#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_৩
#নাহিদা_ইসলম
আপনি মনে হয় জ্বরের ঘোরে আবলতাবল বকছেন।আমি আপনার জন্য ঔষুধ এনে দিচ্ছি খেয়ে নিন। আশা করি জ্বর কমে যাবে।
-প্লিজ তুমি যেও না আমাকে জড়িয়ে ধরো।
অহনা আধশোয়া অবস্থায় শুভ্রের উপর শুয়ে আছে। শুভ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।
অহনা বেশকিছু এভাবে থাকার পর নিজেকে ছাড়াতে সক্ষম হলো। কিছু ই বুঝতে পারছে না হঠাৎ এমন জ্বর হওয়ার মানে কি। রাতে অনেক হয়েছে সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে কাকে ডাকবে এখন। মৌকে তো ডাকা যাই সেই হ্যাল্প করতে পারে। অহনা দ্রুত মৌয়ের রুমে গিয়ে দেখলো মৌ মোবাইল নিয়ে বসে আছে ফুল মনোযোগ মোবাইলে। কারো সাথে চ্যাটিং করছে। রুমে কেউ প্রবেশ করেছে তার সেদিকে কোনো খেয়াল ই নেই।
–মৌ তুমি কি বিজি, চলে যাবো?
অহনাকে দেখে হাসি মুখে বললো,
–কি ব্যাপার, জামাই ছেড়ে আমার কাছে কি হুম। কি চাই আমার কাছে।
বলে ই হাসছে মৌ।
–মৌ তোমার ভাইয়ার অনেক জ্বর। আমি বুঝতে পারছি না কি করবো।
মৌ কথাটা বেশি পাত্তা দিলো না আগে ন্যায় মোবাইল হাতে নিয়ে বললো,
–টেনশন নিও না। এটা শুভ্র ভাইয়ার অভ্যেস প্রায় ই এমন জ্বর আসে। তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।
অহনা আর কথা বাড়ালো না। রুমে গিয়ে ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়লো।
সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে চিৎকার চেচামেচি শব্দে। উঠে দ্রুত নিচে যেতে ই দেখলাম আমার শ্বাশুড়ি রেগে আগুন হয়ে আছে। আমাকে দেখা মাত্র ই আগুনে যেনো ঘি পড়েছে।
—নবাবের বেডি আমাকে বলতেন আপনাকে বেড টী দিয়ে উঠতাম ঘুম থেকে। বাসায় এতগুলো মানুষ কি না খেয়ে থাকবে। কালকে যে রহিমা চলে গেছে তা কি চোখে দেখতে পাওনি।
–মা আমি এক্ষুনি আসছি। কি কাজ করতে হবে বলুন আমি সব করে দিচ্ছি।
—এই না না এদিকে আসবে না। হাত মুখ ধুয়ে গোসল সেরে নিচে আসবে। আজকের মতো মাফ করছি। কালকে থেকে যেনো ভুল না হয়।
ঘড়ির দিকে তাকাতে ই দেখলাম আটটা বাজে। এতোক্ষণ ঘুমালাম টের ই পেলাম না। রুমে যেতে ই দেখলাম শুভ্র ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়েছে।
–এই মেয়ে আমার তাওয়াল টা দে তো।
আমি তাওয়াল খুজে হাতে নিয়ে বাথরুমে দরজার সামনে দাড়িয়ে বললাম,
–আপনার তাওয়ালটা নিন।
–ভেতরে নিয়ে আয়
উফ যেখানে ভয় পাই সেখানে ই কেনো বার বার যেতে হয়। চোখ বন্ধ করে ওয়াশরুমে ডুকতে ই তাওয়ালটা রেখে চলে আসতে গেলে ই পা পিছলে নিচে পরে যেতে ই মা বলে চিৎকার দিয়ে উঠি। কোমড় মনে হচ্ছিল কয়েকখন্ড হয়ে গেছে। ঝর্ণার পানি পড়ছে। আমি পুরো ভিজে যাচ্ছি। উপর দিকে তাকাতে ই দেখলাম শুভ্র হাসছে। শুভ্রের চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে আর হাসছে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। দেখতে সুন্দর হলে ও ভেতরে তার সব সময় পৈশাচিকতা বিরাজ করে। শুভ্র আস্তে আস্তে আমার দিকে আসতে ই আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। আমার মুখের কাছে এসে বললো
–কেমন লাগছে তোর প্রতিটি ব্যথায় আমার হৃদয়ে প্রশান্তির সৃষ্টি করে।
শুভ্রের প্রতিটি কথা আমার ঠোঁটকে স্পর্শ করে বলেছে। এ কেমন কথা বলার ধরন। শুভ্র যখনই এধরণের আচরণ করে আমি তখন ই ফ্রিজ হয়ে যায় মনে হয়। শুভ্র ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমি শাওয়ার শেষ করে ওয়ায়রুমে দরজা খুলে দেখলাম রুমে কেউ নাই। দরজা ও চাপানো তাই তাওয়েল পড়ে ই বের হয়ে যাই। এক হাতে তাওয়েল ধরে আছি অন্য হাতে লাগেজ থেকে শাড়ি বের করছি হঠাৎ শুভ্র রুমে প্রবেশ করলো। আমাকে এ অবস্থায় দেখে শুভ্রের চোখগুলো রসগোল্লা মতো বড় বড় করে রেখেছে। লজ্জায় আমার লাগেজের ভেতরে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছিলো।
______________________________
শুনছো অহনার শ্বশুর বাড়ি তো বেশ বড়লোক। ওদের দাওয়াত দিকে জামাই আসলে তো আমাদের টাকা দিবে।
অহনার চাচি রাসু বেগমের কথা শুনে অহনার চাচা রমজান বিরক্ত নিয়ে বললো,
–মরলে কবরে তোমাকে টাকা দিয়ে দিতে হবে নাকি এটা এখন ই বলে গেলে ভালো হতো।
এমন কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে রাসু।
–তোমার এই আদরের ভাতিজি যে টাকা আমাদের নষ্ট করেছে তার হিসাব রেখেছো?
