অতল গহ্বরে নীরবতা পর্ব-৩১+৩২

0
308

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৩১

আমায়রা তেতে উঠে বলল,
“আপনার কথা মতো তো উঠেছিই এখন বেশি কথা বললে আপনার মাথায় পানি ঢালবো বলে দিলাম।”

আমায়রার কথায় ঠোঁট কামড়ে হাসলো রায়ান। কিছু না বলে একটা গায়ের চাদর বের করে গায়ে জড়ালো।

খানিকবাদেই ওয়াশরুম থেকে চোখমুখে পানি দিয়ে বের হলো আমায়রা। সদ্য ঘুম থেকে উঠায় চোখ মুখ ফুলে আছে। তার উপর বিরক্তিতে সে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে।

রায়ানের কাছে বেশ কিউট লাগছে। রায়ান নিজ মনেই বিরবিরালো,
“কে বলবে এই মেয়ে অনার্সে পড়ে। এখনো ছোট বাচ্চাদের মতো গাল ফুলিয়ে রাখে। দেখলে কে বুঝবে এই মেয়ে কেমন দজ্জাল।”

আমায়রা চাদর গায়ে জড়িয়ে রায়ানের সামনে এসে বলল,
“যাবেন নাকি এমন করেই দাঁড়িয়ে থাকবেন।”

আমায়রার কথায় রায়ানের ভাবনায় ছেদ ঘটলো। সে এগিয়ে গেল। আমায়রা ওর পিছু পিছু যেতে লাগলো।

—————

রাতে ঘুম হয়নি অনুভবের। ভোরের দিকে হালকা মাথা ব্যথা করায় নিজেই রান্নাঘরে পা বাড়ালো কফি বানানোর জন্য। রান্নাঘরের কাছে যেতেই টুংটাং শব্দ হচ্ছে। অনুভব ভ্রুকুচকে এগিয়ে যেতেই দেখলো তার মা চা বানাচ্ছে।

অনুভব এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আম্মু এককাপ চা দেও তো।”

আমেনা বেগম অনুভবের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“বস দিচ্ছি”

রান্নাঘরের পাশে রাখা খাবার টেবিলের চেয়ার টেনে বসল অনুভব। চোখের কোণে ক্লান্তি স্পষ্ট। আমেনা বেগম চা কাপে ঢেলে তা এনে ছেলের সামনে রাখলেন।তিনি চিন্তিত স্বরে জানতে চাইলেন,
“রাতে ঘুম হয়নি?”

অনুভব চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এক চুমুক দিয়ে মাথা নেড়ে বলল,
“না, এমনিতেই একটু ঘুম কম হয়েছে। মাথাটা একটু ধরে ছিল।”

আমেনা বেগম ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এভাবে চললে শরীরটা ভেঙে পড়বে। কাজের চিন্তা তো আছেই, কিন্তু নিজের শরীরেরও তো খেয়াল রাখতে হবে।”

অনুভব হালকা হাসল,
“তুমি এত চিন্তা করো কেন আম্মু? আমি ঠিক আছি। তুমি বরং নিজের খেয়াল রেখো। সারাদিন তো শুধু আমাদের নিয়েই ব্যস্ত থাকো।”

সুরাইয়া গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে এসে বলল,
“আন্টি চা পাওয়া যাবে কি?”

আমেনা বেগম আর অনুভব দুইজনই ঘুরে তাকালো।

সুরাইয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন আমেনা বেগম,
“অবশ্যই পাওয়া যাবে। তুমি বসো, আমি আরও এক কাপ চা আনছি।”

অনুভব চোখ নামিয়ে নিলো। চা খাওয়ায় মন দিলো। সুরাইয়া অনুভবের সামনাসামনি একটা চেয়ার টেনে বসলো। ধীর কন্ঠে বলল,
“রাতে ঘুমাননি কেন?”

অনুভব উত্তর দিলো না। সুরাইয়া দম নিয়ে বলল,
“আচ্ছা আমি কি এতটাই বিরক্তিকর মানুষ?”

