কুহকিনী পর্ব-০২

0
11

#কুহকিনী
#হুমায়রা_শাম্মী
পর্ব সংখ্যা —-২

ইমতিয়াজ সাইমার গলায় চুমু দিয়ে বলল, “এখন তোমাকে হারাম ভাবে স্পর্শ করেছি।বিয়ে না করলে আরো গভীর ভাবে স্পর্শ করব।আমি এত ভালো ছেলে না।তোমার মতো সুন্দরীকে দেখার জন্য আনিনি।ব্যবহার করতে এনেছি।”

সাইমা গলা মুছতে থাকে।রাগে বলল, “আপনার মুখের ভাষা কত খারাপ।আপনি নোংরা মনমানসিকতার মানুষ।আপনার এমন ব্যবহারের জন্য সেদিন আপনাকে আমি রিজেক্ট করেছি।আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করব না।তা আপনি আমার সাথে যায় করুন না কেনো।”

ইমতিয়াজ সাইমার হাত ধরে বলল, “স্যরি।আর কখনো এমন বাজে কথা বলব না।”

সাইমা তার হাত টেনে নিয়ে তার দিকে তাকায়।মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে চেহারায় কোনো অনুশোচনা নেয়।এর পিছনে নিজের ফন্দি লুকিয়ে আছে।সাইমা বলল, “আপনার কত মুখোশ।আপনার মুখে কোনো অনুশোচনা পাচ্ছি না।পেলেই কি আপনাকে আমি বিয়ে করব!কখনো না।আপনাকে বিয়ে করলে সমাজ,পরিবার, বন্ধুরা আমাকে নানান কথা শুনাবে।”

“তাহলে তুমি সমাজ,পরিবারের মেয়ে?”

“হ্যাঁ,আমি ছোট থেকে এতটুকু হওয়া অব্দি যা করেছি সব চিন্তা করে করেছি।তাই এখন তাই করব।তাছাড়া আমি আমার পরিবারকে কষ্ট দিতে পারব না।আপনার মতো খারাপ, নোংরা ছেলেকে তো মরে গেলেও বিয়ে করব না।”

“আমার খাঁচায় এসে আমাকেই ধমকাচ্ছ।এর পরিণতি কি হবে জানো?”

“এর পরিণতি ভয়াবহ হলেও আমি আপনাকে ভয় পাচ্ছি না।”

ইমতিয়াজ সাইমার চোয়াল চেপে ধরে।সাইমার কাছে মনে হচ্ছে গালের মাংস দাঁতে মিশে যাচ্ছে। ব্যথায় তার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।ইমতিয়াজ সেটা দেখে তাকে ছেড়ে দিয়ে খাটে ধাক্কা ফেলে দেয়।ইমতিয়াজ তার শার্টের বোতাম দু’টি খুলে সাইমার দিকে ঝুঁকে তার দু’হাত চেপে ধরে।সাইমা ঘৃণায় অন্য দিকে ফিরে বলল,” আপনি যা ইচ্ছে তা করুন আমি কিছুতেই রাজি হবো না।”

“যদি বিয়ের আগের কাজ এখন করি?”

“করুন,তাহলেও রাজি হবো না।”

“যদি তোমার ভাইকে মেরে ফেলি।”

সাইমা হাসতে থাকে।যেনো ইমতিয়াজ কোনো রসিকতা করেছে।অনেকক্ষণ হেসে সাইমা বলল,” আপনার দম আছে?আমার ভাইকে মারতে গিয়ে আপনি প্রাণ হারাবেন না তো?”

“তোমার ভাইয়ের এত ক্ষমতা? ”

–হ্যাঁ,

“তাহলে তোমাকে এখন অব্দি বাঁচাতে পারছে না কেনো?”

“বাঁচাবে,আর আপনাকে উত্তর শাস্তি দিবে।”

ইমতিয়াজ উঠে যায়।সাইমা বিছানা থেকে উঠে বলল, “আপনার সাহস এতটুকু!আমার ভাইকে ভয় পেলেন বুঝি?”

“আমি তোমার ভাইকে ভয় পাই না।সঠিক সময়ে এসে দেখা যাবে কে কাকে ভয় পায়।”

“আচ্ছা। ”
ইমতিয়াজ রুম থেকে বের হচ্ছে। তখন সাইমা বলল, “কোথায় যাচ্ছেন?”

“কাজি আনতে যাচ্ছি।এখনি তোমাকে বিয়ে করব।তোমার এত মুখের বুলি শেষ করে দিব।”

“যান যান, এসে আমাকে পাবেন না।”

ইমতিয়াজ চলে যায়।সকাল এগারোটা বাজে।কলিংবেলের শব্দে নয়িমের ঘুম ভাঙে।শুক্রবার দিনে সে সারাদিন ঘুমায়।এখন কে আসতে পারে ভেবে নয়িম দরজা খুলে।হাই তুলে সামনে তাকায়।জাবিন দাঁড়িয়ে আছে।হাতে বই।তাকে দেখে বলল,” তুমি?”

