#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|২২|
#শার্লিন_হাসান
তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী এনাউন্সমেন্ট করেন তার বড় ছেলে “তাওহিদ ইশতিয়াক চৌধুরী এবং তার ছোট্ট পরিবার নিয়ে।”
তখন স্টেজে যায় তাওহিদ এবং তার ছোট্ট মেয়ে। শার্মিলা তাদেরকে দেখে অবাক হয়। কী হচ্ছে এসব?মৃ’ত মানুষ জীবিত কী করে? তাহলে কী সব ফেক? তাইজ্যিন তাহলে কোথায়?
শার্মিলার মাথা ঘুরছে। একটা কোল্ড ড্রিং নিয়ে সাইডে বসে। ভাবছে তাঁদের সাজানো প্লানটা ঠিক কী রকম?
পয়েন্ট এক-শার্মিলার বাবা ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে প্রমাণ চেয়েছে। তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে চেয়েছে সেজন্য তাকে পথ থেকে সরানো হয়েছে। ইব্রাহিম ধরা খেলে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর ও বরবাদ হয়ে যাবে।
পয়েন্ট দুই- নিজের ছেলেকে মা-রার পরিকল্পনা করে। মূলত তাইজ্যিনকে জানানোর জন্য? এটা নয়ত তাইজ্যিন জানে শার্মিলা তার ভাইকে খু’ন করেছে সেজন্য তার বাবা-মাকে তাইজ্যিন খু’ন করেছে। তাইজ্যিনকে তাহলে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছে?
এখন আবার তাইজ্যিন উদাও তার ভাই ফেরত। হচ্ছে টা কী? শার্মিলা বসে সিদ্ধান্ত নেয় এই পার্টিতে আর এক মূহুর্ত অবস্থা করা যাবে না। মস্তিষ্ক ফাঁকা। সবার দৃষ্টি গোচর হয়ে বেড়িয়ে পড়ে সে। আজকে তাইজ্যিনের গাড়ী নিয়ে বেড়িয়েছে। কোথা যাবে এই মূহুর্তে মস্তিষ্কে নেই।
তাইজ্যিনকে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। ওর বাংলোতে যাব? শার্মিলা সিদ্ধান্ত নেয় সেখানে যাবে। গাড়ী ঘুরায় বাংলোর রোডে।
ঘড়ির কাটা রাত একটা ছুঁইছুঁই। শো,শো শব্দে গাড়ী চলছে। বাংলোর গেটের সামনে আসতে দারোয়ান গেট খুলে দেয়। গাড়ীটা তাইজ্যিনের চিনতে ভুল হয়নি তার। শার্মিলা গ্যারেজে গাড়ী রেখে বের হয়।
তার পেছন দিয়ে তাইজ্যিনের গাড়ী গেটের সামনে আসে। দারোয়ান হতভম্ব হয়ে যায়। তাইজ্যিনের সামনে এসে বলে, “স্যার একটু আগে না আপনি আসলেন?”
“মাথা ঠিক আছে তোমার?”
বিরক্ত হয়ে বলে তাইজ্যিন। তখন দারোয়ান বলে, “আপনার আগে গাড়ীটা গেট দিয়ে ঢুকেছে।”
“তোমাকে কে বলেছে ওটা ভেতরে প্রবেশের পারমিশন দিতে?”
কথাটা বলে গ্যারেজে যায় তাইজ্যিন। আশ্চর্য তার আগে গাড়ীটা এখানে। তড়িঘড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে, সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে তার মহারানী। অনেকদিন পর তাকে সামনাসামনি দেখছে তাইজ্যিন। হৃদয়ের হাহাকার জেনে নিমিষেই উদাও। অদ্ভুত প্রশান্তি মনে এবং চোখে বিরাজ করছে। তাইজ্যিনকে দেখে শার্মিলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। দু’জনের চাওয়াচাওয়ি হতে,তাইজ্যিন শুধায়, “বাহ্! সুইটহার্ট আমার কাছেই ছুটে আসলে?”
কথাটা বলে শার্মিলার পাশে বসে তাইজ্যিন। জবাবে শার্মিলা শুধায়, “তোমার সমস্যাটা ঠিক কোথায় আমায় বলবে?”
