#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহা
পর্ব ৮
শান্ত ভঙ্গিতে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রাউশি।সদর দরজা পেরিয়ে বাম পাশে কোলাহলের শব্দ শুনে সেদিকে ফিরে তাকায় রাউশি।বাড়ির বড়রা বসে আছে। কিছু একটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে।রাউশিকে দেখতে পেয়ে রোকসানা বেগম হাসিমুখে বলে ওঠেন,
“রাউশি মা তোরা এসে গেছিস?মেহরান কোথায়?”
রাউশি সকলের দিকে একপলক চেয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে জবাব দেয়,
“বাইরে কথা বলছে কারো সাথে।”
উর্মিলা বেগম রাউশির নিকট এসে মাথায় স্নেহাস্পর্শে হাত বুলিয়ে নরম গলায় শুধান,
“ক্লান্ত হয়েছিস, যা ফ্রেশ হয়ে নে।খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি আমি।”
রূপা বেগন মেয়ের কাছে এসে স্নেহের হাত বুলান মাথায়।রাউশি মাথা নাড়িয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের ঘরে চলে আসে।মেহরান বাড়িতে ঢুকতেই মাহবুব খান ছেলেকে কাছে ডাকেন।মেহরান গিয়ে বাবার সামনের সোফায় মাহমুদ খানের পাশে গিয়ে বসে পড়ে।মুখভঙ্গি শান্ত হলেও এখন কি বলতে যাবে তার বাবা এটা কিছুটা হলেও যেন আন্দাজ করতে পারে মেহরান।মাহবুব খান একটু কেশে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন,
“রোজিকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার কারণ বলো আগে?”
চোয়াল শক্ত করে শান্তভঙ্গিতেই জবাব দেয়,
“আমার বিশেষ কিছুতে নজর দেওয়ার মতো দুঃসাহস করেছে তাই।”
মাহবুব খান ভেবে পাচ্ছেন না কি এমন করেছে।তবুও এই বিষয়টা আপাতত পেছনে ঠেলে মূল কথায় আসেন তিনি।বাকিদের দিকে একবার তাকিয়ে বলা শুরু করেন,
“আমার বন্ধু আজিজ ইকবালকে তো চেনো। তার মেয়ে আরিয়া ইকবাল এবার মাস্টার্স শেষ করে আজিজের বিজনেস দেখাশোনায় নিয়োজিত।দেখতে শুনতে ভালো,বিচক্ষণ, বুদ্ধিমতী।আমরা বড়রা সকলেই চাইছি আগামীকাল তুমি আরিয়ার সাথে দেখা করবে।”
ভ্রুকুটি করে মেহরানও পাল্টা গম্ভীর মুখে বলে,
“ইনডিরেক্টলি কি ব্লাইন্ড ডেটের কথা বলছো?”
মাহবুব খান চুপ থাকেন।নিরবতা যে সম্মতির লক্ষ্মণ এটা দীর্ঘদিনের বিবর্তনিক। মেহরান না করার জন্য কিছু বলবে তার আগেই মাহবুব খান বলেন,
“আমি আজিজের সাথে আমার বন্ধুত্বের দৃঢ়তা আজীবন রেখে যেতে চায় দুপরিবারের মাঝে একটি দৃঢ় বন্ধন তৈরির মাধ্যমে।আশা করি আমার কথা তুমি বুঝতে পেরেছো।”
কথাটুকু বলে মাহবুব খান প্রস্থান করেন।মাহমুদ খান মেহরানের কাধে হাত রেখে চলে যান।মাহতাব খানও চলে যান ভাইদের পিছু পিছু।উর্মিলা বেগম ছেলের কাছে এসে ছেলের কাধে হাত রেখে বলে,
“বাবা মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দর।তোর উচিত তার সাথে একবার দেখা করা।”
মেহরান হালকা আওয়াজে বলে,
“সৌন্দর্য নয় ব্যক্তিত্ব থাকা জরুরী। আগামীকাল দেখা যাবে।”
এদিকে এতকিছু না জানা রাউশি রাতে ঘুমানোর জিন্য রেডি হয়।তখনই হঠাৎ একটা মেসেজ আসে তার ফোনে।মেসেজটিতে ক্লিক করতেই জ্বলজ্বল করে ওঠে একটি লেখা,
“উদ্দেশ্য যদি তুমি হও তবে আমি আজীবন সেই উদ্দেশ্যের পিছু পড়ে রবো।”
মেসেজটিতে স্পষ্ট ভালোবাসার সুপ্ত বহিঃপ্রকাশ।অতিশয় মাত্রায় বিস্মিত রাউশি ভাবতে থাকে এই মেসেজ তাকে কে সেন্ড করতে পারে?নাম্বারটা আননোন।এতো রাতে কে প্রেম নিবেদন করবে তাকে?বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন ছাড়া বেশি কাউকে চেনে না বললেও ভুল নয় রাউশি সাপেক্ষে।
প্রাসঙ্গিক কারণে কিছুজন নতুন বন্ধুর আগমণ ঘটেছে তার ইন্ট্রোভার্ট জীবনে। রাউশি জন্মগত ইন্ট্রোভার্ট বললে ভুল হবে না।তবে এই একটা স্বভাবগত দিক শুধু অপরিচিতদের ক্ষেত্রেই বর্ণিত যেন।রাউশি নাম্বারটা ভালোভাবে পরখ করে।না চেনে না সে এই নাম্বার।ফোনটা ওভাবেই রেখে দেয় বালিশের পাশে।ক্ষণবাদেই তলিয়ে যায় গভীর নিদ্রায়।
.
