দুখীফুল পর্ব-২১+২২

0
429

#দুখীফুল
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_২১

সাগরিকাদের বাড়ি পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা লেগে গেল। বাড়ির বউ হওয়ার সুবাদে ফুলকে শাড়ি পরতে হল। ফুলের শাড়ি গোলাপি রঙের। খুব সুন্দর করে ফুলকে পরিয়ে দেয়া হয়েছে। আজ ফুলকে ঘরের মেয়েরা সাজিয়েছে। বিয়ের সময়কার ভারী গহনা পরেছে ফুল। শুভ ফুলকে দেখে কতক্ষণ হা করে তাকিয়ে ছিল, হিসাব করা যায়নি। গাড়িতে উঠে সারাটা পথ শুধু ফুলকেই দেখে গেছে সে।

ভারী মেকআপ ও স্লিভলেস পোশাক পরিধান করে প্রিয়া কয়েকবার শুভর সামনে ঘুরঘুর করেছে। শুভ ভুলেও সেদিকে তাকাল না। তার আপাদমস্তকে ফুলের বাস। সাগরিকাদের বাড়ি এসেও প্রিয়া শুভকে আকর্ষিত করার জন্য ফন্দি আঁটতে থাকল।

লাল টুকটুকে শাড়ি পরে সাগরিকাকে স্টেজে আনা হয়েছে। ফুল হা করে সাগরিকাকে দেখতে থাকল। তার কাছে মনে হল, স্টেজে বসে থাকা মেয়েটা একটা জীবন্ত পুতুল। শুভর হাত প্যাঁচিয়ে ধরে আছে ফুল। দুজনে একসাথে স্টেজের দিকে গেল। সাগরিকা ফুলকে দেখে জড়িয়ে ধরল। কিছুটা অভিমানী কণ্ঠে বলল,” ভাবিকে একটুও মনে পড়ে না তাই না! সেই কবে দেখে আসলাম। ব্যস্ততার জন্য না হয় আমি যেতে পারিনি। তাই বলে তুমি আসতে পারবে না!”

ফুল মিনমিন করতে থাকল। সে কী উত্তর দিবে ভেবে পেল না। বিয়ের পর শুভ ছাড়া কারো সাথেই সে তেমনভাবে কথা বলেনি। লজ্জা, শংকা ভর করে। অপ্রত্যাশিতভাবে নিজের জীবনের সাথে সকলকে জড়িয়ে ফেলে কী বলবে বুঝে উঠতে পারে না। সাগরিকা আরো বলল,” তোমার বরটা আস্তো বদমায়েশ। ফোনকলে তোমাকে চাইলেই জানো কী বলতো? বলতো, আমার বউ আমার সেবা করতে ব্যস্ত। তুমি করতে পারো না তাই বুঝো না। এটা কেমন কথা তুমিই বলো,ফুল?”

ফুল কি বলবে? সে বাঁকা চোখে শুভর দিকে তাকাল। শুভ জিভ কে’টে নিচের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল।

———-

ভাল খারাপ মিলিয়েই আমাদের জীবন। সমাজে সাগরিকা, শুভ, আদিল ও তাদের মায়ের মতো ভাল মানুষ যেমন আছে ঠিক তেমনই লিপি ও ফিরোজের মতো খারাপ মানুষও আছে। কখনো কখনো ভাল খারাপ মিলে একজনের জীবন শেষ হয়ে যায়। আবার কখনো খারাপ খারাপ মিলে সমাজ ধ্বংস হয়ে যায়। সাগরিকার ফুফাতো ভাইয়ের নাম কায়সার। বয়স ত্রিশ ছুঁই ছুঁই। চরিত্র খারাপ। মেয়েদের দেখলেই মনে কামোত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মা বোন কাউকে ভেদাভেদ করে না। লোকসমাজে সাগরিকাদের যথেষ্ট সম্মান আছে। আত্মীয় স্বজনরা কমবেশি সকলেই কায়সারের চরিত্র সম্পর্কে জানে। তারজন্য কায়সারের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলে। আজ কায়সারের নজরে পড়েছে ফুল। অল্পবয়সী মেয়েটাকে দেখে কায়সারের শরীর ঝাঁকিয়ে উঠলো। মায়াবী চেহারা দেখে গলা শুঁকিয়ে আসলো। সে পাঞ্জাবীর কলার ঠিক করে স্টেজের দিকে এগোতে থাকল। প্রিয়া আজ লেহেঙ্গা পরেছে। স্লিভলেস হাতার সাথে প্রশস্ত গলা। বুকের ভাজ অধিকাংশই বুঝা যাচ্ছে। কায়সার স্টেজে উঠে ফুলের পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই প্রিয়ার দিকে চোখ পড়ে। প্রিয়াকে দেখে তার কাছে রান্না করা রোস্ট মনে হল। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ফুলকে ছেড়ে প্রিয়ার দিকে এগিয়ে গেল।

বিয়ের কাজ যেহেতু আগেই সম্পন্ন করা ছিল। দুই পক্ষের খাওয়ার পর্ব শেষ করে সকলে আবার বাড়ির দিকে রওনা হল। মেয়ের সাথে ভাইবোন আসার একটা প্রচলন আছে। সাগরিকার সাথে আসলো কায়সার। এতে অবশ্য সাগরিকার বাড়ি থেকে নিষেধাজ্ঞা ছিল কিন্তু কায়সার শুনলে তো!

