লেবু পর্ব-০৭

0
302

#লেবু

লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

একজন ব্যবসায়ীর অর্থ উপার্জনের স্পৃহা যতটাই প্রখর হোক না কেন, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ছাড়া সে আশা দুরাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। লোকে বলে, ব্যবসায়ী তৈরি করা যায় না। ব্যবসায়িক চেতনা মানুষের রক্তে থাকে। কথাটা শাফকাতের ক্ষেত্রে সত্যই বটে। তার বাবা শাহজাহান আলম, আজ থেকে প্রায় চল্লিশ বছর আগে স্বল্প পুঁজি আর বৃহৎ স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলেন ‘আলম স্টিলস’। গাজীপুরে ছোট্ট একটা গুদামঘর ভাড়া নিয়ে একাই পরিচালনা করতেন সেই ব্যবসা।

কালের পরিক্রমায় ‘আলম স্টিলস’ আজ দেশের প্রথম সারির সফল কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। কোম্পানির ভ্যালুয়েশন শত শত কোটি টাকা। বিশাল বিশাল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছে ‘আলম স্টিলস’। শাহজাহান সাহেবের মৃত্যুর পর প্রাচুর্যে ঘেরা এই কোম্পানির দায়-দায়িত্ব এসে বর্তে শাফকাতের ওপর।

বাবার ব্যবসা সামলানো ব্যবসায়ী শাফকাত আলম নয়। নিজের হাতে সে গড়ে তুলেছে একাধিক লাভজনক প্রতিষ্ঠান। ব্যবসা গড়ে তোলা শাফকাতের নেশায় পরিনত হয়েছে। একটা ব্যবসায়ে সফল হলেই তার প্রতি অনীহা জন্মে যায় তার। সকল আগ্রহ গিয়ে পড়ে নতুন কোনো ব্যবসার ওপরে।

তার গড়ে তোলা প্রথম প্রতিষ্ঠান ‘Beyond the Borders” – সর্বসাধারণের কাছে এটি ‘BB’ নামেই পরিচিত। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য উৎপাদকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তা রপ্তানি করা হয় বিদেশে। আবার দেশের মানুষের চাদিহা অনুযায়ী বিদেশ থেকেও আমদানি করা হয় পণ্য।

‘The Paradise’ এদেশের বিলাসবহুল পাঁচতারকা হোটেলগুলোর একটি। দেশের প্রত্যেকটা জেলাতেই রয়েছে একেকটি প্যারাডাইস। ঢাকা এবং কক্সবাজারে অবশ্য আছে একেরও অধিক। এই সবগুলো হোটেলের মালিক শাফকাত। ‘BB’ পরিচালনা করতে করতে একসময় যখন হাঁপিয়ে ওঠে সে, তখন তার সকল দায়িত্ব তুলে দেয় সিইওর হাতে। ব্যবসা তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধির জোরেই চলছে, তবে সক্রিয়ভাবে পরিচালনার দায়িত্বে নেই সে। তার ধ্যান-জ্ঞান এখন ‘The Paradise’।

এছাড়াও তার সাইবার সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান ‘Infinite Safety’ মাঝেমধ্যে গুরুত্ব পায় তার। ‘পড়শোনা ডট কম’ এবং ‘সিনেব্লাস্ট মিডিয়া’ মূলত তার শখের সৃষ্টি। শখের বসে প্রতিষ্ঠা করা ব্যবসাগুলোর সাফল্যও ছুঁয়েছে আকাশ।

নিজের সবগুলো ব্যবসা নিয়েই দিন-রাত চিন্তায় জর্জরিত থাকতে হয় তাকে। চিন্তাগুলো কখনো ইতিবাচক আবার কখনো নেতিবাচক। এর মাঝে আবার ‘আলম স্টিলস’ নিয়ে মাথা ঘামানোর ইচ্ছা জাগে না তার মাঝে।

শাফকাত অন্যের জিনিসকে নিজের ভাবতে পারে না কখনো। যা তার, তা কেবলই তার। পৃথিবীর কারও অধিকার নেই সেটার ওপর। আর যা তার নয়, তার দিকে ফিরে তাকানোর সময় পর্যন্ত তার নেই। বাবার কোম্পানিকে আজ পর্যন্ত নিজের ভাবতে পারে না ছেলেটা।
সেই কোম্পানির দায়িত্বও তুলে দিয়েছে সিইওর কাঁধে।

তবে কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে বড় বড় কিছু সিদ্ধান্ত তার না নিলেই নয়। এই যেমন আজ সে গাজীপুরে এসেছে জরুরি একটা মিটিংয়ে। সরকার তার বেশ কিছু প্রকল্পে সহযোগী হিসেবে পাশে চাইছে ‘আলম স্টিলস’কে। আজকের ডিলটা নিশ্চিত হলে আগামী তিন বছরে দেশের আট জেলায় যতগুলো হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা সেতু নির্মাণ হবে – তার সবগুলোতেই ব্যবহৃত হবে ‘আলম স্টিলস’-এর রড।

