#তৃষ্ণার্ত_প্রেম|২৬|
#শার্লিন_হাসান
“শোন এই দফায় বেঁচে গেলে তোমায় আমার বাবুর মাম্মাম বানাবো।”
শার্মিলা হাসবে নাকী কাঁদবে বুঝতে পারছে না। পানিতে পড়েও মানুষ এভাবে বলে। তাইজ্যিন ভেবেছিলো গভীর পানি হবে। কিন্তু এটা সাইড হওয়ায় গলা অব্দি পানি হয় তাইজ্যিনের।
অন্যদিকে কপালে বুলেট লাগায় আহত হয়েছে ইব্রাহিম। তাইজ্যিন কোথা থেকে আসলো এখানে? তাকে ধরাধরি করে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদিকে তাইজ্যিন শার্মিলাকে পানি থেকে উঠানোর জন্য গুটি কয়েক গার্ডস আসে।
তাইজ্যিন শার্মিলাকে উঠানো হলে শার্মিলা শুধায়, “আমার বাবার খু’নি কে?”
“ইব্রাহিম।”
নিরব কন্ঠে শুধায় তাইজ্যিন। ততক্ষণে ইব্রাহিমকে হসপিটালের উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হয়েছে। তখন শার্মিলা বলে, “তুমি ওর আগে আসলে কেন?”
“আমি না আসলে ও তোমায় মে’রে ফেলতো।”
“আমি তো ভেবেছিলাম তুমি….
কৃত্রিম হাসে তাইজ্যিন। হাটা ধরে গাড়ির দিকে। শার্মিলা ও তার পেছন,পেছন আসে। তাইজ্যিন গাড়িতে বসে শার্মিলার জন্য অপেক্ষা করে। দু’জনে সোজা বাড়ীতে চলে যায়।
তার কিছুক্ষণের মধ্যে খবর আসে ইব্রাহিম ইজ নো মোর। তাইজ্যিন কিছু বলেনা। শার্মিলা তখন রুমে আসে। তাইজ্যিনের কলার ধরে বলে, ” তোমার এতো বড় সাহস আমার শিকার তুমি ছিনিয়ে নিলে।”
তাইজ্যিন কিছু বলেনা। তখন শার্মিলা শুধায়, “মোরাল অব দ্যা স্টোরি, তুমি ওকে মে-রে বাঁচিয়ে দিলে।”
“হয়ত!”
কথাটা বলে শার্মিলার থেকে নিজের কলার আলগোছে ছাড়িয়ে তাকে শক্তপোক্ত বাঁধনে বেঁধে নেয়। শার্মিলা কিছু বলতে চাইছে তখন তাইজ্যিন তর্জনী তার ঠোঁটের উপট চেপে ধরে। মাথার পেছনে চুলে হাত গুঁজে বলে, “ডোন্ট ওয়ান্ন টক! সব এখানে শেষ। আমার বাবার বিরুদ্ধে কেস হয়েছে। কোম্পানি ঠিক করে দিয়েছি আমি। এবার প্লিজ আমায় শান্তি দাও।”
“তুমি কাজটা ঠিক করোনি।”
“তোমার প্ল্যান সাইডে রাখো প্লিজ। আমি শান্তি চাই সেজন্য তোমার কাজ গুলো সহজ ভাবে সম্পন্ন করলাম।”
“এখন কী চাই?”
“সুন্দর একটা ভবিষ্যত।”
শার্মিলা জবাব দেয়না। তাইজ্যিন তাকে ছেড়ে দেয়। একটা লিস্ট হাতে ধরিয়ে বলে, “একজন বউয়ের যেসব গুন থাকা দরকার সেগুলোর লিস্ট এখানে। ভালো করে পড়ে দায়িত্ব পালন করিও।”
“তোমার লিস্ট তোমার কাছেই রাখো।”
“আগামী কালকে তোমার বাবা-মায়ের কবর দেখতে যাব।”
কথাটা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় তাইজ্যিন। তখন তাওহিদের সাথে দেখা হতে মেকি হাসে। তাওহিদ মাথা নিচু করে বলে, “স্যরি ভাই। সবটাই বাবার প্ল্যান ছিলো।”
তাইজ্যিন জবাব দেয়না। তাওহিদ পুনরায় বলে, “আমি জানি তুই নূরকে,নাজিবাকে আমাকে কতটা ভালোবাসিস। এভাবে উদাও হওয়া ঠিক হয়নি। মূলত আমাদর মৃত্যুর নাটক করে শার্মিলাকে তোর হাতে মারতে চেয়েছিলো। দোষটা তার গাড়ে দিয়েছিলো যাতে রাগের মাথায় ওকে খু’ন করিস। তারপর আরকী তাঁদের রাস্তা ক্লিয়ার।”
“হাহা!”
“দেখ যাকে মা-রার কথা ছিলো আজকে তাকেই প্রটেক্ট করছিস।”
“এটাকে কী বলে?”
“ভালোবাসা?”