“কোথাও সমস্যা নেই।”
শার্মিলা উঠে দাঁড়ায়। তাইজ্যিন হেলান ছেড়ে সোজা হয়ে বসে। শার্মিলার কস্টিউমের দিকে একনজর তাকিয়ে হেঁসে শুধায়, “দেখো, তুমি জানতে সহজে আমার রাগ ভাঙাতে পারবে না। সেজন্য প্লান করে শাড়ী পড়ে এসেছ?”
“সাতদিনের মাথার তার দেখে সবগুলো ছিঁড়ে গেছে। আমি কারোর রাগ ভাঙাতে আসিনি এখানে।”
আঙুল নাচিয়ে কথাটা বলে শার্মিলা। তাইজ্যিন শার্মিলার তর্জনী নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে,তাকে এক টানে কোলে বসিয়ে দেয়। গলায় থুতনি রেখে বলে, “তুমি এখানে কেন এসেছ?”
“শাড়ী পড়েছি সেটা দেখাতে।”
“নাকী শাড়ী কীভাবে খোলে সেটা শিখতে এসেছ।”
“তোমার কাছে শিখতে হবে কেন?”
“বারে! আমার থেকে কেউই শাড়ী খোলায় এক্সপার্ট না।”
“কয়টা মেয়ের শাড়ী খুলেছ?”
“কোন মেয়ের না, বউয়েরটা খুলেছি।”
শার্মিলা রেগে উঠতে যাবে তাইজ্যিন তাকে শক্ত করে ধরে রাখে। পাশে বসিয়ে গালে স্পর্শ করে।
শার্মিলা তেজ দেখিয়ে হাত সরিয়ে দিয়ে বলে, “ডোন্ট টাচ মি। আমি যা জিজ্ঞেস করব তার উত্তর দিবা।”
“আচ্ছা বলো?”
“আমায় বিয়ে করেছ কেন?”
“বিয়ের বয়স হয়েছে সেজন্য বিয়ে করেছি। আমাকে,তোমাকে আবার কী? আজব প্রশ্ন!”
“তাইজ্যিন…
চিৎকার করে উঠে শার্মিলা। তাইজ্যিন কিছু বলেনা। শার্মিলা পুনরায় শুধায়, ” আজকে যা জিজ্ঞেস করব সত্যি না বললে, তোর বাংলোতে তোকে খু’ন করে রেখে যাব।”
“খু’ন তো আমি হয়ে গেছি বউ। তোমাকে শাড়ী পরিহিতা অবস্থায় দেখে।”
” তোর ফ্লার্টের নানীর খালিঘর।”
“আসতাগফিরুল্লাহ।”
চোখমুখ শক্ত করে জবাব দেয় তাইজ্যিন। শার্মিলা পুনরায় বলে, “তোর মৃ’ত ভাই জীবিত হয় কীভাবে?”
“গুগলে আস্ক করো।”
“তোর সাথে কথা বলাটাই বেকার।”
“আসলেই! রোমান্সের সময় প্রশ্নের উত্তর দিতে কার ভালো লাগে বলো?”
শার্মিলা জবাব দেয়না। রাগে ফুঁসতে থাকে। কিছু একটা ভেবে টেবিলের কাছে যায়। ফলের ঝুড়িতে থাকা ছুড়িটা নিয়ে তাইজ্যিনের কাছে আসে। মুখের সামনে ছুড়িটা ধরে বলে, “আমি যা জিজ্ঞেস করব তার উত্তর দিবি।”
“আচ্ছা।”
শার্মিলা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। কিছুটা পেছাতে তাইজ্যিন উঠে দাঁড়ায়। তখন আবার ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। ভয়ে হাত থেকে ছুড়িটা পড়ে যায়। সামনে থাকা তাইজ্যিনের গলা জড়িয়ে ধরে তাকে আলিঙ্গন করে। শার্মিলা জেনো শান্তি পাচ্ছে। এই আলিঙ্গনে বিশেষ কিছু আছে। ভেতরটায় উত্তেজনা বিরাজ করছে না বরং শান্তি লাগছে।
“ডোন্ট লিভ মি! আই নিড ইওর হাগ।”
তাইজ্যিনকে কথাটা বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শার্মিলা। তাইজ্যিন ও শার্মিলাকে আগলে নেয়। সাতটা দিন না জেনো সাতকোটি বছর গিয়েছে তার। আধার নামলেই চৌধুরী বাড়ীতে যাওয়ার ইচ্ছে হতো। শা’লার বেলকনিটা এমন দিয়েছে চাইলেও টপকানো যাবে না। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছে তাইজ্যিন।
তাইজ্যিন শার্মিলাকে প্রশ্ন করে,
“কিছু ফিল করো?”
