তৃষ্ণার্ত প্রেম পর্ব-১৬+১৭

0
273
তৃষ্ণার্ত প্রেম
বাংলা রোমান্টিক গল্প | তৃষ্ণার্ত প্রেম

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|১৬|
#শার্লিন_হাসান

শার্মিলাকে চিন্তিত দেখে তাইজ্যিন বলে, “এনি প্রব্লেম?”

“হ্যাঁ,হ্যাঁ প্রব্লেম! বিরাট বড় প্রব্লেম। তুমি বুঝবে না তাইজ্যিন। এই মূহুর্তে ইব্রাহিম কে মারতে পারলে আমার শান্তি লাগত।”
মনে,মনে কথাগুলো বলে শার্মিলা প্রকাশ করলে জামেলা। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। তাইজ্যিন শুধায়, “কী হয়েছে? কথা বলছ না কেন?”

“এমনিতে! ভালো লাগে না এতো মানুষ।”

“তাহলে রুমে থাকো।”

“আমি খন্দকার বাড়ি যাব।”

“কেন? কয়দিন আগে না গিয়েছ এতো ঘন ঘন যাওয়ার প্রয়োজন নেই।”

“তুমি বুঝবে না তাইজ্যিন।”

কী মনে হতে তাইজ্যিন শুধায়, “আচ্ছা তাহলে আগামী কাল সকালে যেও।”

“ধন্যবাদ তোমায়।”

রাতের ডিনারটা সবাই একসাথেই করে। শার্মিলা আনমনা হয়েই খাবার খায়। শত্রুদের সাথে একই টেবিলে বসে খাবার খাওয়ার এক্সপেরিয়েন্স জোশ! সবাই যখন রুমে চলে যায় শার্মিলা তখন কিচেনে যায়। একজন মেয়ে সার্ভেন্ট ও তখন কিচেনে আসে। তার নাম অহনা। তাকে দেখে শার্মিলা শুধায়, “কাজ হয়েছে তো?”

“হ্যাঁ! ওনার ঘড়িতে ওই ছোট্ট মেশিন সেট করে দিয়েছি। এখন ওনার সমস্ত কথা,লোকেশন আমরা ট্র্যাক করতে পারব।”

“তাইজ্যিনেরটা রাতে করে নেব আমি। তুমি বরং চলে যাও।”

“কীভাবে?”

“আমি মেইন সুইচ অফ করব। শুধু গার্ডেনেরটা। তুমি দেওয়াল টপকে বাইরে যেও, গাড়ি জায়গা মতো আছে।”

শার্মিলা সোজা মেইন সুইচের রুমে চলে যায়। অহনা মেইন গেটের সামনে যায়। এখানে গার্ড আছে বেশ কয়েক। তবে কিছু গল্প করায় ব্যস্ত। শার্মিলা মেইন সুইচ অফ করতে গার্ডরা সবাই বিচলিত হয়ে পড়ে। কেউ,কেউ ভেতরের দিকে আসে। এই সুযোগে অহনা নিজের পথ বুঝে দৌড় দেয়। দেওয়াল টপকে মিনিট পাঁচেকের মাঝে অপরপাশে চলে যায়। শার্মিলাকে কলে বলে, “চলে এসেছি।”

শার্মিলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রস্থান করে। মেইন সুইচ যে দেওয়ার দিবে। কোনরকম রুমে এসে সোফায় বসে। ভাগ্যিস ওইখানে সিসিক্যামরা ছিলো না। নাহলে নতুন করে ভেজাল হতো। তাইজ্যিন তখন আবার বেলকনি থেকে আসে। শার্মিলা তাইজ্যিনকে বেলকনি থেকে আসতে দেখে ভড়কে যায়। তাইজ্যিন কী অহনাকে ফলো করলো? এতো,এতো গার্ডস আর সার্ভেন্ট যে তাল রাখা যায়না। শার্মিলা প্লান করে তার একজন কলিগকে আনে। সাথে ছোট্ট ডিভাইস ও নিয়ে আসতে বলে। কাজটা করতে বেশী বেগ পোহাতে না হলেও এখন বোধহয় চরম মূল্য দিতে হবে। তাইজ্যিন! উফফ! শার্মিলা ভাবতে পারছে না। তার সবকাজে এই তাইজ্যিন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন তাইজ্যিন শুধায়, “কত রাত হয়েছে। কোথায় ছিলে?”

