প্রেমময়ী সন্ধ্যা পর্ব-১১+১২

0
4

#প্রেমময়ী_সন্ধ্যা
#পর্ব_১১
#লেখিকা: তাসফিয়া আনজুম

প্রায় দশ মিনিট ধরে থেমে থেমে ওয়াশ রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে ওয়াহিদ। সেই যে একঘন্টা আগে হসপিটাল থেকে এসে ঢুকলো আর বের হওয়ার নাম গন্ধ নেই।

“এই ঝুমুর? তুমি কি ভিতরে ঘুমিয়ে গেলে নাকি? বেশি ঘুম পেলে রুমে এসে ঘুমাও!”

কথার মাঝে ওয়াশরুম এলো ঝুমুর। ওয়াহিদ তার চোখ মুখ দেখে চমকে উঠলো। চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে।

“এই কি হয়েছে তোমার? চোখ মুখ লাল হয়ে আছে কেন? হসপিটাল থেকেও চলে এলে শরীর খারাপ লাগছে বলে, এখন বেশি খারাপ লাগছে নাকি?”বলেই কপালে হাত দিয়ে দেখতে লাগলো।
“না তেমন কিছু না মাথা ব্যাথা করছিল। ঠিক হয়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে।”

আচ্ছা এদিকে আসো,বলে ওয়াহিদ ওকে খাটে নিয়ে বসিয়ে দিল। তুমি একটু বসো আমি পাঁচ মিনিটেই ফ্রেশ হয়ে আসছি, তারপর দুপুরের খাবার খেয়ে ওষুধ মাথাব্যথার ওষুধ খেয়ে নিও।”

দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়লো ঝুমুর।

_______

কান্নার শব্দ কানে ভেসে আসতেই মিটমিট করে চোখ খুললো আদিল। চোখ খুলে দেখে কান্না করা মানুষটা মা ছাড়া আর কেউ না। কান্নার শব্দে মাথা ধরে আসলো তার।
“মা থামো এইবার। আমি তো মরে যাইনাই যে তুমি এইভাবে কান্নাকাটি শুরু করলা!”
সাহিদা আক্তার ছেলের দিকে করুন চোখে চাইলেন।
“তুই কি বুঝবি আমার কষ্ট! নিজে তো কাল থেকে পরে আছিস এইখানে। আমার কি অবস্থা তা শুধু আমিই জানি।”
কথার মাঝেই ফোন বেজে উঠলো সাহিদার। কথা বলা শেষ করে আদিলের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আমি বাড়ি যাই। তোর মামী আসছেন বাড়িতে।”
আদিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো মায়ের দিকে।
“এই মহিলা আবার আসছে কেন? আমি কিন্তু বাড়ি যাবো না বলে দিলাম।”
সাহিদা কোনো কথা না বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলেন। সে জানে এখন কথা বললেই ঝামেলা শুরু করে দিবে ছেলেটা।

“আচ্ছা যাস না। এবার উঠে খাবার খেয়ে নে।”
কেয়ার কন্ঠ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো আদিল। চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠলো,
“তোর এখানে কি?”
“সেটা আমাকে না জিজ্ঞেস করে নিজেকে জিজ্ঞেস কর।”
” দেখ ঢং না করে বাড়ি যা। আমার কাজ আমি একাই করতে পারি।”
“আচ্ছা তাই বুঝি ? তাহলে নিজের হাতে খা তো!”
“আমার এখন খেতে ইচ্ছা করছে না তুই চলে যা।” আদিল বেশ গম্ভীর হয়ে কথাটা বলে অন্যদিকে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। চাইলেও নিজের হাত দিয়ে খেতে পারবে আদিল।কারন তার ডান হাতে ভালোই ব্যাথা পেয়েছে।
এমন সময় হঠাৎ কেয়ার ফোনটা বেজে উঠলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘রাফি’ নামটা। কল রিসিভ করেই বলে উঠলো,
“হ্যালো রাফি ভাইয়া কেমন আছো?”
—-
ওপাশের ব্যক্তির কথা শোনা গেল না।
“ওহ ভালোই তো। আমি একটু হসপিটাল আছি আমার এক ফ্রেন্ডের সাথে এইতো বিকেলের দিকে বাসায় চলে আসব।”
—-
“না না নিতে আসতে হবে না।আমি একাই চলে যেতে পারবো।”

