ফিরিয়ে গাল চেপে ধরে।
“ভালো বাসি বা না বাসি, তোকে বলতে হবে?তুই ব্যস আমার সাথে থাকবি।”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত চেপে ধরে।
“থাকব না, ছাড়ুন আমায়!”
ঐশ্বর্য আচমকা উৎসা কে তুলে ধা’ক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। উৎসা এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলো,ব্যথা পাচ্ছে সে।
“আমার কষ্ট হচ্ছে, আপনি কষ্ট দিচ্ছেন চৌধুরী সাহেব।”
ঐশ্বর্য ভীষণ ক্লান্ত, সে নিজেও এসে উৎসার মুখোমুখি বসলো।
দরজায় কান পেতে সব কিছু শুনলো সবাই। আফসানা পাটোয়ারী তে’তে উঠল।
“এসব কি হচ্ছে এই বাড়িতে?আগে তো এই মিহি বাইরে এসব করতো, এখন তো দেখছি উৎসা বাড়ির ভেতরে এসব শুরু করেছে!”
নিকি বিরক্ত নিয়ে বললো।
“মা তুমি থামো প্লিজ!”
আফসানা পাটোয়ারী থামলেন না।
“মোটেও না, আমি থাকতে এসব খারাপ কাজ করতে দেবো না। এখুনি ওদের বের করব।”
রুদ্র গ’র্জে ওঠে।
“মা তুমি যাও এখান থেকে,জাস্ট লিভ।”
আফসানা পাটোয়ারী কে এক প্রকার জোর করে সবাই বের করে দিলো।
আচমকা নিকি রুদ্র হেসে উঠলো।নিকি পি’ঞ্জ করে বললো।
“ভাই কিছু বুঝতে পারলে?”
রুদ্র ঠোঁট গোল করে বলে।
“হুঁ থুরা থুরা।”
কেয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
“থুরা থুরা মানে কি?”
রুদ্র ছোট্ট করে দেখায়।
“মানে অল্প অল্প।”
জিসান মুচকি হাসলো, কেয়া অধর প্রসারিত করে হাসলো।
“তাহলে আমিও।”
নিকি শুধোয়।
“তুমিও কী?”
কেয়া রুদ্রর মতো ছোট্ট করে দেখায়।
“বুঝতে পেরেছি থুরা থুরা।”
কেয়ার কথায় সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
_____________
রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা।
ঐশ্বর্য উৎসা দুজনেই বিছানায় শুয়ে আছে, ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার দিকে। মেয়েটা ব্যথা পেয়েছে, কপালে কে’টে গিয়েছে। থা’প্প’ড় খেয়ে ঠোঁটের কোণে কিছুটা লেগেছে,চোখ বুজে নিরবে জল ফেলছে।
ঐশ্বর্য উঠে বসলো, আশেপাশে চোখ বুলিয়ে শুধোয়।
“ফাস্ট এইড বক্স কোথায়?”
উৎসা রাগে দুঃখে কিছু বললো না,চুপ করে রইলো। ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেললো,নিজেই উঠে গিয়ে ড্রয়ার খুঁজতে লাগলো। অতঃপর ওয়াড্রফ এর উপর দেখতে পায়।
উৎসার কাছাকাছি এসে বসতেই উৎসা বেঁ’কে গেল। ঐশ্বর্য টেনে নিজের কাছাকাছি আনলো ওকে, জোরপূর্বক ব্যান্ডেজ করে দেয়। ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে।
“লাস্ট টাইম ওয়া’র্নিং দিচ্ছি, এরপর যদি কখনও আমাকে ছেড়ে আসার কথা ভাবা হয় তাহলে জান খেয়ে ফেলব, মাইন্ড ইট।”
উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো, ঐশ্বর্য ফাস্ট এইড বক্স রেখে এলো। প্রচন্ড টায়ার্ড,স্যুট খুলে সোফার উপর রাখলো।শরীরে ঘামের বি’শ্রী গন্ধ করছে, ঐশ্বর্য শার্ট খুলতে শুরু করে।
উৎসা নি’র্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের দিকে। শার্ট খুলতেই বলিষ্ঠ দেহ দেখতে পায়, অদ্ভুত সুন্দর পুরুষ ঐশ্বর্য।উৎসার ভেতর টা মূহুর্তে শুকিয়ে গেল।
“ওভাবে তাকাচ্ছো কেন? বেহা’য়া মেয়ে মানুষ।”
উৎসা থতমত খেয়ে গেল, ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকালো। উৎসা আবারও তাকায়, চোখাচোখি হয় দু’জনের। ঐশ্বর্য ধীর গতিতে এগিয়ে এসে রুমের লাইট অফ করে দেয়। আঁ’ত’কে উঠে উৎসা, ঐশ্বর্য এসে বিছানায় বসে,একদম উৎসার সামনাসামনি। তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে উৎসার গাল স্পর্শ করে ঐশ্বর্য।
“স্যরি
উৎসা কাঁপছে, ঐশ্বর্য এমনিতেই তাকে মেরেছে, এখন দেখা যাবে আবারও গাল চেপে ধরবে।
“আপনি ভালোবাসেন না, তাহলে কেন থাকবো বলুন তো!”