————–

পুরাতন বউকে নতুনরূপে ঘরে নিয়ে এসেছে আদিল। এতো বড়ো হয়েও লজ্জায় মাথা নীচু করে রেখেছে। বাড়ির মহিলারা সাগরিকা ও আদিলকে ধরে সোফায় বসিয়ে রেখেছে। সাগরিকার লাজ শরম কমই। মহিলাদের কথায় ঠাট্টার ছলে উত্তর দিয়ে দিচ্ছে সে।

শুভ বাড়িতে এসে ফুলকে নিয়ে উপরে চলে গেল। ফুলকে ফ্রেস হতে বলে নিজেও ফ্রেস হয়ে পোশাক পরিবর্তন করে নিল। শুভর হয়ে গেলে ফুলের ঘরের সামনে আসলো। দরজায় দুই তিনবার কষাঘাত করে সাড়া পেল না। দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল। ভেতরে ফুল চুলের সাথে যুদ্ধ করছে। শুভ ফুলের অবস্থা দেখে হেসে ভেতরে ঢুকলো। আয়নার প্রতিবিম্বে শুভকে দেখে ফুল অসহায়ের চোখে তাকাল। শুভ তা দেখে বলতে শুরু করল,” আমি খুলে দেই!”

ফুল মাথা নেড়ে না করল,” আমি করতে পারব।”

ফুল চিরুনী হাতে নিতে গেলে শুভ কেড়ে নিল। আলতোভাবে ফুলের মাথায় চিরুনী চালাল। ফুল এক ধ্যানে শুভকে দেখতে থাকল। আকস্মিক পিছনের দিকে ফিরে শুভর কোমর জড়িয়ে ধরল। শুভ, ফুলের এহেন কাজের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। শুভ ফুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” কি হয়েছে আমার, ফুলবউয়ের?”

ফুল উত্তর দিল না। শুভ চিন্তায় পড়ে গেল তখন যখন দেখল ফুলের শরীর কিছুক্ষণ পর পর কেঁপে কেঁপে উঠছে। শুভ অস্থির হয়ে গেল। চিরুনী ফেলে নিজের থেকে ফুলকে ছাড়িয়ে নিল। ফুলের মুখ লালবর্ণযুক্ত। ঠোঁটজোড়া শুষ্ক। চোখের পানি দেখে শুভর অন্তর কেঁপে উঠল। ফুলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দুই গালে হাত রাখল। চোখের পানি মুছে জিজ্ঞেস করল,” কী হয়েছে? কাঁদছো কেনো? ফুফুর কথায় কষ্ট পেয়েছো? আরে, ফুফু তো দুইদিনের অতিথি। কাল পরশুই চলে যাবে। তাছাড়া ভাইয়া যেভাবে উত্তর দিয়েছে, আমার মনে হয় না পরবর্তীতে তোমাকে কিছু বলার সাহস পাবে।”

ফুল নাক টেনে উত্তর দিল,” আমি এজন্য কাঁদছি না।”

” তবে?”

” তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো,শুভ?”

শুভ ফিক করে হেসে ফেলল। ফুলের নাকে টুপ করে চুমু খেয়ে বলল,” ভালোবাসলেও জ্বালা, না বাসলেও জ্বালা।”

” কম ভালোবাসা যায় না?”

শুভ দুষ্টুমি করে বলল,” আমার মনে অনেক ভালোবাসা। এতো ভালোবাসা যে মনে জায়গা হচ্ছে না। তাই তোমাকে ভালোবেসে জায়গা খালি করছি।”

ফুল,শুভর দুষ্টমি বুঝে তার বুকে দুইটা ঘা বসিয়ে বলল যাহ।

শুভ আহ করে আর্তচিৎকার করে বুঝাল সে ব্যথা পেয়েছে। ফুল তখন বিচলিত হয়ে শুভর বুকের বাম পাশে হাত রেখে বলল,” বেশি ব্যথা করছে?”

শুভ তখন হেসে ফিসফিস করল,” ব্যথা লাগলে কী ঔষধ লাগিয়ে দিবে?”

