#প্রেমময়ী_সন্ধ্যা
#পর্ব_২৩
লেখিকা: তাসফিয়া আনজুম
কেক কাটা শেষ করে দুজন যখন বাসায় ফিরল, ঝুমুর তখনো ওয়াহিদের কথাগুলো মনে মনে আওড়াচ্ছিল। শাড়ির ভাঁজ খুলতে খুলতে আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখল, ওয়াহিদের আনা চন্দ্রমল্লিকার ছোট্ট গুচ্ছটা এখনো চুলের পাশে সযত্নে লাগানো। হঠাৎ পেছন থেকে ওয়াহিদের গলা শোনা গেল,
“আমার চন্দ্রমল্লিকা এত ভাবছে কেন? কিছু বলতে চাও?”
ঠিক তখনই পেছন থেকে ওয়াহিদ এসে দাঁড়াল।
“ঝুমুর, আয়নার দিকে না তাকিয়ে কখনো নিজের চোখে নিজেকে দেখেছো? তোমার চোখে যে মুগ্ধতা, সেটা শুধু তোমাকে নয়, আমাকেও বদলে দিয়েছে।”
ঝুমুর অবাক হয়ে তার দিকে তাকাল।
“আপনি এত কথা বলেন, আর আমি তো কিছুই বুঝি না।”
ওয়াহিদ মৃদু হেসে তার হাত ধরল।
“তুমি জানো না, ঝুমুর, এই হাত ধরতে আমি কতটা দিন অপেক্ষা করেছি। তোমার প্রতিটা হাসি, প্রতিটা অভিমান, প্রতিটা কথার ভেতর আমি আমার পুরো জীবন খুঁজে পেয়েছি।”
ঝুমুর মাথা নিচু করে আস্তে বলল,
“কিন্তু আপনি তো কখনো আগে বলেননি। যদি না বলতেন?”
ওয়াহিদ তার চিবুক ছুঁয়ে চোখ তুলে ধরল।
“তোমার চোখে তাকালেই সব বলে দেওয়া যায়, ঝুমুর। তুমি জানো না, কিন্তু আমি প্রতিটা মুহূর্তে তোমাকে ভালোবেসেছি। এমনকি সেই দিনগুলোতেও, যখন তুমি বুঝতে পারনি। আজ তোমার চোখে নিজের ভালোবাসার ছায়া দেখতে পাচ্ছি। আর কিছু চাই না।”
ঝুমুর চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“আমিও আপনাকে ভালোবাসি।”
ওয়াহিদ মৃদু হেসে তার কপালে আলতো করে চুমু দিল।
“এই ভালোবাসাটুকু সারাজীবন আমার সাথেই থাকবে, তাই না?”
ঝুমুর লজ্জায় মাথা নিচু করে বলল,
“থাকবে।”
সেই রাতে, তারা দুজনে আবার হারিয়ে গেল ভালোবাসার স্রোতে যেখানে একবার ভেসে গেলে আর কখনো পিছু ফিরে তাকাতে হয় না।
*
নিরব রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বিছানার দিকে এগিয়ে গেল। কিন্তু আদিলের ব্যঙ্গ করার ধরণ দেখে আর রাগ ধরে রাখতে পারল না। বিছানায় শুয়ে বলল,
“তোর মতো শা*লাদের জন্যই আমার প্রেম আসে না।কই বন্ধুর জন্য একটা ম্যানেজ কইরা দিবি, তা না খালি নিজের টাংকিতে তেল দেও।”
আদিল আবারও হেসে বলে,
“আরে নিরব ভাই সমস্যা আমার না, তোরই। কারণ তুই হাফ প্যান্ট পরে স্যুট টাই মারার মতো কান্ড করিস। যে মেয়েকে প্রেম নিবেদন করিস, সে যদি তোকে ছোট ভাই ভাবে, তাতে আমার দোষ কী?”
নিরব চুপ করে শুয়ে থাকে। কয়েক মুহূর্ত পর হঠাৎ ফোঁস করে বলে,
“আচ্ছা আদিল, সত্যি করে বল তো, তুই কেয়াকে পছন্দ করিস? নাকি মজা নিচ্ছিস?”