দিনটি রৌদ্রজ্বল নয়।সাদা মেঘের পাশাপাশি কালো মেঘেও ভরপুর বললে ভুল নয়। তপ্ত গ্রীষ্ম শেষের দিকে বুঝি।ঝড়বাদলার দিন শুরু হলো বুঝি।আজ ভার্সিটি যাওয়ার মতো কোনো মুডই নেই রাউশির মাঝে।নিজ রুমের বিশালাকার আয়তবের বারান্দায় বসে নিজ চিন্তনে আঁকিবুঁকির বড়জোর প্রচেষ্টা তার।দরজা ঠেলে রাউশির রুমের ভেতরে পা রাখে নিহান।বাড়িতে সমবয়সী বলতে শুধু নিহানই।তাইতো নিহান বভাইসুলভ কম বন্ধুসুলভ আচরণেই বেশি অভ্যস্ত।রাউশিকে বারান্দায় গম্ভীর বসে থাকতে দেখে কাছে গিয়ে দুষ্টুমির সুরে বলে,
“আমি কি বসবো ম্যাম?”
“তুই কখন এলি?”
“এখনই এলাম।তা বসবো কি?”
“চাইলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিস।”
“নো ওয়ে এটা কখনোই না।”
“তো এসব ঢং দেখানোরও কোনো মানে হয় না।”
নাহিন রাউশির চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে,
“মন খারাপ তোর?”
“নাহ।তাহলে চল নিচে।আজ আমরা রেস্টুরেন্টে খেতে যাব।তানিয়া, তানজিম, উজান ভাইও যাবে।”
কথাটা বলে রাউশিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।নিচে আসতেই দেখে তানজিম, তানিয়া, উজানসহ সকলেই রেডি হয়ে আছে।রাউশিকে দেখতেই উজান বলে ওঠে,
“চল চল।”
যেন তারা রাউশির জন্যই এতক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছিলো।রাউশি বলে,
“কিন্তু ভাইয়া আমি তো ড্রেসও চেঞ্জ করি নি।”
“আরে লাগবে না।এভাবেই দেখতে কিউট লাগছে তোকে চল।”উজানসহ বাকিরা যেন কি নিয়ে বেশি উত্তেজিত আজ।রাউশি যেতে না চাইলেও বাধ্য হয়েই তাদের সাথে রওনা হয়।ভাগ্যিস আজ পছন্দের একটি ড্রেস পড়েছিলো।গাড়িতে উঠতেই তানজিম কি দেখে যেন চেঁচিয়ে বলে,
” উজাননন! লেইট হয়ে গেলো আমাদের। ফুল স্পিডে গাড়ি চালা।”
রাউশি বুঝতে পারছে না এদের কর্মকান্ড। কিসের জন্য লেইট হলো?কি হচ্ছেটা কি? তানিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে একবার জিজ্ঞাসা করে,
“কোথায় আর কেন যাচ্ছি আমরা?”
তানিয়া বিস্মিত ভাব ফুটিয়ে বলে,
“কেন জানিস না তুই?আজ মেহরান ভাই ব্লাইন্ড ডেটে যাবে।তো আমরা কি ঘরে বসে চুপটি মেরে বসে থাকবো?মাইশা এতক্ষণ পৌঁছে গেছে হয়তো।”
রাউশি বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবেই নেয়।আর বলে,
“তোর কিভাবে জানলি?”