অনুভব চায়ের কাপে শেষ চুমুক বসিয়ে কাপ টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে গম্ভীর কন্ঠৈ বলল,
“তুমি যা চাইছো তা কখনোই সম্ভব না। আমি তোমার অনেক বড়। তাছাড়া..!”

সুরাইয়া অনুভবের কথার মাঝেই তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“বন্যা আপুকে আপনি ভালোবাসেন তাই তো?”

অনুভবের মুখটা থমকে গেল। সুরাইয়ার সরল প্রশ্নে যেন মুহূর্তের জন্য তার দম বন্ধ হয়ে এল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সুরাইয়ার দিকে তাকালো। তারপর ধীর গলায় বলল,
“তুমি যা ভাবছো, সেটা অতটা সহজ না। জীবনে কিছু জিনিস মেনে নিতে হয়, আর কিছু জিনিস ছেড়ে দিতে হয়।”

সুরাইয়ার চোখ দুটো ভারী হয়ে এলো। সে চেয়ারে ঠায় বসে বলল,
“মেনে নেওয়া বা ছেড়ে দেওয়া এত সহজ বলে আপনার মনে হয়।”

অনুভব নিজের হাত মুঠো করে বলল,
“সুরাইয়া, আমার জীবন খুব জটিল। তোমার জীবনে আরও ভালো কেউ থাকবে। আমি তোমার জন্য সেই মানুষ না।”

সুরাইয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপনার জীবন জটিল, সেটা জানি। কিন্তু আমি কি কখনো বলেছি যে আমি সিম্পল কিছু চাই? আমি শুধু চাই আপনাকে বুঝতে, আপনার পাশে থাকতে। সেটাও কি ভুল?”

অনুভব তাকিয়ে রইল। তার মুখে কোনো উত্তর নেই। সুরাইয়া কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল,
“বন্যা আপুর জন্য আপনি যদি আজও অপেক্ষা করেন, তাহলে নিজের জন্য একটু ভাবুন। আপনি কি সত্যি তার কাছে ফিরতে পারবেন?”

এবার অনুভব এক গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার কণ্ঠ ভেঙে এলো,
“ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কিছু স্মৃতি থাকে, যা ছেড়ে দেওয়া যায় না।”

সুরাইয়ার চোখে পানি টলমল করছে তবুও সে নিজের আবেগ চেপে বলল,
“তাহলে আপনি আপনার সেই স্মৃতিতেই থাকুন। আমি আর আপনাকে বিরক্ত করব না।”

এই বলে সুরাইয়া সেখান থেকে চলে গেল। অনুভব মাথা নিচু করে দুহাত টাউজারের পকেটে রেখে মেঝের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আমেনা বেগম চা এনে দেখলেন সুরাইয়া নেই। আমেনা বেগম কপাল কুচকে অনুভবের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“সুরাইয়া কোথায় গেলো?”

অনুভব নীচু সুরে বলল,
“ঘরে”

বলেই নিজের রুমের দিকে চলে গেল।

——————

বড় রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে আমায়রা আর রায়ান। দু একজন ছাড়া তেমন কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। চারপাশে কুয়াশার চাদর পড়ে আছে। ঠান্ডা দমকা হাওয়া বইছে। যা জানান দিচ্ছে শীত এসে পড়েছে। নভেম্বর মাসের শেষ দিকের হালকা ঠান্ডা পরিবেশ যেন মন ভালো করে দিচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।

হাঁটতে হাঁটতে আমায়রা আর রায়ান একটা পার্কে চলে এলো। আমায়রার বিরক্তি ভাব চলে গেছে এখন বেশ ভালোই লাগছে।

হুট করেই আমায়রার মনে পড়ে গেল বাবা মার কথা। আগে শীতের এমন আমেজ পরতে তারা তিনজন সকাল সকাল হাঁটতে বের হওয়া। একসাথে পিঠা আর চা খাওয়া। ভাবতেই আমায়রার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। যা রায়ানের চোখ এড়ালোনা। রায়ানও হাসলো। নরম গলায় বলল,
“ঘাসের উপর দিয়ে খালি পায়ে হাঁটবে।”

আমায়রা কপাল কুচকে তাকালো রায়ানের দিকে। রায়ান কিছু না বলে নিজের জুতা খুলে ফেলল। আমায়রা বলল,
“পায়ে ব্যথা পাবেন তো?”