“কফি খেতে গিয়েছিলাম।”

“আমার ও খাওয়ার দরকার ছিলো।”

“চলো আমি বানিয়ে দেই।”

তাইজ্যিন মুচকি হেঁসে বলে, “শিওর তুমি বানিয়ে দিবে?”

“কেন মিথ্যে মনে হচ্ছে?”

“আচ্ছা নিয়ে আসো।”
কথাটা বলে তাইজ্যিন ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে।
শার্মিলা নিজেই যায়। তাইজ্যিনের সন্দেহ কাটানোর জন্য এমনটা করছে শার্মিলা। হয়ত তাইজ্যিন কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো তাই ওতোসব কিছু খেয়াল করেনি। আর করলেও কী অন্ধকার কিছুই বুঝার জো নেই। ভাবনার মাঝেই হোঁচট খায় শার্মিলা। তখন কেউ তার হাত ধরে নেয়। শার্মিলা ভাবনা থেকে বেরিয়ে সামনে তাকায়। সৈয়দ ইব্রাহিম ঠোঁটে হাসি জুলিয়ে তাকিয়ে আছে। শার্মিলাকে পা থেকে মাথা অব্দি স্ক্যান করে। শার্মিলা তাইজ্যিনের আনা পাতলা জর্জেট শাড়ীই কায়ায় জড়ায় সবসময়। স্লিভলেস ব্লাউজের সাথে পাতলা শাড়ী, উদর বুঝা যাচ্ছে বেশ! সৈয়দ ইব্রাহিম ঠোঁট কামড়ে বলে, “তাইজ্যিনের থেকে হ্যান্ডসাম আছি।”

শার্মিলা জবাব দেয়না। তাইজ্যিন,তাইজ্যিনের জায়গায়। তবে এটা ঠিক সৈয়দ ইব্রাহিম ও হ্যান্ডসাম। বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী। তখন শার্মিলা জবাব দেয়, “হাত ছেড়ে পথ থেকে সরে দাঁড়াও।”

“উপপপস্! আমি তো তোমাকে আগে দেখিনি ইন্সপেক্টর। দেখলে তাইজ্যিনের আগে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ আমিই করতাম।”

শার্মিলা হাত মোচড়া দেয়। তাতেও লাভ হয়নি। শার্মিলা তখন তেজ দেখিয়ে বলে, “তাইজ্যিন কফি চেয়েছে, হাত ছাড়ো দেরী হয়ে যাচ্ছে।”

“চলো আজকের রাতের বেড শেয়ারটা তোমার সাথেই করি।”

মূহুর্তে শার্মিলার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বা হাত ইব্রাহিমের দখলে থাকলেও ডান হাত তো ছাড়া। সেটা দিয়ে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ঠাস করে চড় বসায় ইব্রাহিমের গালে। ইব্রাহিম রেগে শার্মিলার চুলের পেছনে হাত রাখে। আরেক হাতে শার্মিলার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। শার্মিলার গা গুলিয়ে আসছে। ইব্রাহিম জোর করে শার্মিলার ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করতে যাবে, শার্মিলা পা দিয়ে ইব্রাহিমের পায়ে আঘাত করে। তাতে কিছুটা বিঘ্নিত হলেও ইব্রাহিম থেমে যায়নি। শার্মিলাকে দুগাল চেপে ধরে বলে “তোকে আমার ভালো লেগেছে। তোর বডি ফিগার উফফস্ মাথা নষ্ট। যেই দেহের অংশ হাত দিয়ে চড় মেরেছিস সেই দেহটাই একদিন আমি ভোগ করবো। আর কোন রকম চালাকি করলে তোর বাবার কাছে তোকে পাঠিয়ে দেব।”

“বেশী বাড় বাড়লে তোর তেজ কমিয়ে দেব। আমাকে মারার আগে নিজের কবর কোথায় খুড়বি জায়গা সিলেক্ট করে নে।”