“নাহিন বললো।ফুপু আর ফুপার সাথে কথা বলাবলি করছিলো নাকি এই বিষয়ে কথা বলছিলো নাহিন আর মাইশা শুনেছে সব।”
“ওহ” বলে চুপ হয়ে যায় রাউশি।আজ মেহরানদের ডেট।এভাবে ডিস্টার্ভ করা কি খুব জরুরি নাকি এদের?রাউশির মন সায় দেয় না।এদিকে এদের কিছু বললেও এখন আর ছেড়ে দেবে না।আধঘণ্টার মধ্যে একটি অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্টের সামনে গিয়ে থামে তাদের গাড়িটি।সবাই নেমে যায়।উজান একবার আশপাশ তাকায়।না এখানে মেহরানের দামী কালো মার্সিডিজটা দেখা যাচ্ছে না।তারমানে এখনও আসেনি। সবাই ভেতরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়।মাইশা কোথা থেকে দৌড়ে তাদের কাছে আসে।রাউশি যেতে চাইছিলো না ওকে টেনে নিয়ে যায় সবাই।দোতলায় একটি কর্ণারে খুবই রূপবতী মডার্ন এক নারীকে বসে থাকতে দেখে তানজিম বলে,
“ওইতো আরিয়া।”
রাউশি বলে,
“তোমরা চেনো কিভাবে?”
“ছবি দেখেছি।মায়ের থেকে জোর করে নিয়ে।” তানজিম প্রত্যুত্তর করে।
তারা সবাই গিয়ে তাদের থেকে খানিক দূরে যাতে মেহরানরা তাদের দেখতে না পায় সে জায়গায় গিয়ে বসে পড়ে সকলে।কিছুক্ষণ বাদেই ফিটফাট হয়ে সেখানে উপস্থিত হয় মেহরান।লম্বাটে পুরুষটা আজ নেভি ব্লু শার্ট পড়েছে আর কালো জিন্স।আজ কপালে কিছু চুল পড়ে আছে।সুন্দর লাগছে দেখতে। ডেটের জন্য হয়তোবা আজ অন্যরকম ভাবে এসেছে।রাউশি এসবই ভাবছিলো।
মেহরানকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে যায় আরিয়া।ঠোঁটে ফোটে তুলে মুগ্ধ করা হাসি।হাত বাড়িয়ে বলে,
“হ্যালো! আ’ম আরিয়া ইকবাল।”
মেহরান হাতে হাত মেলায় না দাঁড়িয়ে থেকেই ভরাট পুরুষালী গম্ভীর আওয়াজে প্রত্যুত্তর করে,
“মেহরান খান।”
আরিয়া ভুরু উঁচু করে।মনে মনে বলে দেমাগ আছে বলতে হবে।মেহরান চেয়ার টেনে বসে পড়ে।বিব্রত হয় আরিয়া।নিজেও বসে পড়ে।আরিয়া নিজের এটিটিউড বহাল রেখে বলে,
“কি খাবেন বলুন অর্ডার করি।”
“দরকারির কথা বলুন আপনি।”
অবাক হয় না আরিয়া।মেহরান খানের ব্যাপারে শুনেছে সে।দেশে এসেছে কয়েকদিন হলো।এরই মাঝে নিজের দাম্ভিকতা আর কাজের দক্ষতার জন্য বেশ পরিচিতিও পেয়েছে এই লোক।আরিয়াও সোজাসুজি ভাবেই বলে,
“ডেটে এসেছি কিছু না খেলে চলে?দরকারি কথা শুনতে যেহেতু চাচ্ছেন তবে বলব, আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে।আমাদের বিয়েটা হলে বিজনেসেরও ভালো এদিকে পারিবারিক বন্ধনও তৈরি হবে।”
এদিকে বসে থাকা রাউশিরা কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।উজান পকেট থেকে কয়েকটা মাস্ক বের করে সবাইকে পড়তে বলে। উজান আর তানজিম আগে থেকেই সমস্ত প্ল্যান করে এসেছে।এই মেয়ের সাথে মেহরানের ডেট কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া যাবে না।তাইতো মাস্ক পড়ে নিয়ে রাউশিদের মাথায় ওড়না ভালোভাবে পেঁচিয়ে নিতে বলে।রাউশি বলে,
“উজান ভাই এটা কি ঠিক করছি আমরা? মেহরান ভাইয়া যদি জেনে যায় তবে আমাদের পিঠের ছাল তুলে দেবে না তার গ্যারান্টি কি?”
