তুমি রবে নীরবে পর্ব-১৫+১৬

0
24
তুমি রবে নীরবে

#তুমি_রবে_নীরবে (১৫)
~নাদিয়া সাউদ।

আশফিকের কথায় অপ্রস্তুত হলো রিশা।অনেকটা নমনীয় ভাব বোঝা যাচ্ছে অপরপ্রান্তের পুরুষটির।মুহূর্তে অনেক কিছু ভেবে ফেলল রিশা।তবে কি উত্তর দেবে ভাবতে থাকল।তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
“আমরা একটা মানুষকে বাহির থেকে যতটুকু বুঝি, যেমন ভাবি হয়তো ভেতরটা ভিন্নও হতে পারে।আমি সেই ছোট রিশা নেই আশফিক ভাই।ভয় পাবার কোনো কিছুই না।হয়তো সেভাবে কথা বলার মতো সুযোগ হয়নি আপনার সঙ্গে।তাই এরকম মনে হয়েছে আপনার।

রিশার কথায় থমকে গেল আশফিক।এখনো রিশা তার জন্য কষ্ট পাচ্ছে কিনা সেটুকু যাচাই করতেই ফোন করেছিল সে। মাঝে বহুদিন রিশার কোনোরকম উপস্থিতি ছিল না তার পোস্টে। আজকে হঠাৎই রিশার মন্তব্য দেখে ভেবেছিল মেয়েটা বুঝি মুভ অন করে নিয়েছে।এখন মনে হচ্ছে পরিস্থিতি আগের মতোই!ভেতরে এক দীর্ঘশ্বাস গুমোট হয়ে রইল আশফিকের।রিশার জন্য কোথাও একটা সুক্ষ্ম খারাপ লাগা কাজ করছে!অন্য কিছুর আবদার করলে হয়তো আশফিকের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হতো!প্রিয় মানুষের একটুখানি অবহেলা কতখানি য’ন্ত্রণা দেয় সেটা আশফিকের চেয়ে ভাল কেউ জানে না।জেনিথ মেয়েটিকে এক দেখাতেই পছন্দ করে ফেলেছিল সে।কত কাঠখড় পুড়িয়েছে সুশ্রী ললনার মন জয় করতে!প্রতিটি মানুষের জীবনের গল্পই ভিন্ন হয়,যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সেই পরিস্থিতিতে উপনীত হই ততক্ষণ তা উপলব্ধি করতে পারি না।আশফিকের ভাবনার মাঝে অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়ে গেল।নীরবতা ভঙ্গ করে কথার প্রসঙ্গ পাল্টাল আশফিক।রিশার পড়াশোনা সম্পর্কে টুকিটাকি জিগ্যেস করে লাইন কেটে দিল।মনে হচ্ছে এভাবে মেয়েটাকে হুটহাট কল দিয়ে কষ্ট বাড়িয়ে দিয়ে কাজ নেই।আশফিক মনেপ্রাণে চায় রিশার জীবনে কেউ আসুক!ক্ষনিকের এই আবেকটুকু ভুলিয়ে দিয়ে,ভালবাসায় জীবন ভরিয়ে দিক!খাটের উপর ফোন ফেলে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিশা।হঠাৎই মনখারাপের দল তার চারিপাশ ঘিরে ধরল।কবে মুক্তি মিলবে এদের থেকে?

২৫.
রাতের খাবারে রওনকের জন্য বেশ আয়োজন হয়েছিল।জামাই আদর কাকে বলে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে রওনক!পেট নয় যেন আস্ত একটা গোডাউন ভেবেছে তারা!ঠিকমতো নড়তে চড়তে পারছে না এখন।কুহু ইচ্ছে করে তার পাতে খাবার তুলে দিচ্ছিল বেশি বেশি।সুযোগ পেলে টুক করে মুখেও পুরে দিচ্ছিল খাবার!সবই যে রওনককে হেনস্তা করার জন্য করেছে, বুঝতে বাকি নেই রওনকের।শাড়ির আঁচল কোমড়ে বেঁধে নিয়ে বিছানা গোছাচ্ছে কুহু।আড় চোখে রওনকের বিরক্তমাখা চেহারাটা উপভোগ করছে।ঠোঁট চেপে হাসছে খানিক।খাট থেকে নেমে দাঁড়াল কুহু। গুঁজে রাখা শাড়ির আঁচল ঠিক করে বলল,

“এই তো রেডি।এবার জলহস্তির মতো শরীরটা নিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ুন তো।

কুহুর কথার বিস্মিত দৃষ্টি ফেলে তাকাল রওনক।

“কোনদিক থেকে জলহস্তি মনে হয় আমাকে?

” জলহস্তি না হলে এতগুলো খাবার কোনো মানুষ খেতে পারে বলুন?

