উষ্ণ আঁচে ভালোবাসা পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
1

#উষ্ণ_আঁচে_ভালোবাসা (২৫)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

অনেক আগেই কল কে’টে দিয়েছে তুহিন। সেদিকে খেয়াল নেই তানিয়ার। মোবাইলটা বুকে চেপে ধরে ধপ করে বসে পড়লো। অপরাধে অনুতাপে গড়িয়ে পড়ে নোনাজল।

‘তুমি পিয়াকে কিছু করো না তুহিন। কিছু করো না। পিয়ার কিছু হলে আঙ্কেল আন্টি বাঁচবে না। নিজেকে কি করে ক্ষমা করবো আমি? মেয়েটা যে আমার বান্ধুবীর থেকেও বেশি কিছু। বিবেকের কাঠগড়ায় আমাকে আর অপরাধী করো না।’

আফরিনের হাত থেকে গ্লাসটা নিচে পড়ে একেবারে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। তানিয়া আঁতকে উঠলো। ভয়ে জমে গেলো সে। তটস্থ চোখে পিছু ফিরতেই গলা শুকিয়ে আসে তার।

থরথর করে রাগে কাঁপছে আফরিন। চোখগুলো তার ঈষৎ লাল। নাকের ডগা ফুলে উঠেছে। নিঃশ্বাসের গতি বাড়ছে।

চিৎকার করে ডাকলো আফরিন।

‘তারেক! তারেএএএএক!’

গ্লাস ভাঙার শব্দে চমকে উঠেছিলো সবাই। আফরিনের ডাকে হুড়মুড় করে দৌড়ে গেলো তানভীর। তানভীরের পিছু পিছু বেলাল শেখ আর শিরিন আহমেদও।

‘আপনি লোকেশনে গিয়েই আমাকে টেক্সট দিবেন। রাখছি এখন।’

এজাজ নামের লোকটার সাথে কথা শেষ করে মেয়েকে বুকে চেপে ধরে দৌড় দিলো তারেকও।

রয়ে গেলেন কেবল তাহমিনা হক আর জামাল এহতেশাম। তাহমিনা হক স্ক্রেচ এনে দিলেন জামাল এহতেশামকে। তিনি স্ক্রেচে ভর দিয়ে দাঁড়ালেন।

‘মিনা স্বামী স্ত্রীকে কেন একে অপরের পরিপূরক বলা হয় আজকের এই মুহূর্তটাই হতে পারে সুন্দর উদাহরণ।’

তাহমিনা হক কথার মানে বুঝলেন না। জিজ্ঞাসাসূচক চাহনি নিক্ষেপ করেন জামাল এহতেশামের দিকে। তিনি মুচকি হাসেন।

‘ওদের মতো তুমিও কিন্তু আমাকে ফেলে চলে যেতে পারতে। কিন্তু যাওনি। কারণ তুমি জানো তোমাকে ছাড়া আমি অচল। তোমাকে ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।’

_____________

‘শত্রুকে পুরো পৃথিবী খুঁজলেও পাবে না তারেক। কারন শত্রু যে ঘরের ভিতরে।’

এতোক্ষনে এসে উপস্থিত হলেন তাহমিনা হক আর জামাল এহতেশাম।

‘এভাবে ডাকলি কেন?’

প্রশ্নটা করে মেয়ের দিকে তাকালেন জামাল এহতেশাম। প্রকাণ্ড রাগে ঠোঁটজোড়া কাঁপছে তার। চোখে চাপা ক্ষোভ। আফরিনের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকালেন তিনি। তানিয়া মাথা নিচু কাঁদছে। জামাল এহতেশামের মায়া হয়।

‘ওকে বকিস না মা। পিয়া আর ও তো একসাথে থাকে। হয়তো ভেবেছে আমি ইমোশনাল ড্রামা করে মেয়েটাকে অপহরন করেছি।’

আফরিন তাচ্ছিল্য হাসে। তানিয়ার দিকে আঙুল তাক করে বলে,

‘ এ যে ঘরের শত্রু বিভীষণ।’

আফরিনকে হেঁচকা টানে নিজের দিকে ফিরায় তারেক।

‘কিসব যা-তা বলছো? মাথা ঠান্ডা করো।’

তানভীর এগিয়ে আসে। বোনের মাথায় সস্নেহে হাত বুলিয়ে দেয়।

‘ওর উপর রাগিস না। ওর জায়গায় থাকলে আমিও বাবাকে সন্দেহ করতাম। এবং করেছিও।’

আফরিন ঝাড়া দিয়ে দূরে সরে গেল। নিস্তেজ গলায় প্রশ্ন করলো,

‘তুহিন কে ভাইয়া?’