উজানের বদলে তানজিম বলে,
“আমাদের চিনতেই পারবে না।”
ছেলেরা মাস্ক,চোখে চশমা আর মাথায় ক্যাপ পড়ে নেয়।এদিকে রাউশি না চাইতেও মাথায় ভালোভাবে ওড়না পেচিয়ে নেয়।আর মাস্ক পড়ে নেয় তারাও।সাথে চশমা তো আছেই। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে মেহরানদের টেবিলের দিকে অগ্রসর হয়।
আরিয়ার এমন ফালতু কথা শুনে মেহরান স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়,
“আপনার আমার পছন্দ হতে পারে মিস. আরিয়া আমার আপনাকে নয়।আমাদের বিজনেসের এমন খারাপ দিন আসেনি যে অন্যের পরোপকারে উঠে দাড়াতে হবে। আর পারিবারিক বন্ধনের কথা বলছেন?সেটা বন্ধুত্বের মাধ্যমেও থাকা যায়।বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমেই সবকিছু হয় না।”
আরিয়া হাসে।হাসলে গালে টোল পড়ে মেয়েটার।বলে,
“মি. মেহরান আপনার কথাগুলো খুব সুন্দর। এখন আমাকে পছন্দ না হওয়ার কারণ বলুন।”
এদিকে উজানরা মেহরানদের টেবিলের আশেপাশেই এসেছে।একেকজন একেক ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছে তো আরেকজন কানে ফোন দাঁড়িয়ে আছে।উদ্দেশ্য তাদের এখানে থাকা মেহরান আরিয়ার কথোপকথন শোনা।এদিকে আরিয়ে একবার খেয়াল করে এভাবে একেকজন মুখোশধারী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেমেয়ে গুলোকে।তবে সে ততটা পাত্তা দেয় না। মেহরানের নজর যায় কালো সালোয়ার কামিজ পরিহিত একটি মেয়ের দিকে।মেয়েটি ঠিক তার একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে সটান হয়ে।শরীরের মিষ্টি সুঘ্রাণ এসে নাকে লাগে মেহরানের।মুহুর্তের মাঝেই চিনে ফেলে সে।বাকিদেরও চিনে ফেলে মেহরান।ঠোঁটে বাকা হাসি ঝুলিয়ে মেহরান অদ্ভুতভাবে আরিয়াকে বলে,
“নিজ গৃহে এত সুন্দর গোলাপ থাকতে বাইরের গোলাপ তুচ্ছ মনে হয়।”
আরিয়া কথাটার মানে ভালোভাবে বুঝতে পারে না।আবার বলে,
“আপনি স্ট্রং পার্সোনালিটির মেহরান।সাথে একজন বিজনেসম্যান।আপনার পাশে অবশ্যই আপনারই মতো একজনকেই শোভা পায়।যার সমস্ত গুন আমার মাঝে বিদ্যমান।”
উজান তানজিমসহ বাকিরা সবাই সব কথা শুনতে পায়।উজান রেগে হুট করেই গালি দিয়ে বলে ফেলে,
“বা* বিদ্যমান।”
এদিকে এই কথাটা আরিয়া শুনে চোখ বড় করে পাশে তাকায়।উজান কি করেছে ঘটনাটা বুঝতে পেরে ফোনে কথা বলার মতো করে স্বর হালকা পাল্টে বলে ওঠে,
“তোর বা**ও আমার মতো না।তুই একটা জঙ্গলি।আমি তোরে অনেকদিন ধরে অপছন্দ করি।তুই এতো খারাপ কেন?তোর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই।আর একবার কল দিলে তোরে রাস্তার পাশে আইনা সার্কাস দেখামু।রাখ ফোন।”
এমন কথা শুনে আরিয়া মুখ বেকিয়ে আবারও মেহরানের দিকে তাকায়।মেহরানের খুব হাসি পেলেও হাসি আটকে রাখে।এদিকে উজানের এমন কথাবার্তা শুনে বাকিরা মাস্কের আড়ালে খুব হাসে। রাউশিও হেসে ওঠে।রাউশি মেহরানের থেকে একটি চেয়ারে বসে ছিলো।আর তার পাশেই উজান দাঁড়িয়ে।মেহরান আড়চোখে রাউশিকে দেখে।সে যে হাসছে এটা মেহরান ধারণা করে।খুব যেন দেখতে ইচ্ছে করলো মেয়েটার হাসিটা।নিজের মনোভাবকে দমিয়ে এবার মেহরান আরিয়ার কথায় স্মিত হেসে জবাব দেয়,
“দৃঢ় বন্ধনে শুধু দৃঢ়তাই থেকে যাবে।একটা সময় গিয়ে নিজেদের মধ্যে সেই বন্ধনের ধ্বংসের উপমা জেগে উঠবে।সেই শক্ত বন্ধন শুধু কোমলমতী নারীর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন।”
কথাগুলো শুনে রাউশি নিজেও মুগ্ধ হয়।আরিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।অপ্রতিভ ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে সে।এদিকে ওপাশ থেকে তানজিম আওয়াজ পাল্টে কানে ফোন দিয়ে স্বগতোক্তি করে বলল,
“একদম।তোমাকে ওর সাথে একটুও মানাবে না।” কোথায় কি বলছে সেটা বুঝতে পেরে আবারও বলে,”তোমাকে শুধুই আমার সাথে মানাবে জান।”
নাহিন,তানিয়া,মাইশাও সমস্বরে বলে ওঠে,
“আমি সহমত।”
মেহরান চক্ষুহাসে।আরিয়া আবারও সেদিকে তাকিয়ে থাকে।সে বুঝে পাচ্ছে না তারা আসার পর এগুলো কোত্থেকে এলো?