শুভর নির্লজ্জ ইশারা দেখে ফুল ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে বাথরুমে চলে গেল।

———————–

রজনীর মধ্যসময়। আদিলকে বাসরঘরে একপ্রকার জোর করে ঢুকানো হয়েছে। আগামীকাল রিসিপশন, আদিল বাসররাত বাহিরেই কাটিয়ে দিতে চেয়েছিল। শুভ দিল না। সে জানাল, একা হাতে সব সামলে নিবে। তাছাড়া বকশি কাকা তো আছেই।”
আদিলকে কথা বলার সুযোগ দিল না। একপ্রকার ঠেলে ঘরে পাঠিয়ে দিল। আজ আদিলের ফ্ল্যাট একদম খালি। আত্মীয়রা গাট্টি পটলা নিয়ে শুভর ফ্ল্যাটে জায়গা নিয়েছে। শুভ যখন নিজের ঘরের বহাল অবস্থা দেখল তখন বলল,” তোমাদের জন্য আমার ঘরটাকে আজকের রাতের জন্য আল্লাহর রাস্তায় দান করলাম।”

আত্মীয়রা শুনে তখন শুভর কান মলে দিল। হাসি মজার মাঝেই কতো সময় পেরিয়ে গেল। রাত তখন তিনটা বাজে।ফুল নিজের ঘরে শুয়ে আছে। শুভ নিচে। গরু জ’বা’ই করা হয়েছে আগামীকালের অনুষ্ঠানের জন্য। আত্মীয়রা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। ফুলের চোখে ঘুম নেই। চোখ বন্ধ করলেই মনে পড়ে শুভর কথা। এদিকে শুভ নিচে চেয়ারে বসে ফুলের ঘরের জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। তার শরীর এখানে পড়ে থাকলেও মনটা ফুলের দিকে পড়ে আছে।

——–

রাতের আঁধারে সকলে ঘুমালেও একজোড়া ছেলে মেয়ের চোখে ঘুম নেই। কিছু বিশ্রী পরিকল্পনা করতে গিয়ে নিজেরাই ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়েছে। শুভর মায়ের যত্নে লাগানো গাছগুলো পিষে দিচ্ছে দুজনের পায়ের মাধ্যমে। বলবান পুরুষের থাবায় মূর্ছা যাচ্ছে মেয়েটা। বলা হচ্ছে, কায়সার ও প্রিয়ার কথা। প্রিয়া সারাদিনই কায়সারকে লক্ষ্য করেছে। একবার ফুলের আশেপাশে আরেকবার তার আশেপাশে ঘুরঘুর করছিল সে। প্রিয়া তখন বুঝল, লোকটার ফুলকে মনে ধরেছে। যখন দেখল, কায়সার এবাড়িতে এসেছে তখনই প্রিয়া নিকৃষ্ট পরিকল্পনা করে ফেলল। আদিল ও সাগরিকাকে নিয়ে যখন সকলে ব্যস্ত ছিল তখন কায়সারের কাছে প্রিয়া গেল। কায়সারের সাথে কথা বলার একপর্যায়ে বলতে লাগল,” মেয়েটাকে কেমন লেগেছে?”

কায়সার জানায়,” কচি মেয়ে। দেখলেই বুকে জ্বালা ধরে।”
” আমি যদি জ্বালা কমানোর ব্যবস্থা করে দেই তো!”

কায়সার নড়েচড়ে উঠলো। সামনে বসা মেয়েটার প্রতি তার আকর্ষণ বেশি। কিন্তু মুখে বলল,” যদি না পারো তাহলে তোমাকে আমার জ্বালা মেটাতে হবে।”

প্রিয়া কিছু একটা ভেবে রাজি হয়ে গেল। আদিলকে ঘরে ঢোকানোর পর প্রিয়াই আত্মীয়দের শুভর ঘরে ঢুকালো। গতকাল রাতে শুভকে বের হয়ে আসতে দেখে এতটুকু বুঝতে পেরেছে সে যে, শুভ ও ফুল এখনো কাছাকাছি আসেনি। শুভ হয়তো গোসল করতে গিয়েছিল। আদিল যদি উপরে থাকে তাহলে শুভ নিচে কাজকর্ম দেখাশোনা করবে। এই ফাঁকে, কায়সারকে ফুলের ঘরে ঢুকিয়ে দিবে।

সব পরিকল্পনা যদি সফল হয়ে যেতো তবে পৃথিবীতে ভাল খারাপের অস্তিত্ব থাকতো না। শুভ নিচে যাওয়ার আগে ফুলের ঘরে এসেছিল। ফুলকে সাবধান করে দরজা আটকে দিতে বলে নিচে চলে গিয়েছিল।প্রিয়া দরজার নব ঘুরিয়ে বুঝলো, দরজা ভেতর থেকে আটকানো। পাশের ঘরে তখনও কয়েকজনের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। প্রিয়া কায়সারের কাছে এসে জানালে কায়সার ঠোঁট কে’টে হাসলো। তার বলিষ্ঠ হাতজোড়া এগিয়ে দিল প্রিয়ার নরম স্পর্শকাতর স্থানে। প্রিয়াকে টেনে জনমুখের আড়ালে ছাঁদে নিয়ে গেলো। প্রিয়াও বাঁধা দিল না। যৌবনপোড়ায় পুড়ে ছটফট করতে করতে নিজের সবকিছু বিলীন করে দিল।

