গোধূলির শেষ প্রণয় পর্ব-১৩+১৪

0
6

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৩( অনুভূতি প্রকাশ)

অক্টোবরের এই সময়টা অন্যন্যা দিনগুলোর চেয়ে অনেকটা ভিন্ন। কখনো কাঠফাটা রোদ, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি,আবার কখনো শীতের হাতছানি। কখনও ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে তো কখনও ঝুপঝাপ করে। কখনও বিদ্যুৎ চমকায় তো কখনও শিলাবৃষ্টি হয়। ঠিক যেন একটি বৃত্তের কেন্দ্র বিন্দুর মতো। এই মাস টা অন্য মাস গুলোর থেকে ভিন্ন।

সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল, বিকাল গড়িয়ে গোধূলি বেলা। গোধূলি গড়িয়ে সন্ধ্যা। এখন গোধূলি বেলা চারপাশ টা লালচে আভায় ছড়িয়ে পড়ছে। খোলা আকাশের নিচে বসে আছে আবরার। কারোর জন্য অপেক্ষা করছে। হ্যাঁ সে তার প্রেয়সীর জন্য অপেক্ষা করছে। মনে পরে প্রেয়সীকে কাল রাতে ছোট্ট একটা মেসেজ দিয়ে রাখছে সে যেন তার সাথে দেখা করে। খুব ইম্পরট্যান্ট কথা আছে নাকি। প্রেয়সীকে নীল রঙের শাড়ি পরে আসতে বলছে। নীল রং তার খুব পছন্দের।

অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। বার বার হাত ঘড়ি দেখছে। কখন আসবে? অন্য সময় হলে কখন পার হয়ে যেতো আর এখন ঘড়ির কাটা যেন সরছে না।

নীল রঙের শাড়ি, গোল্ডেন কালারের হিজাব, মুখে মাক্স পরা রমণী আবরারের দিকে এগিয়ে আসছে। এক অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী নারী। যাকে দেখে আবরারের হার্টবিট দ্রুত উঠানামা করছে। বুকে হাত দিয়ে অপলক তাকিয়ে আছে প্রেয়সীর দিকে। একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে সে। মানহা আবরারের সামনে এসে দাঁড়ায়। আবরারের কোনো নড়চড় নেয়৷ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অস্বস্তি হয়। মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

” এই যে মিস্টার এমন হা করে কি দেখছেন। আমাকে আগে কখনও দেখেন নি।

মানহার কথায় কিছুটা লজ্জা পায় আবরার। নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। মাথা চুলকে বলে,,

” খুব সুন্দর লাগছে আপনাকে।
“ধন্যবাদ মুচকি হেসে বলে।

” আচ্ছা চলুন বসে কথা বলি। আবরার মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

দুজনে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে। আবরার কি দিয়ে কথা বলা শুরু করবে দ্বিধায় পরে যায়। বলতে গিয়ে থেমে যাচ্ছে বারবার। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। মানহা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করে আবরার কিছু একটা বলবে কিন্তু পারছে না। সেজন্য মানহা নিজেই বলে,

” মিস্টার আবরার তেজ আপনি ঠিক আছেন তো? আপনাকে দেখে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আপনি ঠিক নেয়।

” আব- আসলে–
” আপনি শান্ত হয়ে বসুন। কিছু কি হয়েছে। আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?

” আসলে খুব নার্ভাস ফিল হচ্ছে। কেমনে কি করব বুঝছি না।

” কেন? আর কি করতে চাইছেন।
“আপনি মেসেজ দিয়ে বললেন ইম্পরট্যান্ট কথা আছে। কি কথা বলুন।

“সেটাই তো বলতে চাচ্ছি কিন্তু পারছি না বিড়বিড় করে বলে

” কিছু বললেন
” না না।

হে আল্লাহ প্লিজ মনে শক্তি দাও। খুব ভয় করছে যদি মেনে না নেয়। আগে কখনো কোনো মেয়েকে প্রপোজ করিনি। কিভাবে করি যে মনে মনে বলে।