কথাটা বলে শার্মিলা চলে আসে। তাইজ্যিন কাকে বাড়ীতে এনেছে? যে কীনা তার ওয়াইফের সাথে! ছিঃ! তাইজ্যিন জানলে কী করবে? ইব্রাহিমকে মার-বে? আনমনা হয়ে কফি বানিয়ে রুমে আসে শার্মিলা। পরপুরুষের ছোঁয়ার কথা ভাবলে জেনো গা গুলিয়ে আসে৷ রাগে শরীর জ্বলে। তাইজ্যিনকে কফি দিয়ে শার্মিলা চুপচাপ শুয়ে পড়ে। তাইজ্যিন অবাক হয়। শার্মিলার মুড হুট করে খারাপ হয়ে গেলো নাকী? কফিটা মুখে তুলে দেখে জঘন্য হয়েছে। কয়েক চুমুক দিয়ে শুধায়, “বাহ্! শার্মিলা বেশ ভালো কফি বানাও।”

শার্মিলা জবাব দেয়না। সে কফি বানিয়ে টেস্ট করেছে একদম জঘন্য হয়েছে। একবার বানিয়ে সেটা ফেলে, দ্বিতীয় বার বানানোর মন মানসীকতা তার ছিলো না। ভাবনায় এতোটা বিভোর ছিলো যে ব্ল্যাক কফি পরিমানের তুলনায় বেশী দিয়ে ফেলেছে।

তাইজ্যিন কফি আর ল্যাপটপ রেখে শার্মিলার পাশে শুয়ে পড়ে। তখন শার্মিলা নিজেই তাইজ্যিনের বুকে চলে যায়। তাইজ্যািনকে জড়িয়ে ধরেই কান্না করে দেয়৷ ইব্রাহিমের ছোঁয়া তার পছন্দ হয়নি। শার্মিলা কান্ডে তাইজ্যিন হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে তোমার?”

শার্মিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেকে সামলে নেয়। নাক টেনে বলে, “কিছু হয়নি এমনিতে।”

“কেউ কিছু বলেছে।”

“না।”

“তাহলে কাঁদছ কেন?”

“মন চেয়েছে।”

“আমায় বলতে সমস্যা?”

“এমনিতে মন খারাপ।”

তাইজ্যিন কিছু বলেনা। শার্মিলা তাইজ্যিনের বুকে মাথায় গুঁজে শুধায়, “আচ্ছা আমাদের দু’বছর পর তো কন্ট্রাক্ট শেষ তখন হয়ত আমি নতুন করে বিয়ে কর….

” দু’বছর পর আমি ছাড়লে তো বিয়েটা করবে? তুমি কী শার্মিলা? আমি থাকতে অন্য পুরুষ তোমায় স্পর্শ করবে?”

শার্মিলা জেনো এটাই শোনতে চেয়েছে। তখন তাইজ্যিন তার কপালে চুমু দিয়ে বলে , “যা হবে দু’বছর পর দেখা যাবে। এখন তুমি আমার মানে একান্তই আমার।”

“যদি কেউ জোর করে আমায় স্পর্শ করতে চায়?”

“প্রশ্নই আসেনা। তুমি আমার বউ সবাই জানে।”

শার্মিলা জবাব দেয়না। চুপটি মেরে তাইজ্যিনের আলিঙ্গনে থাকে। তখন তাইজ্যিন শুধায়, “তুমি একটা পাখির ছানা বুঝলে। এতো কোমল,কীভাবে বুকে এসে ঘাপটি মেরে আছো।”

★★★

পরেরদিন সকালে শার্মিলাকে নিয়েই বের হয় তাইজ্যিন। শার্মিলা ইব্রাহিমের কথা আর কিছুই বলেনি তাইজ্যিনকে। খন্দকার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে তাইজ্যিন নিজের কাজে যাবে। নাস্তা সেরে ব্যাগ গাড়িতে উড়ায়। শার্মিলা চলে যাচ্ছে দেখে ইব্রাহিম বেশ অবাক হয়। তারমানে সামনাসামনি থেকে কিছু করবে না। যা করবে পেছন থেকে। ইব্রাহিম নিজেও খুশি হয়। এখন নিশ্চিন্তে প্লান করা যাবে।

শার্মিলা যাওয়ার সময় ইব্রাহিমের মুখশ্রীতে তাকিয়ে মুচকি হাসে। তার কাজ শেষ! এখন যেকোন জায়গায় থেকে ওদের মুভমেন্ট, প্লান সম্পর্কে জানতে পারবে।

খন্দকার বাড়ির সামনে আসতে তাইজ্যিন সহকারে গাড়ি থেকে নামে। শার্মিলা ব্রু জোড়া প্রসারিত করে শুধায়, “ভেতরে যাবে?”

