#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ১৯
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক’পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[প্রাপ্তমনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]
পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত দোচালা আলিশান ভিলার গা ডাবিয়ে দেওয়া নরম বিছানাতে এপাশ ওপাশ করেও কিছুতেই ঘুম নামছে না দু’চোখের পাতায়। অবাধ্য মনটা ক্রমাগত অন্যকারো নাম জপে যাচ্ছে বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার পর থেকেই। রুমের এক পাশে স্থীর মূর্তির মতো দাড়িয়ে থাকা দক্ষিণের জানালাটা হাট করে খোলা। সেথা থেকে পাতলা ফিনফিনে সফেদ পর্দা ছাপিয়ে হুহু করে বাসন্তিক হিমেল হাওয়া এসে শরীর নাড়িয়ে দিচ্ছে বারংবার , তবুও ঘুম কুমারীর দেখা নেই।
হুট করে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে আকর্ষনীয় স্টাইলিশ চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করতে করতেই দক্ষিণ জানালার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো ক্রীতিক। কপালে তার গভীর চিন্তার ভাঁজ।ঠোঁটের ভাঁজে সিগারেট ধরিয়ে, মুখে বিড়বিড়ানো অস্পষ্ট আওয়াজ,
— কি করবো আমি?দিনে দিনে আমার আনহেলদি্ অবসেশনে পরিনত হচ্ছিস তুই । পাশ ফিরেই তোকে দেখতে পাবো এমন দিনের জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে আমায়?তোকে যে আমার চাইই চাই।
এইটুকু বলেই ক্রীতিকের সাভাবিক মুখভঙ্গিমা অনেকটা কাঠিন্য রূপ ধারণ করে, ব্লে’ডের মতো তীক্ষ্ণ চোয়ালটা শক্ত করে পুনরায় বিড়বিড়ালো সে,
— যেই মূহুর্তে মনটাকে আর মানাতে না পারবো, ঠিক সেই মূহুর্তে এসব ফা’কিং বয়সের পার্থক্য, সম্পর্কের জটিলতা কিংবা এর চেয়েও আরও বড় কোনো বাধা, সব কিছুকে জাস্ট উপড়ে ফেলে দেবো আমি। মাইন্ড ইট অরোরা শেখ। সেদিন আমার কাছে কেঁদে কেটেও লাভ হবেনা, আমি এতোটাও সদয় নই। নিজের জিনিস আমি চেয়ে নয় কেড়ে নিই।
একমনে হাজারো কথা আওড়ে কাবার্ড থেকে শার্ট বের করে সেটাকে টিশার্টের উপর পরে, শার্টের হাতাদুটো ভাজ করতে করতেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় ক্রীতিক।
*****************************************
গভীর আমাবস্যা রাত। মাথার উপর আজ আর চাঁদের দেখা নেই। ছোট বড় তারকারাজিরাও মেঘের আড়ালে লুকিয়ে আছে। চারিদিকে ঘুম ঘুম পরিবেশ বিরাজমান। এই মূহুর্তে সবাই হয়তো ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমের দেশে পারি জমিয়েছে।কিংবা কেউ কেউ মেতে উঠেছে ভালোবাসা আদান প্রদানের চড়ম প্রতিযোগীতায়। অথচ অরুর রুমে চকচক করছে ইলেকট্রনিক বাল্বের চোখ ধাঁধানো আলো, শরীরটা ক্লান্তিতে ভার হয়ে আসছে,চোখ জোড়াও ঘুমাতে যাওয়ার জন্য নিসপিস করছে সেই কখন থেকে, কিন্তু তার উপায় কোথায়? এই অবস্থায় ঘুমাতে গেলে হাত পায়ের কাঁ’টা ছেড়া যায়গা গুলোতে মলম কে লাগাবে? তাছাড়া জঙ্গলে দৌড়াতে গিয়ে পিঠের কাছেও অনেকটা কেঁ’টে গিয়েছে। সেখানটাতেই আপাতত কটন দিয়ে একটু একটু করে এন্টিসেফটিক লাগাচ্ছে অরু, আর খানিকবাদে বাদে চোখ ঘুরিয়ে জানালা গলিয়ে নিশুতি আধার রাতে হাতড়ে বেড়ানো জোনাকিপোকা পরখ করছে ,যাতে কাজ করতে করতে ঘুম না পেয়ে যায় আবার। অরু যখন নিজেকেই নিজে সারিয়ে তোলার কাছে প্রচন্ড মনোযোগী ঠিক তখনই কোনোরূপ নক না করেই পাসওয়ার্ড টিপে ওর রুমের ভেতর প্রবেশ করে ক্রীতিক।
এতো রাতে আচমকা কারও উপস্থিতি টের পেয়ে অসাবধানতায় লাফিয়ে ওঠে অরু, মাথা তুলে ক্রীতিককে দেখতে পেয়ে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে দ্রুত নিজের কাধ থেকে জামাটা তুলে ফেলে মিনমিনিয়ে বলে,
— মেয়ে মানুষের রুমে নক করে ঢুকতে হয়,সেটাও জানেন না? ম্যানারলেস লোক কোথাগার।
— তোর রুমে আবার আমাকে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হবে? পিচ্চি মেয়ে একটা, দেখি কোথায় লেগেছে?
কথা বলতে বলতেই অরুর কাছে এগিয়ে যায় ক্রীতিক। হাত বাড়িয়ে দেয় অরুর ঘাড়ের কাছে। অরু দ্বিধা গ্রস্থ হয়ে নিজের জামাটা চেপে ধরে বললো,
— আপনার চেয়ে ছোট হতে পারি,তবে বয়সের দিক দিয়ে আমি অতোটাও ছোট নই।
নিজের গোপনীয় ক্ষতটা ক্রীতিককে দেখাতে অরু সংকোচ বোধ করছে বুঝতে পেরে, ক্রীতিক হাঁটু গেড়ে অরুর মুখোমুখি হয়ে বসে ওর এক পা তুলে নেয় নিজের উরুর উপর,তারপর সেটাকে মনোযোগ সহকারে উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে বলে,
— তাই নাকি? বিয়ের বয়স হয়েছে?
–কিহ!
ক্রীতিক চোখ তুলে অরুর চোখে চোখ রেখে পুনরায় শুধালো,
— বিয়ের বয়স হয়েছে? বরকে সামলাতে পারবি?
ক্রীতিকের হঠাৎ করা ছো’বলের মতো প্রশ্নে অরুর লজ্জায় চোখ বুঝে আসছে, ও দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
— ব্যাথা পায়ে হাত কেন দিয়েছেন?
— আরো ব্যাথা দেবো বলে।
ক্রীতিকের উত্তরে চোখ মুখ কুঁচকে গেলো অরুর,অবিশ্বাস্য কন্ঠে নিজের পা’টা ক্রীতিকের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে, ও বললো,
— সত্যিই আবার ব্যাথা দেবেন?
অরুর কথাটা বলতে যতক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে পুরোরুমে ঝঙ্কার তুলে শব্দ করে হেসে উঠলো ক্রীতিক। ক্রীতিককে এভাবে হাসতে দেখে আপনা আপনি ফাঁক হয়ে গিয়েছে অরুর ওষ্ঠাধর। চোখ দুটো হয়ে উঠেছে হাঁসের ডিমের মতো গোল গোল। ও কি সত্যি দেখছে,নাকি সবই স্বপ্ন বুঝে উঠতে পারছে না অরু। অরু কে সেই কখন থেকে হা হয়ে থাকতে দেখে ক্রীতিক নিজের চিরাচরিত রূপে ফিরে এসে, গম্ভীর মুখে বলে,
— হা করে আছিস কেন? মাছি খাওয়ার শখ হয়েছে?
ক্রীতিকের কথার পাছে অরু অবিশ্বাসের সুরে বলে ওঠে,
— আপনি হাসতেও পারেন?
অরুর কথায় কোনোরূপ প্রতিক্রিয়া না করে ক্রীতিক হাত বাড়িয়ে বলে,
— ওই পা দেখি।
অরু সামান্য উঁকি দিয়ে দেখলো, ওর একটা পায়ে খুব সুন্দর করে ব্যান্ডেজ বেধে ফাস্টএইড করে দিয়েছে ক্রীতিক, এরপর আরেকটা পা-ও নিজের উরুর উপর রেখে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বললো,
— এই পায়ের নুপুর কোথায়?
অরু ঠোঁট উল্টে অসহায় সুরে বললো,
— হারিয়ে ফেলেছি।এই নুপুরটা আমার খুব পছন্দের ছিল জানেন, তাইতো একটা হারিয়ে যাওয়ার পরেও আরেকটা খুলিনি।
নুপুরের প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য পায়ে ব্যান্ডেজ লাগাতে লাগাতে হঠাৎ করেই ক্রীতিক শুধালো,
— আচ্ছা অরু, সেদিন ক্যাথলিন তোকে রেগেমেগে কি এমন বলেছিল?
প্রথমে অরু একটু সময় নিয়ে ভাবে,তারপর মনে পরার মতো চট করেই মিনমিনিয়ে ঠোঁট টিপে হেঁসে ওঠে ও।
— কি ব্যাপার হাসছিস কেন?
