উষ্ণ আঁচে ভালোবাসা পর্ব-২৩+২৪

0
4

#উষ্ণ_আঁচে_ভালোবাসা (২৩)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

‘আমার পা ছাড়ো তানভীর। আমি পায়ে ব্যথা পাচ্ছি।’

তানভীর পা ছেড়ে দাঁড়াতেই তিনি আবার বলেন,

‘আমাকে স্বার্থপর ভাবো জানতাম তবে এতোটা নিকৃষ্টও যে ভাবো সেটা তো জানতাম না।’

জামাল এহতেশাম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে দাঁড়ালেন জানালার পাশে। ফের বললেন,

‘আমার প্রেশারটা বোধ হয় বেড়েছে। আফরিন আমার জন্য এক গ্লাস তেঁতুল গোলা পানি নিয়ে আসো।’

আফরিন বাধ্য মেয়ের মতো আবারও গেলো।

‘এরা সবাই আপনাকে অপরাধী ভাবছে। এবার সত্যি টা বলে দিন।’

তারেকের দিকে ব্যথাতুর চোখে চাইলেন জামাল এহতেশাম। মলিন হাসলেন।

‘গতরাতে ঘুম না হওয়া। চিন্তা আর টেনশনে ঔষধ না খাওয়া আমার প্রেশারটা বোধ হয় বেশিই বেড়ে গেছে। তারেক আমাকে ধরে একটু বিছানায় বসাও তো। বিছানা অব্দি যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না।’

তাহমিনা হক এগিয়ে আসতে চাইলে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেন তিনি। তারেক এগিয়ে আসে। জামাল এহতেশাম কে ধরে বিছানা অব্দি নিয়ে এলো।

‘তোমার কথাটার মানে কি তারেক?’

তানভীর কথাটা বলতেই তারেক কাটখোট্টা স্বরে জবাব দিলো,

‘মানেটা না হয় বাবাই বলুক।’

আফরিন এক গ্লাস তেঁতুল পানি নিয়ে আসে। জামাল এহতেশামের হাতে দিতেই তিনি চোখ মুখ খিঁচে সবটা খেয়ে নিলেন। আফরিনের হাতে খালি গ্লাস টা দিতেই সে গ্লাস হাতে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।

‘ওই মেয়েটা যেখান থেকে বলেছে সেখান থেকে বলবো? নাকি একদম শুরু থেকে?’

তারেক সবার দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্য হাসে।

‘শুরু থেকেই বলুন। মাঝ থেকে বললে এরা আপনাকে তখনো ব্লেইম দিবে।’

বালিশে হেলান দিয়ে বসেন জামাল এহতেশাম।

‘তানভীর?’ গম্ভীর কণ্ঠে ডাকলেন তিনি।

তানভীর তাকালো।

‘মনে আছে তোমার মা রাগ করে চলে যাওয়াতে রাতে দুই কাপ কফি নিয়ে তুমি আমার কাছে এসেছিলে?’

তানভীর মাথা ঝাঁকায়।

‘এরপরই কিন্তু আমার এ*ক্সি*ডেন্ট হয়। আচ্ছা তোমার মনে প্রশ্ন জাগেনি পিয়া যেখানে থাকে সেখানে কি করছিলাম আমি?’

তানভীরের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তিনি।

‘আমি সেদিন পিয়ার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আর যাওয়ার পথেই ঘটনা টা ঘটে।’

মুখ খুলেন তাহমিনা হক।

‘পিয়ার সাথে কেন দেখা করতে গিয়েছিলে?’

তিনি দম নিলেন।

‘সেদিন রাতে তানভীর আমাকে অনেককিছুই বলে। কিছু ভুল আমাকে আঙুল দিয়ে দেখায়। কিছু দায়িত্ব যেগুলো আমি কাজের অজুহাতে মিনার উপর চাপিয়ে দিয়েছিলাম। যেগুলো আমার পালন করা দরকার ছিল। দেরিতে হলেও সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম সন্তান যদি সুখে থাকে তাহলে বাবা মায়ের আর চাওয়ার কিছু থাকে না। সন্তান সুখ যেখানে মুখ্য টাকা পয়সা আর স্বার্থ সেখানে ফিকে। যে সন্তানের ভালো থাকার জন্য রক্ত পানি করছি সে সন্তানের সুখে থাকাটাই বার বার ইগনোর করেছি। উপলব্ধি করেছিলাম আমার সন্তানের সুখে থাকাটাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

এতটুকু বলেই তিনি থামলেন। হাঁপিয়ে উঠেছেন কথা বলতে বলতে। মাথার উপর পাখা চলছে তবুও তিনি ঘামছেন।

‘আমি একটু জিরিয়ে জিরিয়ে ঘটনা গুলো বলি। একটু শরীর খারাপ লাগছে।’

শরীর খারাপের কথা শুনে ভয় পান তাহমিনা হক। এগিয়ে এলেন কাছে। কঠোর গলায় বলেন,

‘আমাদের কারোর কিছু শোনা লাগবে না। তোমার বিশ্রাম দরকার এখন। তুমি বিশ্রাম নাও।’