“মোটেও না।”

“তো?”

“আসলে মনে ছিলো না।”

“কী?”

তাইজ্যিন আশেপাশে তাকায়। এখানে কোন মানুষজন নেই।
ভেবে সময় নেয়না। শার্মিলার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। শার্মিলার কায়া তার কায়ার সাথে জড়ানো। তাইজ্যিন শার্মিলাকে উঁচু করে নিজের মুখোমুখি তোলে। শার্মিলা কিছু বুঝার আগে তার অধর জোড়া দখল করে নেয় তাইজ্যিন। হাত পা নড়াচড়া করলে তাইজ্যিন ছেড়ে দিয়ে বলে, “আদর করতে দাও জান।”
শার্মিলা হতভম্ব হয়ে যায়। বাড়ীতে আস্ত রুম থাকতে এখন রাস্তায় রোমান্স করছে। ভারী নির্লজ্জ তো এই তাইজ্যিন। পুনরায় ঠোঁটে চুমু খেয়ে, চোখের পাতায় গভীর চুম্বন দেয়। শার্মিলা কে পুনরায় দাঁড় করিয়ে শুধায়, “তোমাকে আদর দিতে রাতে আসব।”

“দরজা খুলব না।”

“দেখা যাবে।”

তাইজ্যিন বিদায় জানিয়ে গাড়িতে বসে। সীটে বসেই চুলগুলো পেছনে স্লাইড করে। গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার পেছন দিয়ে শার্মিলা নিজের ব্যাগ লিভিং রুমে রেখে,সিয়ার থেকে চাবি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। শাড়ি পড়েই এই বাড়িতে এসেছে। এখন শাড়ি পরেই ড্রাইভ করতে হচ্ছে। তাইজ্যিনকে ফলো করতে,করতে সৌরভকে বলে আসতে।

তাইজ্যিন গাড়ি নিয়ে চলে যায় পরিত্যক্ত এলাকায়। তার গাড়ির পেছন দিয়ে শার্মিলার গাড়ি প্রবেশ করছে সেখানে। অলিগলি পেড়িয়ে তাইজ্যিন পুরোনো বিশাল দালানের সামনে গাড়ি থামায়। শার্মিলা তার রাইট সাইডের রাস্তায় গাড়ি থামায়। তাইজ্যিন লেফট সাইডে এসেছে মানে সেখান দিয়ে যাবে। শার্মিলার গাড়ি দেখলে আবার সমস্যা। সৌরভকে বলে দেয় গাড়ি যাতে রাইট সাইডে নিয়ে আসে। এই এলাকায় আগে একবার এসেছে তবে জানত না এখানের কোন দালানে ওদের লোক আছে। গাড়ি থেকে ছোট্ট রঙের কৌটা থেকে লাল রঙ নিয়ে দেওয়ালে ক্রসের মতো একে দেয়। পুরো কৌটা শেষ হয়ে যাওয়ায় সেটা দূরে একপাশে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তাইজ্যিন ভেতরে গিয়েছে। শার্মিলা জানেনা ভেতরে কী আছে,কে আছে। গেলে ধরা খাবে কীনা। সেজন্য সিদ্ধান্ত নেয় এটার থেকেও উঁচু দালানের ছাঁদে উঠবে। দূরবীক্ষণ দিয়ে ভেতরটা দেখবে। কিন্তু শাড়ী পড়ে দেওয়াল টপকাতে পারবে না।

সৌরভ শার্মিলার গাড়ির পেছনে নিজের গাড়ি থামায়। শার্মিলা তাকে প্লানটা বলে। সে নিজেই যেতো কিন্তু শাড়ী নিয়ে দেওয়াল টপকানো পসিবল না। সেজন্য সৌরভ নিজেই সিদ্ধান্ত নেয় সে সামনের দালানের ছাঁদে যাবে। দু’জনের কানে ব্লুটুথ! সৌরভ শার্মিলাকে দালানের ভেতরে কী আছে সেটা বলবে।