গাজীপুরে ‘আলম স্টিলস’-এর সবথেকে বৃহৎ ফ্যাক্টরির পাঁচতলায় রয়েছে প্রকান্ড এক কনফারেন্স হল। সেখানেই চলছে মিটিং। সরকার পক্ষের পাঁচ জন কর্মকর্তা এসেছে মিটিংয়ে। উপস্থিত আছে ‘আলম স্টিলস’-এর
গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারাও।

এত গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং, অথচ শাফকাতের চোখদুটো আটকে আছে টিভির দিকে। হাতের মুঠোয় গোলাকার একটা পেপারওয়েট ঘোরাচ্ছে শীতল ভঙ্গিতে। তার চোখদুটোতে রাজ্যের গাম্ভীর্য। সাদা শার্ট, কালো স্যুট, কালো জিন্সে ভয়ঙ্কর এই পুরুষকে যেন একটু বেশিই ভয়ানক লাগছে এই মুহূর্তে। কনফারেন্স রুমে উপস্থিত কেউই মুখ খুলছে না তার গাম্ভীর্যে দমে। সকলেই অপেক্ষা করছে, টিভির ওপর থেকে শাফকাতের মনোযোগ ফেরার।

টিভি স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে সাবার গুলিবিধ্বস্ত গাড়ি। ‘বাংলার বাতাস’ গর্বের সঙ্গে নিজেদের সাংবাদিকের গাড়িতে হামলা হয়েছে বলে প্রচার করছে। এ ঘটনা শুধু সাংবাদিকদের জন্যেই নয়, দেশের জনসাধারণের জন্যেও যথেষ্ট আতঙ্কের। দিনের আলোয়, মানুষের সামনে হামলাকারীরা এসে আক্রমণ করেছে গাড়িটাকে। রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজে উঠে এসেছে গাড়ির দুপাশে দুটো দুটো করে চারটা মোটরসাইকেল এসে পড়ে। মোটরসাইকেল আরোহীর সকলের পরনে কালো পোশাক। মুখ কালো মাস্কের আড়ালে ঢাকা।

সাবার গাড়িতে মোট বত্রিশটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। গাড়ি বুলেটপ্রুফ হওয়ায় অক্ষত আছে ভেতরে থেকে খালেক। নিজের বডিগার্ডকে এতটা ঝুঁকির সম্মুখীন করায় বিন্দুমাত্র খারাপ লাগা নেই শাফকাতের মাঝে। খালেককে আগে থেকে বলে দেওয়া ছিল, তার ওপরে হামলা হতে পারে। দুঃসাহসী খালেক সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।

খালেককে সাবার গাড়িটা নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে পাঠানো জরুরি ছিল। হামলাকারীরা রাস্তায় সাবার গাড়িটা না পেলে হাত গুটিয়ে বসে থাকতো না। সাবাকে খোঁজার জন্যে তৎপরতা অব্যাহত রাখতো। কোনো না কোনো সময়ে হামলা ঠিকই হতো সাবার ওপরে।

সাবার ওপর হামলার দৃশ্য কল্পনায় ভেসে উঠতেই গা বেয়ে রাগের স্রোত বয়ে গেল শাফকাতের। মেয়েটা একান্তই তার। তার জিনিসের ওপরে চোখ তুলে তাকানোর দুঃসাহস যে করবে, তাকে অচিরেই নিশ্চিহ্ন করে দেবে সে।

সাবা তেজী হোক আর যাই হোক, মেয়েটার সাহসে কোনো কমতি নেই। যে রিপোর্ট সে তৈরি করেছে, তা করার সাহস এদেশের বেশির ভাগ সাংবাদিকদের মাঝে নেই। তার আছে বলেই আজ এমন হামলার স্বীকার হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে।

মিটিংয়ে মন দিলো শাফকাত। সরকার পক্ষের সঙ্গে এমন মিটিংয়ে যেকোনো কোম্পানির চেয়ারম্যান হয়তো একটু নমনীয় থাকবে। নিজ থেকে প্রকল্পগুলো বুঝিয়ে দেবে। তবে শাফকাত সেসবের কিছুই করছে না। গম্ভীর ভঙ্গিতে চুপ করে আছে। কোম্পানির সিইও মামুন সাহেব প্রজেক্টগুলো নিয়ে আলোচনা করছে প্রক্টরের সামনে। শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাখলো শাফকাত সেদিকেই।

