#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|৪|
#শার্লিন_হাসান
🚫(কপি করা নিষেধ) 🚫
কোথায় গিয়েছ?”
“জাহান্নামে! তুমি যাবা?”
“তোর মতো নমরুদ ওইখানেই যাবে। ভালো কোথাও না।”
“মুখ সামলে কথা বলো শার্মিলা। ভুলে যেও না বর্তমানে আমি তোমার স্বামী।”
তাইজ্যিনের কথায় শার্মিলা আর কথা বাড়ায়না। ফ্রেশ হয়ে দুপুরের লান্স করতে বসে দু’জন একসাথেই।
খাওয়া শেষ হতে তাইজ্যিন কানে ব্লুটুথ গুঁজে, ফোন হাতে গার্ডেনের দিকে যায়। সেখানে বসেই আজকের সন্ধ্যা টা সেলিব্রট করার জন্য যাবতীয় কাজ কমপ্লিট করার জন্য আদেশ দেয়। পারিশ সাথে কিছু গার্ডস সহ গার্ডেবের একটা কোণ সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাইজ্যিন গার্ডেনের একপাশে রাখা সোফায় বসে,ল্যাপটপে কাজ করছে। দোতালা বেলকনি থেকে শার্মিলা বাইরের দৃশ্য দেখছে। কীভাবে তাইজ্যিনের তালাবদ্ধ রুমটায় ঢুকা যায় সেই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনিতে আজকে রাতে একটু বাইরে যাওয়ার দরকার ছিলো তার। দু’একটা খু’ন করার জন্য হাত নিশপিশ করছে। তাইজ্যিনের উপরমহলের একজন সদস্যকে হাতেনাতে ধরার একটা সুযোগ ছিলো আজকে রাতে। এখন তাইজ্যিন যা শুরু করেছে মনে হয়না আজকে রাতে শার্মিলাকে ছাড়বে সে।
“লিটল প্রিন্সের একজন লোক বিডি এসেছে দুবাই থেকে। লিটল কিছু কাজের জন্য পাঠিয়েছে। তার দায়িত্বটা আপাতত তোমায় দেওয়া হয়েছে তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরী।”
ফোনের অপর পাশ থেকে কথাটা বলে নওফেল খন্দকার। এই মূহুর্তে ব্যপারটায় বিরক্ত হয় তাইজ্যিন। নিজের স্বার্থে লিটলের দাস হয়ে আছে নাহলে তাইজ্যিন এসব পাত্তা দেয় না। থমথমে গলায় জবাব দেয়, “আমি লোক পাঠিয়ে দিব।”
কল কেটে অন্যত্রে কল দেয় তাইজ্যিন। কিছু কথা বলে কল কেটে দেয়। শার্মিলা ব্যপারটা নোটিশ করেছে। তাইজ্যিনের কথা বলার দিকে এক ধ্যাণে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করছে সে। কিছুটা অনুমান করতে পারলেও ঘুরেফিরে সেই তালাবদ্ধ রুমটার কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রুমে বসেই তার টিমকে ম্যাসেজ দিয়ে দেয়। আজকে রাতটা ছেড়ে দিতে। কোন কাজ হবে না। তবে সর্বদা প্রস্তুত থাকতেও বলে দিয়েছে। যেকোন সময় শার্মিলা বের হতে পারে।
মেঝেতে তাকিয়ে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টা করছে শার্মিলা। তাইজ্যিন তার কাছে,পাশে,হাতে মুঠোয় যে সব সত্যি জানে,সব তথ্য জানে অথচ তাকে রাত বিরাতে বাইরে যেতে হবে, ড্রেস চেঞ্জ করা কত জামেলা শুধু মাত্র কিছু সত্য জানার জন্য। তাইজ্যিনের মাথাটা হ্যাক করতে পারলে খারাপ হতো না। ভাবতে জেনো শান্ত হয় শার্মিলা। কিন্তুএটা অনেক কঠিন একটা ব্যপার। তারউপর তিথিয়া চৌধুরী একজন তো আছেন আবার কবে না কবে চলে আসে। এরই মাঝে তাইজ্যিন একটা পার্সেল নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। তার পেছন দিয়ে একজন সার্ভেন্ট কয়েকটা লাগেজ নিয়ে প্রবেশ করে রুমে। শার্মিলাকে পাশের উপর পা তুলে বসে থাকতে দেখে মেজাজ হারায় তাইজ্যিন। কিন্তু যতবার বলবে ততোবারই বেশী,বেশী করে কাজটা করবে শার্মিলা। সার্ভেন্ট লাগেজ রেখে বিদায় নেয়। তাইজ্যিন নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক রেখে বলে, “বিয়েতে কোন অনুষ্ঠান করিনি সেজন্য ভাবলাম আজকে রাতে ছোটখাটো একটা মূহুর্ত কাটাই তোমার সাথে।”
“অনুষ্ঠান করোনি কেন? আমি বারণ করেছি নাকী?”
