#হয়তো_তোমারই_জন্য
পর্বসংখ্যা.১২
~ শেষাংশ
লেখনীতে:সাদিয়া তাসনিম
(অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, চাইলে শেয়ার দিয়ে পাশে থাকতে পারেন)
‘তুই প্রহর ভাইকে ভালোবাসিস?’
সকালের দিকে পুকুর পাড়ে সান বাঁধানো সিঁড়িতে আয়েশের সাথে বসে পানিতে পা ভেজাচ্ছিলো সুবহা। কালো-সাদা রঙের ওভার সাইজের কামিজ সাদা কালচে রঙের সুতির কাপড়ের ওড়না বিকালের শান্ত ঠান্ডা বাতাসে আপন গতিতে উড়ছিলো।
সুবহার খোলা চুলগুলো বাতাসের ঝাপটায় এসে পড়ছিলো মুখের উপর। হঠাৎ সুবহা সাঁঝের এমন কথা শুনে নিজের চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে রাগী-ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে সাঁঝের দিকে তাকালো। এতোক্ষণ শান্ত ভাবে বসে থাকা সুবহা যেনও রাগে থরথর করে কাঁপলো লাগলো। গালের ফর্সা চামড়া যে রাগের ফলে লাল হয়ে উঠেছে সুবহার তা ভালোভাবে বুঝতে পারলো সাঁঝ। সাঁঝ সুবহার রাগের ধার ধারলো না। সে ধুপ করে সুবহার পাশে বসে পড়লো। সাঁঝ সুবহার দিকে কিছুটা ঝুঁকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়লো সুবহার উত্তরের জন্য কিন্তু সুবহা কোনো উত্তর দিলো না। সাঁঝ সুবহার কাজ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে একটু বিরক্ত হলো। তারপরও সাঁঝ সুবহার দিক থেকে নিজের দৃষ্টি সরালো না। সাঁঝ পুকুরের সচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে সুবহাকে উদ্দেশ্য করে আবারও নম্র স্বরে বলে উঠলো ,
‘ তুই কী সত্যি সত্যি প্রহর ভাইয়াকে ভালোবাসিস না আপু? ‘
সাঁঝ নিজের ঘাড় বাকিয়ে সুবহা উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলার সময় সুবহার হাতে একটা আধখাওয়া কলা দেখলো। সাঁঝ কলাটা সুবহার হাত থেকে নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলো। সুবহা সাঁঝের কাছে চুপ হয়ে বসে রয়লো। মূলত কলা তার মোটেও পছন্দ না কিন্তু সুবহাকে একটু বিরক্ত করার জন্য সে কলাটা খেয়ে নিলো৷ সাঁঝের কথাশুনে বা সাঁঝের কাজে সুবহা টুঁ শব্দটিও করলো না। সাঁঝ এবার বিরক্ত হলো সুবহার কাজে। অন্য সময় মেয়েটা বকবক করে তার মাথার পোকা বের করে দেয় আর কাজের সময় সে বোবা! সাঁঝ নিজের নাকমুখ কুঁচকে সুবহার দিকে তাকিয়ে নিজের হাত কচলাতে কচলাতে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো ,
‘ জানিস প্রহর ভাইয়া দেশে আসছে। ‘
সাঁঝের কথা শুনে বিস্ময়-বিহ্বল হয়ে দুই ঠোট ফাঁকা হলে গেলো সুবহার। সে যেনও সুবহার কথা বিশ্বাসই করতে পারছে না। অধিক পরিমাণে বিষ্ময়কর নিয়ে সুবহা অত্যাশ্চর্য দৃষ্টিতে সাঁঝের দিকে তাকালো। সুবহার এমন মুখ দেখে সাঁঝ মনে মনে হাসলো। সাঁঝ কলা খেতে খেতে এক ভ্রুঁ উঁচু করে সুবহার দিকে তাকাতেই তাদের চোখাচোখি হয়ে গেলো। চোখাচোখি হয়ে গেলেও সাঁঝ নিজের দৃষ্টি সরালো না।সাঁঝের মুখে প্রহরের নামটা শুনে সুবহার চোখের সামনে আপনাআপনি প্রহরের গম্ভীর মুখশ্রী ভেসে উঠলো। প্রহরের কথা মনে পড়তেই সুবহা চোখ বন্ধ করে নিলো। দু’হাত মুঠো করে চোখ বন্ধ করে বসে রয়লো সে। চোখ বন্ধ করতেই প্রহরের রাগী মুখশ্রী, প্রহরের কথা বলার ধরন,তেজী ভঙ্গিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা সব তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। প্রহরের কথাগুলো ভাবতেই শিরশির করে কাঁপুনি দিয়ে উঠলো সুবহার ক্ষীণ দেহটা। সুবহা উৎকন্ঠিত অবস্থায় চোখ খুললো। আর কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলে প্রহরের তেজী রূপটাও তার সামনে ফুটে উঠতো হয়তো। সুবহা শুকনো ঢোক গিলে সাঁঝের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে ঠাস করে আকাশ থেকে পরার তো আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
‘ তুই কী করে জানলি?’