কথার পৃষ্ঠে জবাব তৈরি কুহুর।রাগ হলো রওনক।সবাই মিলে জোরজবরদস্তি করে খাইয়ে এখন জলহস্তির তকমা দেওয়া হচ্ছে তাকে!এই কুহুটা খুব বিচ্ছু!আপাতত ঝগড়া করার মতো অবস্থায় নেই রওনক।খানিক্ষন হাঁটাহাঁটি করল সে।খাটের উপর দৃষ্টি পরতেই কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোমার এইটুকু সিঙ্গেল খাটে দুজন ঘুমাব কি করে?

ছোট একটা ওয়ারড্রব থেকে জামা বের করছিল কুহু।রওনকের কথায় তড়াৎ করে দৃষ্টি ফেলল।তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল,
” আপনি একা ঘুমাবেন।আমি চলে যাব মায়ের রুমে।

“চলে যাবে মানে?আমার কোনোকিছু দরকার পরলে কাকে বলব?

“জগ ভর্তি পানি রেখে যাব আমি।আর রুম থেকে বের হলে বাম দিকে একটু গেলেই ওয়াশরুম পাবেন।আশা করি আমার আর প্রয়োজন নেই এখানে।

কথাটুকু বলেই বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল কুহু।আঁচলে টান পরতেই চলন্ত পা দু’টো থেমে গেল।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাবার সাহস পেল না।রওনক ভাই যে শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছে এতে সন্দেহ নেই!কেমন অসস্থিতে পড়ে গেল।ততক্ষণে কুহুর শাড়ির আঁচল ধরে একেবারে কাছাকাছি চলে আসল রওনক।খানিকটা নিচু হয়ে কুহুর কানে পাশে ভরাট স্বরে ফিসফিস করে বলল,
” তুমি আমার নব বিবাহিতা স্ত্রী!এই মুহূর্তে তোমাকেই তো আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন!কি ভেবেছ পালিয়ে যাবে?খাট ছোট তাতে কি হয়েছে?দরকার হয় বুকে নিয়ে সারারাত ঘুমাব !

উষ্ণ নিশ্বাস কান ছুঁতেই মৃদু কেঁপে উঠছিল কুহু।কথা শেষে শব্দ করে হাসল রওনক।ঘুরে দাঁড়িয়ে রওনকের ঠিক চোখ বরাবর দৃষ্টি রাখল কুহু।হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে সাদা টিশার্ট পরা লম্বাটে গড়নের বলিষ্ঠ দেহি এক পুরুষ।

“ভালবাসা ছাড়া কোনো সম্পর্ক হয় না রওনক ভাই।করুণায় তো আর একটা সংসার সারাজীবন টেকে না!আমাদের এই অস্বাভাবিক বিয়ের পরিণতি নিয়ে ভয় হয় আমার।এত বাঁধার মধ্যে দিয়ে ভাল কিছু কি করে আশা করা যায়?এই বিয়েতে কি আপনি মন থেকে রাজি ছিলেন না আমি ছিলাম?হতে পারে আমি আপনার স্ত্রী।অধিকার সম্পূর্ণ রাখেন আপনি।কিন্তু আপনাকে মানতে আমার সময় লাগবে রওনক ভাই।

কথাটুকু বলেই কুহু বেরিয়ে গেল।রওনক ঠায় দাঁড়িয়ে আছে স্তব্ধ হয়ে।শুধুমাত্র এই ভয়টার জন্য কুহুকে সে কোনোদিন মনের কথা জানাতে পারেনি।অনুভূতিটুকু নীরবেই লালিত করে গেছে বক্ষপিঞ্জিরায়!এই মুহূর্তে কুহুর সঙ্গে নমনীয় আচরণ করায় হয়তো মেয়েটা ভাবছে কেবল নিজের পৌরুষ চাহিদার জন্য কাছ ঘেঁষছে রওনক!এরুপটা হতে থাকলে তো ভালবাসার জায়গায় উল্টো ঘৃণা জন্ম নিবে!চলুক এই বৈবাহিক সম্পর্ক তার দ্বারা মোতাবেক।কুহুর ভালবাসার জন্য আমৃত্যু অপেক্ষায় থাকবে রওনক!কৌশলে কুহুকে নিজের করে নিয়েছে। ও চোখে তাকিয়েও সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া যাবে অনায়াসে!দু-কদম হেঁটে কুহুর ছোট বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল রওনক।আকাশে আজ মস্তবড়ো একটা চাঁদ উঠেছে!অগণিত নক্ষত্রের ছড়াছড়ি!মৃদুমন্দ বাতাস বইছে।কপালে পরে থাকা চুলগুলো দুলছে রওনকের।আচমকা কোণায় দৃষ্টি থমকাল।লাল রঙা একটা গোলাপ গাছেই শুকিয়ে আছে!এগিয়ে গিয়ে তাতে আঙ্গুল বুলাল রওনক।তার কুহুর প্রিয় ফুল!মনেপ্রাণে চাইল কুহুর ভেতরে থাকা রাগ,ভুল এই ফুলটার মতোই শুকিয়ে ঝরে যাক!সেখানে ভালবাসার জন্ম হয়ে ফুটুক নব্য গোলাপ!

