#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২০
#Jhorna_Islam
আষাঢ় অনেক দিন হয় আমরা একসাথে খেতে বসি না।আজ যখন ঠিক সময় আসতে পেরেছো আসো খেয়ে নাও আমাদের সাথে। কতোদিন খেতে খেতে গল্প করা হয় না। আষাঢ় কে এই সময় বাড়িতে আসতে দেখে মিসেস রিমি কথাগুলো বলেন।
একসাথে খাওয়ার আমার মোড নেই। তাছাড়া এখানে শুধু পরিবারের লোক থাকলে একসাথে খাওয়ার কথা ভেবে দেখতাম। কিন্তু এখানে বাইরের লোকও আছে। ইউ নো হোয়াট আমি যার তার সাথে বসে খেতে পছন্দ করছি না আপাতত। আষাঢ় কথাগুলো বলে গটগট করে উপরে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দেয়।
পিছন থেকে শুনতে পায় মিসেস রিমির কথা,,,”আষাঢ় বাইরের লোক দেখলে কোথায় তুমি এখানে? এখানে আমরা সবাই তোমার আপনজন। ”
আষাঢ় কোনো উত্তর দেয় না সে নিজের রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়।
“আপা কি বলে গেলো তোমার ছেলে? কি বুঝাতে কি চাইলো সে আপা? আমরা মানে আমি আর মেঘ বাইরের কেউ? আমাদের সাথে এক টেবিলে বসে সে খেতে পারবে না। তোমার সামনে তোমার ছেলে অপমান করে চলে গেলো তুমি কিছু বললে না?” এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে মেঘের মা। আজ সকালেই তিনি এসেছেন। ঐদিন আষাঢ় অপমান করেছে ভেবে রেখেছিল আর আসবেন না, কিন্তু যেখানে মেয়ে সেখানে না এসে কি থাকা যায়?
“তুই এমন করে ভাবছিস কেন? আষাঢ় তোদের সাথে মজা করেছে।”
মিসেস রিমির কথায় মেঘের মা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,,মজা? আমার সাথে কি আষাঢ়ের মজার সম্পর্ক? কোনোদিন তো ভালো করে কথাও বলে না আমার সাথে। সেই আমার সাথে তোমার ছেলে মজা করলো?
মিসেস রিমি কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না।ছেলেটা না খেলে না খেতো এরকম করে অপমান করার কি খুব দরকার ছিলো? তার বোনের তো এখানে কোনো দোষ ছিলো না।
আহ্ মা কি শুরু করলে বলোতো? আষাঢ় তোমাকে এসব কিছু বলেনি।এসব আমাকে বলেছে আমার সাথে মজা করেছে। তুমি তোমার উপর কেনো টেনে নিচ্ছো এই সামান্য বিষয়টা? খাও চুপচাপ।
মেয়ের কথায় কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়। কি আর করার মেয়ের জন্য অবুঝ হয়ে হাজারো অপমান অনায়াসে গলাধঃকরণ করে ফেলতে হয়,তবুও যদি মেয়ে সুখি থাকে।
মিসেস রিমি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। মেঘ জোর বাঁচা বাঁচিয়ে দিয়েছে। এই ছেলেটা কেন যে এরকম করছে উনার মাথায় ঢুকছে না কিছু।
******
রাত তখন এগারোটা বাজে আষাঢ় রুমে বসে কিছু একটা করছে।তার কাজটা আজ রাতের মধ্যে কমপ্লিট করতে হবে কিন্তু চোখ জোরা সায় দিচ্ছে না কিছুতেই। চোখ দুটো ঘুমের দেশে পারি জমাতে চাচ্ছে। এখন কিছুতেই ঘুমালে চলবে না। যে করেই হোক আজ তাকে সবটা শেষ করতে হবে। ঘুমকে তাড়ানোর জন্য এখন তার কড়া করে এক কাপ কফি খেতে হবে। ঘুম তাড়ানোর এই এক মাধ্যম। আষাঢ় ফোন করে সুমা কে বলে কড়া করে এক কাপ কফি বানাতে। আর সেই কফি যেনো মেঘের হাত দিয়ে তার রুমে পাঠায়।
সুমা কফি বানিয়ে মেঘের রুমে গিয়ে নক করে।
মেঘ দরজা খুলে দেখে সুমা কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“কিরে তুই এখানে? কি চাই?”