রায়ান হেসে বলল,
“ব্যাথা লাগবেনা বরং শান্তি লাগবে। শিশির বিন্দু কি সুন্দর ঘাসে পড়ে আছে। পায়ে সেই শীতল শিশির বিন্দুর স্পর্শ লাগলে মন একদম ফুরফুরে হয়ে যাবে।”

“কিন্তু”

“কোনো কিন্তু না চলো তো”

বলেই রায়ান আমায়রার হাত ধরে যেতে লাগল। আমায়রা তাকালো সেই হাতের দিকে। বুকটা তার অদ্ভুতভাবে কম্পিত হচ্ছে। এ কেমন অনুভূতি জানা নেই আমায়রার। আমায়রা নিজের স্যান্ডেল খুলে ফেলল। রায়ানের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।

দুইজন একসাথে ঘাসে পা রাখলো। পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে লাগলো শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে। সূর্যে মিষ্টি সূক্ষ বলিরেখা দেখা যাচ্ছে। যা এসে পরছে শিশির বিন্দুর উপরে। শিশির বিন্দুগুলো চিকচিক করছে। আমায়রার বেশ ভালো লাগলো। রায়ানের দিকে না তাকিয়েই বলল,
“ধন্যবাদ”

রায়ান বাঁকা হেসে কপাল কুচকে বলল,
“কি যেন বললে শুনতে পাইনি?”

আমায়রা মুখ বাঁকালো। সে বুঝতে পেরেছে রায়ান ঢং করছে। রায়ান বলে উঠলো,
“চা খাবে?”

আমায়রা ভেংচি কেটে বলল,
“জিজ্ঞাসা করে কি লাভ আপনি তো তা করবেনই। হুদাই জিজ্ঞাসা করেন কেন?”

রায়ান ভ্রু কুচকে আমায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,
“বুঝছি তুমি খাবে। আমি খাবো তুমি দেখো।”

আমায়রা একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,
“আমি কি একবারো বলেছি যে আমি খাবো না এতো বেশি বুঝেন কেন আপনি।”

“তুমি বেশি বুঝতে পারবে আর আমি বুঝলেই দোষ।”

আমায়রা ডান হাতের তর্জনী তুলে বলল,
“দেখুন সকাল সকাল ঝগড়া করবেন না বলে দিলাম।”

রায়ান আমায়রার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
“আমি শুরু করেছি নাকি তুমি ঝগড়া শুরু করেছো!”

আমায়রা জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
“ছেলে মানুষ হয়ে আপনি এতো ঝগড়ুটে কেন বলুন তো?”

রায়ান কপাল কুচকে বলল,
“তাহলে বলছো মেয়েরা ঝগড়ুটে।”

আমায়রা অবাক হয়ে বলল,
“এমনটা আমি আবার কখন বললাম!”

রায়ান তপ্তশ্বাস ফেলে বলল,
“আচ্ছা বাবা চলো এখন।”

আমায়রা মুখ বাঁকালো।

আমায়রা আর রায়ান পার্ক থেকে বেরিয়ে আসার পথে এক দোকানে থামল। দোকানের ছোট্ট এক কোনায় ধোঁয়া ওঠা চা আর শিঙাড়া বিক্রি হচ্ছে। রায়ান বলল,
“তোমার তো শীতের সকালে চা খাওয়ার অভ্যাস। আজ সেই স্মৃতিটা ফিরিয়ে আনব।”

আমায়রা চোখ কপালে তুলে বলল,
“আপনি এসব কবে জানলেন? সারাক্ষণ আমাকে পর্যবেক্ষণ করেন নাকি?”

রায়ান ভ্রু উঁচু করে মুচকি হেসে বলল,
“তোমাকে বোঝা কি এত কঠিন? আর তোমার মুখের হাসি দেখার জন্য যদি একটু পর্যবেক্ষণ করতে হয়, তাতেই বা সমস্যা কোথায়?”