তাঁদের প্লান অনুযায়ী সৌরভ সামনের দালানের দেওয়াল টপকে ছাঁদে যায়। বেশ খানিক সময় লাগে। শার্মিলা তখন সোরভের কল হোল্ডে রেখে ইব্রাহিমের কথা শোনে।

“শার্মিলাকে এখন মা-রতে চাইছি না। ও থাকুক! দেখি কতটুকু যেতে পারে। এমনিতে আমাদের ধরা এতো সহজ না। তারচেয়ে বরং আমরা আমাদের প্রজেক্ট নিয়ে ভাবি।”

#চলবে

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|১৭|
#শার্লিন_হাসান

(১৮+ এলার্ট)

তাঁদের প্লান অনুযায়ী সৌরভ সামনের দালানের দেওয়াল টপকে ছাঁদে যায়। বেশ খানিক সময় লাগে। শার্মিলা তখন সোরভের কল হোল্ডে রেখে ইব্রাহিমের কথা শোনে।

“শার্মিলাকে এখন মা-রতে চাইছি না। ও থাকুক! দেখি কতটুকু যেতে পারে। এমনিতে আমাদের ধরা এতো সহজ না। তারচেয়ে বরং আমরা আমাদের প্রজেক্ট নিয়ে ভাবি।”

শার্মিলা সৌরভের কথা ও শুনছে,ইব্রাহিমের কথাও শুনছে। দু’টোই সামলাচ্ছে। সৌরভ ছাঁদে উঠতে দূরবীক্ষণ দিয়ে ভেতরটা একটু পর্যবেক্ষণ করে। সাথে,সাথে শার্মিলাকে বলে,

“ম্যাম আপনি সরে যান। আড়ালে চলে যান,ওরা বাইরে আসছে সব।”

সৌরভের কথায় শার্মিলা আড়াল হয়ে যায়। তাইজ্যিন পিস্তল হাতে নিয়ে বাইরে আসছে। পেছন দিয়ে কিছু লোক বেশ কয়েক যুবতী মেয়ে নিয়ে আসছে। সৌরভ বিষয়টা দেখে সঙ্গে,সঙ্গে ক্যামরা বন্দী করে নেয়। সাথে শার্মিলাকে বলে,

“ম্যাম তাইজ্যিন মেয়েগুলোকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছে।”

“তুমি নেমে আসো, আমি ওদের পিছু করছি।”

কথাটা শেষ করে শার্মিলা গাড়িতে বসে পড়ে। তাইজ্যিন পিছু দাওয়া করে। তার পেছন দিয়ে সৌরভ ও গাড়ি নিয়ে চলে। পিচঢালা রাস্তায় গাড়ি তার গতিবেগে ছুটছে। চার,চারটা গাড়ি যাচ্ছো। দু’টো তাইজ্যিনদের,পরেরটা শার্মিলার শেষেরটা সৌরভের। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা তাইজ্যিনদের সদ্য চালু হওয়া “টি আই চৌধুরী গ্রুফ অব লিমিটেডে” আসে। তাইজ্যিন গাড়ি থেকে নামতে,নামতে মেয়েগুলো কে টেনে ভেতরে নিয়ে যায় কিছু ছেলে। শার্মিলা, সৌরভ কিছুটা দূরে থামে।

“এই মেয়েগুলো নিয়ে ওদের নেক্সট প্লান খুব শীঘ্রই জেনে যাব।”

“ম্যাম, এই তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী ধূর্ত বাজ লোক। ওনার এই পাপের আর কত যে রাজত্ব তৈরী হবে।”

“ওনার সাপোর্টে পুরো মাফিয়ামহল,বিজন্যাসম্যানরা আছে। আর এখনকার আইন টাকা দিয়ে কেনা যায় বুঝলে তো?”