কথাবার্তা শেষে কিছু খাওয়া দাওয়া করে মেহরান আরিয়ারা চলে যায়।রাউশিরাও এবার নিজেদের রূপে ফিরে আসে।তারা বুঝতে পারছে মেহরান বেশ কৌশলে এই বিয়েটা ক্যান্সেল করবে।মনের খুশিতে নিচে আসতেই মেহরানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে না দেখার ভান করে আবারও উপরে উঠে যেতে নেয়।মেহরান অতিষ্ট হয়ে বলে,
“এই দাঁড়া ওখানে।সবগুলা এদিকে আয়।”
ধরা পড়ে যাওয়ার পর সবগুলো মুখ কালো করে মাথা নিচু করে মেহরানের সামনে এসে দাঁড়ায়।মেহরান মেকি ধমকে বলল,
“এখানে কি করছিলি?”
তানজিম আহত স্বরে বলে,
“একটু খাওয়া দাওয়া করতে এসেছিলাম সকলে।”
“ওহ তাই বুঝি?”
সবাই একযোগে মাথা নাড়ায়।মেহরানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গিয়ে পতিত হয় রাউশির দিকে।রাউশি মাথা উঁচু করেই দাঁড়িয়ে আছে। মেহরান সবগুলোকে জব্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বলে,
“আজ বাড়িতে চল তোরা তারপর সবগুলোর পিঠে লাঠি ভাঙ্গাবো।”
হতবুদ্ধিভাব সবার চোখেমুখে।শুধুমাত্র রাউশি নিরুৎসাহিত, অপারগ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে।মেহরান যে তাদের শাস্তি না দিয়ে থাকবে না এটা তারা নিশ্চিত।কিন্তু এই বয়সে এসে এভাবে পিঠে লাঠি ভাঙ্গানোর কি প্রয়োজন?মেহরানের ধমকে সবাই তাদের গাড়িতে উঠে পড়ে।রাউশি শেষে ছিলো সেও উজানদের গাড়িতে গিয়ে বসতে নিতেই মেহরান ডেকে ওঠে।
“রাউশি।”
রাউশি থামে।ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে বলে,
“হু ভাইয়া।”
“তোর থেকে এটা আশা করিনি আমি।তোর শাস্তি বেশি হবে।তুই আমার গাড়িতে আয়।”
রাউশি চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেহরানের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে।উজান আর তানজিম মুচকি হাসে।বাকিরা হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে শুধু।
চলবে…..
#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহা
পর্ব ৯
গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট বেধে গাড়ি স্টার্ট দেয় মেহরান।পাশে বসে থাকা রাউশির দিকে আড়চোখে একবার তাকাতে ভোলে না। রাউশি নখ কামড়াচ্ছে।ভয় পাচ্ছে কি?হয়তোবা।মেহরান গাড়ি চালানোর গতি বাড়ায়।এতে অবশ্য পাশে বসা রাউশি খুব একটা ভাবাবেগ হলো না।মেহরান উচ্চ স্বরে বলে,
“তুই কি আমার ডেটের ব্যাপারে সব জানতি?”
চোখ তুলে মেহরানের দিকে তাকায় রাউশি। ছোট্ট করে বলে,
“না।”
“তাহলে আজ কি হলো সেটা?”
উত্তরটা যেন রাউশির প্রস্তুত ছিলো আগে থেকে।তাইতো প্রশ্ন করার সাথে সাথে ই বলে ফেলে,
“আমি কিছুই জানতাম না মেহরান ভাই। আসলে ওরাই আমাকে জোর করলো যাওয়ার জন্য।আমি কিন্তু যেতে চাই নি।”
মেহরানের মনে হাসি পাচ্ছে।মুখায়ব মেকি কাঠিন্য করে বলে,
“যেতে চাস নি কেন?”
