দুখীফুল পর্ব-১৬+১৭

0
457

#দুখীফুল
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_১৬

আগামীকাল গায়ে হলুদ। সারাবাড়ি সাজানো হয়েছে। মানুষদের আনাগোনাও শুরু হয়ে গেছে। ফুলের শ্বশুর বাড়ির অনেক আত্মীয় স্বজনরা জানেই না শুভ ও ফুলের বিয়ের ব্যপারটা। শুভদের আত্মীয় স্বজন বলতে, দাদা ও নানা বাড়ির লোকজন। নানা বাড়ি লোকজনদের নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারোর। মূল সমস্যা শুভর দাদা বাড়ির মানুষদের নিয়ে। শুভর দাদা বাড়ির লোকসংখ্যা খুব কম। একজন চাচা ও একজন ফুফু বেঁচে আছে। চাচার দুইজন মেয়ে। দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে বড়ো পরিবারে। এখানেও ঝামেলা নেই। আসল ঝামেলা শুভর ফুফুর ছোট মেয়েটাকে নিয়ে। মেয়েটার নাম প্রিয়া। নামের মতো সে কারোরই প্রিয় নয়। বিশেষ করে শুভর। দেখতে তুলোর মতো নরম হলেও তার ভেতরকার ঘটনা শুভ জানে। শেষবার যখন শুভ একাকী ফুফুর বাড়ি গিয়েছিল তখন এই ভোলা ভালা মেয়েটাই শুভর ইজ্জতে দুই হাত ঢুকিয়ে দিয়েছিল। রাতের আঁধারে শুভর ঘরে ঢুকে পড়েছিল। শরীরের বিশেষ অঙ্গ প্রদর্শিত করে শুভকে আকর্ষিত করতে চেয়েছিল। মেয়েটা নাকি শুভকে ভালবাসে। শুভর কাছে ভালোবাসা মানে শরীর নয় মন। শুভ সেইবার জানালা খুলে লাফ দিয়ে নিজের সম্মান বাঁচিয়েছিল। পরেরদিন সকালের ট্রেন ধরে সোজা বাড়ি এসে পড়েছিল। আদিলকে রাক্ষসীর ঘটনা জানানোর পর ফুফুর বাড়ি যওয়ার জন্য আর জোড় করেনি।

এতকথা বলার কারণ হল, আদিলের বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়ের মধ্যে শুভর ফুফুর ঐ পাজি মেয়েও এসেছে। শুভর চিন্তা হচ্ছে, তার বিয়ের কথা জানতে পারলে প্রিয়া কি করবে! শুভর এখন ইচ্ছে করছে, সব কাজ ফেলে ফুলের কাছে চলে যেতে।

——————

ফুল বাবার বাড়ি পৌঁছাল বিকালবেলায়। বকশি কাকা ফুলকে নিয়ে এসেছে আবার নিয়েও যাবে। ফুল কয়েকঘন্টার জন্য এসেছে। আদিল ফুলকে এবাড়িতে রেখে কোনো রিক্স নিতে চায় না। তারা ব্যস্ততায় না আসতে পারলেও বিশ্বস্ত কাকাকে পাঠালেন।
বকশি কাকা ঘরে ঢুকলেন না। উঠোনেই চেয়ার পেতে বসলেন। ফুল ঘরে গিয়ে বাবাকে শোয়া অবস্থায় দেখতে পেল। কাঁথা মুড়িয়ে শুয়ে আছেন। ফুলকে দেখে লিপি মুখে আঁচল চেপে আহাজারি শুরু করলেন,” কেমন মাইয়া তুই হ্যাঁ! বাপের থেইকা জামাইয়ের সংসার বড়ো হইয়া গেল? তোর বাপের অভিশাপ যদি লাগে তাহলে এই সোনার সংসারে টিকতে পারবি?”

” বাবা আমাকে অভিশাপ কেনো দিবে? আমি কী করেছি? আর বাবারই বা কী হয়েছে? ”

লিপি বিলাপ করতে থাকল,” তুই চলে যাওয়ার পর তোর বাপ তোর লাইগা কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি ফুরাইয়া ফেলছে। কাশতে কাশতে বুকে ব্যথা শুরু হইছে। আমি চিকিৎসা করার টাকা কই পামু! তোর জুয়ারি বাপ তো টাকা পয়সা শেষ করে দিছে। আমার পুড়া কপাল! কি হইবো রে!”