” আবরার আপনি চুপ করে আছেন কেন? কি বলার জন্য আসতে বলছেন সেটা তো বলুন। আর কতক্ষণ ওয়েট করবো।

” (…..) আবরার নিশ্চুপ। কিন্তু এভাবে চুপ করে থাকলে সে কখনই তার মনের কথা বলতে পারবে না। তাই এবার মনে মনে প্রস্তুতি নেয়। আবরার উঠে দাড়ায়। হঠাৎ আবরারকে দাঁড়াতে দেখে অবাক হয় মানহা। হঠাৎ উঠে দাড়ালো কেন? বিস্ময়ে মানহা নিজেও উঠে দাড়িয়ে বলে,

” কি হয়েছে আপনার? উঠলেন কেন?

এবার আবরার হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পরে। পকেট থেকে একটা ডায়মন্ড রিং বের করে মানহার সামনে ধরে বলে,,

” দেখুন মিস মানহা। আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে লাইক করি না। যা বলার সরাসরি বলি। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চায়। আপনাকে আমার জীবনসঙ্গী করতে চায়। আপনাকে খুব ভালো বেসে ফেলছি। আপনাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। সবসময় আপনার কথা মনে হয়। আমি ঠিক করে ঘুমাতে পারছি না, খেতে পারছি না, কোনো কাজে মন দিতে পারছি না, যাই করতে যাচ্ছি না কেন বার বার আপনার মায়াবি মুখ টা ভেসে উঠছে। এক কথায় আপনাকে ছাড়া আমার চলবে না। আবরার তেজ আপনাকে ছাড়া ভালো নেই। আপনাকে ছাড়া অসম্পূর্ণ। হবেন কি আমার অর্ধাঙ্গিনী। হবেন কি আমার সুখ দুঃখের সাথী। আপনাকে কখনও কষ্ট পেতে দেবো না। কোনো দুঃখ আপনাকে ছুতে পারবে না। সব সময় আগলে রাখবো টাস্ট মি ❝বনবিড়াল ❞। এক নিঃশ্বাসে বলে দম নেয় আবরার।

মানহা বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে আবরারের দিকে। লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে। কিসব যা তা বলছে। এটা কখনও সম্ভব নয়। মুখ চেপে ধরে দাড়িয়ে আছে মানহা। কোনো কথা বলার শক্তি পাচ্ছে না সে। কি বলবে সে। আশেপাশের মানুষ গুলো কেমন করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। মানহা কে চুপ থাকতে দেখে ফের বলে,,

” প্লিজ একসেপ্ট করুন। চুপ করে থাকবেন না। অনেক আশা নিয়ে এসেছি। ফিরিয়ে দেবেন না। এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকব। হাঁটু গেড়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।

” মানহা মুখ খোলে। সে যতই চুপ থাকবে ততই ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না। আবরার আপনি উঠে দাড়ান। এভাবে বসে থাকবেন না।

“মানহার কথা শুনে মুখ কালো হয়ে যায়। মানহার দিকে তাকিয়ে বলে আপনি একসেপ্ট না করা অবদি আমি দাঁড়াবো না।

” বোঝার চেষ্টা করুন আবরার। লোকে দেখছে আমাদের। কেমন করে তাকাচ্ছে দেখুন।

” দেখুক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আবরার কে আর কিছু বলতে দেয় না। হাত ধরে টেনে দাড় করিয়ে বলে,

” আমরা অন্য কোথাও গিয়ে কথা বলি। পার্কের নিরিবিলি জায়গায় চলুন। বলে হাটা ধরে মানহা,মানহা কে অনুসরণ করে পিছে পিছে যায় আবরার।

পার্কের এক সাইডে আসে দুজন। এখানে কোনো মানুষ জন নেই। আছে শুধু আবরার আর মানহা। দুজনে নিরব হয়ে দাড়িয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে মানহা বলে,,

” আবরার আপনি যেটা বলছেন সেটা কখনই সম্ভব না। আপনি আমার অতীত সম্পর্কে কিছু জানেন না। তাই হয়তো পাগলামি করছেন। যখন জানবেন তখন ছুটে পালাবেন।

