লেবু পর্ব-০৬

0
2

#লেবু

লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

স্কুলজীবনের কতশত বন্ধু যে আজ হারিয়ে গেছে! বেশির ভাগের সাথেই আর যোগাযোগ নেই সাবার। স্কুল পেরিয়ে যাওয়ার পরেও প্রতিবছর নিয়ম করে কাছের বান্ধবীদের সঙ্গে রিইউনিয়নের আয়োজন করতো একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে। এখন সেই ইচ্ছা বা ধৈর্য দুটোই হারিয়ে গেছে তার মধ্যে থেকে। ভেতর থেকে ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়া মানুষেরা কেবল বেঁচে থাকার জন্যেই বাঁচে। আনন্দ সেই জীবনে একপ্রকার বিলাসিতা।

সবাইকে সাবা ছাড়তে পারলেও ছাড়তে পারেনি এই অরুন্ধতীকে। কিংবা বলা যায়, অরুণ তাকে ছাড়তে দেয়নি। সেই ক্লাস থ্রি থেকে একে অপরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তারা। সাবা যেখানে যাবে তার অরুণও সেখানেই যাবে। অরুণ আলপনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে, সাবা আলপনা দিতে পারুক কিংবা না-ই পারুক সেও অংশ নেবে।

ক্যান্টিন থেকে দুজনে কখনো দুই প্লেট ফুচকা কেনেনি। একটা প্লেটেই ভাগাভাগি করে খেয়েছে আজীবন। সেজন্যেই হয়তো তাদের ভালবাসাটা একটু বেশিই। তাদেরকে দেখলে অন্যান্য মেয়েরা বলতো, “তোরা কি বোন না-কি?” সাবা আর অরুণ হেসে বলতো, “হ্যাঁ, আমরা বোন!”

অরুণ তার তিন বোনদের মধ্যে সবথেকে ছোট। বাকি দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে, এ বাড়িতে সে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। বিয়ে যে তার হয়নি তা নয়। বিয়ে তারও হয়েছিল। হয়নি সংসার করার সৌভাগ্য। জীবনে বহু ঝড়-ঝাপটা সহ্য করেছে মেয়েটা। পালিয়ে বিয়ে করেছিল ভালোবাসার মানুষকে।

বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় ভালোবাসার মানুষ হঠাৎ হয়ে গেল বহু দূরের বাসিন্দা। তাকে চেনা যায় না, আগের মতো বোঝা যায় না। অদৃশ্য চাদরে যেন আড়াল করে রাখে নিজেকে। একদিন অরুণ জানতে পারলো তার ভালোবাসার মানুষ আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করবে বলে কথা দিয়েছে। ঠিক যেভাবে কথা দিয়েছিল তাকে।

ঠিক সেদিনই নিজের হাতে গোছানো সংসারটা ফেলে রেখে ফিরে আসে বাবা-মায়ের কাছে। তার বাবা-মা বিয়েটা একেবারেই মেনে নেননি। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিতে পারেননি তার ফিরে আসাও। তবুও, নিজের মেয়েকে তো আর ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যায় না।

অরুণের ডিভোর্স প্রক্রিয়াধীন। কয়েক মাসের মধ্যেই হয়তো কার্যকর হয়ে যাবে। আর কারও সঙ্গে জীবনটা না জড়ানোর প্রতিজ্ঞায় বদ্ধ পরিকর সে। নাম করা একটা কলেজের বাংলা বিভাগে সহ অধ্যাপক অরুণ। তার ধ্যান-জ্ঞান সবই এখন কলেজের ছেলেমেয়েরা।

অরুণ দরজা খুলে দিতেই দেখতে পেলো তার বান্ধবীর রাগে লাল হয়ে থাকা মুখটা। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল অরুণ। এত লক্ষ্মী একটা মেয়ে রাতারাতি কেমন বদরাগী হয়ে গেল। আর সেই রাগের সামাল এখন তাকেই দিতে হয়!

অরুণ পরিস্থিতি হালকা করার জন্যে হাসিমুখে বলল, “কী রে সাবা? এত দেরি করলি কেন? সেই কখন থেকে রান্নাবান্না করে বসে আছি!”

উত্তরে সাবা কিছুই বলল না। কুঞ্চিত ভ্রু নিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে প্রবেশ করলো ঘরের ভেতরে। দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘুরে তাকাতেই অরুণ দেখলো বসার ঘরের সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে সাবা। একটা হাত কপালের ওপর দিয়ে চোখের ওপর রেখে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। রাগটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে সম্ভবত।

অরুণ এগিয়ে গিয়ে সাবার পাশে বসতে বসতে মিষ্টি গলায় বলল, “অনেক গরম না রে বাইরে? ঘেমে-টেমে কী অবস্থা তোর! যা ফ্রেশ হয়ে আয়। তোর পছন্দের স্যান্ডউইচ বানিয়ে রেখেছি।”

স্যান্ডউইচ সাবার মধ্যকার উত্তপ্ত আবহাওয়াকে শান্ত করতে ব্যর্থ হলো।

সাবা কঠিন গলায় বলল, “অরুণ শোন! অনেক জরুরি একটা কথা আছে।”

অরুণ অবাক গলায় বলল, “কী কথা?”

