#ইতি_তোমার_সুখফুল
#দুখীফুলের_দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#আফসানা_মিমি
#পর্ব_৮
প্রিয় পাষণ্ড,
তোমার চিঠি পেলাম। বহু দিন পর তোমার কথা শুনলাম। জানো, চিঠির প্রতিটি শব্দ পড়তে গিয়ে মনে হলো, কত কিছু ছিল যা হয়তো কখনো বলিনি। আবার অনেক কিছু ছিল যা জানাও উচিত ছিল।
তুমি বলছো, তুমি ফিরেছো। কিন্তু তুমি কি জানো, আমি কীভাবে সেই চার বছর কাটালাম? তোমার অনুপস্থিতিতে, আমি একা, একদম একা ছিলাম। তুমি চলে যাওয়ার পর, প্রতিটিদিন যেন মৃত্যু হয়ে উঠেছিল। আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম, আমার স্বপ্নগুলোও যেন মুছে গিয়েছিল। তোমার প্রতি কষ্টের মাঝেও, আমি কোনোদিন তোমাকে ঘৃণা করিনি। বরং, আমি তো তোমার প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রতিটি দিন অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু তুমি কখনো ফেরেনি।
তুমি যে বলছো, তোমার ভুলগুলো মুছে ফেলতে চাও, সেই ভুলগুলো তোমার অনুভূতির ওপর ভিত্তি করে আমার ওপর চাপানো। কিন্তু, জানো, তোমার জন্য আমি আর ভুল গুলো মেনে নেব না। কারণ, তুমি চলে যাওয়ার পর, আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি আমার কষ্টের সাথে বাঁচতে শিখেছি। আমি আর তোমার অশ্রু মুছতে চাই না, কারণ, তোমার ভুলে আমি অগণিত রাত নিঃশব্দে কেঁদেছি।
এখন তুমি ফিরে এসে আবার বলে চলেছো, “আমাকে একবার সুযোগ দাও,” কিন্তু সেই সুযোগ আর আমি দেব না। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি শুধু নিজের স্বার্থে ফিরে এসেছো। তুমি ফিরেছো, কিন্তু আমি জানি, তোমার আসার কারণ আমি না, বরং তোমার একলা জীবনের শূন্যতা।
তোমার ক্ষমা চাওয়ার চেষ্টার কোনো মানে নেই, কারণ আমি কোনোদিন তোমার কাছে ক্ষমা চাইবো না। আমি আমার জীবন নতুনভাবে সাজাতে চাই। তাই, তোমার ফিরে আসার পরেও, আমার পুরনো কষ্টের জায়গা নেই।
ইতি,
কষ্টে জর্জরিত একজন নারী।
ফুল সময় নিয়ে উত্তর লেখলো। আগন্তুকের মতোই দরজার নিচের অংশ বাহক বানালো। তবে চিঠি প্রদানকারীর মতো পুরোটা কাগজ অপরপাশে রাখলো না। কিছু অংশ এপাশে রাখলো। ফুল বিছানার উপর আসন পেতে বসলো। তার কোলে বালিশ রেখে থুতনি ঠেকালো। দশ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পরও যখন কেউ আসলো না তখন ফুল বিরক্ত হলো। একবার ভাবলো, কাগজ নিয়ে আসবে পরমুহূর্তে ভাবলো, মানুষটার এই চিঠি পড়া প্রয়োজন। নয়তো কীভাবে ফুলের সাথে এতে বছরে ঘটা কষ্টগুলো উপলব্ধি করতে পারবে!
অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ফুলের চোখ লেগে গেল, টের পেলো না। ফুলের ঘুম ভাঙলো দরজার কড়াঘাতে আওয়াজ শুনে। কতো সময় নিচু হয়ে বসে ঘুমাচ্ছিল কে জানে! ঘাড় ব্যথা করছিল। চোখ কচলে বিছানা ছাড়লো ফুল। দরজা খুলে দেখতে পেল, সাগরিকা কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। ফুল ঘুমঘুম সুরে বলল,” কয়টা বাজে, ভাবী?”