—————–

পরেরদিন সকালটা হলো শত্রুদের জন্য শেষদিন এবং ভালো মানুষের জন্য সুখের দিন। শুভর ফুফু প্রিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসলো। উনার সাথে ছিল চার পাঁচজন মহিলা। ছাদের কোণে বিবস্ত্র অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পেল শুভর ফুফু। মেয়ের পাশেই অর্ধ উলঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে পরপুরুষ। প্রিয়ার মা চিৎকার করে উঠলেন। সাথে আসা মহিলারা ছি ছি করে নিচে নেমে গেল। প্রিয়া ঘুমঘুম চোখে নিজের অবস্থান বুঝতে পেয়ে গা ঢাকলো। কায়সারও ততক্ষণে উঠে গেছে। প্রিয়ার মা মেয়ের গালে কয়েকটা থাপ্পড় বসালেন। কায়সারের দিকে তেড়ে যেতে নিলে কায়সার বলে উঠলো,” যা করবেন নিজের মেয়েকেই করবেন। আমার গায়ে টোকা যেনো না পড়ে। নয়তো মেয়ের মতো আপনার অবস্থাও করে ছাড়বো।”

প্রিয়া মাকে বাঁধা দিল। যার কাছে নিজের সমস্ত কিছু সঁপে দিয়েছে তাকেই বিয়ে করবে বলে জানালো। বাড়ির প্রতিটি সদস্যের কানে ঘটনা তৎক্ষনাৎ চলে গেল। সাগরিকা লজ্জায় নিচে নামল না। ফুলের শাশুড়ি যখন কায়সারের দিকে আঙুল তুলতে গেলে প্রিয়ার কুৎসিত পরিকল্পনার কথা জানাল। শুভর চেহারা তখন দেখার মতো অবস্থা। এই প্রথম কোনো মেয়ের উপর হাত তুলল। প্রিয়ার গালে দুই চারটে থাপ্পড় বসিয়ে বলল,” এখনই এই বাড়ি থেকে বিদায় হয়ে যা, বিষধর নাগিন। আমার ফুলকে নষ্ট করা! ইচ্ছে তো করছে তোর জিহ্বা কে’টে দেই।”

আদিল পুলিশকে খবর দিতে চাইলে ফুফু পা চেপে ধরল। সকলের উদ্দেশে ক্ষমা চেয়ে তৎক্ষনাৎ বাড়ি ছাড়ল।

সাগরিকাকে এরজন্য কেউ দোষারোপ করল না। কেননা, একজনকে বিবেচনা করে আরেকজনকে দোষারোপ করা যায় না।

ফুল পুরোটা সময় চুপচাপ ছিল। এবারও তার ভাগ্য সহায় ছিল বলে নিকৃষ্ট মানুষের পরিকল্পনা থেকে রক্ষা পেল কিন্তু তা আর কতোদিন?

চলবে…………

#দুখীফুল
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_২২

আদিল ও সাগরিকার বিয়ের আনন্দের সাথে কিছু তিক্ত স্মৃতি দিয়ে গেল। ঝড়ের বেগে বিপদ কে’টে গেল কিন্তু কেউ টের পেল না। বলা যায়, বাতাসের সাথে মিশে এসেও চলে গেল। বিয়ের কার্যক্রম শেষ হয়ে ব্যস্ততার দিন শুরু হয়ে গেল। পূর্বের রুটিন মোতাবেক সবকিছুই শুরু হলো। ফুলের ঘুম ভাঙলো খুব সকালে। আজ কলেজে যেতে হবে। আড়মোড়া ভেঙে ফুল বিছানা ছাড়লো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে খোঁপা করতে গিয়ে গলার কাছে স্পষ্ট কামড়ের দাগ দেখতে পেল। খোঁপা করা বন্ধ করে ফুল সেখানটায় হাত বুলালো। চোখের সামনে ভেসে উঠলো গতকাল রাতের ঘটনা।

গতকাল সারাদিন শুভ চুপচাপ ছিল। ফুলের সাথে কথা বলেনি। ফুল অনেকবার কথা বলতে চেষ্টা করেছিল কিন্তু শুভ এড়িয়ে চলে গেছে। ফুল খুব আহত হয়। মনে করার চেষ্টা করে নিজের ভুলের ব্যপারটা। তেমন ভুল মনে করতে পারল না। সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে থাকলেও রাতের মধ্যে সকল মেহমান চলে গেল। শুভর ফ্ল্যাট একদম খালি। ফ্ল্যাটের ভেতরে দুই ঘরে দুইজন বাসিন্দার বাস। রাতে শাশুড়ির সাথে গোছগাছের কাজ করে উপর চলে আসলো ফুল। শুভকে পেল নিজের ঘরেই। ফুলের কেনো যেনো কান্না আসলো। সে দোষ না করেও দোষী হয়ে গেল শুভর কাছে। এমনটা ভাবনায় আসলো। অন্তরে কষ্ট জমিয়ে চোখে পানি রেখে ফুল শুভর কাছে গেল। শুভ তখন শুয়ে ছিল। ফুল শুভর পাশে গিয়ে বসলো। শুভর বুকের বাম পাশটায় হাত রেখে বলল,” কী হয়েছে, শুভ? আমি কী কোনো ভুল করেছি?”