” আমি সবটা জানি। আর জেনে শুনেই আপনাকে এই প্রস্তাব দিছি।

” মানহা চমকে জিজ্ঞেস করে, আপনি জানেন মানে? কিভাবে? আমি একজন ডিভোর্সি মেয়ে।

” সেটা যে ভাবেই হোক না কেন? আপনার অতিত নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি আপনাকে ভালোবেসেছি আপনার ভিতরের সৌন্দর্য দেখে।আপনার বাইরের সৌন্দর্য দেখে নয়। আপনার আত্মসম্মান বোধ দেখে। আপনি কখনও অন্যায় দেখে চুপ করে থাকবেন না। আপনাকে যে যা বলবে আপনি তাকে উচিত জবাব দেবেন। আমি এটাই চায়। এরপরেও কি আমাকে একসেপ্ট করতে সমস্যা আছে।

” হ্যাঁ।
” কি বলছেন। এত কিছু বলার পরেও।

” জ্বি। আপনি যদি আমাকে বিয়ে করেন তাহলে পস্তাবেন। আমরা যখন পায়ে ঠেলে জিনিস মাথায় তুলি তখন আমাদের কে পস্তাতেই হবে। আজ না হয় কাল।

” মানহা—– কি বলছেন আপনি এসব। আমি একজন এডাল্ট পার্সন। আমার বুঝার ক্ষমতা আছে। আমি কোনো আবেগে এসব বলছি না। কোনটা আবেগ আর কোনটা ভালোবাসা সেটা আমি বুঝি।

” আচ্ছা বেশ। আপনার কথায় মেনে নিলাম। কিন্তু আপনি আমার একটা কথার উত্তর দেন তো।

” জ্বি বলুন।

” আপনার পরিবার আমাকে মেনে নেবে। জেনে শুনে একটা ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ তার পুত্র বধু হিসেবে মেনে নেবে আপনিই বলুন।

” অবশ্যই। কেন নেবে না।

” মুখে বলা যতটা সহজ কাজে করা ঠিক তার থেকে কঠিন মিস্টার আবরার তেজ। আপনি বাস্তবতা বুঝার চেষ্টা করুন। আপনি আমার থেকে ভালো কাউকে ডিজার্ভ করেন। আমার মতো ডিভোর্সি মেয়েকে আপনার সাথে মানায় না।

” আমার পরিবার কে আমি চিনি। তারা আপনাকে মেনে নেবে। তাদের কোনো সমস্যা নেই। আপনি রাজি থাকলে আমি সব মেনেজ করে নেবো।

” আপনার পরিবারের সবাই মেনে নিলেও আপনার মা কখনোই মেনে নিতে পারবে না। কোনো মা’ই চায় না তার সন্তান কোনো ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করুক। তার একমাত্র ছেলেকে কখনোই এমন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দেবে না।

” আমার মা অনেক ভালো মানুষ। তোমার কথা বললে কখনই না করবে না। তোমাকে অনেক পছন্দ করে মা।

” আমি সেটা জানি আবরার। আন্টি খুব ভালো মানুষ। কিন্তু বললাম না আমি একটা ডিভোর্সি মেয়ে। সমাজে কেউ ডিভোর্সি মেয়ে মেনে নেয় না। আমি কখনোই আপনার লাইভ টা নিজ হাতে শেষ করতে পারবো না। প্লিজ আপনি চলে যান। আর কখনও আমার সামনে আসবেন না।

” মানহাাা—-
এভাবে বলতে পারছেন। আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না করুন গলায় বলে ।

” আমি আর কোনো কথা বলতে বা শুনতে চায় না। ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করে নিন। আমার আশায় থাকাটা বোকামি ছাড়া কিছুই না। ভালো থাকবেন বলে চলে যায় মানহা।

মানহার যাওয়ার পানে একাধারে তাকিয়ে থাকে আবরার। চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। কেউ দেখার আগেই সেটা আড়াল করে নেয়। সে হেরে যেতে পারে না। মানহার মন সে জয় করেই ছাড়বে। আপনি কাজটা ঠিক করলেন না বনবিড়াল। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল টা তো বাঁকা করতেই হবে বলে রহস্যময়ী হাসে।