,

শাড়ি পাল্টে কলাপাতা রঙা সুতির থ্রিপিস পরে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো কুহু।বারংবার তার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে অজানা কারণে।সেই ছোট বেলা রওনক ভাইয়ের আচরণে মনে হতো খুব রাগী সে!কুহুকে সহ্য করতে পারে না।যখন বড়ো হলো অনেক কিছু বুঝতে শিখলো,তখন মনে হতো রওনক ভাই তাকে পছন্দ করে হয়তো বা!এক সময় সেটাও ভুল প্রমাণিত হলো।প্রিয় কারো সঙ্গে বাজে আচরণ কেউ করে নাকি?তবে রওনক ভাই মন্দ আচরণ করলে সেদিন বাড়ি ফিরে কুহুর ঘুম হতো না সারারাত!অন্যরকম এক কষ্ট অনুভব হতো!প্রায়শই রওনক ভাইয়ের এরকম রাগ রাগ আচরণ একপ্রকার হেঁসে আর উদ্ভট কথায় উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।আর পন নিয়েছিল যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখবে।সেই কিনা জনমভর বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে গেল!বিয়েটা করতে চায়নি কুহু!তবে কেন জানি বাঁধাও দিতে পারেনি।মন সবকিছু মেনে বসেছিল!পরিস্থিতিতেই হয়তো।যেমনটা পরিস্থিতির জন্য রওনক ভাই দয়া করল।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ মুছে মায়ের রুমের দিকে পা বাড়াল কুহু।

“কোথায় যাচ্ছ কুহু?

ভাবীর ডাকে চমকে তাকাল কুহু!তোহার হাতে পানির বোতল।কেমন সন্দিহান চাহনি।হাসার চেষ্টা করে বলল কুহু,
” মায়ের ঘরে যাচ্ছি ভাবী।

“মাকে তো ঘুমের মেডিসিন দিয়েছি অনেক্ষণ আগেই।ঘুমিয়ে গেছে।কিছু বলবে?

কুহু একটু অপ্রস্তুত হলো।মায়ের ঘরে ঘুমাতে যাচ্ছে শুনলে এখন ভাবী তাকে একগাদা জ্ঞান দিবে।সেই রওনক ভাইয়ের কাছেই পাঠাবে।এগিয়ে এসে ভাবীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
” মা ঘুমিয়ে গেছে?কথা ছিল।আচ্ছা চলে যাচ্ছি তাহলে।

কথাটুকু বলে দেরি করল না কুহু।চলে আসলো নিজের কক্ষে।সারা রুম জুড়ে রওনকের দেখা নেই!খানিকটা ভয় পেয়ে গেল কুহু!রাগ চলে আবার চলে যায়নি তো লোকটা!বেলকনির কথা মনে হতেই ছুটলো সেদিকে।ট্রাউজারের পকেটে হাত রেখে দূরে আকাশে মত্ত রওনক!আবছা অন্ধকারে তার লম্বাটে অবয়বের দিকে কিছু পল তাকিয়ে রইল কুহু।রিনরিনে স্বরে শুধাল,

“ঘুমাননি এখনো?

ঘুরে তাকাল না রওনক।অম্বরে দৃষ্টি রেখেই বলল,
“আমরা সবসময় পরিস্থিতির স্বীকার হই ঠিক আছে।কিন্তু তার পেছনেও অনেক কারণ থাকে কুহু।হয়তো আমরা সেভাবে তার ব্যাখ্যা খুঁজি না।আমাদের বিয়ে নিয়ে যদি তোমার মনের ভীতি থাকে তাহলে বলব এটা নিছক তোমার মনের ভয়।হোক যেভাবে বিয়ে,সত্যি এটাই আমরা স্বামী-স্ত্রী।সম্পর্ক জোড় করে টিকিয়ে রাখার মতো কিছু নয়।বিয়ে হয়ে গেছেই বলে যে আমিও স্বাভাবিক সবটা মেনে নিয়েছি এমন নয়।সময় দুজনেরই প্রয়োজন।বাকি সম্পর্কের পরিণতি সময় বলবে।

