সংস্পর্শে_তুমি পর্ব-০২

0
9

#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_২
#নাহিদা_ইসলমা

শুভ্র সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে ই তার সাথে মজা শুরু করে সবাই, কিন্তু শুভ্র খুব ই গম্ভীর। সবাই ভারিরা এসে জোর করে শুভ্র আর অহনাকে এক সাথে বসায়।
–এতো দূরে বসছো কেনো শুভ্র, রাতে তো অনেক কাছাকাছি ছিলে যায় প্রমাণ ঠোঁটের কোনে আছে। এখন বউকে জড়িয়ে ধরে বসতে কি সমস্যা। শুভ্র পকেট থেকে সিগারেট বের করে মুখে নিয়ে লাইটার দিয়ে সিগারেটে আগুন লাগাতে লাগতে বললো,

–এখন সিগারেট খাওয়া সময় বউকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকার নয়।
এই বলে সবার মাঝখান থেকে উঠে চলে গেলো।

শুভ্রে মা শায়লা রহমান। বাবা আরাফাত রহমান। শুভ্র দুই ভাই এক বোন। শুভ্র,তিয়াস,মৌ। শুভ্র দেখতে বেশ সুন্দর, তার চাপ দাড়িগুলো মুখের সৌন্দর্য তিনগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। শুভ্রদের এসআর গ্রুপ অফ কোম্পানি । নিজস্ব অনেকগুলো আউলেট আছে যেখানে তারা নিজেদের ডিজাইন করা ড্রেস সেল করে। শুভ্রের এসআর কোম্পানি বেশ নাম ডাক আছে। তারা প্রত্যেক বছর নিজেদের কোম্পানি বেস্ট ডিজাইনের ড্রেস নিয়ে ফ্যাশন শো এর আয়োজন করা হয়। এখানে শুধু এসআর কোম্পানি নয় আরো বেশ কিছু বড় বড় কোম্পানি অংশগ্রহণ করে। বছরের একটা আকর্ষণ হলে এসআর কোম্পানি এই পোশাক প্রদর্শনী। এসআর কোম্পানি শুধু ড্রেস নয় মেকআপ নিয়ে ও কাজ করছে। কোম্পানি প্রতিষ্ঠাতা শুভ্রের দাদা আজাদ রহমানে বংশগত ভাবে তার বাবার উপর দায়িত্ব ছিলো সব এখন বছর তিনেক যাবত শুভ্রের উপর পড়েছে।

শায়লা রহমান এতোক্ষণ শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করছিলো। এখন মনে হচ্ছে কথা বলতে হবে নয়তো এই ফকিন্নি মেয়ে শায়েস্তা করা যাবে না।

