#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম
#সূচনা_পর্ব
ডিভোর্সের দুই বছর পর দেশে ফিরল মানহা। নিজ দেশে পা রাখতেই এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে । দুই বছর আগে জীবনের কিছু কালো অধ্যায় তার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। ভাবতেই গা য়ে কাটা দিয়ে ওঠে মানহার। নিজ জন্মভূমি ছেড়ে যাওয়ার কষ্টের আজও ভুলতে পারিনি মানহা। কিছু তীক্ষ্ণ স্মৃতি আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তার বিয়েের তিন বছরের মাথায় তাদের ডিভোর্স হয়। তার স্বামী বন্ধুদের সাথে টুরে যাবে বলে বাসা থেকে গিছিলো। মানহা হাসি মুখে তাকে যেতে দিয়েছিল। ঠিক তার পরের দিন নতুন এক মেয়েকে বিয়ে করে বাড়ি ফেরে তার স্বামী রুপম। স্বামীর পাশে অন্য নারাীকে দেখে অজ্ঞান হয়ে যায় মানহা। জ্ঞান ফেরার পর নিজের যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গিছিল। তাকে কেউ বাধা দেয় নি। তার শাশুড়ী মা তাকে দেখতে পারত না কেন পারতো না সেটা তার অজানা? তার শশুর নেই অনেক আগেই গত হয়েছেন। চিরদিনের মতো স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়। সারা রাস্তায় চোখের পানি ফেলতে ফেলতে হাটে। কোথায় যাবে সেটা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে মানহা। শেষ মেষ বাবার বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বাবা মার একমাত্র সন্তান মানহা। তার বাবা মিনহাজ খান একজন নামকরা এডভোকেট। মানহা বাসায় এসে সবকিছু বললে খান পরিবারের সবাই অনেক রেগে গিয়েছিল কিন্তু মানহা সবাইকে বলছে এ ব্যাপারে যেন একটা কথা না হয়।সবাই মানহার কথা মেনে নেয়। মিনহাজ খান আদরের মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারেন না। মানহা কে প্রতি নিয়ত কাদতে দেখে ডিভোর্সের কাজ সম্পন্ন করে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেয় তার বোনের কাছে।
মানহা এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে একটা গাড়ি নিয়ে সোজা বাবার বাড়ির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরে। গাড়িতে বসে নিরবে চোখের জল গড়িয়ে পরে গাড়ির সিটে। অশ্রু সিক্ত নয়নে দেখতে থাকে নিজ জন্মভূমি। যেখানে তার অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে। জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তিন তিনটা বছর। এই দুই বছরে নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলছে। চোখের পানি মুছে নেয় হাত দিয়ে। সে কাঁদবে না। কেন কাঁদবে? কার জন্য কাদবে? যে তার ভালোবাসা বুঝলো না তার জন্য? মোটেও না? সে মানহা খান। সবাইকে দেখিয়ে দেবে মানহা খান কখন ও ভেঙে পড়ে না? যারা তাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য অবহেলা করছে তাদের জন্য অন্তত চোখের পানি ফেলবে না?
তার একটা ফোটা চোখের পানির অনেক মুল্য।
বাসার কাউকে না বলে দেশে আসছে। সবাইকে সারপ্রাইজ দেবে। তার বড় চাচ্চুর ছেলে আয়ান খানের এনগেজমেন্ট। মানহা কে আসতে বললে সে সাফসাফ জানিয়ে দেয় আসতে পারবে না। সেজন্য তাকে কেউ আর জোড় করে নি। মানহা পরক্ষণে ভাবে সে কেন অন্যের জন্য দেশে আসবে না। তাই তো সবাইকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য পরশু টিকিট কেটে রাখছে আর আজ সে বাড়ি ফিরবে। নিজের বাড়ি, নিজের রুম নিজের বাবা মা সবকিছু। সবকিছু ছুয়ে দেখতে পারবে। সবাই তাকে দেখে কেমন রিয়াকশন দেবে ভেবেই মুচকি হাসে মানহা।
ভাবতে ভাবতে কখন যে বাড়ির সামনে এসে পৌঁছে ছে টের পায়নি। ভাড়া মিটিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে মানহা। বাড়ির সামনে দাড়িয়ে দেখে পুরো বাড়িটা লাল নীল সবুজ হলুদ বাতি জ্বলছে। তিনতলা বাড়িটা আলোয় ঝলমল করছে। আর দাড়িয়ে না থেকে এক পা এক পা করে এগোতে থাকে। পা যেন চলছে না। হাতে লাগেজ নিয়ে দাড়িয়ে যায় গেইটের সামনে।ভিতরে প্রবেশ করতে গেলে বাঁধা দেয় দারোয়ান। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুচকে তাকায় মানহা।
মানহা বিরক্তির সহিত জিজ্ঞেস করে,,
কি হলো চাচা আপনি ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না কেন?সমস্যা কি?