পিলে চমকে উঠে তানভীরের। একবার আফরিনের দিকে তাকায় তো আরেকবার তানিয়ার দিকে।

‘অবাক হচ্ছো?’

আফরিন সামনে এগিয়ে যেতে নিলে ধরে ফেলে তারেক। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য কাচের টুকরো। চাপা গলায় আর্তনাদ করে ওঠে আফরিন।

‘একসাথে থেকে খেয়ে বুক কাঁপলো না পিঠ পিছে ছুড়ি মা*রতে?’

বেলাল শেখ আর শিরিন আহমেদের দিকে ইশারা করলো সে।

‘এই দুইটা মানুষের দিকে তাকাও তো একটা বার। অসহায় মানুষ দুইটাকে দেখে কি একটাবারও মায়া হয়নি? নিজের মা বাবার কথা মনে হয়নি?’

তানিয়া ফুঁপিয়ে উঠলো। কান্নার বেগে ঠোঁট কামড়ে ধরে সে।

ভেজা চোখে আফরিন একবার তানভীরের দিকে তাকায়।

‘আর আমার ভাইটা? স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা কাকে বলে জানো? ভাইয়ার পাগলামি দেখোনি তুমি। তুমি একটু হলেও জানো ভাইয়া ঠিক কতটা ভালোবাসে ভাবিকে। তাহলে? কেন? কিসের জন্য? কিসের জন্য নিজের প্রানপ্রিয় বান্ধবীর সাথে এমনটা করলে?’

শিরিন আহমেদ দূর্বল পায়ে এগিয়ে এলেন। বেলাল শেখ বাঁধা দেন নিচে থাকা কাঁচের টুকরোর জন্য। তিনি বাঁধা মানলেন না। এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলেন তানিয়ার কাছে। কাঁচের টুকরো লেগে কিঞ্চিৎ পা কে’টে যায় উনার। সেদিকে হুঁশ নেই। আঁচল পাতলেন তানিয়ার সামনে।

‘আমার নাড়িছেঁড়া ধনের প্রান ভিক্ষা দে মা।’

তানিয়া ধপ করে নিচে বসে যায়। হাতজোড় করে ভেজা চোখে তাকালো শিরিন আহমেদের দিকে।

___________________

‘দুস্ত সামনে পুলিশ চেকপোস্ট। কী করবো?’

বন্ধুর কথায় গলা শুকিয়ে আসে তুহিনের। মাথার চুল খামচে ধরে সে। এক পলক ঘুমন্ত পিয়ার দিকে তাকালো। লম্বা শ্বাস নিলো। বড়গলায় অনেক কথাই বলে ফেলেছে সে। এখন মনে হচ্ছে কিডন্যাপিংয়ের প্ল্যানিং করা মোটেও ঠিক হয়নি। এতোটা রিস্ক নেওয়ার দরকার ছিলো না।

‘গাড়ি ঘুরা দুস্ত। একবার ধরতে পারলে তুই আমি দুজনেই শেষ। আর একে রাস্তায় কোথাও ফেলে যাবো। প্ল্যান ঘেঁটে গিয়েছে।’

‘হ্যালো শোভন শুনতে পাচ্ছো আমাকে? তোমার আশেপাশে নজর রাখো। গাড়ি তোমার এরিয়ার মধ্যেই আছে। কালো রঙের একটা প্রাইভেট কার। গাড়ির নম্বর হলো “ঢাকা মেট্রো-খ ******।’

ইন্সপেক্টর শোভন সরু চোখে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। চাহনি স্থির রেখে তারেককে জিজ্ঞেস করলো,

‘স্যার গাড়ির নম্বরটা আরো একবার বলুন।’

তারেক পুনরায় বলল, ‘ঢাকা মেট্রো-খ ******।’

‘মনে হচ্ছে পেয়ে গেছি স্যার। আমাদের দেখে গাড়ি ঘুরিয়ে নিচ্ছে। কনস্টেবল তাড়াতাড়ি করো। যেন পালিয়ে যেতে না পারে। রাখছি স্যার। আপনি লোকেশনে জলদি চলে আসুন।’

তারেক ফোন রাখলো। ঢুকলো রুমে। তাহমিনা হক কাঁচের টুকরো গুলো পরিষ্কার করছিলেন। শিরিন আহমেদের পায়ে এন্টিসেপ্টিক লাগিয়ে দিচ্ছে আফরিন। খাটে হেলান দিয়ে বসে আছেন বেলাল শেখ। পাশে জামাল এহতেশাম। চোখ ঘুরিয়ে একটা বার তানিয়া কে দেখে নিলো তারেক। মেয়েটা অদূরে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে। মনমরা মুখশ্রীতে বিষন্নতার ঢেউ খেলছে। চোখের পানি শুকিয়েছে সেই কখন। মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে তার দেহখানি।