___ সবার আহ্লাদ শেষ হলে এখন এই মেয়েকে আমার রুমে পাঠাও।
শায়লার এমন গর্জনে অহনা ভয় পেয়ে যায়। এই বাড়ির সব মানুষ ই কি এমন। ব্যবহার আস্তাগফিরুল্লাহ। আস্তে বললে কি মানুষ শুনতে পায় না।
–এই মেয়ে বিরবির করে কি বলছো হ্যাঁ। আমার রুমে আসো।
অহনা বাধ্য মেয়ের মতো রুমে যেতে ই দেখলো শুভ্রে ফুপু হামিদা বেগম আর শুভ্রের মা বেডে পিঠ লাগিয়ে সামনের দিকে পা লম্বা করে দিয়ে বসে আছে। দুজন ই পান চিবাচ্ছে। শয়লা পান চিবাতে চিবাতে বললো —যাও বিয়েতে কি শাড়ি গহনা পেয়েছো সব আমার কাছে নিয়ে এসো।
অহনা বাধ্য মেয়ের মতো উপরে গিয়ে রুমে প্রবেশ করতে ই শুভ্রকে বেলকনিতে দেখলো। তার লাগেজ থেকে শাড়ি গয়নাগুলো বের করতে যাবে তখন তার স্মার্ট ফোনটা দেখতে পেলো। ইস এই ফোনটা কতকষ্ট করে টিউশনি করে কিনেছিলো, এইচএসসি পরীক্ষার পর। হাত থেকে পড়ে ফোনের ডিসপ্লের মাঝে লম্বালম্বি একটা দাগ পড়ে গেছে তাও চলে তো। ডিসপ্লের দিকে তাকাতে ই দেখলে কল আসছে। উপর নাম লিখা নাবিল ভাইয়া। দেখে ই মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। কল ধর ই হ্যালো বলে কান্না করে দিলো। ওপাশ থেকে নাবিল বলছে
–তুই ঠিক আছিস তো অহনা। আর তুই কেন অবন্তীর বরকে বিয়ে করতে গেলি। কান্না করছিস কেনো?
অহনা কথাগুলো বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো তাই স্পিকার বাড়িয়ে দিলো। স্পিকার বাড়িয়ে দিতে ই নাবিল বলছিলো,
–তুই চলে আস এই বিয়ে আমি মানি না তুই যেখানে সুখি না সেখানে……
কথাটা শেষ করতে পারেনি তার আগে ই শুভ্র মোবাইল অহনার হাত থেকে ছুড়ে মারে। অহনার দুইহাতে ধরে দেওয়ালে সাথে চেপে ধরে। অহনার ঠোঁটের গুলো নিজের দখল নিয়ে কাটা অংশ কামড় বসিয়ে দেয়। ব্যথায় অহনার দুচোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। পানির সাথে কাটা অংশ থেকে রক্ত ও ঝড়ছে। অহনা কিছুক্ষণের জন্য পাথর হয়ে যায়। কি হলো এটা।শুভ্র হাত ছেড়ে অহনার পেটে সাইড করে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে বলে।
–তোর সাহস কি করে হয় অন্য ছেলের সাথে কথা বলার। আর কে তোর প্রেমিক। তোকে যেতে বলছে। কি বলেছিস যে বাসর ঘরে আমার স্বামী আমাকে ছুঁয়ে ও দেখিনি। আমি তোমার কাছে যেতে চাই। এমন ব্যবস্থা করবো যেনো কোথাও যেতে না পারিস। আমার ভালোবাসকে আমার থেকে দূরে নিয়ে তোর ভালোবাসা নিয়ে ভালো থাকবি এটা কল্পনা করিস কিভাবে?
অহনার এভার বেশ রাগ হলো জোরে চিৎকার করে বললো,
–ছাড়ুন আমাকে আর আপনি পাগল হয়ে গেছেন। কি বলছেন এসব। আমার কোনো প্রেমিক নাই এটা আমার কাজিন ছিলো। আপনি মানুষের কাতারে পড়েন তো।
শুভ্র অহনাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে বললো
–না পড়ি না তোরা আমাকে অমানুষ বানিয়ে দিয়েছিস।
কথাটা বলে ই রুম থেকে চলে যায় শুভ্র। অহনা বেশ সুন্দরী এতোদিন সে খেয়াল করেনি শুভ্র। অহনার ঠোঁট থেকে রক্ত পড়া দেখে একটু ও খারাপ লাগেনি। বরং মনে হয়েছে ভেতরে যে আগুন জ্বলছিলো রক্ত দেখে হালকা একটু পানি পড়েছে সেই আগুনে।
অহনা ফ্লোরে শুয়ে কাঁদছে। এ কেমন জীবন। মোবাইল টুকরোগুলো এক করে লাগাতে ই মোবাইল কোনো রকমে চালু হয়েছে। এটা দেখে একটু ভালো লাগছে। এতো কষ্ট করে টিউশনি করিয়ে কয়েক মাস যাবৎ টাকা জমিয়ে কিনেছিলো ফোনটা।যাক চালু তো হয়েছে। কথা বলতে পারলে ই হলো। কোনো রকম শুয়া থেকে উঠে, ঠোঁটে জমে থাকা রক্তগুলো টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলে। শাড়ি গয়নাগুলো নিয়ে নিচে শ্বাশুড়ি রুমে যেতে ই দেখলো একজন মহিলা শায়লার পা ধরে বসে আছে,আর বলছে।

–গিন্নি মা আমি এই বাড়িতে কাজ করে তো আমার সংসার চালাই। আপনি আমাকে বের করে দিলে আমি কোথায় যাবো কি খাবো আর পাঁচটা সন্তান নিয়ে আমার পথে বসতে হবে।