সাগরিকা ফুলকে ধাক্কা দিয়ে ঘরে ঢুকলো। রাগে গিজগিজ করতে করতে বলতে লাগল,” তোর ঘরে কী মধু মাখানো আছে যে, একবার ঘরে ঢুকলে দিন দুনিয়ার সব ভুলে যাস?”
ফুল মাথা চুলকালো। ঘুরে দরজার দিকে তাকাতেই দেখতে পেল, শুভর ঘরের দরজা খোলা। শুভর হাতে তার লেখা সেই কাগজ। দরজার কাছে চেয়ার পেতে বসে আছে সে। হা করে ফুলকে গিলে খাচ্ছে। ফুল নিজের দিকে তাকালো। ওড়না বিহীন ফুল নিজেকে দেখে লজ্জা পেলো। নজর সরিয়ে নিজেকে ঠিক করে ঘরে ঢুকে সাগরিকার উদ্দেশে বলল,” কাজ করছিলাম ভাবি, কখন যে চোখ লেগে গেল, বুঝতে পারিনি। আমার খোঁজ করছিলে?”
সাগরিকা বেশি কিছু না বললেও বলল,” রেডি হয়ে নে। তোর সংগঠন দেখতে যাব।”
ফুল হাসলো। আড়মোড়া ভেঙে ফ্রেস হতে চলে গেল।
—————-
বিকেলের রোদ পড়ন্ত। ফুল আর সাগরিকা সংগঠনের কাজ শেষে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল একটি রিকশার। পথচারীরা ছুটে চলেছে। ঠিক তখনই কালো সানগ্লাস পরা একটি বাইক এসে থামল।
“এই যে, শুনুন!”
গভীর কণ্ঠে ডাকলো একজন। ফুল বিরক্ত মুখে ঘুরে দাঁড়াল। “আমাকে বলছেন?”
বাইক থেকে নেমে এল লম্বা-চওড়া চেহারার লোকটি। হাতে সোনালি ঘড়ি, কাঁধে হালকা ঝোলা,”হ্যাঁ, আপনাকেই বলছি।”
শাহিনের কটূক্তি ও পরিচিতি প্রকাশ পেলো কথাবার্তায়।
” আপনিই এই এলাকার সংগঠনের বড়কর্তা, তাই না? মেয়ে হয়ে বড় বড় স্বপ্ন দেখছেন।”
সাগরিকা এক পা এগিয়ে বলল, “আপনার সমস্যা কী?”
শাহিন হেসে বলল, “আরে, ভাবী, সমস্যা নয়, সমাধানের জন্য এসেছি। এতদিন ছেলেদের পাঠাতাম, কাজ হয়নি। ভাবলাম, এবার নিজেই দেখা করি।”
ফুল অবাক হয়ে বলল, “আপনি কে?”