“এই ত্যাড়া কথা ছাড়ো। আমার ইচ্ছে হয়েছে সেজন্য অনুষ্ঠান করিনি।”
শার্মিলা জবাব দেয়না। তাইজ্যিন লাগেজ গুলোর দিকে ইশারা করে বলে, “তোমার ড্রেস আছে এসব লাগেজে।
থেমে,
” আর হ্যাঁ শাড়ীটা পড়ে আসবে রাতের ডিনারে।”
কথাটা বলে পার্সেল এগিয়ে দেয়। শার্মিলা সেটা হাতে নেয়। তাইজ্যিন একবার চোখ ভোলায় শার্মিলার দিকে।
সন্ধ্যায় নাস্তা করে ল্যাপটপ নিয়েই অনেকটা সময় কাটে শার্মিলার। নয়টা বাজতে উঠে রেডি হতে যায়। শাড়ীটা হাতে নিয়ে কিছুটা অবাক হয়। এককালার জর্জেট শাড়ী। কোন নকশা বা ডিজাইন কিছুই নেই শাড়ীতে। শাড়ীর রঙটা ব্লাক কালার। স্লিভলেস ব্লাউজের সাথে শাড়ীটা পড়ে নেয় শার্মিলা। আয়নায় নিজেকে দেখে। ফর্সা কায়ায় শাড়ীটা সুন্দরই ফুটে উঠেছে। পাশে বেশ উঁচু কালো রঙের হিল পড়ে নেয়। হালকা মেকআপ করে কাঁধ বরাবর চুলগুলো একপাশে সিঁথি করে নেয়।
বেশী সময় লাগেনি রেডি হতে। তবে রুমে বসেই কিছুক্ষণ সময় কাটা শার্মিলা। সাড়ে দশটা বাজতে গার্ডেনে পা রাখে শার্মিলা। বেশ দাম্ভিকতার সাথেই এগিয়ে যায় সামনের দিকে। যতটুকু সাজানো হয়েছে আর্টিফিশিয়াল হোয়াইট কালারের গোলাপ দিয়েই। সামনের একটা টেবিলের উপর কয়েকটা ওয়াইনের বোতল, কিছু কোল্ড ড্রিং, চকলেটস,একটা কেক ও রাখা আছে। পাশের ছোট্ট টেবিলে রাতের ডিনারের আয়োজন। সাজানোটা সুন্দর হয়েছে বলতেই হবে। তবে তাইজ্যিনকে দেখতে পায়নি আশেপাশে। পুরো বাড়ীতেই লাইট জ্বলছে। গার্ডেনে কোন গার্ডস নেই। বোধহয় সময়টা তাইজ্যিন শার্মিলা একাই কাটাবে। শার্মিলা চিন্তায় আছে বেশ। এরই মাঝে তাইজ্যিনের আগমন। তেমন কোন সাজেনি। শুধু ব্লাক কালারের একটা শার্ট আর ব্লাক কালারের জিন্স কায়ায় জড়ানো। লোকটাকে দেখে কে বলবে নির্দয়,নিষ্ঠুর। শার্মিলার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে তাইজ্যিন শুধায়, “সুইটহার্ট ভীষণ হট লাগছে তোমায়।”
“ইয়াহ্! আই নো!”