আদিল এবার গম্ভীর হয়ে যায়। চুপচাপ নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে,
“সত্যি বলতে… পছন্দ করি। হয়তো অনেক আগে থেকেই। কিন্তু নিজেও বুঝতে পারছিলাম না। যখন এখান থেকে চলে গেলাম না তখন থেকেই কেয়ার শূন্যতা অনুভব করছিলাম। আশ্চর্যজনকভাবে ঝুমুরের কথা আমার একবারও মনে পড়েনি। তখনই বুঝেছি আমি আসলে ওকে ভালোই বাসতাম না।”
নিরব এবার খানিকটা নরম সুরে বলে,
“তাহলে তোদের ব্যাপারটা সিরিয়াস, তাই না?”
আদিল হাসে,
“তুই ভাবছিস সিরিয়াস, আর আমি ভাবছি অ্যাডভেঞ্চার! দেখা যাক, এই প্রেমের নৌকা ডুবায় না ভাসায়!”
দুজনে আবার হেসে ওঠে।
*
নিরব তার রুমের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের চা ঠান্ডা হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হালকা বাতাস এসে তার মুখে পড়ছিল, তবে আজ কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না। আফরার কথা, তার মা, এই নতুন ঘটনাগুলো তার মন থেকে চলে যাচ্ছিল না।
সকাল সকাল নিরব তার সপ্তাহখানেক ধরে জমানো জামা কাপড় গুলো ধুয়ে ছাদে দিয়ে আসলো। নামার সময় শুনতে পেল আবরার কন্ঠস্বর। আফরা তার মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিল। সিঁড়ির ঘর থেকে রুমের ভেতরের কথা স্পষ্ট শোনা যায়।
” মা তুমি তো জানো, আমি এখনই বিয়ে করতে চাই। গ্রাজুয়েশন টা শেষ করি তারপর না হয় হবে কিছু একটা।”
এটা শুনে নিরবের মনটা হঠাৎ অস্থির হয়ে গেল। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, আফরার মা তার জন্য পাত্র ঠিক করেছে। আফরার প্রতি তার অনুভূতি কখনোই সে প্রকাশ করতে পারেনি। এখন আফরা অন্য একজনকে বেছে নিতে চলেছে, এমন ভাবনাটা তার মনের গভীরে হঠাৎ করে দাগ কেটে গেল।
“আফরার মা তো তার বিয়ের পাত্র ঠিক করে ফেলেছে,”—এটা ভাবতে ভাবতে নিরবের বুকের ভেতর ভারী কিছু এসে বসলো। তার মনে হতে লাগলো, তার পক্ষে এখন আর আফরার কাছে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তার যে ভালোবাসা কখনোই আফরা জানবে না, সে ভাবনা নিরবকে ভীষণভাবে আঘাত করছিল।
তিনি কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে রইলেন, পেছন থেকে আসা কথাগুলো আরও কিছুটা স্পষ্ট হতে থাকলো।
আফরা কিছুটা সময় নিয়ে উত্তর দিল, “আচ্ছা মা, ঠিক আছে। আমি চিন্তা করে জানাবো।”
তবে এক মুহূর্তে তার চিরাচরিত নিঃশব্দতা, নিরবের সব অনুভূতি উলট-পালট করে দিলো। মনের মধ্যে এক অদ্ভুত কষ্ট তৈরি হল।
নিরব হাত থেকে চায়ের কাপটা সরিয়ে ফেললো। তার মনে হচ্ছিল, এই মুহূর্তে আফরার প্রতি তার অনুভূতি আর আত্মবিশ্বাস কোন কিছুতেই সমর্থন পাচ্ছে না। আফরার মায়ের ফোনের কথোপকথন শোনার পর, সে বুঝতে পারলো তার সামনে এখন এক কঠিন বাস্তবতা রয়েছে, যেখানে আফরার মন তার হাতে নেই।
চলবে…
#প্রেমময়ী_সন্ধ্যা
#পর্ব_২৪
#লেখিকা: তাসফিয়া আনজুম
সকালটা ছিল একটু রোদেলা, হালকা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছিল। কলেজ মাঠে দেখা হলো কেয়া, ঝুমুর, নীরব আর আদিলের। ঝুমুর হাসতে হাসতে বলল, “কি রে, আজ সবাই এত সময়মত হাজির কেন?”
কেয়া মুচকি হেসে বলল, “এডমিট কার্ডের জাদু বুঝলি! পরীক্ষা না দিতে পারলে বিয়ে হবে না। আর আমার বিয়ে না হলে তোরা খালা, মামা হবি কেমনে? তোদের কথা ভেবেই এখনো পড়ালেখা করতেছি। বল আমার মত বন্ধু পাবি জীবনে?”
