তৃষ্ণার্ত প্রেম পর্ব-২৪

0
6
তৃষ্ণার্ত প্রেম
বাংলা রোমান্টিক গল্প | তৃষ্ণার্ত প্রেম

#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|২৪|
#শার্লিন_হাসান

‘গতমাসে কোম্পানি বড় একটা ডাউন হয়েছে। প্রায় কোটি টাকার মতো।’

কথাটা শোনে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী চোয়াল শক্ত করে নেয়। অপরপাশের ব্যক্তিকে বলে, “এমনটা হলো কেন?”

“যে ফ্যাক্টোরি থেকে ড্রাগস সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’

” তো সেটা চালু করো না?”

“চালু করলে প্রমাণ সব আইনের হাতে চলে যাবে। আপনার কোম্পানি সব বন্ধ হবে সাথে জেলের ভাত কপালে জুটবে।”

“কাজটা কে করেছে?”
তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীর কথায় পেছন থেকে শার্মিলা বলে,

“আমি করেছি।”

কথাটা কানে পৌঁছাতে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী ঘুরে তাকায়। কল কেটে শার্মিলার দিকে তেড়ে আসতে, শার্মিলা তাকে থামিয়ে দেয়। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
“হুম… ভালো আছেন,ভালোই থাকুন। নিজের কুৎসিত রুপটা প্রকাশ করতে না চাইলে চুপচাপ সৎ পথে চলে আসুন।”

“তোর মাথা আমি দেহ থেকে ভাগ করে ফেলব।”

“ছিহ্! আমি আপনার ডটার ইন ল। আপনার ভবিষ্যত নাতিনাতনিদের আম্মু।”

তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয়। শার্মিলা পুনরায় বলে, “বেশী করলে এমন নাচ করাব মাথা ঘুরতে,ঘুরতে বাকা পথটাও সোজা দেখবেন।”

“তোকে তো আমি…

” আমার বাবাকে কে মেরেছে? সেটা সঠিক ভাবে বলে দিন নাহলে প্রমাণ সব আমি আমার টিমকে দিতে বাধ্য হবো।”

“আমায় থ্রেট দিচ্ছিস?”

“হুম।”

“বলব না আমি। কী করবি?”

“সোসাইটিতে আপনার বদনাম করবো। এছাড়া আর কিছু না ফাদার ইন ল।”

কথাটা শেষ হতে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী চিৎকার করে তাইজ্যিনকে ডাকে। তাইজ্যিন সময় নিয়ে রুমে প্রবেশ করে। তখন তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, “তোমাকে কে বলেছে খাল কেটে কুমির আনতে? তুমি ওকে বিয়ে করতে গেলে কেন? দুনিয়াতে মেয়ের অভাব পড়েছে?”

“মেয়ের অভাব পড়েনি ফাদার ইন ল। তবে শার্মিলা একপিস। আপনার ছেলে খুঁজে, খুঁজে ডায়মন্ডটাই পেয়েছে।”

“নিজের প্রশংসা করা বন্ধ করো।”
ধমকে বলে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী। তখন শার্মিলা শুধায়, “তাইজ্যিন এটা তোমার বাবা? চিৎকার চেঁচামেচি করে তো আমার হার্ট দুর্বল করে দিলো।”
তখন জবাবে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, “তাইজ্যিন এটা তোমার বউ? থ্রেট দিয়ে তো আমার হার্ট ব্লক করে দিলো। দেখো কীভাবে মুখে,মুখে তর্ক করে।”

তাাইজ্যিন দু’জনের অভিযোগ শোনে। শার্মিলার হাত শক্ত করে ধরে টেনে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তারা দু’জন যেতে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। রুম জুড়ে পায়চারি করছেন তিনি। এই শার্মিলা! কোথা থেকে কীভাবে চলে আসলো তার পরিবারে। ওকে পথ থেকে সরিয়ে দিলেই সব সমস্যা সমাধান। ভেবে ইব্রাহিমের রুমের দিকে অগ্রসর হোন তিনি।

করিডোরে আসতে তারিনের সাথে দেখা হয় শার্মিলা,তাইজ্যিনের। তাইজ্যিনের মুখের দিকে তাকিয়ে তারিন বুঝে রেগে আছে সে। শার্মিলা নিজের হাত ছাড়াতে ব্যস্ত। তাইজ্যিনের সাথে পারেনা। তাই চিৎকার করে বলে, “তোর বাপ আর তোকে আমি খু’ন করব।”

কথাটা শেষ হতে ঠাস করে চড় বসে যায় গালে। সাথে,সাথে শার্মিলা গালে হাত দেয়। রাগে,জেদে সেও তেড়ে আসে তাইজ্যিনকে চড় বসাতে। এরা মাঝে তারিন শুধায়, “ও তো চৌধুরী বাড়ীর বউ হওয়ার যোগ্যই না। জেঠুকে মা’রার হুমকি দেয়। ছিঃ!”