তারেক প্রসন্ন স্বরে বলে,

‘হয়তো গাড়িটাকে ট্রেস করতে পেরেছে আমার ফোর্স। আমার সাথে এখনি চলো তানভীর।’

বেলাল শেখ ব্যাকুল হয়ে গেলেন। উঠে এলেন বিছানা ছেড়ে।

‘আমাকেও নিয়ে চলো বাবা। আমিও যাবো।’

বেলাল শেখের থেকেও বেশি অস্থির হয়ে গেলেন শিরিন আহমেদ। আফরিন কে পায়ে ঠিকঠাক ঔষধটাও লাগাতে দিলো না। কে’টে যাওয়া পা নিয়েই ছুটে এলেন তারেকের কাছে।

‘আমিও যাবো।’

‘আপনাদের না যাওয়াই উত্তম।’

তারেকের কথায় চুপসে যান দুজনেই। মুখে কিছু না বললেও দুজন যে তারেকের কথায় সন্তুষ্ট হয় বুঝতে বাকি নেই কারো। এগিয়ে এলেন তাহমিনা হক। আশস্ত করলেন দুজনকে।

‘বেয়ান! আগে ওরা যাক। পরিস্থিতি সামলাক। সবাই একসাথে গেলাম কিন্তু ওরা যদি আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠে তখন?’

শিরিন আহমেদ আর বাঁধা দিলেন না। সবকিছুর আগে সন্তান। সন্তানের সন্ধান পাওয়ার জন্য এতোটা সময় অপেক্ষা করেছেন। তাহলে আর কিছুক্ষণও অপেক্ষা করতে পারবেন।

__________________________

গাড়ি ঘুরনোর সময় পেলো না তুহিন। তার আগেই চার পাঁচজন কনস্টেবল এসে গাড়ি ঘিরে ধরল। সামনে দাঁড়ায় ইন্সপেক্টর শোভন। আঙুলের ইশারায় বলে, ‘বেরিয়ে আয় নয়তো এখনি শ্যুট করবো।’

প্রফেশনাল ক্রি*মিনাল নয় কেউই। তাই আত্মরক্ষার জন্য নেই কোনো অ*স্ত্র। কথায় আছে অভাবে স্বভাব নষ্ট। একজন এই অ*পরা*ধের সাথে জড়িয়েছে নিজের ভবিষ্যত গড়ার জন্য। আরেকজন অ*পরা*ধে জড়িয়েছে বন্ধুকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। উপায় নেই কারোরই। আত্মসমর্পণ করতেই হবে।

হাত উপর করে গাড়ি থেকে বের হয় দুজন। সাথে সাথে দুজন কনস্টেবল তাদের পিছন থেকে ধরে ফেলে। ইন্সপেক্টর শোভন গাড়ির পিছনের দরজা খুলেন। হাত পা মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে পিয়া। জ্ঞান নেই। মুখের বাঁধন খুলতেই নিশ্চিত হয় একেই হন্যে হয়ে খুঁজছে তারা। সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

হাত পায়ের বাঁধন খোলা হলো। জ্ঞান ফিরানোর জন্য পানি ছিটিয়ে দিলো চোখেমুখে। পিয়া নড়ল না পর্যন্ত। পার্লস চেক করলো। যা ইন্সপেক্টর শোভনের সুবিধার মনে হয়নি। শ্বাস প্রশ্বাসের গতিও ক্ষীণ। সে বিলম্ব করলো না। পুলিশের জিপে করে দ্রুতই ছুটলো কাছের কোনো হাসপাতালে। যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা বার্তা পাঠায় তারেকের নম্বরে।

‘ভিক্টিমের অবস্থা শোচনীয়। আমি কাছের একটা হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। অপরাধী দু’জন কনস্টেবলের হেফাজতে আছে। আপনি দ্রুত আসুন স্যার।’

______________

গাড়ি থেকে নেমে উদ্ভ্রান্তের দৌড়ে এলো তানভীর। এসেই নাক বরাবর আঘাত করে তুহিনকে। মুখ থুবড়ে রাস্তায় পড়ে গেলো সে। ফিনকি দিয়ে র*ক্ত বের হতে থাকে। তুহিনের কলার চেপে ধরে দাঁড় করায় তানভীর। দাঁত কিড়মিড় করে। আবারও আঘাত করার জন্য উদ্যত হতেই তারেক বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

‘তানভীর কি করছো? থামো।’