মিটিং শেষে ফাইনালাইজ হলো ডিলটা। এত বড় একটা ডিল পেয়ে আনন্দের ছটা নেই শাফকাতের চোখেমুখে। একরাশ গাম্ভীর্য নিয়েই সাইন করলো চুক্তিপত্রে।

সরকার পক্ষের লোকজন চলে যেতেই শাফকাত ডেকে পাঠালো রাব্বিকে। এই ছেলেটা তার খুবই অনুগত। শাফকাত ডানে যেতে বললে ডানে যাবে, বামে যেতে বললে বামে। আগে সর্বক্ষণ শাফকাতের সাথে সাথেই থাকতো সে। বর্তমানে শাফকাত গাজীপুরেই কয়েকটা ফ্যাক্টরি তদারকির দায়িত্ব দিয়েছে তাকে।

কনফারেন্স রুম থেকে মামুন সাহেব বাদে একে একে সকলে বেরিয়ে গেছে। তখনই রাব্বি প্রবেশ করলো। একহাতে শক্ত করে নিজের আরেক হাত ধরে কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়ালো শাফকাতের সামনে।

শাফকাত স্যুটের পকেট থেকে সিগারেটের কেস বের করে ধীরেসুস্থে একটা সিগারেট ধরালো। জ্বলন্ত সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে থমথমে ভঙ্গিতে ধোঁয়া ছাড়লো। ভয়ঙ্কর কোনো কাজ নয়। তবুও তার সিগারেট টানার ভঙ্গিতে যে কারোর মনেই ধরে যেতে পারে ভয়।

রাব্বি কাঁচুমাচু হয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছে মাটির দিকে।

শাফকাত আরও একবার সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, “রাব্বি?”

রাব্বি কম্পিত স্বরে বলল, “জি স্যার?”

শাফকাত শীতল গলায় বলল, “আজ রাতে শামীম ইকরামের বাড়িতে একটা পার্টির আয়োজন করতে হবে।”

সাবার রিপোর্টে উঠে এসেছে এই শামীম ইকরামের নাম। তার বিরুদ্ধে প্রমাণও খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। তবুও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না ক্ষমতার জোড়ে। ক্ষমতার জোড়েই এই লোক সাহস পেয়েছে সাবার ওপর হামলার চেষ্টা করার সাহস। এবার সে বুঝতে শাফকাত আলমের ক্ষমতার জোড় কতদূর!

রাব্বি তৎক্ষণাৎ ঘাড় কাত করে বলল, “আচ্ছা স্যার। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

রাব্বি দরজার দিকে পা বাড়াতেই মামুন সাহেব শুকনো ঢোক গিলে বললেন, “কিন্তু স্যার, এই ডিলে সমস্যা হতে পারে…”

মামুন সাহেব হয়তো আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। দমে গেলেন শাফকাতের অগ্নিদৃষ্টিতে। শামীম ইকরামের সরকার দলীয় বিরাট নেতা। তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিলে আজকের এই ডিল বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। তবে ব্যবসায়িক বিপর্যের ভয় শাফকাত পায় না।

নিউজটা দেখার পর থেকে কেমন নিশ্চুপ নির্বিকার হয়ে গেছে সাবা। অনুভূতিগুলো সব জমাট বেঁধে গেছে মনের মধ্যে। ভয়, আতঙ্ক, রাগ, কৃতজ্ঞতা – কিছুই অনুভব করতে পারছে না সে। শূন্যতায় আবারও ভার হয়ে গেছে মনটা। তার বাইরে থাকাটা এই মুহূর্তে নিরাপদ নয় ভেবে বাড়ি থেকে গাড়ি ডেকে পাঠালো। গাড়ির সঙ্গে এলো একজন বডিগার্ডও। শাফকাত বাড়িতে না থাকলেও সাবার কিংবা বাড়ির অন্যান্যদের জন্যে সর্বক্ষণ তিনজন বডিগার্ড স্ট্যান্ডবাই থাকে।

অন্য সময়ে বডিগার্ড দেখলে রেগে আগুন হয়ে যায় সাবা। তার মতে, সে কোনো সেলিব্রিটি নয় যে সর্বক্ষণ বডিগার্ড সাথে নিয়ে ঘুরতে হবে। তবে আজ এই বডিগার্ডকে দেখে কোনরকম প্রতিক্রিয়া না দেখিয়েই উঠে পড়লো গাড়িতে।

অরুণও যাচ্ছে তার সঙ্গে। বাবা-মাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে, আজ সাবার বাড়িতে থাকবে। সাবার মুখে কোনো কথা নেই। শূন্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে তাকিয়ে আছে নিচের দিকে। মনে মনে অজানা এক ভয় ছড়িয়ে গেল অরুণের। এই মেয়েটার রাগও ভালো, জেদও ভালো। ভালো নয় শুধু এই নীরবতা।
নীরবে সকলের আড়ালে মনে মনে সবথেকে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে সাবা।