কেয়া কল রেখে আদিলের দিকে তাকিয়ে দেখতে বল ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
“কি?”
আদিল কটমট করে বলে উঠে,
“কেন রে বিকেলে যাবি কেন এখনি যা! আমি কি তোকে আমার সাথে বসে থাকতে বলেছি নাকি?”
কেয়া রেগে গেল এবার,
“ধুর তোর সাথে কথা বলাই বেকার! আমি কিন্তু সত্যি সত্যি চলে যাব!”
“আমার সাথে কথা বলা তো বেকার হবেই! আর যাই হোক আমি তো আর এতো কথায় কথায় মধু ঝারি না। যা তোর ওই মধু ওয়ালার কাছে যার শব্দে শব্দে মুখ থেকে মধু ঝরবে আর তুই হা করে গিলবি।”
কেয়া মারার জন্য তেরে এলো আদিলের দিকে,
“এই মুখ সামলে কথা বল! উনি আমার ভাই এর মতো।”
আদিল মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“হু জানি, ভাইয়া থেকে সাইয়া!”
“হোক! তাতে তোর কি?”
আদিল আর কিছু বললো না। আসলেই তো যা ইচ্ছা হোক তাতে তার কি!
কেয়া হাত ধুয়ে এসে ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে আদিলকে বললো,
“উঠে বসার চেষ্টা কর। আর বেশি নাটক করার চেষ্টা করবি না তুই যে ডান হাত নাড়তেও পারবি না তা আমার জানা আছে।”
আদিল উঠে বসে কেয়ার হাতেই খেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর বলে উঠলো,
“এই নিরব কোথায়? ও কি এসেছিল?”
“নাহ ওকে জানাইনি।ও তো বোনের বিয়ের জন্য কালই বাড়ি গেল। এখানে তো আমরা আছি ও এসে আর কি করবে।”

“ভালো করেছিস। আর ঝুমুর কি এসেছিল?”
কেয়া একপলক আদিলের দিকে তাকালো। ফের অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
“না।”
“ওহ! আমি আর খাবো না। তুই বাড়ি চলে যা।”

________

ঝুমুর ঘুম থেকে উঠে দেখলো এক ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছে।ওয়াহিদ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে।
কথা বলা শেষ করে রুমে এসে ঝুমুরকে বসে থাকতে দেখে বলে ,
“উঠে গেছ তুমি? আচ্ছা রেডি হয়ে নাও। আমি ভাবি আর রিদিকেও বলে আসি।”
ঝুমুর ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওয়াহিদের দিকে। বললো,
“কেন?”
“সকালে যে ঘুরতে চাইছিলেন মিসেস, তা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন?”
“ওহ আচ্ছা।”
“ঝুমুরের যেতে মন চাইছে না একদম। কিন্তু সে না গেলে ভাবির মন খারাপ হয়ে যাবে, তাই রাজি হয়ে গেল।”
ভাবি আর রিদিতা দুজনেই শাড়ি পড়েছে, তাই ঝুমুরকেও বাধ্য হয়ে শাড়ি পড়তে হলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে সামান্য অর্নামেন্টস পড়ছিল।

হঠাৎ রুমে আসলো ওয়াহিদ।সে আগেই রেডি হয়ে গাড়ির কাছে চলে গিয়েছিল। কিন্তু পরে দেখল হাত ঘড়িটা রুমেই ফেলে এসেছে।

আয়নায় ঝুমুরের প্রতিবিম্ব’টার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো ঝুমুরের পেছনে। ওয়াহিদকে এত কাছে আসতে দেখে ঝুমুরের হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,
“আপনি…
আর কিছু বলার আগেই পেছন থেকে হাত বাড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপরে থাকা ঘড়ি টা নিয়ে নিল ওয়াহিদ।
ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“নিচে অপেক্ষা করছি। তাড়াতাড়ি রেডি হলে ভালো হয়।”
ঝুমুর জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলল,
হাতের দিকে তাকিয়ে চুরি পড়তে পড়তে বললো,
“আচ্ছা।’
তারপর আচমকা এক অঘটন ঘটিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ওয়াহিদ। ঝুমুরের সর্বাঙ্গ ঝাঁঝা করে উঠলো। গালের সেই চুম্বনকৃত স্থানে হাত ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কয়েক মিনিট। লজ্জায় কান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
ঝুমুর মনে মনে ভাবলো,
” তার বাবার চোখের সবচেয়ে ভদ্র লোকটা, একমাএ তার সামনেই চূড়ান্ত অভদ্র হয়ে যায়।”
তবে এই অভদ্র লোকটাকে তার এখন ভালোই লাগে। ভাবতে ভাবতে মুচকি হাসলো।