‘আমাকে ছাড়ো তারেক। একে আমি মে’রেই ফেলবো। ওর সাহস হয় কি করে আমার পিয়ার গায়ে হাত তোলার?’ অগ্নিঝরা দৃষ্টি। চাহনিতেই যেন ভস্ম করে দিবে সবকিছু।

তুহিনের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। একে তো করেছে অপরাধ আবার পড়েছে ধরা। নিজের হাতে যে নিজের জীবনটাকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে বোধগম্য হলো এতোক্ষণে। বন্ধুর দিকে তাকালো। ছেলেটাও আজ তার জন্য অপরাধীর খাতায় নাম লিখালো।

হাত মুষ্টিবদ্ধ করতেই তারেক তাকে ঠেলে দূরে নিয়ে আসে। চোখের ইশারায় কনস্টেবলদের বলে দুজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। তানভীর কে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘পাগল হয়ে গেছো তুমি? একে আঘাত করে কি হবে? উল্টো এর কিছু হলে তুমি ফেঁসে যাবে। পাগলামি না করে হাসপাতালে চলো। ভাবির অবস্থা শোচনীয়।’

__________________

কালো কাপড়ে চোখমুখ বাঁধা দুজন লোক। পিয়ার সামনে এলো। হাত পা বাঁধা পিয়া অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো তাদের দিকে। একজন এসেই গালে আঘাত করলো তার। ঠোঁট কে’টে গেলো। ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কেঁদে উঠে সে। একজন মোবাইল এগিয়ে দিলো। স্ক্রিনে তানভীরের নম্বরটা দেখে সাহস পেলো সে। একজন মোবাইল কানে ধরতেই বলে উঠে, ‘আমাকে বাঁচান তানভীর সাহেব। আমাকে বাঁচান।’

বিভৎস মুহুর্তগুলো ঘুমের ঘুরে মনে করছে আর কেঁপে কেঁপে উঠছে পিয়া। আর কিছু একটা বিড়বিড় করছে।

শিরিন আহমেদ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন সস্নেহে। কোমল গলায় বলেন,

‘আর কোনো ভয় নেই মা। আর কোনো ভয় নেই।’

পিয়া চোখ পিটপিটিয়ে চাইলো। দূর্বল চোখে দেখতে পেলো তার মাকে। চারিদিকে চোখ ঘুরালো। একে একে সবাইকেই দেখলো সে। তানভীর বসে আছে তার পায়ের কাছে। চোখ কোণ ভিজে ওঠে তার। সবাইকে একসাথে দেখে এসব তার দূর্বল মনের নিছক কল্পনা মনে হলো। পুনরায় চোখ বুঁজে ফেললো সে। শেষ সময় ভেবে ফুঁপিয়ে উঠলো সে। তাহমিনা হক এগিয়ে এলেন দ্রুত পায়ে। মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বলেন,

‘কাঁদে না মা। আর কোনো ভয় নেই। তুমি এখন নিরাপদ।’

পিয়া চট করে চোখ মেলে তাকায়। আশেপাশের সবাইকে আবারও এক পলক দেখলো।বিশ্বাস হচ্ছে না তার। একটুও না। কেঁদে উঠলো সে। চোখের কোণ বেয়ে অনবরত ঝরতে লাগলো পানি।

বেলাল শেখ ছুটে এলেন। শিরিন আহমেদ একটু সরে জায়গা করে দিলেন উনাকে। তিনি ঝুঁকলেন কিঞ্চিৎ। স্নেহের স্পর্শ এঁকে দিলেন ললাটে। ফিরলেন আগের জায়গায়। জামাল এহতেশাম কে বগলদাবা করে আনলেন সামনে।

‘তোর এই বাবার কাছে তোর আপন বাবা হেরে গেলো রে মা। আমার যে হিংসে হওয়ার বদলে আনন্দ হচ্ছে।’

কান্নার বেগ বাড়ে পিয়ার। জামাল এহতেশাম আস্তে করে বসলেন। চোখের পানি মুছে দিলেন পরম যত্নে। জামাল এহতেশামের আদুরে স্পর্শে যেন পিয়া আরো দূর্বল হয়ে পড়ল। তখনই বিস্ফোরণ ফোটায় তানভীর।

‘কোনো রিসিপশান লাগবে না আমি হাসপাতাল থেকেই পিয়াকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো। আমি আর রিস্ক নিতে চাই না।’

পরিস্থিতি গমগমে হয়ে গেলো। কেউ কোনো কথা বলছে না। চারজন কেবল মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তখনই তানিয়াকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের কেবিনে ঢুকলো তারেক। সবাই কেমন মুখ ঘুরিয়ে নিলো। তানিয়া অপরাধীর ন্যায় মাথা নুইয়ে রেখেছে। পিয়া অবাক হয়। সকলের চোখেমুখে কেমন কঠিন একটা ভাব।

‘সবটা বলতে এসেছে সে।’

পিয়ার ভ্রু কুঁচকে এলো।

‘তানিয়া কি বলবে?’