মাথা নেড়ে তাহমিনা হকের বিরোধিতা করেন জামাল এহতেশাম।

‘কথাগুলো বলা ভীষণ প্রয়োজন।’

আঙুলের ইশারা করেন শিরিন আহমেদ আর বেলাল শেখের দিকে।

‘একমাত্র সন্তান নিখোঁজ হওয়ায় যে মানুষ দু’টোর ম*র*ণ প্রায় অবস্থা অন্তত তাদের কাছে আমি অপরাধী হতে চাই না।’

তাহমিনা হক কান্নামাখা স্বরে অনুনয় করলেন,

‘পরেও বলতে পারবে সব। এখন বিশ্রাম নাও।’

‘নাআআ।’

মৃদু চিৎকার করে উঠেন জামাল এহতেশাম।

‘কথাগুলো না বলতে পারলে আমি আরো অসুস্থ হয়ে যাবো। দয়া করে বাঁধা দিও না।’

স্বামীর জেদের কাছে হার মানলেন তাহমিনা হক। বসে পড়লেন বিছানার এক কোণায়।’

জামাল এহতেশাম আবারও বলা শুরু করলেন।

‘এরপর ভাবলাম পিয়ার সাথে একবার দেখা করে আসি। কারণ এর আগে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে মেয়েটার সাথে। কিন্তু তার আগে কথা বলি আমার বিজনেস পার্টনার মানে গোলাম মোস্তফার সাথে। যেহেতু ভদ্রলোকের মেয়েকে ছেলের বউ করবো বলে কথা দিয়েছিলাম। কথা তো আর রাখা সম্ভব না। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মনে হয়েছে উনাকে স্যরি বলা প্রয়োজন। উনাকে কেবল স্যরি বলিনি। সেদিনের ঘটনার জন্য কড়া ভাষায় কথাও শুনিয়েছিলাম। এবং এটাও বলেছিলাম খুব শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকতার সহিত পিয়াকে পুত্রবধূর মর্যাদা দিবো। এরপর পিয়ার সাথে দেখা করতে যাই। গাড়ি নেইনি সেইদিন। মেয়েটার জন্য একটা আইসক্রিম কিনার জন্য রিকশা থেকে নেমেছিলাম। কিনে যখন ফিরছিলাম তখনই,,,,

থেমে যান জামাল এহতেশাম। তাকলেন আঘাত পাওয়া পায়ের দিকে। চোখ জোড়ায় একরাশ অসহায়ত্ব।

মুখে আঁচল গুঁজে নিঃশব্দে কান্না শুরু করেন তাহমিনা হক। বিরক্ত হন জামাল এহতেশাম। চোখমুখ কুঁচকান তিনি।

‘আহ্! মিনা। এভাবে কাঁদলে আমি বলবো কিভাবে?’

তাহমিনা হক কান্না আটকানোর চেষ্টা করেন। তবে পারেন না। কান্নার প্রকোপে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।

উপস্থিত সকলের দৃষ্টি জামাল এহতেশামের দিকে। এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে তানিয়াও। জামাল এহতেশাম তানিয়ার দিকে তাকিয়ে চমৎকার হাসলেন। তিনি আবারও বলতে লাগলেন,

‘এরপর কি হয়েছে না হয়েছে কিছুই আমার জানা নেই। জ্ঞান যখন ফিরে তখন নিজেকে আবিষ্কার করি হাসপাতালে। এক এক করে সবাইকেই দেখি। মিনা, তানভীর, আফরিন, তারেক আর,,

তাকালেন মিষ্টির দিকে।

‘আমার দুচোখ পিয়াকে খুঁজতো। আমি চাইতাম মেয়েটা আসুক। আমাকে একটা বার দেখে যাক। মেয়েটা এলো না। আমার অভিমান হলো। ভীষণ অভিমান। বার বার মনে হতো ওকে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়তো ভুল ছিলো। এরপর হাসপাতালে এলেন মোস্তফা সাহেব আর তার মেয়ে টিনা। টিনা যখন আমাকে দেখতে আসে তখন তো মাথায় ঘুরঘুর করতো একটা কথা। পিয়াকে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার আসলেই ভুল ছিলো।’

দম নেন তিনি। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলেন কয়েকবার।

‘আমি একটা কথা স্কিপ করে গিয়েছি। সেটা হলো আমাদের কোম্পানি মাস ছয়েক ধরে লসে মুখে। বড় কোনো অর্ডার আসছে না। ছোটখাটো কয়েকটা অর্ডার আসে। যা দিয়ে স্টাফদের বেতন দেই। তাছাড়া কোম্পানি একাউন্টে হিসাবের গড়মিল পাচ্ছিলাম। আমার বিজনেসের কথা এই কারনে বললাম প্রত্যেকটা ঘটনা একটা আরেকটার সাথে কানেক্টেড।’

আবারও দম ফেলেন তিনি। কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর পুনরায় বলা শুরু করলেন,

