#মেহেরজান
লেখনীতে- #সোহামণি
পর্ব ৩৩
মানুষের শরীরে হুট করেই রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আর তা যদি হয় সিরিয়াস তাহলে বেঁচে না থাকার একটি আতঙ্ক কাজ করে মন জুড়ে। এইযে মেহরানেরও একই অবস্থা।
বৃষ্টিদের বাড়ি থেকে আসার আগের দিন মেহরান আর নুজাইশ বাজারে গিয়েছিলো সেখান থেকে ফেরার সময় মেহরানের হঠাৎ অনেক কাশি উঠে যায় আর বুকে ব্যথা শুরু হয়। তীব্র মাথা ব্যথায় মেহরান কাঁচা রাস্তার ওপরেই বসে পড়ে। নুজাইশ প্রচুর চিন্তিত হয়ে পড়ে যখন দেখে মেহরানের কাশির সাথে রক্ত যাচ্ছে আর নাক দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। সাথে সাথেই গ্রামের ফার্মেসী ডাক্তারের কাছে ধরে নিয়ে যায় নুজাইশ মেহরানকে। গ্রামের ফার্মেসী ডাক্তার কি আর ভালো বুঝবে। কিছু ঔষধপত্র দিয়েছে শুধু। যেসব মেহরান রাউশি যাতে না দেখে সেজন্য নুজাইশের কাছে রেখে দিতে বলেছে। নুজাইশও মানা করে নি। সিলেট থেকে আসার সময় মেহরান সবার পেছনে বসেছিলো কারণ তার কাশি উঠলে যাতে পেছনে বসে ধীরে ধীরে কাঁশতে পারে। মেহরান ক্লান্ত ছিলো। তার যে দুরারোগ্য হয়েছে সেটা সে খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারে। কেন যেন রাউশিকে দেখে খুব বেশি মায়া আর খারাপ লাগছিলো মেহরানের। অজানা ভয়ে ঠিক সেসময় তার এত স্ট্রং ক্যারেক্টারও নড়ে উঠেছিল।
মেহরান সমস্ত বিষয় সাঈদকে বলেছে। সাঈদ হাসপাতালে যাওয়ার ব্যাপারে বলেছিলো। চেক আপ করানোর জন্য। তাইতো সাঈদের কল পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে হাসপাতালে।
সাঈদের কেবিনে ঢুকতেই আরও বেশি চমকে যায় মেহরান। কারণ সেখানে আরিয়া বসে ছিলো। মেহরান ভাবে এই মেয়ে এখানে কি করতে এসেছে?
এদিকে আরিয়া এসেছিলো সাঈদের সাথে দেখা করতে। ব্লাইন্ড ডেইট যে কখনো এমন হাসপাতালে হয় সেটা আরিয়ার জানা ছিলো না। তবে এভাবে মেহরানের দেখা পেয়ে যাবে ভাবতে পারে নি। মেহরানকে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তার কাছে। কোণে একটা হাসি ফুটালো। মেহরান কপাল কুঁচকে সামনে এগিয়ে গেলো। সাঈদ আরিয়ার উদ্দেশ্য বলল,
“আপনার এখন যাওয়া উচিত মিস. আরিয়া।”
আরিয়া সাঈদের কথার উত্তর না দিয়ে মেহরানকে জিজ্ঞাসা করলো,
“কেমন আছেন মেহরান খান? আপনাকে অনেকদিন পর দেখছি।”
মেহরান আরিয়ার কথায় পাত্তাই দিলো না। তবে সাঈদের ভ্রুদ্বয়ের মাঝে গাঢ় ভাঁজ পড়লো। আরিয়া মেহরানকে চেনে? মেহরান বরং গম্ভীর স্বরে সাঈদকে বলল,
“পার্সোনালি কথা বলতে চাই।”
আরিয়ার পার্সোনালিটি আঘাত হানলো। তাই উঠে দাঁড়িয়ে গটগট পায়ে হেটে চলে গেলো। সাঈদ কিছু বলার আগেই মেহরান তাকে থামিয়ে বলল,
“এখন এই আরিয়ার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করিস না।আগে আমার সিটিস্ক্যান কর।”
সাঈদ ছোট করে শ্বাস ফেললো।কিছু জিজ্ঞাসা করলো না।
আধঘণ্টা ধরে বসে রয়েছে মেহরান। চিন্তায় আর তীব্র মাথা ব্যথায় তার মাথা ফেঁটে যাচ্ছে। বমি বমি ভাব পেলেও নিজেকে কন্ট্রোলে রাখলো। রাউশি কয়েকবার কল করেছে তাকে। কিন্তু মেহরান রিসিভ করে নি।
মেহরান কপালে হাত দিয়ে বসে ছিলো। সেসময় সাঈদ আসলো। তার পিছুপিছু এক এক করে বন্ধুমহলের সবাই আসলো। মেহরান বিরক্ত হলো। এদের বলার কোনো মানে আছে? এই সাঈদ সবাইকেই বলে দিয়েছে নাকি?