আমায়রার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। কিছু না বলে সে দোকানের বেঞ্চে বসে পড়ল।

#চলবে

#অতল_গহ্বরে_নীরবতা
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৩২

রায়ান আমায়রার হাতে চা আর শিঙাড়া ধরিয়ে দিয়ে ওর পাশে বসলো। নিজের হাতের চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
“এখানকার চা অনেক মজা খেয়ে দেখ ভালো লাগবে।”

আমায়রা গরম ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চোখ বুজে ফেলল। আসলেই বেশ ভালো চা। আমায়রা পা নাড়াতে নাড়াতে চা আর শিঙাড়া খেতে লাগলো। রায়ান নিজের খাওয়া শেষ করে ফোন বের করে দেখলো বেশ দেড়ি হয়ে গেছে। আমায়রাকে তাড়া দিয়ে বিল পরিশোধ করে ফোনের ক্যামেরা বের করে আমায়রার অজান্তেই ওর কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। আমায়রা চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,
“লুকিয়ে ছবি তুলতে হবেনা সামনে এসে তুলুন।”

রায়ান মুখ বাঁকালো। ভাব নিয়ে বলল,
“আমি কেন তোমার ছবি তুলতে যাবো? আমার ঠেকা পরেনি তোমার মতো প্যাচা মুখোর ছবি তুলতে।”
আমায়রা সরু চোখে তাকালো রায়ানের দিকে। রায়ান তাড়াতাড়ি একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে বসে বলল,
“তাড়াতাড়ি এসো। দেড়ি হয়ে যাচ্ছে সবাই আবার খোঁজাখুঁজি শুরু করবে।”

আমায়রা মুখ বাঁকিয়ে রিক্সায় উঠে বসলো। রায়ান আর কিছু বলল না। আমায়রা খানিকবাদে বলল,
“আপনার ফোনটা দিন।”

রায়ান কপাল কুচকে এলো। আমায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেন ফোন দিয়ে কি করবে?”

রায়ান মাথা এদিকসেদিক নাড়িয়ে জবাব দিলো,
“না দেওয়া যাবেনা।”

আমায়রা সরু চোখে রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেন দেওয়া যাবেনা বলুন তো? কি এমন আছে আপনার ফোনে?”

রায়ান আমায়রার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার ফোন নিয়ে তুমি ওই ছবি ডিলিট করবে তাই না!”

আমায়রা কপাল গুটিয়ে বলল,
“করবো আপনার সমস্যা কি ওইদিন সকালের টাও করবো আজকেরটাও করবো।”

রায়ান ফোন শক্ত করে ধরে বলল,
“আমি দিবো না। আমার ফোন আমি যা ইচ্ছে তাই করবো। ছবি রাখবো নাকি রাখবোনা আমার ব্যাপার।”

আমায়রা রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
“দেখুন, আমার ছবি তুলে আপনি যদি নিজের ইচ্ছামতো রাখার প্ল্যান করেন, তবে আমি কিন্তু এর একটা বিহিত করবো।”

রায়ান হেসে বলল,
“তোমার বিহিত নিয়ে আমি খুব চিন্তিত! আচ্ছা, এত বিরক্ত হচ্ছো কেন? ছবিগুলো তো বেশ ভালোই এসেছে। আমার শিল্পী মন দিয়ে তুলেছি, তাই তুমি ধন্য হও।”

আমায়রা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
“ধন্য? আপনি আর আপনার শিল্পী মন! শুনুন, আমার অনুমতি ছাড়া ছবি তোলাটা সম্পূর্ণ বেআইনি।”

রায়ান নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল,
“তাহলে মামলা করো।”

ওদের ঝগড়ার মাঝেই রিক্সা থামলো বাড়ির সামনে। আমায়রা আর কিছু না বলে রিক্সা থেকে নেমে হনহনিয়ে বাড়ির দিকে যেতে লাগল।

রায়ান রিকশা থেকে নামতে নামতে হেসে বলল,
“তুমি না রাগলে খুবই বোরিং লাগে বউ।”