‘আমাকে যখন ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়ানো হতো তখন মাঝে মাঝে চোখ মেলে দেখতাম মিনা আমার পাশে নেই। মাঝে একদিন ঘুমের ঘোরে মনে হয়েছিল আমি যেন পিয়াকে দেখেছি। ব্যাপারটা স্বপ্ন না বাস্তব আমি কনফিউজড ছিলাম। শেষ যেদিন মোস্তফা সাহেব উনার মেয়েকে নিয়ে কেবিনে আসেন সেদিন আমি মিনার চোখে ভয় দেখেছি। উৎকন্ঠা দেখেছি। আমার খটকা লাগে। মোস্তফা সাহেব কে দেখে মিনা কেমন যেন করছিলো। এরপর আমাকে রিলিজ দেওয়া হলো। বাড়িতে চলে এলাম। এরপরেও পিয়া এলো না। ওই যে আমার খটকা লেগেছিল সেটা কিন্তু দূর হয়নি। সুযোগ পেয়ে মিনাকে রাগাতে শুরু করলাম। বললাম, যে মেয়ে আমাকে হাসপাতালে এক নজর দেখতে আসেনি তাকে ছেলের বউ হিসেবে মানি না। আমি টিনাকেই এই বাড়ির বউ করবো। সেটা যেভাবেই হোক।’

অনর্গল কথা বলে থামলেন তিনি। তাকালেন বেলাল শেখের দিকে।

‘বেয়াই সাহেব?’

বেলাল শেখ চমকালেন। এই প্রথম জামাল এহতেশাম উনাকে বেয়াই বলে সম্বোধন করেছেন।

‘আপনার রক্ত তো আমার শরীরে। তবে কি আমরা এখন থেকে ভাই? বেয়াই না ডেকে ভাই ডাকলে আপনি কি রাগ করবেন?’

বেলাল শেখের কাছে উত্তর নেই। তিনি কেবল অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন।

‘সে আপনি রাগ করুন। আমি আপনাকে ভাই বলেই ডাকবো। এবার ঘটনায় ফিরি। তাহমিনা বলে দিলো সব। আমাকে কে হাসপাতালে এনেছে কে রক্ত দিয়েছে। সব মানে সব। তবে অবাক হয়েছিলাম এটা শুনে মেয়েটা রোজ হাসপাতালে আসতো। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতো। কিন্তু ভয়ে আমার সামনে আসতো না। যদি আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি। যদি আমার কিছু হয়ে যায় সেই ভয়ে। এরপরই আমি পিয়ার সাথে দেখা করি। মায়ের অনেকগুলো শাড়ি মিনা যত্ন করে তুলে রেখেছে। সেখান থেকে একটা শাড়ি পিয়াকে দেই। কারন পিয়ার সাথে যেদিন আমার প্রথম দেখা হয় মেয়েটা বলেছিল, ছেলের বউ হিসেবে না মানলেও আপনার মায়ের দাবি নিয়ে যদি আসি তখন তো আর ফেলে দিতে পারবেন না। তাই চেয়েছিলাম পিয়া আমার মা হয়ে আগে বাড়িতে প্রবেশ করুক তারপর ছেলের বউ।’

‘এরপরের ঘটনাগুলো আমি বলি বাবা?’

মাথা নাড়ান তিনি।

‘তোমার বলার সময়টা এখনো আসেনি। তোমার এন্ট্রি যেখান থেকে সেখানে এখনো আমি যাইনি।’

আবারও রইলেন কিছুক্ষণ চুপ। শুষ্ক ঠোঁট জোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিলেন।

‘আমার একমাত্র মেয়ে আফরিন।’

আচমকা নিজের নাম শুনে হকচকিয়ে গেল আফরিন। জামাল এহতেশামের দিকে তাকাতেই দেখলো তিনিও তার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘মেয়েটা নিজের পছন্দে বিয়ে করলো। তখন থেকেই মেয়েটার উপর রাগ অভিমান। দূরত্ব যেটুকু ছিলো। তা যেন আরো বেড়ে গেলো। কিন্তু ও জানে না ও আমার জন্য কি। সারাদিন হাড়ভাংগা খাটুনির পর বাসায় এসে মেয়েটাকে দেখলে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যেতো। মেয়েটা হাসলে আমার সারাদিনের ক্লান্তি উদাও হয়ে যেতো নিমিষেই। বিয়েতে আমি রাজি না থাকায় বিয়ের সমস্ত আয়োজন মিনা করেছে। আমার পক্ষ থেকে কিছুই দিতে পারিনি সেভাবে। আমি চেয়েছিলাম তানভীর আর পিয়ার রিসিপশনের দিন আফরিনও বউ সাজুক। আমার বাড়ি থেকে আফরিনের আবার বিদায় হউক। যাইহোক সেজন্য পিয়াকে কাল এখানে আসতে বলেছিলাম। আর আমার স্পেশাল গেস্ট পিয়াই ছিলো। মোস্তফা সাহেব আর উনার মেয়ে না।’

কথা শেষ করতেই আফরিন ফুঁপিয়ে উঠলো। চোখ জোড়ায় শ্রাবণধারা।

‘তুমি কাঁদবে না আফরিন। তোমার মা কাঁদলে তাকে সামলানোর ক্ষমতা আমার আছে। কিন্তু তোমার চোখে পানি দেখলে আমার কলিজা ফেটে যায়। আমার সহ্য হয় না মা। আমার সহ্য হয় না।’