‘কেন সে আপনাকে অপহরণ করেছে।’

‘কিহ?’ চমকানো গলায় বলে উঠে পিয়া। উঠে বসার চেষ্টা করতেই স্যালাইনে টান পড়ল। তানভীর এলো পিয়ার মাথার কাছে। এবং শোয়া থেকে উঠতে দিলো না।

‘না, না আপনাদের কোথাও ভুল হচ্ছে। তানিয়া কেন আমাকে অপহরণ করবে? তানিয়া ভাইয়া এসব কি বলছে?’

তানিয়া ফুঁপিয়ে উঠলো। তানভীর রাগত স্বরে বলে,

‘ভুল না সঠিক সেটা বরং তোমার বান্ধবীকেই বলতে দাও।’

পিয়া দমে গেলো তানভীরের এমন কঠিন স্বরে। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে হাজারো প্রশ্ন।

‘তুহিন আর আমার সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে বহুদিন ধরে। একদিন ঠিকঠাক কথা হয় তো তিনদিন যোগাযোগ বন্ধ। কারন একটাই ছেলেটা চাকরির জন্য কোনো চেষ্টা করছে না। এইদিকে আমার বয়স হচ্ছে। বাবা বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আর ও নাকি ব্যবসা করবে। কিন্তু মূলধন নেই। আমাকে বার কয়েক টাকার জন্য চাপও দিয়েছে। সেটা পিয়ার অজানা নয়। কোনো একদিন হয়তো কথায় কথায় বলে ফেলেছিলাম আঙ্কেল পিয়াকে মেনে নিয়েছে। তার দুইদিন পর তুহিনের জরুরী তলবে দেখা করতে যাই। কারণ সে নাকি ব্যবসার মূলধন পেয়ে গেছে। তারপর,,,,,,

*****

একটা বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে আছে তুহিন আর তানিয়া। তুহিন কোথা থেকে এতো টাকা পেয়েছে সেটা বলবে বলবে করেও বলছে না। কেমন আমতাআমতা করছে। তানিয়া উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। তুহিন জড়তা ঠেলে বলেই ফেলল,

‘আসলে টাকা টা আমার হাতে নেই। তবে তুমি যদি আমাকে সাহায্য করো টাকা টা হাতে আসতে ওয়ান টু এর ব্যাপার।’

তানিয়া বুঝতে পারলো না কথাটার মানে। জিজ্ঞাসাসূচক চাহনিতে তাকালো। তুহিন তানিয়ার একটা হাত আঁজলিতে নিলো। নরম স্বরে বলল,

‘দেখো তানিয়া হয়তো এটা ক্রাইম। কিন্তু এটা ছাড়া আমি আর কোনো পথ দেখছি না। ব্যাপারটা মিটে যাওয়ার পর যদি পিয়াকে তুমি বুঝিয়ে বলো তাহলে ও ঠিক বুঝবে।’

‘কি বলতে চাইছো খোলাসা করে বলো।’

তুহিন চোখ বুঁজে নিলো। এক নিঃশ্বাসে বলে উঠে,

‘পিয়াকে কি*ড*ন্যাপ করতে চাই।’

‘কিহ্‌?’

বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তানিয়া।

‘আর ইউ ক্রেজি তুহিন? তোমার মাথা ঠিক আছে? কিসব উল্টোপাল্টা বলছো? তোমার লাইফটা বরবাদ হয়ে যাবে।’

তানিয়া টান মে’রে আবার জায়গায় বসায় তুহিন।

‘আমি আর কোনো অপশন দেখতে পাচ্ছি না।’

‘এসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। চাকরির চেষ্টা করো।’

‘ব্যবসা করাটা আমার ড্রিম। একটু বোঝার চেষ্টা করো।’

‘তাই বলে,,,

আশেপাশে তাকায় তানিয়া। স্বর খাদে নামিয়ে বলল,

‘তাই বলে তুমি অপরাধের পথ অনুসরণ করে তুমি টাকা যোগাড় করবে? মাথা খারাপ তোমার? পাগলামি করো না। চাকরি করতে থাকো। দেখবে আল্লাহ একটা না একটা ব্যবস্থা করে দিবে।’

‘আমি তোমাকে ভালোবাসি তানিয়া। হারাতে চাই না।’