আমায়রা পিছন ফিরেও তাকাল না। হনহনিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
“আপনার এই হাসি বেশি দিন থাকবে না। কাল সকালেই দেখবেন আপনার ফোনে কোনো ছবি থাকবে না।”

রায়ান পিছন থেকে চিৎকার করে বলল,
“তাহলে রাতেই কপি বানিয়ে রাখবো।”

আমায়রা এক মুহূর্ত থেমে পেছন ফিরে তাকিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল,
“আপনার কপির সাথে আপনার মাথাটা কোথাও রেখে আসবেন, নাহলে সেটাও বাজেয়াপ্ত হবে।”

রায়ান ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“বাহ! তুমি তো বেশ ক্রিয়েটিভ হয়ে উঠছো।”

আমায়রা এবার আর কোনো উত্তর না দিয়ে সোজা বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। রায়ান মুচকি হেসে ফোনটা বের করে আমায়রার কিছু ছবি দেখে বলল,
“প্যাঁচা মুখ হলেও ছবিগুলো মন্দ হয়নি।”

বলেই নিজের ফোন পকেটে রেখে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল।

বাসায় ঢুকে রায়ান দেখলো আবির ফিটফাট হয়ে খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করছে। রায়ান কপাল কুচকে ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কিরে এতো সাজুগুজু করে কোথায় যাবি?”

আবির খাবার চেবাতে চেবাতে বলল,
“আমার তো আর কেউ নেই যে সকাল সকাল হাত ধরে হাঁটতে যাবো। তাই ভাবছি বট গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়াবো। তারপর সেই গাছের পেত্নিকে প্রোপজ করবো।”

রায়ান ওর পাশের চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
“ভালোই তো। সমস্যা নেই আমি তোর বিয়ের সব ব্যবস্থা আমি করবো তুই চিন্তা করিস না।”

আবির মুখ বাঁকালো। মনে মনে বলল,
“চান্দু নিজে তো বিয়া কইরা নিছো। এখন আমার টা কেমনে বুঝবা।”
কথাগুলো নিজ মনেই বিরবিরিয়ে উঠে দাঁড়ালো আবির। শাহানারা বেগম রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। আবির চেচিয়ে বলল,
“মা ভার্সিটি যাচ্ছি। আসতে আসতে সন্ধ্যা হবে।”

শাহানারা বেগম গলা উচিয়ে বললেন,
“তাড়াতাড়ি আসিস আর সাবধানে যাস।”

আবির যেতেই আমায়রা উপর থেকে নিচে নামলো রেডি হয়ে। রায়ানের সামনে বরাবর চেয়ার টেনে বসলো। রায়ান খেতে খেতে বলল,
“ভার্সিটি যাবে নাকি?”

আমায়রা প্লেটে খাবার তুলে নিতে নিতে বলল,
“হুম যেতে হবে আজকে।”

রায়ান খাবারের শেষটুকু খেয়ে বলল,
“আমি দিয়ে আসবো তোমাকে। খাওয়া শেষ করো। আমি রেডি হয়ে আসছি।”

আমায়রা নরম গলায় বলল,
“সমস্যা নেই আমি একা যেতে পারবো।”

রায়ান চেয়ার থেকে উঠে থমথমে গলায় বলল,
“তোমাকে এত বুঝতে হবেনা। চুপচাপ খাও আমি রেডি হয়ে আসছি।”

আমায়রাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রায়ান গটগট পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল। আমায়রা সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

খানিকবাদেই সাদা শার্ট আর নীল সুট পড়ে গটগট পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো রায়ান। নীল সুট আর সাদা শার্টে বেশ মানানসই লাগছে তাকে। মুহূর্তের জন্য আমায়রার চোখ আটকে গেল রায়ানের উপর। তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে সে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।

রায়ান সোজা রান্নাঘরে চলে গেল। রাবেয়া বেগম, শাহানারা বেগম আর নাইমা তিনজনই সেখানে ছিলো। তাহসান আর তাজওয়ার সাহেব আগেই চলে গেছে অফিস। রায়ান ওদের কাছে বিদায় নিয়ে আমায়রাকে আসতে বলে বাইকের চাবি তর্জনীতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে চলে গেল।

