মেন্টাল হাসবেন্ড পর্ব-০৩

0
2

#মেন্টাল_হাসবেন্ড
[তৃতীয় পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

তূর্যর আচমকা ধাক্কায় ঘুম ভেঙে যায় ইরার। ইরা চোখ কচলাতে কচলাতে তূর্যর দিকে তাকিয়ে বলল,

— কি হয়েছে আপনার?

— কি হয়েছে মানে? আপনাকে তো ভালো মেয়ে ভেবেছি। কিন্তু আপনি তো মানুষ সুবিধার না।

— কি করলাম আমি?

— আপনি আমার বুকের উপরে শুয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরছেন কেন? আপনার লজ্জা করেনি একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে?

— ঘুমের ঘরে আবার কীসের লজ্জা? ঘুমের মধ্যে হয়তো মিস্টেক হয়ে গেছে।

— মিস্টেক না। আমি জানি আপনি ইচ্ছে করে এমন করছেন। দাড়ান আমি সবাইকে বলব আপনি আমার সাথে যা করছেন।

এই কথা বলে তূর্য মা মা বলে চিল্লাতে শুরু করল। ইরা তো হতবাক হয়ে গেছে। ইরা তূর্যকে বলল,

— আরে কি করছেন মাকে কেন ডাকছেন।

— আম্মু আসুক তারপর দেখবেন।

তূর্য উঠে দরজা খুলে দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার মাকে ডাকতে শুরু করে। ছেলের ডাকে সারা দিতে আমেনা বেগম তাড়াহুড়ো করে এসে বলল,

— কিরে কি হইছে?

— এই মেয়েটা ভালোনা এই মেয়ে কি করছে জানো?

আমেনা বেগম ইরার দিকে তাকিয়ে দেখে ইরা লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছে। আমেনা বেগম কোনো প্রশ্ন করার আগেই তূর্য বলল,

— তুমি আমাকে বলতে কোনো মেয়ের সাথে না মিশতে। আর এই মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। মেয়েটা পঁচা।

ছেলের কথা শুনে আমেনা বেগম নিজেও লজ্জা পেলো। তারপর তূর্যকে বলল,

— আচ্ছা তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।

— তুমি কিন্তু এটার বিচার করবে বলে দিলাম।

— ঠিক আছে এখন তুই যাহ।

তূর্য আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আমেনা বেগম ইরার কাছে গিয়ে বলল,

— বউমা ওর কথায় কিছু মনে করোনা। আসলে কি হইছে ছেলেটা হঠাৎ করে কেমন যেনো পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। তূর্য আগে এমন ছিলনা। আগে অনেক স্মার্ট ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে ওর আচরণ একে বারে বাচ্চাদের মতো হয়ে গিয়েছে। ওকে আমরা অনেক ডাক্তার দেখালাম কিন্তু ডাক্তার ওর কোনো রোগ ধরতে পারেনি। তুমি আমার ছেলেটার খেয়াল রেখো। তুমি পারবে আমার ছেলেকে আগের মতো ঠিক করে দিতে।

— আচ্ছা উনি কি এর আগে কখনো কোনো মেয়ের সাথে রিলেশন করছিলো?

— জানিনা। ওর মুখে কখনো কোনো মেয়ের কথা শুনিনি। ও ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের থেকে দূরে থাকে। স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে ওর কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলনা। কিন্তু ওর কিছু বাজে ফ্রেন্ড আছে। জানিনা আমার ছেলের সাথে ওরা কিছু করছে নাকি।

— আচ্ছা চিন্তা করবেন না। আমি আছি ওনার পাশে।

— আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে এসো। নাস্তা রেডি করা হয়েছে।

এই কথা বলে আমেনা বেগম চলে গেলো। ইরা বসে আছে। একটু পরে তূর্য ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে। ইরা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। ইরা তূর্যকে বলল,

— চলুন নাস্তা করতে যেতে বলছে মা।

ইরা আর তূর্য এক সাথে নাস্তা করতে গেল। নাস্তা খাওয়া শেষ করে আবার রুমে আসে। ইরা তূর্যকে বলল,

— আজকে আমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবেন?

— কোথায় যাবেন?

— আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন। সেখানেই। আর হ্যাঁ আপনি আমাকে তুমি করে বলবেন ঠিক আছে?

— আচ্ছা।

— কোনটা আচ্ছা?

— দুটোই।

— ওহ।

দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেলো। বের হওয়ার জন্য আগে থেকেই রেডি হয়ে আছে ইরা। তূর্য দুপুরে খেয়ে একটা ঘুম দিয়েছে সে এখনো ঘুমাচ্ছে। ইরা তূর্যকে ডেকে তুলবে নাকি সেটাই ভাবছে। আবার ডাকলে কি না কি করে বসে তার তো কোনো ঠিক নাই। তাও ইরা এবার তূর্যকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো।

ঘুম ঘুম চোখে তূর্য এরার দিকে তাকিয়ে বলল,

— কি হয়েছে?

— আপনি না বলছেন আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন। একটু পরে তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে কখন যাবেন?

