#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|১|
#শার্লিন_হাসান
“একজন আইনের লোক হয়ে বখে যাওয়া মাফিয়াকে দুই বছরের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করতে চাইছ? তাও যে কী’না তোমার অতীত এবং বর্তমানের প্রধান শত্রু!”
পিয়াসার কথায় শার্মিলা মুচকি হেঁসে আয়না থেকে চোখ সরায়। নিজের শাড়ীর কুঁচির দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়, “এই সুযোগ আমি আর পাবো না মিমি। অনেক অপেক্ষার পর এই দিনটা পেলাম। আমাকে তার কাছে পৌঁছাতে হলে এই তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরীকে চাই। এছাড়া, বিয়েটা তো কন্ট্রাক্টে হচ্ছে। কন্ট্রাক্ট শেষ তো দু’জন দু’দিকে পথ ধরবো। আর তুমি কিছুটা হলেও জানো বিয়েটা আমি কেন করছি।”
“ভালো তবে এই বখে যাওয়া মাফিয়া একবার যে নারীকে বেডে নেয় তাকে দ্বিতীয় বার ছুঁয়ে দেখে না।”
“ব্যপারটা আমার কাছে হাস্যকর লাগে মিমি।”
অন্যদিকে,
“সৌন্দর্য তো হলো দুইদিনের মোহ তাই না? আসল তো হলো দৈহিক চাহিদা। সেটা প্রতিদিন পূরণ হলে আরকী লাগে বলুন?”
সোফায় পায়ের উপর পা তোলে কথাটা বলে তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরী। তার সামনে বসে থাকা আজিজুল হক খন্দকার চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছেন। পুরো রুম জুড়ে শুধু নিরবতা। কেউ একটু শব্দ ও করছে না। আজিজুল হক তাইজ্যিনের এসব বেপাশ কথাবার্তা এই মূহুর্তে দাঁতে দাঁত চেপে মেনে নিচ্ছে। তাইজ্যিন জেনো ব্যপারটা বুঝে ইচ্ছে করেই এসব বেশী,বেশী বলছে। আজিজুল হক খন্দকারের অবস্থা বুঝেও না বুঝার ভাণ ধরে তাইজ্যিন। সেসবে পাত্তা না দিয়ে পুনরায় শুধায়,
“আজিজ সাহেব শত্রুর সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে রাজী তো ? একবারে স্বজ্ঞানে উত্তর দিবেন। আমি কী জোর করছি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে? আপনি নিজেই তো আপনার অসুন্দর মেয়ের বিয়ে দিতে পারছেন না বলে আমার মতো সুন্দর একটা ছেলেকে জোর করছেন। আপনি আমার বাবার আস্থাভজন একমাত্র কাছের বন্ধু ছিলেন। তাই তো সেই হিসাবে আপনার কথা ফেলতে পারছি না বলে, দুই বছরের কন্ট্রাক্টে বিয়েটা করছি।”
“তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরী….
কিছুটা চেঁচিয়ে উঠে আজিজুল হক খন্দকার। তার চেঁচানো দেখে তাইজ্যিন শুধায়,
“গলা নিচে খন্দকার সাহেব। আপনার মেয়েকে আনুন। বিয়েটা করে চলে যাই।”
কিছুক্ষণ পর পিয়াসা শর্মিলাকে নিয়ে আসে। লাল টুকটুকে বউ সাজিয়ে আনা হয়েছে শার্মিলাকে। তাইজ্যিনের সামনের সোফায় শার্মিলা বসতে যাবে তখন তাইজ্যিন শার্মিলার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসায়। আশেপাশে কে আছে না আছে সেসবে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। শার্মিলা তাইজ্যিনের থেকে যত দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে,তাইজ্যিন ততো তার গা ঘেঁষছে। শেষে উপায়ন্তর না পেয়ে চুপচাপ বসে রয় শার্মিলা।
তখন হুজুর বিয়ে পড়ানো আরম্ভ করে।
“তাওফিন ইশতিয়াক চৌধুরীর ছোট ছেলে তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরীর সাথে (*******) ছোট মেয়ে শার্মিলা ইবনান শ্রেয়সী ***** টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া……. ” (বাকীটা নিজেরা বুঝে নিবেন। আমার এসবে ধারণা নেই তাই উল্টাপাল্টা লিখতে চাই না)
“কবুল বলো শার্মিলা?”
হুজুরের কথার পৃষ্ঠে কথা লাগিয়ে তাইজ্যিন বলে,
“আধ ঘরওয়ালী বলো কবুল!”