কথাটা বলে তাইজ্যিন বেড়িয়ে পড়ে। তাওহিদ সহ তারা হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয়। ইব্রাহিমের ব্যপারটা থানা অব্দি গড়িয়েছে। শার্মিলা মিলে সেটা ঠিক করে। সাথে কিছু টাকা খাইয়ে সবটা ক্লোজ করে দিয়েছে।
কোন একটা কবরস্থানে ইব্রাহিমকে দাপন করা হয়। অন্যদিকে তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী তাইজ্যিনের উপর ক্ষুব্ধ। তাইজ্যিন সেসবে পাত্তা দেয়না।
★★★
শার্মিলা তার ডিউটিতে এসেছে। আরোশ খানে সাথে সবটাই বলে। তার টিম ম্যাটরা সবই শুনেছে। তখন সৌরভ শুধায়, “প্রতিশোধ নিতে গিয়ে প্রেমে পড়ে গেলেন ম্যাম।”
“সবটাই সময় আর কপালের লিখন।”
“তবে ম্যাম জিতেছেন।”
শার্মিলা হাসে। এই কেসটা ক্লোজ এবার নতুন কোন কেস নিয়ে সবাই ব্যস্ত।
শার্মিলা বিকেলের দিকে বাড়ী ফিরে। তার কিছুক্ষণ পর তাইজ্যিন অফিস থেকে বাড়ী ফিরে। দু’জনে কাজে মনোনিবেশ করেছে। তবে একটু আধটু দূরত্ব অবশ্যই রয়ে গেছে। একটা সুন্দর এবং শান্তিপূর্ণ জীবন চায় দু’জনেই।
রাতের দিকে নূর এসেছে তাইজ্যিনের কাছে। শার্মিলা নিজের কাজে ব্যস্ত ছিলো। নূর আর তাইজ্যিনের খুনসুটি আড়চোখে দেখছে। তখন তাইজ্যিন একটু জোরেই বলে, “নূর তোমার আরেকটা বোন বা ভাই কিনে আনলে কেমন হয়? তোমার সাথে খেলবে। তোমায় আপু বলে ডাকবে।”
“অনেক ভালো হয় চাচ্চু।”
তখন শার্মিলা মৃদু কেশে উঠে। রাতের ডিনারটা কোন রকম করে শার্মিলা রুমে। তাইজ্যিন আস্তে ধীরে রুমে আসে। আজকাল তার বউটা তার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এরই মাঝে তারিন এসে নক করে তাইজ্যিনদের রুমে। পারমিশন পেতে ভেতরে প্রবেশ করে। শার্মিলা বিরক্ত হয় তারিনকে দেখে।
“ভাইয়া আজকাল অফিস নিয়ে ব্যস্ত। একটা ট্যুর ও তো দিতে পারো।”
“সময় নেই। অন্য কোন কথা বলার থাকলে বলো।”
“ধুর সবই একরকম।”
কথাটা বলে তারিন রুম থেকে চলে যায়। তখন শার্মিলা উঠে শুধায়, “ও তোমার কাছে এতো আবদার রাখে কেন?”
“ওকে আমি ইগ্নোর করি তো। ”
“এই তুমি আমাকে শিখাচ্ছো? আমি দেখছি তো ইগ্নোর করো নাকী করো না।”
“আজব!”
“শোন এখন ঝগড়া করতে পারবো না। এমনিতেও তোমার সাথে ঝগড়া ছাড়া কিছুই হয়না।”
“ঝগড়াই ভালো।”
★★★
একটা নবদিনের সূচনা। শার্মিলা রেডি হয়ে তাইজ্যিন সহকারে নিচে যায়। আজকে পুরো চৌধুরী পরিবার রেডি হয়েছে। শার্মিলার বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করতে যাবে। তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী ও আছেন। তাইজ্যিনের কথার উপর তিনি আর কিছু বলেননি। এমনিতে নিজের পার্টনার মরেছে এখন উনিশ বিশ হলে ওই মেয়ে তাকেও মেরে দিবে। ইব্রাহিম না মরলে তো কয়মাস পরে হলেও তার জেল হতো। কেসের বিষয়টা টাকা দিয়ে মেটানো যায়। মনে,মনে ঠিক করে নিয়েছেন এই সুযোগ নিজেকে শোধরানোর৷ নিজের সুন্দর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চান না তিনি৷
পারিবারিক কবরস্থান লেখা। চৌধুরীদের চারটা গাড়ী থামে সেখানে। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে কবর জিয়ারত হয়। সবাই মিলে রওনা হয় একটা এতিম খানায়। যেখানে খাবার দেওয়া হয়েছে সাথে মিলাদ ও পড়ানো হয়েছে। সব প্লান তাইজ্যিনের। শার্মিলা শুধু তার কান্ড দেখছে আর সামিল হচ্ছে।