অরু হাসতে হাসতেই জবাব দেয়,
— হাসবো না? এলিসা আপুর কাজিনতো তো আপনার জন্য এক কথায় ফিদা, রাগে গজগজ করতে করতে আমাকে কতোকথাই না শোনালো সেদিন।বলে কিনা, আমাকে যাতে আপনার ধারে কাছেও আর না দেখা যায়। আমি আসার পর থেকে নাকি আপনি বদলে গিয়েছেন।
কথাটুকু বলে আবারও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে অরু, হাসতে হাসতে বলে,
— উনিতো আর জানেনা, আমি আপনার চিরাচরিত শ’ত্রু, জানলে বোধ হয় এসব কথা জীবনেও বলতো না। আমার কি মনে হয় জানেন? এলিসা আপুর কাজিনের মাথা নির্ঘাত সমস্যা আছে।
ক্রীতিক নিজের হাতের কাজ থামিয়ে বললো,
— এমন কেন মনে হলো তোর?
— তো মনে হবে না? আপনার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছে আপুর কাজিন,আর মানুষ পেলোনা আমি আর আপনি?সাপ আর বেজি, নানা দা আর কুমড়ো!!কথা বলতে বলতে আবারও কুটকুটিয়ে হেসে ওঠে অরু।
এতোক্ষণ ধরে বসে বসে অরুর কথার বহর শুনে গেলেও ওর শেষ কথাটা বোধ হয় পছন্দ হয়নি ক্রীতিকের। অরুর হাসি মুখের দিকে এক নজর বি’ভৎস চাহনি নিক্ষেপ করে সঙ্গে সঙ্গে ওর ব্যান্ডেজ করা ক্ষ’ত পা’টা শক্ত হাতে চেপে ধরলো ক্রীতিক। ক্রীতিকের হাতের বাধনটা এতোটাই বেশি শক্ত ছিল যে হুট করেই অরুর মনে হলো, ওর কলিজা ধরে টান দিয়েছে কেউ, হঠাৎ করে এমন প্রচন্ড ব্যাথায় আঁতকে উঠে শব্দ করে চিৎকার দিয়ে উঠলো অরু,
— আহহহ, কি করছেন?ব্যাথা কেন দিচ্ছেন?
ক্রীতিক ওর পা’টা ধা’ক্কা মে’রে সরিয়ে দিয়ে চোয়াল শক্ত করে বলে,
— আমি তোর নার্স কিংবা সার্ভেন্ট নই যে রাত যেগে বসেবসে তোর ক্ষ’ততে মলম লাগাবো।
ধা’ক্কা লেগে ক্ষত থেকে পুনরায় তরতাজা র’ক্ত বেরিয়ে এসে সাদা ব্যান্ডেজ র’ক্তরাঙা হয়ে ভিজে উঠেছে, অরু সেখানটায় হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ খিঁচে রেখেছে। বন্ধ চোখ জোড়া থেকে নিঃশব্দে গড়িয়ে পরছে অস্রুসিক্ত নোনাজল।
ক্রীতিক তাতে নজর না দিয়েই হনহন করে বেরিয়ে যায়, যাওয়ার আগে শেষবারের মতো পেছন ঘুরে মনেমনে আওড়ায়,
— তোর ভুল ধারনা খুব শীঘ্রই ভেঙে যাবে অরু। তুই আমার না হলে, অন্য কারোর না।
****************************************
সন্ধ্যা হতে না হতেই স্ফটিকের লাল,নীল, বেগুনি আলোর ঝলকানিতে চিকচিক করছে সুবিশাল ক্লাবের চারিদিক। ভেতর থেকে ডিজে গানের ধিমধিম আওয়াজ ভেসে আসছে রাস্তা পর্যন্ত। একে একে ভেতরে প্রবেশ করছে,ক্যাডিলাক,মার্সিডিজের মতো নামি দামি গাড়ির বহর। পৃথিবীতে হাতে গোনা নামি-দামি যে কয়েকটা ক্যা’সিনো ক্লাব রয়েছে তার মধ্যে ব্যাংককের কিং ক্লাব একটি। বছরের বিভিন্ন সময়ই পৃথিবীর নামি-দামি পকার প্লেয়াররা জু’য়ায় টাকা জেতার জন্য জমায়েত হয় এখানে। একের পর বেট ধরে জিতে নেয় কোটি কোটি টাকা। এলিসাও তাদের মধ্যে একজন,সবার প্রিয় নাম্বার থার্টিন। এই নামেই সবাই ওকে চেনে। সবার ভালোমতোই জানা যেই ক্লাব ওকে নিতে পারবে তারাই তরতর করে সবচেয়ে ধনী ক্যা’সিনো ক্লাবে পরিনত হবে। কিন্তু এলিসাতো আর এসবে জড়াবে না,আজকেই এই পা’পের দুনিয়াতে ওর শেষ দিন। শুধু একবার ভালোয় ভালোয় বাবাকে নিয়ে ফিরতে পারলেই হলো।
স্ফটিকের আলোতে জ্বলজ্বল করতে থাকা কিং ক্লাবের নেইম-প্লেটের সামনে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওরা চারজন।
চারিপাশের পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে এলিসার বেশভূষা ও চোখ ধাঁধানো আজ। ঝিকিমিকি টপস আর লেগিংসের সাথে পায়ে এটে আছে কয়েক ইঞ্চি লম্বা পেন্সিল হীল। মেকআপের আস্তরনের সাথে ম্যাচিং করে ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক,চোখে কালো সানগ্লাস। ওর পাশেই স্যুট বুট পরে ফর্মাল লুকে দাড়িয়ে আছে সায়র,চোখে পরেছে মোটা ফ্রেমের চশমা। দেখতে তাকে পুরোপুরি এ্যাসিসট্যান্টের মতোই লাগছে। সায়রের পাশেই বাইকে হ্যালান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লেদার জ্যাকেট আর হেলমেট পরিহিত জেকে। চারিদিকে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে সবটা পরখ করে, অর্নব এগিয়ে এসে বললো,
— গাইস সব ঠিকঠাক, এলিসা তুই সায়রকে নিয়ে ফ্রন্ট গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ কর। আমি বেজমেন্টে ঢোকার সাথে সাথেই কাজ শুরু করবো, মনে রাখিস হাতে মাত্র দশমিনিট সময়।আই রিপিট মাত্র দশমিনিট। এরপর আর এতোগুলা সার্ভার একসাথে নিজের কন্ট্রোলে রাখতে পারবো না আমি।আর জেকে তুই এখানেই ওয়েট কর, এলিসা ওর বাবাকে নিয়ে বের হওয়ার সাথে সাথে তুই এলিসাকে নিয়ে চলে যাবি, ওর বাবাকে আমরা ম্যানেজ করবো।
কথাটুকু শেষ করে সবার কানে একটা করে ব্লুটুথ লাগিয়ে দিলো অর্নব।
— নাও গো….
.
দশমিনিট প্রায় শেষ হতে চললো, ক্রীতিক সুক্ষ্ম নজরে কাচের দেওয়াল বেস্টিত ক্লাবের দিকে তাকিয়ে আছে, এতদূর থেকে ভেতরের কোনো কিছুই ঠাহর করার উপায় নেই, শুধু বোঝা যাচ্ছে এতোক্ষণ ধরে জ্বলতে নিভতে থাকা ঝিকিমিকি আলোর বহর হুট করেই পুরোপুরি নিভে গিয়েছে। ভেতরের মিউজিক আলো দুটোই নিভে যাওয়ার দরুন ক্রীতিক সচকিত হয়ে ব্লুটুথে মনোযোগ দিলো, কিন্তু না ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ নেই। তৎক্ষনাৎ কোথা থেকে যেন দৌড়ে এলো অর্নব, আশেপাশে একনজর চোখ বুলিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালো,
— দশ মিনিট শেষ হতে চললো, ওরা কোথায়?
ক্রীতিক ঠোঁট কামড়ে বললো,
— ঠিক বুঝতে পারছি না, কোনো বড় বি’পদ হওয়ার আগে আমাদের ভেতরে যাওয়া দরকার, সায়র যা ভীতুর ডিম ওকে ভরসা নেই।
ক্রীতিকের কথায় সায় জানিয়ে অর্নব তৎক্ষনাৎ ক্লাবের দিকে হাটা দেয়, পেছন থেকে ক্রীতিক আবারও ডেকে ওঠে ওকে,ক্রীতিকের ডাকে সারা দিতে অর্নব ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে চাইলে, ওর দিকে একটা রি’ভলবার ছুড়ে দিয়ে ক্রীতিক বললো,
— ক্যাচ ইট।
অর্নব রি’ভলবারটা ক্যাচ করে, হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ক্রীতিকের চোখের দিকে চাইলো, নিজের কোমড়ের খাঁজে আরও একটা রি’ভলবার গুঁজতে গুঁজতে হালকা চোখ টিপে ক্রীতিক বলে,
— ফর সেইফটি পারপাস, আফটার অল ভেতরের সবার কাছেই এটা আছে।
.