লিপির কথাগুলো বিশ্বাস করল না ফুল। সে বুঝল, তাকে মিথ্যা কথা বলে আনা হয়েছে। ফুল বাবা বলে দুইবার ডাকল। ফিরোজ সাড়া দিল না। ফুল, নিঃশ্বাস আটকে নিজের ঘরের দিকে আগাতে লাগল। কতোদিন পর নিজের ঘর দেখবে! কথায় আছে, অট্টালিকায় থাকার চেয়েও নিজের ভাঙা ঘরে থাকা অনেক শান্তি।ফুল হয়তো আর কখনো নিজের ঘরে থাকতে পারবে না কিন্তু চোখের দেখা তো দেখতে পারবে? ফুল ঘরের দিকে আগাতে গেলে লিপি বাঁধা দিয়ে নলল,” ঐদিকে কোথায় যাস?”

” আমার ঘরে।”

লিপি মুখ বাঁকা করে উত্তর দিল,” ঐ ঘরে আমি পাতার বস্তা রাইখা দিছি। খালি ঘর পইড়া ছিল। কামে লাগাইছি।”

ফুল দাঁড়িয়ে গেল। তার মনে প্রশ্ন জাগল, বিয়ের পর সত্যিই কী মেয়েরা পর হয়ে যায়? নাকি ফুলের সৎ মা বলে পর করে দিয়েছে! ফুল ফিরে তাকাল। লিপিকে তাচ্ছিল্য করে বলল,” এখন তো সবই তোমার। তবুও কাঁদছো? ”

লিপি স্তব্ধ বনে গেল। দৃষ্টি এদিকসেদিক ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ফুলের হাত ধরে বলল,” আমার একমাত্র ভরসা তুই,ফুল? তোর বাপকে বাঁচা! এই বয়সে আমি কই ঠাই পামু?”

ফুলের মায়া হল না। স্বাভাবিক সুরে প্রশ্ন করল,” আমি কীভাবে বাঁচাব? ”

লিপি চোখের পানি মুছে ফিচেল হেসে বলল,”তোর শ্বশুর বাড়ি থেকে টাকা এনে।”

ফুল বিস্মিত হল। চিৎকার করে বলল,” অসম্ভব?”

লিপি ফুলের পা চেপে ধরল,” আমার স্বামীকে বাঁচা,ফুল। তুই না তোর বাবার একমাত্র মেয়ে! তোকে ছাড়া আর কেউ নাই মানুষটার।”

ফুল পিছিয়ে গেল। লিপিকে ধরে দাড় করাল। লিপি খেয়াল করল, ফুলের কানে ও গলায় সোনার গহনা চকচক করছে। লিপি মুঠোভরে ফুলের গলার সোনার চেইনের ধরে বলল,” এটা দিয়ে দে। এটা বিক্রি করে তোর বাবার চিকিৎসা করাব।”

ফুল লিপির হাতের উপর হাত রেখে বলল,” ছাড়ো, এই গহনা আমার শাশুড়ির। তোমাকে এটা দিব না।”

লিপি ছাড়ার নাম নিল না। টানাটানি করার এক পর্যায়ে ফুলের ঘাড়ে আঁচড় লেগে গেল। ফুল আহ করে আওয়াজ করতেই বকশি কাকা ঘরে চলে আসলো।

” বউমামনিকে ছাড়েন, বেয়াইন।”

পুরুষের হুঙ্কার শুনে লিপি কেঁপে উঠল কিন্তু ছাড়ল না। ফুলের চুলের মুঠি চেপে ধরে বলল,” কোন নাগর রে নিয়ে আসছোস? আজ আজরাইল আইলেও তোরে ছাড়মু না। এই গহনা ভালোয় ভালোয় দিয়ে দে, ফুল!”

ফুল দিতে চাচ্ছে না। নিজের থেকে গহনা শক্ত করে ধরে রেখেছে সে। বকশি কাকা ভেবেছিল,মেয়ে মানুষের গায়ে হাত দিবে না। কিন্তু এখন ঘটনা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, মেয়ে মানুষের গায়ে হাত না তুললে ফুলের ক্ষতি হয়ে যাবে।
বকশি কাকা লিপিকে ধরে দূরে আনতে নিলে ফিরোজ শোয়া থেকে উঠে বসল। কাশতে কাশতে বুকে হাত দিয়ে বলল,” থামো, লিপি। এই মাইয়া আমারে বাপ মনে করে না। আইজ থেইকা আমার মাইরা মইরা গেছে।”

ফুল ঘাড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। গলায়ও বেশ ব্যথা পেয়েছে। ফুলের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝড়ছে। ফিরোজের কথার জন্য নয় বরঞ্চ বাবা নামক নিষ্ঠুর মানুষের কথা শুনে। এরমধ্যেই শুভ চলে আসল।বাড়িতে তার মন টিকছিল না। ফুলের চোখে পানি দেখে এগিয়ে এসে বলল,” কি হয়েছে, ফুল?”