“আমি শাহিন। এই এলাকায় বড় নেতা, আপনি জানেন না? আর আপনি যেটা করছেন, সেটা চলবে না। আমাদের কিছু পাওনা আছে। চাঁদার টাকা যখন চাইছি, তখন—”
শাহিনের কথায় স্পষ্ট হুমকি। শাহিন কথা শেষ করার আগেই ফুলের চোখ তিরস্কারে জ্বলজ্বল করল, “আপনার চাঁদা পাওয়ার অধিকার কে দিয়েছে? আমরা অন্যায় কিছুতে টাকা দিই না। তাছাড়া সংগঠনের জন্য বরাদ্দকৃত বাড়ি আমার জমিতেই তৈরি করা হয়েছে।”
শাহিন কিছুটা থমকে গেল। মৃদু হাসল, কিন্তু সেই হাসিতে কুটিলতা স্পষ্ট, “এত সাহস! আপনার এই রাগ, এই দৃঢ়ত, বেশ পছন্দ হলো। আপনাকে অনেক আগেই দেখা উচিত ছিল।”
সাগরিকা পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখে সতর্কতা, যেন ফুলকে কিছু বলতে চায়। কিন্তু ফুল সোজা দাঁড়িয়ে বলল, “আপনার পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে ভাবার সময় আমার নেই। নিজের পথে থাকুন, নয়তো আইন-আদালতে যেতে হবে।”
শাহিন এবার রাগে গর্জে উঠল, “আপনারা মেয়েরা এত বড়াই করবেন না। যা চাইছি, সেটা না দিলে আমার হাতে আরও উপায় আছে। আর এই এলাকায়, আমার কথা কেউ এড়াতে পারে না।”
সাগরিকা তখন দৃঢ় গলায় বলল, “আপনার অন্যায় থামান। আপনি যা করছেন, তার ফল ভালো হবে না। এই সংগঠনের সব মেয়ে আপনাকে এক হয়ে দাঁতভাঙা জবাব দিতে পারে।”
শাহিন কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর চোখ সরু করে বলল,”আপনাকে তো আবার দেখা হবে, ম্যাডাম। দেখি, কত দিন টিকে থাকেন।”
বাইকে উঠে শাহিন চলে গেল। কিন্তু তার যাওয়ার সময় চোখের কোণে ছিল গভীর এক দৃষ্টি—যা ফুলকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলল। সাগরিকা বলল, “ও এমন লোক, সহজে ছাড়বে না। আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
ফুল গম্ভীর গলায় বলল, “প্রতিবাদের পথ সহজ নয়। কিন্তু আমরা প্রস্তুত।”
—————
শাহিনের হুমকি শুনে ফুল সিদ্ধান্ত নিল। আজ রাত্রি সে মেয়েদের সাথেই থাকবে। সে মেয়েদের ঘুমিয়ে যেতে বলে বরাদ্দকৃত অফিসে এসে বসলো। প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য লেখতে শুরু করল ফুল। তার লেখায় মনোযোগের অভাব। মন প্রাণ পড়ে আছে শুভর কাছে। নিজের ভাবনার উপর বিরক্ত হয়ে ফুল খাতায় লেখতে থাকলো। তার সমস্ত রাগ পড়লো অভাগা কলমের উপরে।
গভীর রাতে সংগঠনের অফিসটি প্রায় ফাঁকা। একটি কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ, দূরে মৃদু পাখির ডাক। দেয়ালে কিছু পোস্টার—”নারীর অধিকার”, “সহমর্মিতার শক্তি”।
শুভর পা থমকে গেল দরজার সামনে। ভেতরে আলো জ্বলছে। ঘরে প্রবেশ করে দেখল, ফুল টেবিলে মাথা গুঁজে কিছু লিখছে। ঠোঁট শক্ত করে রেখেছে, যেন নিজের মনোকষ্ট লুকোচ্ছে। সাগরিকা ফোন করে শুভকে আনিয়েছে। এও বলেছে, ” ফুল বিপদে আছে।”
ফুল ও সাগরিকার সাথে বিকালবেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো জানিয়েছে সাগরিকা। শুভ নিচুসুরে ফুলকে ডাকলো, “ফুল।”
ভেতরে ঢুকে আস্তে ডাকল শুভ। ফুল মাথা তুলল না। কেবল বলল, “এখন সময় নেই। কী চাই?”
“তোমার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি।”
“যে কথা চার বছর ধরে বলোনি, সেটা আজ বলতে চাও?”