সাঁঝ সুবহার কথাটা শুনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো। কলার খোসাটা পুকুর মধ্যে চেলে দিয়ে সুবহার দিকে তাকালো। সুবহাকে একবুক কৌতুহল নিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সাঁঝ মনে মনে হাসলো। সুবহা সাঁঝের দিকে উৎকন্ঠিত হয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে আছে কিন্তু সাঁঝ যেনও সুবহার কথাগুলো শুনেও না শোনার ভান করে কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সুবহা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে,সে বুঝতে পেরেছে সাঁঝ তখন তাকে সে প্রশ্ন গুলো করেছিলো তার কোনো উত্তর দেয়নি বলে সাঁঝও তার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না। সুবহা সাঁঝের দিকে তাকিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে বলে উঠলো ,
‘ বল না প্লিজজ।’
সুবহার বুকের ভেতরটা সাঁঝের কাছ থেকে উত্তরটা শোনার জন্য অস্থির হয়ে আছে। সুবহা এতোটাই অস্থির যে যে চরম পর্যায়ের বাকরুদ্ধ হয়ে সাঁঝের মুখের পানে তাকিয়ে আছে কিন্তু সাঁঝ যেনও মুখে আঠা লাগিয়ে বসে আছে, সে কোনো কথাই বলছে না। বরঞ্চ নিজের ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি নিয়ে সুবহার দিকে তাকিয়ে আছে। সাঁঝে কোনো প্রত্যুত্তর করতে না দেখে সুবহা দাঁড়িয়ে পরলো। নিজের মনের রাগটা আরো বেড়ে গেলো তার। নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা রাগটা সাঁঝের উপর দেখালো। সে সাঁঝের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো ,
‘ সে আসুক আর না আসুক আমার কিছু আসে যায় না। তোর প্রহর ভাইকে জাহান্নামে যেতে বলিস এবার কথা হলে।’
‘ বলেছিলাম আগের বার।আল্লাহ! ভাইয়া বললো তোকে নিয়ে একসাথে জাহান্নামে যাবে।’
নিজের ঠোঁটের কোণ থেকে হালকা হাসি সরিয়ে সুবহার কথাগুলো শুনে তার কথাগুলোর বিপরীতে, সাঁঝ সুবহার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি টেনে প্রফুল্লচিত্তে বললো কথাটা। সাঁঝের কথা শুনে সুবহা রাগে রিরি করে উঠলো। সে নিজের বিরক্তি ভর্তি মুখ নিয়ে পুকুর পাড় থেকে চলে আসলো। সুবহা চলে যাওয়ার পরে সাঁঝ আর বেশিক্ষণ পুকুর পাড়ে বসলো না। সেও হাঁসতে হাঁসতে উঠে পরলো।
.
.
