উষ্ণ আঁচে ভালোবাসা পর্ব-০২

0
8

#উষ্ণ_আঁচে_ভালোবাসা (০২)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

বেলাল শেখ দিশেহারা হয়ে পড়লেন। মেয়েকে কিভাবে সামলাবেন বুঝে উঠতে পারলেন না। নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী মনে হচ্ছে এখন। মন বলছে ভুল করে ফেলেছেন। এভাবে কোনো কিছু না জানিয়ে বিয়ে দেওয়া উনার মোটেও উচিত হয়নি। কিন্তু বাবা হিসেবে তিনিও তো নিরুপায় ছিলেন। এমন ভালো ছেলে কোন বাবাই বা হাত ছাড়া করতে চায়? বিয়ের পরও পড়াশোনার সুযোগ দিবেন তারা। পড়াশোনা শেষ হলে বড় করে রিসিপশন করে পিয়াকে তাদের বাড়ি নিয়ে যাবে। সবকিছু বিবেচনা করে যে তিনি আর নিষেধ করতে পারেননি। কিন্তু মেয়ের কান্না দেখেও ভেতরটা পুড়ছে। অপরাধবোধ কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

তিনি সস্নেহে মেয়ের হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জানতে চাইলেন,

‘বাবা বড্ড অন্যায় করে ফেলেছি তাই না? মাফ করে দে আমাকে। আসলে আমি বাবা তো ভালো ছেলে পেয়ে আর হাত ছাড়া করতে চাইনি।’

পিয়া আরো শক্ত করে তার বাবার কলার আঁকড়ে ধরে। ক্রয়ান্বয়ে বাড়ে কান্নার মাত্রা। হেঁচকি উঠে যায় তার। ভাঙা গলায় থেমে থেমে বলে,

‘বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম বুঝি? যার জন্য বলা কওয়া ছাড়া এভাবেই বিয়ে দিয়ে দিলে?’

পিয়ার মাথা তুলে পরম মমতায় চুমু এঁকে দিলেন ললাটের ঠিক মধ্যিখানে। কাতর স্বরে বলেন,

‘সন্তান বাবা মায়ের কাছে কখনো বোঝা হয় না মা। নিয়ম অনুয়ায়ী তাকে পরের ঘরে যেতে হয়। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও সব বাবা তাদের মেয়েকে বিদায় দেয়। দিতে হয়। তারা এটাও চায় কোনো ভালো ছেলে যেন তার মেয়ের জীবনসঙ্গী হয়ে আসে। আমি সেই ভালো ছেলেটার সন্ধান পেয়েছি মা। তাই আর।’

পিয়ার কান্নার গতি কমেছে। থেকে থেকে দিচ্ছে হেঁচকি।

‘আমি তোমার সব সিদ্ধান্তকে সম্মান করি বাবা। আমি জানি তুমি আমার জন্য বেস্ট অপশনটাই চ্যুজ করবে। তবে এই মিথ্যে বলাটা কি বেশি জরুরি ছিল? সেদিন আমি ছয়টায় বাসা থেকে বের হয়েছি। ক্লাস, এসাইনমেন্ট, টিউশন শেষ করে ফিরেছি চারটার পরে। সারাটাদিন আমার পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি। মাত্রই খেতে বসেছি প্রথম লোকমাটাও মুখে তুলতে পারিনি। এর আগেই বাসা থেকে ফোন। তোমার অবস্থা ভালো না। আমার উপর দিয়ে যে কি গেছে কেবল আমি জানি। বার বার দোয়া করেছি তোমার যেন কিছু না হয়।’

বেলাল শেখ মলিন হাসেন। আলতো করে হাত রাখেন পিয়ার মাথায়।

‘এমন ভুল আর হবে না মা।’

পিয়া চোখের পানি মুছে তীক্ষ্ণ নজরে তার বাবার দিকে চাইল। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন করল,

‘এমন ভুল আর হবে না মানে? আবারও আমাকে বিয়ে দিবে নাকি?’