ফুলের ঘাড়ে হাত রাখা অনুসরণ করে শুভ সেদিকে তাকাল। মুহূর্তেই শুভর চোখ মুখ লাল হয়ে আসলো। ফুলের ঘাড়ে ছোপ ছোপ র’ক্ত দেখা যাচ্ছে। বকশি কাকার দিকে তাকালে সব কথাই জানাল। শুভর তখন ইচ্ছে করল সব ভেঙে গুড়িয়ে দিতে। ফুলের বাবা মায়ের উপর হাত তুলতে পারবে না এমনকি জোর গলায় কিছু বলতেও পারবে না। শুভ করল কী? ঘরের আসবাবপত্র ভাঙতে শুরু করল। সোকেজের প্লেট, গ্লাস এক এক করে আছাড় দিতে থাকল। বকশি কাকা থামাল না। বাবুকে ছোটকাল থেকেই চেনা আছে। শান্ত দুষ্ট ছেলের মাথা গরম হলে কাউকে দেখে না। তাছাড়া বউমামনির সাথে আজ যা হল, তার সামনে এগুলো কিছুই না। ফুল শুভকে থামাতে চেষ্টা করতে লাগল,” থামো, এগুলো ভেঙো না। মাথা ঠান্ডা করো।”

শুভ শুনলো তো! সে সারাঘর তছনছ করে ক্ষান্ত হল। কীভাবে যেনো ফিরোজের অসুখও দূর হয়ে গেল। তার চোখে ধরা দিল ভয়। ফুলের সৎ মা তো পারছে না মাটি খুঁড়ে ভেতরে ঢুকে পড়তে। ছেলেটাকে সে নম্র ভদ্র ভেবেছিল এখন দেখছে আস্তো গুণ্ডা। শুভ কাজ শেষ করে লিপির দিকে তেড়ে আসল। আঙুল তুলে বলল,“ নেক্সটবার আমার বউয়ের আশেপাশে আপনার ছায়া দেখলে, কি করব জানি না। আজ ঘরের জিনিস ভেঙেছি, পরেরবার ঘরে আ’গু’ন জ্বালিয়ে দিব। তখন মস্তিষ্কে আর কুবুদ্ধি আনতে পারবেন না।”

শুভ বলা শেষ করে ফিরোজের দিকে ঘৃণা ভরা চোখে তাকিয়ে ফুলকে নিয়ে বের হয়ে আসলো।

ফুল চলে যেতেই ফিরোজ গায়ের কাঁথা সরিয়ে লিপির গালে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে বলল,” তুই না কইছিলি, এমন করলে টাকা কামাইতে পারমু? দেখ মা****গি আমার আরো ক্ষতি কইরা গেল। এখন হাত থেইকা সোনার হাঁসও গেল, ডিমও গেল।”

লিপি গালে হাত দিয়ে ভাঙা জিনিসগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখ র’ক্তে’র মতো লাল হয়ে আছে। কাঁচের জিনিসে পা মাড়িয়ে বিড়বিড় করল,” তোর কাছ থেইকা এর প্রতিশোধ অন্যভাবে নিমু, ফুল!”

———————

ফুলের শ্বশুর বাড়ি থেকে পাঁচশো গজ দূরে প্রাইভেট কার দাঁড় করানো আছে। প্রাইভেটকারে জানালাগুলো বন্ধ। বকশি মিয়া জানালায় দুই তিন টোকা দিলে শুভ জানালা খুলে দিল। শুভর দিকে একটি পলিথিনের ঠোঙা এগিয়ে দিয়ে বলল,” কোনো সমস্যা হইলে আওয়াজ দিও, বাবু। আমি ঐ গাছের নিচে বসে আছি।”

শুভ নিষেধ করল,” আমরা বেশি দেরি করব না, কাকা। তুমি বাড়ি যাও। ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে। এমনিতেও বাড়িতে অনেক মানুষ। ভাইয়া একা সামলাচ্ছে। তুমি গেলে হয়তো ভাইয়া রেস্ট নিতে পারবে।”

বকশি মিয়া শুভর কথায় সায় দিয়ে চলে গেল। শুভ গ্লাস উঠিয়ে প্রাইভেট কারের সামনের দরজা খুলে পিছনে গিয়ে বসলো। গাড়ির ভেতর আলো জ্বালিয়ে ফুলের ফোলা মুখের দিকে তাকাল। পলিথিন থেকে হেক্সিসল বের করে হাত পরিষ্কার করে নিল। ফুল মাথা নিচু করে রেখেছে। বুকের মধ্যে ওড়না গুঁজে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। আঁজলা ভরে শুভ ফুলকে নিজের দিকে ফেরালো। তখনই দুই ফোঁটা অশ্রু ফুলের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো। শুভ বুড়ো আঙুলের সাহায্যে গালের পানি মুছে বলল,” আমি কী তোমাকে ব’কা দিয়েছি?”