এলিভেটর দিয়ে ওরা দুজন যখন ক্লাবের সবচেয়ে বড় হলরুমটাতে প্রবেশ করে,তখন চারিদিকে নিস্তব্ধতায় ঘেরা, এতো মানুষ এতো হইহট্টগোল সব কেমন হাওয়ায় উবে গিয়েছে, বাইরে থেকে আসা নিয়ন আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে চারিদিকের টেবিল চেয়ার গুলো উল্টেপাল্টে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, অর্নব আর ক্রীতিক ভ্রু কুঞ্চন করে চোখাচোখি করলো, অর্নব নিচু স্বরে বললো,
— হোয়াটস রং? সবাই কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো?
— যে যেখানে খুশি যাক, এলিসার বাবাকে আমার মোটেও সুবিধার মনে হয় না, লোকটা চরম ধূর্ত। এই মূহুর্তে এলিসা আর সায়রকে সেফ রাখাই আমাদের মেইন টার্গেট।
ক্রীতিকের কথায় অর্নব হ্যা সূচক মাথা নাড়ালো। তখনই ওর পায়ের সাথে ধাক্কা লেগে একটা কাঁচের ক্যা’সিনো সাজানো টেবিল ঝনঝন করে মেঝেতে পরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে হল রুমের লাইট জ্বলে ওঠে, ভেতরের রুম থেকে একে একে বেরিয়ে আসে সবাই। সায়র আর এলিসার কপালে ব’ন্দুক ঠেকিয়ে রেখেছে সয়ং এলিসার বাবা। ওদের দুজনকে দেখা মাত্রই খু’নখুনিয়ে কেঁদে ওঠে সায়র,
অর্নব ওর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত সুরে বলে,
— মেয়েদের মতো কাঁদছিস কেন হাদারাম, তোদের বাঁচাতেই তো এলাম।
ক্রীতিক এগিয়ে গিয়ে এলিসার বাবার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
— আবারও নিজের মেয়ের সাথেই নোংরা চাল চাললেন মি.ত্রিপিটক।
ক্রীতিকের কথায় লোকটা কপট হেঁসে বললো,
— এতো কথা ভাল্লাগছে না, চলো সহজ ডিলে আসি, তুমি তোমার বন্ধুকে নিয়ে চলে যাও, আর আমার মেয়েকে আমার কাছে রেখে যাও, ওকে ছাড়া আমার ক্যাসিনো বিজনেসটা একেবারে নড়বড়ে হয়ে আছে।
লোকটার কথায় ক্রীতিক ঠোঁট কামড়ে একটু তাচ্ছিল্য করে হাসলো, অতঃপর ঘাড় কাত করে বললো,
— গেলে আমরা চারজনই যাবো। প্রয়োজন পরলে আপনাকে উপরে পাঠিয়ে যাবো,কারন আপনাদের মতো মানুষের প্যারেন্টস হওয়ার কোনো যোগ্যতাই নেই।
কথাটা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এলিসাকে টান দিয়ে ওর মাথায় রি’ভলবার ঠেকালো ক্রীতিক। ক্রীতিকের কান্ডে এবার অর্নব ও কিছুটা ভরকে গিয়ে বললো,
— জেকে কি করছিস ?
অর্নবের কথায় কান না দিয়ে ক্রীতিক এলিসার বাবাকে বলে, আপনি ওকে মা’রতে পারতেন না ত্রিপিটক , কারন এলিসা আপনার সোনার ডিম পারা হাঁস, বাট আমি পারবো,কারন ও আমার দুই পয়সার কাজেও আসেনা,ইভেন নিজেকে বাঁচানো জন্য শুধু এলিসা কেন ওদের সবাইকে মা’রতেও আমার এক মিনিটও টাইম লাগবে না।যাস্ট পয়েন্ট আর তারপর শ্যু’ট।
এলিসার বাবা হেঁসে বললো,
— ভয় দেখাচ্ছো?
ক্রীতিক তৎক্ষনাৎ সায়রের পা বরাবর একটা গু’লি করে দেয়, গু’লির আওয়াজে গগন কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে সায়র। এলিসা অর্নব ওরাও ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে ক্রীতিকের দিকে। নিজের বন্ধুকে এভাবে উইথআউট ও’য়ার্নিং গু’লি করাতে এলিসার বাবাও খানিকটা ভরকে গিয়েছে মনে মনে ভাবছে,
— এই ছেলে যে যখন তখন এলিসাকে গু’লি করে দেবে না, তার কোনো গ্যারান্টি নেই।
চারিদিকে গুমোট পরিবেশ বিরাজমান। ক্রীতিক এলিসাকে নিয়েই এক পা দু’পা করে মেইন গেইটের কাছে চলে এসেছে। সায়র এখনো বসে বসে কাঁদছে, ক্রীতিক অর্নবকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই অর্নবও ধীরে ধীরে দরজার কাছে চলে যায়, ওদিকে এলিসার মাথায় গা’ন পয়েন্ট করে রাখায় এলিসার বাবা নরতেও পারছে না চরতেও পারছে না, অর্নব কাছে এগিয়ে আসতেই ক্রীতিক স্পষ্ট বাংলায় বলে,
— দরজার গুপ্তমন্ত্র বদলে ফেল অর্নব।
ক্রীতিকের কথার আগামাথা বুঝতে না পেলে, অর্নব ভ্রু কুঁচকে বললো,
— কি বদলে ফেলবো?
— গুপ্তমন্ত্র, গুপ্তমন্ত্র, দরজার গুপ্তমন্ত্র।
অর্নব বিরক্ত হয়ে বললো,
— আরে ভাই গুপ্তমন্ত্রটা আবার কি?
ক্রীতিক দাঁত কটমটিয়ে বললো,
— ইংলিশে যদি বলি দরজার পাসওয়ার্ড চেঞ্জ কর তাহলে তো ওরা বুঝে যাবে ছাগল।
ক্রীতিকের কথায় অর্নব দ্রুত পাসওয়ার্ড বদলানোর কাজে লেগে পরে, ওদিকে অর্নব কে বুঝাতে গিয়ে, এলিসার বাবা সহ সকলেই ক্রীতিকের পালানোর উদ্দেশ্য ধরে ফেলেছে, তাই তারাও ধীর পায়ে ওদের ধরার জন্য এগিয়ে আসছে, সায়র এখনো পা ধরে বসে বসে কাঁদছে।
— ডান।
অর্নব শব্দটা উচ্চারণ করতেই দ্রুত দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যায় ওরা তিনজন, যাওয়ার আগে দরজা ঠেলে সায়রের উদ্দেশ্যে ক্রীতিক চেঁচিয়ে বললো,
— দ্রুত আয় গাঁধা তোর পায়ে কিছু হয়নি, তাকিয়ে দেখ গু’লিটা প্যান্টে লেগেছে।
ক্রীতিকের কথা কানে পৌঁছাতেই সচকিত হয়ে তখনি তরিৎ বেগে দৌড়ে দরজার বাইরে চলে এলো সায়র। এবং আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে দরজাটা সশব্দে লাগিয়ে দিলো ক্রীতিক। যেহেতু অর্নব পাসওয়ার্ড বদলে দিয়েছে তাই এলিসার বাবা সহ ক্লাবের সবাই কক্ষের মধ্যেই আটকা পরে গিয়েছে। বাইরে এসে এলিসাকে ধা’ক্কা মে’রে অর্নবের বুকে ঠেলে দিয়ে সায়রের হাত টেনে, ওকে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো ক্রীতিক।
হঠাৎ এলিসাকে এতো কাছে আবিষ্কার করে ওর গালে টুপ টুপ করে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিলো অর্নব। এলিসা বিরক্ত হয়ে কটমটিয়ে কিছু বলবে তার ফুরসত না দিয়েই ওর হাত ধরে অর্নব ও দৌড়াতে লাগলো স্ব গতিতে ।
পেছনে একবার চোখ ঘুরিয়ে পর্যবেক্ষন করে দৌড়াতে দৌড়াতেই ক্রীতিক বললো,
— তারাতারি চল, অরু ভিলাতে একা আছে।
সায়র ছোটার গতি কমিয়ে দিয়ে বললো,
— তারাতারি যাওয়ার কি আছে ভাই, অর্নব তো পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিয়ে এলো।
ক্রীতিক অর্নবের দিকে তাকিয়ে শুধালো,
— অর্নব কঠিন পাসওয়ার্ড দিয়েছিস তো?
দৌড়াতে দৌড়াতেই অর্নব মিনিমিনিয়ে জবাব দিল, তারাহুরোয় মাথায় কিছু আসেনি তাই এলিসার নাম দিয়ে এসেছি।
অর্নবের কথায় ওরা সবাই আহাম্মক বনে গেলো, ক্রীতিক দাঁত কিরমির করে বললো,
— ইডিয়েট, আগে বলবি না? জলদি দৌড়া।
ক্লাবের নিচেই বাইক রাখা ছিল, একটা বাইকে ক্রীতিক আর সায়র উঠে পরে, অন্যটাতে এলিসা আর অর্নব। অর্নব রাইড করতে পারেনা,তাই এলিসাই ওদের বাইকটা রাইড করছে।
রাইড করে কিছুদূর যেতেই পুলিশে কল দিয়ে সায়র নিজের নাম পরিচয় গোপন করে ক্যা’সিনো ক্লাবের ঠিকানা দিয়ে দিয়েছে। ওরা এখন পুরোপুরি আশঙ্কা মুক্ত ব্যাপারটা বুঝে আসতেই, বাইকে বসেই গুনগুনিয়ে গান ধরেছে সায়র। ক্রীতিক রাইড করতে করতেই বললো,
— কিরে, এমন একটা সময় তোর গানও মনে পরছে? একটু আগেই তো ভ্যা ভ্যা করে মেয়েদের মতো কেঁদে ফেলেছিলি।
— তা কাঁদবোনা? তুই কিভাবে পারলি আমাকে পয়েন্ট করে গু’লি ছু’ড়তে?