“হ্যাঁ!”
জবাব দেয় শার্মিলা। তাইজ্যিন বলে, “কী ফিল করো?”
“অদ্ভুত প্রশান্তি। যেটা দুনিয়ার কারোর মাঝে নেই। পাইনি,পাওয়া যাবেনা। একমাত্র তোমার কাছ ছাড়া।”
“এটাকে কী বলো জানো?”
“ভালোবাসা?”
“হয়ত!”
“ভালোবাসো আমায়?”
তাইজ্যিন জবাব দেয়না। শার্মিলা কিছুটা আলগা হয়। পা উঁচু করে তাইজ্যিনের অধরে অধর ঠেকায়। গালে,কপালে চু’মু খেয়ে বলে, “প্লিজ,দূরে থেকো না। তুমি আমাকে উন্মাদ বানিয়ে সরে গেছো। আমার প্রতিটা অঙ্গ তৃষ্ণার্ত তোমার ছোঁয়া পেতে।”
তাইজ্যিন জবাব দেয়না। জেনেরেটর চালু হতে লািট জ্বলে উঠে। শার্মিলা কিছুটা সরে যায়। তাইজ্যিন বলে, “ডিনার করেছ?”
“না।”
“করবে না?”
“খিদে নেই।”
“আচ্ছা চলো, তোমার প্রশ্নের জবাব দেব।”
কথাটা বলে শার্মিলার হাত ধরে রুমে নিয়ে যায়। চেন্জ করে খাটের উপর বসে তাইজ্যিন। শার্মিলা তার সামনে বসা। তাইজ্যিন অনুমতি দিতে শার্মিলা জিজ্ঞেস করে, “তোমার ভাইয়ের মৃ’ত্যু প্লান করা। তুমি জানো?”
“জানতাম না তবে জেনেছি।”
“আমাকে বিয়ে করেছ,প্রতিশোধ নিতে?”
“মোটেও না।”
“তো?”
“তোমার বাবা শাহীন ইমতিয়াজ খু’ন হওয়ার খবর যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তখন আমার আগ্রহ জাগে তাকে নিয়ে জানার। সব খোঁজা-খুঁজির পর জানি তার একটা মেয়ে আছে। সে নিজেও একজন সি আইডি। ট্রেনিংয়ে আছে,বাবা-মা মরে গিয়েছে অথচ আসতে পারছে না। আমার খারাপ লাগে। আমি তোমার ব্যপারে ঘাটাঘাটি করি। ইন্সপেক্টর শার্মিলা ইবনান শ্রেয়সী। তখন মনে,মনে ঠিক করি একদিনের জন্য হলেও তোমাকে আমার বে’ডে আনব।…
” তোমার মতলব বাজে ছিলো।”
“পুরো কথাটা তো শোন?”
“বলো?”
“তখন তো ছিলাম আরকী। প্রেম-ভালোবাসা,অনুভূতি বুঝতাম না। একটা গুন্ডার কাছে এসব আশা করাও বোকামী। কী জানি! তোমাকে নিয়ে একটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতো। আমি জানি তুমি আমার উপর নজরদারি করতে।”
“এ্যাই! মোটেও না।”
“তোমার উপর উল্টো আমার নজর ছিলো। সেদিন তোমাকে আমি ফুল গুলো ইচ্ছে করেই দিয়েছি। তুমি সেগুলো ব্রিজের কাছে ফেলে দিয়ে চলো গিয়েছো। জানো, সেগুলো আমি স্বযত্নে রেখে দিয়েছি। ফুল সুন্দর, ফুলকে অবহেলায় মানায় না।”
শার্মিলা অবাক হয়। তাইজ্যিন ফুল রেখে দিয়েছে?
