আষাঢ়ের দোলনচাঁপা পর্ব-০৯

0
29

#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam

আষাঢ় নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দোলনের গালে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় লাগিয়ে দেয়। আকস্মিক এহেন ঘটনায় দোলন নিজের খেই হারিয়ে ফেলে, যার দরুন দোলন মাটিতে পরে যায়। দোলন পরে গিয়ে ঐভাবেই থাকে কিছু বলেও না আর না উঠার চেষ্টা করে।

আষাঢ় কিছু সময় পায়চারি করে একটা চেয়ার এনে বসে।কিছুতেই নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না আষাঢ়। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে তার। ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে । আষাঢ় পায়ের উপর পা তুলে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে রাগী দৃষ্টিতে দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে আর নিজের হাত শক্ত করে ধরে রাগ কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আষাঢ় রাগ কমানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে ও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

অনেকটা সময় ঐভাবেই কেটে যায়। দোলন মাটিতে আগের মতোই বসে আছে। আষাঢ় ও চেয়ারে বসে দোলনের দিকে তাকিয়ে আছে৷ এদিকটায় মানুষজন নেই পুরো ফাঁকা নীরব পরিবেশ। দোলনের কানে শুধু একটু পর পর আষাঢ়ের জোরে জোরে শ্বাস ফেলার শব্দ পাচ্ছে।

দোলন এদিক ওদিক তাকিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। গালটা জ্বলে যাচ্ছে তার হাত গরম হয়ে গেছে গালের তাপে। গালে মনে হয় জ্বর এসে গেছে এতো জোরেই দা’নবটা তাকে চড় মেরেছে।দোলন মনে মনে ঠিক করে নেয় এর প্রতিশোধ সে আজ হোক বা কাল যেকোনো মূল্যে নিয়ে ছাড়বে।দোলনকে চড় মারার ফল দেখিয়ে দিবে লোকটা কে সে।কতো বড় সাহস লোকটার আরো নানান কথা ভেবে হাজার খানেক গা/লি দিতে থাকে আষাঢ় কে সে।

দোলনের খালামনির উপর খুব রাগ হচ্ছে। দোলনকে কেন যে জোর করে তার বান্ধবীর মেয়ের বিয়েতে নিয়ে এসেছে। না এখানে আসতো আর না এই বজ্জাত লোকটার সাথে দেখা হতো।

মেসেজে কি সুন্দর ব্যবহার করে লোকটা আর এখানে দেখো কোনো কারণ ছাড়া ঠাস করে চড় দিয়ে বসলো। হা/রামি আজই আমি তোকে ব্লক করবো দাঁড়া। কেমন আছো,,, কি করছো,,,শরীর ঠিক আছে,,, খাবার খেয়েছো বলা আমি বের করবো তোর দোলন মনে মনে বলতে থাকে কথাগুলো।

আষাঢ় দোলনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়। দোলনের মুখের ভঙ্গি দেখে আষাঢ় ঠিক বুঝতে পারছে মেয়েটা তার গুষ্টি উদ্ধার করছে। আষাঢ়ের কেন যেনো রাগের মধ্যে ও হাসি পেয়ে যাচ্ছে। অনেক কষ্টে আষাঢ় নিজের হাসি কন্ট্রোল করে রাখে। তারপর মুখটা গম্ভীর করে বলে,,,,

— আমাকে আরেকবার ব’কা দিলে খবর আছে মেয়ে তোমার।

— আষাঢ়ের কথায় দোলন আষাঢ়ের দিকে ব্রু কুঁচকে তাকায়। সেতো মনে মনে লোকটাকে বকছে। লোকটা বুঝলো কি করে দোলন তাকে বকছে?..

— আমি সব বুঝতে পারি।

— আষাঢ়ের কথায় এবার দোলন একটু ঘাবড়ায়।লোকটা কি করে দোলনের মনে মনে বলা সব কথা বুঝে ফেলছে বুঝতে পারছে না।

— তোমার ওতো কিছু বুঝে কাজ নেই। আমি সব জানতে এবং বুঝতে পারি।নেক্সট টাইম কিছু করা বা নিজের মনে মনে ও কিছু বলার আগে হাজার বার ভেবে নিবে ওকে?

— ভাব্বো না কিছু ভাব্বো না এখন মনে মনে না সামনা-সামনি জোরে জোরে আওয়াজ করেই বকবো। আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে চড় মারার? বিয়ে বাড়িতে একটা মেয়ে কে একা পেয়ে গু’ন্ডা’গিরি করছেন।

তুমি তো গুন্ডাগিরির কিছুই দেখোনি। আর রইলো চড়ের কথা? অন্যায় করেছো অনেক বড় অন্যায় করেছো এরজন্য চ’ড় মেরেছি।দরকার পরলে আরো হাজারটা চড় মারবো।

আরেকবার আমাকে চড় মারতে আসেন দেখি। ঐ হাত ভেঙে কু/ত্তারে খাওয়ামু। গু’ন্ডা কোথাকার! শুধু শুধু কোথা থেকে উড়ে এসে অন্যায় ছাড়া আমাকে মারলো।

—- অন্যায়? শুধু অন্যায় না মহা অন্যায় করেছো তুমি।
—- আজব লোকতো আপনার সাথে কি অন্যায় করলাম? আপনার সাথে আজ না আমার কথা হয়েছে আর না চড় মারার আগে আমি আপনাকে দেখেছি তাহলে কিসের কি?

— কি পরে এসেছো তুমি এটা?(আষাঢ়)

— কেন জীবনে চোখে দেখেন নাই? শাড়ি পরে এসেছি শাড়ি।

— কেন পরে এসেছো?

— আপনাকে বলবো কেন?