শুভর মুখটা এক মুহূর্ত ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ” ভুল করেছি, ফুল। কিন্তু ঠিক করতে এসেছি।”
” ভুল ঠিক করার কী দরকার? তুমি তো ভালোই আছ। সমস্যা হলো আমার। এখানে কাজ করছি, প্রতিবেশীরা নাম রাখছে। আজও কারও মন্তব্য শুনে যেতে হয়েছে।”
ফুলের কণ্ঠে বিষ ছিল, কিন্তু চোখের কোণে জমে থাকা পানির রেখাগুলো আড়াল করা যায়নি।
“তুমি জানো, আমি ওদের কথা শুনি না। তোমার পাশে থাকতেই এসেছি।”
“পাশে? এখন? যখন আমার জীবনে সব ঝড় থেমে গেছে?” ফুলের ঠোঁট বেঁকে গেল তিক্ত হাসিতে।
বিতর্কের মাঝেই হঠাৎ একটা বিকট শব্দ হলো। দুজনেই চমকে উঠল। পেছনের দরজা আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেল।
“দরজাটা কী হলো?”
শুভ গিয়ে দরজা টানল।
“বদ্ধ হয়ে গেছে। আরে, তালাটা কি—”
তালাটা প্রায়ই আটকে গেল। ফুল হালকা বিরক্ত স্বরে বলল। “তোমার আসা কি দরকার ছিল?”
শুভ হতাশভাবে বসে পড়ল। “তোমার সঙ্গে কথা বলার জন্য যত বাঁধা আসে, তার চেয়ে বড়ো তালা তোমার হৃদয়ে আছে।”
ফুল বসলো না। জানালা দিয়ে বাইরে উঁকিঝুঁকি দেয়ার চেষ্টা চালালো। কুয়াশাজড়ানো রাতে দূর দূরান্তে কিছুই দেখতে পেল না। ফুল দেখল, শুভ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ফুলের কণ্ঠস্বরে তখন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ,
“তুমি জানো কিছু? জানো আমার রাতগুলো কীভাবে কেটেছে? জানো কারা আমার কাজের পেছনে কথা বলে? জানো, এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটা ইটে আমার কত ঘাম ঝরেছে?” ফুলের কণ্ঠ ফেটে গেল।
শুভ ধীরে ধীরে এগিয়ে এল, ” আমি জানি না, ফুল। কিন্তু শিখতে চাই। শুধু একবার আমাকে বিশ্বাস করো।”
ফুল জানালার গ্রিলে হাত রেখে নিচে বসে পড়লো। শুভ ফুলের পাশে এসে বসলো। ফুলের দুহাত মুঠোয় নিয়ে তাতে চুমু খেলো। তারা একে অপরের কাছাকাছি এলেও ফুলের অভিমান ভাঙছে না। ঘরের আটকে থাকা পরিস্থিতি তাদের শারীরিকভাবে একসঙ্গে রাখলেও মানসিক দূরত্ব ক্রমশ স্পষ্ট হয়।
“এই দরজা খোলার জন্য লোক ডেকে আনতে হবে,”
ফুল নিজেকে শুভর কাছ থেকে ছাড়িয়ে মোবাইল খুঁজতে লাগল।
“তোমার কি মনে হয় না, এই মুহূর্তটা আমাদের দরকার ছিল?”
শুভ হঠাৎ বলে উঠল। ফুল থেমে গেল। এক মুহূর্ত চুপ। তারপর বলল, “আমাদের কোনো মুহূর্তের প্রয়োজন নেই। সময়ের সাথে সাথে সকল প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।”
———
রাত গভীর। সংগঠনের ঘরটি ছোট, এক কোণে একটি পুরনো টেবিল, জানালার বাইরে চাঁদের ম্লান আলো। দরজার হাতলটি ভেঙে গেছে, আর ঘরে কারও উপস্থিতি নেই। বাহির থেকে তালা দেয়া। ইচ্ছাকৃতভাবে যে করা হয়েছে ফুল বুঝতে পেরেছে। এই ঘরটির পরের ঘর ফাঁকা থাকলেও পরের ঘরে মেয়েদের আসা যাওয়া আছে। কেউ কী ওদের আওয়াজ শুনতে পায়নি? হাস্যকর।
ফুল দরজায় আঘাত করে আপনসুরে বলতে শুরু করল, “এটা কি সত্যি দরকার ছিল?”
