অতল গহ্বরে নীরবতা পর্ব-২৫+২৬

0
324

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২৫

নূর তার মাকে খুঁজতে খুঁজতে চোখ কচলাতে কচলাতে রায়ানের রুমে এলো। কেবলি ঘুম ভেঙেছে তার। রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“আম্মু ক্ষুধা পেয়েছে।”

হুট করেই সামনে তাকাতেই একগাল হাসলো নূর। চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো তার।

“বার্বি ডল”

আমায়রা মুচকি হেসে নূরের কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো। নূরের গালে টুক করে চুমু খেলো। নূরও চুমু খেল। নাইমা সোফা থেকে উঠতে নিবে তার আগেই আমায়রা বলল,
“আপু কোথায় যাচ্ছেন?”

নাইমা ভ্রুকুচকে বলল,
“তোমাকে না তুমি করে বলতে বললাম।”

আমায়রা আলতো হেসে বলল,
“আচ্ছা আপু কোথায় যাচ্ছো?”
“নূরের নাস্তাটা নিয়ে আসি।”

“আপু দরকার নেই। আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তুমি বসো এখানে।”

নাইমা পাশে বসলো। আমায়রা একটু একটু করে খাচ্ছে আর নূরকে খাইয়ে দিচ্ছে।

তাহসানের ডাক পেয়ে নাইমা চলে গেল। নূর আমায়রার কোল থেকে নেমে বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার খুলে সেখান থেকে চকলেট বের করলো। এগুলো সব রায়ান এনে রাখে নূরের জন্য। নূর একটা চকলেট আমায়রা দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
“বার্বি ডল এটা তোমার জন্য।”

আমায়রার চোখমুখ চিকচিক করে উঠলো। হুট করেই আমায়রার মনে পরলো এটা তো রায়ানের রুম চকলেটও তো সেই রেখেছে। আমায়রা গাল ফুলিয়ে বলল,
“না কিউটি তুমি খাও।”
নূর ভ্রুকুচকে সোফায় উঠে বসলো। তীক্ষ্মচোখে তাকালো আমায়রার দিকে। আমায়রা গাল ফুলিয়ে বকবক করছে। নূর কিছুটা দমে বলল,
“আচ্ছা বার্বি ডল তুমি চাচ্চুর রুমে কি করছো?”

আমায়রা ভাবুক কন্ঠেই বলে উঠলো,
“বাঁশ খাচ্ছি।”

নাইমা এসে বলল,
“আমায়রা গোসল করে নেও। আত্মীয় স্বজন আসতে শুরু করবে এখনি। তোমাকে আবার সাজিয়ে দিতে হবে।”

নূর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আম্মু বার্বি ডলকে সাজিয়ে দিবে কেন। বার্বি ডলের কি আজকে বার্থডে।”

নাইমা হেসে নূরকে কোলে নিয়ে বলল,
“না আম্মু একটা অনুষ্ঠান আছে তো।”

আমায়রা আমতা আমতা করে বলল,
“আপু টাওয়েল আর জামা কাপড়ের ব্যাগটা।”

তখনি রুমে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলো আবির। হাতের ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
“আমায়রা নেও ভাই এগুলো তোমাকে দিতে বলেছে। রাতে তাড়াহুড়ো করায় তোমার কাপড়ের ব্যাগ তোমাদের বাসায় রেখে আসা হয়েছে।”

বলেই আবারো দ্রুত পায়ে চলে গেল। নাইমাও গোসল করার কথা বলে চলে গেল নূরকে নিয়ে। আমায়রা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যাগ খুলতেই দেখলো একটা সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ। দেখতে বেশ সুন্দর। আমায়রা মুখ ভেংচি কাটলো। টাওয়েল আর জামা কাপড় নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।

আবির নিজের রুমে এসে দেখলো রায়ান তার বিছানায় শুয়ে পায়ের উপর পা নাচাতে নাচাতে ফোন টিপছে। আবির ভ্রুকুচকে বলল,
“বিয়ে করে বউ এনে এখন আমার রুমে কি করছো? সেই ফজরের পর থেকে দেখছি এখানেই আছো। জামা কাপড় এনে আমাকে দিয়ে পাঠালে। কি সমস্যা?”