তখন তাইজ্যিন শুধায়,
“সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়ে করব। ইব্রাহিম আমার কাছের লোক। তোমার তাকে চাই! সেজন্য বিয়েতে নিশ্চয়ই না করবেনা। পার্মানেন্ট না,কন্ট্রাক্টেই করিনা বিয়েটা। তারপর ঝগড়াঝাঁটির এক্টিং করতাম। যাই হোক! ফাস্ট ডে যেদিন তোমায় বুলেট চালাতে দেখেছিলাম ঠিক করেছিলাম, যাই হোক তোমাকেই আমার লাইফ পার্টনার বানাব। দরকার হলে মুড সুয়িং এর সময় গোলাগুলি খেলব।”
“আস্ত ডেভিল।”
“তারপর বলুন ইন্সপেক্টর শার্মিলা। নিজেকে তো খুব চালাক ভাবতেন।”
“এখনো ভাবি।”
“শত্রুর সাথে এতো মিল ভালো না।”
“আগে বল আমার বাবাকে কে খু’ন করেছে?”
“সেটা আমি সঠিক জানিনা। আমি তখন ব্যস্ত ছিলাম আমার কাজ নিয়ে। এই মা-রার প্লান আমার সাথে করা হয়নি। তুমি দেখোনি আমার ভাইকে নিয়ে কীভাবে মিথ্যে নাটক সাজিয়েছে। আমি নিজেই সারপ্রাইজড!”
শার্মিলা কিছু বলেনা। তার মানে তাইজ্যিন কিছু জানেনা।
“আচ্ছা শোন?”
“বলো?”
“তোমাকে দেখার পর ড্রিং করা ছেড়ে দিয়েছি। বিয়ের পর খারাপ কাজ করা ছেড়ে দিয়েছি।”
“এখন তোমার বাবার বিজন্যাসের অবৈধ পথটাও বন্ধ করে দাও?”
“কাজ চলছে।”
“আর ইও সিরিয়াস?”
“আমি একটা সুন্দর জীবন চাই শার্মিলা। এই গুন্ডামী,খু’ন এসব সুন্দর জীবন দেয়না।”
“আমাকে সাহায্য করবে তাইজ্যিন?”
“করব! চিন্তা কোরো না। আমার বউকে সাপোর্ট দিতে অলওয়েজ প্রস্তুত আমি। তোমার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে প্রমাণ চাই তো? আমি দেব তোমায় প্রমাণ।”
“ধন্যবাদ।”
তাইজ্যিন জবাব দেয়,
“হবে না।”
“তো?”
“চুমু দিতে হবে।”
“আচ্ছা এটা তো একটা চাহিদা তাইনা? ভালোবাসা না।”
“মায়ায় আটকে আজীবন থেকে যাওয়ার নামই ভালোবাসা। ভালোবাসায় একটু আধটু চাহিদা-প্রেম থাকতে হয়। বুঝলে?”
#চলবে
#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|২৩|
#শার্লিন_হাসান
“ধন্যবাদ।”
তাইজ্যিন জবাব দেয়,
“হবে না।”
“তো?”
“চুমু দিতে হবে।”
“আচ্ছা এটা তো একটা চাহিদা তাইনা? ভালোবাসা না।”
“মায়ায় আটকে আজীবন থেকে যাওয়ার নামই ভালোবাসা। ভালোবাসায় একটু আধটু চাহিদা-প্রেম থাকতে হয়। বুঝলে?”
“তৃষ্ণার্ত থাকতে দিবে না?”
“পূর্ণতায় তৃষ্ণা মানায় না। প্রেমটা তৃষ্ণার্ত থাকুক,ভালোবাসাটা পরিপূর্ণ হোক।”
শার্মিলা হাসে। দু’জনে বেলকনিতে যায়। আকাশের চাঁদের দিকে তাকায়। তখন তাইজ্যিন প্রশ্ন করে, “বাবা-মাকে মনে পড়ে?”
“আগে পড়ত বেশী। তুমি আসার পর তেমন মনে পড়েনা। তবুও পড়ে। বাবা-মা তো।”
“শোন, তোমাকে আমি একটা পরিবার দিয়েছি। মিলেমিশে থেকো। আমার আম্মু ভীষণ ভালো মানুষ। বাবাকে আমি ম্যানেজ করব।”
“আমি লাকি তাইজ্যিন।”
“কেন?”