“আপুমনি কফি,,,
” আমিতো তোর কাছে কোনো কফি চাইনি। আর এতো রাতে আমি কফি খেতে যাবো কোন সুখে।আমার ঘুম তাড়ানোর সখ নেই। আমি এখনই ঘুম দিবো।”
“না না আপুমনি তোমার জন্য আনিনি।”
“তো যার জন্য এনেছিস তার কাছে যা। আমার এখানে এসে আমাকে ডিস্টার্ব করছিস কেন?” কিছুটা রাগি স্বরে বলে মেঘ।
“ছোট সাহেব বলেছে কফির কথা। আর বলেছে আপনাকে দিয়ে যেনো পাঠাই।”
“কিহ? আষাঢ় আমাকে বলেছে তারজন্য কফি নিয়ে যেতে ? মজা করছিস নাতো সুমা? এই সময় এসব মজা একদম ভালো লাগছে না। এখান থেকে বিদায় হো নয়তো মাইর খাবি বলে দিলাম। ”
“সত্যি বলছি আপুমনি। আমি এখন কেন মজা করতে যাবো?”
মেঘ কিছু সময় সুমার দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখ দেখে মনে হচ্ছে সত্যিই বলছে তাছাড়া মেঘের সাথে মিথ্যা বলতে আসবেও না কারণ মেঘকে সুমা ভয় পায় এটা মেঘ জানে।
“ঠিক আছে দে।”
সুমা কফির মগ মেঘের হাতে দিয়ে দেয়। এখন এক দৌড়ে এখান থেকে সে পালাবে। এই মেঘের সামনে আসতেও তার ভালো লাগে না মেয়েটা যেনো কেমন।ব্যবহার ও ভালো না।
সুমা চলে যেতে নিলে মেঘ আবার পিছু ডাকে,,,শোন?
“জ্বি আপুমনি?”
“আষাঢ় কি আর কিছু বলেছে?”
সুমা মাথা নাড়িয়ে না বলে সেখান থেকে কেটে পরে। মেঘ আষাঢ়ের রুমের দিকে হাঁটা দেয় কফির মগ নিয়ে।
আজ এতো ফর্মালিটি দেখিয়ে ভিতরে প্রবেশ করার কি আছে? তুই তো যখন তখন অনুমতি ছাড়া যারতার রুমে ঢুকে মানুষের পার্সোনাল জিনিস পত্র ধরতে পারিস।
তুই তো আবার জিনিসপত্র আর সম্পর্ক দুইটাই সুন্দর করে কি করে নষ্ট করতে হয় সেই বিষয়ে খুব এক্সপার্ট।
ল্যাপটপে চোখ রেখেই কথাগুলো বলে আষাঢ়।
আষাঢ়ের কথায় মেঘ শুকনো ঢুক গিলে। হুট করে আষাঢ় এসব কি বলছে আর তাকেই বা কেন এই রাতের বেলা কফি নিয়ে আসতে বলল? মনের মধ্যে তার অতীতের করা সব ঘটনা জানান দিতে থাকলো।মেঘ জানেনা আষাঢ় কোন ঘটনা জেনে এসব কথা বলছে তাকে। কিন্তু তার করা সব ঘটনা এখন এক এক করে মস্তিষ্কে ধাক্কা দিচ্ছে। হুট করে ভয় হতে লাগলো শুকনো ঢুক গিলে ঠিক করে নেয় কফির মগটা রেখে এখান থেকে পালাবে।
“কিরে কফি কি ঠান্ডা হয়ে গেলে তারপর দিবি খেতে?”
“ন-না এই তো নাও বলেই মেঘ রুমে ঢুকে কফির মগটা বাড়িয়ে দেয় আষাঢ়ের দিকে। ”
আষাঢ় একবার মেঘের হাতের দিকে তাকায় তো একবার কফির দিকে।হাতটা কেমন কাঁপছে তার।
আষাঢ় ঠোঁট কামড়ে হাসে।
“কিরে কাঁপছিস কেন ওমন করে? জানিস মানুষ কখন এমন করে কাঁপে?”