–পা ছাড় রহিমা তোর এই নোংরা হাতে আমার পা ধরবি না। তোর শরীর থেকে গন্ধ আসছে। দূরে যা।
রহিমার সাথে এমন ব্যবহার দেখে অহনা চুপ থাকতে পারলো না বললো,
–মা উনার হাত তো নোংরা হয় আপনাদের রান্না করে খাওয়াতে গিয়ে ই। আপনাদের বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ই। আপনাদের ফরমেশ খাটতে গিয়ে ই।
শায়লা বেগম মুখে হাত দিয়ে বললো,
–বাবা কি কথারে বাপু। রহিমা যা আমার পা না ধরে বউয়ের পা শক্ত করে ধর তার জন্য ই তোর এই বাড়ির কাজ বন্ধ তোর রোজি রোজকার ও বন্ধ। সে এসেছে বলেই তো তোকে কাজ থেকে ছাড়ালাম। মুখে যেমন খাইফুটে কাজে ও কি তুমি তেমন ই নাকি। শুধু মুখে ই।
রহিমা দুইচোখে পানি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার দিকে তাকিয়ে অহনার বেশ কষ্ট হচ্ছে।

—বাপের বাড়ি তো এসব জিনিস দেখোনি তাই আমার কাছে নিয়ে আসতে কষ্ট হচ্ছিলো নয়তো এই এক ঘন্টা পর আসো। দেখি তোমার কতখান শাড়ি আর গহনা হয়েছে।

কথাটা বলে ই হাত থেকে ছো মেরে কাপড়গুলো নিয়ে নেয়।
–একটা ই শাড়ি।
অহনা মাথা নিচু করে বললো,
–বাকিগুলো গিফট বক্সে এখনও খুলে দেখা হয়নি। আপনার পাশের রুমে রাখা আছে।
শায়লা বেগম হেসে বলছে,
–ঐগুলোর কথা ভুলে যাও। কানে হাতে গলায় থাকা জিনিসগুলো আমাকে খুলে দিয়ে যাও। নাকেরটা খুলো না এটা তোমার কাছে থাকুক।

অহনা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। বাবা মা ছোট বেলায় মারা গিয়েছে তারপর বড় চাচার কাছে মানুষ হয় অহনা। চাচার এক ছেলে দুই মেয়ে। চাচার মুদিখানার দোকান। বেচে বিক্রি নেই বললে ই চলে। বাকি নিয়ে নিয়ে মানুষ একেবারে দোকানের অবস্থা খারাপ। চাচি সারাদিন অহনাকে নিয়ে চাচার সাথে ঝগড়া করতো। অহনা তাদের সংসারে বেশি।
________________________________
শ্বাশুড়ি আদেশ মতো বাসার সব কাজ শেষ করে রুমে ডুকতে ডুকতে প্রায় একটা বাজে। রুমে প্রবেশ করতে ই দেখলো শুভ্র কাঁপছে, অহনা দৌড়ে শুভ্রের কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিতে ই দেখে গায়ে প্রচন্ড জ্বর উঠেছে। বেড সাইড থেকে কাঁথাটা শুভ্রের গায়ে দিতে ই বুঝতে পারলো বিরবির করে কিছু একটা বলছে। শোনার জন্য মুখের কাছে যেতে ই শুভ্র অহনাকে জড়িয়ে ধরেছে। জড়িয়ে ধরে বলে
–প্লিজ আমার থেকে যেও না, আমাকে জড়িয়ে ধরো নয়তো আমার এই কাঁপুনি বন্ধ হবে না।
শুভ্র প্রচন্ড কাপছে অহনাকে কি করবে বুঝতে পারছে না।জ্বরের তাপ ও অনেক।
–আপনি মনে হয় জ্বরের ঘোরে আবলতাবল বকছেন।আমি আপনার জন্য ঔষুধ এনে দিচ্ছি খেয়ে নিন। আশা করি জ্বর কমে যাবে।
-প্লিজ তুমি যেও না আমাকে জড়িয়ে ধরো।
অহনা আধশোয়া অবস্থায় শুভ্রের উপর শুয়ে আছে। শুভ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে……….

চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]