ফুল মাথা নেড়ে না বলল।

” তাহলে কাঁদছো কেনো? এটা একটা এক্সিডেন্ট। মানুষের মনে কী চলে কেউ বলতে পারে নাকি? তারা যে নিজেদের স্বার্থের জন্য যে তোমাকে ডাকবে আমরা কী জনতাম?

ফুল এবারও মাথা নাড়লো। শুভ পুনরায় বলল, “ দেখি ওড়না সরাও,আমি দেখব।”

ফুল বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে। ওড়না আরো শক্ত করে ধরল। শুভ তা দেখে বলল,” কি হলো! আমাকে ভয় পাচ্ছো? আরে ভীতুফুল! আমি মা’র’ব না মলম লাগাব।”

ফুল ইতস্তত হয়ে ওড়না সরাল। শুভ দক্ষদের মতো গলায় কিছুক্ষণ দেখে বলল,” ঐ মহিলার হাতে এতো শক্তি! আমার তো ইচ্ছে করছে!”

ফুল শুভকে থামিয়ে বলল,” ওড়না দিব?”

” রাখো তোমার ওড়না। এমনভাব করছো যেনো ওড়না ছাড়া আগে কখনো দেখিনি।”

ফুল লজ্জা পেল কিন্তু মনে করতে পারল না কবে দেখেছে। শুভই জানিয়ে দিল,” তোমাকে হাসপাতালে নেওয়ার দিন আমিই তো আগে দেখেছিলাম। তোমার গায়ে তখন ওড়না ছিল না। বিশ্বাস করো আমি এক পলক দেখেছিলাম। বেশি না।”

শেষোক্ত কথাটি বিরস মুখে বলে থামল শুভ। ফুল ফিক করে হেসে ফেলল। শুভ ফুলের গলায় মলম লাগিয়ে দিল। এবার ঘাড়ে মলম লাগানোর পালা। শুভ কীভাবে লাগাবে তাই ভবতে লাগল। ফুলকে ঘুরে বসতে বলে নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আবেগ, অনুভূতি সম্পর্কে শুভ ফুলকে বিয়ের করার পর থেকে পরিচিত হয়েছে। ফুলের শরীরের উন্মুক্ত একাংশ দেখে গলা শুঁকিয়ে আসল। কাঁপা হাতে গলার চেইন সরিয়ে মলম লাগিয়ে দিল। শুভর আলতো হাতের ছোঁয়া পেয়ে ফুলও নেতিয়ে পড়ল। ভাললাগা অনুভূতি কিন্তু কাঁপন স্পর্শ। সহ্য করতে পারল না ফুল। সামনের দিকে এগিয়ে গেল। শুভ তখনো ফুলের ঘাড়ে আঁটকে আছে। দুই তিনবার শুঁকনো ঢোক গিলে শুভ এগিয়ে আসলো। আজ নিজেকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না শুভ। বামহাতে ফুলের পেটে হাত রেখে নিজের দিকে আনলো। ডানহাতে পিঠের সম্পূর্ণ চুল সরিয়ে ঘড়ের উন্মুক্ত অংশের দিকে ঠোঁট আগাল। দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক নর নারীর প্রথম পবিত্র স্পর্শ। দুজনের কাছে নতুন অনুভূতি। শুভ ততক্ষণ ঠোঁট ছুঁয়ে রাখল যতক্ষণ না সে শান্ত হল। ফুল খিঁচে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তার ডান হাত পেটে রাখা শুভর হাত খামচে ধরে রেখেছে। ফুলের সম্পূর্ণ ভর শুভর বুকের উপর। শুভ এভাবেই রইল আরো কিছুক্ষণ। ফুলের হাতের ভাঁজে তার হাতের বিচরণ। ফুলকে নীচু সুরে ডাকল শুভ,” সুখ ফুল!”

ফুল অস্পষ্ট স্বরে জবাব দিল,” হু!”

” তোমার ঘরের বালিশের কভারের ভেতর একট চিঠি রেখে এসেছি। বাসায় গিয়ে আগে চিঠি পড়বে, হ্যাঁ!”

” পড়ব।”

শুভ সময় নিয়ে আবারো বলল,” তুমি রাগ করেছো?”

” কেনো?”

” তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে ছুঁয়ে দিয়েছি!”

ফুল ভেবে উত্তর দিল,” আমরা স্বামী-স্ত্রী, শান্ত!”

শুভ কিছু বলল না। ফুলের হাতের পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল।

চলবে………..