আফরিন ছুটে এসে জামাল এহতেশামের পায়ের কাছে বসে পড়লো। ভাঁজ পড়া হাত জোড়ায় কপাল ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলো অঝোরে।

‘কান্না থামাও আফরিন। আমার আরো অনেক কথা বলার আছে।’

মাটিতে রাখা গ্লাসটা হাতে নিয়ে সে আবারও আগের জায়গায় দাঁড়ালো। জামাল এহতেশাম ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলেন। ধাতস্থ করলেন নিজেকে।

‘কোম্পানির লসের কথা বলেছিলাম মনে আছে? এইবার আসি সেই প্রসঙ্গে। তানভীরের যখন বিয়ে হয় তখন আমি চট্টগ্রাম। বিশাল একটা অর্ডারের কাজে। মোস্তফা সাহেব এটা জানতেন না। তিনি ভেবেছিলেন ছোটখাটো অর্ডার হয়তো। ওখানে গিয়ে দেখলাম মালিক আমার বাল্যকালের বন্ধু। চিনতে পেরেই আমার বন্ধু ডিল করার জন্য রাজি হয়ে গেলো। আমাদের সমস্ত কথাবার্তা শেষ ছিলো। জাস্ট সিজনে অফিসিয়াল কাজ ছিলো মানে লেনদেন। এক্সিডেন্টের জন্য তো আর আমি যেতে পারিনি। গেলেন মোস্তফা সাহেব। তিনি হাসপাতালে এসে জানালেন ডিলটা হয়নি। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। ডিল ভেস্তে যাওয়ার কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না। আমার সন্দেহ হয়। মন বলছিলো ডিল না হওয়া আর এক্সিডেন্ট যেন একই সূত্রে গাঁথা। রিলিজের পর বাড়িতে এসে আমি ফোন করি আমার সেই বাল্যকালের বন্ধুকে। জানতে চাই কেন ক্যান্সেল করা হয়েছে ডিল। জানতে পারলাম কস্টিং বেশি দেখানো হয়েছে। বন্ধু হউক আর যাইহোক নিজের কোম্পানির লস তো আর সে করবে না। আমার গলা শুকিয়ে এসেছে। এবার তুমি বলো তারেক।’

যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন জামাল এহতেশাম। বুকের উপর থেকে যেন পাথর সরেছে।

এবার সকলের মনোযোগ তারেকের দিকে। কোলে থাকা মিষ্টিকে তারেক তানভীরের কোলে দিলো। মেয়েটা ঘুমিয়ে কাদা।

‘এক্সিডেন্টের পর আমি সেই স্পটে গিয়েছিলাম। এটা আপনারা কেউ জানেন না। আশেপাশে যত দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে সব চেক দেই। চালকের মুখ দেখা না গেলেও। গাড়ির নাম্বার আমরা পেয়েছিলাম। হন্যে হয়ে সেই চালক কে খুঁজছি। তখনই বাবা আমার সাথে যোগাযোগ করে। এবং সাহায্য চান আমার কাছে। জানান সন্দেহের কথা। এতোদিন তো নিজের মতো করে কার্লপ্রিটকে ধরতে চেয়েছিলাম। বাবা বলাতে যেন আগ্রহ আরো বেড়ে গেলো। আমি আমার মতো কাজ চালিয়ে গেলাম। যেই কোম্পানির গাড়ি সেখানে যোগাযোগ করতেই গাড়ির মালিককে পেলাম। তারপর পৌঁছে গেলাম ড্রাইভার অব্দি। গেস হোয়াট? ইট’স নট অ্যান এক্সিডেন্ট। ইট ইজ অ্যান অ্যাটেম্পটেড প্রিমেডিটেটেড মা*র্ডার।’

আঁতকে উঠলো উপস্থিত সকলে। তাহমিনা হকের কান্না মাত্রা বাড়লো। রীতিমতো বিলাপ করছেন তিনি। জামাল এহতেশাম স্ত্রীর মাথায় হাত রাখেন।

‘ আমি ঠিক আছি তো মিনা। কান্না থামাও। তারেক কে বলতে দাও।’

তারেক আবারও বলা শুরু করে,

‘আর শকিং করা নিউজ হচ্ছে এই প্ল্যানিং এর মাস্টারমাইন্ড হচ্ছেন গোলাম মোস্তফা।’

#চলবে

#উষ্ণ_আঁচে_ভালোবাসা (২৪)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

ছোট বড় উপস্থিত কাউকে তোয়াক্কা না করে জামাল এহতেশামের বুকে লুটিয়ে পড়েন তাহমিনা হক। পুরোনো ক্ষ*ত তাজা হয়েছে। রীতিমতো র*ক্ত ঝরছে সেই ক্ষ*ত থেকে। তাই নিজেকে সামলাতে পারলেন না। সময় অতিবাহিত হয়। ভদ্রমহিলার কান্না বেগ বাড়ে। ভিজে ওঠে জামাল এহতেশামের পাঞ্জাবির একপাশ। তিনি তাহমিনা হকের কানে কানে আস্তে করে বললেন,

‘ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই, বেয়াই, বেয়াইন সবাই এখানে। নিজেকে সামলাও। ওরা কি ভাববে?’