“হ্যাঁ,টাকার কাছে মানুষ আইন বিক্রি করে দেয়।”

“এটাই আমাদের উন্নত দেশ এবং জাতি। অতীতে আমাদের মতো হাজারটা আইনের লোক এসেছে,গেছে ভবিষ্যতেও ঠিক এমন আসবে যাবে, তবে সবই টাকার কাছে আইন বেচা অফিসার এবং আইনের লোক। হাজার দু’একজন আমাদের মতো করে ভেবেছে,তাদের ও টিকতে দেয়নি এরা।”

“আমরাও হয়ত টিকবো না ম্যাম। শেষ পরিণতি হয়ত শাহীন ইমতিয়াজ স্যারের মতো হবে।”

“আমার বাবার অসম্পূর্ণ কাজ আমি সম্পূর্ণ করব সৌরভ। আমার প্রাণ গেলেও আমার কিছু যাবে-আসবে না। আমার আপন কেউ নেই পৃথিবীতে যে আমি মা-রা গেলে কান্না করবে। শুধু,শুধু অন্যপর প্রতি মায়া বাড়িয়ে থমকে গেলে তো হবে না।”

“তাইজ্যিন স্যার…

গলা ঝেড়ে বলে সৌরভ। শার্মিলা মুচকি হেঁসে বলে, ” সময়ের অতিথি। একটা সময় সেও চলে যাবে।”

“মায়ায় পড়তে তেমন একটা সময় লাগে না ম্যাম।”

“হার্টলেস মেয়ের কাছে এসব মায়া-ভালোবাসার কথা বলা মানে টাইম ওয়েস্ট তারচেয়ে কাজের কথায় আসি।”
সৌরভ কিছুটা লজ্জা পেলো। পরক্ষনে প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বলে, “তাহলে আমাদের নেক্সট টার্গেট এই মেয়েগুলোকে বাঁচানো।”

“হুম,সাথে এই কোম্পানিটাও বন্ধ করে দেওয়া।”

“আচ্ছা।”

“শোন, অহনাকে দিয়ে আমি ইব্রাহিমের ঘড়িতে জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগিয়েছি। ওর সমস্ত কথোপকথন, প্লান আমরা লাইভ টেলিকাস্টের মতো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জানতে পারব।”

★★★

শার্মিলা বাসায় আসতে পিয়াসা তাকে খাবার বেড়ে দেয়। মেয়েটা কতদিন পর এলো। তাও কাজের জন্য ছোটাছুটি। আনিসুল হক খন্দকার তার ডিউটিতে। সিয়া শার্মিলার সামনের চেয়ারে বসে লেগ পিস খাচ্ছে। শার্মিলা খেতে,খেতে বলে, “রাতে হয়ত তাইজ্যিন আসতে পারে।”


তখন পিয়াসা বলে, “আচ্ছা, আমি রান্না করব। ওকে বলিস, ডিনারটা৷ জেনো এখানে করে।”

“ডিনার করবে কীনা জানিনা। শত্রুর পরিবারের সাথে বসে খাবার খাবে?”

“নিয়মটা উল্টে দাও শার্মিলা।”

সিয়ার কথায় শার্মিলা কিছু একটা ভেবে বলে, “আচ্ছা চেষ্টা করব।”

“তাইজ্যিনকে চাইলে লাইনে আনতে পারো তুমি।”

“প্রয়োজন মনে করিনা। অ্যাম নট ইন্টারেস্টড ইন তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরী।”

সিয়া আশেপাশে তাকায়। পিয়াসা কিচেনে তখন চটজলদি বলে, “হুম! ইন্টারেস্ট না থাকলে বুঝি চুমু দেওয়ার রাইট দেয়? তাও ইন্সপেক্টর শার্মিলা।”

“এই কম বুঝো! ওটা রেসপন্সিবিলিটি।”

“চুমু দেওয়া দায়িত্ব?”

ব্রু জোড়া প্রসারিত করে বলে সিয়া। তখন শার্মিলা শুধায়, “ইয়েস। আর সময় মতো চুমু না দিলে,মনে করিয়ে দিতে হয়।”

“ছিঃ!”

সিয়ার কথায় শার্মিলা মুখ বাঁকিয়ে বলে, “আরেকটু শোনবা?”

“না,না।”

বিকেলের দিকে শার্মিলা তাইজ্যিনকে কল দেয়।
তাইজ্যিন সবে শাওয়ার নিয়ে বসেছে। শার্মিলার কল পেতে তড়িঘড়ি রিসিভ করে। তখন শার্মিলা শুধায়, “রাতে খন্দকার বাড়িতে আসবে?”

“আমায় মিস করছ বুঝি?”