কন্ঠস্বরে কিছুটা নম্রতা। তখন শার্মিলা তার বাবা মায়ের দিকে একনজর তাকায়। চুপচাপ তিনবার “কবুল” বলে নেয়। হুজুর তাইজ্যিনকে কবুল বলার জন্য বলতে যাবে তখন তাইজ্যিন নিজে বলে, “কবুল,কবুল,কবুল। আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে হয়ে গেছে। সবাই মাশাল্লাহ বলুন।”
শার্মিলার কাজিন সিয়া রাগী চোখে তাকিয়ে আছে তাইজ্যিনের দিকে। পিয়াসা পারছে না বর্তমানে তাইজ্যিনকে নিজের চোখের আগুনে ভস্ম করে দেয়। আজিজুল হক খন্দকার চুপচাপ সব দেখে যাচ্ছেন। পাতানো মেয়ের জামাই যে এক নাম্বারের ঠোঁট কাটা হবে সেটা তিনি বুঝে গেছেন। তাইজ্যিনের সাথে আছে তার দাদী তিথিয়া চৌধুরী। বয়স হলেও মুখ দেখে তেমন বুঝা যায়না। নিশ্চয়ই মুখে কত প্রসাধনী ব্যবহার করে নিজেকে গ্লেমার রাখার জন্য সেটা মুখ দেখলেই বোঝা যায়। অবশ্য বড়লোকদের জন্য এসব তেমন কিছুই না।
তখন তিথিয়া চৌধুরী শার্মিলার পাশে এসে বসে। হাত টেনে নিয়ে বালা জোড়া পড়িয়ে দেন। তখন তাইজ্যিন বলে, “ঠিক আছে, আমাদের দুই বছরের কন্ট্রাক্টের বিয়ে হয়ে গেছে আমরা তাহলে আসি।”
কথাটা বলে পকেট থেকে একটা পেপার্স বের করে তাতে সাইন দিয়ে আজিজুল হক খন্দকারের হাতে ধরিয়ে দেয় তাইজ্যিন। শার্মিলার হাত ধরে জোর কদমে মেইন গেট পেড়িয়ে গাড়ীর সামনে আসে। কিছুটা ছুঁড়ে মা-রার মতো শার্মিলাকে গাড়ীতে বসায়। পেছনের গাড়ীতে তার দাদীন আর তার গার্ডস রা আসবে। তাইজ্যিন শার্মিলাকে নিয়ে বসতে ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দেয়। শার্মিলা সে কখন থেকে কান্না করে যাচ্ছে। তাইজ্যিনের বেশ ভালো লাগছে। বিশেষত আজকের আজিজুল হক খন্দকারের মুখের এবং বুকের কষ্ট দেখে অনেকটা প্রশান্তি বয়ে গেছে মনে। শার্মিলার প্রতি তার বিন্দু মাত্র ইন্টারেস্ট নেই।তাইজ্যিন নিজেকে চিল মুডে রাখার জন্য কানে ব্লুটুথ গুঁজে গান শুনছে। পাশে শার্মিলা কান্না করছে তাতে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। বেশ কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর তাইজন্যিন শার্মিলার দিকে তাকায়। চোখমুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। ব্রু জোড়া প্রসারিত করে বুঝার চেষ্টা করছে কান্নাটা আসল নাকী নকল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ঠোঁট কামড়ে হেঁসে তাইজ্যিন শুধায়, “কান্না বন্ধ কোরো সুইটহার্ট! নাহলে এখানেই বাসর টা সেরে নেবো।”
“থোতমা সামলে কথা বল শা’লা নমরুদ! তোর ধ্বংস হবে দেখবি।”
“ছিঃ! কেমন বউ তুমি বাসর করে বাচ্চা কাচ্চা পয়দা করার আগেই স্বামীর ধ্বংস ডেকে আনছ?”
কথাটা বলে তাইজ্যিন পাশে তাকায়। শার্মিলা চোখ গরম করে বলে,
“কথা বলবি না এমনিতে মাথা গরম আছে।”
“আসো আদর দেই।”
“তোর ন আকার না, ন ঈকার নী র… বাকীটা বুঝে নে কঠিন গালি দিয়েছি কিন্তু।”
চোখমুখ শক্ত করে জবাব দেয় শার্মিলা। তাইজ্যিন আর জবাব দেয়না। শার্মিলা পুনরায় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। তাইজ্যিন বিরক্ত বোধ করে। কন্ঠস্বরে তেজ বৃদ্ধি করে শুধায়, “ঘ্যাণঘ্যাণ বন্ধ করবা নাকী গাড়ী থেকে ফেলে দেবো?”
“সাহস থাকলে টাচ করে তো দেখা। গাড়ী থেকে ফেলা তো পরের হিসাব। একবারে ভবিষ্যত অন্ধকার করে দেবো।”
“আজিজুল হক খন্দকার এটা কী মেয়ে আমার গলায় জুলিয়ে দিয়েছে। মেয়েটা দেখতে যত সুন্দর মুখের ভাষা আর তেজ আসতাগফিরুল্লাহ মার্কা। ছিঃ!”