রওনকের শক্ত কথাগুলো শুনে নীরব দাঁড়িয়ে রইল কুহু।কোথাও একটা যৌক্তিক মনে হলো সব।রওনক পাশ কাটিয়ে চলে গেল কুহুকে।একমুহূর্তের জন্য মনে হলো রওনক তাকে অবজ্ঞা করল!কুহুর মন থেকে অহেতুক সন্দেহ,ভয় দূর করতেই এটুকু কথা বলে গেল রওনক।মেয়েটা তাকে বুঝুক একটু একটু করে।ভালবাসতে শিখুক।তখন রওনকের অনুভূতির যথাযথ মূল্যায়ন করবে।সে অবধি অপেক্ষায় রওনক।ততদিন নীরবেই ভালবেসে যাবে।

কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসল কুহু।দেওয়ালের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে আকাশের পানে চাইল।ছোট্ট একটা তপ্ত শ্বাস বেরিয়ে এলো।এই পুরুষকে যে সে বুঝতেই পারে না!এক জনম কেটে গেলেও মনের হদিস করতে পারবে বলে মনে হয় না।কি লেখা আছে কুহুর এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের খাতায়?খুব যে ভাবায়!

২৬.
আকাশে ঝলমলে রোদ্দুর।ছাতা নিয়ে বেরিয়েছে রিশা।টুকিটাকি কেনাকাটা বাকি ছিল।মন খারাপের জন্য বের হওয়া হয়নি এতদিন।আজকেই বের হওয়ার জন্য উপযুক্ত দিন মনে হলো।কালকে প্রচন্ড মন খারাপ ছিল।আজ বের হয়ে মন ভাল করার একটুখানি চেষ্টা ছিল।হাতভর্তি ব্যাগ সমেত ছাতা সামলাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে রীতিমতো।এই মুহূর্তে কোল্ডকফি খেলে মন্দ হতো না।তবে এই হাতভর্তি ব্যাগপত্র নিয়ে কোনোরকম রিকশা ডেকে বাড়ি চলে যাওয়াই শান্তি মনে হচ্ছে।বাসায় গিয়ে ঝটপট ঠান্ডা কিছু করে খেলেই হবে।কপাল চুইয়ে ঘাম পরছে রিশার।ভরদুপুরে খুব একটা রিকশার আনাগোনা নেই।বাম হাতের উল্টো পিঠে ঘাম মুছতে গিয়ে খসে পরল একটা শপিং ব্যাগ পিচঢালা রাস্তায়।সেটা নেওয়ার জন্য সবে উবু হলো রিশা।একজন পুরুষ এগিয়ে এসে ব্যাগটা তুলে নিল সযত্নে।চমকাল রিশা!ছেলেটি উঠে দাঁড়াতেই হতবাক হলো!চোয়াল ঝুলে গেল!এভাবে দেখা হয়ে যাবে ভাবেনি!তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা হাসিমুখে বলল,
“তুমি চাইলে আমি সাহায্য করতে পারি আইরিশ!ব্যাগ গুলো সামলে নিয়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তোমার।

চলবে…….

#তুমি_রবে_নীরবে (১৬)
~নাদিয়া সাউদ

সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে এক সুদর্শন যুবক।পরনে ট্রাউজার প্যান্ট আর কালো রঙা পলো টিশার্ট।অনবদ্য হাসি ঝুলছে ঠোঁটের কার্নিশ জুড়ে!অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে রাতিমের দেখা পেয়ে চমকেছে রিশা।অবাক করার বিষয় হচ্ছে এখনো তার সম্পূর্ণ নামটা ভোলেনি লোকটা!কেবল একবার শুনেছিল।ঈষৎ হেসে উত্তর দিল রিশা,ব্যাগগুলো ঠিক সামলে চলে যেতে পারবে।অযথা কষ্ট করতে হবে না রাতিমকে।ব্যাগ হাতে নিয়ে নিষ্পলক দৃষ্টি ফেলে রিশার পানে তাকিয়ে রইল রাতিম।রোদের তাপে কপালে ভাজ পরেছে।চোখ ছোট ছোট হয়ে এসেছে।রিশার কথা তোয়াক্কা না করে বাকি ব্যাগগুলো নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে ধরে বলল,
“এইটুকু সাহায্য আমি তোমায় করতেই পারি মেয়ে।হুট করে অসময়ে যখন দেখা হয়েই গেল চলো কোথাও বসে কফি খাওয়া যাক!