চলবে ইনশা আল্লাহ

#গোধূলির_শেষ_প্রণয়
#লেখনিতে_ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি
#পর্ব_১৪

বিধস্ত অবস্থায় বাসায় ফেরে আবরার। নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। যেখানে সব মেয়ে তার জন্য পাগল সেখানে একটা মেয়ে তাকে পাত্তা দিলো না। ভাবতেই অবাক করা বিষয়। সেদিনের পর আর মানহার সাথে দেখা হয়নি আবরারের। অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে আবরার। খাওয়ার সময় পর্যন্ত পাচ্ছে না। আজ সন্ধ্যায় একটা মিটিং আছে তাদের। সেটার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই ডিলটা পেলে তাদের কোম্পানির জন্য অনেক ভালো হবে। সেজন্য দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা তার পিছে ব্যয় করছে। সমস্ত ফাইল নিজে চেক করছে। এই ডিলটা কিছুতেই হাত ছাড়া করতে চায় না সে।

সন্ধ্যা সাতটায় একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে পৌঁছায় আবরার আর তার পিএ ইশান। আবরার নিজে এই ডিলটা হেন্ডেল করবে বলে কাউকে এর দায়িত্ব দেয়নি । সেখানে আগে থেকেই তাদের জন্য অপেক্ষা করছে চৌধুরি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যানের মেয়ে তিশা চৌধুরী। আবরার সেখানে গিয়ে দাঁড়ালে তিশা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,

” মিস্টার তেজ প্লিজ দাড়িয়ে না থেকে বসুন।

” আবরার ধন্যবাদ বলে নিজের সিটে বসে পরে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,, চলুন তাহলে কাজের কথায় যাওয়া যাক। আমার হাতে বেশি সময় নেই।

” মিস্টার তেজ ডিল সাইন করার আগে আপনার সাথে অন্য একটা ডিল করতে চায়। যদি আমার প্রথম ডিলে রাজি হন তাহলে আমি পেপারে সাইন করব তার আগে নয় বলে মুচকি হাসে।

” তিশার কথায় অবাক হলেও কিছু বলে না। চুপ করে থেকে বলে আচ্ছা কি ডিল বলুন।

” শুনুন আমি ভনিতা করা পছন্দ করি না। তাই সোজাসুজি বলছি প্রথম দেখাতেই আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। আপনাকে আমার লাইফ পাট্নার করতে চায়।

” হোয়াটটট—— রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। রাগ কন্ট্রোল করে বলে
আপনাদের সাথে কথা কাজ তো এটা ছিল না মিস তিশা।

” দেখুন সেটা তো আমিও জানি। বাট এতদিন আপনার ব্যপারে অনেক কিছু শুনেছি। বাট আপনাকে কখনও সামনাসামনি দেখা হয়নি। অবশ্য দেখা হতো যদি আমি দেশে থাকতাম। এখন বলুন আপনি কি রাজি আছেন।

” পাশ থেকে ইশান কিছু বলতে গেলে ইশারায় থেমে যেতে বলে আবরার। বিষয়টা সে দেখছে।

” মিস তিশা চৌধুরী এটা কখনই পসিবল নয়। মানুষ কে ভালো লাগতেই পারে তাই বলে সবাইকে তো আর লাইফ পাটনার করা যায় না তাচ্ছিল্য হেসে বলে।

” আপনি কি মিন করতে চাইছেন মিস্টার তেজ। আপনার আর আমার যদি বিয়ে হয় তাহলে দুই পরিবারের ই ভালো হবে। বিশেষ করে আমাদের বিজনেসে অনেক লাভ হবে।

” আমরা যে বিষয়ে এখানে এসেছি সেটা না করে অন্য প্রসঙ্গ টেনে না আনায় ভালো না মিস তিশা।

” সরি মিস্টার তেজ আপনাদের কোম্পানির সাথে আমি ডিল করতে পারবো না। আপনি যদি আমার শর্তে রাজি থাকেন তাহলেই আমি সাইন করব।