“আমার জেনে কাজ নেই। তুমি নাকি আমায় ডেকেছো? কি বলবে তারাতাড়ি বলো, আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমোতে যাবো। ”
“পালাতে চাইছিস?”
“প-প-পালাতে কেন চাইবো?” তোতলাতে তোতলাতে বলে মেঘ।”
“তুই তো আমার কাছাকাছি থাকতে চাস তাহলে এখন যেতে চাইছিস কেন? এখন আমার কাছে থাকতে ভালো লাগছে না তোর? আমি নিজে তোকে আমার কাছে ডেকেছি তোর তো খুশি হওয়া দরকার। খুশি হোস নি?” মেঘের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে আষাঢ়।
আষাঢ় কে এভাবে ঝুঁকতে দেখে মেঘ কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। পিছুতে গিয়ে কফির মগ থেকে কফি গিয়ে মেঘের হাতে পরে। গরম কফি হাতে পরার পরও মেঘ ব্যাথা অনুভব করে না। মেঘ আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে আষাঢ়ের ভাব বোঝার চেষ্টা করে।
“মেঘঘঘ! হুট করে চিল্লিয়ে ডাকে আষাঢ়। ”
“মেঘ ডাক শুনে লাফ দিয়ে উঠে। ”
আরে ইয়ার রিলেক্স এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? এতো ভয় নিয়ে আবার আমাকে বিয়ে করে আমার সাথে সারাজীবন থাকতে চাস? আমার সাথে থাকতে হলে সাহসী হতে হবে আর অন্যায় করেও স্বীকার করার সৎ সাহস থাকতে হবে। এরকম ভিতু টাইপ লোক আমি একদম পছন্দ করি না বুঝলি?
কফিতো খেতে পারলাম না ফেলে দিলি। যা গিয়ে ঘুমা।
মেঘ কথা না বলে চলে যেতে নেয়। পিছন থেকে আবার আষাঢ় ডাকে। মেঘ দাঁড়ালেও পিছনে ঘুরে দেখে না।
হাতে মলম লাগিয়ে নিস।যদিও বা এটা সামান্য ব্যাথা আরও হাজার গুন বেশি ব্যাথা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে বুঝলি? আষাঢ়ের নজরে পরেছিস বলে কথা। সাবধানে থাকিস কেমন?
মেঘ কথা না বলে চলে যায়। আষাঢ় যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আষাঢ় জানে তার ফোন ভাঙ্গা, ফোনের আর ঘড়ির এলার্ম বন্ধ করা সব মেঘেরই কাজ।কিন্তু এখন কিছু বলা যাবে না সামনে খুব বড় একটা কাজ আছে তার।
*******
সকালে খাবার টেবিলে আষাঢ় তার মা আর বাবা খেতে বসেছে। মেঘের মা গতকালই চলে গেছে। আর মেঘ খেতে এসে আষাঢ় কে খাবার টেবিলে দেখে তাড়া আছে বলে কোনোমতে কাটিয়ে চলে যায়। আষাঢ় মেঘের কান্ড দেখে মনে মনে হাসে।
সকলেই চুপচাপ খাবার খাচ্ছে এরমধ্যে আষাঢ় সুমাকে ডেকে আনে।
“সুমা এই সুমা এইদিকে আয়।”
“জ্বি ছোট সাহেব। ”
“আমার পাশের রুমটা ভালো করে ক্লিন করবি দু-ঘন্টার মধ্যে। একটা ধুলোবালি ও যেনো না থাকে। ”
“আচ্ছা। ” বলেই সুমা তারাতাড়ি চলে যায় রুম পরিষ্কার করতে।
“কেউ আসবে নাকি বাড়িতে আষাঢ়? কোনো গেস্ট আসবে?” মিসেস রিমি জিজ্ঞেস করে।
“নতুন কেউ আসবে তবে গেস্ট নয়।বাড়ির লোকই বলতে পারো।”
“কে আসবে আষাঢ়? ” মি. শ্রাবণ প্রশ্ন করে।
“আসলেই দেখতে পাবে বাবা। আপাতত বলতে চাইছি না কিছু। ” বলেই আষাঢ় খাওয়া শেষ করে উঠে চলে যায়।
মেঘ বাড়িতে এসে সুমাকে রুম পরিষ্কার করতে দেখে জিজ্ঞেস করে কেউ আসবে নাকি?
