রেড রোজ পর্ব-৩৩+৩৪

0
1

#রেড_রোজ
পার্ট [৩৩]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

ছোট ছোট লাইটের আলোয় পুরো বাড়ি আলোকিত হয়ে উঠেছে। গুটি কয়েক আত্মীয় স্বজন এসেছে পার্টিতে,আজ ঐশ্বর্যের সঙ্গে উৎসার আংটি বদল।
ঐশ্বর্য বরাবরই স্যুট পরে রেডি হয়ে গেছে, রুদ্র বার কয়েক বলেছিল ফতুয়া বা পাঞ্জাবি পড়তে। কিন্তু কে শোনে কার কথা?
ঐশ্বর্য সেই কালো রঙের স্যুট পড়ল, রুদ্র জিসান,আড্ডা দিচ্ছে।নিকি মিহি দু’জন মিলে কেয়া আর উৎসা কে রেডি করে দিচ্ছে।
কেয়া একদম বাঙালিদের মতো সালোয়ার স্যুট পড়েছে।তাকে গর্জেস করে সাজিয়ে দিয়েছে নিকি, এদিকে উৎসা কে সাজিয়ে দিচ্ছে মিহি।

সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে উৎসা,পরণে তার লাল গাউন। পিটপিট চোখ করে তাকাচ্ছে আশেপাশে, জিসান চোখের ইশারা করলো ঐশ্বর্য কে। ঐশ্বর্য ঘাড় ঘুরিয়ে সিঁড়ির দিকে তাকালো, মৃদু হাওয়া হৃদয় দোলা দিয়ে গেল।
লাল গাউন,হাতে ব্রেসলেট,গানে আর গলায় ম্যাচিং করা নেকলেস এবং ইয়ার রিং।চুল গুলো পাম্প করা, অসম্ভব সুন্দর লাগছে। ঐশ্বর্যের কাছে সদ্য ফোঁটা এক লাল গোলাপ মনে হচ্ছে।

“অ্যা #রেড_রোজ।”

উৎসা নিচে আসতেই ঐশ্বর্যের দিকে দৃষ্টি গেল, ইশ্ কী সুদর্শন পুরুষ। মানতে হবে, মেয়েরা এমনি এমনি পাগল নয় এই ছেলের জন্য!
কিন্তু এখন থেকে এই পুরুষ তার ব্যক্তিগত।
উৎসা আসতেই ঐশ্বর্য ওর হাত স্পর্শ করলো, উৎসা পিটপিট চোখ করে তাকালো।কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয়,একে অপরকে রিং পড়িয়ে দেয়। উৎসা চমকালো,তার আঙুলে ডায়মন্ডের রিং। ঐশ্বর্যের দিকে তাকাতেই চোখ টিপলো সে, উৎসা মনে মনে হাসলো। অস’ভ্য রিক চৌধুরী, আসলেই অস’ভ্য।

জিসান উৎসার কানে ফিসফিসিয়ে বলে।
“আজকে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”

উৎসা চমকালো।
“কিসের?”

কেয়া উৎসার বাহু ধরে বলে।
‘কাম,সিট।”

উৎসা কে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসায়, এদিকে ঐশ্বর্য মাঝখান বসলো।সবার মধ্য মনি সে, জিসান গিটার এগিয়ে দিলো। উৎসা থতমত খেয়ে গেল,এই অনুষ্ঠানে এখন ঐশ্বর্য ইংলিশ গান গাইবে? ব্যস হয়ে গেল!

উৎসা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলছে আশেপাশে, সবাই কী বলবে?বলবে অবশ্যই ছেলের মাথায় সমস্যা!

ঐশ্বর্য গিটারের সুর তোলে।

Teri Nazar ne yeh kya kar Diya
Mujhse hi Mujhko juda kar Diya

Main rehta hoon tere paas kahin
Ab mujhko mera Ehsaas Nahi
Dil kehta hai bas Mujhe

উৎসা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, ঐশ্বর্যের মুখ হিন্দি গান শুনে। কিন্তু এখন? ঐশ্বর্য তো থেমে গেল,তবে কী পরের লাইন ভুলে গিয়েছে?

Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse

Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke Zyada bhi hoga tumhi se
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse

Teri Nazar ne yeh kya kar Diya
Mujhse hi Mujhko juda kar Diya

Main rehta hoon tere paas kahin
Ab mujhko mera Ehsaas Nahi
Dil kehta hai bas Mujhe

Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse

Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke Zyada bhi hoga tumhi se
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse
Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse

Ke thoda Ikraar Hua tumse
Ke Zyada bhi hoga tumhi se
Ke thoda thoda pyaar Hua tumse

সবাই বেশ প্রশংসা করে ঐশ্বর্যের,তার গানের গলা দারুন। উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে,এই লোকটা হিন্দি গান কবে শিখলো?এত সুন্দর গেয়েছে, আচ্ছা প্র্যাকটিস না করলে বুঝি পারবে?

“সারপ্রাইজ কেমন লাগলো?”

জিসানের কথায় আড় চোখে তাকায় উৎসা।
“তার মানে কাল ছাদে গিটারের শব্দ শুনেছিলাম ওইটা সত্যি তাই তো?”

জিসান খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। ঐশ্বর্য উৎসার কাছে।
“সুইটহার্ট হাউ ইজ দ্যাট?”

উৎসা অধর বাঁকিয়ে হাসলো।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী ভালো হয়ে যান। ভালো হতে পয়সা লাগে না।”

উৎসা হনহনিয়ে সিঁড়ি দিয়ে দুতলায় চলে গেল। ঐশ্বর্য নাক মুখ কুঁচকে নেয়,কী মেয়ে রে বাবা একটু প্রশংসা করলো না! কিন্তু ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী তো ছাড়বে না,সে তার পাওনা নিয়েই ছাড়বে।
ঐশ্বর্য বড় বড় পা ফেলে উপরের দিকে গেল।
উৎসা হেঁটে নিজের রুমে গেল চেঞ্জ করতে, আপাতত অনুষ্ঠান শেষ। খুব গরম লাগছে তার, কতক্ষন এই ভারী গাউন পরে থাকবে?
কানের দুল আর গলার নেকলেস খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখলো উৎসা। তৎক্ষণাৎ কর্ণে এসে স্পর্শ করলো দরজা লাগানোর শব্দ। উৎসা পিছন ফিরে তাকালো, ঐশ্বর্য দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। উৎসা কিছুটা চমকালো।

“কী চাই?”

ঐশ্বর্য পিঙ্কি ফিঙ্গার কা’ম’ড়ে ধরে, ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো। উৎসা ঐশ্বর্যের রহস্য মিশ্রিত হাসির কারণ বুঝলো না।

“কী হলো ব্যাপার টা? এখানে কেন আপনি?যান তো আমি ঘুমাবো। ঘুম পাচ্ছে।”

ঐশ্বর্য ঝড়ের গতিতে এসে উৎসা কে দু হাতে চেপে ধরলো

“নো মোর ওয়ার্ডস,কিপ কুয়াইট।”

উৎসা ঘাবড়ে গেল, ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ায়।চোখ তার খোলাই আছে, উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্যের চোখের দিকে। ঐশ্বর্য কিছুই করছে না,জাস্ট ঠোঁট লাগিয়ে রেখেছে। উৎসা থরথর করে কাঁপছে,একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
ঐশ্বর্য সরে দাঁড়ালো, উৎসার গাল খানিকটা বেঁকে ধরে। উৎসা কিছুই বুঝলো না, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে। অল্প অল্প করে গভীর স্পর্শ করছে, আবার ছেড়ে দিচ্ছে। ঐশ্বর্য অদ্ভুত রকম আচরণ করছে, উৎসার চুলের মধ্যে যত্নে আঙুল রেখে আবার শক্ত করে টান দিচ্ছে। ব্যথা পাচ্ছে উৎসা, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁট কা’ম’ড়ে ধরে। আবার ছেড়ে দিচ্ছে,উৎসা বুঝলো না। আচ্ছা এটা কী আদেও তার ঠোঁট নাকি রাবার।
উৎসা দু হাত ঐশ্বর্যের বুকে রেখে আলতো ভাবে ধাক্কা দিলো। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ঐশ্বর্য এবারেও একই কাজ করলো।
মিনিট দশেক পর ঐশ্বর্য নিজ থেকেই ছেড়ে দিলো।
উৎসা অনুভব করলো তার ঠোঁট কেটে র’ক্ত বের হচ্ছে।

“অস’ভ্য রিক চৌধুরী, ব্যথা পেয়েছি আমি,ম্যাড।”

ঐশ্বর্য অদ্ভুত স্বরে বলে।
“বেইবি ডার্ক রোমান্স চেনো?”