সাবা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, “আঙ্কেলের তো অনেক চেনাজানা। উনি ঢাকায় ফিরলে তাকে ভালো লয়ারের খোঁজ দিতে বলবি? ক্রিমিনাল লয়ার।”

অরুণ দ্বিগুণ বিস্ময় নিয়ে বলল, “ক্রিমিনাল লয়ার দিয়ে কী হবে?”

“আজ যদি আমি একটা খুন করে বসি, তাহলে কাল লয়ারের দরকার হবে না?”

“এই দাঁড়া, দাঁড়া! কাকে খুন করবি তুই?”

সাবা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল, “আমার জীবনে একটাই মানুষ আছে যাকে আমি খুন করতে পারি।”

অরুণ শুকনো ঢোক গিলে বলল, “শাফকাত ভাইয়া?”

সাবা রেগে উঠে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, “এই ভাইয়া ডাকবি না তো! খবরদার ভাইয়া ডাকবি না! ওই বদ লোক তোর কোন মায়ের পেটের ভাই যে ভাইয়া ডাকতে হবে?”

অরুন্ধতী সাবাকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে নিজেই শান্ত স্বরে বলল, “আচ্ছা বাবা ডাকলাম না। কী হয়েছে বলবি তো!”

সাবা উঠে গিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে গেল। জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে এক চুমুকে খেয়ে ফেলল পুরোটা। আবারও সোফার কাছে ফিরে এসে শান্ত ভঙ্গিতে সব ঘটনা খুলে বলল তার প্রিয় বান্ধবীকে। শাফকাতের তাকে সর্বক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা, তার ফোন ট্র্যাক করা, আজ তাকে এ বাড়িতে থাকতে নিষেধ করা।

সবকিছু শুনে অরুণ চুপ করে রইলো কয়েক মুহূর্তের জন্যে। কিছুক্ষণ বাদে নীরবতা ভঙ্গ করে বলল, “সবই বুঝলাম, কিন্তু একটা ব্যাপার কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকছে না।”

“কী?”

“দেখ, শাফকাত ভাই…”

ভাইয়া বলার আগেই সাবার অগ্নিদৃষ্টিতে দমে গেল অরুণ।

তৎক্ষণাৎ নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল, “আলম! শাফকাত আলম! উনি দেশের এত বড় একজন বিজনেসম্যান। এত এত বিজনেস তার। এমন একটা মানুষের তো দম ফেলার সময়ই থাকার কথা না। সে হঠাৎ তোর পেছনে পড়লো কেন?”

সাবা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল, “আমাকে একটু শান্তিতে দেখতে কারও ভালো লাগে না-কি?”

অরুণ সন্দেহের স্বরে বলল, “আমার কিন্তু অন্য কিছু মনে হচ্ছে সাবা!”

সাবা কৌতুহল নিয়ে বলল, “কী মনে হচ্ছে?”

“আমার মনে হচ্ছে সে তোকে ভালোবেসে ফেলেছে।”

সাবা বিস্ময়ে চোখমুখ বিকৃত করে বলল, “ফালতু কথা বলিস না তো অরুণ! ওই লোক না-কি আমাকে ভালোবাসে!”

ভালোবাসা শব্দে সাবার বিরক্তি দেখে অরুণ অবাক গলায় বলল, “বাসতেই পারে। গোপনে ভালোবাসলে তুই তো আর জানতে পারবি না।”

সাবা কঠোর স্বরে বলল, “না বাসে না! ভালোবাসা মানুষের চোখে দেখা যায়। ওই লোকের চোখে আমার জন্যে কোনো ভালোবাসা নেই। আছে শুধু ডমিনেন্স।”

অরুণ ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, “নিজের স্বামীর চোখে ভালোবাসা দেখতে পাস না কিন্তু ওই ঘাটের মরা ফাহিমের চোখে ভালোবাসা দেখেছিলি?”

সাবা আহত গলায় বলল, “পুরনো কথা মনে করিয়ে খোঁটা দিচ্ছিস?”

অরুণ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “হ্যাঁ দিচ্ছি। হাজারবার বলেছিলাম ওই ছেলেটা একটা অকর্মার ঢেঁকি। তখন তো ভালো মানুষের ভালো কথা কানে তুলিসনি!”