দিনটা এতিমখানার বাচ্চাদের সাথে কাটিয়ে বিকেলে সবাই বাড়ী ফেরে। শার্মিলা গাড়ী নিয়ে বের হয় আড়ংয়ে। তাইজ্যিনের জন্য কিছু গিফ্ট কিনে। সেই সাথে পারিশকে বলে ছাঁদের একসাইড ডেকোরেশনের ব্যবস্থা করে। আজকে তাইজ্যিনের বার্থডে। তাইজ্যিন এসব বিশ্বাস করেনা। সেজন্য তেমন করে অনুষ্ঠান ও করেনা। তবে এবার শার্মিলা চাচ্ছে ছোট্ট সুন্দর মূহুর্ত কাটাতে। যা স্মৃতি হয়ে থাকবে। একগুচ্ছ শুভ্র গোলাপ নেয় তাইজ্যিনের জন্য। সাথে কিছু গিফ্ট ও নেয়।
সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আজকে জামদানী শাড়ী পড়েছে শার্মিলা। নিজেকে সুন্দর করে পরিপাটি করে। নিচে গেলে নূরের সাথে দুষ্টুমিতে মেতে উঠে। মেয়েটা এতো কিউট আর মিশুক যে শার্মিলা নিজের দাম্ভিকতা বিরক্তি ধরে রাখতে পারেনি। বলা যায় তাইজ্যিন আর শার্মিলার চোখের মণি সে। তিথিয়া চৌধুরীও নাতনির বাচ্চাকে বেশ আদর করেন।
ডিনারের পর্ব সেরে তাইজ্যিন রুমে আসে। জরুরি কল আসায় বেলকনিতে চলে যায়। তার পেছন দিয়ে শার্মিলা আসে। তাইজ্যিনের কলের ব্যস্ততা তার সহ্য হচ্ছে না। বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে ফেলে। তাইজ্যিন বুঝতে পেরে তাকে আগলে নেয়। প্রিয় পুরুষের আলিঙ্গনে থেকে বিরক্তি ভাবটা চলে যায়। তখন তাইজ্যিন পকেট থেকে একটা বক্স বের করে শার্মিলার সামনে রাখে। বক্সে দু’টো কাপল রিং। শার্মিলা তাইজ্যিনের দিকে এলনজর তাকায়। কল শেষ হতে একটা রিং তাইজ্যিন শার্মিলাকে পড়িয়ে দেয়। শার্মিলা ও একটা রিং তাইজ্যিনকে পড়িয়ে দেয়।
“এই কতদিন হলো তুমি আমাকে চুমু দেওনা। এমনকি আমি যে দেব সেটার ও সুযোগ নেই।”
তাইজ্যিনের কথায় শার্মিলা সময় নেয়নি। গলা জড়িয়ে ধরে চোখের পাতায় চুমু দিয়ে বলে, “নেও! হয়েছে শান্তি?”
“আরে বাবা! এতো ফাস্ট।”
“হু,হু!বরটা আমার।”
তাইজ্যিন হাসে৷ শার্মিলা জীবনে আসার পর সব তার চেঞ্জ। এই পরিবর্তনটা আসলে উপহার তার জন্য। এই মেয়েটাকে সে না চাইতেও অনেকটা ভালোবাসে৷ যেটা প্রকাশ করতে পারেনা। তবে ভীষণ ভালোবাসে সে। শার্মিলার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
“শোন বউ, ভালোবাসি।”
“আমিও ভালোবাসি।”
রাত বারোটা বাজার কিছুক্ষণ আগে শার্মিলা তাইজ্যিনকে নিয়ে ছাঁদে আসে। হাত টেনে তাকে নিয়ে যাচ্ছে শার্মিলা। নির্দিষ্ট সময় হতে শার্মিলা সাজানো জায়গায় আসে। তাইজ্যিনকে বলে, “হ্যাপি বার্থডে তাইজ্যিন ইশতিয়াক চৌধুরী।”
“থ্যাঙ্কিউ। বাট এসব কী?”
“সারপ্রাইজ।”
“আমি বার্থডে পালন করা পছন্দ করিনা শার্মিলা।”
“পালনের কী হলো? জাস্ট আমাকে নিয়ে একটু সময় কাটাবে।”
“আচ্ছা।”
শার্মিলার আর্জি মেনে নেয় তাইজ্যিন। কেক কেটে একটা মূহুর্ত কাটায়। দ্যান শার্মিলা তাইজ্যিনকে একগুচ্ছ শুভ্র গোলাপ দিয়ে বলে,
“শোন, তোমায় আমি ভালোবাসি। আমার আঁধার অম্বরে তুমি একটা চাঁদ হয়ে এসেছ। যার আলোয় আমার অন্ধকার কেটে গেছে। আমার অম্বরের সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়েছে। এই আলোটা জ্বালিয়ে রেখে আমায় সারাজীবন আলোকিত করে রেখো।”
তখন তাইজ্যিন মুচকি হেঁসে শুধায়, “আমার তৃষ্ণার্ত প্রেমের পূর্ণতা তুমি। প্রেমটা হয়নি তবে ভালোবাসা হয়েছে। তুমি শুধু আমার হয়েই থেকো।”
সমাপ্ত