রায়ান আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি ওই রুমে যাবো না আমার শরম করে।”

আবিরের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। কি কয় এই ব্যাটায়? এই নিলজ্জ ব্যাটার নাকি শরম করে। আবির নাকমুখ কুচকে বলল,
“ভাই তোমার ঢং গুলো একদম বেমানান। যাও তো তুমি তোমার রুমে যাও।”

রায়ান সরু চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এমন ভাব করছিস যেন বাইরে বউ রেখে আসছিস। আমাকে তাড়িয়ে তার সঙ্গে বাসর সারবি।”

আবির আরো বিরক্ত হলো রায়ানের এসব ফালতু কথায়। কাবার্ট থেকে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো।

রায়ান হাসলো। নিজ মনেই বলল,
“যাই এবার একটু যমরানীকে বিরক্ত করে আসি। সকাল থেকে বিরক্ত করিনা। বউটা মনে হয় সেই দুঃখে কাতর হয়ে গেল।”

বলেই দুষ্টু হেসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। তখনি তাজওয়ার সাহেব ওর হাতে নতুন একখানা পাঞ্জাবী ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো। জুম্মার নামাজের পর সবাই চলে আসবে। হুট করে তো বিয়ে করে নিলে। এখন মানুষের সব প্রশ্নের উত্তর তুমি দিবে।”

রায়ান ভাবলেশহীনভাবে বলল,
“সে তখন বোঝা যাবে।”

বলেই রায়ান আগালো। তাজওয়ার সাহেব মনে মনে আওরালেন,
“আল্লাহ আমার ছেলের সুবুদ্ধি দেও।”

রায়ান রুমে ঢুকেই থমকে। সাদা রঙের জামাটায় আমায়রাকে যে এতটা মায়াবী লাগবে ভাবেনি সে। সদ্য গোসল করায় মেয়েটাকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। চোখেমুখে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা। টাওয়েল পেচানো মাথায়ও যে মেয়েদের এতো সুন্দর লাগে জানা ছিলো না রায়ানের।

আমায়রা নিজ মনেই বিরবির করছে। রায়ান যে এসেছে সেদিকে খেয়াল নেই তার। আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো সে। টাওয়েল টান দিতেই চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পরলো। আমায়রা তা এক হাত দিয়ে একপাশে এনে আলতো হাতে টাওয়েল দিয়ে চুলগুলো মুছতে লাগলো। চুল সরাতেই ঘাড়ের কিছু অংশ দৃশ্যমান হলো।

রায়ান প্রথমে চোখ নামিয়ে নিলো। তারপর নিজ মনেই বলল,
“শালা চোখ এইটা আমার বিবাহিত একমাত্র বউ তারে দেখবিনা কেন? তিনকবুল করে বিয়ে করছি বেইমান চোখ নিজের বউয়ের দিকে সারাদিন তাকায় থাকমু আমার ইচ্ছা। না চোখ নামানো যাবে। চোখ নামানোই অন্যায়।”

কথাগুলো বলতে বলতে অজান্তেই কখন যে আমায়রা কাছে এগিয়ে গেছে জানা নেই রায়ানের। হুট করেই রায়ানের মনে ইচ্ছে জাগলো আমায়রাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতে। তার ইচ্ছে হবে আর তা সে করবেনা এটা তো হতেই পারে না। হুট করেই রায়ান কাঁপা হাতে আমায়রাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমায়রা চমকে উঠলো। চোখ মুখ খিচে চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
“ও মাগো জিন। ও আম্মুগো জিন আসছে। দেখে যাও গো জিন ধরে নিয়ে গেল আমাকে।”

আমায়রার এমন কথায় তব্দা মেরে গেল রায়ান। এই মাইয়া কয় কি। জ্যান্ত মানুষরে জিন বানায় দিলো। রায়ান তাড়াতাড়ি মুখ চেপে ধরলো আমায়রার। ধমকে বলে উঠলো,
“চুপ, একদম চুপ, নিজের একমাত্র কিউট বরকে জিন বলছো? ছেহ, জনগন এটা মেনে নিবে কেমনে?”

আমায়রা রায়ান গলা পেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালো। রায়ান কিছুটা দমে বলে উঠলো,
“ভালো যে তোমার ফাটা গলার চিল্লানি কেউ শোনে নি। তাহলে আমার মান ইজ্জত সব চলে যেতো।”

আমায়রা চোখ দিয়ে ইশরা করতে লাগলো তার মুখ ছেড়ে দিতে। রায়ান মুখ ভেংচি কেটে আমায়রাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর কোমর চেপে ধরে বলল,
“কি বউ এত অস্থিরতা কিসের?”