এতক্ষণে যেন রিশার মনের কথাটুকুই ব্যক্ত করল রাতিম।তবে ভাইয়ের সমতূল্য লোকটার সঙ্গে কফি খেতে কেমন জড়তা কাজ করছে।রওনকের সঙ্গে একবার হোস্টেল থেকে ছুটি শেষে রিশাদের বাড়িতে এসেছিল রাতিম।সেই সুবাদে পরিচয়।গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ির সবাই মিলে ছাদে আড্ডা হয়েছিল সেদিন।কি মার্জিত ব্যবহার ছিল রাতিমের।সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ার দারুণ দক্ষতা আছে।রিশার মা বাবার থেকে সেদিন অজস্র প্রশংসা কুড়ালেও দ্বিতীয়বার এই লোকের পদধূলি আর তাদের বাড়িতে পরেনি।রিশার মা প্রায়শই আফসোস করতেন ছেলেটা আসে না কেন?রওনকের উত্তর ছিল এখন আর একসঙ্গে থাকে না তারা।রিশার ভাবনার মাঝেই হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে নিল রাতিম।ঘোর কাটতেই থতমত খেল রিশা।বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটে নিয়ে হাসলো খানিক।রাতিমের ঠোঁটে সেই হাসিটুকুই লেগে আছে।অবশেষে কফিশপে যেতে রাজি হলো রিশা।কেউ নিজে থেকে বললে মুখের উপর না বলাটা শোভা পায় না।কিছুটা এগিয়ে এসেই একটা কফিশপে প্রবেশ করল দুজন।কর্ণারে টেবিলে মুখোমুখি বসল ছোট্ট গোল টেবিলে।রাতিমের ফর্সা মুখশ্রী রক্তিম হয়ে আছে!নাকের ডগায় টোকা পরলেই যেন রক্ত বেরিয়ে আসবে!ভাজ করা চুল গলিয়ে ঘাম ঝরছে কপালের কোণা বেয়ে।তবুও কোথাও একটা স্নিগ্ধ লাগছে!ধূসর চোখের মণি জোড়া রিশার দিকে পরতেই দৃষ্টি সরিয়ে নিল রিশা।হুট করেই তার মনে হলো কোনো পুরুষকে এতটা খুঁটিয়ে দেখা অনুচিত!তবে রাতিম ভাই চোখে পরবার মতোই পুরুষ!এত ফর্সা ছেলে সচরাচর দেখা যায় না।হাসলে খোঁচা দাঁড়ির আড়ালে টোল বোঝা যায় সুস্পষ্ট!খানিক্ষণ পিনপতন নীরবতার পর কফি চলে আসল।টেবিলের উপর দু’হাত রেখে বসেছে রাতিম।রিশার পড়াশোনা,বাড়ির লোক সম্পর্কে টুকিটাকি জিগ্যেস করলো।খাওয়ার মাঝে মাঝে উত্তর দিচ্ছিল রিশা।তবে চোখ তুলছিল না।রাতিমের দৃষ্টি হালকা গোলাপি রঙা থ্রিপিস পড়া রিশার পানে।কথার মাঝে বার বার আইরিশ বলছিল রাতিম।ব্যাপারটা খেয়াল করার মতোই।এই নামটা রিশার জীবন থেকে প্রায় বিলুপ্তই বলা চলে!আইরিশ নামটা থেকে আত্নীয়রা রিশ বলতো।বান্ধবীরা আরেক ধাপ এগিয়ে আইরিশ কে সোজা রিশা বানিয়ে দিল!এতদিন পর নিজের সম্পূর্ণ নামটা শুনে নেহাৎ মন্দ লাগছে না।

“তোমার কি মন খারাপ আইরিশ?

কথাটা শুনে চট করেই সম্মুখে বসা পুরুষের পানে চাইল রিশা।সত্যিই তো মন ভীষণ খারাপ।সেটা কি চেহারায় স্পষ্ট নাকি?মুহূর্তে চমৎকার করে হাসল রিশা।বলল,
” কই না তো!আচ্ছা আপনার কি খবর রাতিম ভাই?আমাদের বাড়ি তো আর কখনো গেলেন না।ভাইয়ার সঙ্গে কি পরিচয় আছে আপনার?

শেষের কথাটা শুনে একটু থমকাল রাতিম।স্মিত হেসে বলল,
“আমার আর খবর।পড়াশোনার পাট চুকিয়ে জব করছি।আসলে রওনকের সঙ্গে হুট করেই যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।আমি যশোর চলে গিয়েছিলাম বাবা,মায়ের কাছে।তারপর ঢাকায় আসার পর রওনের সাথে আবারো যোগাযোগ হয়।

” তারমানে এখনো যোগাযোগ আছে ভাইয়ার সঙ্গে?তাহলে আমাদের বাসায় চলুন।বাবা,মা দেখলে খুব খুশি হবে।

আচমকা রাতিমের মুখ চুপসে গেল।বাড়িতে গেলেই তো কুহু তাকে দেখে ফেলবে!সবমিলে বিশাল এক গন্ডগোল পাকাবে!শালা রওনক তাকে একেবারে ফাঁসিয়ে দিয়েছে!নিজের রাস্তা কিভাবে ক্লিয়ার করবে এখন?অবশিষ্ট কফি টুকু খেয়ে বলল রাতিম,
“হু..হ্যা যাব।তবে অন্যদিন।