______

বিকেলের শান্ত হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে নদীর পাশে হাঁটছে ঝুমুর। সামিয়া আর রিদিতা কাঁকড়া কিনতে গেছে। নদীর পাশে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার মত সুন্দর দৃশ্য মনে হয় আর কিছু নেই। নিত্যদিনের দালান কোঠা, পিচঢালা রাস্তা,যানজট সব ফেলে মানুষ এমন একটুখানি কোলাহল শূন্যতা খুঁজে বেড়ায়। কখন যেন ওয়াহিদ পাশে এসে দাঁড়ালো ঝুমুর তা টের পেল না। ওয়াহিদের দিকে তাকাতেই কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে পড়ে গেল। ফের লজ্জায় মাথা নুয়ে পড়লো।
ওয়াহিদ বলতে লাগলো,
“এটা আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। যখনই নিত্যদিনের রুটিনে খুব ক্লান্ত হয়ে যাই তখন এখানে চলে আসি। জায়গাটা অনেক সুন্দর তাই না? কেমন শীতল পরিবেশ, হিমেল হাওয়া, সবকিছুই নির্ভেজাল।
আচমকা ঝুমুর ওয়াহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
” আপনার মতো।”
ওয়াহিদ স্পষ্ট শুনতে পেলে ঝুমুরের কথাটা। তবুও জিজ্ঞেস করে,
“কি বললে?”
ঝুমুর বলে,
“বললাম হ্যাঁ জায়গাটা আসলেই সুন্দর।”
ওয়াহিদ শব্দ করে হেসে দিল।

চলবে..?