আলভি মেহরানের কাছে এসে বসে বলল,
“মেহরান আ’ ইয়্যু ওকে?”
সবার চোখেমুখে কেমন হতবম্ভ ভাব ছেয়ে আছে।মেহরান যা বুঝার বুঝে গেলো। কষ্টের মাঝেও ভীষণ হাসি পাচ্ছে হঠাৎ। এই দিন দেখতে হবে কখনও ভাবে নি সে।পরিবারের কথা মনে পড়ছে এখন। সবচেয়ে বেশি ডিস্টার্ভ করছে রাউশির প্রাণচ্ছোল মুখটা। একটি সুন্দর জীবন রাউশির সাথে পারি দেওয়া হবে না ভেবে শ্বাস রোধ হয়ে এলো তার।হাসফাস করলো মেহরান। কান্না পেলেও ছেলে মানুষকে কান্না করা শোভা পায় না ভেবে দমিয়ে নিলো নিজেকে।
সাঈদ রিপোর্টটা এগিয়ে দিলো মেহরান মুখে হাত দিয়ে হালকা কেঁশে উঠলো ।মেহরান হাত তুলে সেটা নিতে গিয়ে দেখলো হাত ক্রমশ কেঁপে চলেছে তার।অথচ তার ব্যাক্তিত্বের সাথে এই কাঁপাকাঁপি শোভা পায় না।বুক ভার হয়ে এলো।সাঈদ সড়ে গিয়ে ধপ করে নিজের ইজি চেয়ারে বসে মাথা উপরে তুলে হতাশার এক শ্বাস ছাড়লো। এদিকে তুষার কেঁদে দিলো।এহসানেরও একই অবস্থা। নুজাইশ নেই এদের মাঝে। ছেলেটাকে সাঈদ কল দিয়েছিলো।হয়তোবা ব্যস্ত আছে। তাই কল রিসিভড করতে পারে নি।
এদিকে আলভি মেহরানের কাঁধে হাত রেখে বসে আছে।কষ্ট হচ্ছে খুব।যে ছেলে সবসময়ই নিজেকে স্ট্রং রাখার উপদেশ দেয় সেই ছেলের আজ এমন মরনব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কথা মাথাতেও আসে নি কারোর।
মেহরান রিপোর্ট খুলে দেখলো তার ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে। সেকেন্ড স্টেজে আছে। মেহরান নিজের মনকে বোঝালো এখনও স্টেজ ফোরে যায় নি। তবে এত তাড়াতাড়ি এতদূর এগোলো কিভাবে তাও বোধে আসলো না।আপাতত এসব ভাবার মুডে নেই। বরং নিজেকে বারবার স্বান্তনা দিলো সময় আছে এখনও চিকিৎসা করাতে পারবে। সবার দিকে একপলক তাকালো। সবাই তারই দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকানো। মেহরান বুক ভরে শ্বাস নিতে গেলেও কষ্ট হলো। তবুও যতটা সম্ভব গম্ভীর স্বরে বলল,
“কেউ যাতে না জানে।”
উঠে দাঁড়ালো তারপর আবারও বলল,
“রাউশি যেন একেবারেই নয়।”
.
ভার্সিটিতে আজ কিসের যেন এক প্রোগ্রাম আছে। মেহরান গতকাল বাড়িতে ফেরে নি। রাউশিকে ফোন করে জানিয়েছে সে শহরের বাইরে গিয়েছে। রাউশিও খুব একটা ঘাটায় নি মানুষটাকে। তবে কণ্ঠটা অন্যরকম লেগেছে তার। কেমন ভাঙ্গা ভাঙ্গা লেগেছে। মানুষটার কাশি উঠেছে নাকি?