তুহিনের গালে আলতো করে হাত রাখে তানিয়া।

‘ভালো আমিও তোমাকে বাসি। তুমি যতদিন বলবে আমি অপেক্ষা করবো। আমার বাবার পায়ে পড়ে থাকবো। তবুও তুমি অপরাধের পথ বেছে নিও না।’

তানিয়ার হাতে আলতো করে চুমু খেলো তুহিন।

‘চাকরি করে কয় হাজার টাকা বেতন পাবো? দশ হাজার না হয় পনেরো হাজার। আমি তোমাকে ভালো রাখতে পারবো না।’

তানিয়া উঠে দাঁড়ালো। সামনের দিকে পা বাড়ায়।

‘এসব আজগুবি চিন্তা বাদ দাও। বাসায় যাও আর চাকরির প্রস্তুতি নাও।’

তানিয়ার হাত টেনে ধরে তুহিন।

‘ব্যবসা করাটা আমার ড্রিম। আমার সেই ড্রিমটা তুমি পূরণ করবে না?’

‘অবশ্যই করবো। তবে এই পথে না।’

‘বোঝার চেষ্টা করো।’

‘তুমিও বোঝার চেষ্টা করো। এটা ভুল পথ।’

‘কাল যদি আমি আর এই দুনিয়ায় না থাকি তোমার আফসোস হবে না?’

বুকটা কেঁপে উঠল তানিয়ার। তড়িৎ গতিতে তুহিনের মুখটা চেপে ধরে সে।

‘কিসব আজেবাজে কথা বলছো। মুখে আটকায় না কিছু?’

তানিয়ার হাতটা সরিয়ে ফেলল সে।

‘না আটকায় না। আমি যে পরিস্থিতিতে আছি যেকোনো মুহূর্তে কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলতে পারি। সাহায্য করো না একটু। তোমাকে ভালোবাসি ভীষণ। সারাটা জীবন তোমার সাথে কাটাতে চাই।’

‘আমিও কাটাতে চাই। তবে এভাবে না।’

তুহিন পকেট থেকে ছোট্ট একটা বোতল বের করে।

‘আজকের মধ্যে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে না পারলে কালকে খবর পেয়ে। শেষ বারের মতো দেখতে এসো। আল্লাহ হাফেজ।’

তানিয়াকে ফেলেই হাঁটা ধরে তুহিন। শিষ বাজাতে বাজাতে এগিয়ে গেলো কয়েক দম। তানিয়ার বুকে চিন চিন যন্ত্রণা হচ্ছে। দমবন্ধকর পরিস্থিতি। চোখ বুঁজে নিতেই চোখের কোণ ভিজে ওঠে তার। কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল, ‘দাঁড়াও।’

******
এতটুকু বলেই থেমে গেলো তানিয়া। ধপ করে বসে পড়লো ফ্লোরে। চাপা স্বরে আর্তনাদ করে ওঠে।

‘আমি লোভে পড়ে গিয়েছিলাম। না টাকার লোভ না। ভালোবাসার লোভ। ছোট্ট একটা সংসারের লোভ। প্রিয় মানুষটার সাথে সারাজীবন কাটানোর লোভ।’

‘রাজি হয়ে গেলি তুই?’

নিস্তেজ গলায় জানতে চাইলো পিয়া। তানিয়ার কান্নার গতি বাড়ে।

‘আমার বাপ মা এখনো আমার গায়ে হাত তুলেনি। কিন্তু,,,

এতটুকু বলে থেমে যায় পিয়া। তানিয়া হাতজোড় করে।

‘আমাকে মাফ করে দে বোন। ওই পরিস্থিতিতে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। তুই যে শাস্তি দিবি মাথা পেতে নিবো।’

পিয়া তপ্ত শ্বাস ফেলল।

‘ওকে নিয়ে যান ভাইয়া। আমার কিছুই ভালো লাগছে না।’

তানিয়া উঠে দাঁড়ায়। তারেকের সাথে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পিয়া ফের ডাকলো।

‘ভাইয়া?’

তারেক পিছু ফিরলো।

‘জ্বি।’

‘অপহরণের সাথে যুক্ত সবাইকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করবো।’

সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো। তানভীর তেতে উঠে।

‘উলটোপালটা বকবে না। ওরা প্রত্যেকেই ওদের প্রাপ্য শাস্তিটুকু পাবে।’

পিয়া চোখ বুঁজে কপালে হাত ঠেকায়।

‘ওদের শাস্তি দিতে গিয়ে ওদের নিরপরাধ বাবা মাকে আমরা শাস্তি দিতে পারি না। ও এ-ই কাজ করেছে জানতে পারলে ওর বাবা সাথে সাথেই,,,

থেমে যায় পিয়া। চুপ রইলো কিছুক্ষন।

‘আর তুহিন ভাই পরিবারের বড় সন্তান। উনার বাবার অনেক স্বপ্ন ছেলেকে নিয়ে।’

‘কেন যখন এই কাজ করেছে তখন বিবেকে বাঁধেনি?’