ধরা গলায় কথা বলে ফুল শুভর উত্তরের অপেক্ষা করতে থাকলো কিন্তু শুভকে এক চুল পরিমাণ নড়তে দেখতে পেল না। ফুল এবার শুভর বুকে মাথা রাখলো। শুভর বুকে আছড়ে পড়েই কাঁদতে থাকল। শুভ এবার ফুলের পিঠে হাত রাখল। দুইবার পিঠে হাত বুলিয়ে আশ্বাস দিল যে, সে ফুলের সাথেই আছে। ফুল কান্না থামালো না। এতো সুখ, এতো আদর, এতো ভালোবাসা পাওয়ার পর কয়েকঘন্টার অবহেলা সহ্য করতে পারল না। শুভ বুঝলো, ফুল থামবে না। তাই ফুলকে থামানোর জন্য নতুন অভিনব কৌশল অবলম্বন করল। ফুলকে শুইয়ে দিয়ে নিজে ফুলের উপর উঠে গলায় মুখ গুঁজল। আকস্মিক আ’ক্র’ম’ণে ফুলের কান্না থেমে গেলেও শুভ থামলো না। ফুলের গলায় কা’ম’ড় বসিয়ে দিল। ফুল চোখ বন্ধ করে শুভর অত্যাচার সহ্য করে নিল। শুভ থেমে ফুলের কান্না মিশ্রিত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস কন্ঠস্বরে বলল,” আমি যদি আরেকটা বিয়ে করে ফেলি, তখন কষ্ট পাবে না?”

ফুল আৎকে উঠল। এ কেমন কথা? ফুল ধরা গলায় বলল,” আমাকে বুঝি আর ভালো লাগে না?”

” আমি যেই প্রশ্ন করেছি, তার উত্তর দাও।”
ফুল বলল,” আমার স্থান যদি অন্য কাউকে দিতে চাও, তবে এই বাড়িতে আমার লাশ পড়ে যাবে।”

শুভ ফুলের চোখের পাতায় ঠোঁট ছুঁয়াল, ” এতোই যখন ভালোবাসো, তখন আমার পাশে অন্য মেয়েদের ঘেঁষতে দাও কেনো?”

ফুল বুঝলো শুভর সারাদিনের অভিমানের কারণ। ফুল উত্তর দিতে পারল না। প্রিয়াকে তার আশেপাশে ঘুরঘুর করতে দেখেছে কিন্তু এতো মানুষের সামনে কীভাবে বলবে? শুভ ফুলের কামড়ের জায়গায় চুমু খেলো। ফুলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” নিজের অধিকার আদায় করতে শিখো। নিজেকে শক্তপোক্ত নারী গড়ে তুলো। সবসময় আদিল ভাইয়া অথবা আমি থাকব না। আড়ালে কে কী পরিকল্পনা করতে পারছে আমি না জানতে পারলেও তুমি জানবে। তখন যদি উদ্যোগ না নাও তবে আমাকে হারিয়ে ফেলতে পারো।”

ফুলের চোখজোড়া চিকচিক করছে। এক্ষুণি কেঁদে ফেলবে। শুভ ফুলের গালে হাত রাখল। বুড়ো আঙুলের সাহায্যে গালে মশৃণভাবে বুলাতে লাগল। ফুল চোখ বন্ধ করে শুভর ছোঁয়া উপভোগ করতে থাকলো। তার চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে। শুভ গাল ছেড়ে ফুলের চোখের পানি মুছে দিল, ” চোখের পানিকে আটকে রাখতে শিখো, ফুল! কথায় কথায় চোখের পানি ফেলে দুর্বলরা। আমি চাই তুমি একজন সবল নারী হয়ে উঠো।”

ফুল এবার মুখ খুলল,” তুমি পাশে থাকলে আমি নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলব। আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যাওয়ার নাম নিবে না। তহলে আমি জীবিত থাকা অবস্থায় ম’রে যাব।”

শুভ ফুলকে কথা শেষ করতে দিল না। তার আগেই শুভ কঠিন থেকে কঠিনতম কাজ করে ফেলল। ফুল এবার ঘুমালো না। আবেশে চোখ বন্ধ করে স্বামীর থেকে পাওয়া ছোঁয়া উপভোগ করল।

দুজন মানুষের পবিত্র সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দুজনের কথাই বলা হবে। দুজনের ভালেবাসার পরিমাপ করা যাবে না। দীর্ঘসময় পর শুভ ফুলকে ছেড়ে দিয়ে ফুলের পাশে শুয়ে পড়লো। ফুলের ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলা দেখে চোখ ঘুরিয়ে নিল। শুভ যথেষ্ট ম্যাচিউর। এখনই সংসার নামক ধাঁধায় নিজেদের জড়াতে চায় না। তারজন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। ফুল পাশ ফিরে গেল। শুভ উঠে বারান্দায় চলে গেল। বিয়ে বাড়ির লাইটগুলো এখনো খোলা হয়নি। আগামীকাল খোলা হবে। শুভ সেদিকেই দেখছে। ফুলে কিছুক্ষণ পর শুভর পাশে এসে দাঁড়ালো। শুভ ফুলের দিকে তাকিয়ে বলল,” সকালে কলেজে যেতে হবে, ফুল! আগামীকাল থেকে আমাদের ব্যস্ত সময় শুরু।”