“আচ্ছা ফাহিমের কথা হঠাৎ উঠছে কেন? আমি কোন টপিকে কথা বলছি আর তুই কোন টপিকে চলে যাচ্ছিস?”

“সরি!”

সাবা গোমড়া মুখে বলল, “আমি বাবা-মায়ের কাছে গিয়েছিলাম ডিভোর্সের ব্যবস্থা করাতে। তারা উল্টো বলল, মানিয়ে নে। একটা বিয়ে হয়ে গেলেই তা ভেঙে ফেলা যায় না। অসহ্যকর!”

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অরুণ নরম সুরে বলল, “তুই সত্যিই ডিভোর্স নিতে চাস সাবা?”

সাবা দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “অবশ্যই!”

অরুণ সরল গলায় বলল, “ভাইয়া না হয় একটু বেশিই পজেসিভ…”

অরুণকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে সাবা বলল, “এটাকে পজেসিভনেস বলে না অরুণ! এটাকে বলে ডমিনেন্স। তুই তো আমাকে চিনিস। বরাবরই আমি স্বাধীনচেতা। ছোটবেলা থেকেই আমার ফ্যামিলি কোনো কিছুতে আমাকে বাঁধা দেয়নি। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছি সারাজীবন। অথচ এখন না-কি এই লোকের কথায় উঠতে হবে, এই লোকের কথায় বসতে হবে। কারও হুকুম মেনে চলতে আমি পারবো না। তাকে সহ্য করা যায়। চেষ্টা কি কম করেছি?”

অরুণ শুকনো গলায় বলল, “হ্যাঁ করেছিস।”

অরুণের কথায় অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো সাবা।

“কিছু মনে করিস না সাবা। শাফকাত ভাইয়াকে সহ্য করার চেষ্টাই কখনো করিসনি তুই। বিয়ের শুরু থেকে ধরেই নিয়েছিস এই মানুষটা খারাপ। তাকে সহ্যই করা যাবে না। তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা যাবে না।”

সাবা নিজেকেই প্রশ্ন করলো মনে মনে। আসলেই তো! সে কি কখনো এই বিয়েটাকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে? করেনি। বাবা-মায়ের জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে করা বিয়েটাকে কখনো সত্যি মনেই করেনি সাবা।

অরুণ আবারও বলল, “তুই তো এখনও মানুষটাকে ভালো করে চিনিস না। কিংবা বলা উচিত, চেনার চেষ্টা করিসনি। বাবা-মা যা করে
আমাদের ভালোর জন্যেই করেনি। হয়তো এই মানুষটাই তোর জন্যে পারফেক্ট। আঙ্কেল-আন্টি সেটা বুঝতে পেরেই বিয়েটা দিয়েছে তোদের।”

সাবা চুপ করে রইলো।

সাবার হাতের ওপরে কোমল স্পর্শে একটা হাত রেখে অরুণ বলল, “আমার মতো ভুল করিস না সাবা। বাবা-মায়ের পছন্দের ওপর ভরসা নেই বলে নিজের পছন্দ করে বিয়ে করলাম। কী পেলাম দেখলিই তো। আঙ্কেল-আন্টি যার সঙ্গে জীবনটা বেঁধে দিয়েছে, তার সঙ্গেই জড়িয়ে থাক। সেই বাঁধনটা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করিস না।”

সাবা কোমল গলায় বলল, “যোগাযোগ আছে
শঙ্খদার সাথে?”

অরুণ হেসে ফেলে বলল, “ও তোর কোন জন্মের দাদা রে?”

এবার সাবাও খানিক হেসে ফেলল। মনে মনে চমকে উঠলেও তা প্রকাশ করলো না অরুণ। কত দিন পর হাসতে দেখলো মেয়েটাকে। সাবার হাসিটা অদ্ভুত সুন্দর। হাসলে শুধু ঠোঁট হাসে না তার, হেসে ওঠে চোখদুটোও। দুটো গালে বিচিত্র এক উজ্জ্বলতা এসে ভর করে।

মুহূর্তেই হাসি থামিয়ে সাবা বলল, “বল না! যোগাযোগ আছে?”

অরুণ ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল, “আমার তরফ থেকে নেই। প্রতিদিন নতুন নতুন নম্বর থেকে ফোন করে। আর আমি একেকটা নম্বর ব্লক করি। সেদিন তো বাসায় চলে এসেছিল।”

সাবা বিস্মিত গলায় বলল, “দেখা করেছিস?”