মুখ বাকিয়ে জবাব দেয় শার্মিলা। তাইজ্যিন সহ ডিনার করতে বসে দু’জন। শার্মিলা প্রশ্ন করে, “হুট করে এরকম কিছু?”
“দশটা না বিশটা না একটা মাত্র বউ তুমি। এ তো সামান্য সুইটহার্ট।”
“অউউ! বেশ ভালো।”
“তোমার পছন্দ হয়েছে?”
“মোটামুটি।”
“হুম ভালো।”
বেশী কিছুক্ষণ মৌনতা বজায় রেখে তাইজ্যিন পুনরায় শুধায়, “আচ্ছা তুমি চৌধুরী পরিবার সম্পর্কে কতটুকু জানো? বা কবে থেকে জানো?”
তাইজ্যিনের কথায় শার্মিলা ভড়কে যায়। তাইজ্যিনের সম্পর্কে ভালো ধারণা রয়েছে তার। শুধু উপরমহল সম্পর্কে যা জানে তবে তাঁদের বস সম্পর্কে ওতো জানতে পারেনি। ফ্যামিলি বলতে ইন্টারেস্ট নয় শার্মিলা। অকপটে জবাব দেয়, “তোমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর জেনেছি এই শহরে একটা চৌধুরী পরিবার রয়েছে।”
“মিথ্যে কথা।”
“তাহলে সত্যিটা তুমি বলে দাও।”
“আমি কীভাবে জানব তোমার মনের খবর?”
“তো আমি যতটুকু জানি তাই তো বললাম। আর না তুমি তোমার পরিবারের সাথে আমায় দেখা করিয়েছ। তোমার দাদীন আর একজন নাকী তোনার আম্মু। সেটাও শিওর না আমি।”
“কিছুই জানো না দেখছি।”
“বলো?”
“আমরা দুই ভাই। আমার বাবা,চাচ্চু আর তার ফ্যামিলি বর্তমানে বিডি নেই। আম্মু, দাদীন আর আমি এই তিনজন বিডি আছি।”
“তোমার ভাই?”
“চেনো তাকে?”
“না।”
তাইজ্যিন হতাশ হয়। পুনরায় বলে, “তাওহিদ ইশতিয়াক চৌধুরী” আমার ভাই।”
“ওহ্!”
“কী ওহ্?”
“উনি কোথায়?”
“মা-রা গেছে।”
“কীভাবে?”
“জানি না।”
শার্মিলা আর কথা বাড়ায় না। সে জানে তাওহিদ চৌধুরীর মৃ’ত্যুর কথা। না জানার কী আছে যেদিন তার বাবা-মা মা-রা যায় সেদিন রাতেই আরো তিনটা খু’ন হয়। সবই জেনো একই সূত্রে গাঁথা।
খাওয়া শেষ হতে শার্মিলা উঠে দাঁড়ায়। একপাশে রাখা সোফায় পা উঠিয়ে বসে পড়ে সে। কিছুক্ষণ পর তাইজ্যিন এসে সামনে বসে। শার্মিলা একনজর তাইজ্যিনের দিকে তাকায়। তাইজ্যিন শার্মিলার দিকে তাকিয়ে নজর সরিয়ে নেয়। দু’জনের চোখের ভাষা কিছু বলছে তবে প্রকাশ হচ্ছে না। শার্মিলা হাজারো প্ীশ্ন মনে তবুও নিজেকে দমিয়ে রাখছে। তাইজ্যিনকে যতটা খারাপ ভেবেছে ততোটাও খারাপ মনে হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত তার বাবা শাহীন ইমতিয়াজের সাথে কোন যোগসূত্র ছিলো। কোন না কোন ক্ষোভ ছিলো অতীতে। কিন্তু একটা প্রশ্ন মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে শার্মিলার। তাইজ্যিন জানে আজিজুল হক খন্দকারের মেয়ে শার্মিলা। কিন্তু পুরোটা মিথ্যে। এমনকি বিয়ে পড়ানোর সময় তো তার বাবার নাম নেওয়া হয়েছে তখন ও কী শোনেনি তাইজ্যিন? তার বাবার পরিচয় খোলসা হলে তার পরিচয়ের বাদ বাকী কিছুই থাকবে না। সবই জেনে যাবে তাইজ্যিন। শাহীন ইমতিয়াজের একমাত্র মেয়েও তার মতোই একজন সিআইডি অফিসার।