“তোমাকে আমার জীবনে পেয়েছি সেজন্য।”
“আমি তোমার শত্রু শার্মিলা।”
“জানি, তবে আমার ক্ষতি করবে না এটা নিশ্চিত আমি।”
তাইজ্যিন স্মিত হাসে। শার্মিলার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে বলে, “কী নেশায় জড়ালে? কী মায়া বাড়ালে?”
শার্মিলা জবাব দেয়না। হুট করে বলে, “তোমার বুকের ব্যথা কমেছে?”
“না বেড়েছিলো।”
“এমা কেন? মেডিসিন নেওনি?”
“কিছু না।”
“অনেক কিছু।”
“বুঝে নিও।”
বিনিময়ে শার্মিলা তাইজ্যিনকে আলতো ধাক্কা দেয়। গলা জড়িয়ে ধরে চোখের পাতায় চুমু খায়। দু’জনে ঘোরের মাঝে চলে যায়। সাতটা দিন সাত যুগের ন্যায়। শার্মিলা তাইজ্যিনের স্পর্শ পেতে অধৈর্য হয়ে যায়। দুটো তনু তাঁদের তৃষ্ণা নিবারনের জন্য উৎসুক। মূহুর্তে দু’জন প্রণয়ের সাগরো ডুব দেয়।
★★★
শার্মিলা চৌধুরী বাড়ীতে নেই। ব্যপারটা নিয়ে সবাই চিন্তিত। কিন্তু তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর তাতে হেলদোল নেই। ও বিদায় হলেই জেনো বাঁচেন। কবে,কখন তার মুখোশ নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেয় কে জানে। ইব্রাহিম পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। পার্টি শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। তাইজ্যিন নেই। ভেবেছিল এই সুযোগটা একটু হলেও কাজে লাগাবো। আজকে শার্মিলার সাজ তার মাথা নষ্ট। নষ্ট মাথা ঠিক করার জন্য হলেও শার্মিলার ছোঁয়া দরকার। কিন্তু ও জেনো কচু পাতার উপরের পানির মতো। এই আছে এই নাই।
জেসিয়া ইসলাম তার একমাত্র নাতনি শেহজাদি নূরকে নিয়ে ব্যস্ত। তাঁদের পরিবারের ছোট সদস্য। সবাই ছোট্ট করে নূর ডাকে। নূর দাদীকে পেয়ে সব ভুলে গেছে। তিথিয়া চৌধুরী চেঞ্জ করে নিচে আসতে নূর তাকে বলে, “বড় আম্মু তাজিন চাচ্চু কোতায়?”
“তোমার চাচ্চু বেড়াতে গেছে। চলে আসবে।”
“চাচ্চু পতা। আমায় ভুলে গেতে।”
তার ছোট্ট, ছোট্ট বুলি সবাই বেশ পছন্দ করে। তখন নূর তার দাদীর থেকে নেমে ইব্রাহিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। কোমড়ে হাত দিয়ে তর্জনী উঁচু করে বলে, “এই যে তোমাল চুল গুলো এমন কেন?”
ইব্রাহিম বিরক্ত হয়। এই টুকু মেয়ে কীভাবে দাঁড়িয়ে তর্জনী উঁচু করে বলছে। তার স্টাইলটাই অন্যরকম। মনে,মনে তার বাপ চাচাকে গালি দিচ্ছে ইব্রাহিম। মেয়ে জেনো তাইজ্যিনের মতো। তখন ইব্রাহিম মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে বলে, “নূর এদিকে আসো।”
“তোমাকে পঁচা লাগে। যাব না আমি।”
কথাটা বলে নূর চলে আসো। ইব্রাহিম চোখমুখ শক্ত করে নেয়। এই টুকু মেয়ে কীভাবে রিজেক্ট করে দিলো। চোখ মুখ শক্ত করেই প্রস্থান করে ইব্রাহিম। তখন তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী এসে নাতনিকে কোলে নিয়ে চুমু খায়।
“শেহজাদি তোমার চাচ্চুকে কল দিয়ে বলো, ” বাড়ী আসতে।”
“কেন চাচ্চু বেড়াতে গেছে তোও।”
“হুম। এখন ঘুমাও আগামী কালকে চাচ্চুকে চলে আসতে বলো।”
“ওকে গ্রেন্ডফাদার।”
তখন নূরের আম্মু নাজিবা আসে। নূরকে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর থেকে নিয়ে যায়। অনেক রাত হয়েছে মেয়েকে ঘুমাতে হবে। কয়েক মূহুর্ত পর চৌধুরী বাড়ী পুরো নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। সবাই গভীর তন্দ্রায় সিক্ত।
এদিকে ইব্রাহিমের চোখে ঘুম নেই। তার ঘুম শার্মিলা কেড়ে নিয়েছে। রুম জুড়ে পায়চারি করছে সে। চুপচাপ শার্মিলার ফোনে কল দেয়। বার কয়েক রিং হতে শার্মিলা কল রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দেয়। তখন ইব্রাহিম শুধায়, “কোথায় তুমি?”