” আফা আফনারে চিনি না জানি না কেমনে ঢুকতে দিমু আফনেই কন?
” আপনি আমাকে চেনেন নি চাচা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে?
” না আফামনি। মুখ বাঁধা থাকলে কি চেনার উপায় আছে।
” চাচা আমি মানহা। এবার তো চিনছেন।
” কি কন আফামনি আপনি আইবেন তা তো জানতাম না। খালুজান কি জানে?
” না চাচা। কেউ জানে না আমি আসব। সবাইকে সারপ্রাইজ দেবো বলে না বল আসছি এখন যায় চাচা কাল কথা হবে অনেক জার্নি করছি টায়ার্ড লাগছে।
” আইচ্ছা আফামনি। আপামনি একটা কথা কইমু?
” জ্বি চাচা বলুন।
” আপনাকে শাড়িতে খুব ভালো লাগছে। একদম আকাশের চান্দের মতো।
মানহা মুচকি হেসে তাই বলে গেইটের ভিতরে যায়। দরজার সামনে দাড়িয়ে কলিংবেল চাপ দিতে গিয়ে হাত কাঁপছে মানহার। নিজের পরিবারের মানুষ গুলো চেহারা ভেসে ওঠছে বারবার। এবার কলিংবেলে চাপ দেয়। পরপর তিন চারটা বেল বাজানোর পর দরজা খুলে দরজার সামনে মানহাকে দেখে ভুত দেখে মতো চমকে যায় অয়ন। এক ধ্যানে চেয়ে থাকে মানহার পানে। মানহার ডাকে ঘোর কাটে অয়নের।
” কি ব্যাপার ভাইয়া আমাকে দেখে খুশি হওনি তুমি? এমন করে তাকিয়ে আছো কেন? ভিতরে আসতে বলবে না? আচ্ছা তাহলে চলে যায় আমি বলে পিছাতে গেলে হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয় আয়ান।
” যাস না বোন। আমি খুব খুশি হয়েছি। তুই আসবি এটা আমি কস্মিনকালেও ভাবিনি। আনন্দের ঠেলায় তোকে ভিতরে আসার কথা বলতে ভুলে গেছিলাম।
দরজায় দাড়িয়ে অয়ন কে কারো সাথে কথা বলতে দেখে এগিয়ে আসে অয়নের উডবি ওয়াইফ নিরা। নিরা মানহা কে কখনও সরাসরি দেখেনি। ছবিতে একবার দেখছে সেজন্য মানহা কে চিনতে না পেরে অয়ন কে জিজ্ঞেস করে,,
” অয়ন মেয়েটা কে? এত কি কথা বলছো? আবার দেখলাম হাতও ধরছো? এসব হচ্ছে টা কি? তুমি অনুষ্ঠান ছেড়ে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছো? একটু পরেই তো অনুষ্ঠান শুরু হবে? গম্ভীর কন্ঠে বলে নিরা।
” নিরা তুমি ভালো করে দেখো চিনতে পারো কি না।
নিরা কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,, না চিনতে পারছি না।
মানহা চুপচাপ দাড়িয়ে দাড়িয়ে অয়ন আর নিরার কার্যকলাপ দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। হাসিটা কারো নজরে পরে না কারণ মানহার মুখে মাক্স পড়া। সে নিরাকে দেখেই চিনতে পারছে এটা তার একমাত্র ভাবি। ভাই কে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে জেলাস ফিল করছে ভাবতেই ভালোলাগা কাজ করে মানহার। মুহূর্তেই নিজের বিয়ের কথা মনে পরে যায়। কতই সুখেই না সংসার করতো।