#প্রেমময়ী_সন্ধ্যা
#পর্ব_১২
লেখিকা: তাসফিয়া আনজুম

“তোমরা দুজন এখানে দাঁড়িয়ে আছো? আর আমি কোথায় কোথায় খুঁজে যাচ্ছি!”
সামিয়ার কন্ঠস্বর শুনে ওয়াহিদ ঝুমুর দুজনেই ফিরে তাকালো।
ঝুমুর বললো,
“আপু এখান থেকে খুব সুন্দর সূর্যাস্ত দেখা যাচ্ছে। তাই দাঁড়িয়ে দেখছিলাম।”
“তো ওয়াহিদ তুমি কোন সূর্যাস্ত দেখছিলে?” দুষ্টু হেসে বলে সামিয়া।
ওয়াহিদ ঝুমুরের দিকে তাকায়। তারপর সামিয়াকে বলে,
” দেখছিলাম কোনো একটা! আর না দেখে উপায় কি? আজ সূর্যটাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে যে!”
“ওহ তাই? এই সূর্য তো প্রতিদিন দেখতে পারবে। খাবার যে অর্ডার দিয়েছিলে সেই খেয়াল আছে?এখন চলো খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
ওয়াহিদ হালকা হেসে নদীর পাশের ছোট্ট রেস্তোরাঁয় ঢুকে গেল।
ঝুমুর আর সামিয়াও কথা বলতে বলতে চলে গেল সেদিকটায়। ঝুমুর ছাড়া বাকি সবাই কাঁকড়া খায়, তাই ওর জন্য আলাদা করে চিংড়ি ফ্রাই নেয়া হয়েছে। আরো কিছু খাবার অর্ডার করেতে চেয়েছিল। কিন্তু এখানে শুধু সামুদ্রিক কিছু মাছ পাওয়া যায়। আর ঝুমুরের চিংড়ি ফ্রাইটাতে অতিরিক্ত ঝাল দেওয়া হয়েছিল। যার কারণে ও আর খেতে পারেনি। টেবিল থেকে উঠে বেসিনের কাছে চলে গেল হাত ধুতে।
ওয়াহিদ ও খাবারের বিল দিতে গেল। সেখানে ঘটলো আরেক কাহিনী। কোথা থেকে এক মেয়ে এসে আচমকা ওয়াহিদকে জড়িয়ে ধরল। ঝুমুর তো সেই দৃশ্য থেকে হা হয়ে গেল। ওয়াহিদ নিজেও চমকে গেল।পরে মেয়েটার মুখ দেখে বলে উঠলো,
“কনা তুই! কেমন আছিস?”
“এইতো ভালো। তা তুই এখানে কি করছিস?”
ওয়াহিদ ঝুমুর আর সামিয়াদের দেখিয়ে বলল,
“এইতো ঘুরতে এসেছিলাম।”
সবার সাথে কনার পরিচয় করিয়ে দিলো ওয়াহিদ।কনা হচ্ছে তার কলেজ জীবনের বন্ধু।
কনা ওয়াহিদকে বলতে লাগলো,
“প্রায় পাঁচ ছয় বছর পর দেখা তাই না?সেই যে কলেজে শেষ দেখা হয়েছিল। এরপর তো তুই কোথায় হারিয়ে গেলি।”
ওয়াহিদ হাসতে লাগলো,
“তুই খোঁজার চেষ্টা করিস এই জন্য পাসনি। হারিয়ে গেলে কি আর তোর সামনে বসে থাকতাম এখন? আচ্ছা বিয়ে টিয়ে করেছিস?নাকি আগের মতোই সিঙ্গেল পদবীতেই আটকে আছিস?”
এমন কথা শুনে হেসে উঠলো কনা। ওয়াহিদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“তোর মতো কাউকে পাইনি যে তাই এখনো সিঙ্গেল!”
ওয়াহিদ হাসতে হাসতে বলে,
“ভাগ্যিস পাসনি! না হলে আমার মত শান্ত একটা ছেলের জীবন অশান্ত করে দিতি!”
ঝুমুর সেই শুরু থেকেই রাগে জ্বলছে। কনা মেয়েটার এমন গায়ে পড়া স্বভাবটা তার মোটেই ভালো লাগছেনা। মনে মনে বলে,
“বান্ধবী বান্ধবীর মতো থাকবি, অন্য মেয়ের জামাইয়ের সাথে এত ঘেঁষাঘেঁষি কিসের! আবার ব্যঙ্গ করে বলে,”তোর মত কাউকে পাইনি তাই বিয়ে করিনি। ন্যাকা!”
কনার জরুরী কল আশায় সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার আগে ওয়াহিদের হসপিটালের এড্রেস নিয়ে গেল পরে দেখা বলে।

_____

চাঁদনী রাত। আলো আঁধারের মিশ্রনে ঝলমল করছে চারিপাশ। বারান্দায় একপাশ থেকে ভেসে আসা শিউলি ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে সারাঘর। ঝিরঝিরে শীতল বাতাস বইছে। দুর হতে ভেসে আসছে শিয়ালের ডাক। তারা যেন শীতের আগমনী বার্তা দিচ্ছে।
প্রকৃতির শীতল স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে মেখে জোছনা বিলাসে মেতেছিল ঝুমুর।
ঘর থেকে ওয়াহিদের ডাকে ব্যাঘাত ঘটে ঝুমুরের জোছনা বিলাসে। রুমে যেতেই ওয়াহিদ বলে উঠে,
“ঘড়িতে দেখেছো কয়টা বাজে? আটটা বাজে। তুমি এখন বারান্দায় কি করছো? যাও বই নিয়ে বসো।”
ঝুমুর এবার কিছু না বলে টেবিলে বসে গেল। আসলেই পড়া দরকার। সামনেই পরীক্ষা। এতদিন বাবার বকা হজম করে নিলেও, এখন যদি ফেল করে বসে সে লজ্জা হজম করবে কি করে?