“আপনার রুম পড়াশোনা করতে পারি?”

“কেনো?তোমার রুমে কি?”

“আপু কয়েকজন ছেলেকে নিয়ে এসেছে।তাদের দৃষ্টি ভালো না।কেমন করে আমার দিকে তাকায়।আমি তাদের দেখে রুমের দরজা বন্ধ করে পড়তে বসি।কিন্তু তারা আমাকে পড়তে দিচ্ছে না।তারা আমাকে তাদের সাথে গল্প করতে বারবার দরজা খুলতে বলছে।”

“তোমার আপুকে বলো তুমি পড়বে তাহলে তো তারা তোমাকে ডিস্টার্ব করবে না।”

“বলেছি আপু বলে একটু তাদের সাথে গল্প কর।এতে তোর পড়ার কোনো ক্ষতি হবে না।”

নয়িম জাবিনকে ভিতরে আসতে বলে।জাবিন তার বোন মনিরার সাথে ঢাকায় পড়াশোনা করতে এসেছে।তাদের পরিবার অন্য শহরে থাকে।কিন্তু মনিরা অন্য রকম মেয়ে।পড়াশোনা রেখে ছেলেদের সাথে আড্ডা দেয়।এর ভোগান্তি এখন জাবিন দিচ্ছে।মনিরা মাঝে মাঝে বাসায় কয়েকটা ছেলে নিয়ে আসে।ছেলেগুলো আবার খারাপ। তারা জাবিনের দিকে বাজে দৃষ্টি দেয়।জাবিন বোনকে এগুলো বললে সে এতটা গুরুত্ব দেয় না।জাবিন মা বাবাকে একদিন এইসব বলতে চেয়েছিল।সেদিন মনিরা তাকে খুব মেরেছিল।
জাবিন নয়িমের টেবিলে বসে বই খুলে।এই ঢাকা শহরে সে একজনকে বিশ্বাস করে।জাবিন পড়া শুরু করে।নয়িম ফ্রেশ হয়ে দু’টি কফি করে একটা জাবিনের সামনে রাখে।জাবিন বলল, “আমি কফি খাই না।”

“এখন খাও।সবকিছুতে অভ্যাস্ত হতে হয়।”
জাবিন কফির মগ ঠোঁটে লাগায়।এক ঢোক গিলে মুখ বিকৃতি করে।বুঝা যাচ্ছে এটা খুব কষ্টে গিলেছে।জাবিন মগটা টেবিলে রেখে বলল,” আমি আপনার কথা আমার ফ্রেন্ডের কাছে বলি।”

–কেনো?

জাবিন লাজুক হাসি হাসল।সে বলল,” এইযে আপনি আমাকে মাঝে মাঝে সাহায্য করেন।”

“তুমি পারফিউম দিয়েছ?”

–হ্যাঁ।

“আমি না করেছিলাম।”

“আপনি রাতে দিতে না করেছিলেন।”

“এখন দিনেও না করছি।দিনেও দিবে না।”

“কিন্তু আমার ভালো লাগে।”

কলিংবেল বাজল।নয়িম উঠে দরজা খুলে।ইমতিয়াজ দাঁড়িয়ে আছে।ইমতিয়াজ ফ্ল্যাটের চাবি পকেটে ভরে বলল, “আমি কাজি আনতে যাচ্ছি। তুই যাবি?”

“তোর যাওয়ার দরকার নেয়।আমি যাই।”

“তুই যাবি,যা তাহলে।”

নয়িম রুমে আসে।তৈরি হতে থাকে।জাবিন তাকে দেখে বলল,” কোথাও যাচ্ছেন?”

“হ্যাঁ,আমি যাওয়ার পর তুমি ভিতর থেকে দরজা আটকে দিবে।”

–আচ্ছা।

নয়িম বের হয়ে যায়।জাবিন দরজা লাগিয়ে দেয়।আজ এত নিরিবিলি জায়গাতে সে মন দিয়ে পড়বে।তার অনেক পড়তে হবে।একদম ততদিন অব্দি যতদিন পর্যন্ত না সে নয়িমের উপযুক্ত হবে।
ইমতিয়াজ ফ্ল্যাটে ঢুকে।সাইমাকে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।সাইমার মুখে কোনো চিন্তা নেয়।সে সুখের গান গাইছে।ইমতিয়াজ তা দেখে বলল, “বাহ তোমার কণ্ঠ অনেক সুন্দর।তো এত খুশি কেনো?আমার কাছে এসে এত খুশি তাহলে।”

সাইমা তার দিকে ফিরে বলল, “আপনার পতনের কথা ভেবে খুশি হচ্ছি।”