“আসলে যাবই বা কেন এই জন্য আরকি।”
এবার মেহরান কিছুটা রাগে।রাউশি তার ব্যাপারে উদাসীন।এটা মেহরান সহ্য করতে পারবে না।মেহরান রেগেমেগে বলল,
“ভার্সিটি যাস নি আজ।কেন যাসনি?এটা সম্পূর্ণ এক্সপ্লেইন করবি।”
মেহরানের এমন রাগীস্বর শুনে এবার কিছুটা ভয় পায় রাউশি।কি বলবে সে?বৃষ্টি পড়ছিলো বলে ভার্সিটি যায় নি এটা? নাকি বানোয়াট কাহিনী একটা শুনিয়ে দেবে? রাউশি কথা সাজিয়ে নিলো।বলল,
“অসুস্থ ছিলাম ভাইয়া।তাইতো ভার্সিটি যেতে পারি নি।এখন যদি তুমি বিশ্বাস না করো তবে সেখানে আমার কিছু করার নেই।”
আড়চোখে রাউশিকে পরখ করে মেহরান। বিশ্বাস হলো না তার।তবুও আর ঘাটলো না মেয়েটাকে।মেয়েটা তার প্রতি এখনও উৎসুক নয়।এদিকে মেহরানের বাবাও ছেলের বিয়ে দেওয়ার জন্য লেগে পড়েছেন। সমস্যা হতে পারে।এটা দ্রুত সামলাতে হবে ভাবে মেহরান।গাড়িটা বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই দেখা যায় উজানদের গাড়িটাও সেখানেই রয়েছে।রাউশি নামতেই উজানদের গাড়ি থেকে বাকিরাও নেমে যায়। তানিয়া রাউশির কাছে এসে বলে,
“চল।”
রাউশি একবার গাড়ির দিকে তাকায়। মেহরান এখনও বসে আছে সেখানে।দৃষ্টি তার সামনে।রাউশি অবাক হচ্ছে এরা এখনও এখানে কি করছে?বাড়িতে তো এদের আগে পৌঁছানোর কথা।রাউশি তানিয়ার পিছু পিছু হাঁটা শুরু করে।মেহরান গাড়ি নিয়ে আবারও কোথাও চলে যায়।সামনেই উজান,তানজিম দাঁড়িয়ে আছে।নাহিন আর মাইশা হয়তো চলে গেছে তাদের বাড়িতে। রাউশির ফুফু মালিহা খানের বাড়ি খান বাড়ি থেকে মিনিট পাচেক দূরে।বাড়িতে প্রবেশ করতেই যে যার মতো চলে যেতে নিতেও পেছন থেকে কারও ডাকে থেমে দাঁড়ায় সকলে।পেছনে ঘুরেই দেখে উর্মিলা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন তাদের দিকে তাকিয়ে।
“কোথায় গিয়েছিলি তোরা?”
উজান একবার সবার দিকে তাকিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বলে,
“মা আমরা সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলাম।”
খুব সহজেই উর্মিলা বেগম বিশ্বাস করেন। ছেলের মাথায় বারি মেরে বলেন,
“একবার বলে যাওয়া তো উচিত ছিলো নাকি।আমরা চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়েছিলাম।কল করলেও ফোন বন্ধ বলে। এমন কাজ আর করবি না।তোর জন্য চিন্তা না হলেও ওদের জন্য তো টেনশন হয় নাকি।”
তখনই কোথা থেকে যেনো তাজবির সেখানে চলে আসে।আর উর্মিলা বেগমকে বলে,
“বড় মা উজান ভাইয়ারা মেহরা_”
আর বলতে পারে না তার আগেই তানজিম ঘটনা বুঝতে পেরে মুখ চেপে ধরে ছেলেটার।উর্মিলা বেগম তখন চলে যাচ্ছিলেন তাই ভালোভাবে তাজবিরের কথাটুকু কর্ণপাত হয় না।উর্মিলা বেগম চোখের আড়াল হতেই সকলে হাফ ছেড়ে বাঁচে নয়তো এই ছেলে এতক্ষণ বলেই দিতো কোথায় গিয়েছে?নিশ্চয় বাড়িতে এই মাত্র এসেছে প্রাইভেট থেকে।নয়তো সবকিছু আজ ফাঁস করে দিতো।তানজিম তাজবিরের হাত শক্ত করে ধরে।দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।তানজিমের পিছু পিছু সবাই যায়।তাজবিরের রুমে নিয়ে যাওয়া হয় তাজবিরকে।তানজিম গিয়ে তাজবিরের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
“এই বিচ্ছুটা দেখি আমাদের খেয়ে আমাদের পেছনেই লাগছিস।”
তাজবির বলে,
“তোমরা আমাকে সাথে নিয়ে যাও নি কেন? আমি সবাইকেই বলে দিবো।”
তানিয়া তার ছোট ভাইয়ের কান মলে দিয়ে বলে,
“এই তুই জানলি কিভাবে যে আমরা যে মেহরান ভাইয়ের ডেটে যাব কথাটা।”