–তাকে দিয়া তো তুমি কম কাজ আর করাও নাই। নিজে তো খালি শরীর হাতির মতো বানাইছো। তোমারে দেখে তো মনে হয় না কোনো অংশে তুমি অভাবে আছো।
দুজনেই মধ্যে এসব নিয়ে ই কথা হচ্ছে মা বাবার এমন ঝগড়া দেখে তমা,জিনিয়া রুমে প্রবেশ করলো।
মেয়েদের দেখে রাসু বললো,
–অহনার মতো এমন বড়লোক জুটাতে পারিস না বিয়ে দিয়ে শান্তি হতাম। তোদের বিয়ের চিন্তায় আমার ঘুম হারাম।
–এই লোভ তোমাকে একদিন ধ্বংস করে দিবে রাসু। আমার কথা মিলিয়ে নিয়ো।
দুপুরে অহনা একা হাতে ই সব রান্না সামলাচ্ছে। চিংড়ি ভুনা, হাঁসের মাংস, দেশি মুরগি, সরিষা পাবদা, আর দই কাতলা রান্না করছে। সেই সকাল থেকে শুরু করেছে। শরীরে আর মানছে না। হাস পরিষ্কার করতে গিয়ে যান বেরিয়ে গেছে। বাকিগুলো ও কাটা ধোয়া সব তার উপরে ই। টেবিলে খাবার দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে। তখনকার কথা মনে পড়তে ই লজ্জায় অহনার মুখ লাল হয়ে যায়। যদিও শুভ্র তখন দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে ই অফিসে চলে গিয়েছিলো তাই আর সামনে পড়েনি।
দুপুর তিনটে,
শুভ্র বেশকিছু ডিজাইন দেখছে যেগুলো এভাব ফ্যাশন শোয়ের মেইন আকর্ষণ হবে। ড্রেসগুলো বেশ সুন্দর তবে দুই চারটে ডিজাইন ছাড়া সব ই পুরাতন ডিজানের মতো ই লাগছে। হঠাৎ শুভ্রের হাতে টান পড়তে ই দেখলো লামিয়া।
–এখনো কি করছো শুভ্র চলো লাঞ্চ টাইম তো চলে যাচ্ছে। চলো আমরা লাঞ্চ করে আসি।
শুভ্র হাসি মুখে উত্তর দিলো,
তুমি ডাইনিংয়ে গিয়ে বসো আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আসছি।
–আচ্ছা আমি যাচ্ছি তুমি এসো।
শুভ্রের কেবিন থেকে বের হয়ে লামিয়া নিজের মেকআপ আর লিপস্টিক ঠিক করছে। পারফিউম টা আমার দিয়ে নিলো। কারণ তাকে সুন্দর লাগতে হবে ততটা সুন্দর ঠিক যতটা সুন্দর লাগলে শুভ্র তার পরি আকর্ষিত হবে। শুভ্র একটা নয় চারটি বিয়ে করলো ও চার নাম্বার বউটা সে হতে চাবে। অবন্তী কতভাবে বুঝিয়ে শুভ্র জীবন থেকে সরিয়েছে ভেবে ছিলো অবন্তী চলে গেছে শুভ্র তাকে বিয়ে করবে কিন্তু বিয়ে করলো কাকে অহনাকে সব প্ল্যান শেষ হয়ে গেলো। লামিয়া শুভ্রের ফুপু হামিদা বেগমের মেয়ে। এই এস আর গ্রুপের সকল মেয়ে স্টাফ তার আন্ডার কাজ করে। হামিদা বেগম সবটা জানে তাই অহনা তার সহ্য হয়না।
রাত দশটা বাজতে ই শুভ্র বাসয় প্রবেশ করে। অহনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আচড়াচ্ছে। শুভ্র রুমে প্রবেশ করতে ই চুল আঁচড়ানো গতি বাড়িয়ে দিলো। শুভ্র সিগারেট নিয়ে হ্যান্ড ওয়াচ টা খুলে ড্রেসিং টেবিলে রাখতে গেলে ই দেখলো অহনার মোবাইলে কল এসেছে স্কিনের উপর ভাসছে অবন্তী নাম। দেখে ই শুভ্রে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। অহনাকে টান দিয়ে দেওয়ার সাথে এক হাত দিয়ে চেপে ধরলো অন্য হাত দিয়ে অহনার পেটে হাত দিয়ে শাড়িটা সাইড করে জলন্ত সিগারেট চেপে ধরলো। কানের কাছে ঠোঁট লাগিয়ে বললো, দুজন কি প্ল্যান করছিস আমাকে মেরে ফেলার।
চলবে,
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]