‘ওদের বাঁধেনি আমার বাঁধবে না এমন নয়। শুধু কারো মৃত্যুর কারন হতে চাই না।’

‘কিন্তু ভাবি এভাবে কিভাবে?’

‘এতোকিছু জানি না ভাইয়া। কিভাবে কি ব্যবস্থা করবেন আপনি জানেন। তবে এগুলো যেন মিডিয়া অব্দি না যায়।’

তানিয়া দৌড়ে এলো। লুটিয়ে পড়ে পিয়ার পায়ে। পিয়া সাথে সাথে পা গুটিয়ে নিলো। মুখও ঘুরিয়ে নিলো অন্যদিকে।

‘আমার গা ঘিনঘিন করছে। ওকে পা ছাড়তে বলো কেউ।’

তানিয়া পা ছাড়লো। করুণ চোখে তাকালো সকলের দিকে। মেঘমেদুর স্বরে বলল,

‘আমাকে ক্ষমা করে দিবেন সকলে।’

______________

তানিয়া চলে গেছে প্রায় মিনিট পাঁচেক হবে। কেবিন জুড়ে পিনপতন নীরবতা। কর্তব্যরত ডাক্তার এলেন। এসে প্রেশার মাপলেন। তারপরই চমৎকার হেসে উঠলেন তিনি।

‘যাক আর কোনো ভয় নেই।’

সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ডাক্তার পুনরায় বলে উঠে,

‘কাল আপনাকে যেই অবস্থায় আনা হয়েছিল আর প্রেশার যেভাবে ফল করছিলো আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’

‘ডাক্তার ডিসচার্জ কবে করবে?’ প্রশ্ন করলেন বেলাল শেখ।

‘পেশেন্ট এখন সুস্থ। চাইলে আজই। আসি তবে। আর হ্যা এই কয়েকদিন ফুল রেস্টে থাকতে হবে। ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়াও করতে হবে। তবেই শারীরিক দূর্বলতা কে’টে যাবে।’

ডাক্তার আরো কিছু দিক নির্দেশনা দিয়ে চলে গেলেন। তাহমিনা হক ছেলের দিকে তাকালেন। কেমন অস্থির অস্থির করছে। ছেলের ভাব গতি বুঝতে সময় লাগলো না উনার।

‘আমি যত দ্রুত সম্ভব পিয়াকে ঘরে তুলতে চাই। কবে নাগাদ অনুষ্ঠান করলে ভালো হয় এটা নিয়ে কথা বললে ভালো হয়। বাইরে চলুন সবাই।’

‘কোনো অনুষ্ঠান লাগবে না। ও এখান থেকে সোজা আমাদের বাড়ি যাবে।’

তাহমিনা হক ধমকে উঠে তানভীরকে।

‘তুই চুপ থাক। যা বুঝিস না তা নিয়ে কথা বলিস না। সবারই কিছু না কিছু শখ থাকে। বেয়ান বাইরে চলুন।’

‘আপনারা যান। আমি থাকি একটু মেয়েটার কাছে।’

তাহমিনা হক চিমটি কাটেন শিরিন আহমেদ কে। চোখের ইশারায় কিছু বুঝাতেই তিনি পুনরায় বলেন,

‘আচ্ছা চলুন। কবে করলে দুই পরিবারের জন্য সুবিধা হয় সেটা আলোচনা করা জরুরী।’

বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ চারজন বেরিয়ে গেলেন। কেবিনে কেবল তানভীর আর পিয়া।

পিয়া চোখ মেলে তাকালো। তানভীর তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। পিয়া এদিকে ওদিক একবার দেখল। তানভীরের এমন অপলক চাহনি পিয়ার শিহরণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলল,

‘আপু আর মিষ্টি আসেনি কেন?’

সম্বিত ফিরে তানভীরের। নিরেট গলায় বলল,

‘মিষ্টির শরীরটা ভালো না। তাই নিষেধ করেছে ওদের হাসপাতালে আসতে।’

আবারও নীরবতায় ছেয়ে গেলো চারপাশ। কিছু সময় পর পিয়া মুখ খুলল,

‘আমার জন্য অনেক চিন্তা করছিলেন তাই না?’