শব্দযোগে হেসে উঠলেন বেলাল শেখ। কিছু একটা বলতে যাবেন এর আগেই পিয়ার মুখের সামনে খাবার তুলে ধরেন শিরিন আহমেদ।

‘ এসব আলোচনা বন্ধ। কাল রাতেও কিছু খাসনি। খেয়ে নে। নয়তো অসুস্থ হয়ে যাবি।’

পিয়া তীক্ষ্ণ চোখে তার মায়ের দিকে তাকাল। নিরেট গলায় বলল,

‘আদর দেখিয়ে এখন মন গলাতে এসেছো? আমার মন এতো সহজে গলবে না।’

নৈঃশব্দ্যে হাসেন তিনি। লোকমাটা আরো একটু মুখের কাছে নিয়ে গেলেন। নিঝুম, শান্ত স্বরে বলেন,

‘তুই যা মনে করিস। এখন খেয়ে নে।’

খাবার দেখে রাতের খিদে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে পিয়ার। বিলম্ব করে না সে। দ্রুতই মুখে পুরে নিল খাবার। মুখে নিয়ে চিবাতে চিবাতে বলে,

‘এটাই শেষবার। এরপর এমন করলে আর আসবো না। এখন আমার নতুন ঠিকানা হয়েছে। ব্যাগ পত্তর নিয়ে সোজা ওখানে চলে যাবো।’

______________

‘তুই কেন বিশ্বাস করছিস না আমার সত্যি বিয়ে হয়ে গেছে।’

ঘন্টা খানিক ধরে তানিয়াকে একটা কথাই বলে যাচ্ছে পিয়া। কিন্তু তানিয়া বিশ্বাস করার বদলে বিরক্ত হচ্ছে বেশি। কপালে পড়া থাকা ভাঁজই তার প্রমাণ দিচ্ছে। এক কথা বার বার সহ্য করতে না পেরে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,

‘তোর এই ঘ্যানঘ্যান বন্ধ করবি পিয়া? কত পড়া জমেছে সেই খেয়াল তোর আছে? বাড়ি থেকে এসেছিস আগে একটু রেস্ট নে তারপর পড়তে বস।’

পিয়া কোমরে হাত রেখে বলে,

‘আরে গতকাল আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এটা বিশ্বাস করলে কি তোর জাত যাবে? বুঝা আমাকে।’

হাতে থাকা বইটা বন্ধ করে তানিয়া। আগুন ঝরা চোখে তাকাল পিয়ার দিকে।

‘তোরই বা এতো কিসের মাথা ব্যথা আমাকে বিশ্বাস করানোর যে তোর বিয়ে হয়ে গেছে। এটা আগে বুঝা আমাকে।’

তানিয়ার হাতটা ধরে পিয়া পুনরায় বলল,

‘কারন টা হলো যে পুরুষ আমার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে তোরা দলবেঁধে সেই পুরুষের পকেট খালি কর। স্বাদ মিটিয়ে দে বিয়ে করার।’

সহসাই তার নজরে এলো আঙুলে থাকা আংটিটার দিকে। তৎক্ষনাৎ তানিয়াকে দেখায় সে।

‘এই দেখ বিয়ের পর ওই অসভ্য লোক এটা আমায় পরিয়ে দিয়েছে।’

তানিয়া আংটিটা উল্টে পাল্টে দেখল। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সে।

‘এমন হাজারটা রিং জুয়েলার্সের দোকান থেকে অনায়াসে কিনা যায়। এখন সামনের থেকে সর। না হয় তোর মা*থা ফা*টিয়ে দিব।’

বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে পিয়া। আচমকা তার মনে পড়ে কপালে চুমু দেওয়ার কথা। পিয়ার হাত সোজা চলে গেল কপালে। প্রগাঢ় ত্রপায় মিইয়ে গেল সে। সরব অধর কোণে প্রস্ফুটিত হয় লাজুক হাসি। মন মাঝে শিহরিত হয় সেই অনুভূতি। তানিয়াকে বলতে যায় চুমু দেওয়ার কথা। পরক্ষণে অদৃশ্য হাতে নিজের লাগাম টেনে ধরে সে। এসব লজ্জার কথা। কারো কাছে প্রকাশ করার মতো না।

পিয়াকে এমন লজ্জা পেতে দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হয় তানিয়ার। চাহনি হয় তীক্ষ্ণ।

‘এমন পাগলের মতো করছিস কেন?’