ওয়াহিদ মোবাইল হাতে নিয়ে বসেছিল। মূলত ফেসবুক স্ক্রল করছিল। বারবার ঝুমুরের দিকে আরচোখে তাকাচ্ছিল। অনেকক্ষণ যাবৎ লক্ষ্য করছে ঝুমুর একটা ম্যাথ নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে সলভ করতে পারছে না।
ওয়াহিদ খাতাটা হাতে নিয়ে বলে উঠে,
“কি সমস্যা?”
ঝুমুর কিছু বললো না।
“তোমাকে তো বলেছি যেটা সমস্যা হবে সেটা আমাকে দেখাবে। পরেরবার থেকে যেকোনো সাবজেক্টে কোন সমস্যা হলেই আমাকে বলবে। বুঝেছ?”
“আচ্ছা।”
ওয়াহিদ ম্যাথটা সলভ করে দিল। আরো কয়েকটা সাবজেক্ট দেখিয়ে দিল।
ওয়াহিদ রাতের খাবার খেতে চলে গেল আর ঝুমুরের খাবারটা ঘরে নিয়ে আসবে বললো।
ঝুমুর মন খারাপ করলো। কি এমন সময় লাগতো সবার সাথে বসে একসাথে খেলে। ওর কি একা একা খেতে ভালোলাগে নাকি!

কিছু সময় পর ওয়াহিদ দুটো খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। টেবিলের উপর প্লেটগুলো রেখে বলল তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে এসে খেয়ে নাও। নিচে যেতে বারণ করেছি কারণ নিচে গেলেই তুমি এক থেকে দেড়ঘন্টার আগে আর উপরে আসতে চাও না।
ওয়াহিদ হাত ধুয়ে এসে প্লেট হাতে নিল। ঝুমুরকে বসে থাকতে দেখে বলল,
“কি যাচ্ছো না কেন? নাকি আমার হাতে খেতে চাও?”
ঝুমুর তড়িৎ গতিতে গিয়ে হাত ধুয়ে এলো।
“আমি নিজের হাতেই খেতে পারি।”
খেতে খেতে ওয়াহিদ লক্ষ্য করল ঝুমুর মাছ খাচ্ছে না। সে বলে উঠে,
“তুমি মাছ খাও না?”
ঝুমুর কি বলবে না বলবে ভেবে বললো,”খাই কিন্তু আজকে ভালো লাগছে না।”
ওয়াহিদ বলে,”ওহ আচ্ছা।”
তারপর নিজের প্লেটের মাছটার কাঁটা বেছে ঝুমুরের প্লেটে দিয়ে দিল। আর ঝুমুরের টা নিজে নিয়ে খাওয়া শুরু করল।
ঝুমুর যে কিছু বলবে তার সময় ও পেল না, যে সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেল।
রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বাজতেই ঝুমুর আর চোখ খুলে রাখতে পারছে না। ওয়াহিদ সোফায় বসে তা দেখলো।বলে উঠে,
“বিছানায় গিয়ে ঘুমাও।”
ঝুমুর কিছু না বলে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। যেনো সে এইটার অপেক্ষাই করছিল।
ওয়াহিদ হালকা হেসে লাইট অফ করে নিজেও শুয়ে পড়লে ঝুমুরের পাশে। হাত বাড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিল ঝুমুরের মসৃণ শরীরটা। জড়িয়ে ধরে লম্বা কেশে মুখ গুঁজে রাখলো। মৃদু কেঁপে উঠলো ঝুমুরের শরীরটা। অতঃপর তলিয়ে গেল ঘুমের রাজ্যে।

_______

দুইদিন পর হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো আদিলকে। তিন চারদিন ধরে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে তার আর ভালো লাগছে না। নিরব বাড়ি থেকে ফিরে এসে আদিলের খবর পেয়ে তখনই ছুটে আসে । এসেই কয়েকটা অশ্রাব্য বাক্য ছুঁড়ে দিল তার দিকে।

“ধুর শা*লা তোরে আমার বাইকটা দেওয়াই ভুল হইছিল! নিজে তো বিছানায় শুইয়া শুইয়া মজা নিতেছোস আর ঔইদিকে আমার বাইকের নাড়িভুঁড়ি সব বাইর কইরা ফেলছোস। আমার ডেইটে যাওয়া বন্ধ হইয়া গেল। কত কষ্ট কইরা ওই দিন বাইক দেখাইয়া একটা সুন্দরী মাইয়া পটাইছিলাম। সব শেষ!”
আদিল হো হো হাসতে থাকে।
“ইশ কি করলাম আমি! এখন তো আমার বন্ধু নায়ক দেব থেকে প্রেমিক দেবদাস হইয়া যাবে।”
নিরব টেবিলের উপর থেকে বই নিয়ে আদিলের দিকে ছুড়ে মারে।
নিরব আদিলদের ঘরটা একটু দেখে বলে উঠে,
“কিরে তোদের ঘর এমন গোছগাছ করতেছে ক্যান?”
এমন সময় রুমে নিরবের জন্য হালকা চা নাস্তা নিয়ে আসে আদিলের মা। তিনি নিরবকে বলেন,
“আমরা এখান থেকে যশোর চলে যাচ্ছি বাবা। সেখানে আদিল পড়ালেখার পাশাপাশি ওর বাবার ব্যবসাটা দেখবে। কতকাল আর আমি করবো?কম কষ্ট তো করিনি। এবার একটু দায়িত্ব নিতে শিখুক, বুঝতে শিখুক!”
নিরব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আপিলের মায়ের দিকে।
“কি এখন চলে যাচ্ছেন? কিন্তু কিছু মাস পরেই তো পরীক্ষা।”