মানহার ভাবনার মাঝেই সেখানে উপস্থিত হয় মানহার মা তানিয়া বেগম। অয়ন আর নিরা কে একটা মেয়ের সাথে দেখে এগিয়ে এসে নিজের মেয়েকে দেখে মানহাাা বলে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ এমন হওয়ায় মানহা হকচকিয়ে যায়। নিজেকে সামলে সেও মা কে জড়িয়ে ধরে। কতদিন পর মায়ের ছোয়া পেয়েছে।
দরজার সামনে এত হইচই শুনে সবাই দরজার সামনে আসে। মা মেয়ের এমন একটা মুহূর্ত দেখে চোখে পানি চলে আসে সকলের। কিছু কিছু লোক মানহা কে চেনে না তাই অবাক হয়ে দেখে।
মানহার বাবা চাচ্চু চাচি মানহার ভাই সবাই মানহাকে জড়িয়ে ধরে একদফা কান্না করে নেয়। পরিবারের এত সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরা বন্দি করে নেয় ক্যামেরাম্যান।
______
অয়ন মাইক হাতে নিয়ে সবার উদ্দেশ্য করে বলে,, হ্যালো গাইস। আমি আপনাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চায় আমার একমাত্র বোনের সাথে। সবাই হয় তো ভাবছেন আমাদের পরিবারের সবাই ওই মেয়েটাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেখে ইমোশনাল হয়ে গেলাম কেন? জাস্ট ওয়েট এন্ড সি?
মানহা প্লিজ তুই এদিকে আয়। মানহা অয়নের ডাকে তার পাশে গিয়ে দাড়ায়। মুখ থেকে মাক্স খুলে ফেলে। অয়ন আবারও বলতে শুরু করে,,
যাকে নিয়ে আপনাদের এত হইচই। তাকে অনেকেই চেনেন হয় তো আবার অনেকেই চেনেন না। আমার পাশে যে মেয়েটাকে দেখছেন এটা আর কেউ নয় আমার একমাত্র বোন মানহা খান। সবাই করতালি দিয়ে মানহা কে স্বাগত জানায়। মানহা হাসি মুখে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে।
এত দিন আমেরিকাতে ছিল।আমার ফুপির কাছে। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করছে। আজ যে ও আসবে এটা আমরা কেউ জানতাম না। দেশে এসে আমাদের সবাই কে সারপ্রাইজড করে দিছে। ধন্যবাদ সবাইকে
অয়ন আর নিরা একে অপরকে হাসি মুখে আংটি পড়ায়। আরেকদফা করতালির আওয়াজ পাওয়া যায়। অয়ন আর নিরার এনগেজমেন্ট পার্টি খুব সুন্দর ভাবেই শেষ হয়।
অনুষ্ঠান শেষ হতেই মানহা নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু শাড়িতে বেধে গিয়ে পড়ে গিয়ে আহহ বলে চিৎকার করে ওঠে,,,
চলবে
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_২
অনুষ্ঠান শেষ হতেই মানহা নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু শাড়িতে পা বেধে গিয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আহহ করে চিৎকার করে ওঠে!