জানিনা ম্যাডাম।মনে হয় কোনো অতিথি আসবে।
মেঘ কপাল কুঁচকে ভাবতে থাকে কে আসবে।সে কতো করে চেয়েছিল এই রুমে থাকতে কিন্তু আষাঢ় দেয়নি থাকতে। কে আসবে জানার জন্য মিসেস রিমির রুমের দিকে হাঁটা দেয় মেঘ।
#চলবে?,,,,
#আষাঢ়ের_দোলনচাঁপা
#পর্বঃ২১
#Jhorna_Islam
“কে আসবে মামনি বাড়িতে? এতো সুন্দর করে আষাঢ়ের রুমের পাশের রুমটা যে গোছানো হচ্ছে। ”
মিসেস রিমির কাছে প্রশ্ন করে রুমে ঢুকতে ঢুকতে।
“তোকে কি করে বলবো? যখন নিজেই জানি না কে আসবে। ”
“মানেটা কি? তোমাকেও কিছু বলেনি কে আসবে? অন্তত পক্ষে তোমাকে বলার দরকার ছিলো।”
“আমার ছেলে আর আগের মতো নেই যে সবকিছু আমাকে বলে করবে আর জানাবে। এখন সে বড় হয়ে গেছে অনেক, নিজের ডিসিশন নিজেই নিতে জানে। মা হিসেবে আমি ব্যর্থ এজন্য আমার ছেলে এখন আর আমাকে ভালো মন্দ কিছুই জানায় না।”
মেঘ চোখ মুখ কুঁচকে মনে মনে বলে,,, জানতে চেয়েছিলাম কে আসবে আর উনি দেখো কীর্তন শুরু করে দিয়েছে। এখন এসব ইমোশনাল ড্রামা দেখলে গা জ্বলে যায়। মা হয়েছে শুধু শুধু এখনও ছেলেকে আমার করে দিতে পারলো না। ধ্যাত কেন যে ঐদিন আষাঢ়ের ফোনটা বাজলো।আগে যদি জানতাম ফোনে কল পেয়েই আষাঢ় বিয়ের আসর ছেড়ে ছুটে হাসপাতালে যাবে তাহলে ঐ ফোনের যে কি অবস্থা করতাম আমি। তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দিলো কলটা।যদি জানতে পারতাম কে কল দিয়েছে তাহলে তার যে কি অবস্থা করতাম আমি। আমার সব স্বপ্নে এক বালতি পানি ঢেলে দিলো। এটাও জানতে পারলাম না এখনও আষাঢ় কল পেয়ে হসপিটালে যাওয়ার পর কি এমন হলো সে বিয়ের ডিসিশন বাদ দিলো আর কেমন পাগলামি শুরু করলো আবার। ঐ মেয়ে টা আবার ফিরে আসেনিতো? কিন্তু ঐ মেয়েটাতো,,,, মেঘের এসব ভাবনার মাঝেই সুমা মিসেস রিমি কে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে দৌড়ে এসে।
হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,, ম্যাডাম,,ম্যাডাম,,?
“কিরে কি হয়েছে? এরকম করছিস কেন? মনে হয় বাড়িতে ডা’কাত পরেছে।” (মিসেস রিমি)
“তেমন কিছুই ম্যাডাম।”
“মানে?”