আমায়রা কটমটিয়ে রায়ানের দিকে তাকিয়ে নিজেকে ছোটানোর চেষ্টা করে বলল,
“ছাড়ুন আমাকে। একটা মেয়েকে এভাবে কেউ হুট করে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে।”

রায়ান অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল,
“মেয়ে কোথায় তুমি তো আমার বউ। একমাত্র ঝগড়ুটে বউ।”

আমায়রা তেতে উঠে বলল,
“কিহ, আমি ঝগড়ুটে।আপনি ঝগড়ুটে, আপনার চৌদ্দগুষ্টি ঝগড়ুটে।”

রায়ান বাঁকা হেসে হুট করে আমায়রা গালে টুক করে একটা চুমু খেলো। আমায়রা চোখ বড় বড় করে ফেলল। রায়ান হাসছে। আমায়রা দাঁত পিষে বলল,
“এটা আপনি কি করলেন?”

রায়ান বুঝেনি এমন ভাব ধরে বলল,
“কি করলাম আমি বুঝতে পারছিনা তো!” তুমি বুঝিয়ে দেও।”

আমায়রা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো রায়ানের দিকে। রায়ানের ঠোঁটে বাঁকা হাসি। আমায়রা আবারো ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

রায়ান ছেড়ে দিলো আমায়রাকে। আমায়রা ছাড়া পেয়ে ফুসফুস করতে করতে বলল,
“অসভ্য লোক কথাকার। রাইত বিরাতে এসে বিয়া কইরা এখন আমার লগে ইংকুপিংকু করে সরম নাই আপনার।”

রায়ান ভাবলেশহীন ভাবে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
“এতো সরম করলে বাপ ডাক শোনা লাগবেনা।”

আমায়রা নাকমুখ কুচকে বলল,
“চুপ, একদম চুপ। সারাদিন ঠোঁট কাটার মতো যা তা বলেই থাকে।”

“আমি তো চুপই ছিলাম তুমিই তো বলতে বললে!”

আমায়রা আর কথা বাড়ালো না। কারণ সে বুঝে গেছে এই লোকের সঙ্গে কথা বললে আবার কখন কি বলবে কে জানে।

রায়ান টাওয়েল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

আমায়রা আড়চোখে সেদিকে একবার তাকিয়ে বিছানার উপর রাখা পাঞ্জাবীর দিকে তাকালো। একটা শয়তানি হাসি দিয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল। মনে মনে বিরবিরালো,
“আমার গালে চুমু খাওয়া না। আমিও আমায়রা রহমান নিশাত। আমিও আপনার পাঞ্জাবীতে সর্দি মুছবো।”

আমায়রা যেইনা পাঞ্জাবীটা নাকে কাছে নিছে তখনি রায়ান ওয়াশরুমের দরজা দিয়ে মাথা বের করে বলল,
“পাঞ্জাবীতে কিছু হলে বউ তোমাকে আমি আরো তিনটা চুমু দিবো বলে দিলাম। এবার আর গালে না তোমার গোলাপি….,”

আমায়রা চেচিয়ে উঠে বলল,
“চুপ”

বলেই রুম ছেড়ে দৌড়ে পালালো। রায়ান হো হো করে হাসতে লাগলো। গায়ের কালো রঙের টিশার্ট খুলতে খুলতে রায়ান বলল,
“আহ বউ জ্বালানো যে কি শান্তির!”

আমায়রা রায়ান চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে করতে হাঁটতে লাগলো। আশপাশ দেখতে লাগলো। সে বর্তমানে দ্বিতীয় তলায় আছে। তাদের রুমটা একদম দক্ষিণ দিকে। তারপরেই দুটো রুম। তারপর সিড়ি চলে গেছে। তার কিছুটা ফাঁকে আরেকটা রুম। আমায়রা পাশের রুমে উঁকি দিতেই দেখলো রুমটা একদম খালি। আমায়রা আরো একটু এগিয়ে গিয়ে পরের রুমটায় তাকাতেই দেখলো নাইমা নূরের গা মুছিয়ে দিচ্ছে। কেবলি হয় তো গোসল করিয়ে এনেছে। আমায়রা মুচকি হেসে দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
“আসতে পারি?”

নাইমা নূর দুইজনই ঘুরে তাকালো। নাইমা হাসি মুখে বলল,
“ধুর পাগলি অনুমতি নিতে হবে কেন আসো।”

আমায়রা ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“গোসল করিয়ে দিলে ওকে?”

