#সংস্পর্শে_তুমি
#পর্ব_৬
#নাহিদা_ইসলম
অহনা সব কিছু গুছিয়ে উপরে যেতে ই দেখলো শুভ্র বসে ফোন দেখছে। অহনা গিয়ে দরজা বন্ধ করতে ই তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ শুভ্র দাড়িয়ে অহনার দিকে আসতে লাগলো। আস্তে আস্তে অনেক কাছে চলে আসতে ই অহনা চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রাখার পর বাম চোখটা একটু খুলে দেখে শুভ্র সামনে নাই। দুচোখ খুলতে ই দেখলো শুভ্র কিছু একটা ধরার চেষ্টা করছে। সাদা দেওয়া নীল আর কালো রঙের প্রজাতি দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। শুভ্র এটা ই ধরার চেষ্টা করছে।
অহনা ফ্লোরে বিছানা করে শুয়ে পড়ে।
অর্ধভাঙ্গা মোবাইলটা হাতে নিয়ে গ্যালারিতে ডুকতে ই আমার আর অবন্তী ছবিগুলো ভেসে উঠলো। অবন্তীকে দেখে কান্না পাচ্ছে খুব। অবন্তী তো আমার আত্মা ছিলো কত ভালোবাসা সম্পর্ক ছিলো। আমি স্কুল কলেজে কোথাও টিফিন নিয়ে যেতাম না। অবন্তী প্রতিদিন আমার ওর টিফিন একসাথে আনতো। আমি হেটে কলেজে যেতাম তাই রাগ করতো। আমার প্রতি তার কত কেয়ার ছিলো। মেসেঞ্জারে ডুকতে ই তার আইডিটা ডিএক্টিভেট করা দেখলাম। এভাবে কেউ জীবন থেকে চলে যেতে পারে না। সজ্ঞানে আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে যাওয়ার কথা না। কোথাও একটা কিছু হয়েছে যা আমার অজানা। নয়তো এতো বছরের ও আমি অবন্তীকে চিন্তে পারিনি। আমার কান্না শব্দ শুভ্রের কানে যেতে ই চিৎকার করা শুরু করলো,
–এসব নেকা কান্না বন্ধ করবি নয়তো লাথি দিয়ে রুম থেকে বের করে দিবো।
কথাটা শুনার সাথে সাথে ইচ্ছে করছিলো গিয়ে তার পা টা ভেঙ্গে দেই। এমন বজ্জাত লোক জীবনে আর একটা দেখি নাই। শান্তিতে কান্না ও করতে পারি না। বদের হাড্ডি।
বিকাল তিনটা, অহনা আজকে শাড়ি পড়বে যা ই হক বিয়ের পর প্রথম বাবার বাড়ি যাচ্ছে ফর্মালিটি তো মেইনটেইন করতে ই হবে। লাল টুকটুকে একটা জামদানি পড়ছে। হাত ভর্তি লাল চুড়ি আর ঠোটে লাল লিপস্টিক চুলগুলো খোপা করে, দুইসাইডের ছোট চুলগুলো সামনে এনে রেখেছে। দেখতে একদম নতুন বউ লাগছে। নিচে গিয়ে শ্বাশুড়িকে সালাম দিয়ে বললো,
— মা আমি মৌকে নিয়ে যাই আমার সাথে।
শায়লা রহমান এক কথায় বলে দিলো না। তার ভাষ্যমতে ঐরকম মাটির বাড়িতে মৌ থাকতে পারবে না।
–তাহলে আপনার ছেলেকে ও রেখেদিন মা আমি একা ই যাই।
–আমার ছেলে যদি আমার কথা শুনতো তাহলে আর যেতো না।
শুভ্র সোফায় বসে মোবাইল দেখছে আর তাদের কথা শুনছে আর চোখে অহনাকে দেখছে। যা ই হক অহনার এই সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করবে। যে কেউ ই এখন দেখলে তার প্রশংসা করতে বাধ্য।সুন্দর কে তো সুন্দর বলতে হবে। নিরবতা ভেঙ্গে শুভ্র বলে উঠলো,
–আমি যাচ্ছি কেউ যেতে চাইলে যেনো আসে।
শুভ্রের কথা শুনে অহনা দৌড়ে শুভ্রে পেছন পেছনে যেতে লাগলো। গাড়িতে বসে ই বললো
— সিট বেল পড়
অহনা শুভ্রের কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ করলো না বাহিরে তাকিয়ে রইলো। শুভ্র দ্বিতীয় বার না বলে অহনার সিট বেল লাগিয়ে দিলো। পোড়া দাগটা স্পষ্ট ফুটে উঠছে। শুভ্রের রাগটা এবার বেড়ে গেলো অহনার হাতটা চেপে ধরে বললো,
–আমি বলেছি না শাড়ি পড়বি না। দাগটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
–আপনি বার বার দাগটা ই দেখেন আমি যে কষ্ট পাই। জামা পড়ি, শাড়ি পড়ি, যা ই পড়ি না কেনো বার বার এখানে লাগার সাথে সাথে আমি ব্যথা পাই। কখনো বলেছি আপনাকে? আমি ও তো মানুষ আমার ও তো সহ্য ক্ষমতা আছে। এই যে কষ্ট পাচ্ছি আপনার তো নিশ্চয়ই খুব ভালো লাগছে। কারণ আপনি ই বলেছেন আমাকে কষ্ট পেতে দেখলে আপনার ভালো লাগে। আরেকটা কথা শুনুন আপনার ভালোবাসা আপনি ধরে রাখতে পারেনি এতে আমার কি দোষ। কেমন ভালোবেসেছেন যে আপনাকে ছেড়ে চলে যায়। আর একজন প্রেমিক এতোটা অমানবিক কীভাবে হতে পারে। আমাকে যেভাবে কষ্ট দিচ্ছেন সেইম কষ্ট যদি মৌ পেত তাহলে ভাই হিসেবে মেনে নিতে পারতেন তো। ভাই হিসেবে বাদ ই দিলাম একজন বিবেগবান মানুষ হিসেবে মেনে নিতে পারতেন? নিজেকে প্রশ্ন করুন তো।