উৎসা অস্বস্তি বোধ করছে। ঐশ্বর্য কী এখন ওসব দেখে নাকি? আস্তাগাফিরুল্লাহ।

“দদেখুন এবার কিন্তু খারাপ হচ্ছে!”

ঐশ্বর্য নিঃশ্বাস টেনে নেয়, ঠোঁটে লেগে আছে তার উৎসার ঠোঁটের র’ক্ত। বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিলো সে।
“আর মাত্র দু দিন।”

ঐশ্বর্য হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল, দু’দিন? কীসের দু’দিন? উৎসা বুঝলো না।

“তো? আমি কী করব? আপনি যা ইচ্ছে করুন আমার তাতে কিছু যায় আসে না!”

নিকি জিসান কে পাত্তা দিচ্ছে না, বেচারা জিসান নিকি কে ভয় দেখাতে বলে উঠে।

“আমি সুইসাইড করব।”

নিকির কোনো পরিবর্তন নেই উল্টো বলেছে যা ইচ্ছে করতে। জিসানের মনটা ঠাস ঠাস করে ভে’ঙে গেল, বেচারা দেবদাস হয়ে বাগানে বসে আছে।

“কী আশ্চর্য, এখন মনে হচ্ছে ঐশ্বর্যের মত একটু হলে ভালো হতো। তাহলে অবশ্যই নিকি তাকে ভালোবাসতো।”

নিজ মনেই বিড়বিড় করছে জিসান।
তার বংশ বৃদ্ধি আর হলো না,সে শেষ কালে এসে ঠেকে গেল। মন টা চাচ্ছে অ্যাংরি বার্ড কে ধরে ঠাস ঠাস করে দুটো চুমু খাই।তবে যদি ফিলিংস টা একটু বুঝে?
নিজের উল্টো পাল্টা ভাবনাতে পাগল হয়ে যাচ্ছে জিসান। কিন্তু না থামলে চলবে না,এই মেয়ে কে বোঝাতেই হবে জিসান কে?
গুটি পায়ে গিয়ে নিকির রুমের দরজা টান দিয়ে খুলে ফেললো জিসান। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখলো পেলো তার অ্যাংরি বার্ড ঘুমাচ্ছে।
জিসান মূহুর্তে গলে জল, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।কী একটা ভেবে বেডের পাশে গিয়ে বসলো।

“হায় অ্যাংরি বার্ড ইউ আর সো সুইট। একটু ভালোবাসলে কী হয়? আমার মত শুদ্ধ পুরুষ আর পাবে?”

জিসান কী একটা ভেবে নিকির হাত টা অল্প ছুঁয়ে দিলো।
নিজেই লজ্জা পাচ্ছে পরক্ষণে।
_________
রাত বিরেতে ড্রয়িং রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে ঐশ্বর্য। আফসানা পাটোয়ারী তখনো জেগে আছে,নিচে আসতেই নজরে এল ঐশ্বর্য।
ঐশ্বর্য দেখলো আফসানা পাটোয়ারী কে,সে দুষ্টু হাসলো।

“মিসেস মহিলা জেগে যে?”

আফসানা দাঁত কটমট করে বললো।
“প্রবলেম কী তোমার? সবসময় পেছনে পড়ে থাকো!”

ঐশ্বর্য হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।
“আপনাকে ডিস্টার্ব করতে ভালোই লাগে।”

আফসানা বিরক্ত বোধ করলো। কিন্তু কিছু একটা ভেবে বলে।
“আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তুমি আদেও কী উৎসা কে ভালোবাসো?”