আদিল চোখ টিপে বলল, “তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে এডমিট কার্ড থেকে বিয়ের কার্ড নিয়ে বেশি উত্তেজনা! এইসব পড়ালেখা তো নস্যি! আমার তো এখনই সেই কপাল পোড়া বান্দার জন্য কষ্ট লাগতেছে।”
কেয়া হেসে বলল, “আচ্ছা তাই নাকি! তাহলে তার ভাগের কষ্ট তুই নিয়ে নিস।”
এই বলে কেয়া আর ঝুমুর হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিল। আদিল গম্ভীর মুখে বলল, “আমি কিন্তু স্বাধীনতা চাই, এইসব টিপ্পনী না।”
ওদিকে নীরব একটু দূরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, মাথায় আফরার কথা ঘুরছিল। কেয়া সেটা লক্ষ্য করে কেয়া বলল, “এই নীরব, তুই এত চুপ কেন? আরে ভাবিস না তোকে দাওয়াত না দিয়ে বিয়ে করবো। টাকা যা লাগবে সব আমার জামাই দিবে তুই শুধু খাবি। নো টেনশন! দরকার হলে তোকে খাওয়ানোর জন্য তিনটা বিয়ে করব। তবুও খাবি তুই!”
নীরব হালকা হাসল, বলল, “তোর কথা শুনলে পাগলেও হাসবে নেহাত আমি ভালো মানুষ!”
ঝুমুর কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা, বিয়ের পর তোর বর ঠিক থাকবে তো? তোর বর বাঁচবে কেমনে!”
কেয়া বলল, “ঝুমুর, আমি কিন্তু খুব আদর্শ বউ হব। আমার বর আমাকে বিয়ে করে, আমার দয়া পেয়ে বেঁচে যাবে!”
এই কথায় সবাই হেসে উঠল। আদিল বলল, “সে নিজের বাঁচার উপায় নিজেই বের করবে, তোর দয়া ছাড়াই।”
এই হাসি-ঠাট্টার মাঝে সময় যেন থেমে যায়। কলেজ মাঠের হাওয়ায় ভেসে যায় তাদের বন্ধুত্বের খুনসুটি, দুষ্টুমি আর ছোট ছোট আনন্দের মুহূর্ত।
এই হাসি-ঠাট্টার মধ্যেই ঘন্টার শব্দ শুনে সবাই সচেতন হলো। ঝুমুর বলল, “চল তোরা, এডমিট কার্ড তুলে নিই। তারপর আবার দেরি করে ঝামেলায় পড়ব না।”
নীরব মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। পরে আবার স্যারদের কথা শুনতে হবে।”
এই খুনসুটি চলতে থাকল, আর পাশ থেকে নীরব চুপচাপ দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখছিল। তার মাথায় তখনো আফরার মুখটা ঘুরছিল। ঝুমুর সেটা লক্ষ্য করল।
ঝুমুর হেসে বলল, “নীরব, কি রে?এখানেও এত ভাবনাচিন্তা কিসের?”
নীরব হালকা হাসলো শুধু। কিছুই বলল না আর।
সবাই এডমিট কার্ড তুলে বের হলো। কেয়া বলল, “চল, আজ একটু আড্ডা দিই। কফি খেতে ইচ্ছে করছে।”
ঝুমুর বলল, “হ্যাঁ রে, আজকের দিনটা একটু আলাদা করেই কাটাই। তোরাও কি বলিস?”
সবাই রাজি হয়ে কাছের কফি শপের দিকে রওনা হলো। কথায়, হাসিতে, মজায় সময় যেন উড়ে যাচ্ছিল।কফি শপের আরামদায়ক পরিবেশ। ঝুমুর, কেয়া, আদিল আর নীরব একসঙ্গে বসেছে। টেবিল জুড়ে তাদের হাসির রোল।
কেয়া মেনু দেখে বলল, “আরে, এখানে তো অনেক কিছু আছে! ঝুমুর, তুই কি এবারও তোর ফেভারিট চকোলেট কফি নিবি?”
ঝুমুর মুচকি হেসে বলল, “অবশ্যই! তবে তোকে বলছি, তুই যা খাবি, তাতে যেন আবার বেশি ঝাল না থাকে। মনে আছে, আগেরবার কী হাল হয়েছিল?”