নাইমা নূরের মাথা মুছতে মুছতে বলল,
“হুম। আরো কাজ আছে তো। সেগুলোতে গেলে আর ওকে গোসল করানোর সময় হয়ে উঠবেনা। তাছাড়া আত্মীয় স্বজন সবাই আসবে। বাচ্চাকে রেডি করিয়ে দিই ও নিজ মতো ঘুরে বেড়াবে।”

আমায়রা এগিয়ে এসে বলল,
“আপু আমি রেডি করিয়ে দেই ওকে?”

নাইমা মুচকি হেসে বলল,
“আচ্ছা দেও। আমি ওর বাবার পাঞ্জাবী পায়জামা বের করি। জুম্মার দিনে নামাজ পড়তে যাবে। এই আজান দিলো বলে।”

#চলবে

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২৬

আমায়রা নূরকে হালকা গোলাপি রঙের একটা গাউন পরিয়ে দিলো। নূরকে একদম রেডি করিয়ে নাইমাকে ডেকে বলল,
“আপু দেখো তো ঠিক আছে নাকি।”

নাইমা নূরের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বলল,
“কিউটির বার্বি ডল কিউটিকে সাজিয়ে দিয়েছে ঠিক না হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।”

আমায়রা মুচকি হাসলো। নাইমা এগিয়ে এসে বলল,
“তুমি গিয়ে শাড়িটা পড়ে নেও আমি আসছি।”

আমায়রা আমতা আমতা করতে লাগল। নাইমা আমায়রাকে আমতা আমতা করতে দেখে বলল,
“শাড়ি পরতে পারোনা?”

“না আপু তেমনটা এমনিই।”

নাইমা হেসে বলল,
“আরে রায়ান একটু জেদি, রাগী হতে পারে ছেলেটার মন অনেক ভালো। ওকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”

আমায়রা বিরবিরিয়ে বলল,
“কেউ তো ব্যাটার আসল রূপ ঠিকমতো জানেনা।”

আমায়রা খানিকটা বাধ্য হয়েই রায়ানের রুমে গেল। রুমে এসে দেখলো রায়ান এখনো বের হয়নি। আমায়রা গালফুলিয়ে খাটে বসে পা নাড়াতে লাগলো।

খানিকবাদেই রায়ান ওয়াশরুম থেকে গান গাইতে গাইতে বের হলো,
“তুমি আশেপাশে থাকলে, হায়
তুমি আশেপাশে থাকলে
কত খুশি খুশি থাকছি
আর যাচ্ছি ভুলে আমি কে কোথায়
তুমি অল্পস্বল্প চাইলে
আরও একটু বেশি থাকছি
আর খামখেয়াল আঁকছি সারা গায়..,”

আমায়রা একরাশ বিরক্তি নিয়ে পিছু ঘুরে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে আসে তার। যেইনা চেচাবে তার আগেই রায়ান বুঝতে পেরে দৌড়ে এসে আমায়রার মুখ চেপে ধরে বলল,
“ওই মাইয়া কথায় কথায় চিল্লাইয়া উঠিস কেন? এখন আবার কি হলো?”

আমায়রা চোখ দিয়ে ইশারায় রায়ানের খালি গা দেখালো। রায়ান ভ্রুকুচকে বলল,
“এমন ভাব করছো যেন কিছুই পড়ে নেই। টাওয়েল তো আছেই।”

বলেই আমায়রাকে ছেড়ে দিয়ে ভাবলেশহীনভাবে আয়নার সামনে গিয়ে ঢং করতে লাগল। আমায়রা নাকমুখ কুচকে বলল,
“আপনি এতো নিলজ্জ কেন বলুন তো?”

রায়ান ঠোঁট কামরে হেসে বলল,
“নিলজ্জ না হলে….!”