ঐশ্বর্য মূহুর্তে গাম্ভীর্য ভাব মুখে টেনে নেয়।
“কেন আপনার কী মনে হচ্ছে?”

আফসানা মিহি হাসলো।
“আমি যতদূর জানি তুমি মোটেও উৎসা কে ভালোবাসো না, অ্যাম ড্যাম শিওর।”

“ওকে।”

আফসানা ঐশ্বর্যের আর কোনো প্রশ্ন বা উত্তরের অপেক্ষা করলো না। উপরে নিজের রুমে চলে গেল।
ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো, ভ’য়ংকর সেই হাসি। আচ্ছা সত্যি সে ভালোবাসে রেড রোজ কে?আ আ একদম নয়। তার মাথায় নিডস্ ছাড়া আর কিছুই নেই,মোহ, আকর্ষণ জাস্ট এটুকুই। এরপর? নাথিং,উৎসা নিজের পথে।আর ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী জার্মানি।
ঐশ্বর্য ফের হেসে উঠলো। ভালোবাসা বলতে কিছু নেই,নাথিং। এভরিথিং ইজ ফিজিক্যাল নি’ড’স এন্ড এন্ড এন্ড….. সামথিং।

চলবে…………….।✨

#রেড_রোজ
পার্ট [৩৪]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

বিয়ে বাড়ির পরিবেশ,সব কিছু জমজমাট।আজ নাকি উৎসা আর ঐশ্বর্যের বিয়ে,বাবা যায়?
সত্যি ভাবনার বিষয়, যে ছেলে মেয়েদের জাস্ট টিস্যুর মতো ইউজ করতো,সে নাকি বিয়ে করছে।
গায়ে হলুদ শুরু হয়েছে একটু আগেই, হলুদ রঙের শাড়ি পরে রেডি হয়ে উৎসা। ছোট্ট কিশোরী মনে হাজারো স্বপ্ন সাজাচ্ছে সে।
ঐশ্বর্য নিজের রুমে বসে আছে, শরীর মন দুটোই ব্যস্ত।শরীরে বয়ে যাচ্ছে ঝড়,হ্যা পৌরুষ জেগে উঠেছে। তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করছে। ঐশ্বর্য চিবিয়ে চিবিয়ে বললো।

“অপেক্ষা মাই ফুট,এই রেড রোজ কে টাচ করতে চাই।বাট হাউ?”

ঐশ্বর্য পাগল পাগল হয়ে উঠছে, ইচ্ছে করছে উৎসা কে গিয়ে পিষে ফেলতে।

“আহহহ।”

ঐশ্বর্য নিজের চুল খামচে ধরে, ইয়েস মেয়েদের কাছাকাছি যাওয়া তার বেড হ্যাভিট। উৎসার প্রতিও তার ফিলিংস এমন। সে তার ফিলিংস নিয়ে কনফিউজড, যার জন্য এই এত সব করতে হচ্ছে তাকে। ব্যস উৎসা কে ছুঁতে চায়, একবারের জন্য। ভালোবাসা মাই ফুট, চাই না কারো ভালোবাসা। আচ্ছা সে কী উৎসা কে ভালোবাসে? ঐশ্বর্য কনফিউজড , কিছু বুঝতে পারছে না।

গায়ে হলুদ শেষ হতেই পার্লার থেকে লোক এলো উৎসা কে সাজাতে। বিয়ের জন্যেই উৎসা সাজগোজ করছে, না হলে এসব আটা ময়দা জীবনেও লাগাতো না।
বউ বেসে বসে আছে উৎসা,আজ তার বিয়ে।ভাবা যায় তার বিয়ে?তাও একটা অস’ভ্য রিক চৌধুরীল সঙ্গে। কথাটা ভেবে ফিক করে হেসে উঠলো উৎসা।
ওদিকে রুদ্র আর জিসান মিলে ঐশ্বর্য কছ শেরোয়ানি পড়িয়ে রেডি করলো।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে কাজী সাহেব চলে এলো। বিয়ের আসরে উৎসা কে নিয়ে গেলো, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ঐশ্বর্য থমকালো চমকালোও,সে তো শুধু উৎসার সঙ্গে ইন্টিম… হওয়ার জন্য বিয়েটা করছিল। ঐশ্বর্যের বুক টিপ টিপ করছে, উৎসা কে দেখে হৃদয় স্পন্দন বাড়ছে।
ঐশ্বর্য অনুভূতি নিয়ে অপ্রস্তুত হচ্ছে, কষ্ট হচ্ছে তার।
বিয়ে পড়ানো শুরু হয়েছে, ঐশ্বর্য বললৈ।কাজীর বলা অনুযায়ী তিনটি শব্দ বললো। কবুল কবুল কবুল,উৎসাও বললো। দুজনের আবারো রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ হয়।