— তোর গায়ে তো আর লাগেনি।আমার নিশানার উপর আমার কনফিডেন্স আছে।
— কি করে শিখলি এতো ভালো গান পয়েন্টিং?
ক্রীতিক মৃদু হেসে বললো,
— মন্ত্রীর ছেলে বলে সেল্ফ প্রটেকশনের জন্য বাবা স্পেশাল ট্রেইনার দিয়ে শিখিয়েছিলেন।
ক্রীতিকের কথায় সায়র ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়ালো।
বাংলাদেশের কথা মনে পরতেই সব রেখে ক্রীতিকের মস্তিষ্কে হানা দেয় শুধু মাত্র অরু, অরুর কথা মাথায় আসতেই ক্রীতিক বলে,
— সায়র ধরে বস।
— আমাকে কি তোর মেয়ে মনে হয়? যে সিনেমাটিক ওয়েতে ধরে বসবো?
— না ধরলে নাই।আমি জাস্ট ওয়া’র্ন করলাম।
কথাটা বলেই হাওয়ার বেগে বাইকের স্পীড বাড়িয়ে দিলো ক্রীতিক। সঙ্গে সঙ্গে ওর কোমড় চেপে ধরে সায়র কাঁপতে কাঁপতে বলে,
— একটু স্পীড কমা ভাই, ভয় করছে। বমি করে দেবোতো।
— পসিবল না অরু একা আছে। এই বলে আবারও ফ্লাই ওভারে টার্ন নিলো ক্রীতিক।
*****************************************
সামনে পেছনে চারিদিকের সবকিছু ঘোলাটে লাগছে, মাথাটা চলন্ত ফ্যানের ন্যায় ভনভন করে ঘুরছে। পেটের মধ্যে নাড়িভুড়ি দলা পাকিয়ে গলার কাছে চলে এসেছে। হাত পা থরথরিয়ে কাপছে। বাইক থেকে নেমে হেলেদুলে কেবলই নিজের রুমে এসেছে সায়র, তবুও এখনো হৃদপিন্ডটা কেমন ধুকপুক করছে ওর। হাই স্পীডে বাইক রাইড দিয়ে ওকে এক প্রকার রোগী বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে ক্রীতিক। রুমে এসে মনেমনে ক্রীতিকের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে সায়র, হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে জোরে শ্বাস নিতে নিতেই কটমট করে সায়র বললো,
—কোন অলক্ষুণে ওর মতো মানুষ আমার বন্ধু হয়েছিল কে জানে? কখনো ঠাস করে গু’লি মে’রে দিচ্ছে, তো কখনো বাইকে চড়িয়ে কলিজা হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে, সাইকো একটা। সায়র কথাটা শেষ করতে পারলো না, তৎক্ষনাৎ ধাপ ধাপ করে দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে ওর কলার চেপে ধরে ক্রীতিক দাঁতে দাঁত পিষে বললো,
— আমার অরু কই?
আচমকা আ’ক্রমণে লাফিয়ে উঠে বসলো সায়র কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো,
— তোর সমস্যা কি জেকে? অরু হারিয়ে গেলেই তুই সব সময় আমাকে তে’ড়ে আসিস, কেন ভাই? আমিকি তোর অরুকে পকেটে লুকিয়ে রাখি? তারপর নিজের পকেট ক্রীতিকের চোখের সামনে ধরে বললো,
— দেখ, এই দেখ কোথাও তোর অরু নেই।
সায়রের ফাজলামো গায়ে না মেখে ক্রীতিক পুনরায় শুধালো,
— দেখেছিস কিনা সেটা বল।
ক্রীতিকের অ’গ্নিমূর্তি লক্ষ্য করে, শুষ্ক ঢোক গিলে এদিক ওদিক মাথা নাড়ালো সায়র।
ক্রীতিক সায়রকে ছেড়ে এলিসা আর অর্নবের দরজায় গিয়ে সশব্দে কড়া নাড়লো। ওরা ও মাত্রই রুমে প্রবেশ করেছিল, ক্রীতিকের ডাকে দ্রুত বেরিয়ে এসে এলিসা শুধালো
—কি হয়েছে জেকে?
এলিসার মুখটা মলিন, নিজের বাবার বি’পদের কথা চিন্তা করতে গিয়ে দ্বিতীয়বার ঠকেছে মেয়েটা, বাবার হাতেই ম’রতে ম’রতে কোনো মনে বেঁচে ফিরেছে আজ। তাই নিজের রাগ ঢাক ভেতরে পুরে শান্ত স্বরে ক্রীতিক বললো,
— অরুকে দেখেছিস এলিসা?
এলিসা ভ্রু কুঞ্চিত করে বললো,
— কেন রুমে নেই? এতো রাতে কোথায় যাবে?
— কোথাও নেই দেখেই তো তোদের জিজ্ঞেস করছি।
ততক্ষণে অর্নবও নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে, সবটা শুনে ও বললো,
— চল রিসিপশনে একবার জিজ্ঞেস করে দেখি, কোথাও বেরোলে তো ওখান থেকেই বেরিয়েছে।
অর্নবের কথা যুক্তিসঙ্গত মনে করে, হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে সেদিকেই এগিয়ে গেলো ক্রীতিক।
.
ওরা চারজন রিসিপশনে এসে জানতে পারে খানিকক্ষণ আগেই বেরিয়েছে অরু, কোথায় বেরিয়েছে সেটা তারা জানেনা।
রিসিপশনিস্টের কথায় মাথায় র’ক্ত চড়ে গিয়েছে ক্রীতিকের, মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছে আজ অরুকে পেলে ওর হাতের মা’র খেতে খেতে অরুর খবর আছে।
অর্নব, সায়র এগিয়ে এসে বললো,
— এখন কি করবি?
ক্রীতিক চোয়াল শক্ত করে বললো,
— ইডিয়েট একটা আমাকে চিন্তায় না রাখলে শান্তি হয়না মেয়েটার ,আজ খুঁজে পেলে খবর আছে ওর।
নিজের অর্ধেক বয়সী স্টেপ সিস্টারের জন্য ক্রীতিকের এমন বেসামাল, উদ্বিগ্নতা দেখে আবারও নতুন করে প্রশ্ন জাগে ওদের তিনজনার মনে, কেন এতো উন্মাদনা,কিসেরই বা এতো আসক্তি?
**********************************-*****
প্রায় ঘন্টা খানিক সি-বিচের এ মাথা ওমাথা হাতরে বেরিয়েছে ক্রীতিক। সেই সাথে সায়র অর্নবও অরুকে খুঁজেছে হন্যে হয়ে, রাত তখন প্রায় দশটা ছুঁই ছুঁই। চারিদিকের ঘুটঘুটে আঁধার ছাপিয়ে সাগরের তীর আলোকিত হয়ে জ্বলছে সোডিয়ামের নিয়ন আলো, নিস্তব্ধতায় ঘেরা সমুদ্রতীরে ঢেউয়ের গর্জন ভেসে আসছে বারেবারে, রাত গভীর হয়ে যাওয়ায় একে একে মানুষ ফিরে গিয়েছে স্ব গন্তব্যে, ক্রীতিকের বেজায় অস্থির লাগছে চোখ দুটো বারবার এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে, এভাবে ঘুরপাক করতে গিয়েই ওর চোখ আটকে যায় অদূর থেকে হেঁটে আসা লম্বা চুলের মেয়েটার দিকে। ক্রীতিক চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারে ওই মেয়েটাই অরু। তাই ও আর স্থীর না থেকে হনহনিয়ে হাঁটা ধরলো অরুর পানে। অনেকটা দূরত্ব ঘুচে গিয়ে ক্রীতিক যখন পুরোপুরি অরুর মুখোমুখি,ঠিক তখনই ক্রীতিককে দেখতে পেয়ে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো অরু। অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো অজানা আ’তঙ্কে। মনেমনে ভাবলো,
— আজ আমি শেষ। রিপ অরোরা শেখ।
অরুর পেছনে আরও দুইটা থাই মেয়ে ছিল হাতে তাদের ঘুড়ি আর লাটাই। ক্রীতিক তাদেরকে এক নজর পরখ করে অরুর কাছে এসে ওকে সজোরে চ’ড় মা’রতে উদ্যত হয়েও থমকে যায়, উল্টে দু’হাত দিয়ে টান মে’রে আচমকা টেনে নেয় নিজ বুকের মধ্যিখানে।
এক্ষুনি গালে চ’ড় হামলে পরবে, সেই ভ’য়ে চোখ মুখ খিঁচেই রেখেছিল অরু। কিন্তু কিছু সময় যেতেই শরীরে শিহরণ জাগানো সেই স্যান্ডাল উড পারফিউমের ঘ্রানটা নাকের খুব কাছে অনুভব হতেই পিটপিট করে চোখ খুললো ও।আবারও একই ঘোর লাগানো অনুভূতি, ক্রীতিকের শরীরের শুকিয়ে যাওয়া ঘাম, পারফিউম, ধুলোবালি মিশ্রিত এই মাতাল মাতাল পুরুষালি সুঘ্রাণটা কিছুতেই সহ্য করতে পারেনা অরু, হাত পা কেমন অসার হয়ে আসে, কান গাল সব কিছু ছুঁয়ে যায় অজানা উষ্ণতায়। বারবার বেসামাল হয়ে ওঠে ভেতরের সুপ্ত নারীসত্তাটা। অথচ ক্রীতিক ওকে নিজের বুকের মাঝে এমন ভাবে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে যে ক্রীতিকের শরীরের নেশা ধরানো সুঘ্রাণটা ক্রমাগত অরুর হৃদয়ে গিয়ে ঠেকছে। খানিকক্ষণের নিরবতা ভেঙে ক্রীতিক উদ্বিগ্ন সুরে শুধালো,
— অরু তোর বয়স কতো?