তাইজ্যিন শার্মিলার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে দরজা লক করে দেয়। তারিন তার কথার পাত্তাই পায়না।

রুমে এসে শার্মিলা শুধায়, “তোর বাপ আমার বাপকে খু’ন করেছে। কপাল না ফাটিয়েছি তাহলে আমার নাম ও শার্মিলা না।”

“মুখ সামলে কথা বলো শার্মিলা। ভুলে যেও না,আমি কেনো এই বাড়ীর প্রতিটা সদস্যই তোমার শত্রু।”

“দেখলি তো? এই তো আসল চেহারা বেড়িয়ে এলো। গতকাল রাতে নিশ্চয়ই মাতাল ছিলি?”

তাইজ্যিন জবাব দেয়না। রেগে সোফায় বসে আছে। অগ্নি চোখে শার্মিলার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার এতো সাহস কোথা থেকে আসে? তার বাবা সম্পর্কে ধারণা নেই শার্মিলার। আজকের বেয়াদবির বিনিময়ে কপালে কী আছে কে জানে। বউ তার,শাসন যা পাওয়ার তাকেই পেতে হবে। শার্মিলা রেগে তাইজ্যিনের দিকে তাকিয়ে আছে। বিরক্তি,রাগ,ক্ষোভ নিয়ে শুধায়, “আমার পথে কাটা হয়ে দাঁড়ালে, কাটা উপড়ে ফেলতে আমি দু’বার ও ভাববো না।”

“এ্যাই, ঘ্যানঘ্যান বন্ধ কর তো। এখনো চৌধুরীদের আয়ত্ত্বে আছিস। গুম করে দিলেও কেউ টের পাবে না।”

“আমাকে এভাবে বলতে পারলে?”

“তো কীভাবে বলব? আস্ত বেয়াদব তুই। বড়দের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় সেটা শিখিসনি। তোর সাথে আমার নিজেরই কথা বলতে লজ্জা লাগে,লজ্জা। এতো রাগ তোর? আমি তাইজ্যিন কখনো কারোর রাগ,ইগোকে পরোয়া করতাম না। শুধুমাত্র তোর রাগ আর ইগোর কাছে নত হই কারণ….
থেমে,
কারণ বলে লাভ নেই। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিস। সেটা পূরণ হলেই তো চলে যাবি। খবরদার আমার বাবা-ভাই বা পরিবারের কোন সদস্যের সাথে বা’জে বিহেভ করবি তো মাথায় তুলে আছাড় মারব।”

কথাটা শেষ হতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় তাইজ্যিন। শার্মিলা তার যাওয়ার পাণে তাকিয়ে আছে। এই এখন আবার বাড়ী ছেড়ে চলে যাবে না তো? শার্মিলা ভাবে। পরক্ষণে তাইজ্যিনের দেওয়া অপমানের কথা মনে পড়ে। নিজেকে শাসায়! বারবার তাইজ্যিনের প্রতি নরম হয়ে যাচ্ছি কেন?

শার্মিলা জানত না চৌধুরীদের কোম্পানিতে যে এবার লস হয়েছে। হয়ত ড্রাগসের ব্যপারটা তাইজ্যিন বাতিল করে দিয়েছে। পরক্ষণে ভাবে তার নাক গলানো উচিত হয়নি। কিন্তু তোফায়েল আহমেদ চৌধুরীকে দেখলেই বাবা-মায়ের কথা স্মরণ হয়।

★★★

“চাচ্চু কোতায় যাচ্ছে?”

নূর তাইজ্যিনের হাত ধরে আটকায়। তাইজ্যিন নিজের রাগ কন্ট্রোল করে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে জবাব দেয়, “বাইরে যাচ্ছি।”

“আমার জন্য গিফ্ট আনবে না? কত দিন পর দেখা। আমার কাছে তোমার জন্য গিফ্ট আছে চাচ্চু।”

নূরের কথায় হাসে তাইজ্যিন। তাকে কোলে নিয়ে চুমু খায়। তখন নাজিবা আসে। চাচা-ভাতিজির কান্ড দেখছে। তাইজ্যিন নূরকে নাজিবার কোলে দিয়ে বলে, “আমার মেয়ে আমার জন্য গিফ্ট এনেছে। শোনে ভীষণ খুশি হয়েছি।”