আজ শুক্রবার বাড়ির পুরুষরা সবে মাত্র নামাজ পরে এসে যে যার রুমে গিয়েছে। দুপুরের স্নিগ্ধ আলো ড্রয়িং রুমের জানালা দিয়ে ভিতরে নরম ছায়া ফেলেছে। বাড়ির পরিবেশটা এখন শান্ত। পুরুষরা যে যার রুমে আর বাড়ির নারীরাও নিজেদের কাজে ব্যস্ত তাই বাড়ির পরিবেশটা শান্ত। সৌহার্দ্য বাহিরে থেকে এসে নিজের ঘরে গিয়ে দ্রুত পোশাক পরিবর্তন করল। সাদা টিশার্ট আর কালো ট্রাউজারে সে নিজেকে সবসময় হালকা আর স্বচ্ছন্দ মনে করে তাই ওটাই বেশি পড়ে সে, আজও তাই করলো।
সে ড্রয়িং রুমে এসে সে একটু থমকে দাঁড়াল। সৌহার্দ্যের দৃষ্টি লুবনার দিকে পড়তেই সেএকটু নিজের ভ্রুঁ কুঁচকে নিলো।
লুবনা ঠোঁট চেপে বসে আছে আর একটু পর পর নাক ফুলিয়ে কান্না করে উঠছে। ড্রয়িং রুমে সোফার উপর বসে মলিন চেহারা নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। বাহিরে কোথা থেকে এসে এখনও রুমে না গিয়ে এখানে বসেই কান্না করে চলেছে সে।
সে নিজের মতো কাঁদছিল কিন্তু সৌহার্দ্যকে উপর থেকে নিচে নামতে দেখে লুবনার চোখ ছলছল করে উঠলো যেনও। লুবনাকে সোফার উপর বসে কাঁদতে দেখে সৌহার্দ্যর পা থমকে গেলো। সে তার দাদু ভাইয়ের রুমে না গিয়ে, পা বাড়িয়ে লুবনার কাছে চলে আসলো। সৌহার্দ্যকে আসতে দেখে লুবনার কান্না বাড়লো সাথে বাড়লো চোখের অশ্রুর পরিমাণ৷ অনেকটা চাপা শব্দ করে কান্না করছে লুবনা। লুবনার কান্না করার দেখে সৌহার্দ্য লুবনার পাশে বসলো। নিজের নেত্রযূগল কুঁচকে লুবনাকে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
‘ কাঁদিস কেনো?কী হয়েছে?’
সৌহার্দ্যর কথাগুলো শোনার পর লুবনার কান্নার গতি যেনও ছন্নছাড়া হলো। লুবনা নিজের নাক টানতে টানতে মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলে সৌহার্দ্যকে কিছু না কথাটা বোঝাতে চাইলো। লুবনাকে সৌহার্দ্য ছোট বেলা থেকে প্রচন্ড পরিমাণে ভালোবাসে। নিজের কোনো বোন না থাকায় সৌহার্দ্য লুবনাকে নিজের বোনের মতো করে বড় করেছে। লুবনা কাঁদলে সে যে নিজে সহ্য করতে পারে না। লুবনার চোখের পানি তাকেও কষ্ট দেয়। সৌহার্দ্য লুবনার দিকে চোখ ছোট ছোট করে অনুরোধের কন্ঠে লুবনাকে জিজ্ঞাসা করলো,
‘ কী হয়েছে বোন আমাকে বল। বলবি না?’
লুবনা নিজের চোখের পানি মুছে আশেপাশে তাকিয়ে নিলো, আশেপাশে কাউকে না দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে। তারপর ঠোঁটে উল্টো করে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে মায়াবী কন্ঠে বল উঠলো,
‘ পাশের গ্রামে মেলা হচ্ছে। আপুকে বলেছিলাম তোমাকে বলতে যেনও আমাদের নিয়ে যাও কিন্তু..’
লুবনা কিন্তু বলে থেমে গেলো। আজ সকালে সে সাঁঝকে বলেছিলো সৌহার্দ্যের সাথে কথা বলতে যাতে সে তাদের সবাইকে মেলায় নিয়ে যেতে পারে কিন্তু সাঁঝ স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সৌহার্দ্য ভাই নাকি এই কয়েকটি দিন ব্যস্থ থাকবে তাই সৌহার্দ্যকে সে কিছু বলতে পারবে না আর সেও যেনও সৌহার্দ্যকে কিছু না জানায়। আজ দুইটা বছর পর গ্রামে আবারও মেলা হচ্ছে। দুবছর আগে একবার গিয়েছিলো, এখন না গেলে তার মন খারাপ হয়ে যাবে। যদি আবার মেলা বন্ধ হয়ে যায়, মেলা না হয় ।
তখন লুবনার না যাওয়ার আক্ষেপটা থেকে যাবে তাই সে সৌহার্দ্যকে নিজের আবদার জানালো। লুবনাকে কিন্তু বলার পরে থেমে যেতে দেখে সৌহার্দ্য কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে উঠলো,
‘ কিন্তু কী?’