ফুলের মন খারাপ হলো নাকি ভালো জানে না। শুভর সাথে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

রাতের কথা ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় ব্যয় করে ফেলল ফুল। হাত মুখ ধুয়ে চুলে খোঁপা করতে করতে সিঁড়ি ডিঙিয়ে নিচে নামলো। রান্নাঘর থেকে পাতিলের টুংটাং শব্দ শুনতে পেয়ে ফুল ভাবলো তার শাশুড়ি হয়তো উঠে পড়েছে। কিন্তু ফুলের ধারণা ভুল প্রমাণ করে রান্নাঘরে সাগরিকাকে দেখতে পেল। ফুল অবাকের সাথে লজ্জাও পেলো। ফুলকে দেখে সাগরিকা হেসে বলল,” এসেছো? আজ তো কলেজ আছে তাই না! আমি নাস্তা বানিয়ে ফেলেছি। টিফিনে কি খাবে বলো?”

ফুল ইতস্ততঃ হয়ে বলল,” সরি আপু, আসলে দেরী হয়ে গেছে।”

সাগরিকা মুখ ভরে হাসলো। পেঁয়াজ ছিলতে ছিলতে বলল,” তুমি আমাকে কুটনৈতিক জা ভেবো না। সারা বছর রান্নাঘরে পা না রাখলেও আমি কিছু মনে করব না।”

ফুল হাত কচলাতে থাকলো। সাগরিকা ফুলকে সহজ করার জন্য বলল,” দুপুরের জন্য কিছু রান্না করতে চাও?”

ফুল নিচু স্বরে বলল,” ভাবছিলাম, বিরিয়ানি রান্না করব।”

” চমৎকার। আদিল আর শুভর বিরিয়ানি খুব পছন্দ। আমি গোস্তো ভিজাই। তুমি মসলা রেডি করে ফেলো।”

ফুল, সাগরিকার সাথে সহজ হতে চেষ্টা করল। দুই জা মিলে রান্না শেষ করে ফেলল। ফুলেরা তিনজনই বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকাল চারটা বাজবে। সাগরিকা তিনজনের জন্য ছোট হটপটে বিরিয়ানি ভরে দিল। ফুল তখন স্যালড কাটছিল। ফুলের হাত থেকে এক প্রকার কেড়ে নিয়ে সাগরিকা বলল,” অনেক রান্না করেছো। কলেজে যেতে হবে না? এখনই সংসারে হাত দিলে পড়াশোনা গোল্লায় যাবে। যাও তৈরি হয়ে নিচে নেমে আসো। আরিবকেও ডেকে দিও।”

অনেকদিন পর আরিব নামটা শুনে ফুলের অন্তর ধক করে উঠলো। কতোদিন পর এবাড়িতে কেউ এই নামে ডাকলো। ফুল এই বাড়িতে আসার পর থেকে শুভ বলেই সবাই ডাকতে শুরু করেছে। ফুলের বিয়ের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। বুকে একরাশ হাহাকার নিয়ে তৈরি হতে চলে গেল। তবে সাগরিকার ব্যবহারে মুগ্ধ হল ফুল। তাকে বড়ো বোনের মতো আগলে রাখে। ফুলের একটুর জন্যও মনে হয় না তার অপর পাশের মানুষটি তার জা হয়।

শুভকে আর ডাকতে হলো না। কলেজ ড্রেস পরে পরিপাটি হয়ে বের হয়ে ফুলের মুখোমুখি দাড়ালো। ফুলকে তৈরি হতে না দেখে হাতের বন্ধনীর দিকে তাকালো শুভ। ভ্রু যুগল কুঁচকে প্রশ্ন করল,” এখনো তৈরি হওনি? কলেজে যাবে না? নাকি পড়াশোনা বাদ দিয়ে সংসার করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছো। বলে রাখি ফুল! এই চিন্তাটা ভুলেও মাথায় আনবে না।”

ফুল ঘরে যেতে যেতে উত্তর দিল,” বেশি কথা বলো। পাঁচ মিনিট লাগবে। তুমি নিচে যাও।”

শুভ ঠোঁট কামড়ে ধরলো। ফুলকে জ্বালানোর জন্য উঁচু আওয়াজে বলল,” কি বললে? কাছে আসবো?”

ফুল দরজা চাপাতে নিয়েও চাপালো না। মাথা একটুখানি বের করে বলল,” ভালো হয়ে যাও, মাসুদ!”