অহনার কথাগুলো শুনে শুভ্র নিজের মাথায় কয়েকবার হাত দিয়ে আঘাত করে। কিছুক্ষন মাথা নিচু করে স্বাভাবিক হয়ে ড্রাইভ করা শুরু করে। একটা শব্দ তার মুখ থেকে বের হয় না। কথাগুলো বলে অহনার ভেতরে ভয় কাজ করছে এই কথাগুলোর জন্য যদি আবার মার খেতে হয়।
রাসু বেগম রান্না করছে, তমা জিনিয়া মিলে পশ্চিম দিকের মাটির ঘরটা সুন্দর করে গুছিয়েছে। অহনা আসলে এ ঘরের ই থাকবে। তমা জিনিয়া ও খুশি অনেকদিন পর বোনকে দেখবে। গ্রামের অনেকটা ভেতরে বাড়ি হওয়া সন্ধ্যা আটটা ই গভীর রাত মনে হয়। কারেন্ট তেমন একটা থাকে না। তার রাতে রান্না করা মুশকিল। তাই দিনের আলো থাকতে থাকতে সব রান্না শেষ করে রাখতে চাচ্ছে রাসু বেগম। জামাইকে আদর আপ্যায়ন না করলে তো আর টাকা খসানো যাবে না। রাসু বেগম ছোট মাছ, দেশি মুরগি,গরুর মাংস আর মুঘ ডাল রান্না করছে। সাথে পোয়া আর পিটাসাপটা পিঠা। একা হাতে তো সব করতে পারবে না তাই রাসু বেগমের বোনকে সকালে ফোন করে ডেকে নিয়েছে।
অন্ধকার আচ্ছন্ন পরিবেশ রাস্তার দুইদিকে বাঁশঝাড় । রাস্তায় কোনো মানুষ নেই জনমানব শূন্য। গ্রামের রাস্তা শুভ্র ভয় না পেলে ও অহনা বেশ ভয় পাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি ভুত গাড়ির সামনে চলে আসবে। ভয়ে ভয়ে শুভ্রকে বললো,
–আপনার হাতটা কি আমাকে ধরতে দিবেন?
–না
–প্লিজ আমি ভয় পাচ্ছি। হাত ধরতে দেন?
–না।
অহনা চোখ বন্ধ করে শুভ্রের দিকে ঝুঁকে তার শার্ট খমচে ধরেছে। অহনার ভয় পাওয়া দেখে শুভ্রের বেশ হাসি পাচ্ছে। তাও গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
–আমার শার্ট ছাড় নয়তো এখানে নামিয়ে রেখে চলে যাবো।
বলার সাথে সাথে শার্ট ছেড়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
বাড়ির সামনে আসতে ই তমা, জিনিয়া দৌড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গাড়ির সামনে যায়। শুভ্র গাড়ি থেকে নামতে ই শুভ্রকে সালাম দেয়। অহনা তো নেমে ই দুইবোনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। রাসু বেগম দৌড়ে এসে অহনাকে জড়িয়ে ধরে,
–তোর কি আমার কথা একবার ও মনে হয়নি মা।
রাসু বেগমের এমন পরিবর্তন দেখে অহনা নিজেকে চিমটি কাটলো আসলে কি যা দেখছে তা বাস্তব। শুভ্র গাড়ি থেকে ফল নামিয়ে তমা জিনিয়াকে দিচ্ছে। ছোট থালায় ফয়েল পেপার দিয়ে পেচিয়ে তারউপর ফলগুলো রেখে উপরে আবার পাতলা পেপার দিয়ে এনেছে। আপেল মালটা,কমলা,পেয়ারা,পেপে চার রকমের মিষ্টি। এসব শুভ্র কখন করছে অহনা বলতে পারবে না। রাসু বেগম এতোকিছু দেখে তো চোখগুলো ছানাবড়া হয়ে গেছে। রাসু বেগম শুভ্রকে নিয়ে ঘরে বসালো। মাটির ঘর দেখে শুভ্র চার দিকে চোখবুলিয়ে দেখলো। ঘরের ভেতর একটা খাট, ড্রেসিং টেবিল আর একটা আলনা রাখা।অহনা রুমে ডুকে হাতের চুড়িগুলো খুলে শুভ্রের পাশে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হোয়াইট শার্ট কালো প্যান্ট শার্টে হাতাগুলো ফোল্ড করা ফর্সা গালে ছোট দাড়ি মানিয়েছে বেশ।
–চোখ লাগবে যেভাবে তাকিয়ে আছো।
–আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত মহাশয়। আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন।
শুভ্র পেছন থেকে এক হাত দিয়ে অহনার কোমড় জড়িয়ে ধরলো……
চলেব
[ভুলক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]