” ওকে ফাইন। লাগবে না আপনাদের সাইন করা। আমি ও করতে চায় না আপনাদের মতো মানুষদের সাথে।

” ভেবে বলছেন তো। আপনাদের কোম্পানির কিন্তু অনেক ক্ষতি হবে।

” সামান্য এতটুকু ক্ষতি তে আমাদের কোম্পানির কিছু হবে না ইন শা আল্লাহ। ভালো থাকবেন আসি। বলে চলে যেতে গিয়ে থেমে যায়। পিছে ফিরে বলে আর একটা কথা শুনে রাখুন মিস তিশা চৌধুরী। আবরার তেজ কখনও কারোর কাছে মাথা নত করে না বলে হন হন করে রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে যায় আবরার আর তার পিএ।

আবরার চলে গেলে স্ব জোরে টেবিলে ঘুষি মেরে দেয় তিশা। রাগেতে গিড়ে গাট্টা ছুুটে যাচ্ছে তার। তাকে অপমান করা। তিশা চৌধুরী কে অপমান করা। এটা মেনে নেওয়া যায় না।। এর ফল ভালো হবে না মিস্টার তেজ ।

তিশার পিএ আরাফ বলে ম্যাম প্লিজ শান্ত হন। আপনাকে সবাই দেখছে। কেমন করে তাকিয়ে আছে দেখুন। তিশা চারপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে। টেবিল থেকে ব্যাগ নিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে যায় তিশা।


নিরিবিলি গাড়ি ড্রাইভ করছে আবরার। তার পাশে চুপ করে বসে আছে ইশান। সে তার স্যারকে দেখছে। এতকিছু চুপ চাপ কেমনে মেনে নিলো। মেয়ে টাকে আরেকটু দিল না কেন? সে হলে তো আচ্ছা করে বকে দিতো। তার ভাবনার মাঝেই বলে,

“ইশান কিছু বলবে?
” ইশান চমকে ওঠে সে যে কিছু বলতে চায় সেটা স্যার কিভাবে বুঝলো?

” কি হলো মুখটা এমন করে রাখছো কেন? গার্লফ্রেন্ডে কি ছ্যাকা দিছে?

” না স্যার। আসলে স্যার একটা কথা বলার ছিল।

” হ্যাঁ বলো।
” স্যার মেয়েটাকে রিজেক্ট কেন করলেন?

” কেন করছি সেটা বড় বিষয় নয়। মেয়েটাকে দেখে তোমার পছন্দ হলে আমাকে বলতে পারো তার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দেবো।

” স্যার এসব আপনি কি বলছেন। এমন ছেঁচড়া, গায়ে পড়া মেয়েকে আমার কি ভাবে পছন্দ হতে পারে। দেখলেন না মেয়েটা কেমন সর্ট ড্রেস পরে আসছে। এমন মেয়েকে আমার ভালো লাগে না। আর প্রথম দেখায় কিভাবে আমাদের সাথে এমন করতে পারলো বিষয়টা ভেবে দেখছেন।

” বাহ! তোমার তো দেখি সব দিকে খেয়াল আছে। গুড জব। মেয়েটার ব্যপারে আর একটা কথাও বলবে না। যদি বলো তো দিনার সাথে ব্রেকাপ করিয়ে দেব।

” প্লিজ স্যার এমনটা করবেন না। আমি আর একটা কথাও বলবো না এই মুখে হাত দিলাম বলে আঙুল দিয়ে ঠোঁট চেপে রাখে।

আবরার ইশানের অবস্থা দেখে মুচকি হাসে। ডিলটার জন্য তার অনেক খারাপ লাগে। দুইটা দিন খেয়ে না খেয়ে কাজ করছে। অবশ্য মানহার জন্য এমন হাজার টা ডিল চলে গেলেও তার কিচ্ছু যায় আসে না। মানহার কথা মনে পরলে মুচকি মুচকি হাসে।