তানভীর ফিচেল হাসে। এগিয়ে এসে পিয়ার আরো কাছে বসলো। পিয়ার একটা হাত মুঠোবন্দি করে হাতের উল্টো পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ালো।

‘মনে হচ্ছিল আমার প্রানটাই নিয়ে নিয়েছে কেউ।’

পিয়া করুণ চোখে তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ধীরে ধীরে তার চোখে পানি জমতে শুরু করে। উপচে পড়া পানির ভার বইতে পারলো না চোখের পাতা। গড়িয়ে পড়লো মুহুর্তে। তানভীর চোখের পানি মুছে আলতো করে। কিঞ্চিৎ ঝুঁকে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দিলো ললাটের ঠিক মধ্যিখানে।

‘রাজমহিষী আমার বেঁচে থাকার এই প্রার্থনাতে বৃদ্ধ হতে চাই তোমার সাথে। ছেড়ে যেও না কোনোদিন।’

‘ছেড়ে যেতে চাইলে আপনি দিবেন বুঝি?’

তানভীর হেসে মাথা চুলকায়। পিয়া চোখের ইশারায় তানভীর কে আবারও ঝুঁকতে বলল। মাথা নিচু করতেই বলল চোখ বন্ধ করতে। তানভীর দুষ্টু চোখে তাকাতেই পিয়া চোখ রাঙানি দেয়। তানভীর চোখ বন্ধ করে নিলো।

আচমকা কোমল ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেতেই চোখ বড় বড় করে তাকায় তানভীর। পিয়া চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। নিজের ঠোঁটে হাত রাখে । তার বিশ্বাসই হচ্ছে পিয়া এমন কাজ করবে। তখনই দরজায় ঠকঠক শব্দ হয়। দু’জন নড়েচড়ে উঠলো। তানভীর গলা ঝেড়ে বলল, ‘কে?’

দরজার ওপাশ থেকে বলল, ‘আমি বলছি।’

‘ভেতরে এসো।’

অনুমতি পেয়ে ভেতরে এলো তারেক। ভাঁজ করা ছোট্ট একটা কাগজ তুলে দিলো তানভীরের হাতে।

‘এটা ভাবির। তখন দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই আবার ফিরে আসতে হলো।’

‘কি এটা?’

‘খুললেই দেখতে পাবে।’

এইটুকু বলেই হনহনিয়ে চলে যায় তারেক। তানভীর কাগজের ভাঁজ খুলে। লেখাগুলো পড়লো সে। পড়তে পড়তে মাথা নাড়তে থাকে। পিয়া আগ্রহী চোখে তাকিয়ে আছে।

‘কী লেখা এখানে?’

তানভীর পিয়ার দিকে কাগজটা ধরে। সেখানে এলোমেলো অক্ষরে লেখা,

‘হাজার চেয়েও যে মানুষটাকে আমি পাইনি না চাইতেই তাকে পেয়ে গেছো তুমি। অবহেলা করো না। যত্নে রেখো। আগলে রেখো। অবহেলা করার আগে আমার কথা মনে করবে। যে প্রশস্ত বুকটায় তোমার মাথা রাখবে সে বুকটায় মাথা রাখার জন্য ম*র*নের আগ পর্যন্ত কেউ একজন মরিয়া হয়ে থাকবে। তোমার বরকে কাছে পাওয়ার নেশায় কেউ একজন ছটফট করবে আজন্ম। ভালো থেকো সুস্থ থেকো। পারলে ক্ষমা করে দিও।’

পিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

‘আমাকে একটু আপনার বুকে নিবেন?’

তানভীর বিলম্ব করে না। পরম যত্নে পিয়ার মাথাটা বুকে চেপে ধরলো। লক্ষ রাখলো যেন স্যালানে টান না লাগে।

‘মেয়েটাকে ভালো কেন বাসলেন না?’

তানভীর হৃৎস্পন্দন বাড়ে।

‘আরো আগেই যে আমি আমার মন অন্য কাউকে দিয়ে দিয়েছিলাম।’

তানভীরের বুকের সাথে আরো লেপ্টে গেলো পিয়া।

‘আমার না বার বার মনে হচ্ছিল আপনি আসবেন। আমাকে বাঁচাবেন। আগলে নিবে আপনার এই প্রশস্ত বুকে।’

পিয়ার এলোমেলো চুলের ভাঁজে চুমু খেলো তানভীর। পিয়া বিড়বিড় করে আওড়ালো,

‘আপনার উষ্ণ আঁচে দেওয়া ভালোবাসা,
ক্ষণে ক্ষণে জাগায় আমার বাঁচার আশা।’

________________সমাপ্ত___________________