রাউশি তানিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। রিকশায় চড়ে ভার্সিটিতে গেলো। একদম গেইটের সামনে গিয়ে দুজনে নেমে গেলো। তখনই আবার সেদিক দিয়ে আসছিলো আয়াশ। রাউশিকে দেখে চলন থামিয়ে দেয়। রাউশি প্রথমে খেয়াল না করলেও ভাড়া মিটিয়ে সামনের দিকে চোখ যেতেই আয়াশকে দেখে একবার তাকালো। আগের তুলনায় স্বাস্থ্য কমেছে। মুখ ভর্তি দাড়ি গজিয়েছে। ফ্যাকাসে হয়েছে মুখমণ্ডল। রাউশি মুখ ঘুরিয়ে তানিয়াকে নিয়ে চলে গেলো।
আয়াশ রাউশিকে দেখলো শুধু।রাউশির সামনে থাকলে তার নিজেকে কেমন যেন অপরাধী, পাপী মনে হয়। প্রলম্বিত শ্বাস ফেলে নিজেও ঢুকলো।
বছরের শেষের দিকে ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে একটি প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়। আজই সেই দিন। রাউশির সাথে আজ প্রায় অনেকদিন পর বন্ধু-বান্ধবীদের দেখা হলো। রুনা দূর থেকে রাউশিকে দেখতে পেয়ে এক দৌঁড়ে এসে রাউশিকে জড়িয়ে ধরলো। বাকিরাও এগিয়ে এলো।
“অনেকদিন পর।”
হাসিবের কথায় রাউশিও হেসে তাল মেলালো,
“অনেকদিন পর।”
“শুকিয়ে গেছিস রাউশি।”
“আর তুই মোটা হয়েছিস।”
ইউসুফ হেসে উঠলো।হাসিবের কাঁধে হাত রেখে রাউশিকে বলল,
“আমাদের হাসিব সিনিয়রের সাথে প্রেম করছে।”
রাউশি অবাক হলো,
“সিনিয়র!”
“হ্যা সিনিয়র।”
হাসিব ইউসুফের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“সিনিয়র না আমার থেকে দুই মাসের ছোট। ওর বাপ মা ওরে আগে ভর্তি করাইছে স্কুলে আমারে পরে করাইছে। তাই ক্লাসের গ্যাপ এত।”
নাঈম ফোঁড়ন কেটে বলল,
“তবুও সিনিয়র কেমন যেন বাজে একটা অনুভুতি আসে আমার।”
“তোর আসে আমার আসে না। আর তুই তো প্রেম করছিস না।”
রাউশি বলল,
“হ্যা সেটাই তো।হাসিবের যেহেতু পছন্দ হয়েছে তাহলে ওই প্রেম করুক। তোরা শুধু ওদের লুতুপুতু প্রেম দেখে যা।”
মিলি দৌঁড়ে এলো।প্লাজুতে পা লেগে পড়ে যেতে নিলে নাঈম মিলির হাত ধরলো,
“সাবধানে হাটতে পারিস না?”
“প্লাজুতে পা লেগেছিলো।”
“প্লাজু পড়িস কেন?এমনিতেই আসতে পারিস না।”
হাসিব নাঈমের পিঠে বড়সড় কিল বসিয়ে মনে করিয়ে দিলো নাঈম ঠিক কি রকমের কথা বলছে। নিজের কথার ধরণ বুঝতেই নাঈম ইতস্ততবোধ করলো আর মাথা চুলকে মিলিকে বলল,
“তুই একটা কানা।যাহ সর।আমায় যেতে দে।”
নাঈম কোনোভাবে কেটে পড়লো। এদিকে রুনা রাউশির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। পেছন পেছন বাকিরাও গেলো।
চলবে…..