শুভ তেড়েমেড়ে আসতে নিলে ফুল দরজা আটকে দিল। শুভ হেসে নিচে নামলো। ফুল পাক্কা আট মিনিট পর নিচে নামলো। সবসময়ের মতো চুলে একটি বিনুনি করে পিঠে ঝুলিয়ে দিল। মুখে কোনো কৃত্রিম সাজসজ্জা নেই। শুভর কাছে এই ফুলকে দেখেই ডাকতে ইচ্ছে করে, সতেজ ফুল।
আজকাল শুভর ভাবনায় ফুলকে নিয়েই স্বপ্ন বুনে। আদিল উপর থেকে তৈরি হয়ে নিচে নামলো। সাগরিকা হাতে মুখে পানি ছিটাতে গেছে। ফুল আদিল আর শুভকে নাস্তা দিয়ে আরেক প্লেটে শাশুড়ির জন্য নাস্তা তৈরি করল। ফুলের শাশুড়ি বিয়ের চাপে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফুলের হাত ধরে নিজের পাশে বসিয়ে বললেন,” বোস তো! আমরা নিয়ে খেতে পারব। সাগরিকা কই গেলো। মেয়েটা এত চঞ্চল! এক মিনিটও বসে থাকে না। এই সাগরিকা! ”

সাগরিকা নিচে নামলো। শাশুড়িকে বসে থাকতে দেখে জিভ কে’টে কানে হাত দিয়ে বলল,” সরি মা, আর হবে না। তোমরা শুরু করো।”

” তোদের আজই এতো চাপ নিতে কে বলেছে? আমি কী ম’রে গেছি! শোন, আমি একদম সুস্থ। একা একা আর কাজ করতে আসবি না। আমাকে ডাকবি। বউ শাশুড়ি মিলে কাজ করলে ভালেবাসা বাড়ে।”
” আচ্ছা, আচ্ছা আমার আম্মাজান! পরবর্তীতে আমরা এমন ভুল করব না।”

আদিল চুপচাপ খাচ্ছে। কথা বলছে না। শুভ মোক্ষম সুযোগ পেল বড়ো ভাইকে ক্ষ্যাপানোর জন্য।
শুভ আদিলের দিকে তাকিয়ে মুখ খুলল,” আহারে, আমার ফুলের মতো বউটা কাজ করতে করতে শেষ!”

আদিল নড়েচড়ে বসলো। আজ তার বউ সারাজীবনের জন্য বাড়িতে চলে এসেছে। এবার আদিল বুক ফুলিয়ে বলল,” আমার বউটা কী নদীতে ভেসে আসছে? সে কাজ করেনি? এমনভাবে বলছিস, যেনো তোর বউই পৃথিবীর মধ্যে একাই।”

শুভ নাক উঁচু করে আদিলের দিকে ঝুঁকে গেল,” পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। কারো কিছু জ্বলছে নাকি?”

সাগরিকা হেসে উত্তর দিল,” থামো, আরিব না না শুভ। কলেজের দেরী হয়ে যাচ্ছে।”

শুভ থামলো না। বড়ো ভাইকে শুনিয়ে বলল,” আমার বউ তিনমাস ধরে আমার কাছে, তোমার বউ দুইদিন ধরে। আসো খেয়াল রাখার বিষয়টা পরিমাপ করি। বলে দিলাম ভাই, আমারটাই বেশি হবে।”

আদিল খুকখুক করে কেশে উঠলো। শুভর দিকে রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করে শাসাল,” বড়ো ভাইয়ের সাথে মশকরা করিস? আমিও শুধে আসলে সব হিসাব নিয়ে ছাড়বো।”

শুভ ভ্রু নাচিয়ে বলল,” আমার বউ সেরা। তার স্বামীও সেরা।”

——————

গাড়ি থেকে নামতেই শুভ ফুলের হাতে চিঠি গুঁজে দিল। কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,” ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই পড়ে নিবে।”

ফুলের চোখজোড়া চিকচিক করে উঠলো। সেখানে ভর করলো এক আকাশ সমান আনন্দ। আজও কলেজে পৌঁছে ফুল ও শুভ আলাদা হয়ে গেল। শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে ফুল ভাবল, বাথরুমে যাওয়ার বাহানায় চিঠি পড়ে আসবে। কিন্তু তা আর হলো কই! এতোদিন পর প্রাণ প্রিয় বান্ধবীকে পেয়ে আরিফা ঝাঁপিয়ে পড়লো। ততক্ষণ ফুলের গলায় ঝুলে থাকলো যতক্ষণ না ফুল তার পাশে গিয়ে বসলো।
” দোস্ত রে, তোকে আজ অন্যরকম লাগছে।”

ফুল হেসে বলল,” তোকে তো বিবাহিতা মহিলা মনে হচ্ছে।”
আরিফা সাথে সাথে ব্যাগ থেকে আয়না বের করে চেহারা দেখল। গালে হাত বুলিয়ে বলল,” কই কই।”
ফুল হেসে ফেলল। সারা ক্লাসরুমে নাফিসকে খুঁজলো। নাফিস এখনো আসেনি। ফুল আরিফাকে নাফিসের কথা জিজ্ঞেস করল,” নাফিস আসেনি?”
” এসেছে তো! বাহিরে গেছে হয়তো।”

ক্লাস শুরু হতে এখনো দশ মিনিট বাকী। ফুল ভাবল নাফিসের সাথে কথা বলে আসবে সাথে চিঠিও পড়ে আসবে।

নাফিসকে পেল কলেজের বারান্দায়। দেয়ালে হেলান দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। ফুল প্রফুল্লচিত্তে ছুটে গেল। নাফিসকে উদ্দেশ্য করে বলল,” কেমন আছিস, নাফিস?”