— আচ্ছা আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি। তুমি রেডি হয়ে নাও।

— আমি তো অনেক্ক্ষণ ধরেই রেডি হয়ে বসে আছি।

— আচ্ছা তাহলে আমি রেডি হয়ে নেই।

এই কথা বলে তূর্য ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে বের হয়ে রেডি হলো। বাসার সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো তূর্য আর ইরা। বাসার সামনে গিয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা রিকশা এসে দাঁড়ায় তাদের সামনে। ইরা রিকশার মধ্যে উঠে বসে তূর্য নিচে দাঁড়িয়ে আছে।

— কি হলো আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

— এক রিকশার মধ্যে দু’জন যাবো? আচ্ছা তুমি চলে যাও আমি আরেকটা রিকশা নিচ্ছি।

— আর রিকশা পাবেন না। উঠেন তো আমি তো আপনার স্ত্রী অন্য কোনো মেয়েনা।

— স্ত্রী হলে কি হইছে আপনি একটা মেয়ে। আর একটা মেয়ের পাশে বসতে আমি পারবোনা।

রিকশা ওয়ালা বলল — আপনারা কি জাবেন নাকি আমি একাই চলে যাবো?

তূর্য আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আর কোনো রিকশা নেই। তাই তূর্য কোনো উপায় না দেখে রিকশার মধ্যে উঠে বসে। এক দম সাইডে গিয়ে বসে। তূর্যর এমন কাহিনি দেখে ইরা মুচকি মুচকি হাসে। ইরা এবার বলল।

— আরে আমার দিকে চেপে বসেন। নাহলে তো পড়ে যাবেন।

— পড়বোনা আমি ধরে আছে। আর এতো কথা বলবেনা তো। আমি ঠিক আছি।

রিকশা ওয়ালা পিছনে তাকিয়ে বলল,

— মামা চেপে বসেন উনি তো আপনার স্ত্রী সমস্যা কি? পরে পড়ে গিয়ে হাত পা ভেঙে গেলে দোষ তো দিবেন আমার।

— আপনি এতো কথা বলেন কেন? আপনি আপনার মতো চালান।

তূর্যর কথা শুনে রিকশা ওয়ালা রিকশা থামিয়ে বলল,

— মামা আপনারা নামেন তো। আপনাদের নিয়ে আমি যাবোনা।

ইরা বলল — কি হয়েছে?

— কিছু হইনি নামেন তো।

তূর্য রেগে গিয়ে বলল — এই শালার রিকশায় করে আমিও যাবো না । বেশি কথা বলে।

তূর্য রিকশা থেকে নেমে হাটা শুরু করলো। ইরা দৌড়ে তূর্যের কাছে গিয়ে বলল,

— এখন কি হেটে হেটে যাবেন নাকি?

— হ্যাঁ এইতো আরেকটু বাকি। রিকশা ওয়ালা আবুল। আর পাঁচ মিনিটে রাস্তা ছিলো। ভাড়ার টাকাও মিস করলো।

ইরা আর কোনো কথা বলল না। হাঁটতে হাঁটতে তারা একটা পার্কের সামনে চলে যায়। পার্কের টিকেট কাউন্টারের সামনে গিয়ে তূর্য দুইটা টিকেট কিনে নিয়ে আশে। এবার দু’জনে ভিতরে প্রবেশ করে। পার্কের ভিতরে সব কাপল। একজন আরেকজনের হাত ধরে বসে আছে। কেউ হাতে হাত রেখে হাঁটছে আর গল্প করছে। এগুলো দেখে তূর্য বলল,

— এদের মনে হয় লজ্জা সরম নেই। কীভাবে এরা বসে আছে?

— এরা হচ্ছে রোমান্টিক কাপল। আপনার মতো আন রোমান্টিক না।

— এগুলো রোমান্টিক? হাসালে। এগুলোর জন্য আজকাল ধ’র্ষ’ণে’র সংখ্যা বেড়ে গেছে। আজকাল তো ওরা ইচ্ছে করেই ধ’র্ষি’তা হচ্ছে। বিয়ের আগেই এরা সুখ খুজে দুই দিন পর তাদের মধ্যে ব্রেক আপ হয়ে যায়। তারপর মেয়েটাই বলবে ছেলে জাতী খারাপ। ছেলে জাতী কেন খারাপ কার কারণে খারাপ হলো সেটা আর মেয়েটা বলবেনা। আমার কথা হচ্ছে তুই মেয়ে একটা ছেলে বিয়ের আগে তোর দেহ ভোগ করতে চায় তাহলে ছেলেটার মতলব কি তুই বুঝতে পারিস না? যে ছেলে তোকে মন থেকে ভালোবাসবে সে কখনো বিয়ের আগে তোর দিকে খারাপ নজরেও তাকাবেনা। আসলে কি মানুষ চিনতে আমরা ভুল করি। আর দোষ দেই সবাইকে। একটা ছেলে ব্রেক আপ হওয়ার পরে সব মেয়েকেই দোষারোপ করে। তেমন মেয়েরাও। আগে আমাদের উচিৎ সঠিক মানুষটাকে যাচাই বাছাই করা।

তূর্যর বলা কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে ইরা। তূর্যর এসব কথা শুনে অবাক হচ্ছে ইরা। ইরা কিছু একটা বলতে যাবে তখনই ইরা চোখ আঁটকে যায় একটা যায়গায়। ইরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে।

চলবে?