#দুখীফুল
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_১৭

শুভ ও ফুল একসাথেই বাড়ি ফিরে এল। এতক্ষণে শুভর বিয়ের ব্যপারটা সবাই জেনে গেছে। শুভর ফুফু তাদের আসতে দেখে শুভকে পাশ কে’টে ফুলের হাত ধরে সোফায় নিয়ে বসাল। ফুলের থুতনিতে হাত রেখে বলতে শুরু করল,” ইশ আদিল তো ঠিকই বলেছে। মেয়েটা তো ভালোই ব্যথা পেয়েছে। বলি মেয়ে, রাস্তায় দেখেশুনে চলতে পারো না! নাকি কানে শুনো না। এতো বড়ো মোটরবাইক আসছে দেখলে না! ইশ গলায় কেমন দাগ হয়ে গেছে।”

ফুলের শাশুড়ি ফুফুর কথা টেনে বলতে শুরু করল,” আরে আপা, আমার ছেলের মতো মেয়েটাও বাচ্চাদের মতো দুই বাচ্চাকে নিয়ে জ্বালায় আছি। ভাগ্যিস শুভ গিয়ে সরিয়ে দিয়েছিল, নয়তো কী হতো!”

ফুফু ফুলের হাত ধরে বলল,” যাই বলিস সুইটি, বউদের একটু সাবধানে চলাফেরা করতে হয়। ভাবতে পারিস! যদি পেটে ব্যথা পেত! বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা তো হারিয়ে ফেলতো। আমাদের বশির ভাইয়ের ছেলের বউয়ের সাথে তো এমনই ঘটেছে। তিড়িংবিড়িং করতো মেয়েটা। একদিন সিঁড়ি থেকে পড়ে পেটে ব্যথা পেল। সেই ব্যথাতে মা হওয়ার ক্ষমতা হারালো। পরে ছেলের আরেকটা বিয়ে করতে হল।”

ফুল বড়োদের কথার আগামাথা কিছুই বুঝল না। তবে ফুফুর কথায় মন খারাপ হল। তখনই আদিলের কণ্ঠস্বর শোনা গেল,” আমরা কম মানুষ পছন্দ করি। আমাদের বাড়ির বউয়ের সারাজীবন বাচ্চা না হলেও সমস্যা নাই। বুড়ো বয়স পর্যন্ত ঐ বউয়ের সাথে আরামে দিন পার করব, ফুফু। তোমার এত চিন্তা করতে হবে না।”

ফুলের শাশুড়ি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বড়ো ছেলে আছে বলেই তিনি মন খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারেন। তিনি জানেন, বড়ো ছেলের মতো ছোট ছেলেও একদিন সবাইকে সামলে নিবে।
আকিল ফুলকে উদ্দেশ করে বলল,” বসে আছো কেনো, ফুল? ঘরে গিয়ে রেস্ট নাও। তোমার এখানে কোনো কাজ নেই। কাজ করার জন্য অনেক কাজের লোক রেখেছি।”

ফুলের শাশুড়িও তাল মেলালো,” হ্যাঁ, ফুল। তুই উপরে যা। শুভকে জিজ্ঞেস করিস তো রাতে কী খাবে।”

ফুল মাথা ঝাঁকিয়ে ধীরপায়ে উপরে চলে গেল। সিঁড়ির মাথায় একজন মেয়ের সাথে ধাক্কা খেল, ফুল। মেয়েটা কোনো কারণে রেগে ছিল। ফুলকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে হনহনিয়ে সিঁড়ি ডিঙিয়ে নিচে নেমে গেল। ফুল কিছু মনে করল না। তার অবচেতন মন শুভর লেখা চিঠি পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। ফুল নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিল। শুভর কথা অনুযায়ী বালিশের কভারের ভেতর চিঠি পেয়ে গেল। উপুড় হয়ে শুয়ে ফুল চিঠি পড়া শুরু করল,

প্রিয় সুন্দরফুল,

তুমি জানো, পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর ফুল তুমি! কেননা তুমি আমার ফুল। আমি যেমন সুন্দর আমার ফুলবউও তেমনই সুন্দর।

শুনো ফুল, আজ তোমাকে বিশেষ কিছু কথা বলব। আমাদের মধ্যে যাই হোক না কেন আমার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখবে। তোমার বাবু বর তোমার জন্য সব করতে পারে। একটা সম্পর্কে বিশ্বাস হল মূল। যেদিন তুমি আমার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে সেদিন আমাকেও হারাবে। আমি তো মনে করি আমাদের মধ্যে অবিশ্বাসের মতো কিছুই নেই। আমি তোমার কাছে খোলা বই, যার প্রতিটা পৃষ্ঠার লেখাগুলো তোমার পড়া আছে।