— আবার আরেকটা দিলে ঠিকই বলবে!

— দিয়ে দেখান দেখি পুরো বিয়ে বাড়ির লোক চিল্লিয়ে জড়ো করবো তারপর গণধোলাই দিবে।

— কি বলবে লোকদের?

— বলবো আপনি আমায় মেরেছেন বা’জে লোক।

দাঁড়াও বা’জে লোকের নমুনা দেখাচ্ছি কথাটা বলেই আষাঢ় চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। এক পা এক পা করে এগোতে থাকে দোলনের দিকে।
দোলন এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকে। এদিকে কাউকেই দেখতে পায় না। দোলন কোনো উপায় না পেয়ে নিজের পায়ের জুতো জোড়া হাতে তুলে নেয় এক হাতে আরেক হাতে শাড়ীর কুঁচি ধরে এক দৌড়ে পালায় এখান থেকে।

নেক্সট টাইম যেনো আর কোথাও শাড়ি পরে যেতে না দেখি।নয়তো আজ একটা খেয়েছো পরবর্তীতে ডাবল খাবে।(আষাঢ়)

— একশো বার পরবো।এখন থেকে শাড়ি পরেই থাকবো দেখি কি করেন হুহ্,,, দোলন দৌড়ে যেতে যেতে বলে।

দোলনকে ছুটে এমনভাবে পালাতে দেখে আষাঢ় আর না হেসে পারে না। শব্দ করে হেঁসে চেয়ারে বসে পরে।

আজ আষাঢ়ের বন্ধুর বোনের বিয়ে। আষাঢ় বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছে। এখানে এসে যে দোলনকে দেখতে পাবে ভাবেনি আষাঢ়। সব ঠিকই ছিলো কিন্তু বিপত্তি বেঁধে যায় তখন যখন আশেপাশের ছেলেরা দোলনের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকাচ্ছে ।

দোলনের দিকে অন্য কোনো ছেলে তাকাচ্ছে ভাবতেই কেন যেনে আষাঢ়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়। আষাঢ় তবুও নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করে রেখেছিল। কিন্তু যখন দোলন ঝুঁকে কিছু একটা করতে নেয় তার কোমড়ের দিক থেকে শাড়ি কিছুটা সরে যায়। দোলনের কোমড়ের দিকে একটা ছেলে সেই সুযোগে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো। আষাঢ় আর নিজেকে সামলে নিতে পারেনি।আষাঢ় কি করবে বুঝতে পারে না দোলনকে একটা বাচ্চাকে দিয়ে এইদিকে ডাকিয়ে আনে।
দোলন সরল মনে আসে কে জানে তার জন্য এখানে কি অপেক্ষা করছিল। দোলন জানলে এখানে জীবনে ও আসতো না।দোলনকে দেখার সাথে সাথে ঐ ছেলেটার ওমন করে তাকানো আষাঢ়ের চোখের সামনে ভেসে উঠে। দোলন আসার সাথে সাথে আষাঢ় কোনো কিছু না বলে চ’ড় মেরে বসে।

আষাঢ় এখনও ঐখানে বসে আছে। ফোনে কাউকে মেসেজ দেয় আষাঢ়। এরমধ্যে দোলন,,,,এই দোলন,,,কই গেলি মা,,, বলতে বলতে একজন এদিকে আসে।
দোলনের নাম শুনে আষাঢ় ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।একটা মধ্যে বয়স্ক মহিলা কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দরী ও পরিপাটি।

দোলনের খালামনি সেই কখন থেকে মেয়েটাকে খুঁজে চলেছে কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। একজন বলল এদিকে আসতে দেখেছে তাই তিনি এদিকে খুঁজতে এসেছেন। মেয়েটাকে বলেছে উনার সাথে সাথে থাকতে কিন্তু মেয়ে টা কোথায় চলে গেলো।

দোলনের খালামনি আষাঢ় কে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে।

— বাবা একটা মেয়ে কে দেখেছো এদিকে? আমার দোলন কে।

— কার কথা বলছেন আন্টি? আষাঢ় না
জানার ভান ধরে।

— ওহ তাইতো তুমি চিনবে কি করে নাম বললে।একটা মেয়ে চিকনা চাকনা,গায়ের রংটা ফর্সা, লম্বায় তোমার কাঁধ পর্যন্ত হবে।

— আষাঢ় একটু ভাবুক হয়ে বলল,,, মনে করতে পারছি না আন্টি দেখেছি নাকি।

— ওহ,,,! শাড়ি পরা একটা মেয়ে। ( খালামনি)

— সবুজ শাড়ি?(আষাঢ়)

— হ্যা হ্যা বাবা।

— একটু আগে একটা পাগল টাইপ মেয়ে গেলো এদিক দিয়ে দৌড়ে।মেয়েটার পরনে সবুজ শাড়ি। হাতে জুতা নিয়ে দৌড়াতে দেখলাম মনে হয় কেউ পাগল ভেবে দৌড়ানি দিয়েছে।

দোলনের খালামনি বলে,,,এটা নিশ্চয়ই দোলন।
ধন্যবাদ বাবা বলেই আষাঢ়ের দেখানো পথে এগিয়ে যায়।

আন্টি,,,,,আষাঢ়ের ডাকে দোলনের খালামনি পিছনে ঘুরে।

+— কিছু বলবে বাবা?

— ঐ মেয়ে টা পাগল হলেও ইউ লুকিং সো বিউটিফুল! আই লাইক ইউ আন্টি!

আষাঢ়ের কথায় দোলনের খালামনি হাসে।

আষাঢ় উনার হাসি দেখে ইশারা দিয়ে বুঝায় হাসিটা ও জোসসসসস!

#চলবে?,,,,,,