বিয়ের পর পর আনন্দ উ’ল্লাস লেগে আছে, নিকি, রুদ্র, জিসান,কেয়া,মিহি আরো অনেক আত্মীয় স্বজন মিলে মজা করছে।
জিসান উপরের দিকে যেতে লাগলো, তৎক্ষণাৎ আফসানা পাটোয়ারীর সম্মুখীন হয়।

“হ্যালো রিকের মিসেস মহিলা, দেখলেন দু’টো লাভ বার্ডস এক হয়ে গেছে!”

আফসানা তাচ্ছিল্য করে বলে।

“আচ্ছা তাই বুঝি? একটা কথা বলো জিসান তোমার ফ্রেন্ড আদেও কি উৎসা কে ভালোবাসে?”

জিসান কিছুটা অবাক হল।

“মানে?”

“মানে এটাই যে ঐশ্বর্য উৎসা কে ভালোবাসে না,আর এটা আমি জানি। তুমি চাইলে জিজ্ঞেস করতে পারো।”

আফসানা পাটোয়ারী জিসানের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে চলে গেল। জিসান ভাবনায় পড়ে গেলো, সত্যি কী ঐশ্বর্য মিস বাংলাদেশী কে ভালোবাসে না?
জিসান কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল, দ্রুত পায়ে ঐশ্বর্যের রুমের দিকে এগিয়ে গেল। ঐশ্বর্য ওখানেই ছিলো,ডিভানের উপর বসে এক পা সেন্টার টেবিলের উপর রেখেছে।আই প্যাড নিয়ে পড়ে আছে সে, জিসান হুড়মুড়িয়ে ঢুকে গেল।

“রিক সত্যি করে বল তুই মিস বাংলাদেশী কে ভালোবাসিস?”

ঐশ্বর্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

“হোয়াট হ্যাপেন্ড? হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”

জিসান অস্থির কন্ঠে বলে।

“আগে বল তুই সত্যি ভালোবাসিস?”

ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।

“না বাসি না ভালো। এখন বল কী হয়েছে?”

জিসান চমকে উঠে, ঐশ্বর্যের বাহু ধরে বলে।

“মানে কী?তুই কী বলেছিস এসব? ভালোবাসলে বিয়ে?”

“চিল ইয়ার,কী এমন হয়েছে বল তো?তুই কি আমাকে চিনিস না?”

ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে ফের ডিভানের উপর বসে পড়ল।
জিসান রাগে গজগজ করতে করতে বলে।

“মানে টা কী?”

“মানে এটাই আমিই শুধু ইন্টিমে…. হতে চাইছিলাম,দ্যাটস এনাফ।”

জিসান নিশ্চুপ,এই ছেলে কী করলো?মিস বাংলাদেশী কত ভালোবাসে।আর ও নাকি ওসব নিয়ে পড়ে আছে?

“রিক আমি আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি তুই খুব বড় ভুল করছিস। আমি সত্যি….