আমার পরিবারের সম্পর্কে কিছু জেনে রাখো। আমার দাদা বাড়ির মধ্যে সবাই ভাল হলেও প্রিয়া ভাল না। ভাইয়া ভাইয়া বলে সারাদিন মুখে ফেনা তুললেও আমাকে খুব জ্বালায়। ওর জন্যই মূলত মা আমাকে আরো তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়েছে। মেয়েটাকে কারোরই পছন্দ না। এই মেয়ে আমাদের বাসায় আসলে মাস ফুরানোর আগে যাওয়ার নাম নেয় না। তুমি ভুলেও ওর ফাঁদে পা ফেলবে না। ও হচ্ছে নাগিন। বিষধর নাগিন। যাকে ছুঁয়ে দেয় সেই ধ্বংস হয়ে যায়।

এত বিস্তারিত বলার কারণ হল, তোমাকে চিঠি লেখছি তোমার ঘরে বসেই। ঐ বিষধর নাগিন আমার ঘর দখল করে বসে আছে। খুবই যন্ত্রণায় আছি ফুল! আমাকে বাঁচাও।

তুমি তো আমাকে ফেলে চলে গেলে। আমিও তোমার পিছু আসছি। আজ রাতে একসাথে গল্প করব, একসাথে ঘুমাবো, একসাথে ছুবো। আরে দুষ্ট কাজ করব না।

তুমি আমার প্রিয়ফুল। তোমাকে কতো নামে যে ডাকতে ইচ্ছে করে তুমি জানোই না। আজ একটা নতুন নাম পেয়েছি, ” পানিফুল। কেননা কিছু হলেই তোমার আগে চোখের পানি ঝড়তে শুরু করে।

ইতি
ফুলের শুভ

চিঠিখানা পড়ে ফুল মুচকি হাসল। শেষাংশ পড়ার পর গাড়ির ভেতরকার ঘটনা মনে পড়ে গেল। আপনাআপনিই তখন ফুলের হাত ঘাড়ে চলে গেল। যেখানে শুভ ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়েছিল। ফুল চিঠি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে ফ্রেস হতে চলে গেল।

আজ সকালেই ফুলের শাশুড়ি হালকা গোলাপি রংয়ের নতুন জামা দিয়েছিল। বলেছিল মেহমান আসলে পরে নিতে। ফুল সেই জামা পরে নিয়েছে। ড্রেসিং টেবিলের কাছে আসতেই আরেকটা চিঠি পেল ফুল,

প্রিয় মিষ্টি ফুল,

গোলাপি রংটা আমার খুব পছন্দের। মাকে বলে বেশ কয়েকটা জামা আনিয়েছি। এই জামাটা বেশি পছন্দ হয়েছে। ড্রেসিং টেবিলের গোলাপি চুড়িগুলো পরতে ভুলবে না।

আজকাল আমি বিশেষ কারণ ছাড়াই তোমাকে নিয়ে ভাবি। অবশ্য তোমাকে নিয়ে ভাবার থেকে সামনাসামনি গল্প করতে বেশি ভাল লাগে। কিন্তু তুমি যা লজ্জাবতী! আমার দিকে তাকাও না। অবশ্য এতে আমারই সুবিধা। তোমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে পারি। তোমার গলায় একটা তিল আছে। আমার আশেপাশে থাকলে গলা ঢেকে রাখবে। নয়তো পানি পান করতে করতে সমুদ্রের পানি শুঁকিয়ে ফেলব।

কাল তোমার জন্য একটা চমক আছে। এখন বলব না। খবরদার আমাকে জিজ্ঞেস করবে না। চমক তো চমকই। আমার সামনে আসলে না জানার মতো অভিনয় করবে। যদি বুঝতে পারি আমাকে জিজ্ঞেস করতে চাও তবে খুব রাগ করব বলে দিলাম।

তোমার সাথে রাগ করা যায় না। কারণ তুমি ফুল। ফুল হয় সুন্দর ঠিক তোমার মতো। কতো কথাই তো বলতে চাই। বলে শেষ করা যায় না। আরেকটা প্রশ্ন, আমার কাছে তুমি কেমন আছো, ফুল?