কথাটা বলে গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। নাজিবা নূরকে নিয়ে ভেতরে আসে। তখন রিশা আসে তাদের কাছে। তাঁদের সাথে তিথিয়া চৌধুরী ও বসেন। ইতোমধ্যে তারিন তিথিয়া চৌধুরীকে বলেছে তাইজ্যিন আর শার্মিলার কথা। তাতে শার্মিলার উপর ক্ষুব্ধ তিথিয়া চৌধুরী। মেয়েটা কেমন জেনো। একটু বেশী সাহস দেখায়। তখন রিশা বলে, “নাজিবার সাথে প্রায় চারবছরের মতো চলছি। মিশুক মেয়েটা। তাইজ্যিনের বউটা ও না। রুম আর বাইরে ছাড়া কাউকে চিনে না। কেমন জেনো ও।”

“ও তো একজন সিআইডি অফিসার।”

তারিনের কথায় উপস্থিত সকলে অবাক হয়। তিথিয়া চৌধুরী শুধায়, “তুমি শিওর?”

“হ্যাঁ। ইন্সপেক্টর শাহীন ইমতিয়াজের একমাত্র মেয়ে শার্মিলা। ওর বাবা যখন মা-রা গিয়েছিলো তখন ও ট্রেনিংয়ে ছিলো।”

তারিনের কথায় রিশা শুধায়, “তাইজ্যিন ওকে খুঁজে বের করল কীভাবে?”

“সমস্যা কোথায় চোর আর পুলিশ সংসার করছে।”

“এই ইব্রাহিম কোন ভরসায় এখনো বসে আছে?”

প্রশ্ন করে রিশা। তখন তিথিয়া চৌধুরী শুধায়, “ও তো বিডি থেকে চলে যেতো। কিন্তু এখন বাইরে বের হলেই ওকে ধরে জেলে নিবে। যেকোন মূল্যে।”

★★★

ইব্রাহিম এবং তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী সাথে তাওহিদ ইশতিয়াক চৌধুরী তারা তিনজন তাঁদের কোম্পানির পাশের লেকের কাছে দাঁড়িয়ে। তখন তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, “তাহলে নেক্সট পার্টিতে শার্মিলা তার বাবার কাছে যাবে।”

তাওহিদ অবাক হয়ে শুধায়, “মানে কী বাবা? ও আমাদের পরিবারের সদস্য। ওর সাথে তোমার কিসের শত্রুতা? তাইজ্যিনের কথা ভাবো?”

“কিসের সদস্য তাওহিদ। একনাম্বারের শত্রু ও। আমাদের কোম্পানির ড্রাগসের সব প্রমাণ ওর কাছে আছে। এমনকি সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়েছে। আর ও সাধারণ কেউ না। শাহীন ইমতিয়াজের মেয়ে।”

কথাটা বলে চিন্তায় কপালের ভাজ ফেলেন। তাওহিদ তখন বলে, “ওয়াও! শাহীন আংকেলর মেয়ে?”

তখন ইব্রাহিম শুধায়, “শাহীনকে আংকেল বলছে কেন তোমার ছেলে?”

তখন তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী চোখের ইশারা করেন। তাওহিদ কিছুই জানে না। তখন ইব্রাহিম থেমে যায়। তাওহিদ পুনরায় বলে, “আংকেলের মেয়ের কোন ক্ষতি করো না। এমনিতে এসব ড্রাগস সাপ্লাই করে দেশের যে কী ক্ষতি তোমরা করেছ। তরুনদের নিয়ে আমাদের ভবিষ্যত। সেখানে প্রতিদিন হাজারো তরুণ ড্রাগসে পিষে যাচ্ছে। তাঁদের ভবিষ্যত বরবাদ করে মোটা অংকের টাকায় পকেট ভরিয়ে এসির নিচে ঘুমাচ্ছো তোমরা।”

“তাওহিদ আমি তোমার বাবা।”

“তুমি আমার বাবা! কিন্তু ন্যায়কে ন্যায় আর অন্যায়কে অন্যায় বলতে আমার দ্বিধা নেই।”

“আমার তাইজ্যিনই ভালো। তুমি এখান কাজে যাও।”

তাওহিদ প্রস্থান করে। ইব্রাহিম কপালে হাত দিয়ে স্লাইড করে। তাইজ্যিন ভালো না ছাই! তাওহিদের থেকেও উপর তাইজ্যিন। তখন ইব্রাহিম প্রশ্ন করে, “ছেলে দু’টো কী সত্যি তোমার?”

“কোন সন্দেহ?”

“ছিটেফোঁটা মিল নেই তোমার সাথে।”

#চলবে