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আমায়রা রায়ানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“হইছে হইছে আর বলতে হবেনা।”

বলেই শাড়ি ব্লাউজ নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। রায়ান বাঁকা হাসলো। আকাশী রঙের একটা পাঞ্জাবী, জিন্স, আর টুপি পড়ে একদম রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরলো রুম থেকে।

আমায়রা বকবক করতে করতে শাড়িটা কোনোমতে পড়ে নিলো। আকাশী রঙের একটা শাড়ি। যাতে সোনালী সুতোর কাজ করা। আঁচলের দিকের অংশটা সাদা রঙের। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক তাকালো। নাহ ব্যাটা চলে গেছে। আমায়রা একটা সস্থির নিশ্বাস ফেলল। আয়নার সামনে এসে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল শাড়ি পড়া ঠিক হয়েছে নাকি। তখনি নাইমা রুমে এলো। নাইমা রেডি হয়েই এসেছে। আমায়রাকে রেডি করিয়ে নাইমা ওকে নিয়ে নিচে নামলো।

আমায়রাকে বাগানের দিকে নিয়ে এলো নাইমা। সেখানেই স্টেজ করা হয়েছে। তাজওয়ার সাহেব তার পরিচিত লোকদের বলেছেন। নাইমা আমায়রাকে স্টেজে বসিয়ে রেখে চলে গেল।

খানিকবাদেই রায়ান এসে ধপ করে বসে পরলো। বেচারা ঘেমে গেছে একদম। ঠান্ডা পরলেও রোদ বেশ কড়া।

আমায়রা আড়চোখে তাকালো রায়ানের দিকে। টুপি পাঞ্জাবীতে বেশ সুন্দর লাগছে। ঝটপট দৃষ্টি নামিয়ে নিলো সে। রায়ান রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে পাশে তাকাতেই থমকে গেল। আকাশী রঙের শাড়ি, খোঁপা করা চুল, হালকা মেকআপ, মানানসই গহনায় বেশ সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। তবে কিযেন কম লাগছে। বেলিফুলের একটা গাজরা খোঁপায় দিলে হয় তো আরো ভালো লাগতো। রায়ান ঝট করে কল দিলো আবিরকে। আবির কল রিসিভ করতেই রায়ান বলল,
“শুন একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তোর কাছে বেলিফুলের গাজরা আছে?”

আবির বিভ্রান্ত হয়ে বলল,
“গাজরা? আমার কাছে কেন থাকবে? আমি কি ফুল বিক্রেতা নাকি।”

রায়ান বিরক্ত হয়ে বলল,
“আরে ব্যাটা তর্ক করিস না, কাছাকাছি কোথাও থাকলে নিয়ে আয়। সময় নেই।”

আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“বাহ, তোমার জন্য ফ্লাওয়ার ডেলিভারি সার্ভিস চালু করতে হবে দেখছি। একবার গোলাপ একবার বেলী।”

রায়ান খট করে কল কেটে দিলো। আবির ফোনের দিকে তাকিয়ে বিরবির করতে করতে বলল,
“আমার উপরেই যতসব চোটপাট। কেন রে নিজের বউ নিজে কামলা দিয়ে আন না। কে না করেছে? তা কেন করবে জমিদারের ব্যাটা, আমারে দিয়া না খাটাইলে তো তার পেটের খাবার হজম হয়না।”

রায়ান কল কেটে দিয়ে আবারো তাকালো আমায়রার দিকে। আমায়রা নূরের সাথে কথা বলছে। রায়ান নূরকে কাছে ডাকলো। নূর কপাল কুচকে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কি বলবে চাচ্চু?”

রায়ান ভ্রুকুচকালো যে মেয়ে তাকে দেখলে ছুটে আসে। সেই মেয়ে আমায়রাকে পেয়ে তাকে ভুলে গেছে। কি কথা ভাবা যায়!

কিছুক্ষন পরেই আবির এলো। রায়ানের হাতে বেলীফুলের মালা দিয়ে চলে যেতে নিবে তখনি রায়ান আবিরকে ডেকে বলল,
“কিরে কোথায় যাচ্ছিস?”

আবির কপালকুচকে রায়ানের দিকে তাকালো। বিরক্তি নিয়ে বলল,
“আর কি লাগবে একেবারে বলো। এক এক করে বলবেনা বলে দিলাম।”

রায়ান মুখ ভেংচি কেটে বলল,
“আহাদ আর ইয়াসিন কোথায় দেখছি না তো?”

আবির হেসে বলল,
“যে বন্ধু বানাইছো খেতে বসে গেছে সব।”

রায়ান মুখ বাঁকালো। আমায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মাথাটা এদিকে করো তো।”

আমায়রা কপাল গুটিয়ে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেন?”

“বড্ড কথা বলো তুমি।”

বলেই আমায়রাকে নিজেই ঘুরিয়ে ওর খোঁপায় গাজরা গুজে দিলো। তা দেখে মিটমিট করে হাসতে লাগলো আশেপাশের লোকজন।

আমায়রা লজ্জায় পরে গেল। দাঁতে দাঁত পিষে রায়ানকে বলল,
“আমি কি একা পরতে পারতাম না। এখন সবাই কি ভাবছে?”