আমায়রা খাওয়া শেষ করে প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে তা পরিষ্কার করতে করতে বলল,
“আম্মু ভার্সিটি যেতে হবে আজকে।”

রাবেয়া বেগম এগিয়ে এসে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
“আচ্ছা মা যাও। সাবধানে যেও।”

আমায়রা মিষ্টি করে হেসে বেড়িয়ে পরলো।

দরজা দিয়ে বের হয়ে আমায়রা দেখলো রায়ান বাইকের সাথে হেলান দিয়ে মনোযোগ দিয়ে ফোনে কি যেন করছে।

রায়ানের এই মনোযোগী ভঙ্গি দেখে আমায়রা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকলো। এরপর খানিকটা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“চলেন? নাকি এখানেই ফোন নিয়ে থেকে যাবেন?”

রায়ান চোখ সরিয়ে আমায়রার দিকে তাকিয়ে হাসল,
“যাবোনা কেন নিশ্চই যাবো। বউয়ের সাথে যাবো বলে কথা।”

কথাটা বলেই রায়ান বাইক স্টার্ট করল। আমায়রা একটু ইতস্তত করে বলল,
“আমি নিজে যেতে পারতাম। এটা জরুরি ছিল না।”

রায়ান হালকা হাসি নিয়ে বলল,
“তোমার মত প্যাচা মুখো ঝগড়ুটে মেয়েকে নিয়ে আমি আবার ঝামেলা করতে পারবে না। তাই আমি যাচ্ছি।”

আমায়রা কোনো কথা না বলে বাইকের পিছনের সিটে বসল। রায়ান তাকে একবার পেছন ফিরে দেখে বলল,
“ঠিক করে বসো। পড়ে গেলে কিন্তু আমাকে কিছু বলতে পারবেনা বলে দিলাম।”

আমায়রা গলা উঁচিয়ে বলল,
“আপনাকে বলার কোনো দরকার নেই। আমি ঠিক আছি।”

বাইকের গতি বাড়তেই আমায়রার চুল উড়ে তার মুখে আসতে লাগলো। রায়ান হেসে বলল,
“চুলগুলো একটু ঠিক করো। না হয় ঝড় উঠে যাবে তো আর একটু হলে।”

আমায়রা বিরক্ত হয়ে চুল গুছিয়ে বলল,
“আপনার কথা না বললেই নয়?”

রায়ান হাসি ধরে রেখে বলল,
“যমরানীর সাথে কথা না বললে হয় নাকি?”

গন্তব্যে পৌঁছে আমায়রা রায়ানের বাইক থেকে নামতেই বলল,
“শুনুন, এটা আজই শেষ। আমি নিজেই আসতে পারবো।”

রায়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“বউ, তোমার কথা শুনলে তো আমার চলবে না। তাই পরে দেখা হবে। যাও ক্লাস করো।”

রায়ানের কথায় কিছু না বলে আমায়রা ভার্সিটির ভিতরে চলে গেল। রায়ান বাইক ঘুরিয়ে চলে গেল অফিসের উদ্দেশ্যে।

ভার্সিটি ঢুকতে আমায়রা দেখা হলো ইশরার সাথে। হাত নাড়িয়ে ইশারা করে এগিয়ে গেল ওর দিকে। ইশরা হাসি মুখে বলল,
“কিরে ভাইয়া রেখে গেল নাকি?”

আমায়রা মুখ বাঁকালো। ইশরা হেসে বলল,
“ভালোই তো সকালে একসঙ্গে হাঁটতে গিয়ে ছবি তুলিস। আমাদের সামনেই খালি ঝগড়া করিস।”

আমায়রা অবাক হয়ে বলল,
“মানে”

ইশরা ভেংচি কেটে বলল,
“থাকা আর নাটক করতে হবে না।”

আমায়রা অস্থির হয়ে বলল,
“কোথায় ছবি দেখি? কোথায় দেখলি তুই?”

ইশরা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে…..

#চলবে
(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বেশি বেশি রিয়েক্ট কমেন্ট করবেন।)