#মেহেরজান
লেখনীতে – #সোহামণি
পর্ব ৩৪
“মেহরানের ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে নুজাইশ।সেকেন্ড স্টেজে আছে।মোটামুটি ভালো থাকলেও থার্ড স্টেজে যেতে সময় লাগবে না।কিন্তু ও কোথায় গিয়েছে এটাও জানি না।তুই একটু খোঁজ নিয়ে দেখ ভাই।”
শেষের কথাগুলো ভালোভাবে না ঢুকলো না প্রথম কথাটা শোনার পরই কানে আগুনের লাভা ঢেলে দেওয়ার মতো পরিস্থিত হলো যেন নুজাইশের। কথাটুকু শুনতেই ফোনটা হাত থেকে নিচে পড়ে গেলো। তার সামনেই রাউশি। তবে রাস্তার ওপরপাশে।নুজাইশ গাড়িতে বসে ছিলো।রাউশিকে দেখছিলো দূর থেকে।তখনই সাঈদের কল আসলে নুজাইশ চিন্তিত হয়ে পড়ে।সাঈদ ব্যস্ততার তাড়নায় খুব একটা কল করে না।প্রয়োজন পড়লে মেসেজ দিয়ে দেখা করে নুজাইশের সাথে।তবে আজ হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলো দেখে নিজেও চিন্তিত ছিলো।এরপর যখনই সেই বিশ্রি কথাটা শুনলো ফোনটা হাত থেকে নিচে পড়ে গেলো গাড়িতে।
তার নিজেরই কেমন উদ্ভ্রান্তের মতো লাগলো নিজেকে না জানি মেহরানের কি অবস্থা? কাত হয়ে নিচে খুঁজতে লাগলো ফোনটা। হাতে পেয়ে মেহরানকে কল করার চিন্তা ভাবনা করলো।কল করলো কিন্তু মেহরান ধরলো না।এই ছেলেকে খুব তাড়াতাড়িই দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।নয়তো মানুষটা বাঁচবে না।ফুসফুসে ক্যান্সার যদি ফোর্থ স্টেজে চলে যায় তবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একদম পাঁচ পার্সেন্টও থাকে না।সর্বোচ্চ পাঁচবছর কি দশ বছর বাঁচার সম্ভাবনা থাকে।কিন্তু মেহরানকে যে বেঁচে থাকতে হবে অনেক অনেক বছর। রাউশির জন্য বেঁচে থাকতে হবে।
নুজাইশ গাড়ি ঘুরিয়ে মেহরানকে খোঁজার জন্য বেরিয়ে পড়লো।এদিকে রাউশি ভার্সিটি থেকে বের হয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় হঠাৎ চোখ গেলো দূরে ফুঁচকার স্টলে। তানজিম আর একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে ফুঁচকা খাচ্ছে। তানজিম ভাই কি ডেটে গিয়েছে নাকি? রাউশি খুব একটা ঘাটলো না। তবে তানজিমকে দেখে তার উজান ভাইয়ের কথা মনে পড়লো। রাউশি তো উজানের কথা ভুলেই গিয়েছিলো। রাউশি তাড়াতাড়ি করে ফোন বের করে উজানের নাম্বারে কল লাগালো। বারকয়েক রিং হলো তবে কল রিসিভড হলো না। রাউশি ভাবলো উজান ভাই হয়তো তার ওপর রেগে আছে। রাউশি বারবার কল করার পর শেষবারে কল রিসিভ হলো।
“হ্যালো!উজান ভাইয়া!”
ওপাশ হতে নিরুত্তর উজান।রাউশি পুনরায় বলল,
“ভাইয়া তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?হ্যালো!”
“বল।”
উজানের কণ্ঠস্বর অন্যদিনের তুলনায় ভিন্ন। কেমন অপরাধবোধ প্রকাশ পাচ্ছে যেন। রাউশি বলল,
“ভাইয়া তোমায় গতকাল আজ একটা দিনও দেখতে পেলাম না।কোথায় তুমি?”