এতোদিন পর প্রিয় বন্ধুর কন্ঠস্বর শুনে অন্তর শীতল হয়ে গেল নাফিসের। কিন্তু পরমুহূর্তে ফুল অন্য কারো মনে পড়তে মুখে কাঠিন্যভাব এনে ফুলের দিকে ফিরে তাকাল। ফুলকে ভালভাবে দেখে উত্তর দিল,” ভাল আছি। তুই কেমন আছিস?”
” ভাল। ক্লাসে যাবি না?”
” যাব।”

নাফিস কিছুক্ষণ ফুলের দিকে তাকিয়ে থাকলো। গলার পাশে কামড়ের দাগ দেখে বুক জ্বলে উঠলো। নাফিস সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিল। তার ভাবনায় ফুলকে নিয়ে খারাপ ভাবনা আনতে চায় না। ফুলকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে, ফুল শুভর সাথে সুখে আছে। নাফিস নত চোখে বলল,” ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। চল যাই।”

ফুল আমতা আমতা করে বলল, ” তুই যা। আমি একটু পর যাব।”
নাফিস মাথা নেড়ে চলে আসতে নিলে ফুল পিছন থেকে ডেকে উঠলো, ” আজ তোর জন্য বিরিয়ানি নিয়ে এসেছি।টিফিনের সময় কিন্তু একসাথে খাব।”

নাফিস তাচ্ছিল্য করে হেসে না ফিরেই জবাব দিল,” আমাকে নিয়ে খেলে তোর বর রাগ করবে না?”

ফুল উত্তর দিতে পারল না। মনে প্রশ্ন জাগল, ” শুভ কী রাগ করবে?”

ফাঁকা জায়গায় ফুল চিঠি খুলে পড়তে শুরু করল,

প্রিয় সতেজফুল,

আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশেষকরে আমার। জানি আমাদের সম্পর্ক হালাল, পবিত্র কিন্তু এখনো সেই সুখময় সময় আসেনি। বিগত দিনগুলোর পাগলামির জন্য আমি নিজেকে দোষারোপ করছি। যতোই হোক ছেলে মানুষ তো! চোখের সামনে সুন্দরফুলকে দেখে নিয়ন্ত্রণ করা যায়!

শুনো ফুল, কলেজ শুরু হয়েছে তারমানে আমাদের পড়াশোনা শুরু করতে হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর আমার সাথে পড়তে বসা আবশ্যক। আমি কিন্তু পড়াবো তোমাকে দুষ্টুমি করব না। আর যদি করেও থাকি তো আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে। কী দিবে না!

ফুল, আমার আর তোমার মাঝে আমাদের দুজনের বয়সটা চলে এসেছে। আমাদের জীবন সঠিকভাবে গড়তে হবে। আমাদের পরিচয় বানাতে হবে। তারজন্য আমার তোমার সাহায্যের প্রয়োজন। প্লিজ আমাকে সাহায্য করো, প্লিজ!

আমি জানি, তোমার কাছে সবকিছু এলোমেলো লাগছে। আমার উপর ভরসা রেখো! সব ঠিক করে দিব।

ফুলবউ, আমার আদরের ফুল বউ। অনেক আদর আমার বউয়ের জন্য। আমি তোমার মাঝে দিনে দিনে ডুবে যাচ্ছি। তোমার মায়ায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে খুব কষ্ট হয়। ব্যপার না, আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব করব।

প্রিয় লাজুকফুল, তোমাকে লজ্জায় ফেলার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আজকের মতো শেষ লজ্জা দেয়ার জন্য তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। বাড়ি থেকে ফেরার সময় গতকাল রাতে দেয়া আমার আদরের দাগ ঢেকে আসোনি। ক্লাস শুরু হওয়ার আগে ব্যবস্থা করে নিও!

ইতি,
তোমার ভোলাভালা বর

চিঠি পড়ে ফুলের হাত সাথে সাথে গলায় চলে গেল। সে আশেপাশে তাকিয়ে বিনুনি দিয়ে দাগটা ঢেকে দিল। পরক্ষণেই কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়লো। নাফিস তার গলার দাগ দেখে ফেলেনি তো! তারজন্যই কী ছেলেটা ফুলের দিকে তাকিয়ে কথা বলেনি!
ফুল কপাল চাপড়াল। মনে মনে শুভকে শায়েস্তা করতে ফন্দি আঁটতে থাকল।

চলবে…..