“দিবালোকে স্বপ্ন দেখো তাহলে।”

সাইমা আবারো জানালায় ফিরে।ইমতিয়াজ নিজেই বুঝতে পারছে না সাইমা এত খুশি কেনো।ইমতিয়াজ সাইমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “কাজি আনা হচ্ছে। এখনি আমাদের বিয়ে হবে।”

দরজায় কলিংবেল বাজে।ইমতিয়াজ গিয়ে দরজা খুলে।ওপাশে তানিমকে দেখে আশ্চর্য হয়।দ্রুত দরজা বন্ধ করতে নেয়।কিন্তু তার আগে তানিম তার লোকেদের নিয়ে ভিতরে ঢুকে।ইমতিয়াজের মুখে জোরে ঘুষি দিয়ে বলল, “তোর সাহস কি করে হয় আমার বোনকে কিড*ন্যাপ করার।তুই ভেবেছিলি আমি তোকে খুঁজে পাবো না।দেখ তোকে একদিন হলো না পেয়ে গেলাম।”

ইমতিয়াজ এত লোকদের সাথে পারবে না।তাই সে হাঁটু গেড়ে বসে যায়।সাইমা ভাইয়ের কণ্ঠ পেয়ে তার কাছে ছুটে আসে।ভাইয়ের পাশে দাঁড়ায়।তানিম বোনের হাত ধরে বলল, “তুই ঠিক আছিস?”

–হ্যাঁ,

তানিমের লোকেরা ইমতিয়াজকে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে।সাইমা ইমতিয়াজের অসহায়, পরাজয়ের মুখ দেখে বলল,” আমি বলেছিলাম আজ আমি বাড়িতে যে করে হোক যাবো।আমার কথা ঠিক হলো তো। ”

সাইমা ভাইয়ের দিকে ফিরে বলল” ভাইয়া সামনের ফ্ল্যাটে তার বন্ধু নয়িম থাকে।সেও তার সাথে জড়িত।”
তানিম ফ্ল্যাট থেকে বের হয়।তার লোকেরা ইমতিয়াজকে তাদের গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের লোকেরা তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল।কি হয়েছে বুঝতে পারছে না।তানিম নয়িমের ফ্ল্যাটের দরজায় কলিংবেল বাজায়।জাবিন দরজা খুলে।অপরিচিত লোকদের দেখে বলল,” কে আপনারা?”

তানিম রুমে ঢুকে।আশপাশে নয়িমকে খুঁজতে থাকে।জাবিন বলল, “কাকে খুঁজছেন?”

“নয়িম কোথায়?”

জাবিন বুঝতে পারে নয়িমকের কোনো বিপদ পড়েছে।তার সামনের লোকেরা তাকে পেলে ছাড়বে না।কারণ সে ইমতিয়াজকে বাঁধা অবস্থায় দেখেছে।জাবিন বলল, “এখানে নয়িম নামের কেউ থাকে না।’

তানিম জাবিনের দিকে আসে।আপাদমস্তক ভালো ভাবে দেখে বলল, “এতটুকু মেয়ে কত সুন্দর মিথ্যা বলতে পারে।”

“আমি মিথ্যা বলছি না।আপনি বিশ্বাস না করলে অন্য কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।”

তানিম একত্রিত হওয়া লোকদের নয়িম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে।তারা এই নামে কাউকে চিনে না বলে।তারা নয়িমকে চিনবে কি করে।নয়িমকে সবাই এই নামে কেউ চিনে না।কারণ সে এখানে কবির নামে পরিচিত।দুইজন তাকে নয়িম নামে চিনে।একজন ইমতিয়াজ,আরেকজন জাবিন।আর সে যে আজ এই ফ্ল্যাটে উঠেছে তা বাড়িওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না।এখানে বাড়িওয়ালা উপস্থিত নেয়।তবে কয়েকজন বলতে চেয়েছিল কবির হয়তো নয়িম হবে।কিন্তু তারাও অন্যকে বিপদে ফেলতে বলেনি।তানিম জাবিনের সামনে এসে বলল, “কোন ক্লাসে পড়ো?”

জাবিন ভয় পায়।হঠাৎ এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে কেনো?জাবিন মাথানিচু করে বলল,” টেন।’

“এখানে থাকো?”

–জ্বী।

“যদি তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে এর শাস্তি তোমার ভোগ করতে হবে।”
জাবিন তানিমের হুমকিতে ভয় পায়।এতএত মানুষের সামনে কত সহজে বলে ফেলল।তানিম সাইমাকে নিয়ে চলে যায়।জাবিন নিঃশ্বাস ছাড়ে।তানিম যতক্ষণ ছিলো ততক্ষণ অব্দি যেনো তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।

চলবে,,,,,,