রিশা খেয়াল করল আবারও রাতিমের কপালে ঘাম জমেছে।স্বাভাবিক ভাবেই সেটা বলল রিশা।পিলে চমকে উঠলো রাতিম।টেবিল থেকে টিস্যু নিয়ে কোনোরকম মুছতে থাকল।বাইরে তীব্র রোদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘবাস ফেলল রিশা।মন কিছুতেই ভাল করতে পারছে না।রাতিমের চক্ষু এড়াল না বিষয়টা।প্রায় দু’বছর যাবৎ আড়াল থেকে লুকিয়ে রিশাকে খেয়াল করে যাচ্ছে সে।প্রথম দেখাতেই চঞ্চলা কিশোরীর প্রেমে পরেছিল!সময়ের সঙ্গে এই অনুভূতি প্রখর হয়েছে।আবেগ ভেবে উড়িয়ে দিতে পারেনি।হাত ঘড়িতে সময় দেখে উঠে দাঁড়ায় রিশা।ভাবনার ঘোর কাটে রাতিমের।এইটুকু সময় যেন চোখের পলকে ফুড়ুৎ!অথচ এক যুগ কাটিয়ে দেওয়া যেত এখানে বসেই!সুন্দর মুহূর্ত গুলো কেন যে ক্ষনিকের সময় নিয়ে আসে!তপ্ত শ্বাস ফেলে ব্যাগ গুলো তুলে নিল রাতিম।রিকশা অব্দি এগিয়ে দিল রিশাকে।চক্ষুগোচর হওয়া অব্দি এই তাপ দাহে দাড়িয়ে দেখছিল রাতিম।বাতাসে রিশার গোলাপি রঙা শিপনের উড়না ওড়ছে!সেদিকে তাকিয়ে থেকে এক প্রেমিক পুরুষের হৃদপৃন্ড থমকে গেছে জগৎ ভুলে!

২৭.
সকালেই নাশতা শেষ করে চলে গেছে রওনক।ভার্সিটিতে যেতে হবে তাকে।কুহু খাটে বসে গুনগুন সুর তুলে আমের আচার খাচ্ছে।এত সহজ রওনক ভাই তাকে রেখে যাবে ভাবেনি।যাই হোক মন মতো এখানে থাকবে কুহু।এমনিতেও নিজের রুম আর জায়গা ছাড়া একটুও ঘুম হয় না।তার উপর রওনক ভাইয়ের রুমে সহজে ঘুম আসতে চায় না।দু’দিন যাবৎ ঠিকঠাক ঘুমই হচ্ছে না।ঘড়িতে দুপুর তিনটে।মনে হচ্ছে একটুখানি ভাতঘুম হলে মন্দ হবে না।আগের ঘুম গুলো পুষিয়ে নেওয়া যাবে।খাটি বাটি রেখে হাত ধুয়ে আসল কুহু।চোখ লেগে যাচ্ছে ঘুমে।খাটে এসে শুয়ে পরলো সোজা বালিশে।চিরচেনা পারফিউমের সুভাস টা পেতেই মস্তিষ্ক ঝাঝা করে উঠল!সবখানেই যেন লোকটা লেপ্টে আছে!না থেকেও শান্তি দিচ্ছে না!বালিশ উল্টিয়ে নিয়ে ধুপ করে শুয়ে চোখ বুজলো কুহু।

,

বাসায় এসে ব্যাগগুলো খাটের কোণায় রাখল রিশা।ব্যাগ থেকে ফোন নিয়ে বসল ফ্যানের নিচে।প্রলম্বিত শ্বাস ফেলল।সার্চ বক্স থেকে আশফিক ভাইয়ের নাম মুছে দিবে।আর কখনো ওই আইডিতে যাবে না।যেটা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই সেটা আকড়ে ধরে থাকা মানে কষ্টের বোজা বাড়ানো!কম্পিত হস্তে ফেসবুকে প্রবেশ করলো রিশা।শেষ বারের জন্য আশফিকের আইডিতে গেল।একমুহূর্তের জন্য নিশ্বাস আঁটকে গেল!এক শেতাঙ্গিনীর কোমড় জড়িয়ে হাস্যজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছে আশফিক।মেয়েটির এক হাত আশফিকের শক্তপোক্ত বুকে!ওয়েস্টার্ন পরিহিতা মেয়েটির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেকটাই উন্মুক্ত!জেনিথ নামের মেয়েটির আইডিতে ফটো’টা ট্যাগ করা!বাকি আর দেখতে পারল না রিশা।চোখ ঝাপসা হয়ে গাল ভেজাল নোনা স্রোত!কলিজা বোধহয় কেউ দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছে!নিদারুণ এক অসহনীয় যন্ত্রণা!ফোন ফেলে রেখে হাঁটুতে মুখ গুজে ফুপিয়ে উঠল রিশা।