“আমার মাথায় গন্ডগোল আছে? মা যে কী মনে করে ওকে বাসায় ঢুকিয়েছিল কে জানে? আমি তো ঘর থেকেই বের হয়নি। ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে চলে গেছে।”

মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সাবা। এই দুটো মানুষকে খুব কাছ থেকে দেখেছে সে। প্রেমে পড়তে দেখেছে, ভালোবাসে জীবনের সবথেকে বড় সিদ্ধান্তটা নিতে দেখেছে, সেই ভালোবাসায় জ্বলে-পুড়েই আবার আলাদা হয়ে যেতে দেখেছে। ভালোবাসা সত্যিই বড় অদ্ভুত। এই বস্তু জীবনে আসেই একটা মানুষকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্যে। তাই তো সাবা কাউকে ভালোবাসবে না বলে নিজের কাছে নিজেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

স্যান্ডউইচ খেতে খেতে দুই বান্ধবী গল্প করলো আরও কিছুক্ষণ। অরুণ এরপর চলে গেল রান্না করতে। সাবার পছন্দের খিচুড়ি আর মুরগি ভুনা রান্না করলো যত্ন নিয়ে। সাবা রান্নাঘরে তার পাশে দাঁড়িয়ে রেসিপি পড়ে শোনাচ্ছে, আর অরুণ তা শুনে শুনে রান্না করছে।

সব রান্না শেষে অরুণ প্লেটে সুন্দর করে সাজিয়ে একেক করে এনে রাখছে ডাইনিং টেবিলের ওপরে। ওদিক রান্না করতে করতে যা যা সে এলোমেলো করেছে তা গুছিয়ে রাখতে ব্যস্ত সাবা। অরুণ একটা প্লেট টেবিলে রেখে রান্নাঘরে আবারও ফিরে যাবে, হঠাৎই তার চোখ পড়লো বসার ঘরের দেয়ালে ঝুলন্ত টিভির ওপরে।

অরুণ নিজেই ‘বাংলার বাতাস’ ছেড়ে রেখেছিল মিউট করে। এমনটা সে সাবার রিপোর্ট দেখার লোভে প্রায় করে। তবে এবার তার রিপোর্ট চোখে পড়লো না। যা সে দেখলো, তা অন্তরাত্মা প্রকম্পিত করে তোলার জন্যে যথেষ্ট।

অরুণ উঁচু গলায় ভীত ভঙ্গিতে ডাকলো, “সাবা! সাবা!”

সাবা রান্নাঘর থেকেই ক্ষীণ বিরক্তি নিয়ে বলল, “কী রে বাবা?”

অরুণ সতর্ক কণ্ঠে বলল, “তাড়াতাড়ি আয় এখানে!”

সাবা ব্যস্ত পায়ে রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে বলল, “কী হলো আবার?”

সাবা হয়তো আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। তবে তৎক্ষণাৎ তার চোখদুটোও চলে গেল টিভির দিকে। সাবার গা বেয়ে যেন শীতল স্রোত বয়ে গেল। চোখমুখ হয়ে উঠলো রক্তশূন্য। চমকে অভিভূত হয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে কিছু বলার।

অরুণ দ্রুততার সঙ্গে রিমোটটা তুলে ভলিউম অন করে দিলো। বাংলামোটর থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে নিউজটা। সেখানে থেমে আছে একটা গাড়ি। গাড়ির চারপাশে উৎসুক জনতার ভীড়। পুলিশ সেই ভীড় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। ক্যামেরাম্যান উৎসুক জনতাকে ঠেলে গাড়ির একটু কাছাকাছি যেতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো গাড়িটার বিধস্ততা। চতুর্দিকে গুলির চিহ্ন। বুলেট প্রুফ কাঁচগুলোতেও একইভাবে গুলির চিহ্ন। গুলিতে দুমড়ে মুচড়ে গেছে গাড়ির দরজাগুলো।

তার থেকেও আশ্চর্যকর বিষয় হলো গাড়িটা সাবার। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে সাবা। প্রতিবারই ব্যর্থ হচ্ছে। অশান্ত হৃদয়টা ধড়ফড় করেই চলেছে অবিরাম। এই গাড়িতে করেই তো আজ তার অফিসে যাওয়ার কথা ছিল!

কেউ তার মানে হামলা করার চেষ্টা করেছে সাবার ওপরে? সাবা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছে এটা কার কাজ। যে প্রভাবশালী নেতাদের নাম উল্লেখ করে সে রিপোর্ট করেছিল, তারাও হামলা করিয়েছে তার ওপরে।

রিপোর্টার এবার ক্যামেরা তাক করলো শাফকাতের বডিগার্ড খালেকের দিকে। তার গায়ে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট।
এসবই তাহলে শাফকাত পরে নিতে বলেছিল তাকে?

শাফকাত তার মানে জানতো হামলা হতে যাচ্ছে সাবার ওপরে? সে কারণেই জোর করে তাকে নিজের সঙ্গে করে নিয়ে বের হয়েছিল? সাবার মাথা ভনভন করছে। একের পর এক প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে অশান্ত হয়ে উঠেছে মস্তিষ্ক।

(চলবে)