অন্যমনস্ক থাকায় তানিয়ার কথায় ভীষণ চমকাল পিয়া। তড়িঘড়ি করে নিজেকে সামলে নিল সে। ভুলেও ওসব চুমু টুমুর কথা ওকে বলা যাবে না।

তানিয়া বিরক্তিতে ‘চ’ উচ্চারণ করে। করজোর করে বলে,

‘বিশ্বাস কর বোন আমার ভুল হয়েছে এতো বড় লাগেজ দেখে জিজ্ঞেস করা যে কেন নিয়ে আসছিস। না জিজ্ঞেস করতাম আর না পাগলের প্রলাপ শুনতে হতো।’

তানিয়ার কথা শুনে মুখ ভেঙচি দেয় সে। আঙুল উঁচিয়ে বলল,

‘খবরদার পরে আমায় কথা শুনিয়েছিস তো। সোজা মে*রে পুঁতে ফেলবো।’

‘তুই যাবি এখান থেকে?’

ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল পিয়া। বিছানার উপর ফেলে রাখা মোবাইল নিয়ে চলে গেল রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায়। বিকেলের একদলা স্নিগ্ধ বাতাস গা ছুঁয়ে দিল তার। শিরশিরিয়ে উঠে শরীর। পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে। চোখ মেলে তাকাল। গিয়ে দাঁড়াল গ্রিল ঘেঁষে। সাঁই সাঁই করে বাস, মটরসাইকেল, রিক্সা যাচ্ছে। বারান্দা থেকে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে সব।

তানিয়া গ্রামের মেয়ে। পিয়া শহরের মেয়ে হলেও বাসা থেকে ভার্সিটি অনেক দূর। যাতায়াত করতে করতে ক্লাস আওয়ার শেষ। সেজন্য সাবলেটে ভাড়া থাকে দুজন। মেস কিংবা হলের রান্না তাদের কারোরই মুখে রুচে না। সেজন্য সাবলেটে নিজেদের মতো থাকে দুজন। মিলেমিশে দুজনেই রান্না করে। ভাবনার মাঝেই মোবাইল বেজে উঠল তার। স্ক্রিনে ভাসমান আননোন নাম্বার। পিয়া ধরবে না ধরবে না করেও শেষে রিসিভ করে সালাম দিল। ওপাশ থেকে ভেসে এলো মেয়েলি কন্ঠ।

‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। ফ্রী আছো?’

পিয়া চিনল না কন্ঠস্বর। তুমি করে কথা বলায় কপালে ভাঁজ পড়ে তার। সন্দিহান গলায় জানতে চায়,

‘জ্বি, কে বলছেন?’

‘আমি তানভীর ভাইয়ার বোন আফরিন।’

তানভীর নামটা শুনে ধ্ক করে উঠে বুকে। মোবাইল হাত থেকে পরে যেতে নিলে তাড়াতাড়ি সেটা আঁকড়ে ধরে পিয়া। তোতলাতে তোতলাতে বলে,

‘জ্ব জ্ব জ্বি বলুন।’

পিয়াকে তোতলাতে শুনে শব্দহীন হাসে আফরিন। মেয়েটা যে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে বেশ বুঝতে পারছে সে।

‘আঙ্কেলকে কল করে ছিলাম। বলল তুমি নাকি ফিরে এসেছো।আমার জন্য অবশ্য সুবিধাই হয়েছে। তোমার ভার্সিটির পথে আমার বাসা। আসলে হয়েছে কি বিয়েটা তো হঠাৎ করেই হয়ে গেল। যদিও পরে রিসিপশন হবে। তারপরও মিষ্টির বাবা টাকা দিল তোমায় কিছু কিনে দেওয়ার জন্য। বের হতে পারবে একটু?’