ইতি
ফুলের অধৈর্য বর

ফুল খুব হাসলো। মনের কোণে থাকা দুঃখ ভুলে সুখের বন্যা বইতে শুরু করল। ঘর থেকে বের হয়ে শুভর ঘরে উঁকি দিল ফুল। শুভ গান শুনছিল। ফুলের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আটলো। সে নিঃশব্দে শুভর পাশে শুয়ে শুভর বুকে হাত রাখল। এতে করে শুভ ছিটকে দূরে সরে বিছানা থেকে নেমে পড়লো। ফুল বাবুবরকে ভয় দেখিয়ে ভীষণ মজা পেল। শুভর দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগল। শুভ ভেবেছিল, তার ফুফুর বিষধর নাগিন মেয়েটি আবারো নির্লজ্জের মতো কাজ করতে চলে এসেছে। সে যদি জানতো, ফুল তার পাশে তবে কী অমন করতো? শুভ ফুলের হাসি দেখে প্রেমে পড়লো। মাথা চুলকে নিজের বোকামির জন্য পস্তাতে লাগল। শুভ ভাবতে লাগল, এখন তার করণীয় কী? সে কি ফুলের পাশে শুয়ে গল্প করবে? নাকি ফুলের সাথে দুষ্টমিতে মেতে উঠবে!

ফুল ইশারায় শুভকে কাছে ডাকল। শুভ আনমনে ফুলের পাশে গিয়ে বসলো। ফুল শুভর হাত ধরে পাশে শুইয়ে দিল। তার দৃষ্টি শূন্যতে। কিন্তু শুভর দৃষ্টি ফুলের দিকে। ফুল বলল,” এভাবে তাকিয়ো না।”
শুভ উত্তর দিল,” আমার চোখ, আমার ইচ্ছে।”
” তাই বলে এভাবে তাকাবে?”
” অল্প অল্প তাকাই?”
” আচ্ছা।”

দুজনের মধ্যে নীরবতা। শুভ নীরবতা ভেঙে বলল,” মেহেদী পরবে না?”
” না।”
” কেনো?”
” মেহেদী পরলে বিয়ের রাতের কথা মনে পড়ে যায়।”

ফুল কথাটা বলতে চায়নি শুভ কষ্ট পাবে বলে। শুভ সত্যিই কষ্ট পেয়েছে। শোয়া থেকে উঠে ফুলের উপর আধশোয়া হয়ে বলল,” আমাকে ক্ষমা করা যায় না, ফুল? হঠাৎ বিয়ে করায় আমি তখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম।”

শুভর দৃষ্টি ফুলের দিকেই নিবদ্ধ। ফুল বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না। বা পাশে তাকিয়ে বলল,” সারাজীবনের সুখের সামনে একদিনের দুঃখ খুবই নগন্য। আমার কষ্ট সেদিনই লাঘব হয়ে গেছিল যেদিন থেকে বুঝতে পেরেছি, আমার জীবনে শুভ নামক কেউ আছে। যে আমার চিন্তা করে।আমার কষ্টে বুক কাঁপে।আমার সুখে মরণ খুঁজে।”

শুভ ফুলের কপালে ঠোঁট ছোঁয়াল। খুব গাঢ়ভাবে। কপালে ঠোঁট রেখেই ফিসফিস করে বলল,” আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, ফুল! বউকে ভালোবাসি বললে কী উত্তর পাওয়া যায়?”

ফুল চোখ বন্ধ করে উত্তর দিল, ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা পাওয়া যায়।”

শুভ সরে গেল। ফুলের পাশে শুয়ে বলল,” আমার না কেমন কেমন লাগে।”
” কেমন?”
শুভ শোয়া অবস্থায় ফুলের দিকে ফিরে বলল,” মনে হয় পেটের মধ্যে কিছু মোচড়াচ্ছে। ভেতরের আনন্দ উপচে পড়ছে। দুঃখও হয় কিন্তু বের হয় না।”

ফুল হাসল। তারও একই অনুভূতি হয়। শুভ বলতে পারছে কিন্তু সে বলতে পারে না।

এরমধ্যে শুভর ঘরে প্রিয়ার আগমন ঘটলো। দুজনকে একসাথে শুয়ে থাকতে দেখে চিৎকার করল,” তোমরা একসাথে কী করছো?”

শুভ ও ফুল উঠে বসলো। হঠাৎ তৃতীয় ব্যক্তির আগমনে ফুুল লজ্জা পেল কিন্তু শুভর কপালে দেখা দিল বিরক্তির ভাব। শুভ পানসে মুখে বলল,” স্বামী স্ত্রী এক ঘরে থাকলে যা করে, তাই করছি।”

প্রিয়া রাগে হিসহিস করছে। ফুল হা করে তা দেখে মনে মনে বলছে, ” বাবু বরের কথাই তো ঠিক, মেয়েটা কেমন নাগিনেদর মতো হিসহিসি করে।”

মনে মনে ভাবলেও হাসলো না মনে মনে। ফিক করে হেসে মুখ চেপে রাখল। শুভ ফুলের হাসি দেখে কী বুঝল কে জানে! নিজেও হেসে ফেলল। এবার দুজনে হু হা করে হাসতে লাগল।,প্রিয়া অপমানবোধ করল। ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় শব্দ করে দরজা আটকে দিল।
————–