নীরব সঙ্গে সঙ্গে বলল, “হ্যাঁ, মনে আছে। উফ কেয়া যা করছিল না মনে হয়েছিল ভূমিকম্প হইছে।”
কেয়া রেগে বলল, “নীরব, তুই তোর মুখ বন্ধ রাখ। আর তুইও আদিলের মতো বেয়াদব হয়ে গেছিস।”
আদিল তাড়াতাড়ি বলল, “দেখ, দোষ সব সময় আমার নয়। কেয়া নিজেই ঝামেলা বাধায়। এবার কফিতে মরিচ মিশিয়ে দেখবো কী করে শান্ত থাকে!”
কেয়া চোখ বড় করে বলল, “তোর মতো লোককে কেউ বিয়ে করবে, তা ভাবতেও অবাক লাগে। আর নীরব তোর কথাও কম নয়। তোদের দুজনের কথা শুনলেই আমার হাসি আসে। সো তোরা দুইটাই চুপ থাক”
নীরব গম্ভীর মুখে বলল, “পাগলে কি না বলে, ছাগলে কিনা খায়?”না মানে উক্তিটা সুন্দর। আর আজকে যদি তুই যদি ঝাল খেতে না পারিস,তাহলে আমাকে বলিস তোর খাবারে একটু চিনি মিশিয়ে দেব।”
সবাই হেসে উঠল।কফি আসার পর সবাই চুপচাপ চুমুক দিতে শুরু করল।এই হাসি-ঠাট্টায় সময় যেন উড়ে যাচ্ছিল। কফি শপের বাতাসে ভেসে যাচ্ছিল তাদের বন্ধুত্বের রঙিন মুহূর্তগুলো।
কফি শপের দুষ্টুমিভরা মুহূর্তগুলো শেষ করে তারা সবাই বাইরে বের হলো। ঝুমুর তখনো কেয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। কেয়া রাগ ভাঙার ভান করে বলল, “ঝুমুর, আর একবার যদি তুই আমার নামে কিছু বলিস, তবে তোর মাথায় কফির কাপ ভাঙব!”
নীরব সঙ্গে সঙ্গেই বলল, “আহা! এমন দৃশ্য তো মিস করা যাবে না। আমি সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও করে রাখব। ভবিষ্যতে ঝুমুরকে ব্ল্যাকমেইল করার কাজে আসবে!”
আদিল হাসতে হাসতে বলল, “তবে তোর সেই ভিডিও তুই দেখতে পাবি না, কারণ কেয়া তোকে আগে ভাঁজ করে ব্যাগে ভরে নিয়ে যাবে!”
সবাই আবার হেসে উঠল। ঝুমুর বলল, “আরে তোরা আমার আর নীরবের বিরুদ্ধে সব সময় চক্রান্ত করিস কেন? এবার থেকে তোরাই সাবধানে থাক।”
এদিকে নীরব কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা, তোর এই রাগ কোথায় থেকে আসে? ছোটবেলায় তোর কেউ রাগ শেখাত, নাকি তুই নিজেই আবিষ্কার করেছিস?”
কেয়া কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। মুচকি হেসে বলল, “নীরব, তোর কথা শুনে আমার আর কিছু বলার ইচ্ছা হচ্ছে না। তোর জন্য একদিন সত্যি কিছু একটা করব, তখন দেখবি!”
আদিল সঙ্গে সঙ্গে বলল, “কেয়া, আমি তোর পাশে দাঁড়াব। নীরবের উচিত একটা শিক্ষা পাওয়া।”
নীরব কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “তোরা মিলে যতই চক্রান্ত করিস না কেন, আমার কিচ্ছু হবে না। আমি তো আনন্দে আছি, কারণ তোদের এই ঝগড়াই আমার আসল বিনোদন!হা হা।”
এই হাসি-ঠাট্টার মধ্যেই সূর্যের আলো আরেকটু ম্লান হয়ে এলো। তাদের বন্ধুত্বের রঙিন মুহূর্তগুলো যেন দিনের শেষ আলোর মতো ঝলমলে। তারা সবাই মিলে ক্যাম্পাসের পথে এগিয়ে গেল।
*
সবার থেকে বিদায় নিয়ে কলেজ গেট থেকে বের হতেই ঝুমুরের চোখ পড়ল কালো রঙের একটি গাড়ির দিকে। গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসা ওয়াহিদ দূর থেকেই ঝুমুরকে দেখে একহাত তুলে ইশারা করল। ঝুমুর হালকা হাসি দিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। গাড়ির দরজা খুলে বসে বলল, “আপনি এখন এখানে?”