পিয়া বাইরে তাকাল। পড়ন্ত বিকেল এখন। রোদের তাপ কমে এসেছে। যাবে কি যাবে না চিন্তায় পরে গেল সে। আই ঢাই শুরু করে।

পিয়ার উত্তর না পেয়ে আফরিন পুনরায় বলল,

‘একটু এসো না প্লিজ! আজকেই আমি ফ্রী আছি। কাল থেকে আবার ব্যস্ত হয়ে পরবো। এরপর সময় বের করতে কষ্ট হবে আমার।’

পিয়া কিছুক্ষণ ভাবল। কিছু একটা ভেবে চট করে জিজ্ঞেস করল,

‘আপনি একাই আসবেন তো?’

‘হুম আমি একাই আসবো। শুধু সাথে মিষ্টি থাকবে।’

মিষ্টির নাম নেওয়াতে আপনা-আপনি পিয়ার ঠোঁটের কোণে প্রস্ফুটিত হয় এক চিলতে হাসি। উৎফুল্ল স্বরে বলে,

‘আপনি কোথায় থাকবেন টেক্সট করে রাখুন। আমি রেডি হয়ে এক্ষুণি বের হচ্ছি।’

রুমে এসে চটপট করে তৈরি হয়ে গেল সে। তাকে এতো জলদি তৈরি হতে দেখে তানিয়া অদ্ভুত চোখে চেয়ে রইল। পিয়ার মতিগতি ঠিক ঠাহর করতে না পেরে সন্দিহান গলায় জানতে চাইল,

‘কোথায় যাচ্ছিস তুই?’

পিয়া চোখে কাজল দিতে দিতে জবাব দেয়,

‘আমার ননদ না ননস জানি না কল করল। বলল মিট করার জন্য।’

তানিয়া রাগী চোখে তাকায় ওর দিকে। দাঁত কিড়মিড় করে বলে,

‘আবারও শুরু করলি?’

পিয়া আর কিছু বলে না। নিজের মতো রেডি হয়ে বেরিয়ে গেল।

____________________

মিনিট ত্রিশেক হয় রেস্টুরেন্টে বসে আছে পিয়া আর আফরিন। মিষ্টি পিয়ার কোলে বসে তার চোখমুখ হাতরে চলেছে। কখনো পিয়ার গালে হাত দিয়ে পলকহীন তাকিয়ে থাকছে আবার বুকের সাথে মিশে যাচ্ছে। ব্যপারটা বেশ এনজয় করছে সে। আড়চোখে বার কয়েক আফরিনের দিকে চাইল সে। খিদের কথা বলে টেনেটুনে এখানে নিয়ে এসেছে। অথচ আধঘন্টা হয়ে গেল কিছু অর্ডার করেনি। একমনে মোবাইল চেপেই চলেছে।

সহসাই তাদের টেবিল বরাবর ফর্মাল ড্রেসআপে কোনো পুরুষ এসে দাঁড়ায়। পা থেকে চোখ তুলে পিয়া মুখ অব্দি যেতে পারল না। এর আগেই সেই পুরুষের গলার স্বর শুনে কেঁপে উঠল তার পুরো শরীর।

‘স্যরি! স্যরি! এতোক্ষণ আমার জন্য অপেক্ষা করার জন্য।’

হিমশীতল হয়ে এলো পিয়ার হাত পা। আঙ্গুলগুলো কাঁপতে লাগল ক্ষীণ। এই কন্ঠস্বর তাকে ঘায়েল করে। লজ্জায় মুড়িয়ে দেয়। এই কণ্ঠস্বরের মালিক আচানক এসে তাকে নিজের করে নিয়েছে। উলোটপালোট করে দিয়েছে তাকে। ভয়ে ফাঁকা ঢুুক গিলে সে।

এইবারে হাত থেকে মোবাইল রাখল আফরিন। কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

‘এতোক্ষণে তোমার আসার সময় হলো ভাইয়া?’

তানভীর ধপ করে পিয়া পাশে বসে পড়ল। আলতো স্পর্শ লাগে দুজনের। এইবারে যেন পিয়া আর দুনিয়ায় নেই। ধ্কধ্ক করে বুক কাঁপছে। হৃদপিণ্ড লাফানোর গতি বেড়েছে। গা হাত পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে এলো। এখান থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে তার।

‘ঢাকা শহরের জ্যামের কথা তো জানিসই। নতুন করে কি বলবো।’

‘হয়েছে অজুহাত দেখানো বন্ধ করো। মেয়েটা সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

পিয়া যেন আকাশ থেকে পরল। বোকা বনে গেল জায়গায়। চোখ বড় বড় করে চাইল আফরিনের দিকে। তানভীর পিয়ার দিকে মুখ করে ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে,

‘তাই নাকি ম্যাম?’