লুবনা নিজের বড় বোনকে বাঁশ দেওয়ার মোক্ষম সময় দেখে নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে আশেপাশে একবার তাকিয়ে নিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ আপু বললো তোমার নাকি সময় হবে না,মেলায় যেতে নিষেধ করেছে এবার। আচ্ছা ভাইয়া তোমার কী সত্যিই সময় হবে না?’
সৌহার্দ্য লুবনার দিকে তাকিয়ে তার চোখের কোণে জমে থাকা জল কোণা গুলো নিজের হাতের আঙুলের মাধ্যমে পরিষ্কার করে দিয়ে, লুবনার দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলে উঠলো,
‘ তোর বোন সবসময় একটু বেশি বোঝে রে। আমি বলেছি নাকি আমার সময় হবে না আমার মিষ্টি লুবনার জন্য? তোর বোন যাবে না বলে আমার উপর দোষ চাপাচ্ছে বেয়াদব একটা। ‘
লুবনা সৌহার্দ্যের অন্য কথাগুলো যেনও কানে নিলো না। সে নড়েচড়ে বসে মৃদু কন্ঠে আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলে উঠলো,
‘ সত্যিই তোমার আমার জন্য সময় হবে? ‘
সৌহার্দ্য লুবনার আহ্লাদী মুখটা দেখে হাঁসতে ভুললো না। মেয়েটাকে অনেকক্ষণ কাঁদার পরে এখন হাঁসতে দেখে সৌহার্দ্যের ভালো লাগলো। সে যদি পারতো তবে এখন গিয়ে সাঁঝের কান টেনে।লম্বা করে ছাড়তো, বেয়াদবটার জন্য লুবনা কতক্ষণ ধরে কাঁদল? সে একবারও তাকে বলেছে লুবনা মেলায় যাওয়ার জন্য মন খারাপ করেছে?
নিজে নিজে বেশি কথা বলে দিল। সৌহার্দ্য দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে লুবনার কথার বিপরীতে বলে উঠলো,
‘ হুমমম। একশো বার সময় হবে আমার। ‘
সৌহার্দ্যের থেকে যাওয়ার কথাটা পাকাপোক্ত করে লুবনা নিজের মুখে কৌতুহল নিয়ে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো ,
‘ আপু যে বললো তুমি নাকি ব্যস্থ থাকবে । ‘
লুবনাকে কৌতুহলী হয়ে প্রশ্নটা করতে দেখে সৌহার্দ্য নিজের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তুললো। তারপর লুবনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো,
‘ তোদের জন্য কোনো ব্যস্থতা নেই আমার।’
লুবনা আবারও খুশিতে গদগদ হয়ে সৌহার্দ্যের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
‘ আজ নেয়ে যাবে মেলায়?’
লুবনার কথাটা শেষ হতেই সৌহার্দ্য এক ভ্রুঁ উঁচু করে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
‘ তুই কখন যাবি শুধু তাই বল ?’
লুবনা এবার শব্দ করেই বলে উঠলো,
‘ সন্ধ্যায়?’
সৌহার্দ্য লুবনার আনন্দ দেখে হাঁসলো। তারপর মৃদু কন্ঠে বললো,
‘ আচ্ছা নিয়ে যাবো। সবাইকে রেডি হয়ে থাকতে বলিস। আমি দাদুভাইয়ের রুমে যাচ্ছি,তুইও সবাইকে বল গিয়ে, হাতে সময় কম ।’
সৌহার্দ্য লুবনার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে আর দাঁড়ালো না। সে তার দাদুভাই -এর রুমে চলে গিলো। আর লুবনা সৌহার্দ্যের যাওয়ার পানে তাকিয়ে খুশিতে মিটি মিটি হাঁসতে লাগলো।
চলবে….