শার্মিলা জবাব দেয়না। মনে,মনে যত ক্ষোভ আছে সব হিসাব করে রাখছে। সময় হলে তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরীকে একদিন বুঝিয়ে দিবে শার্মিলা ইবনান শ্রেয়সী কী জিনিস। আপাতত দাদী,নাতি দুটোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে পারলে ভালো হতো। জানালা দিয়ে বাইরের ব্যস্ত শহরের বড়,বড় দালান দেখছে শার্মিলা। মনে পড়ে এই ব্যস্ত নগরীতেই কোন এক সন্ধ্যা বেলায় তাইজ্যিন চৌধুরীর মুখোমুখি হয়েছিলো সে। তারপর থেকে জ্বালাতন শুরু! শার্মিলা জানতো না এই তাইজ্যিন সেই চৌধুরী পরিবারের ছেলে। যাদের সাথে পুরনো শত্রুতা রয়েছে খন্দকার পরিবারের। সবচেয়ে বড় কথা তাইজ্যিনকে শার্মিলার পছন্দ না। অথচ বিয়েটা তাকেই করতে হলো। দুইজন যে দুই মেরুর মানুষ।
দেখতে, দেখতে চৌধুরী বাড়ীর গ্যারেজে গাড়ী থামে। শার্মিলাকে টেনে গাড়ী থেকে বের করে তাইজ্যিন। ঝড়ের গতিতে নব বঁধু নিয়ে ভেতরে ছুটছে তাইজ্যিন। শাড়ীর কুঁচি সামলে হাঁটতে হিমশিম খাচ্ছে শার্মিলা। তারউপর তাইজ্যিন তাকে এক প্রকার টেনে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। তিথিয়া চৌধুরী হাতে একটা ফুলের থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশে দু’জন দুটো মালা নিয়ে দাঁড়িয়ে। তাইজ্যিনের আম্মু জেসিয়া ইসলাম ভেতরে সোফায় বসে আছেন। তাইজ্যিন তিথিয়া চৌধুরীর থেকে নিজে মালা দু’টো নেয়। একটা শার্মিলাকে পড়িয়ে দেয় আরেকটা নিজে পড়ে নেয়। জানে শার্মিলা তাকে মালা পড়িয়ে দিবে না। পুনরায় শার্মিলার হাত শক্ত করে ধরে তাইজ্যিন। শার্মিলাকে টেনে নিয়ে জেসিয়া ইসলামের পায়ের কাছে একপ্রকার ছুঁড়ে ফেলে। বেশ উত্তেজনা দেখিয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে তাইজ্যিন। জেসিয়া ইসলাম ছেলের দিকে তাকিয়ে রয়। মেঝেতে বসে আছে লাল শাড়ী পরিহিতা একজন কন্যা। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জেসিয়া ইসলাম আর বসে থাকতে পারেননি। উঠে তড়িঘড়ি তাকে উঠিয়ে নিজের পাশে বসান। তখন তাইজ্যিন বলে, “শত্রু পরিবারের ছোট কন্যাকে চৌধুরী বাড়ীর ছোট পুত্রবধু করে নিয়েছি। তা আম্মু ছেলের বউ পছন্দ হয়েছে কীনা দেখো। না হলে বলো নতুন আরেকটা খুঁজবো।”
“তাইজ্যিন চুপ যাও।”
কঠোর গলায় বলেন জেসিয়া ইসলাম। বর্তমানে শার্মিলার বেশ কান্না পাচ্ছে। সাথে রাগ ও হচ্ছে। নিজেকে সামলে নিয়ে নিজেকেই বলে,
“এই কার কাছে আসলাম? কাদের কাছে আসলাম?” পরক্ষণে নিজের মিশনের কথা ভেবে নিজেকে ধাতস্থ করে। তিথিয়া চৌধুরী সামনের সোফায় বসতে,বসতে বলেন, “ওতো আদর দেখিওনা বউমা। আমার নাতি যা বলবে তাই হবে।”
শার্মিলার বেশ বিরক্ত লাগছে তিথিয়া চৌধুরীকে। মাঝখান দিয়ে বা হাত না ঢুকালে হয়না এই মহিলার। তাইজ্যিন চৌধুরীর সব সাহস জেনো তিথিয়া চৌধুরী। তিথিয়া চৌধুরীর সব সাহস জেনো তাইজ্যিন চৌধুরী । তাঁদের দাদী,নাতির কথাই জেনো এই পরিবারের সব।
তখন শার্মিলা তাইজ্যিনের দিকে নজর স্থির করে।
কী নিষ্পাপ চেহারা নিয়ে তাকিয়ে আছে। ঠোঁটের কোণে ওই হাসিটা জেনো সবসময় লেগেই থাকে। তাইজ্যিনের হাসি দেখে শার্মিলার গা পিত্তি জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। তবে মূহুর্তের মাঝে নিজেকে ধাতস্থ করে নেয়।
তাইজ্যিন শার্মিলার দিকে তাকিয়ে মনে এক আকাশ ক্ষোভ নিয়ে আওড়ায়, “তোকে তো আমি এনেছি কেঁচো খুঁড়ে কৌটে বের করার গুটি হিসাবে কাজে লাগাতে। আমার মেয়ের খু’নিদের ধরতে হবে না।”
তাইজ্যিনের তাকানো দেখে শার্মিলা মুচকি হাসে নিচে তাকিয়ে। মনে,মনে আওড়ায়, “চৌধুরী সাহেব আপনার গেমের গুটি যদি গেমের আসল প্লেয়ার হয় তাহলে গেম টা আরো ইন্টারেস্টিং হয়ে যাবে।”
🚫(কপি করা নিষেধ) 🚫
চলবে।