“তোমাদের বলাবলি করতে শুনেছিলাম আজ দুপুরে।কিন্তু আমাকে বাধ্য হয়ে প্রাইভেটে যেতে হলো। তোমরা যদি একবার বলতে আমাকে মা প্রাইভেটে যেতে বাধ্য করতো না।আর আজ আমার মার খাওয়াও হতো না।”
সবাই হেসে ওঠে।তাজবির রাউশির কাছে গিয়ে রাউশির হাত ধরে বলে,
“রাউশিপু তোমার থেকে এটা আশা করি নি।”
তানজিম আবারও তাজবিরের কান মলে দিয়ে বলে,
“এসব কথা না বলে এখন এটা শোন। কাউকে কিচ্ছু জানাবি না নয়তো তোকে রামধোলাই দেব আমরা বুঝেছিস।”
তাজবির বিরোধিতা করে বলে,
“আমি সবাইকে সবটা বলে দেবো।”
উজান এগিয়ে এসে বলে,
“এই এটাকে আজ উচিত শিক্ষা দিতে হবে। চল এটাকে ছাদে বেধে ফেলে আসি।”
রাউশি এগিয়ে এসে উজানকে বলে,
“থাক না ভাইয়া।ও এমনটা করবে না।”
তাজবিরের সামনে এসে বলে,”তাজবির কাউকে কিছু বলবি না বুঝেছিস নয়তো আমরা বিপদে পড়বো পরেরবার হতে তোকেও সাথে নিয়ে যাব।”
“আমার নেক্সট যদি ডব্লাইন্ড ডেট থাকলে সেখানেও যাওয়ার প্ল্যান করছিস দেখি।”
পেছন থেকে মেহরানের ভরাট গমগমে আওয়াজ শুনে সবাই পেছনে ফিরে তাকায়। মেহরান দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।দৃষ্টিটা রাউশির দিকে।রাউশি উঠে দাঁড়ায়। মেহরানের কথার বিপরীতে বলে,
“এমনটা মোটেও নয় মেহরান ভাই।আমি তো শুধু তাজবিরকে_”
মেহরানের হাত উঁচানোতে থেমে যায় রাউশি।সবার উদ্দেশ্যেই বলে,
“বল তো তোদের কি শাস্তি দেওয়া যায় আজ। ”
তানিয়া ভয়ে ভয়ে বলে,
“এবারের মতো মাফ করে দাও মেহরান ভাই।”
“মেহরানের খাতায় মাফ শব্দটা নেই।শাস্তিই প্রযোজ্য।”
উজান ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলে,
“দেখ ভাইয়া তোর ভালোর জন্যই গিয়েছিলাম আমরা।ওই মেয়েটার সাথে তোকে ভালো মানাবে না।”
মেহরান কথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে বলে,
“ওদের কথা বাদ দিলাম কিন্তু তুই আর তানজিম তো দামড়া ছেলে।এই বয়সে এসে এমন ছেলেমানুষীতে কি তোদের শোভা পায়?”
উজান মাথা নিচু করে।মেহরান রাউশির দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে,
“কান ধর।”
রাউশি চোখ ছোট ছোট করে তাকায়,
“শুধু আমি কেন?”
“সবাইকেই বলেছি।”
বিনাবাক্য ব্যয়ে সবাই কান ধরে।রাউশি ধরতে না চাইলেও বাধ্য হয়েই কান ধরে। মেহরান সবার আড়ালে একবার হাসে রাউশিকে দেখে,
“তানিয়া তুই আগামীকাল বাগান পরিষ্কার করবি পুরোটা।তানজিম তুই আগামীকাল বাড়ির সব বাজার করবি। উজান তুই পুরো বাড়ি পরিষ্কার করবি।আর,”
রাউশির দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই আমার জামাকাপড় ধুয়ে দিবি। একদম সব।”
রাউশি শুধু চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে।তার কাজটা এমন কেন?মেহরান কি তাকে পছন্দ করে?তাহলে এমন রুক্ষ ব্যবহার নিশ্চয় করতো না।তবুও রাউশি মেহরানকে নিয়ে সন্দিহান হচ্ছে।তানজিম মাথা দুদিকে বার বার নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলে,
“নাআআআ!মেহরান ভাই তুমি আমাদের সাথে এমন করতে পারো না।আমরা এখনও অনেক ছোট এসব কাজ আমাদের দ্বারা পোষাবে না।”
বলেই কপালে হাত দেয়।কষ্ট পেয়েছে এমন অভিনয় করে।উজান তানজিমের পিঠে চাপড় মেরে বলে,
“তোর তো শুধুই বাজার আমার দেখ পুরো বাড়ি পরিষ্কার করতে হবে।”
মেহরানের দিকে তাকিয়ে আবার বলে,
“ভাই তুই এমন মেয়েদের কাজ আমায় দিলি কেন?আমায় কি থার্ড পার্সন মনে হয় নাকি তোর?”