জিসান কথা শেষ করতে পারলো না।তার পূর্বেই কানে আওয়াজ এলো কিছু পড়ে যাওয়ার। ঐশ্বর্য আর জিসান দু’জনেই ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকালো।নিকি,উৎসা,কেয়া দুজনেই দাঁড়িয়ে আছে, মূলতঃ ওরা উৎসা কে ঐশ্বর্যের রুমে রেখে যেতে এসেছিল। কিন্তু উৎসা যা শুনলো তাতে ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।
তাহলে কি এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে ব্যবহার করলো?
উৎসার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে, হঠাৎ অনুভব করলো তার বুকের বা পাশে বেশ য’ন্ত্র’না হচ্ছে।
ঐশ্বর্য কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে রইল,ঘাড় বাঁকিয়ে মুখের ভাবান্তর বদলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।

ঐশ্বর্য এমন কিছু করবে তার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। উৎসা দূর্বল শরীর টা টেনে বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে চলে গেল। সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, জিসানের মনে খুব রাগ হচ্ছে।মন চাচ্ছে ঐশ্বর্যের সঙ্গে সব সম্পর্ক ত্যাগ করে দিতে।

বিয়ে বাড়ীতে নেমে এলো অদ্ভুত নিরবতা।পুরো বাড়িতে ছেয়ে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আছে উৎসা, বারংবার নিজেকে দেখছে। আচ্ছা সে কেমন হ্যা?তাকে কী ভালোবাসা যায় না? শুধু কি কা’মনা’র চোখে দেখতে হবে? আচ্ছা একটু ভালোবাসার চোখে দেখলে কী হতো?সে তো রিক চৌধুরী কে ভালোবেসে ফেলেছে, কিন্তু রিক চৌধুরী কেন তাকে ঠকালো?

হাজার প্রশ্নে মনে ভিড় জমেছে উৎসার,সে তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ।
আয়নায় ঐশ্বর্যের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো উৎসা, সে তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ। ঐশ্বর্য ভেতরে প্রবেশ করলো,উৎসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ঐশ্বর্য এগিয়ে গেল।

“সুইটহার্ট লিসেন আমি তোমাকে ভালোবাসি কী না জানি না, ট্রাস্ট মি এটা সত্যি। আমি আমার ফিলিংস নিয়ে….

উৎসা নিজের জিনিস গুলো খুলতে লাগলো,সব গয়না খুলে টেবিলের উপর রাখলো। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে হাতে থাকা ডায়মন্ড রিং খুলে ঐশ্বর্যের হাতে তুলে দিল।

“আমি আপনার মত ক্যারেক্টারলেস নই, জানি না তবুও কেন সবাই আমাকে এমন নজরে দেখে। আমি সত্যি ভুল করেছি আপনার মত চিপ মাইন্ডের মানুষ কে ভালোবেসে। আপনার এই মুখ থেকে আমি আর কিছু শুনতে চাই না। চলে যান।”

ঐশ্বর্য কিছুটা অদ্ভুত ভাবে এদিক সেদিক ঘাড় দোলালো। উৎসার মুখ পানে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে।

“বেইবি সামথিং নিডস্।”

উৎসার ইচ্ছে করছে ঐশ্বর্যের মুখে সপাটে থা’প্প’ড় বসাতে।হাত তুলতেই ঐশ্বর্য পিছমোড়া করে বেঁধে নিল।

“এই ভুলটা একদম না।অ্যাম ক্র্যাজি ম্যান।একে বারে জান খেয়ে ফেলব।”

উৎসা ঐশ্বর্যের স্পর্শ নিতে পারছে না।

“ছুঁবেন না আমাকে, আমি আপনাকে ঘৃ’ণা করি।”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“ইটস্ হার্ট, ইটস্ হার্ট। উফ্ এভাবে বলে না সুইটি।”

উৎসা বেজায় রেখে গেল, টেবিলের উপর থাকা ফুলদানি তুলে ছুড়ে ফেলল।

“আমাকে ঠকালেন কেন?কী করেছিলাম? বলুন!”

উৎসা ঐশ্বর্যের কলার চেপে ধরে, ঐশ্বর্য নিশ্চুপ।সে উৎসার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ দুটো লাল হয়ে আছে, ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।

“উফ্ সুইটহার্ট চোখ ব্যথা করবে।”

উৎসা ঐশ্বর্যের বাহু দুটো ঘুষি দেয়।
“আই হেইট ইউ, অস’ভ্য রিক চৌধুরী। কোনো দিন ভালো হবে না আপনার!”