ওয়াহিদ হাসিমুখে বলল, “হ্যাঁ এখন ফ্রি আছি তাই ভাবলাম তোমাকে নিয়ে যাই। চল,আজ কোথাও একটু ঘুরে আসি।”
গাড়ি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করল। ঝুমুর জানালার পাশে বসে কলেজের কোলাহল থেকে দূরে এক নির্জন স্বস্তি অনুভব করছিল। কয়েক মিনিট চুপচাপ থাকার পর ওয়াহিদ বলল, “তোমার কলেজ কেমন ছিল আজ? এডমিট কার্ড পেয়েছ তো?”
ঝুমুর বলল, “হ্যাঁ, পেয়েছি। আজ অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা হয়ে অনেক ভালো সময় কাটলো।” কথার মাঝে হালকা হাসি মিশিয়ে বলল, “আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?”
ওয়াহিদ কিছু না বলে মুচকি হাসল। কিছুক্ষণ পর গাড়ি একটি রেস্টুরেন্টের সামনে থামল। ঝুমুর অবাক হয়ে বলল, “একটু আগেই কফি খেয়ে এসেছি এখন আবার!”
ওয়াহিদ হেসে বলল, “এখন বাসায়ও কেউ নেই তাই ভাবলাম আজকের লাঞ্চ টা বাইরেই হয়ে যাক। চল, ভেতরে যাই।”
দুজনে রেস্টুরেন্টে ঢুকে একটি কোণার টেবিলে বসে। মেনু দেখে ঝুমুর তার পছন্দমতো খাবারের অর্ডার দিল—পাস্তা, চিকেন গ্রিল, আর প্রিয় ডেজার্ট চকোলেট মুজ।
ওয়াহিদ বলল, “আজকে অনেকদিন পর তোমাকে এত খুশি খুশি দেখা যাচ্ছে। পরীক্ষার পর হয়তো তোমরা আলাদা হয়ে যাবে,একেক জন একেক জায়গায় চলে যাবে। ভালোই হলো একসাথে কিছুটা সময় কাটালে।”
খাওয়ার সময় দুজনের মাঝে আরও হালকা গল্প হলো—কলেজের গল্প, ভবিষ্যতের চিন্তা আর জীবনের ছোট ছোট আনন্দের কথা।
খাওয়া শেষ করে ওরা গাড়িতে উঠল। দুপুরের নরম রোদে গাড়ি বাড়ির দিকে ছুটে চলল। ঝুমুর জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল, আর ওয়াহিদ মাঝে মাঝে এক ঝলক তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসছিল। দুজনের মধ্যকার এই মুগ্ধ সময় যেন থেমে থাকুক, এমনই মনে হচ্ছিল।
*
কলেজের ক্যাম্পাস থেকে সবাই তাদের বাসার পথে রওনা দিল। কেয়া আর আদিল একসাথে হাঁটছিল। আদিল কেয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর বাসায় পৌঁছাতে যেতে যেতে একটু সময় তো লাগবে, তুই কি আমাকে তোর বাড়ি পর্যন্ত আসতে বলবি?”
কেয়া মুচকি হেসে বলল, “তুই তো সবসময় কিছু না কিছু বলছিস! বাড়ি পর্যন্ত আসার কী দরকার? তোর তো অজস্র কাজ আছে!”
আদিল হালকা শ্বাস নিয়ে বলল, “আচ্ছা এখন আমার কাজ? আর আমি সাথে আসতে চাইলেই যে বলিস আসা লাগবে না আমি যেতে পারব! তোরা মেয়ে মানুষ ঢং পারিসও ভাই!”
কেয়া হাসতে হাসতে বলল, “হ্যাঁ এইসব ঢং আমাদের জন্যই। আমরা করবো না তো কি তুই করবি?”
আদিল হেসে বলল, “আচ্ছা, কর তুই ই কর। তোর বাপের রেখে যাওয়া সম্পত্তি তো।”
কেয়া চোখ টিপে বলল, “হ্যাঁ এখন তো কমই করছি। বিয়ের পর জামাইয়ের সাথে করবো বলে জমিয়ে রাখছি।”
আদিল মাথা নেড়ে বলল, “মাফ চাই! আর সাথে ওই ব্যাটার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।”
এমন কথার মাঝেই তারা কেয়ার বাড়ির কাছে পৌঁছে গেল। কেয়া হাসতে হাসতে বিদায় জানাল আদিলকে।
চলবে…