কোথায় গিয়েছিলি, কেন গিয়েছিল, কিভাবে গিয়েছিলি কোনোরূপ প্রয়োজনীয় প্রশ্ন না করে এমন একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করায়, অবাক হয়ে মুখ উঁচিয়ে ক্রীতিকের চোখের দিকে চাইলো অরু। পরক্ষণেই ওর চোখ গেলো ক্রীতিকের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আরও তিন জোড়া চোখের দিকে, যারা এই মূহুর্তে রিয়েলিটি শো দেখার মতো করে অষ্টাদশীর প্রেমে বেসামাল হয়ে ওঠা জায়ান ক্রীতিক চৌধুরীকে দেখছে।
সবাইকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অরু মুখ কাচুমাচু করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
— ছাড়ুন সবাই কি ভাবছে।
— আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি অরু।
ক্রীতিকের স্পষ্ট আদেশে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অরু বলে,
— আঠারো বছর, ছয়মাস, তেরোদিন। এবার ছাড়ুন।
— পার্ফেক্ট।
নিজেকে ছাড়াতে গিয়ে অরুর চোখ গেলো এবার ক্রীতিকের পায়ের দিকে, গোড়ালি থেকে খানিকটা উপরে ফোল্ড করা ডেনিম প্যান্ট পরে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্রীতিক। তা দেখে সঙ্গে সঙ্গে অরু বলে ওঠে,
— একি আপনার জুতা কোথায়?
পেছন থেকে হাঁক পেরে একজোড়া স্নিকারস দেখিয়ে সায়র বলে,
— এই যে আমার হাতে।তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমরা একটু পা’গল পা’গল হয়ে গিয়েছিলাম কিনা।
অরু দ্রুত সায়রের সামনে গিয়ে মিনতির সুরে বললো,
— সরি ভাইয়া আপনারা কেউ ছিলেন না বলে, না বলেই বেরিয়ে এসেছিলাম। আমি রিসিপশনিস্ট কে বলে এসেছিলাম কিন্তু উনি আমার ইংলিশ পুরোপুরি বুঝতে পারেনি বোধ হয় ।
— অরু যা, এলিসার সাথে রিসোর্টে গিয়ে ঘুমিয়ে পর।
এমনিতেই মাঝরাতে সবাইকে চিন্তাগ্রস্থ করে ছেড়েছে, তাই ক্রীতিকের কড়া আদেশে আর নাকোচ করতে পারেনি অরু চুপচাপ চলে গিয়েছে এলিসার হাত ধরে।
ওদিকে সায়র, অর্নব আর ক্রীতিক বসে পরেছে উত্তাল ঢেউয়ের মুখোমুখি হয়ে, আজ বোধ হয় ওরা আর ঘুমাবে না।
চলবে…..
#সঙ্গিন_প্রনয়াসক্তি🍁🍁
#পর্বঃ২০
#লেখনীতে_suraiya_rafa
[ক’পি করা নিষিদ্ধ 🚫]
[শুধুমাত্র প্রাপ্তমনস্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য]
[ আগেই বলে রাখছি গল্পের নায়ক ট’ক্সিক]
নিশুতিরাতে জোয়ার ভাঁটার উদ্যম গতি আর সামুদ্রিক ঢেউয়ের বিশাল গর্জনে চারিদিক অপার্থিব লাগছে। মাঝরাতের পরও কেটে গিয়েছে আরও কয়েক প্রহর। রাত জাগা পানকৌড়ি গুলো এখনো চিঁউচিঁউ করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো বেলাভূমি জুড়ে। চোখের সামনে জ্বলছে ফায়ারপ্লেসের দাউদাউ অ’গ্নিশিখা, সেথা থেকেই কাঠকয়লা পো’ড়ানো মটমট আওয়াজ ভেসে আসছে। ক্রীতিকের ভাসা ভাসা চোখ দুটোতে জলন্ত অ’গ্নিশিখার প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান। সায়র ফায়ারপ্লেসের আ’গুনে আরও কয়েকটা কাঠের টুকরো দিয়ে ক্রীতিক আর অর্ণবের মুখোমুখি হয়ে বসে পরলো। অতঃপর নিজেদের মনের হাজারো কৌতুহল মেটাতে সায়র যখন ক্রীতিককে কিছু প্রশ্ন করতে যাবে, ঠিক তখনই অর্নব ওকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বোঝায়,
— আমি জিজ্ঞেস করছি।
ক্রীতিক তখনও আপন মনে জ্বলন্ত অ’গ্নিশিখার হেলদোল পরখ করায় ব্যাস্ত। অর্নব ওকে ডেকে বলে,
— সবাইকে রেখে অরুর প্রতিই এতো অবসেশট কেন তুই?
ক্রীতিক নিস্প্রভ চোখে জবাব দেয়,
— আই ডোন্ট নো!
অর্নব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— আচ্ছা কবে থেকে এসব শুরু হয়েছে সেটা তো বল? তাছারা ওর জন্যে যদি তোর এতোই টান তাহলে বাংলাদেশে যাসনা কেন তুই?
ক্রীতিক একটু উপহাস করে হেঁসে বললো,
— কে বলেছে ওর জন্য আমার টান? ও আমার আসক্তি। মানুষ জানে নে’শা খারাপ জিনিস, তবুও নে’শাগ্রস্থরা নে’শা ছাড়তে পারেনা, অরুও আমার কাছে নে’শার মতোই , আমি জানি ওর আমার সম্পর্কে আগুন পানি সম জটিলতা তবুও ওকে আমার চাই।এট এনি কস্ট।
সায়র পাশ থেকে বলে ওঠে,
— তাহলেতো তুই অরুর প্রেমে পরেছিস।
ক্রীতিক কপট হেসে জবাব দেয়,
— এগারো বছরের বাচ্চা মেয়ের প্রেমে কে পরে ভাই?তবে হ্যা,আ’ম সিওর, আমি বাংলাদেশে থাকলে এতোদিনে অরু আমার বাচ্চার মা হয়ে যেতো । ওই জন্যই তো দেশে যেতাম না, কারণ ওর কাছে গেলে নিজেকে সামলানো, উত্তাল সাগরে পাল তোলা ডিঙি নৌকা সামলানোর মতোই মুশকিল।
সায়র আর অর্নব হতভম্ব হয়ে ক্রীতিকের পানেই চেয়ে আছে, দু’জনের মনেই একই প্রশ্ন কি বলছে এই ছেলেটা?