শার্মিলা উঠে দাঁড়াতে তাইজ্যিন হাত বাড়িয়ে দেয়। শার্মিলা একবার হাতের দিকে আরেকবার তাইজ্যিনে হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর দিকে তাকায়। সাত পাঁচ না ভেবে হাত রাখতে তাইজ্যিন শার্মিলার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে, একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। শর্মিলার কোমড় জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, “বলেছিলাম সাতশ ত্রিশ দিনে আমি শুধু তোমায় একবার ছুঁয়ে দেখব বাট এটা কখনোই সম্ভব না সুইটহার্ট।”
“কেন?”
“তুমি আমার বউ,আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমি ঘরের চাঁদ রেখে বাইরের মোমবাতির দিকে কেন তাকাব?”
“আগে?”
“কিছুই ছিলো না এমন। আমি কোন নারীর সাথো বেডে যাইনি তবে আমার নামের সাথে এই ট্যাগ লাগানো হয়েছে সেজন্য আমিও আর সত্যটা খোলসা করিনি।”
তাইজ্যিনের কথায় শার্মিলা অবাক হয়ে যায়। কিন্তু ব্যোরটা বিশ্বাস করা কষ্টসাধ্য। তাইজ্যিন শার্মিলাকে আরে কাছে টেনে নেয়। জেনো দু’জনের হৃৎস্পন্দনের গতিবেগ দু’জন অনুভব করছে। তাইজ্যিন জেনো মূহুর্তে ঘোরের মাঝে চলে যায়। শার্মিলা নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে তাইজ্যিন ও ছেড়ে দেয়। শার্মিলা নিজের শাড়ীর আঁচল হাতের উপর রেখে ঠিক করছে। এমতবস্থায় তাইজ্যিন পকেট থেকে একটা বক্স বের করে। গোল্ডের একটা চেইন সাথে একটা ব্রেসলেট বক্সের ভেতর। টেবিলের উপর বক্সটা বের করে শার্মিলার দিকে হাত বাড়ায় তাইজ্যিন। শার্মিলা হাতের উপর হাত রাখতে ব্রেসলেটটা পড়িয়ে দেয় তাইজ্যিন। শার্মিলার হাত মুঠোয় নিয়ে তাতে নিজের অধর জোড়ার বিচরণ ঘটায়। তাইজ্যিনের ছোঁয়ায় শার্মিলা কেঁপে উঠে। মূহুর্তে ঘেমে একাকার হয়ে যায় শার্মিলা। ঠোঁট কামড়ে ধরে তাইজ্যিনের কান্ড দেখছে সে। ছেলেটা বউ পাগ’ল হলেও হতে পারে। কিন্তু শার্মিলা এটা তো কথা ছিলো না। এমন হলে তো তুই তোর লক্ষ্য থেকে ছিটকে দূরে সরে যাবি। মায়ায় পড়ে যাবি তাইজ্যিনের। এতো তাড়াতাড়ি তাইজ্যিনের এসব কর্মকাণ্ড শার্মিলাকে ভাবাচ্ছে। এটা কী শুধুই দায়িত্ব নাকী এর পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে?
“আচ্ছা তাইজ্যিন তার দুর্বলতা, উদ্দেশ্য জানে? তাকে আগলে নিয়ে আবার ছুঁড়ে ফেলে দিবে না তো?”
#চলবে