মানহা পড়ার আগেই কেউ একজন তার শক্তপোক্ত হাত দিয়ে মানহা কে ধরে ফেলে। মানহা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে সে পড়ে যায় নি। একটা পুরুষ তার কোমড় জড়িয়ে একদৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। মানহা তাড়াতাড়ি দৃষ্টিতে সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায়। ছেলেটাও মানহার কোমড় থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়ায়। ছেলেটা কিছু বলার আগেই মানহা তাকে ধন্যবাদ বলে চলে যায়।
মানহার এমন কাজে ছেলেটা বোকা বনে যায়। যাকে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচালো সে শুধু মাত্র ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো আজব তো! কি এ্যাটিটিউট রে বাবা! এটা আবার কেমন মানুষ। মেয়েটা অদ্ভুত! গম্ভীর স্বভাবের। মেয়েটার দৃষ্টি কেমন নিশ্চল। বলে নিজের মতো চলে যায়।
________
❝সময় বদলে যায় জীবনের সঙ্গে, জীবন বদলে যায় সম্পর্কেের সাথে, সময় বদলায় না আপন জনের সঙ্গে। শুধু আপনজন বদলে যায়, ছেড়ে চলে যায় সময়ের সঙ্গে ❞
মানহা নিজের রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। কতগুলো দিন পেরিয়ে গেছে তার জীবন থেকে। কিন্তু নিজের রুমটা ঠিক আগের মতোই আছে। যেমনটা আমেরিকা যাওয়ার আগে গুছিয়ে রেখে গিয়েছিল ঠিক তেমনটাই আছে। হয়তো তার মা নিয়ম করে তার রুমটা গুছিয়ে রাখে।রুমের প্রতিটা জিনিস ছুয়ে ছুয়ে দেখছে, রুমে থাকা সব জিনিস গুলোই তার অনেক শখের।সে ভালোবেসে কিনেছিল। ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। চোখের পানি মুছে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পরে।
অনেকক্ষণ ধরে বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে মানহা কিন্ত কিছুতেই ঘুম আসছে না তার চোখে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিকষ কালো আকাশটার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ ,সব কিছু,সবাইকে খুব নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে।গলার কাছটায় কেমন বাধো বাধো লাগছে।কেউ যেন শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে মানহার গলাটা চেপে ধরেছে!সামনে খোলা আকাশ তাও নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। জোর করে আরেকবার বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরে মানহা।চোখ বন্ধ করতেই হাজারও বিষাদময় স্মৃতি ভেসে ওঠে। যে গুলো সে মনে করতে চায় না কিন্তু বার বার মনে পড়ে যায়।
অনেক জার্নি করে আসার পরেও ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেও চোখে ঘুম ধরা দিতে চায় না। এগুলো কল্পনা জল্পনা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে টের পায় না মানহা।
________
অন্ধকার রাতের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন যুবক। ল্যামপোস্টের আলোয় ঝলঝল করছে ঢাকা শহর। দেখতে খুবই ভালো লাগছে তার। রাতে সবাই ঘুমালেও কিছু কিছু মানুষ ঘুমই না। রাত বারোটা বাজে। বেলকনির নীল বাতি পিনপিন করে জ্বলছে। মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। যুবকটা এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী নারীর চেহারা। হিজাবে মাথাটা ঢাকা, চোখ দুটো টানা টানা। ঠোঁটে হালকা খয়েরী লিপস্টিক ঠোঁটের নিচে একটা লালচে তিল দেখতে হলদে ফর্সা, মুখে মায়াবী একটা ভাব আছে। মেয়েটার কথা ভেবেই মুচকি হাসে যুবকটা।
হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যায় যুবকটা। কিছু না ভেবেই রুমে চলে আসে। অনেক রাত হয়ে সকালে অফিস আছে তার। এখন ঘুমাতে হবে।
_____
অনেক রাত করে ঘুমানোর ফলে খুব দেড়িতে ঘুম ভাঙে মানহার। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। ড্রয়িংরুমে বসে আছে তার বাবা চাচা দুই ভাই। অয়নের শশুর বাড়ির লোকেরা কাল রাতেই চলে গিছিলো। মানহা গিয়ে মিরাজের পাশে বসে পরে। মিরাজ তার বড় বোনকে আসতে দেখে হাসি মুখে বলে,,
” গুড মর্নিং আপু?
” মানহাও মুচকি হেসে বলে শুভ সকাল ভাই।।
” আপু তোমার ঘুম কেমন হলো?
” কেন রে।
” না মানে এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম আরকি।
” খুব পাজি হয়ে গেছিস দেখছি বড় বোনের সাথে দুষ্টামি করিস।
” আপু আমি তো মজা করে বলছি। হঠাৎ করে কোনো বিছানায় তুমি ঘুমাতে পারোনা বলে।আর তুমি বলছো আমি দুষ্টামি করছি। এটা কিন্তু ঠিক না বলে দিলাম।
” আরে বলদ ওটা তো আমারই বেড তাহলে ঘুম কেন আসবেনে না বল।
পাশ থেকে অয়ন বলে,, তোরা কি শুরু করলি বলতো? মানহা এখানে বসলে ধরে বাজে বকে যাচ্ছিস চুপ কর তো?