বাড়িতে এই বড় বড় দেখতে দুইজন লোক এসেছে হাতে কিসব যন্ত্রপাতি। আমি এতো করে বল্লাম কারা আপনারা কিন্তু কোনো উত্তর দিলো না। শুধু জিজ্ঞেস করলো ছোট সাহেবের পাশের রুম কোনটা। বিশ্বাস করেন ম্যাডাম আমি বলতে চাইনি।লোকগুলো এমন জোরে ধমক দিলো যে আমি ভয়ে দেখিয়ে দিয়েছি। তারপর লোকগুলো ঐ রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার কোনো দোষ নেই ম্যাডাম।
“কি বলছিস এসব? ”
এই মেয়েটার মাথায় নিশ্চয়ই সমস্যা আছে মামনি।দিন দুপুরে নাকি ডাকাত আসছে, কি অদ্ভুত কথা।
মেঘের কথায় সুমা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,, আমি সত্যি বলছি।
চলতো মেঘ দেখি কারা এসেছে বলেই মিসেস রিমি আর মেঘ দেখতে যায় কারা এসেছে। ওদের পিছনে পিছনে সুমা ও যায় তবে তার খুব ভয় করছে।
মিসেস রিমি দরজায় গিয়ে নক করে ভিতর থেকে কেমন শব্দ আসছে। দরজায় নক করার পরও দরজা খুলে না। দুই তিন বার নক করার পরও যখন দরজা খুলে না তখন রিমির ও কেমন ভয় লাগতে লাগে। মেঘ বলে,,,মামনি আংকেল কে কল করো , আমার কিন্তু কিছু সুবিধার মনে হচ্ছে না।
মিসেস রিমি সত্যিই ফোন বের করে কল দিতে যাবে এমন সময় দরজা খুলে যায়।
“এই কারা আপনারা? এইখানে কি করছেন? অনুমতি ছাড়া ভিতরে ঢুকলেন কি করে? আর দরজা কেন খুলছিলেন না?”
মিসেস রিমির করা এতো প্রশ্নে লোকটা চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকায়। তারপর বলে,,ভিতরে কাজ চলছে আওয়াজের কারণে আর দরজা বন্ধ থাকায় শুনতে পাইনি।তাও পেতাম না আমিতো দরজায় আপনাদের ছায়া দেখে তারপর দরজা খুললাম।
আপনারা কারা বলুনতো? মেঘ প্রশ্ন করে।
“আসলে আমাদের আষাঢ় স্যার পাঠিয়েছেন। ”
“তো দরজা বন্ধ করে কি করছেন?”
“আপনাদের সুবিধার জন্যইতো দরজা বন্ধ করেছি।”
মেঘ অবাক হয়ে বলে,,”আমাদের সুবিধার জন্য মানে?”
ভিতরে কাজ চলছে আওয়াজে আপনাদের অসুবিধা হতে পারে এজন্য দরজা বন্ধ করে নিয়েছি।
মিসেস রিমি ব্রু কুঁচকে বলে,, কিন্তু কিসের কাজ চলছে রুমে? আমার জানামতে রুমতো পুরো ঠিকঠাক। এক্সট্রা কোনো কিছুর দরকার ও নেই রুমে তাহলে?
কাজ শেষ হলে দেখে নিয়েন ম্যাম। আপাতত আমরা আমাদের কাজ শেষ করি বলেই দরজা লাগিয়ে দেয় লোকটা।
বাড়িতে কিসব ঘটনা ঘটছে এসব,? আমি কিছুই জানি না মনে হচ্ছে এই বাড়িতে আমি ভাড়াটিয়া।
এরমধ্যে নিচ থেকে আবার সুমার চিল্লানোর শব্দ ভেসে আসছে।
“ম্যাডাম ঐ ম্যাডাম? ম্যাডামগো কই তারাতাড়ি আসেন নিচে দেইখা যান আমাদের আষাঢ় স্যার কারে নিয়ে আসছে বাড়িতে। ”
মামনি এই সুমা না এতক্ষন আমাদের পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো? তাহলে নিচে গেলো কখন? আর এরকম করে ডাকছেই বা কেন? আষাঢ় কাকে নিয়ে এসেছে?