ঐশ্বর্য উৎসার হাত দুটো পিছমোড়া করে চেপে ধরে।

“কিপ কুয়াইট সুইটহার্ট।”

উৎসার চোখ দুটো ফুলে উঠেছে। বাইরে জিসান,নিকি রুদ্র, আর কেয়া। ঐশ্বর্য বললো।

“জিসান আমরা জার্মানি ব্যাক করব আজকেই।”

জিসান তম্বা খেয়ে গেল, সত্যি চলে যাবে?
উৎসা অসহায় চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে।এত পাষাণ?তাকে এভাবে ফেলে চলে যাবে? ঐশ্বর্য উৎসার চোখে চোখ রাখলো, দুজনেই তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ। আচমকা ঐশ্বর্য উৎসার ললাটে চুমু খেলো,বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই থতমত খেয়ে গেল। ঐশ্বর্য অপেক্ষা করলো না, বেরিয়ে গেল,উৎসা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
______________

আবহাওয়া খুব একটা ভালো না, বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার পাশে বসে আছে উৎসা, ভাগ্যের উপর আকাশ সম অভিযোগ তার।তার সঙ্গে যা হলো আদেও কী সব ঠিক? অবশ্যই ভুল, আচ্ছা কেউ কী করে এত নিখুঁত অভিনয় করতে পারে?
মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো উৎসা।মিহি দাঁড়িয়ে আছে,চোখে মুখে তার চিন্তার ছাপ।

“আপু।”

“বনু তোকে আগেই বলেছিলাম যা করবি ভেবে চিন্তে করবি।দেখলি অতিরিক্ত বিশ্বাসের ফলাফল!”

উৎসা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো, সত্যি নিজের উপর হাসি পাচ্ছে তার।

“আমি ভাবতে পারছি না আপু, আমার সঙ্গে এমন হয়েছে।”

মিহি দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

“তুই চিন্তা করিস না,আমরা সবাই তোর পাশে আছি।তুই একদম ভেঙে পরবি না।”

মলিন হাসলো উৎসা,আর যাই হোক কাউকে বুঝতে দিলে চলবে না সে কষ্টে আছে। সবাই যে তাকে নিয়ে চিন্তা করে!

“আমি ঠিক আছি আপু। তোমরা প্লিজ চিন্তা করো না,যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। অন্তত মিথ্যে নিয়ে থাকতে হয়নি।”

আবারও দীর্ঘ শ্বাস ফেলল মিহি।
উৎসা একই রকম ভাবে বসে রইল।

বার্গহাইন নাইট ক্লাবে বসে আছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।হাতে তার হু’ইস্কির বোতল,একের পর এক গ্লাস শেষ করছে সে।
কিয়ৎক্ষণ পর একটি মেয়ের কাছাকাছি গেল, ঐশ্বর্য ডেস্পারেটলি ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা করছে। মেয়েটি ঐশ্বর্য কে কাছে টানছে, আচমকা ঐশ্বর্য কে ছেড়ে অদ্ভুত হাসলো। ভেতরে যেতে লাগলো,একটা রুমে গিয়ে দু’জনে থামলো। মেয়েটি ঐশ্বর্য কে কাছে টানে, মরিয়া হয়ে উঠে ঐশ্বর্য কে কিস করতে। ঐশ্বর্য উন্মা’তা দেখালো, কিন্তু তা কিয়ৎক্ষণের জন্য। মেয়েটির কাছাকাছি যেতেই উৎসার স্নিগ্ধ মুখশ্রী ভেসে উঠে। ঐশ্বর্য ছিটকে দূরে সরে গেল, অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মেয়েটি।

“হোয়াট হ্যাপেন্ড রিক?”

ঐশ্বর্য শুকনো ঢোক গিললো।

“নাথিং।”

ঐশ্বর্য বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেল, ভীষণ বাজে ফিলিং হচ্ছে তার। উফ্ রেড রোজ তাকে ম্যাড বানিয়ে ছাড়বে।
ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে আওড়াল।

“আই সয়ার রেড রোজ আমাকে পাগল বানানোর শাস্তি পাবে।জান খেয়ে ফেলব তোমার,আই মিন ইট।”

চলবে……………।✨