হো হো করে হেসে ফেলে মেহরান বাদে।রাউশিও মুচকি হাসে।উজান কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে,
“হায় আল্লাহ কি দিন এলো? বড় ভাই নিজের ছোট ভাইকে তৃতীয় লিঙ্গের মনে করছে এখন।আল্লাহ আমারে তুমি উঠাইয়া নেও।”
মেহরান এতক্ষণ তাদের কর্ম দেখে যাচ্ছিলো।এবার ধমকে বলে,
“চুপ থাক হাদারাম।কাল যেন মনে থাকে সবার।এখন যে যার ঘরে চলে যা।”
সবাই একে একে বেরিয়ে যায়।রাউশিও মেহরানের সামনে গিয়ে মুখ বেঁকিয়ে চলে যায়।মেহরান চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই নিজের রুমে চলে যায়।রাতের বেলা আসমা খালা রাউশিকে খাবারের জন্য ডাকতে আসে।খান বাড়িতে নৈশভোজন সবাই একসাথেই করে।রাউশি নিচে আসতেই দুটো চেয়ার বাদে বাকি সব চেয়ার খালি পড়ে থাকতে দেখে।চেয়ার দুটো মুখোমুখি।একবার পুরো টেবিল পরখ করে বুঝে যায় কে বাকি আছে এখনও এখানে আসার। একদিন মেহরান রাতে দেরিতে ফিরতো বলে একসাথে খাওয়া হয় নি।গতকালও রাউশি খেতে যায় নি নিচে।আজ তো বাঘের সামনে বসেই খেতে হবে।মানুষটা বাড়িতে আছে। রাউশির অনিচ্ছা সত্ত্বেও বার বার তার চেয়ারের সামনে গিয়ে হাটাহাটি করতে থাকে। তার এমন হাটাহাটি করা দেখে মাহবুব খান বলে উঠল,
“রাউশি মা কি হয়েছে তোমার? এভাবে হাটাহাটি করছো কেন?”
রূপা বেগম বলেন,
“হ্যা রে মা কি হয়েছে এমন করছিস কেন? বসে পড় চেয়ারে।”
রাউশি কিছু বলতে পারে না।বসে পড়ে। রাউশির প্লেটে খাবার দেন রোকসানা বেগম।কিছুক্ষণ পর ওপর থেকে নেমে আসে মেহরান।পরনে কালো নেভি ব্লু টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার। চুলগুলো ভেজা মনে। গোসল করেছে হয়তো।এসেই রাউশির সামনের চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে।মেহরানের সামনে খেতে কেমন অস্বস্তি হচ্ছে রাউশির।এটা আজ থেকেই বেশি হচ্ছে বলে রাউশির ধারণা।তানজিম,উজান,তানিয়ার দিকে তাকাতেই দেখে তারা গপাগপ খেয়ে চলেছে।এরা এভাবে খাচ্ছে কেন আজ?খাওয়ার মাঝেই মাহবুব খান একটু কেশে সকলের সামনেই মেহরানের উদ্দেশ্যে বলে,
“একটু আগে আজিজ কল করেছিলো। বললো আরিয়ার নাকি তোমায় মনে ধরেছে। বিয়েতে সে হ্যা বলে দিয়েছে।এখন তোমার কি মত?হতাশ করবে না নিশ্চয়।”
মাহবুবের কথা শুনে উজানের ভাত গলায় আটকে যায়।তানজিম সেসময় পানি খাচ্ছিলো মুখ দিয়ে পানি বেরিয়ে প্লেটের পাশে গিয়ে পড়ে।তানিয়া কাশতে শুরু করে। তাদের মাঝে শুধু মেহরান আর রাউশিই শান্ত।মেহরান নির্বিকার ভঙ্গিমায় খেয়ে চললেও রাউশি পাশে থাকা তানিয়ার পিঠে হাত বুলাচ্ছে।ছেলেমেয়েদের একেকজনের এমন অবস্থা দেখে বড়রা ভুরু কুচকায়। মাহবুব নিজ ছোট ছেলেকে বলেন,
“কি হলো তোমার?”
উজান তার বাবাকে বলে,
“কিছু না বাবা।আজ খাওয়া বেশি হয়ে গেছে আমার তাই গলায় খাবার আটকে গেছে।”
মাহতাব খান তার বড় ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে,
“আর তোমার কি সমস্যা হলো? খাবার তো নষ্ট করলে।”
“এমন ভয়ানক কথা শুনলে খাবার শুধু গলায় নয় কলিজায়ও আটকে যায়।” তানজিম কথাটা বিরবির করে বলায় কেউ শুনতে পায় না।মাথা নিচু করে বসে আছে সে।মেহরান এবার তার বাবার কথা প্রেক্ষিতে জবাব দেয়,
“মেয়েটাকে আমার পছন্দ হয় নি।”
মাহবুব খান নাখোশ,
“কেন?”
“মেয়েটা অভদ্র।সেল্ফ রিসপেক্ট নেই।আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আমার নিজের পছন্দ করা একজন আছে।ওপাশ থেকে উত্তর হ্যা আসলে আমি নিজেই বিয়ের বিষয়ে এগিয়ে যাব এর আগে নয়।তাই আমার বিয়ে নিয়ে বিষয়বস্তু আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো তোমরা।”
চলবে……
ভুল ক্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।