মেঘের কথায় মিসেস রিমি মাথায় হাত দিয়ে বলে,,তুই যেখানে আমিও সেখানেই। কি করে বলবো কাকে নিয়ে এসেছে? এইবার মনে হচ্ছে আমি পাগল হয়ে যাবো। আমার মাথা কেমন হ্যাং হয়ে গেছে।
মামনির অবস্থা দেখে মেঘের খুব হাসি পাচ্ছে। অনেক কষ্টে নিজের হাসি আঁটকে বলে,,চিন্তা করো না মামনি তোমার ঘরেইতো ডাক্তার আছে। তোমার মাথায় সমস্যা হলে ঠিক করে দিবে। এবার নিচে চলো গিয়ে দেখি কি ড্রামা দেখতে পাই নতুন করে।
মেঘ আর মিসেস রিমি দুইজনই হন্তদন্ত হয়ে নিচে ছুটে আষাঢ় কাকে নিয়ে এসেছে দেখার জন্য।
*********
এটা তুমি কেন করলে মা? কি করে করলে, তুমি আমার শেষ আশা টুকু ও শেষ করে দিলে? আমি এখন কি নিয়ে বাঁচবো? কার জন্য বাঁচবো আমি? কথাগুলো চিল্লিয়ে বলে নিজের স্বর্ব শক্তি প্রয়োগ করে দেওয়ালের এক কোণে রাখা মাটির ফুলদানিটা সজোরে মেঝেতে ছুঁড়ে মারে সুমন। মুহূর্তের মাঝে ফুলদানিটা ভেঙে কয়েকশো টুকরো হয়ে যায়।
মিসেস খেয়া ছলছল চোখে নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে।
“সুমন বাবা আমার কথা শোন। দেখ মা তোকে সবটা বুঝিয়ে বলছি। ”
“আর কি শুনতে বলছো তুমি? কি বাকি রেখেছো শুনার জন্য? চিৎকার করে কথা বলছে আর এটা ওটা সামনে যা পাচ্ছে তাই ছুঁড়ে মারছে।”
ছেলের এরকম রূপ আজ তিনি প্রথমবার দেখছেন।
কি করে এখন ছেলেকে শান্ত করবেন তাই ভাবছেন তিনি।
তুমি জেনে শুনে ছেলের এতো বড় ক্ষতি করলে মা? আমি হারিয়ে আবার ফিরে পেয়েছিলাম আমার দুলি কে।তুমি কেন এ বেঈমানটার হাতে আবার ও তুলে দিলে? তুমি নিজের হাতে নিজের ছেলের এতো বড় সর্বনাশ কি করে করলে?
তুমি আমার দুলিকে ফিরিয়ে আনো ফিরিয়ে আনো গিয়ে মা।আমি আমার দুলিকে হারাতে চাই না। দুলিকে ছাড়া আমি বাঁচবো না মা।
“পৃথিবীতে কেউ কাউকে ছাড়া মরে যায় না বাবা।”
“কারো কথা জানিনা আমি মরে যাবো মা।আমি শেষ হয়ে যাবো।”
“তুমি এনে দিবে না আমার দুলিকে? ”
“সম্ভব না।”
“ঠিক আছে তাহলে আমি গিয়ে নিজে নিয়ে আসবো। তোমাকে আনতে হবে না। ”
” খবরদার তুই কোথাও যাবি না। যার জিনিস সে নিয়ে গেছে, তুই আমি বাঁধা দেওয়ার কে? দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ যখন নিজেরা একসাথে থাকার জন্য একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয় তখন তুই আমি তাদের কি করে আলাদা করবো? আমি চেয়ে ও কিছু করতে পারিনি বাবা। আমার কথা সেখানে খাঁটে না সত্যি জানার পরে। আর দুলি নিজেও আষাঢ় কে কিরকম ভালোবাসে তুই আর আমি দুইজনেই জানি। নিজেকে সামলে নে সুমন। সবাই সব সময় নিজের ভালোবাসাকে আপন করে পায় না। উদাহরণ হিসেবে আমাকে আর তোর খালামনিকেই দেখ।আমরাও এমন বলতাম তাকে ছাড়া বাঁচবো না এই সেই কিন্তু দেখ দিব্যি বেঁচে আছি। অন্যের সংসার করে মা হয়েছি জীবন কেটে গেছে। এখন যে দুঃখে আছি তেমন না কিন্তু। ”
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মা।আমি দুলি ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছি না। বুকে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে আমার বুকে বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে মিসেস খেয়ার পায়ের কাছে বসে পরে।
মিসেস খেয়া নিজেও ছেলের এই অবস্থা দেখে কাঁদতে থাকে আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,, “তুই যে বড্ড অভাগা বাপ।বড্ড অভাগা তুই। মা,খালার মতো নিজের ভালোবাসা আপন করে পাওয়ার ভাগ্য তোরও হয়নি।”
#চলবে?,,,,,,