তাহমিনা হক চট করে সরে এলেন। মাথা উঁচু করতেই তারেকের চোখে চোখ পড়ল। দ্রুত নামিয়ে নিলেন দৃষ্টি।

শুষ্ক উষ্ঠ জোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নিলো তারেক। দম নিয়ে আবারও বলা শুরু করলো,

‘সমস্ত প্রমাণ আমার হাতে। এটেম্পট টু মা*র্ডা*র কেসে উনাকে গ্রেফতারের প্রস্তুতি নিতেই বাবা বাঁধা দেন। বাবার সন্দেহ উনি বাবার সাথে জালিয়াতি করছেন বা করছে। সব প্রমাণ একসাথে করে তারপর যেন স্টেপ নেই। সন্দেহভাজন কয়েকজনের নাম বলেন। যারা কোম্পানীর কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্টে আছেন। আমার নিজস্ব কয়েকজন স্পাই কে তাদের চব্বিশ ঘন্টার খবরা খবর দিতে বললাম। সপ্তাহ খানিক অপেক্ষা করার পর একজন বলল কোম্পানির যে ক্রেডিট কন্ট্রোলার অফিসার তার যাতায়াত গোলাম মোস্তফার বাড়িতে। একদিন দুইদিন না প্রায়দিনই তিনি যান সেখানে। শুধু বাড়িতেই না অফিস আওয়ারের পরে উনাদের দুজনকে বিভিন্ন কফিশপেও দেখা যেত। রাতের আধারে আমার ফোর্স উনাকে তুলে আনলো। কয়েক ঘা দিতেই মুখ খুলেন ভদ্রলোক। কোম্পানির টাকা গোলাম মোস্তফার নির্দেশেই উধাও হয়ে যেতো। যার একটা অংশ তিনিও পেতেন। এই যে কোম্পানি লসের মুখে এর পিছনে গোলাম মোস্তফার হাত। বড় বড় ডিল গুলো উনি কেন্সেল করতেন। আবার কখনো কস্টিং বেশি দেখিয়ে ক্লায়েন্টদের বাধ্য করতেন ডিল কেন্সেল করার জন্য। যেসব ডিল বাবা হেন্ডেল করতেন সেগুলো পারতেন না। উনি চাচ্ছিলেন বাবা যেন কোম্পানির অংশীদারত্ব সেচ্ছায় ছেড়ে দেন।’

‘উনি এমনটা কেন চাইবেন? কোম্পানির লস মানে তো উনারও ক্ষতি।’

তানভীরের প্রশ্নে হাসে তারেক। রগড় গলায় জবাব দেয়,

‘তুমি টিনাকে বিয়ে করলে হয়তো চাইতো না।’

তানভীরের চোখমুখ কঠিন হয়ে এলো।

‘তানভীর টিনাকে বিয়ে করার অস্বীকৃতি জানালে তিনি এভাবেই প্রতিশোধ নিতে থাকেন। তানভীর বিয়ে করার পর চাচ্ছিলেন বাবাকে একেবারে পথে বসানোর জন্য। আরো কয়েক ঘা দিতেই তিনি আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদের দিলেন।’

‘এগুলো আমি একটু বলি তারেক।’

তারেক থেমে গেলো। বলা শুরু করলেন জামাল এহতেশাম।

‘পিয়াকে যে মেনে নিবো এটা শোনার পর মোস্তফা সাহেব সহ্য করতে পারেননি যার ফলাফল আমার এই এক্সিডেন্ট। এরপর ওদের নেক্সট টার্গেট ছিলো মিনা আর পিয়া।’

‘তার মানে? তার মানে আমার পিয়াকে উনিই অপহরণ করেছেন?’

বলেই দাঁত কিড়মিড় করতে লাগে তানভীর। রাগের তেজে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় হাত। লাল হতে থাকে চোখ। ফুলে উঠে কপালের শিরা। পুনরায় বলল,

‘সব জানা সত্বেও এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন তারেক?’

ধমকে উঠলেন জামাল এহতেশাম।

‘তুমি চুপ করো। আমাকে বলতে দাও।’

‘কিন্তু বাবা ওরা যেকোনো সময় আমার পিয়ার ক্ষতি করে দিতে পারে।’

জামাল এহতেশাম চোখ গরম করে তাকাতেই মাথা নুইয়ে ফেলে তানভীর। কিন্তু রাগ আর অস্থিরতা কোনোটাই কমলো না তার।

‘টিনা মেয়েটার মা নেই। সেজন্য প্রথম থেকেই মেয়েটার প্রতি আমার সহানুভূতি কাজ করতো। মিনাকে আমি চিনি। ও ছেলের বউয়ের জন্য ঠিক কি কি করতে পারে আমি কল্পনাও করতে পারবো না। এতটুকু জানি মাথার তাজ করে রাখবে। সেজন্য চাইতাম মা মরা মেয়েটা একটা মা পাক। সেজন্য মোস্তফা সাহেব বিয়ের প্রস্তাব দিতেই রাজি হয়ে যাই। কিন্তু অবাক হয়ে যাই এটা শুনে যে ওই মেয়েটাই নাকি মিনার ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলো। বিয়ের পরও তানভীরের পিছনে ঘুরঘুর করায় মিনা বকাঝকা করাতে মেয়েটা এতো হিংস্র হয়ে উঠবে বুঝতেও পারিনি।’