“আমি স্যারদের সাথে কথা বলেছি, ওনারা বলেছেন রেগুলার ক্লাস না করলেও সমস্যা নেই শুধু এসে পরীক্ষাগুলো দিয়ে যাবে। পরীক্ষার দিনগুলো না হয় এখানে থাকবে।”
নিরব আবার বলে,
“কিন্তু এখন যাওয়াটা কি খুব জরুরী? আর কয়েকটা দিন পরে গেলে হয় না?”
আর কিছু না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন আদিলের মা। নিরব জানি তিনি এক কথার মানুষ, যা বলেছে তা করেই ছাড়বে।

আবার আদিলের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ধুর বা*ল। আমিও দেখমু আমারে নতুন মাইয়া পটানোর মেশিন না কিন্না দিয়া তুই কই যাস!” তারপর ও ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

আদিল শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে আদিলের চোখের কোণায় পানি জমে যায়। এই শহরে তার এতো এতো স্মৃতি,এই শহরের প্রতিটা রাস্তা,অলিগলি তার রক্তে মিশে আছে। এতো এতো ভালো খারাপ মুহূর্ত রেখে সে কিভাবে যাবে! তারচেয়েও বড় কথা তার যে কয়েকটা বন্ধু নামক শত্রু আছে!”

আদিলদের বাড়ি থেকে রগরগে মেজাজ নিয়ে বের হয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে রেখে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছিল নিরব। হঠাৎ দেখে রাস্তার পাশে বসে একটা মেয়ে দুইটা কুকুরকে কিছু খাবার খাওয়াচ্ছে। মনের অজান্তেই সেই দৃশ্যটাতে চোখ আটকে গেল। বিভিন্ন ঔষুধ, ভ্যাকসিন দিয়ে কুকুর মারার যুগে এই দৃশ্যটা দেখার মতো। নিরব কৌতূহলবশত মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেল। মেয়েটা তাকে দেখলো না।
“আপনি কি কোনো সংস্থা থেকে এসেছেন?”
নিচে বসে থাকা মেয়েটা নিরবের দিকে তাকালো। উঠে পানির বোতল নিয়ে হাত ধুয়ে বলো,
“এমন কেন মনে হলো? সংস্থায় কাজ না করলে কি রাস্তার পশুপাখিদের খাওয়ানো যাবে না?”
“নাহ তেমন না, তবে কামড়ে দেয়ার ও তো একটা ভয় আছে।”
“আমার টিকা দেয়া আছে।”বলে মেয়েটা হাঁটতে শুরু করলো।
আদিল পেছনে হাঁটতে হাঁটতে আবার বলে উঠলো,
“আচ্ছা আপনার নামটা কি?”
মেয়েটা থামে। নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে,
” নাম আফরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। এখানেই হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছি। আর আমার পার্সোনাল ফোন আছে, কিন্তু নাম্বার সবাইকে দেয়া যায় না। আর কিছু? বিয়ের জন্য পাত্র দেখবেন না নিশ্চয়ই?” বলেই হেঁটে চলে গেল সেখান থেকে।

নিরব যেন টুপ করে আকাশ থেকে পড়লাম। মনে মনে ভাবলো,
“শা*লা এইটা মাইয়া না লাল মরিচ!”

নিরব হাসতে হাসতে বলে,”ধুর আজকে দিনটাই কুফা! প্রথমে মাইয়া পটানোর মেশিনটা গেল,আর এখন সিনিয়র আপু কথার ঝাঁঝ দিল!”

চলবে….?