“তাইজ্যিনের বুকে।”
“বাজে কথা ছাড়ো। সত্যি করে বলো এখন,এই মূহুর্তে তুমি কোথায়?”
“সত্যি বলতে এই মূহুর্তে আমি আমার স্বামী তাইজ্যিনের খুব কাছে। কিন্তু এসব জেনে তুমি কী করবে?”
“চুপ! কিসের তাইজ্যিন। ওনলি ইব্রাহিম।”
“তুই চুপ থাক। তুই যে মনোভাব নিয়ে কল দিয়েছিস সেটা কিছুক্ষণ আগে আমি আর তাইজ্যিন সেরে ফেলেছি।”
“ছিঃ! আসতাগফিরুল্লাহ। মুখে কিছু আটকায় না।”
“তোর ভালো মানুষী তোর কাছে রাখ। আর একবার ডিস্টার্ব করলে মেশিন বরাবর লাথি মে’রে সেটা অকাজের বানিয়ে দেব। থু!”
কথাটা বলে শার্মিলা কল কেটে দেয়। ইব্রাহিম রাগে ফুঁসতে, ফুঁসতে ওয়াশরুমে যায়। মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালে। এই শার্মিলা।
এদিকে তাইজ্যিন শার্মিলার কথা শোনে হাসছে। শার্মিলা বিরক্তবোধ করে বলে, “এভাবে হাসতেই পারবা। জীবনেও কিছু করতে পারবা না।”
“কী করব বলো?”
“ওরে বাড়ী থেকে বিদায় করো?”
“করব। আর কয়টাদিন যাক তারপর।”
★★★
সকাল,সকাল ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙে তাইজ্যিনের। চোখ বন্ধ রেখে ফোন রিসিভ করে কানে দেয়। ওপাশ থেকে নূর শুধায়, “চাচ্চু তুমি আমাকে ভুলে গেত।”
“কে নূর?”
“দেখলে তো।”
“মাম্মা চাচ্চু তোমায় একটুও ভুলিনি। উল্টো তোমায় ভীষণ মিস করেছি।”
“বাড়ী আসো।”
“কিছুক্ষণ পর আসব সোনা।”
“ওকে চাচ্চু।”
তখন শার্মিলা চায়ের কাপ হাতে রুমে প্রবেশ করে। পড়নে তার নীল রঙের শাড়ী। তাইজ্যিন একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। তখন শার্মিলা তার কাছে এসে শুধায়, “গুড মর্নিং।”
“গুড মর্নিং।”
“যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।”
“তুমি প্লিজ এই শাড়ী চেঞ্জ করে আসো।”
“কেন? ”
“এই মূহুর্তে শাওয়ার নেওয়ার ইচ্ছে নেই আমার।”
“এই শাড়ীতে কী হয়েছে?”
“তোমায় একটু বেশী সুন্দর লাগছে।”
“নজর ঠিক করার জন্য গরব খুন্তি আনছি একটু ওয়েট করো।”
তাইজ্যিন উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। শার্মিলা মুচকি হেঁসে প্রস্থান করে। দু’জন মিলে ব্রেকফাস্ট করে রওনা হয় চৌধুরী বাড়ীর উদ্দেশ্য। তাইজ্যিন এক হাতে ড্রাইভ করছে অন্য হাত শার্মিলার হাতের মুঠোয়। তখন আবার শার্মিলার ফোনে কল আসে। আরোশ খানের কল। শার্মিলা রিসিভ করতে আরোশ খান শুধায়, “ইন্সপেক্টর তোমার খোঁজ নেই কেন? আমাদের প্লান ভুলে গেছ তুমি?”