“আছি এখানে সেখানে।কেমন আছিস তুই রাউশি?আমার জন্য কত বড় বিপদে পড়লি নারে? আমায় ক্ষমা করে দিস বোন।”
রাউশি বিরোধিতা করে বলল,
“এসব কি বলছো?আমাদের ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হয়।কখন কার কি হয় সেটা কি কেউ আগে থেকে নির্ধারণ করে নাকি কেউ সে পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়? হ্যা শত্রুপক্ষ এমন করে থাকে।তবে আপনজন কি কখনও এমন করে ভাইয়া?ক্ষমা চেওনা উজান ভাই।তুমি বাড়িতে চলে এসো। আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাব।”
উজান কান্নাভেজা গলায় বলল,
“আমি আর ও বাড়িতে যাব না বনু।রাখছি, ব্যস্ত আছি।”
কল কেটে দিলো উজান।হতাশ হলো রাউশি।কি একটা পরিস্থিতি তাদের ভাইবোন বাবা মায়ের মাঝে একটা বড়সড় ফাটল ধরিয়ে দিলো।না জানি কবে জোড়া লাগবে এই ভাঙন।
রাউশি অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তাটা পার হচ্ছিলো। খেয়াল ছিলো না একটি ট্রাক আসছে বাম দিক থেকে।রাউশি যখন পার হচ্ছিলো তখন বেশ দূরেই ছিলো তবে রাউশি রাস্তার মাঝে যেতেই এত দ্রুতই এলো যে রাউশি ঠাওর করতে পারলো না।শুধু চোখ বড় বড় করে বাম দিকে তাকিয়ে।তখনই কেউ তার হাত ধরে টান দিলো তবে ট্রাকের সাথে ডান বাম পায়ে বড়সড় ধাক্কা লাগে।ট্রাকের চাকার নিচে একটু পড়ে যাওয়ায় পায়ের বেহাল দশা হয়ে যায়। রক্তাক্ত হয় মুহুর্তের মাঝেই।এত স্পিডে ছিলো রাউশি ট্রাকের নিচে পড়ে মুহুর্তেই মারা যেত আজ।কিন্তু তবুও যখম হয়েই ছাড়লো।পায়ের অবস্থা গুরুতর।রাউশি আর্তনাদ করছে।কে টান দিয়েছে খেয়ালে নেই।মাটিতে ঢলে পড়লো। পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে।পা কি থেতলে গেছে কিনা সন্দেহ।
আয়াশ রাউশির মাথা নিজের কোলে রাখলো।রাউশি অজ্ঞান হয়ে গেলো।আয়াশ উদ্বিগ্ন হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে মানুষদের বলল,
“কেউ এম্বুলেন্স ডাকুন প্লিজ।”
মানুষ জড়ো হলো।এদিকে তানজিমরা দেখলো রাস্তায় মানুষ জড়ো হয়েছে। তানজিম কৌতূহল বশত বান্ধবী রিয়াকে রেখে সেদিকে গেলো। ভিড় ঠেলে সামনে যেতেই রাউশিকে ওমন অবস্থায় দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে।
“রাউশি!”
দৌঁড়ে গেলো রাউশির দিকে।আয়াশ চিনলো না তানজিমকে তবে বুঝলো ছেলেটা রাউশিকে চেনে।আয়াশের চোখ ভিজে গেছে মুহুর্তেই।তানজিম পাগলের মতো হয়ে গেলো রাউশির এমতাবস্থা দেখে।একটা মাইক্রো যাচ্ছিলো সেদিক দিয়ে তানজিম থামিয়ে লিফট চাইলো।মাইক্রোর সেই ড্রাইভারও রাজি হলো।আয়াশকে সড়িয়ে তানজিম রাউশিকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসালো। আর গাড়ি মুহুর্তের মাঝেই চলে গেলো হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।আয়াশ দাঁড়িয়ে রইলো। ভাবলো যাবে কিনা? তার কি যাওয়া উচিত কিনা?
.
বাড়িতে হাসনা বেগম, বৃষ্টিদের সাথে বাড়ির লোকেরা গল্পগুজব করছিলো।সেসময় রোকসানা বেগমের ফোনে কল আসলো। ফোনটা টেবিলের ওপর রাখা ছিলো। তানজিমের কল দেখে রিসিভ করলেন।
ওপাশ হতে তানজিমের কাঁপা গলায় ভয়ানক রকমের কথা শুনতে পেয়েই জমে গেলেন রোকসানা বেগম।হাত থেকে ফোন পড়ে গেলো।বসার ঘরে এসে কাঁপা কাঁপা গলায় কথাটা বলতেই রূপা বেগম যেন জমে যান।উর্মিলা বেগম ধরেন রূপাকে।বৃষ্টি আর তার মায়েরও অবস্থা একই।বৃষ্টির বুক কাঁপলো।মেয়েটা তো এই কিছুদিন আগেই একটা বিপদ থেকে রক্ষা পেলো আর এখনই আবার এমন ভয়াবহ বিপদ? সব বিপদই কি রাউশির ওপর নাকি?