মায়াভরা চোখে তিনি তাহমিনা হকের দিকে তাকালেন। আবেগী স্বরে বলে উঠলেন,

‘তাহমিনা কেবল আমার সন্তানের মা না। আমার সুখ দুঃখের সাথী। আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমাদের ঝগড়া হয়। মান অভিমান হয়। তবুও এই মানুষটার সান্নিধ্য আমার সুখ। যখন আমার কেউ ছিলো না তখনও এই মানুষটাই আমার পাশের ছিলো। আমি যে শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করেছি সেরকম যন্ত্রণা মিনাও ভোগ করুক আমি সেটা স্বপ্নেও চাই না। জেদ চেপে যায় মনে। চেয়েছিলাম টিনাকে একটা শিক্ষা দিতে। তাই গতকাল ওদের দাওয়াত করেছিলাম। ওর সামনেই পিয়াকে পুত্রবধূ স্বীকৃতি দিতে চেয়েছিলাম। আর এটাই ছিলো আমার পক্ষ থেকে টিনার জন্য স্পেশাল সারপ্রাইজ।’

কথাগুলো বলে হাঁপিয়ে উঠেন তিনি। বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে রইলেন কিছুক্ষণ। তারেক আবার বলা শুরু করে,

‘ওদের নেক্সট টার্গেট ছিলো মা। এরপর ভাবি। মাকে কি করতো জানি না। তবে ভাবিকে হয়তো মে*রে ফেলতো। তাই কোনোকিছু ঘটার আগেই বাবা চাচ্ছিলেন সব ক্লোজ করতে। কাল শুধু উনারাই এসেছেন এমন না। কাল আঙ্কেল আন্টির এখানে আসার কথা ছিলো।’

এটা বলেই তারেক বেলাল শেখ আর শিরিন আহমেদের দিকে তাকান। দুজন বেশ অবাক হন। এমনকিছু উনারা দুজনের কেউই জানেন না। দুজন দুজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো। বেলাল শেখ বলে উঠেন,

‘আমরা? আমাদের এখানে আসার কথা ছিলো? কই তেমন কিছু তো কেউ আমাদের জানায়নি।’

তারেক হাসে।

‘গতকালের স্পেশাল গেস্ট আপনারা আর ভাবিই ছিলো। টিনা আর গোলাম মোস্তফা নন। প্ল্যান ছিলো ভাবি এই বাড়িতে ঢুকার সাথে সাথেই আমিও আপনাদের নিয়ে আসবো এখানে। মা আর তানভীরের কি রিয়েকশন হয় সেটাই দেখতে চাচ্ছিলেন বাবা। সেজন্য তানভীরকেও বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করে দেন।’

‘কিন্তু তুমি যে বললে কাল তুমি আসামি ধরতে যাচ্ছো?’

ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করে আফরিন।

‘আসামি ধরতেই গিয়েছিলাম। তবে বাবার কয়েদখানার স্পেশাল আসামী আরকি। তবে আরো কিছু পোশাকধারী সরকারি গেস্ট আসার কথা ছিলো। বাবার বিজনেস পার্টনার আর উনার মেয়ের সাথে স্পেশাল ট্রিট করার জন্য। গত পরশু বাবা থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেছেন।’

তানভীর নিজের অস্থিরতা দমাতে পারলো না। ব্যাকুল গলায় বলে,

‘তারেক এভাবে বসে থেকো না দয়া করে। আমি নিশ্চিত পিয়াকে উনি আর উনার মেয়েই সরিয়েছেন। হাতে হাতকড়া পড়লে সব স্বীকার করবে। আর তুমি কোনো স্টেপ না নিলে উনার বাড়িতে আমিই যাবো।’

তারেক দু’আঙুলে কপাল ঘঁষে। চোখ সংকুচিত করে বলে,

‘আমাকে তোমার কি মনে হয়? আমি এখনো হাত গুটিয়ে বসে আছি?’

‘তুমি হাত গুটিয়ে বসে না থাকো আর না থাকো তোমার কি মনে হয় ওই কার্লপ্রিট হাত গুটিয়ে বসে আছে? তুমি উনার সহযোগীকে গ্রেফতার করেছো এই খবরে উনি এখনো চুপ করে বসে আছে? আমি পুরোপুরি নিশ্চিত পিয়া উনার কাছেই আছে।’

‘টিনা আর গোলাম মোস্তফা পুলিশের হেফাজতে আছে।’

জামাল এহতেশাম বাদে চমকে উঠে সবাই। তানভীর বলে উঠে, ‘মানে?’