ফুল বিরক্ত মুখে বলল। শুভ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “তুমি আরেকটু ধৈর্য ধরতে পারো? দরজা এমনিতেই খুলে যাবে।”
ফুল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। “এই আটকে পড়াটা তোমারই পরিকল্পনা নয় তো?”
শুভ একটু মুচকি হাসল। “তোমার সঙ্গে একা সময় কাটানোর জন্য এরকম ফন্দি আমায় করতে হবে?”
প্রথমে তীব্রতা, তারপর ধীরে নরম হওয়া। ফুল চোখ সরিয়ে বলল, “তোমার এসব হাসি আমার ভালো লাগছে না।”
ফুল গা ঝাড়া দিয়ে জানালার দিকে চলে গেল। শুভ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, “ফুল, আর কতদিন এভাবে থাকবে? আমি তো মেনে নিয়েছি, আমার ভুল ছিল।”
“মেনে নেওয়া আর শোধরানোর মধ্যে অনেক তফাৎ, শুভ। তুমি সেটা বুঝবে কবে?”
ফুলের কণ্ঠে ছিল অভিমানের ঝলক। শুভ মাথা নিচু করে টেবিলের কোণায় আঙুল ঘুরাতে লাগল। “আমি চেষ্টা করছি, ফুল। তোমার যতটা কষ্ট, ততটাই আমারও।”
ঘরের মৃদু আলোর মধ্যে ফুলের মুখ যেন আরও উজ্জ্বল দেখাচ্ছিল। শুভ তাকে একপলক দেখে বলল,”তোমাকে কখনো বলতে পারিনি, ফুল। কিন্তু তুমি যে এই ঘরের মতো সবকিছুর মধ্যেও আলাদা, নিজের মতো সুন্দর।”
ফুল ধীরে ঘুরে তাকাল। তার চোখে অভিমান থাকলেও শুভের কথাগুলো মনে একটা হালকা দোলা দিল।
“তুমি কি মনে আছে, আমাদের প্রথম কোথায় দেখা হয়েছিল?”
শুভ হঠাৎ জিজ্ঞেস করল। ফুল একটু হাসল। “হ্যাঁ, মনে আছে। কলেজের ঝাও গাছের নিচে দাড়িয়ে ছিলাম। তুমি পিছন থেকে জিজ্ঞেস করেছিলে, “এই মেয়ে, তুমি সবসময় মনমরা হয়ে থাকো কেনো? তোমার হাতে ছিল পুরোনো একটি বই।”
শুভ এক পা এগিয়ে এসে বলল, ” সেদিনও জানতাম না, পরের রাতে তুমি আমার বউ হবে।”
ফুল কিছু বলল না। শুভ পুনরায় বলে উঠলো,” আমাদের কাছাকাছি আসার সেই রাত্রির কথা মনে আছে, ফুল?
আজ এতদিন পরেও যদি একটা রাত তোমার সঙ্গে কাটাতে পারি, সেটাই আমার পাওয়া।”
ফুল থমকে গেল। সারা গায়ে শিহরণ বয়ে গেল। ফুলের অভিমান ধীরে গলে যেতে লাগল। ফুল হালকা হেসে বলল, “তুমি কি সত্যিই ভেবেছিলে, শুধু কয়েকটা কথা বললেই আমি সব ভুলে যাব?”
শুভ মাথা নেড়ে বলল, “আমি শুধু চাই, তুমি একটা সুযোগ দাও। তোমার ভালোবাসা ছাড়া আমি কিছুই নই।”
ঘরের বাতাস হালকা হয়ে এলো। ফুল কিছু বলল না, তবে শুভকে পাশে বসতে দিল। চাঁদের আলো জানালা দিয়ে শুভর মুখে পড়ছিল। ফুল ধীরে বলল,
“শুভ, যদি আরেকবার কষ্ট দাও, তাহলে কিন্তু…”
“তাহলে আমি নিজেই নিজের কপালে ঠুক দেব!”
শুভ তার হাসি চেপে বলল। ফুল এবার নিজের হাসি লুকাতে পারল না।
চলবে…….