ঐশ্বর্য বিরক্ত নিয়ে বলে।
“জাস্ট শাট ইওর মাউথ।”
ঐশ্বর্য উঠে গিয়ে জানালা খুলে দেয়। চাঁদের বাইরের ছোট ছোট লাইটের কৃত্রিম আলো এসে রুম কে আলোকিত করে তুলছে।
“এএ কী করছেন? আপনি যান আমার ঘর থেকে।”
“উঁহু।”
ঐশ্বর্যের ঘো’র লাগা কন্ঠস্বর।উৎসা বেশ বিরক্ত হয়, একে তো গালে, কপালে ব্যথা করছে তার উপর এসব আজেবাজে কথা।
“সুইটহার্ট তোমাকে মিস করছি।”
উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। যত্তসব ঢং।
“আচ্ছা একা একা চলে এলে, কিছু হলে কী হতো?”
উৎসা ভাবলেশহীন ভাবে।
“হলে হতো অন্তত আপনার থেকে তো মু’ক্তি পেতাম!”
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,উৎসা কে আকাশ দেখিয়ে বললো।
“ওই যে দেখো আকাশ,ওর বুকে কিন্তু একটাই চাঁদ। আচ্ছা চাঁদ কে তো সবাই ধরতে চায়। কখনও কী পেরেছে ধরতে?আর আকাশ কি কখনও চাঁদ কে ছেড়েছে? না তো।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কথা কিছুই বুঝলো না।
ঐশ্বর্য ফের বললো।
“ঠিক তেমনি, তোমাকে আমি ছাড়ছি না সুইটহার্ট।”
উৎসা ফুঁসে উঠে। অস’ভ্য লোক একটা।উৎসা দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“আপনি বের হন আমার রুম থেকে আমি ঘুমাবো।”
ঐশ্বর্য শুনলো না।
“কোনো ঘুম নেই,আজ আমরা রাত জাগবো।”
উৎসা চমকে উঠে।
“কীঈ?রাত জাগবো মানে?”
ঐশ্বর্য উৎসার কাছাকাছি গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে জানালার পাশে নিয়ে এলো।
“আজ এখানেই থাকব, কোনো ঘুম টুম নেই।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কোনো কারণই বুঝতে পারলো না।
আকাশে বড় একটা চাঁদ উঠেছে, রূপালী থালার মত চাঁদ।
“বিউটিফুল।”
ঐশ্বর্যের প্রশংসা শুনে নিষ্পলক তাকালো উৎসা।
” আপনি চাঁদের সৌন্দর্য দেখেন!”
ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।
“হুঁ,আগে দেখতাম।মাম্মা থাকা কালীন চাঁদ রাত জেগে পার করতাম।মাম্মা সারা রাত জানালা খুলে বসে থাকত।”
উৎসা ঐশ্বর্যের কথা গুলো মন দিয়ে শুনলো। লোকটা যেমন দেখায়,আসলে তেমন না।
“শুনো!”
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো,উৎসা ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“কী?”
ঐশ্বর্য উৎসার হাত টেনে কাছাকাছি নিয়ে এলো। কপালে গাঢ় একটা চুমু খায়।
“রেড রোজ যাওয়ার কথাটা আর কখনও ভাববে না।এটা আমার নিষেধ।”
উৎসা পিলে চমকে উঠে, ঐশ্বর্য তো তাকে ভালোবাসে। কিন্তু কেউ স্বীকার করে না?
“ভালোবাসেন?”
ঐশ্বর্য নাহুচ করলো।
“উঁহু।”
উৎসার বিগড়ে গেলো।
“ফা’জি’ল লোক একটা।সরুন।”
উৎসা চলে যেতেই ঐশ্বর্য হাত টেনে ধরে,বুক বরাবর টেনে এলো।
“ইয়াক আপনার শরীর থেকে বি’শ্রী গন্ধ আসছে।”
ঐশ্বর্য ভ্রুকুটি করে নেয়। ঐশ্বর্য উৎসা কে জাপটে জড়িয়ে ধরে।
“ঘামের গন্ধ গায়ে মেখে নাও।”
উৎসা রাগে ঐশ্বর্য কে ধাক্কা দিল।
“সরুন। ঘুমাবো আমি।”
ঐশ্বর্য উৎসা কে তুলে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুয়ে দিল।
“কী করতে চাইছেন?”
“উম্মাহ্উম্মাহ্।”
ঐশ্বর্য ঠাস ঠাস করে দু তিনটে চুমু খায়।উৎসা তম্বা খেয়ে গেল, ঐশ্বর্য উৎসার চিবুকে হাত ছুঁয়ে বলে।
“রাত জাগতে হবে।”
উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ঐশ্বর্য বক্ষ স্থলে মধ্যে খানে উষ্ণ ছোঁয়া দিতেই কেঁপে উঠলো উৎসা।
“আপনি পাগল।”
“অফকোর্স,এখনো ডাউট আছে?”
ঐশ্বর্যের বাঁকা হাসি রাগের কারণ হচ্ছে উৎসার। ঐশ্বর্য উৎসার বুকে মাথা রেখে নিশ্চুপ ভঙিমায় শুয়ে রইলো।
________________________
“তুমি কিছু বলবে? না কী আমি কিছু করব?”
আফসানা পাটোয়ারী রুমে এসে শহীদের উপর রাগ দেখাতে লাগলো। মেজা’জ বিগ’ড়ে গেলো শহীদের।
“নির্লজ্জ মহিলা, এবার তো কিছুটা লজ্জা করো।ছিহ্ আর কত? এবার সবাই কে রে’হাই দেও।”
আফসানা রিতিমত তম্বা খেয়ে গেলো।কেউ তো তাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না!
চলবে……………।✨