রাতে ঘরোয়াভাবে মেহেদীর ছোটখাটো অনুষ্ঠান করল আদিলের মা অর্থাৎ সুইটি খানম। কিন্তু যার জন্য এতো আয়োজন করা হল সেই মেহেদী পরবে না বলে জানাল। এই নিয়ে আদিলের মায়ের আক্রোশ। আত্মীয়স্বজন, মা,ভাই কারো কথা শুনছে না আদিল। মহিলারা এক ঘরে মেহেদী পরছে। ছেলেরা আরেকঘরে। শুভ ও ফুলকে কোথাও পাওয়া গেল না। শুভর মা সবুজ কাতান শাড়ি হাতে নিয়ে ফুলের কাছে যাচ্ছে। মেয়েটা শাড়ি পরতে জানে না। এতো আত্মীয়দের মধ্যে মেয়েটার খবরও নিতে পারছে না। ফুলকে পেল শুভর ঘরে। শুভর সাথে গল্প করছে। শুভর মা এসে শুভকে তাড়া দিয়ে বলল,” জলদি বের হো, শুভ। ফুলকে শাড়ি পরাব। তোর ভাইকে আরেকবার বলে দেখ না! মেহেদী দিবে কী না! অল্পই তো দিব!”

শুভ মায়ের কথামতো কাজ করতে চলে গেল। ফুলের শাশুড়ি শাড়ি পরানোর সময় বলল,” আমি যদি জানতাম, তোর বাবা মা নিজের স্বার্থের জন্য তোকে জাহান্নামে পাঠাতেও ভাবে না। তবে বিয়ের পর তোকে সেই বাড়িতে রাখতাম না। আজ বকশি মিয়ার কাছে পুরো ঘটনা শুনে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। তুই সেই বাড়িতে কেমন ছিলি, ফুল?”

ফুল ব্যথাতুর কন্ঠে জানাল,” মা মা’রা যাওয়ার আগে ভালোই ছিলাম। কিন্তু পরে!”

” থাক ঐসব কথা মনে করতে হবে না। তোকে আর কোনোদিন ঐ বাড়ি পাঠাব না।”

ফুল কিছু বলল না। শাড়ি পরানো শেষে ফুলের ঘর থেকে সোনার বড়ো ঝুমকা এনে পরিয়ে দিল। গলায় কিছু পরাল না। যেটা আছে সেটাই থাকুক। মাথার চুলগুলোতে খোঁপা করে দিল। হালকা সাজিয়ে ফুলকে পরিপূর্ণভাবে তৈরি করিয়ে ভালভাবে দেখে বলল,” অনেক সুন্দর লাগছে, আমার মেয়েটাকে। জানিস, আমার একটা মেয়ের শখ ছিল। আমি স্বপ্ন দেখতাম, একটা শান্ত পুতুলের। একদম তোর মতো। চুপ করে বসে থাকবে, আমি মনমতো সাজাবো। দেখ তো, কেমন হয়েছে?”

ফুল আয়নায় দেখল, আজ তাকে অন্যরকম লাগছে। ফুল মানে, তার শাশুড়ির পছন্দ খুব ভাল। তাই তো, ফুলকে তিনি এতো পছন্দ করেন!

শুভ ভাইকে বুঝাতে গেলে ঝাঁটার বাড়ি খেয়ে আসলো। পিঠে হাত বুলিয়ে ঘরের দিকে আনমনে তাকাল শুভ। দৃষ্টি ফিরিয়ে পুনরায় দৃষ্টি রাখল। ফুলকে দেখে মাথা নষ্ট হয়ে গেল। শুভ শুঁকনো ঢোক গিলে বলল,” আজ আমার রাতের ঘুম হারাম।”

ফুল শুভর সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে বলল,” কেমন লাগছে?”

শুভ অস্পষ্ট স্বরে বলল,” একদম সবুজ ফুল!”

ফুল শুনে ফেলল। লজ্জায় মাথা নুয়ে বলল,” ভাইয়া কোথায়?”

শুভ বিরক্ত হয়ে বলল,” আসবে না।”
” আমি একবার যাব?”
শুভ হাই তুলে বলল, ” চেষ্টা করে দেখতে পারো।”

————

ফুল আদিলকে নিয়ে তবেই নিচে আসলো। শুভ টিয়া রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। অবশ্যই বউয়ের আগেপিছে থাকছে। ফুল যতবার তাকাচ্ছে ততবারই হাসি উপহার দিচ্ছে।

প্রিয়া এদের যতোবারই একসাথে দেখছে ততোবারই রাগে শরীর রিরি করছে। তার মনে কী কুৎসিত পরিকল্পনা চলছে সেই জানে।

চলবে………..