“আহ ভাইয়া তুমি ওকে বকছো কেন? কতদিন পর আমার ভাইটা আমার সাথে দুষ্টুমি করছে? আমার তো খুব মজা লাগছে। মিরাজ মানহার বড়ো চাচ্চুর ছোট ছেলে। মানহা মিরাজ কে নিজের ভাইয়ের থেকে কোনো অংশে কম দেখে না। সে সবসময় নিজের ভাই বলে পরিচয় করিয়ে দেয় সবাইকে।
” আচ্ছা যা করবি কর আমি কিছু কমু না ? চার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর বিড়বিড় করে বলে অয়ন।
কিচেন থেকে মানহার মা তানিয়া বেগম চিল্লিয়ে বলেন, সবাই টেবিলে বসো আমি খাবার দিচ্ছি। সবাই গিয়ে খাবার টেবিলে বসেন। মানহার মা আর চাচি দুজনে খাবার সার্ভ করছেন। তাদের বাসায় কাজের কোনো লোক নেই। বাসায় অল্প কিছু মানুষ এজন্য আর কাউকে রাখেন নি। তারা দুজায়েই সব কিছু মিলেতালে করেন।
আজ মানহার পছন্দের সব খাবার রান্না করছেন দুজনে মিলে। কতদিন পর মেয়েটা বাসায় আসছে। তাকে মন মতো আদর যত্ন না করলে হয়। মানহার মা মানহার প্লেটে বিভিন্ন আইটেম খাবার দিচ্ছে আর মানহা চুপচাপ খাচ্ছে। কোনো কথা বলছে না। খাওয়ার মাঝেই মানহার চাচ্চু মিলন খান বলেন,,
” মানহা মামনি তুমি এখন কি করবে বলে ঠিক করছো? দুই ভাইয়ের একটাই মেয়ে বলে মানহা সবার অনেক আদরের।
” মানহা খাওয়া থামিয়ে সকলের দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই তার পানে চেয়ে আছে। মানহা চাচ্চুর কথার উত্তর দেয়,, চাচ্চু আমি ভাবছি আমেরিকাতেই একেবারে সেটেল হব।
মানহার কথায় খান ভিলায় বিস্ফোরণের ন্যায় ফেটে পড়ে। বিস্ময়ে সকলে তাকায় মানহার দিকে, সবাইকে এমন করে তাকাতে দেখে বললো,
“কি ব্যাপার সবার হলো কি? মুখটা এমন করে আছো কেন তোমরা?
” মানহার বাবা মিনহাজ খান বলেন, এসব কি বলছো মামনি? এটা কিভাবে হয়? তুমি আমাদের একমাত্র মেয়ে আর তুমি যদি আমাদের সবাইকে ছেড়ে দুরে চলে যাও এটা কিভাবে মানব আমরা। এটা কিছুতেই হতে পারে না?
” প্লিজ আব্বু তোমরা আমাকে বাঁধা দিও না। এই শহরে আমি থাকতে পারব না। এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।
” কিন্তু মামনি তোমাকে ছাড়া আমরা কেউ ভালো থাকতে পারব না। প্রতি রাতে তোমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে ঘুমাতে হয় তোমার আম্মুর।
অনেক রাতও আছে না ঘুমিয়ে পাড় করে।
” মিলন খান ফের বলেন, মানহা মামনি তুমি এখানেই কিছু একটা করতে পারো। আর সেটা যদি না হয় তোমাকে বাঁধা দিব না তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো।
” কিন্তু ভাইজান?
” মিনহাজ এ ব্যাপারে আর কথা না বলাই ভালো। মামনি কয়েকটা দিন থাকুক এখানে তারপর এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।
মিলন খান খাওয়া শেষ করে নিজের শো রুমে চলে যান। তাদের অনেক বড়ো বড়ো কয়েকটা দোকান আছে। সেগুলোই দেখেন তিনি। অয়নের পড়াশুনা শেষ। এখন বাবার সাথে শো রুমের দেখা শুনা করেন। শো রুমে কয়েকজন কর্মচারী রাখা আছে।
মিনহাজ খান কোর্টে চলে যান। সময় পেলে তিনিও ভাইয়ের সাথে শো রুমে যান। আর মিরাজ এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
মানহা বাকি খাবারটুকু শেষ করে ছাদের উদ্দেশ্য রওনা হয়। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে নানান কথা,,,,
চলবে ইনশা আল্লাহ