তানজিম অনেক্ষণ যাবৎ মেহরানকে কল দিয়ে যাচ্ছে তবে পাচ্ছে না। শেষবারের মতো কল করলো তাও পেলো না।ওটি থেকে ডাক্তার বের হলো তখন।তানজিম দ্রিত ডাক্তারের কাছে যেতে ডাক্তার বলল,
” বড়সড় কোনো ক্ষতি না হলেও ক্ষতটা অনেক। সুস্থ হতে সময় লাগবে।”
পরিবারের সবাই সেখানে উপস্থিত হলো সেসময়ে।ডাক্তারের কথা সবাই শুনলো। মাহমুদ খান ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললেন,
“আমার মেয়ে কেমন আছে ড.? আমার মেয়ে ভালো আছে তো?”
ডাক্তার বিনয়ী স্বরে বললেন,
“উনার ক্ষত খুব গভীর।ট্রাকের নিচে পা পড়েছিলো মনে হয়? পায়ের অবস্থা কিছুটা বেগতিক।ঠিক হতে সময় লাগবে।”
এই বলে ডাক্তার চলে গেলেন।মাহমুদ খান দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন।সব বিপদ কেন তাদের ওপরই বয়ে যাচ্ছে?কি এমন করেছে তারা?তার মেয়ে এত কষ্ট কেন পাচ্ছে? কিছুদিন আগেই এতবড় বিপদ থেকে বেঁচে ফিরলো।আর এখনই আবার এক্সিডেন্ট?
এদিকে মেহরান একটি বদ্ধ অন্ধকার রুমে ফ্লোরে বসে আছে।অন্ধকারে কালো অবয়ব দেখা যাচ্ছে আর জলন্ত সিগারেট দেখা যাচ্ছে। ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণই এই সিগারেট আর মেহরান এই সিগারেটই খাচ্ছে। মেহরান চোখ দুটো ভেজা।আধারের সমীপে সেটা বোঝা গেলো না।মেহরান অন্ধকারেই সিগারেট ফুঁকছে।আর ভাবছে তার কি এই মরনব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ারই ছিলো?
তানজিম অনেক্ষণ যাবৎ কল দিচ্ছিলো কিন্তু মেহরান রিসিভ করে নি।মন মেজাজ ভালো নেই তার।সিগারেটে শেষ টান দিয়ে এবার রাউশিকে ফোন করার জন্য ফোন হাতে নিলো।রাউশিকে খুব মিস করছে মেহরান।মেয়েটা কি জানে? মেহরানের সময় খুব কম? তাদের মেহেরজান নামক বন্ধনটা টগিক কতদিন অটুট থাকবে এ নিয়ে সংশয়ে ভুগছে মেহরান।একটা সুখের সংসার তো সেও ডিজার্ভ করে।তবে সৃষ্টিকর্তা যে নারাজ তাদের ওপর।হয়তোবা কোনো এক পাপ করেছিলো যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে।
মেহরান দুবার কল দিলো রিসিভ হলো না। ভাবলো হয়তো ব্যস্ত আছে।তবে এরপরই আবার রাউশির নাম্বার থেকে কল এলো। মেহরান এবার কল রিসিভ করে কথা বলতে নিয়ে গলা আটকে আসলো।কেমন অবশ অবশ লাগছে।কিন্তু তখনই ওপাশ হতে তানজিমের গলার স্বর শুনতে পেলো,
“ভাই রাউশির এক্সিডেন্ট হয়েছে।”
এটা শোনার পরই মস্তিষ্কই অবশ হয়ে গেলো মেহরানের। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ঠিক শুনেছে কিনা। ওপাশ হতে তানজিম ‘হ্যালো,হ্যালো’ করছে।মেহরান হতবম্ভতা বজায় রেখে প্রশ্ন করলো,
“কি বললি?”
“রাউশির এক্সিডেন্ট হয়েছে ভাই।তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
চলবে…..