,

নিকষ কালো রাত্রি!ঝুম বৃষ্টি চারিদিক ঝাপসা!মাঝরাস্তায় একা দাঁড়িয়ে আছে কুহু।কিঞ্চিৎ ভয় উঁকি দিচ্ছে মনে!আশেপাশে রওনককে পাগলের মতো খুঁজছে তার চোখজোড়া!এরকম পরিস্থিতিতে কি করে লোকটা ফেলে চলে গেল তাকে?মন জানে, সর্বদা কঠিন পরিস্থিতি থেকে আগলে রাখার জন্য তার রওনক ভাই আছে!রাস্তার দু’ধারের লম্বা লম্বা গাছগুলোর তীব্র বাতাসের তোড়ে হেলে পরতে চাইছে!ভয়ে শরীর কাটা দিয়ে উঠল কুহুর।চিৎকার করে রওনককে ডাকল সে!কিছুদূর দৃষ্টি থমকে গেল।শুভ্র পাঞ্জাবি পরিহিত রওনক ভাই হাসিমুখে এগিয়ে আসছে।অত্যল্পকালে সব ভয় কেটে গেল কুহুর।স্বস্তির শ্বাস ফেলল।জোড় গলায় বলে উঠল রওনক,
“নির্বোধ মেয়ে এত ভয় পাওয়ার কি আছে?একজন তোমায় নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসে!নিজে মরে যাবে তবুও তোমার গায়ে একটুখানি আঁচর পরতে দিবে না……

পুরো কথা শেষ করতে পারলো না রওনক।বিশাল এক গাড়ি এসে পিষে দিল তাঁকে!চোখের পলকেই হয়ে গেল যেন!গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল কুহু!শরীর অসার হয়ে এলো সম্পূর্ণ!মাথা বেগতিক ঘুরতে লাগল।এই ফাঁকা রাস্তায় দস্যূ গাড়িটা কোথা থেকে আসল হঠাৎ?বাকি কিছু ভাবতে পারল না কুহু।লুটিয়ে পরলো ভেজা রাস্তায়!

আচমকা চোখ মেলে তাকাল কুহু।আবছা আলোয় কাউকে দেখলো ঝুঁকে আছে তার মুখের কাছে!চিনতে এক সেকেন্ডও দেরি হলো না কুহুর।শোয়া অবস্থায় ঝাপটে ধরল রওনককে!ঘনঘন শ্বাস ফেলে কাঁপা স্বরে বলল,

“আমাকে এভাবে ছেড়ে চলে যেতে পারেন না আপনি।হারাতে পারব না কখনো আপনাকে!কুহু অস্তিত্বহীন আপনি ছাড়া!মরে যাব,বিশ্বাস করুন আমিও মরে যাব!

কথাগুলো বলতে বলতে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো কুহু।রওনক বুঝতে পারলো এই ভর সন্ধ্যায় মেয়েটা দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে উঠেছে!তবে স্বপ্নে যে রওনকও ছিল এটা বুঝতে বাকি নেই।আনমনে ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি ফুটল রওনকের।সারাক্ষণ তবে কুহুর মস্তিষ্কে তারই বিচরণ চলে!যার দরুণ স্বপ্নেও দেখছে মেয়েটা।ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে কুহুর মুখের কাছে ধরল রওনক।চোখমুখ কুঁচকে নিয়ে ওঠে বসলো কুহু।রওনকের শক্তপোক্ত শরীরে হাত বুলিয়ে নিয়ে পুনরায় বলল কুহু,
” আপনি ঠিক আছেন রওনক ভাই?

কুহুর বিচলিত চোখেমুখে স্থির দৃষ্টি রওনকের।বাস্তব জগতে ফিরেও মেয়েটা পাগলের মতো জিগ্যেস করে যাচ্ছে!স্বপ্নটা মনে কতখানি দাগ ফেলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।কুহুর মাথায় আলতো হাত বলল,
“তুমি স্বপ্ন দেখেছ কুহু।এই অসময়ে কেউ ঘুমায়?এখনো গায়ে কালকের জামা।তারমানে গোসল,খাওয়া রেখে ঘুমে ডুবে ছিলে?

কথাটুকু বলতে বলতে উঠে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দিল রওনক।ফের কুহুর সামনে এসে বসল রওনক।হতভম্বের মতো বসে আছে কুহু!তারমানে এটা ভয়ানক স্বপ্ন ছিল!ফোলা চোখে রওনকের দিকে তাকিয়ে বলল,
” দুপুরে এত ঘুম পেয়েছিল!জানেন আপনাকে নিয়ে কত ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখেছি।ভেবেছি বোধহয় হারিয়েই ফেলেছি আপনাকে!