তারেক জবাব দেয়,

‘গতকাল ভাবি বাসা থেকে বের হয়ে বাবাকে কল দেন। দুপুর হওয়ার পরও এখানে না আসায় বাবা আবার কল দেন ভাবিকে। কিন্তু মোবাইল বন্ধ। ফোন দেন আমাকে। বললাম টেনশন না করতে। হয়তো জ্যামে আটকেছে। মোবাইলেরও চার্জ শেষ। বাবা শান্ত হলেন না। উল্টো আরে অস্থির হয়ে উঠলেন। বললেন উনার মন বলছে কিছু একটা হয়েছে। যখন বিকেল হলো তখন বুঝলাম কিছু আসলেই কিছু একটা হয়েছে। সন্দেহ গিয়ে পড়ল গোলাম মোস্তফার উপর। ভেবেছিলাম হয়তো কিছু টের পেয়েছে। তাই উনারা প্ল্যান চেঞ্জ করে আগেই ভাবিকে অপহরণ করেছে। বাবাকে এখন পুলিশি ঝামেলায় যাওয়ার দরকার নেই। উনাদের স্বাভাবিকভাবে বিদায় দেওয়ার জন্য। উনারা এখান থেকে বের হওয়ার পর নজরে রাখি। তবে তেমন কিছুই পাইনি। ভাবির অপহরণের পিছনে উনার হাত না থাকলেও বাবার দায়ের করা মামলায় আজ সকালে উনাকে হাজতে নেওয়া হয়েছে। সেজন্যই আমার আসতে আসতে দুপুর হয়েছে।’

অগোচরে থাকা সমস্ত কথা খোলাসা করে থামলো তারেক। তাকালো আফরিনের দিকে। দম নিয়ে বলে,

‘এবার বুঝলে হঠাৎ করে কেন বাবার সাথে আমার দহরমমহরম সম্পর্ক হয়ে গেছে?’

আফরিন মাথা নাড়ে।

‘আর কোনো প্রশ্ন আছে কারো?’

কারো কোনো প্রশ্ন না থাকলেও আর্তনাদ করে ওঠেন শিরিন আহমেদ।

‘কিন্তু কলিজার টুকরা কার কাছে? কে নিলো আমার বুকের মানিককে?’

দরজার কাছে গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তানিয়া। মলিন চোখজোড়া তার।

‘এই পিয়ার বাবা দোকান দুইটা বিক্রি করে দাও। সন্তান না থাকলে দোকান দিয়ে কি করবো?’

বিলাপ করেছেন তিনি। বেলাল শেখ ফ্যাকাশে গলায় বলেন,

‘দোকান বিক্রি সময়সাপেক্ষ কাজ। হুট করে তো ক্রেতা পাওয়া যায় না।’

‘আমি এতোকিছু জানি না তুমি টাকার ব্যবস্থা করো।’

তারেক কিছু একটা ভাবলো। চিন্তিত গলায় বলল,

‘ওরা মুক্তিপণ দাবি করলো। কিন্তু ঠিকানা বললো না। আবার কাউকে কল দিলো না। মধ্যরাতে তো নাম্বারটা একবার অন করা হয়েছিল। সেই সূত্র ধরে বলা যায় যে বা যারা এর পিছনে আছে তারা নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় নেই। রার্নিংয়ে আছে। হয়তো কোনো গাড়িতে। আঙ্কেল আপনার কাছে কি রাতে কোনো কল এসেছিল?’

বেলাল শেখ এপাশ ওপাশ মাথা নাড়েন।

‘না, বাবা।’

আচমকাই জামাল এহতেশাম বলে উঠেন,

‘আমাকে দিয়েছিলো ফোন।’

চমকে উঠে সকলে। তারেক অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে,

‘আপনাকে ফোন দিয়েছিলো? বললেন না তো।’

‘বললে কি করতে?’ কঠিন স্বরে প্রশ্ন করেন জামাল এহতেশাম।

‘আপনার বলা উচিত ছিলো।’

তেতে উঠলেন তিনি।

‘আমি উচিত মনে করেনি। তোমাকে বললে তুমি ফোর্স নিয়ে চলে যেতে। এতে মেয়েটার ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা আছে। তাই আমি ঠিকানা অনুযায়ী টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি আমার লোক দিয়ে। ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে তুলতে দেরি হয়ে গেছে। নয়তো আরো আগেই,,,,

‘ও আপনি টাকাও পাঠিয়ে দিয়েছেন? আপনি সমস্ত কিছু আমার সাথে এক হয়ে করেছেন। আর এটা বলতে পারলেন না? আপনি ভুল করেছেন বাবা।’

উত্তেজিত হয়ে পড়েন জামাল এহতেশাম।

‘হ্যা আমি ভুল করেছি। আমার ভুলে যদি মেয়েটা বেঁচে থাকে তো এমন ভুল আমি বার বার করবো। দূরে ঠেলে দেওয়ার পরও যে মেয়ে আমার নিথর রক্তাক্ত দেহ নিয়ে রাস্তায় আহাজারি করেছে। যে মেয়েটা অভিমান দূরে ঠেলে বার বার বলেছে আমার বাবাকে আপনারা বাঁচান তার জন্য কয়েক লাখ টাকা আমি খরচ করতে পারবো না? আমি কয়েক কোটি খরচ করতেও রাজি আছি। তবুও মেয়েটা বেঁচে ফিরুক।’

তারেক পরপর কয়েক নিঃশ্বাস ফেলল,

‘ঠিকানা আর কাকে পাঠিয়েছেন তার নাম্বার বলুন।’