ওদের চোখে হাজারো কৌতুহলের ছড়াছড়ি দেখে, ক্রীতিক ভাবতে থাকে, ঠিক কবে নাগাত শুরু হয়ে ছিল সবকিছু, তারপর খানিকক্ষণের নিরবতা ভেঙে বলতে শুরু করে,
— অরু যখন প্রথম ক্রীতিক কুঞ্জে আসে, তখন আমি সবে সবে কলেজ পাশ দিয়ে ভার্সিটিতে উঠেছি মাত্র। তখন আমার কাছে জীবন মানে, আভিজাত্য, কতৃত্ব,পাওয়ার এসবই। কারণ ছোট বেলা থেকেই আমাকে এটাই শিখানো হয়েছে, যোগ্য উত্তরাধিকারী হতে গেলে পূর্ব পুরুষদের পথ অনুসরণ করো। আমিও তাই করেছি। ছোট বেলা থেকেই ন্যানি, ট্রেইনার,মাস্টার এদের কাছে লালিত পালিত হতে হতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম পরিবার বলে কিছু হয়,তারপর যখন একটু ম্যাচিউর হই, তখন প্রতিপত্তি আর ক্ষমতার জোরে আশেপাশের সবাইকে নিজেই কট্রোল করতে শুরু করি, আমার হাতের ইশারাতে সবাই যখন পুতুলের মতো নাচতো তাতে আমার অন্তরে পৈচাশিক আনন্দ হতো। তখন থেকেই ডমিনেটিং স্বভাবটা ভেতরে ঢুকে গিয়েছে, যা এখনো বদলাতে পারিনি আমি।
কলেজে ওঠার পর পারিবারিক সূত্রেই আমার রাজনৈতিক হাতেখড়ি হয়। প্রথম প্রথম বাবা বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান,সভা সমাবেশে নিয়ে গেলেও পরক্ষণে বাবার হয়ে আমারই যেতে হতো,একপর্যায়ে বাবা নয় সয়ং আমার জন্যই আমাকে যেতে হতো। ততদিনে প্রফেসর হওয়া, বিজনেস সামলানো কিংবা আমার শখের রাইডিং সব কিছুই ছিল দিবাস্বপ্ন মাত্র। কারন আমার ধ্যান,জ্ঞান সবকিছুই তখন রাজনীতিতে নিবদ্ধ।তখন মনে হতো, নিজে প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়েও ক্ষমতার জোরে পাবলিক ভার্সিটিতে লিড দেওয়ার মতো পৈশাচিক তৃপ্তি আর কিছুতে নেই।
বাইরের জগতে এতো সুনাম, এতো জনপ্রিয়তা, এতো স্বজনপ্রীতি লোকেদের ভীড়েও দিন শেষে আমি ছিলাম নিঃসঙ্গ , যার উদরে আমার জন্ম হয়েছিল, যে খুব ছোট্ট বেলায় আমাকে ফেলে নিজের আত্মতৃপ্তির উদ্দেশ্যে নিজ দেশে পারি জমিয়েছিল,সেই বিদেশিনী মাকে বরাবরই ঘৃণা করে এসেছি আমি, তার সাথে মায়ের জাতি টাকেও। কেনো যেন আত্মিক টান কখনোই ছুঁতে পারেনি আমাকে, হয়তো ছোট থেকেই মায়ের মমতাহীন বেড়ে ওঠা সেজন্য । এভাবেই হাজারো মানুষের বেস্টনে একাকী, বিষন্ন জীবনটা ভালোই যাচ্ছিল । অনায়াসে দিন পার করে দেওয়ার মতো অনেক ব্যাস্ততাই ছিল তখন আমার কাঁধে। কখন বাড়িতে ফিরতাম, কখন বেরিয়ে যেতাম কেউ তার হদিস জানতো না। বলতে গেলে আমাদের পরিবারটা দিনকে দিন রাজনীতি প্রাঙ্গনে পরিনত হচ্ছিল, একই বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও কেউ কারও খোজ নিতাম না আমরা।
এক পর্যায়ে পরিবারের এরূপ ভাঙন লক্ষ করে দাদাসাহেব মৃ’ত্যু সজ্জায় এসে বাবাকে আবারও বিয়ে করতে বলেন। দাদার কথা রাখতে বাবাও সেই বয়সে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঠিক তখনই আমার সৎ মায়ের সাথে পরিবারে আগমন ঘটে আরও দুই সদস্যের অরু আর অনু।
ওদের বাবার সম্মন্ধে আমার কিছুই জানা নেই। জানা থাকার কথাও না, কারণ বাবার বিয়ে নিয়ে আমার কোনোরূপ মতামত ছিল, না আমার এসবে কিছুই আসে -যেত।আর কিভাবেই বা আসবে? পরিবার কি জিনিস সেতো আমি জানিই না। ওরা ওদের মতো দিন কাটাতো,পড়াশোনা করতো আর আমি আমার মতো। ওই সময় অরুর দিকে ঠিক করে কখনো তাকিয়েছিলাম কিনা সেটাই বলা মুশকিল । যদিও বা কখনো সামনে পেয়েছি ধরে ঠাস ঠাস করে থা’প্পড় মেরেছি। তবুও আমার রুমে সারাক্ষণ উঁকি ঝুঁকি দিতো মেয়েটা, সুযোগ পেলেই রুমে এসে এটা-ওটা ধরতো। মাঝেমধ্যে তো বিরক্ত হয়ে খুব মা’রতাম।
ক্রীতিকের কথার মাঝে হুট করেই সায়র ফোড়ন কেটে বলে,
— তুই কিরে, এখন যার জন্য দিওয়ানা হয়ে ছটফট করিস, তখন তাকে এভাবে মা’রতিস?
ক্রীতিক মৃদু হেসে বলে,
— আই উইশ, অরু আগের মতো এখনো আমার রুমে উঁকি ঝুঁকি দিতো।
— আর তুই ওঁকে ঠাস ঠুস করে মা’রতিস।
অর্নব সায়রকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
— আহা! থামতো তুই, জেকে তারপর কি হয়েছিল?
ক্রীতিক পুনরায় বলতে শুরু করে,
— অরুর মা সুদক্ষ এবং স্মার্ট মহিলা ছিল, যার জন্য বাবার সাথে ব্যাবসায়িক কাজে বিভিন্ন যায়গায় যেতেন তিনি, বলতে গেলে বাবাকে সাহায্য করার জন্যই, তবে আমার সাথে তার খুব একটা সাভাবিক সম্পর্ক ছিলোনা,যার দরুন সপ্তাহে একবারও আমাদের মুখ দেখাদেখি হতোনা, যদি হতো সেটাও অরুর জন্য, অরুকে মা’রলে সেটা নিয়ে নালিশ যেত বাবার কাছে।
বিপরীতে বাবার থেকে পেতাম হাজারটা তিরস্কার আর ভ’ৎসনা। এসবের কারনে মনে মনে জিদ হতো অরুর প্রতি,জিদের বসে দ্বিতীয়বার আমার রুমে এলে আরও বেশি করে মে’রে দিতাম ওকে।
এরকম যেতে যেতে বছর খানিক চলে যায়, তারপর একদিন, এটুকু বলে থেমে যায় ক্রীতিক,
সায়র, অর্নব দুজনই উৎকন্ঠা নিয়ে শুধালো –তারপর একদিন?
এবার ক্রীতিক নিজেও ভাবতে থাকে সে রাতের কথা,
পূর্নিমা রাত,আকাশে রূপোর থালার মতো মস্তবড় চাঁদ উঠেছে।চাঁদের নিয়ন আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারিপাশ। ক্রীতিক কু্ঞ্জের মহলের ছাঁদটার আয়তন ছোট্টখাটো ফুটবল খেলার মাঠের মতোই বৃহৎ। জোছনা রাতে মায়ের অনুমতি সাপেক্ষ ছাঁদের পাঁচিল থেকে আচারের বয়াম গুলো ঘরে আনতেই ছাঁদে এসেছিল অরু। তখনই পাঁচিল ঘেষে দাড়িয়ে থাকা পুরো দস্তুর কালো দিয়ে আবৃত লম্বা মতো কাউকে দেখতে পেয়ে, অকস্মাৎ ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে অরু। তবে গলার স্বর বাইরে বেরোনোর আগেই শক্ত হাতে ওর মুখ চে’পে ধরে ক্রীতিক। অরু থেমে গিয়ে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই ক্রীতিক গম্ভীর গলায় বলে,
— তুই এখানে কেন?
ক্রীতিকের কথায় উত্তর না দিয়ে অরু,মিনিমিনিয়ে বলে,
— আপনার তো জ্বর এসেছে, হাতটা কেমন আ’গুনের গোলার মতো গড়ম হয়ে আছে।
ক্রীতিক অরুর শরীরে একপ্রকার ধা’ক্কা দিয়ে বলে,
— জ্বর আসলে তোর কি? যা করতে এসেছিস সেটা করে নেমে যা, জ্ব’রের ঘোরে তোকে দেখতে ইচ্ছা করেনা।
ক্রীতিকের রগচটা সভাব চরিত্র সবকিছুই অরুর জানা, তাই ও আর না বারিয়ে চুপচাপ আচারের বয়াম নিয়ে ছাঁদ থেকে নেমে যায়।
***************************************
মাঝরাত, কারেন্ট থাকা সত্বেও রুমের চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। জ্বরের ঘোরে অন্ধকার রুমে শুয়েই থরথর করে কাঁপছে ক্রীতিক। সন্ধ্যা রাতে দুই দুইটা প্যারাসিটামল খেয়েও কাজ হয়নি,উল্টে হাড়কাঁপিয়ে দিগুণ তালে জ্ব’র উঠেছে। পার্টির লোকেদের থেকে বারবার কল আসাতে মোবাইলটাও বন্ধ করে রেখেছে ও। অনেক বেশি জ্বরের তোপে অন্ধকার রুমের মাঝেই জোনাকিপোকা দেখছিল ক্রীতিক।ঠিক তখনই গভীর তিমিরকে হটিয়ে একটা মোমবাতি সমেত রুমে প্রবেশ করে কিশোরী অরু। পরনে তার কালো রঙের কামিজ মাথায় আধটানা ঘোমটা। ক্রীতিক তখনও জ্বরের তোপে বারবার দীর্ঘশ্বাস ফেলছিল, অরু মোমটা নিয়ে রুমের মাঝে এগিয়ে এসে নিজে থেকেই বললো,
— বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে, জেনারেটর ও নস্ট হয়ে পরে আছে, আপনার তো জ্বর তাই ভাবলাম মোমবাতি নিয়ে আসি।
— মোমবাতির প্রয়োজন নেই আমি অন্ধকার ভালোবাসি, তুই যাতো।
ক্রীতিকের এহেন ধমকেও অরু যায়না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে ওর পাশ ঘেঁষে। অরুকে অনেকক্ষন যাবত দাড়িয়ে থাকতে থেকে ক্রীতিক হাস্কি স্বরে নাক টেনে বলে,
— কি হলো যাচ্ছিস না যে? আবারও মা’র খাওয়ার শখ জেগেছে? শখ জেগে থাকলে কাছে আয় থা’প্পড় দিচ্ছি।
অরু মুখ কাঁচুমাচু করে বলে,
— মা আঙ্কেলের সাথে শহরের বাইরে গিয়েছে,মামির অসুখ শুনে সকাল সকাল আপাও নানা বাড়ি গিয়েছে, বলেছিল বিকেলের মধ্যে ফিরবে কিন্তু ফেরেনি, এখন আবার কারেন্টও নেই, আমার অন্ধকারে ভয় করছে ভাইয়া, এখানে একটু দাঁড়িয়ে থাকি, কারেন্ট এলেই চলে যাবো।
অরুর আকুতিভরা টলটলে চোখের দিকে একপলক তাকিয়ে নিজে একটু সরে গিয়ে অরুর জন্য বিছানাতেই যায়গা করে দিলো ক্রীতিক। অরুও টু শব্দ না করে ভয়ে ভয়ে সেখানটায় গিয়ে বসে পরে।
ক্রীতিক চোখ দুটো বন্ধ রেখেই অরুর উদ্দেশ্যে বলে,
— ভালো করে বস মা’রবো না।
অরু এবার ভালোভাবেই বসে, হাতে থাকা জলপট্টিটা ক্রীতিকের কপালে রেখে দেখে দেয়।
ক্রীতিক ভ্রুকুটি করে চোখ উল্টে সেটার দিকে তাকিয়ে বললো,
— এটা কি দিয়েছিস?