“সব মনে আছে স্যার। আমি একটু ব্যস্ত।”
“শোনলাম তুমি নাকী ওই তাইজ্যিনের দিকে বেশী ফোকাস রাখছ। দেখো এটা একটা মিশন। গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে অন্য দিকে ফোকাস করলে তো আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না।”
“কিন্তু স্যার ফোকাস ওর দিকে রাখার পেছনেও তো কারণ আছে। আপনি একটা বিয়ে করেন তারপর বুঝতে পারবেন। আর হ্যাঁ আগামী কালকে যাচ্ছি হেডকোয়ার্টারে।”
কথাটা বলে শার্মিলা কল কেটে দেয়। বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে ফেলে। তাইজ্যিন তখন বলে, “চাকরীটা ছেড়ে দাও তাহলে।”
“খু’ন করে ফেলব এই কথাটা আর একবার বললে।”
“কথায়,কথায় থ্রেট দেও কেন?”
“অভ্যাস।”
“অভ্যাস বদলাও। পরে আমার বাচ্চারা এই স্বভাব পাবে।”
“আমি চাইনা আমার বাচ্চারা আমার মতো হোক। ”
“কেন?”
“আমার মতো হলে আমি সহ্য করতে পারব না। আমাকে যে তুমি সহ্য করছ এটাও অনেক।”
“ছিঃ! কী সব বলো তুমি?”
শার্মিলা জবাব দেয়না। চৌধুরী বাড়ীতে আসতে নূর প্রথমে তাইজ্যিনের কোলে উঠে। তাইজ্যিন তাকে কোলে নিয়ে চুমু খায়। তখন শার্মিলাকে বলে, “শার্মিলা মিট মাই ডটার শেহজাদি নূর।”
শার্মিলা মাথা নাড়ায়। মিষ্টি নূরের গাল টেনে দিয়ে বলে, “কিউট।”
“সুন্দর ভাবে বলো না?”
“আর কেমন সুন্দর করে বলব?”
দু’জনে কথা বলতে,বলতে সোফায় বসে। শার্মিলার ছোট বাচ্চাদের প্রতি অনীহা। এই কারণটা নিজেও জানে না। তাইজ্যিন আদর করবে এতেই তার চলবে। তখন নাজিবা আসে,তাওহিদ আসে। দুই ভাইয়ের দেখা সাক্ষাৎ হয়। নাজিবা শার্মিলা পরিচিত হয়ে নেয়। একটা সুন্দর পরিবার তাঁদের। তখন আগমন ঘটে ইব্রাহিমের। নূরের থেকে দূরে থাকাটা ভালো মনে হয়। কখন কী একটা বলে তার ইজ্জত সবার সামনে রফাদফা করে দিবে কে জানে। তখন ইব্রাহিম তাইজ্যিনকে বলে, “এতোদিনে আসতে মন চাইল?”
বিনিময়ে হাসে তাইজ্যিন। সবাই মিলে বড়সর একটা আড্ডার আসর জমায়। মূলত তাঁদের পরিবারের সবাই একসাথে। অনেক দিন পর দুই ভাইয়ের দেখা সাক্ষাৎ।
শার্মিলার এসব আড্ডা ভালো লাগেনা। তাই সে একটা কোণে এসে দাঁড়ায়। বিশাল বড় জানালা। বাইরের দৃশ্য দেখা যায়। মৃদু বাতাস গায়ে লাগছে। তখন নাজিবা শার্মিলার কাছে আসে। তাকে দেখে শার্মিলা শুধায়, “কিছু বলবে?”
“এমনিতে, তোমার আর ভাইয়ার বিয়ে লাভ ম্যারেজ?”
জবাব দেয়না শার্মিলা। কিছুক্ষণ মৌনতা বজায় রেখে বলে, “কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ।”
“মানে?”
“দুইবছরের।”
“তারমানে আর দেড় বছর আছো একসাথে?”
“হ্যাঁ!”
মুখে মেকি হাসি টেনে বলে শার্মিলা।
#চলবে