রায়ান ভাবলেশহীনভাবে বলল,
“কে কি ভাবলো তা নিয়ে আমার কিছু আসে যায়না। আর আমি আমার বউ পরিয়েছি। শালিকে তো না।”

আমায়রার রাগ হলো। আবারো দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আপনি কি ভালো করে কথা বলতে পারেন না?”

রায়ান সামনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো,
“না পারিনা।”

আমায়রা রায়ানকে মুখ ভেংচি কেটে বসে রইলো। কোথায় থেকে যেন সুরাইয়া দৌড়রে এসে আমায়রা আর রায়ানের সামনে হাঁটুতে হাত দিয়ে হাঁপাতে লাগলো। রায়ান ভ্রুকুচকে বলল,
“কিরে তোর আবার কি হয়েছে? কখন এলি তোরা?”

সুরাইয়া হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
“রায়ান ভাই তুমি এমন হুট করে বিয়ে করলে তাও আবার আমায়রা আপুকে। এটা শোনার পর থেকে আমি মঙ্গল গ্ৰহে ঘুরছি।”

আবির সুরাইয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“মঙ্গলগ্ৰহে ঘুরলে এখানে তোকে দেখছি কিভাবে?”

সুরাইয়া বিরক্তি নিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“চুপ করে থাকো তুমি।”

আবির কোমরে দুহাত রেখে বলল,
“কেনরে তুই বলবি দেখে আমি চুপ থাকবো কেন?তুই কি মিনিস্টার নাকি?”

সুরাইয়া মুখ বাঁকালো। বন্যা, রাকিব, রিশা, সিফাত, সুমন সবাই চলে আসছে। সবাই অবাক হয়ে বারবার জিজ্ঞাসা করছে রায়ান কেন হুট করে আমায়রাকে বিয়ে করলো। আমায়রা চুপ। কারণ সে তো নিজেই জানেনা। ওদের কি বলবে?

রায়ান ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে।

অনুভবদের আসতে দেখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠলো আমায়রার ঠোঁটে। বাবা মার সঙ্গে কথা বলতে লাগলো আমায়রা।

অনুভবকে দেখে সুরাইয়া বাঁকা হাসলো। অনুভবের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কি মিস্টার পেশার কুকার কেমন আছেন?”

অনুভব ভ্রুকুচকে পাশে তাকাতেই সুরাইয়াকে দেখে বিরক্ত হলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভালো”

সুরাইয়া হতাশার নিশ্বাস ফেলল।

শাহানারা বেগম ছুটে স্টেজের কাছে এলেন। তার ভাই অসুস্থ থাকায় নেহাকে নিয়ে তিনি সেখানেই গিয়েছিলেন। যেই না শুনছেন রায়ান বিয়ে করে বউ এনেছে ঘরে তখনি রওনা দিয়েছেন সেখান থেকে। তিনি যেন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কোথায় ভেবেছিলেন নিজের মেয়েকে রায়ানের গলায় ঝুলাবেন। তা না পোলায় নাকি হুট করেই বিয়ে করে বউ ঘরে তুলছে। রায়ানের পাশে আমায়রাকে দেখে নাকমুখ কুচকে ফেললেন তিনি। আগে থেকেই মেয়েটাকে তার পছন্দ না। শাহানারা বেগম রায়ানের কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“শেষমেষ একে বিয়ে করলে তুমি রায়ান। এই মেয়ে তো তেমন একটা ফর্সাও না।”

শাহানারা বেগমের এমন কথায় আমায়রা কিছু বলতে চাইলো। কিন্তু সে নতুন বউ কিছু বলা ঠিক হবে না। আবির তার মাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রায়ান বলল,
“সে ফর্সা কিনা কালো সেটা ম্যাটার করে না। সে যদি ফর্সা হয়ে ছেলেদের গায়ে পড়া হয়। চরিত্র যদি কালো হয় তাহলে সেটা ম্যাটার করে। নেক্সট টাইম মনে রাখবেন ও যে সে মেয়ে না ও মিসেস রায়ান ইশতিয়াক চৌধুরী।”

শাহানারা বেগম আর কিছু বলার মুখ পেলো না। মুখ ফুলিয়ে গটগট পায়ে চলে গেল।

#চলবে
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বেশি বেশি রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন।)