“মোটেও না! মিমি তোমার জন্য রান্নাবান্না করবে।”

“তো তুমি খাও? আমার ঢাকঢোল পিটিয়ে শত্রুবাড়ি যাওয়ার ইচ্ছে নেই।”

“শ্লা,চোর একটা।”

“মুখ সামলে শার্মিলা।”

“ঠিকই বলেছি। এখন আসবে না,রাতে ঠিকই চোরের মতো আসবে।”

“চোর বলো কেন? আমায় দেখতে চোর লাগে?”

“মোটেও না, তবে প্লান অনুযায়ী চোর বলাই যায়।”

“তোমার সাথে কথা বকাটাই বেকার।”

“ওকে বায়!”

কথাটা বলে শার্মিলা কল কেটে দেয়। তাইজ্যিন ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে। তার বউটা এমন কেন? একটু সন্মান দিতে পারে না? তাকে দেখলে মানুষ ভয় পায়,অথচ বউয়ের কাছে তার সন্মান নেই। কী একটা মেয়ে কপালে জুটলো! একবারে পানসে তো পানসে সাথে করলার জুশ ও।

অন্যদিকে ইব্রাহিম চাচ্ছে একটা পার্টির অ্যরেন্জ করতে। শার্মিলাকে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য বলে তাইজ্যিনকে। তাইজ্যিন কিছুই বলেনা। তাঁদের পার্টির প্লানে আপাতত তার মন নেই। তার বাবার চোখের আড়ালে মেয়েগুলোকে ছেড়ে দিতে হবে। এর জন্যও তার একটা প্লান চাই! ব্যাস এই প্লানে তার শার্মিলার হেল্প প্রয়োজন। নিশ্চয়ই শার্মিলা এই মেয়েগুলোকে ছাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগবে। কিন্তু তার বাবা কৈফিয়ত চাইলে কর বলবে? তাইজ্যিন ল্যাপটপ রেখে সোফায় হেলান দিয়ে বসে। সে বাবা ভক্ত ছেলে! একসময় খারাপ কাজ করেছে। এখন সেসব থেকে সরে আসতে চায়। জীবন সুন্দর! এসব খারাপ কাজ ছাড়াও জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে পারলে তা ভীষণ সুন্দর। শার্মিলার সাথে যেহেতু বিয়েটা করেছে, এটাকে স্থায়ী রাখতে চায়। কন্ট্রাক্ট পেপারটেপার সেসব ছিঁড়ে ফেললে কিছু যায় আসবে না শার্মিলা কে নিয়ে আলাদা একটা জগত কল্পনা করে তাইজ্যিন। শার্মিলা তার খারাপ কাজ সম্পর্কে জানে সেসব তাকে লজ্জা দেয়। একজন বাবা হলে, তার ছেলে-মেয়েরা যদি শোনে, “তাদের বাবা খু’নি,মাফিয়া।” এর থেকে লজ্জা আর কী আছে? তার অতীত আছে,কিন্তু ভবিষ্যত উজ্জ্বল করলে সমস্যা কোথায়? কিন্তু তার বাবা! এসব থেকে সরে আসাটা ভীষণ কঠিন। যে এখন ভালো বন্ধ,বিজ্যাস পার্টনার ক্রাইম পার্টনার একটা সময় হয়ত তার হাতেই খু’নটা হতে হবে। নিজের ভাইয়ের কথা স্মরণ হতে সব এলোমেলো হয়ে যায় তাইজ্যিনের। এতোক্ষণের চিন্তা সব মাথা থেকে চলে যায়। উঠে একটা ভাজ ভেঙে ফেলে। বারবার শার্মিলার চেহারা ভাসছে,শরীর জ্বলছে। রাগে মা’থা ফাটছে। নিশ্চয়ই শার্মিলা সব জানে। তার ভাইকে খু’ন হতে দেখেছে, খু’নি কে চেনে! হয়ত সে নিজেও একটা খু’নি। কিন্তু এর ব্যাখা আর প্রমাণ কী? তাদের ছোট্ট রাজকন্যা! ইশশ! তাইজ্যিন ভাবতে পারছে না।

বেলকনিতে গিয়ে সিগরেট ধরায়। কয়েক টান দিয়ে সেটাও ফেলে দেয় এই মূহুর্তে কিসের জেনো বড্ড অভাব! কী সেটা? তাইজ্যিন বুঝার চেষ্টা করছে।

★★★

ঘুমের মধ্যে নিজের কায়ার উপর ভারী কিছু অনুভব করতে শার্মিলা চোখ মেলে। নড়েচড়ে উঠতে ভারী জিনিসটাও কিছুটা আলগা হয়। শার্মিলা কিছুটা ভয় পায়। বলেছিলো তাইজ্যিন আসবে। হাতড়ে মুখটা স্পর্শ করতে বুঝে ব্যক্তিটা কে। নিকের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সরাতে যাবে পারে না। তখন তাইজ্যিন শার্মিলার গলায় নিজের নাক ঘেঁষতে, ঘেঁষতে বলে, “সরিয়ে দিচ্ছো কেন?”