তানিয়ার চোখেমুখে ভর করে আতঙ্ক। ও হাসফাস করতে লাগলো। কপালে জমা হয় ছোট ছোট ঘামের ফোঁটা। অস্থিরতা বাড়ে তার। নজর এড়ায় না আফরিনের।

‘আমাকে মে*রে ফেললেও আমি কিছু বলবো না।’

‘কাকে পাঠিয়েছো এহতেশাম? বলে দাও না।’

‘জোরাজোরি করবে না মিনা। আমি কিছুই বলবো না।’

‘বাবা আপনি সিউর ওরা টাকা নিয়ে ভাবিকে ফেরত দিবে? এমনও তো হতে পারে টাকা নিলো আর ভাবিকে ফেরত দিলো না।’

জামাল এহতেশাম এক পলক তাকালেন তারেকের দিকে। এরপরই মুখ ঘুরিয়ে নেন অন্যদিকে।

এই সুযোগে তারেক চোখের ইশারা করে তাহমিনা হককে। যেন জামাল এহতেশামের মোবাইলটা দেয়।

তাহমিনা হকও সুযোগ বুঝে খপ করে মোবাইলটা নিয়ে নিলেন।

‘মিনা, মিনা আমার মোবাইল দাও। একদম বাড়াবাড়ি করবে না।’

কেউ শুনলো না উনার কথা। তারেক কল লিস্ট চেক করলো। পিয়ার নাম্বার থেকে কল আসার পরে লিস্টে কেবল দু’টো নাম্বার আছে। একটা তারেকের নিজের নাম্বার। আরেকটা এজাজ নামের একজনের। তারেক বাঁকা হাসলো।

‘বাবা এটাই তো সেই নাম্বার?’

জামাল এহতেশাম উঠতে চাইলে ধরে রাখেন তাহমিনা হক।

‘তারেক থেমে যাও। তোমার এই কাজের জন্য পিয়ার যদি কিছু হয়। আমি তোমায় ছাড়বো না।’

‘তারেক?’

করুন স্বরে ডাকলো তানভীর।

তারেক ঘাড় ঘুরিয়ে শান্ত গলায় বলল,

‘ভরসা আছে আমার উপর? আমাকে না বলে বাবাকে বোঝাও। বাবার উত্তেজিত হওয়া বারণ।’

তানভীর দমে গেলো। তারেকের উপর ভরসা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। সে এসে জামাল এহতেশামের পাশে বসলো।

‘একটু ধৈর্য্য ধরো।’

‘আমি জানতাম কিছু একটা কাহিনি আছে। না হলে ফোন কেন আসবে না। তাই তো জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়েছি। আমিও দেখবো ঠিক কতদূর যেতে পারে এই কিড*ন্যাপার।’

তিনি কেবল ফুসতে লাগলেন। তারেক নাম্বারটা ডায়াল করতে দেরি হলো আর তানিয়ার অতি সন্তর্পণে সেখান বেরিয়ে আসতে দেরি হলো না। তানিয়ার হাত পা কাঁপছিলো। ঘামছিলো ভীষণ। চোখেমুখে অস্থিরতা। ব্যাপারটা খেয়াল করে আফরিন। সন্দেহ জাগে তার। তানিয়া পিছু পিছু সেও বেরিয়ে আসে অতি সন্তর্পণে।

পিছনে কে আছে বা না আছে সেদিকে খেয়াল নেই তানিয়ার। এলোমেলো পায়ে হাঁটছে সে। বুক ধড়ফড় করছে তার। তার মনোযোগ অন্যদিকে। কাঁপা কাঁপা হাতে ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে। ডায়াল করে চিরপরিচিত নাম্বারে। দুই বার রিং হতেই রিসিভ হয়। সামনে যে রুম পায় সেই রুমে ঢুকেই নিজেকে আড়াল করে সে।

‘তুহিন কোথায় তুমি? যেখানে আছো সেখানে থেমে যাও।’

ওপাশ থেকে তুহিন বলে,

‘আমরা লোকেশনের কাছাকাছি আছি। জ্যামে আটকা পড়েছি।’

‘ আঙ্কেল সব বলে দিয়েছেন। আর সবচেয়ে বড়কথা পিয়ার ননদের হাসবেন্ড একজন পুলিশ অফিসার।’

রেগে যায় তুহিন। দাঁত কিড়মিড় করে সে।

‘সেটা আগে বলোনি কেন?’

তানিয়া চাপা গলায় বলে,

‘আরে আমি জানতাম নাকি। আল্লাহর দোহাই টাকার জন্য যেও না। ধরা পড়ে যাবে। তোমায় ধরতে পারলে আস্তো রাখবে না।’

আরো রেগে গেলো তুহিন।

‘আমি যদি টাকা টা না পাই। তবে একে আমি মে’রেই ফেলবো। যাই হয় হবে।’

‘তুহিন তুমি পিয়ার কিছু করবে না। তোমার সাথে আমার এই কথা হয়নি। তুমি বলেছো জাস্ট টাকা টা পেলেই হবে। তুহিন আমাকে শুনতে পাচ্ছো? তুহিন, তুহিইইইইন।’

#চলবে

বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। অনেক তাড়াহুড়ায় লিখেছি।