অরুণ চেষ্টা করলো সাবার সঙ্গে কথোপকথনে জড়ানোর। লাভ তেমন হলো না। হুঁ-হা ছাড়া কিছুই বের হলো না সাবার মুখ থেকে। নিজের মনেই সেই তখন থেকে কী যেন ভেবে চলেছে মেয়েটা।

এ বাড়িতে আগেও বেশ কয়েকবার এসেছে অরুণ। সাবার শাশুড়ি এবং ননদের তার সখ্যতাও রয়েছে নিদারুণ। অরুণ বাড়িতে পা রাখতেই আতিয়া আলম ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তাকে নিয়ে। অরুণ পিঠা খেতে ভালোবাসে বলে এই কাঠফাটা গরমের মাঝেও তিনি পুলি পিঠা বানাতে বসলেন।

শামাও ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে আড্ডা দিতে বসলো তার অরুণদির সঙ্গে। সাবা তাদের সামনেই আছে, তবে কোনো কিছুর মাঝেই নেই। মস্তিষ্কে তার চলছে ভিন্ন এক ঝড়। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অরুণ ক্রাইম নাইটের কথা তুলল।

অরুণ মাঝেমধ্যে এ বাড়িতে বেড়াতে এলে তারা তিনজনে ক্রাইম নাইটের আসর বসায়। ক্রাইম নাইট তেমন কিছুই নয়। শামা প্রচুর ট্রু ক্রাইম ডকুমেন্টারি দেখে। সেগুলোরই একটার গল্প বলে দুজনকে। আর তারা ঘটনার খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করে।

শামা উৎফুল্ল গলায় বলল, “হ্যাঁ ভাবি! চলো না আজ রাতে ক্রাইম নাইট করি! কতদিন আমাদের ক্রাইম নাইটের আসর বসে না!”

ক্রাইম বিটের জার্নালিস্ট হওয়ার সুবাদে অপরাধের গন্ধ পেলেই উচ্ছ্বাসের হাওয়া খেলে যায় সাবার মাঝে। তবে আজ সেসবের কিছুই হলো। আগের মতো গাম্ভীর্য ছেয়ে আছে সাবার মনে।

সাবা শুকনো গলায় বলল, “আজ না শামা। অন্য আরেকদিন।”

সাবার শুষ্কতার ভাটা পড়লো বাকি দুজনের উচ্ছ্বাস। অফিস থেকে ফোন এসেছে। হামলার পর থেকে অনবরত ফোন এসেই চলেছে। এড়িয়ে গেছে সাবা। আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তার ফোনটা নিয়ে উঠে গেল সে।

শামা অরুণের দিকে তাকিয়ে অসহায় গলায় বলল, “আচ্ছা অরুণদি? ভাবি সত্যিই কি আগে খুব হাসিখুশি ছিল?

অরুণ মলিন কণ্ঠে বলল, “মারাত্মক হাসিখুশি ছিল। আস্ত একটা বাঁদর ছিল তোমার ভাবি। আজ নিজেই কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে। অথচ সেই সময়ে আশেপাশে কাউকে চুপচাপ দেখলেই বাঁদরামি শুরু করে দিতো, তাকে হাসাবে বলে।”

হাস্যোজ্বল-প্রাণবন্ত সাবার চিত্র কল্পনায় ভেসে উঠতেই মনের অজান্তে হাসি ছড়িয়ে গেল শামার ঠোঁটজুড়ে। আহারে! তার ভাবিটা এখনো ঠিক আগের মতো থাকলে কী এমন ক্ষতি হতো?

শামা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল, “ওই ঘটনার পর ভাবি অনেক ভেঙে পড়েছে তাই না?”

“হুঁ। সহ্য করতে পারেনি। আদরে আদরে বড় হয়েছে তো, বুঝতেই পারেনি জগৎটা কত কঠিন।”

শামা হঠাৎ চাপা একটা ভয় নিয়ে বলল, “অরুণদি? ভাবি কি আর কখনোই আগের মতো হবে না?”

অরুণ আক্ষেপের সুরে বলল, “দিনরাত এই একটাই প্রার্থনা করি, যেন আগের সাবাকে আবারও ফিরে পাই। কিন্তু সেটা কতটুকু সম্ভব কে জানে?”

“সম্ভব নয় কেন?”

“কারণ সাবা ভেঙে পড়া একটা মানুষ। এসব মানুষেরা সময় নিয়ে নতুন করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। ভেঙে যাওয়া টুকরোগুলো জোড়া লাগাতে পারে। সাবা পারছে না, কারণ ও টুকরোয় ভাঙেনি। ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে।”

(চলবে)