“তুমি ড্রাঙ্ক?”

শার্মিলার কথায় তাইজ্যিন মুখ উঁচু করে। ড্রিম লাইটের আলোয় সেটা ভালোই বুঝা যাচ্ছে। তাইজ্যিন জবাব দেয়, “তোমাকে দেখার পর আমাকে অন্য কোন নেশা আকৃষ্ট করতে পারেনি। আমি তো বউ নামক নেশায় আকৃষ্ট জান।”

“তাইজ্যিন, আমার মনে হচ্ছে তুমি ড্রাঙ্ক।”

“ঠিক ধরেছ, এই মূহুর্তে আমার তোমার গভীর স্পর্শ চাই জান।”

“পাগল নাকী তুমি?”

“প্লিজ না করো না। আমি ভালো হয়ে যাব জান।”

বাচ্চামী করে বলে তাইজ্যিন। শার্মিলা বুঝার চেষ্টা করছে তাইজ্যিনের হাবভাব। খুব সহজে এমন করেনা তাইজ্যিন। কিছু নিয়ে চিন্তিত থাকলে সে কেমন জেনো করে। অদ্ভূত আচরণ! এই চিন্তা বিষয়টা মস্তিষ্কে খুব একটা ধারণ করতে পারেনা তাইজ্যিন। তবে আজকাল বিষয়টা তার মস্তিষ্কে দখলদারিত্ব করে। তখন তাইজ্যিন শার্মিলার গলার কিছুটা নিচে ঝুঁকে চুমু খায়। পুনরায় বলে, “আই নিড ইও জান।”

শার্মিলা কিছু বলেনা। তাইজ্যিন তার ঠোঁটের থেকে কিছুটা দূরত্বে নিজের ঠোঁট রাখতে শার্মিলা নিজেই সেটা দখল করে জানান দেয়, সে সম্মতি দিয়েছে। তাইজ্যিন গভীর চুম্বন দেয় ঠোঁটে। পুরো মুখশ্রী জুড়ে তার পাগলামির আঁচড়। শার্মিলার অদ্ভূত এক অনুভতি জেগে উঠে। তাইজ্যিন কিছুটা ঝুঁকে শার্মিলার বুকের নরমস্তরে মুখ ডুবিয়ে দেয়। নিজের পৌরুষ জেগে উঠে। এই ছোঁয়া জেনো অন্যরকম কিছু৷ শার্মিলা ব্যক্তিগত পুরুষের স্পর্শ নিজের সর্বাঙ্গে মাখছে। বিরক্তি নিয়ে শার্মিলার শাড়িটা খুলে একপাশে একপাশে রাখে তাইজ্যিন।। জেনো তাইজ্যিনকে ভীষণ বিরক্ত করছিলো এই শাড়ি। তার জায়গায় এই শাড়ি জেনো নিজের অধিকার খাটাচ্ছে শার্মিলার কায়ায়। তাইজ্যিনের হাতের মুঠোয় বন্দী হয় শার্মিলার হাত। ভালোবাসার সাগরে তলানোর সুখানুভূতি টা কয়েক মূহুর্তের জন্য নেয় দু’জন।

তাইজ্যিনের বক্ষস্থলে শার্মিলার বক্ষস্থল। গালের সাথে গাল মেলানো। তাইজ্যিন শার্মিলার উন্মুক্ত পিঠে হাত রাখে। কপালে চুমু দিয়ে বলে, “থ্যাঙ্কিউ জান।”

“এই তাইজ্যিন এই ছোঁয়ায় কী আছে?”

“সুখ!”

“ইয়েস! তুমি বেশ কাছে টানতে পারো। তুমি আমাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করো তাইজ্যিন।”

#চলবে