আবরার কে হঠাৎ করে হাসতে দেখে ইশানের খটকা লাগে। স্যার কেন হাসছে? নিশ্চিত কিছু একটা ঘাপলা আছে। ইশান কিছুটা সাহস জুগিয়ে বলে,

” স্যার যদি কিছু মনে না করেন আর একটা কথা বলবো। ইশানের কথা শুনে আবরার ইশানের দিকে তাকায়। আবরারের তাকানো দেখে বলে থাক স্যার কিছু বলছি না।

” কি বলবে বলো।
” সত্যি বলবো স্যার?
” ভনিতা বাদ দিয়ে বলো ইশান।
” স্যার আপনি কি প্রেমে পড়েছেন?

ইশানের কথায় গাড়ি জোরে ব্রেক করে। ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে কি বললে তুমি?

” আব- আস-লে স্যার। আপনাকে দেখে মনে হলো আপনি প্রেমে পড়েছেন। যার প্রেমে পড়ছেন তার কথা মনে করে মুচকি মুচকি হাসছেন৷

” ওহ।

আবরারের ব্যবহারে টাস্কি খেয়ে যায় ইশান। শুধু ওহ বললো। ব্যপার টা কি? এখন যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে তার কপালে বহুত দুঃখ আছে তাই চুপ থাকা শ্রেয় বলে মনে হয়।









নিরা কখন থেকে মানহার জন্য অপেক্ষা করছে। মানহা আসলে তারা বাসা থেকে বের হবে। এখন মানহা কে নিয়ে তাদের বাসায় যাবে। তার কিছু বই সেখানে আছে। মানহা যেতে রাজি হয় না কিন্তু নিরার জেদের কাছে হার মানতে হয়। তাকে ছাড়া সে যাবে না। বিকালের মধ্যে চলে আসবে। মানহা নিজের রুমে তৈরি হচ্ছে। শুধু মাত্র অয়ন ভাইয়ের জন্য সেখানে যেতে হচ্ছে৷ শো রুমে অনেক ভিড় সে নাকি যেতে পারবে না। আজ ফ্রাইডে হওয়ায় চাপ বেশি। ছুটির দিনে সবাই কেনাকাটা করতে যায়। অগত্য রেডি হয়ে নিচে নামে মানহা। দেখে নিরা আর তানশি দুজনে তার জন্য অপেক্ষা করছে। তিনজনে বেড়িয়ে যায় বাসা থেকে উদ্দেশ্য তাদের অয়নের শশুর বাড়ি।

মানহা নিরা তানশি তিনজনে জর্জেট থ্রি পিস পরছে তার সাথে ম্যাচিং হিজাব। তিনজনেরই মুখ ঢাকা। কেউ দেখলে চেনার উপায় নেয় তারা কারা। সেজন্য তিনজনই ভিন্ন রকম সেজে বের হইছে। তারা গাড়ি নেয় নি। গাড়ি বাবা আর চাচ্চু নিয়ে গেছে। তাদের একটাই গাড়ি। আর দুইটা বাইক।

তিনজনে একটা অটোতে উঠে পরে। অটোওয়ালা জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবেন। নিরা উত্তরা বলে। লোকটা নিজের মতো অটো চালাতে ব্যস্ত। অটোর ভিতর তিনজনে গল্প করতে করতে পৌঁছে যায় নিরাদের বাসার সামনে। অটো থেকে নেমে পরে তিনজন। নিরা ভাড়া মিটিয়ে তার সাথে আসতে বলে।

হাঁটতে হাঁটতে মানহার মনে পরে যায় সেদিনের কথা। সেদিন মার্কেটে যাওয়ার কথা থাকলেও আবরারের জন্য আর যাওয়া হয় না। সেদিনের পর আর দেখা হয়নি তাদের। নিরার ডাকে ভাবনার ছেদ পড়ে মানহার। নিরার পিছন পিছন বাড়ির ভিতরে ঢোকে।

সেখানে গিয়ে আরেক বিপত্তি ঘটে। যদি আগে থেকে জানতো এমন কিছু হতে পারে তাহলে কখনোই আসতো না মানহা।

চলবে ইনশা আল্লাহ

[ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]