কথাটুকু শেষ করতেই কুহুর খেয়াল হলো ওড়না ছাড়া রওনকের সামনে বসে আছে সে!অথচ এতক্ষণ সেটা খেয়ালই করেনি!দ্রুত পাশ থেকে হাতড়ে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিল কুহু।বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটে নিয়ে নেমে গেল খাট থেকে।রওনক এতক্ষণ যাবৎ কুহুর কান্ড দেখছিল নিশ্চুপ।মেয়েটার আচরণেই প্রকাশ পাচ্ছে রওনককে এখন অব্ধি মন থেকে স্বামী হিসেবে মানতে পারেনি।ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেল কুহু।পেছন পেছন রওনক গেল।কুহু দরজা আঁটকাটাতে গেলে বাঁধ সেধে বলল,
“হতে পারে স্বপ্ন টা কোনো ইঙ্গিত ছিল তোমার জন্য।অবচেতন মন কি চায় ভেবে দেখ নির্বোধ ফুল!

রওনকের পেছনে তাকিয়ে বলল কুহু,
” সরুন এখান থেকে।মা নয়তো ভাবী এসে যাবে।

“আসবে না।বাইরে বেরিয়েছে তারা।আমি যখন এসেছি তখনই!

” আপনি কখন এসেছেন?

“বাহ!এতক্ষণে আমাকে খেয়াল হলো তবে?ঘন্টাখানেক হবে।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল কুহু,
” আমি ঘুমে ছিলাম মনে হয়।ডাকলেন না কেন?

তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল রওনক,
“ঘুমন্ত মায়াপরীকে জাগাতে ইচ্ছে হচ্ছিল না।চুপচাপ দেখছিলাম।খানিক্ষণ আগে বুঝতে পারলাম এই দেখাটুকুও আমার জন্য নিষিদ্ধ!তাই নিজেকে ওমন ভাবে ঢেকে নিয়েছিলে!তা এখন আমার শাস্তি হচ্ছে চোখ দু’টো উপড়ে ফেলা!যেন অবাধ্য দৃষ্টি তোমার দিকে আর না যায়!

রওনকের কথার কোনোরূপ উত্তর দিতে পারল না কুহু।তার এই জামার গলাটা খুব বড়ো।রওনক এতটা কাছে বসে থাকায় জড়তা কাজ করছিল।দুপা এগিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল রওনক।শাওয়ার অন করে দিল।এরুপ ঘটনায় চমকে গেল কুহু!এই সন্ধ্যায় গোসল করার কোনো ইচ্ছে ছিল না তার!কিন্তু এই রওনক ভাই পাগলের মতো ভিজছে কেন?মুহূর্তে সম্পূর্ণ ভিজে গেল কুহু সমেত রওনক!চোখ তুলে তাকিয়ে আছে কুহু।ফিসফিস করে বলল রওনক,
” দহন নেভাচ্ছি!হৃদয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে!

কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল কুহু,
“এটা কি রকম পাগলামি?

” বিকালে শাওয়ার না নিয়েই এখানে চলে এসেছি।এসে দেখি তুমিও শাওয়ার নাওনি।এই সুযোগে দুজনেই ভিজে গেলাম!

“আপনাকে কে বলেছে শাওয়ার ছাড়াই চলে আসতে?

” আমি এসেছিলাম তোমাকে নিয়ে যেতে।

আচমকা কুহুর মাথায় বাজ পড়লো!বদের হাড্ডিটা তবে এই জন্য এই সন্ধ্যায় চলে এসেছে!কুহুর সুখ তার সহ্যই হয় না!চোখমুখ কুঁচকে বলল কুহু,
“এহহহ আসছে নিতে!আমি গেলে তো।

” না যেতে চাইলে কোলে তুলে নিয়ে যেতে আমার কোনো আপত্তি বা সংকোচবোধ নেই।

“তা থাকবে কেন!আপনি তো নির্লজ্জ একটা বেশরম পুরুষ!তাড়াতাড়ি শাওয়ার শেষ করে বের হোন।আমি যাব না।

” আমার জিনিস আমি অন্যের বাড়ি ফেলে কেন যাব?

“এ তো মহা মুশকিল!এটা আমার বাড়ি!আর আপনি যে অপরাধ করেছেন তার শাস্তি তো পাবেনই!

ভুরু কুঁচকে বলল রওনক,
” কি অপরাধ?

বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটে দৃষ্টি নিচু করে মিনমিনে আওয়াজ তুলে বলল কুহু,

“ও,,ওই যে কালকে মিষ্টি খাওয়ালেন।আমি কি ওভাবে খেতে চেয়েছিলাম?এটা আপনার ভুল আর অপরাধ ছিল।এই জন্য আমি এক সপ্তাহের আগে আপনার বাড়ি যাচ্ছি না।

চলবে……