পুনরায় তানভীরের স্বর শুনে লজ্জায় সিটিয়ে গেল পিয়া। তানভীরের চোখে চোখ রাখার সাহস হল না।

আফরিন পিয়ার কোল থেকে মিষ্টিকে নিয়ে নিলো। পিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,

‘এনজয় ইউর টাইম। আমি আসি তাহলে।’

আফরিনের চলে যাওয়ার কথা শুনে আঁতকে উঠল পিয়া। একা এই মানুষটার সাথে থাকতে হবে ভেবেই গলা শুকিয়ে এলো তার। মাথা ঘুরতে লাগল।

‘থাক আমাদের সাথে।’

আফরিন ক্ষণকাল তানভীরের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে ফিক করে হেসে দেয়।

‘সব জায়গায় সবার থাকা মানায় না। কিছু কিছু সময় নিজেদের একান্ত ব্যক্তিগত। তৃতীয় ব্যক্তি বেমানান সেখানে।’

বলেই বিদায় নিয়ে পা বাড়ায় রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার জন্য। আফরিনের চলে যাওয়া দেখে পিয়া মনেপ্রাণে তাকে আটকাতে চাইল। কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারল না। মনে হলো কেউ তার গ*লা চে*পে ধরেছে। ততক্ষণে সে বুঝে গেছে দুই ভাইবোন তাকে প্ল্যান করে নিয়ে এসেছে।

আফরিন চলে গেছে মিনিট পাঁচেক হবে। লজ্জায় একদম সিটিয়ে গেছে পিয়া। দেয়াল ঘেঁষে বসল সে। দুজনের মাঝে সৃষ্টি হয় দূরত্ব।

পিয়াকে এমন লজ্জা পেতে দেখে হাসে তানভীর। দুজনের মধ্যকার দূরত্ব মিটিয়ে নিলো তৎক্ষনাৎ। স্পর্শ লাগে বাহুতে বাহুতে। পিয়ার হাত তিরতির করে কাঁপতে থাকে।

তানভীর আংটি পরানো হাতটা মুঠোবন্দি করে নিতে আবারও কেঁপে ওঠে পিয়া। হাত পা অবশ হয়ে এলো তার। নড়ার শক্তিটুকু পেল না। হাসফাস লাগছে তার। মনে মনে দোয়া করল কোনো অলৌকিক শক্তির মাধ্যমে অদৃশ্য হয়ে যেতে। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। তানভীর মৃদুস্বরে বলে,

‘আমার দিকে তাকান।’

তাকানোর বদলে চিবুক নুইয়ে ফেলে পিয়া। এই মানুষটার চোখে চোখ রাখার সাহস বা শক্তি কোনোটাই তার নেই। চোখে চোখ রাখা মাত্রই ম’রে যাবে সে।

কয়েকবার বলার পরও যখন পিয়া তাকাল না তখন অধৈর্য্য হয়ে তানভীর আবারও বলল,

‘কি হলো তাকান আমার দিকে। নাহলে উল্টোপাল্টা কিছু একটা করে বসতে কুণ্ঠাবোধ করবো না আমি। সেই অধিকার আমার কিন্তু আছে।’

বলতে দেরি আর অন্যহাতে কপাল ঢেকে ফেলতে দেরি করল না পিয়া। এহেম কান্ডে স্মিত হাসে তানভীর। দু’আঙ্গুলে কপাল ঘঁষে বলল,

‘আপনার কি মনে হয় এভাবে হাত দিয়ে কপাল ঢেকে ফেললে আমি আমার কাজ করতে পারবো না? ওখান থেকে হাত সরানোর শক্তি আমার নেই নাকি চুমু দেওয়ার জায়গার অভাব। কোনটা? আই থিংক আপনি ইনডিরেক্ট চাইছেন আপনার ঠোঁটে আমি,,,,

#চলবে