অরু জানায়,
— জ্বর হলে মা আমাদের মাথায় এটা দিয়ে রাখে, এতে অনেকটা আরাম লাগে,আপনি অন্ধকারে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলেন, মনে হলো আপনার এটা প্রয়োজন তাই নিয়ে এসেছি।
অরুর কথা শুনে ক্রীতিক ওর মুখের পানে চাইলো,গত দের বছরে আজই বোধ হয় প্রথম ঠিকভাবে অরুর মুখের দিকে চাইলো ক্রীতিক,
সদ্য কিশোরীতে রূপ নেওয়া কচি একটা চেহারা। টিমটিমিয়ে জ্বলতে থাকা মোমের হলদে আলোও ওর চেহারাটা অস্পরীর মতোই সুন্দর লাগছে তীব্র জ্বরের ঘোরে থাকা ক্রীতিকের নেশালো চোখ দুটোতে। হুট করেই কেন যেন মনে হচ্ছে অরুর মতো মায়াবী মুখ পৃথিবীতে আর দুটো নেই।
ক্রীতিককে চুপচাপ তাকিয়ে থাকতে দেখে অরু ঠোঁট কামড়ে একটু এগিয়ে এসে জলপট্টিটা আবারও উল্টে দিলো।
— আমার জন্য কেন করছিস এসব?
ক্রীতিকের অজ্ঞাত প্রশ্নের উত্তর নেই অরুর কাছে, কিইবা বলবে ও? দেখছে মানুষটা জ্বরে পু’ড়ে যাচ্ছে, অথচ কাউকে মুখ ফুটে বলছেনা অবধি , একা একাই কষ্ট সহ্য করছে, তাইতো হাতে করে জলপট্টিটা নিয়ে আসা।
— কি হলো, কিছু বল?
অরু আস্তে করে জবাব দেয়,
— আপনার জন্য কষ্ট হচ্ছিল তাই।
ক্রীতিকের মতো পরিবারচ্যুত, বেপরোয়া, বেখেয়ালি, মায়ার বাঁধনহীন ছেলের কাছে অরুর অযাচিত মনে মুখ ফসকে বলা এই বাক্যটা ছিল আকাশসম আন্তরিকতা। অরুর কথায় অধিক তাপমাত্রায় দা’উদাউ করে জ্বলতে থাকা হৃদয়টা হঠাৎ করেই কেমন শীতল হয়ে গেলো, উল্টে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো দিগুন তালে।হুট করেই মনে হতে লাগলো অরু ওর আপন, খুব আপন।
অরুর দিকে তাকিয়ে হিজিবিজি ভাবতে ভাবতেই কখন যে বিদ্যুৎ চলে এসেছে টের পায়নি ক্রীতিক,টের পাওয়ার কথাও নয়,কারন এই রুমে এখনো আলো জ্বলছে না, বাইরের ঘরে মৃদু আলো জ্বলতে দেখে অরু বলে,
— বিদ্যুৎ চলে এসেছে, এবার আমি যাই।
ক্রীতিক অরুর হাত টেনে ধরে, ঘোর অসম্মতি জানিয়ে বলে,
— কোত্থাও যাবিনা তুই, এখানে বসে থাক আমার সামনে।
— কককেন?
ক্রীতিক হাস্কি স্বরে জবাব দেয়,
— তোকে দেখবো তাই।
ক্রীতিক শক্ত করে অরুর হাত ধরে রেখেছে,
উপায়ন্তর না পেয়ে অরু সেখানেই বসে থাকে সারারাত, একপর্যায়ে ঝিমুতে ঝিমুতে কখন যে ক্রীতিকের বুকের উপরই ঘুমিয়ে পরেছে সেটা অরুর অজানাই রয়ে যায়, অথচ ক্রীতিকের চোখে একফোটাও ঘুম নেই, ও সারারাত জেগে ঘোর লাগা চোখে অরুকে দেখেছে, সময়ের সাথে সাথে মোমের আলো ফুরিয়ে গিয়েছে, তবুও দেখেছে, শেষমেশ অরু যখন ক্রীতিকের বুকেই ঘুমিয়ে পরে, তখন দ্বিতীয়বারের মতো আবারও হৃদস্পন্দন গতি হারায় ক্রীতিকের। ও চোখ দুটো বন্ধ করে হিসহিসিয়ে বলে,
— তুই আমার অরু, খুব তারাতাড়ি বড় হয়ে যা, তোকে আমি দেখবো, সারাজীবন ধরে দেখবো।
*****************************************
সেদিন রাতের পর থেকেই ক্রীতিকের হৃদয়ে বাসা বাধে অরুর প্রতি অজানা এক আসক্তি। যার কোনো নামদাম নেই, শুধু হৃদ মাঝারে বয়ে চলা এক সুপ্ত, গভীর, আর বেসামাল অনুভূতির ছড়াছড়ি । ধীরে ধীরে সবার আড়ালে শুরু হয় অরুর প্রতি নিজের দখলদারি। অরু যে রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতো সেই রাস্তায় সবসময় দুজন লোক লাগানো থাকতো। অরু কার সাথে মিশছে কার সাথে ঘুরছে,বন্ধু মহলে কোনো ছেলের আনাগোনা আছে কিনা সব কিছুরই পাই টু পাই খবর নিতো ক্রীতিক, অরু আম পারতে গিয়ে গাছ থেকে পরে ব্যাথা পেয়েছে বলে,সেদিনই বাপ দাদার আমলের ঐতিহ্যবাহী আম গাছকে কে’টেকুটে বাড়ি থেকে বিদায় করে ক্রীতিক । বাড়ির ঐতিহ্য,বাবা দাদার স্মৃতিকে এভাবে কেটে ফেলায় ছেলের বেপরোয়া কান্ডে জামশেদ জায়ান চৌধুরী ও হতবাক হয়েছিলেন, কিন্তু বলার মতো কিছু নেই তার।কিইবা বলবেন?ছেলে কি তার কথা শোনে?
এভাবে সময়ের পরিবর্তনে সেই আসক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে দিগুণ হারে, স্কুল ব্যাতিত ক্রীতিক কুঞ্জের বাইরে পা রাখা নিষিদ্ধ হয়ে যায় অরুর জন্য। কিশোরী অরুর মাথায় ঢোকেনা, হঠাৎ করেই ক্রীতিক কেন তার উপর এতো অধিকার দেখাচ্ছে। আগেতো কখন আসতো কখন যেত তারই হদিস থাকতো না, আর এখন বাড়িতে কেউ না থাকলেই ক্রীতিককে দেখতে পায় অরু। শুধু দেখতে পায় বললে ভুল হবে, ওকে জোর জ’বরদস্তি করে নিজের সামনে বসিয়ে রাখে ক্রীতিক,চোখের সামনে থেকে সরলেই গালে এসে আঁচড়ে পরে শক্ত হাতের থা’প্পড়। থা’প্পড় খেয়ে অরু কাঁদলে পুনরায় থা’প্পড়।
*****************************************
এভাবেই দিন যাচ্ছিল, সবার অগোচরে ভেতরের সুপ্ত অনুভূতি গুলো তরতর করে বাড়ছিল ক্রীতিকের মাঝে।ক্রীতিকের হুটহাট করা পাগলামিতে বিরক্ত হয়ে আজকাল আর আগের মতো ওর রুমের ধারে কাছেও ভেরে না অরু। মাঝেমধ্যে ওকে একনজর দেখে চলে যাবে বলে,ওর নাম করে ক্রীতিক জোরে জোরে ডাকে, তবুও সেদিকে পা বাড়ায় না অরু।
তবে আজকে দুরুদুরু বুকে সেই আসতেই হলো ক্রীতিকের রুমের সামনে। বাড়ির অফিস রুমে পার্টি অফিসের মিটিং চলছে, সবাই উপস্থিত, অথচ ক্রীতিকের খবর নেই,মোবাইল বন্ধ করে অন্দরমহলে বসে সে কি করছে কে জানে? মিটিং এর মাঝে সবাই তর্ক বিতর্কে ব্যাস্ত, তাই জামশেদ জায়ান চৌধুরী অরুকে ডেকে বলে,
— তোমার ক্রীতিক ভাইয়াকে ডেকে দাওতো অরু।
তার কথা রাখতেই আপাতত ভর সন্ধ্যাবেলা ক্রীতিকের রুমে কড়া নেড়েছে অরু।
অরু কড়া নাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে ওকে হ্যাঁচকা টানে ভেতরে নিয়ে গেলো ক্রীতিক, ভেতরে নিয়ে গিয়ে চোখ রাঙিয়ে অরুর উদ্দেশ্যে বলে,
— গত দুদিন ধরে ডাকছি তোকে?সামনে আসছিস না কেন কি সমস্যা?
অরু মুখ ঝামটি দিয়ে বলে,
— সবসময় বকাঝকা করেন, গায়ে হা’ত তোলেন আপনাকে আমার বিরক্ত লাগে।
— আগেতো মা’রলেও পেছনে ঘুরঘুর করতি তখন বিরক্ত লাগতো না?
— তখন তো বুঝতাম না যে আপনি আমায় এতো অপছন্দ করেন, এখন তো বুঝি আমি আপনার সৎ বোন,তাই আমাকে দু-চোখে দেখতে পারেন না আপনি।
অরুর কথা শেষ হতে দেরি হলো, তবে ওর শরীরে ক্রীতিকের হাত পরতে দেরি হলোনা। ক্রীতিক চোয়াল শক্ত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
— এটা কেন দিয়েছি জানিস? নিজেকে আমার সৎ বোন দাবি করার জন্য, তুই আমার বোন না, আমার বোন হওয়ার কোনো যোগ্যতাই তোর মাঝে নেই। আর না আমি তোকে বোনের নজরে দেখি।
মা’র খেয়ে গালে হাত দিয়ে মেঝেতে বসেই ফুপিয়ে কাঁদছে অরু।
খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ক্রু’দ্ধ মস্তিষ্কটাকে স্থীর করে অরুর মুখোমুখি হয়ে বসে পরে ক্রীতিক, তারপর আলতো হাতে ওর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,
—আ’ম সরি অরু,খুব লেগেছে? কেন আমাকে এভাবে য’ন্ত্রনা দিস বলতো? তুই যখন আরেকটু বড় হবি তখন আমার আজকের কথাগুলি ঠিক বুঝতে পারবি, ততদিন শুধু তোকে একটু দেখে দেখে রাখতে হবে আমার।
ক্রীতিকের মুখে আদুরে আওয়াজ শুনে অভিমানে অরু এবার শব্দ করেই কেঁদে উঠলো,
এভাবে নাক ফুলিয়ে কাঁদায় ওকে অনেক বেশি আকর্ষনীয় আর মায়াবী লাগছিল ক্রীতিকের চোখে, তাই নিজেকে সংযত না রাখতে পেরে হুট করেই ওর গালে সশব্দে চুমু খেয়ে বসলো ক্রীতিক। তবে ওদের বসার ধরনটা এমন ছিল যে, যে কেউ পেছন দিক থেকে দেখলে ভুল বুঝতে পারে, হলোও তাই।
মিসেস আজমেরী শেখ বাড়িতেই ছিলেন সেদিন, ক্রীতিকের রুম থেকে মেয়ের ক্রন্দনরত আওয়াজ শুনেই তিনি বুঝে গিয়েছেন আবারও হয়তো তার ছোট মেয়েটাকে মে’রেছে ক্রীতিক।
তৎক্ষনাৎ তিনি মেয়েকে নিয়ে আসার জন্য ক্রীতিকের রুমের দিকে এগিয়ে গেলেন, তবে রুমে প্রবেশের আগেই পা দুটো আটকে গেলো তার, সন্ধ্যা রাতের আবছা আলোয় তিনি স্পষ্ট দেখেলের তার ছোট্ট মেয়েটার সাথে ঘনিষ্ঠ সময় পার করছে ক্রীতিক।
***************************************
পার্টি অফিসের ছোট বড় সবার সামনে, পরপর অনর্গল থা’প্পড়ের আ’ঘাতে র’ক্তাক্ত হয়ে উঠেছে ক্রীতিকের গৌড় মুখমন্ডল। আর দুটো থা’প্পড় দিলেই হয়তো নাক ফে’টে ফিনকি দিয়ে র’ক্ত বেরিয়ে আসবে।
তবুও কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা জামশেদ জায়ান চৌধুরীকে। রা’গের তোপে থরথর করে কাঁপছেন তিনি, হাতের পাশাপাশি মুখ দিয়ে যা আসছে সেটা বলেই আ’ঘাত করছেন নিজের একমাত্র ছেলেকে। অরু অনু ওর মায়ের আঁচল ধরে রুমের এককোণে কুঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছে।
জামশেদ জায়ান চৌধুরী ওকে মা’রতে মা’রতে ক্লান্ত হয়ে বললেন,
— আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল কোনো আমেরিকান নাচনেওয়ালীর ছেলের চরিত্র এর চেয়ে ভালো আর হবে না।
বরাবরই নিজের মায়ের কথা শুনলে ক্রীতিকের মাথায় র’ক্ত উঠে যায়, উগ্রতার চড়ম সীমানায় পৌঁছে যায় ও,এবারও তাই হলো, চিৎকার দিয়ে নিজের বাবার মুখের উপর বললো,
— তুমিই সেই আমেরিকান নাচনেওয়ালীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলে,যার ফল আমি।
সঙ্গে সঙ্গে জামশেদ জায়ান আবারও ওকে সজোড়ে চ’ড় মারলেন, অতঃপর আশেপাশের চ্যালাপ্যালাদের ডেকে বললেন,
— প্রাইভেট জেটের ব্যাবস্থা করো,আজ এই মূহুর্তে ও দেশ ছাড়বে, স্বাধীনতা পেতে পেতে ওর ভেতরের পুরোটাই নর্দমার মতো কালো হয়ে গিয়েছে, ওকে শুদ্ধ করা প্রয়োজন, তারজন্য সবার আগে ওর স্বাধীনতা হর’ন করতে হবে। আজ এই মূহুর্তে জায়ান ক্রীতিক চৌধুরীর রাজনৈতিক পদ বাতিল করা হলো, তোমার রাজনৈতিক জীবন এখানেই সমাপ্ত। বিদেশে গিয়ে মানুষ হয়ে ফেরো।
বাবার কথার পিঠে ক্রীতিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ছু’ড়ে মা’রে, দলের লোকেদের হাত থেকে নিজের পাসপোর্ট আর ব্যাগটা ছো মে’রে নিয়ে, ছোট্ট অরুর দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও চোখ সরিয়ে বলে,
— ফিরবো না, কোনো দিন ফিরবো না এ দেশে, শুধু একটা গুরুত্বপূর্ন জিনিস রেখে গেলাম, সময় হলে সেটাও নিয়ে যাবো। কারণ ক্রীতিক কোনো জিনিস হাত পেতে নেয়না, কে’ড়ে নেয়।
.
ক্রীতিক যখন গাড়ি করে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো, তখন দোতলার দেওয়াল জোড়া জানালা দিয়ে ওর পানেই অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিল অরু। ক্রীতিকও তাই,ও গাড়িতে বসে ছিল ঠিকই তবে হিং’স্র দপদপে চোখদুটো ছিল দোতলার জানায় নিবদ্ধ।
একপর্যায়ে গাড়িটা যেতে যেতে চোখের আড়াল হয়ে যায়, তবুও সেদিকে তাকিয়ে রয় অরু, কি নিয়ে এতো ঝামেলা হলো সেসব মাথায় না ঢুকলেও এটা ঠিকই বুঝতে পেরেছে ও, আজ ওর জনই বাড়ি ছাড়া হয়েছে বাড়ির একমাত্র রাজপুত্র, জায়ান ক্রীতিক চৌধুরী।
ওদিকে যেতে যেতেই ক্রীতিকের কে’টে যাওয়া ঠোঁট দুটো বাঁকা হাসিতে প্রসারিত হলো, ব্যাক সিটে গা এলিয়ে দিয়েই বিড়বিড়ালো সে,
—love is temporary but obsession is permanent. and I’m da’ngerously obsessed with you aurora seikh. খুব বেশি না, আমাকে সামলানোর মতো একটুখানি বড় হ, আমি অপেক্ষার প্রহর গুনছি…..
চলবে…….