তুমি রবে নীরবে পর্ব-২১+২২

0
21
তুমি রবে নীরবে

#তুমি_রবে_নীরবে (২১)
~নাদিয়া সাউদ

কথার বলার সময় রওনকের উষ্ণ শ্বাস ছড়িয়ে যাচ্ছিল কুহুর গলা আর কানের পাশ।ভয়ানক ভাবে পায়ের তলানি শিরশির করে উঠছিল।ফের মাথা তুলে কুহুর চোখে দৃষ্টি রাখল রওনক।চোখেমুখে রাগ টেনে বলল কুহু,

“সত্তর কেজি মানে?আর কিসের পারিশ্রমিক দিব আপনাকে? পা কে ভেঙ্গেছে? পা ভাল থাকলে কি আর কোলে উঠতাম নাকি? টাকা বাঁচিয়ে উপকার করলাম কোথায় ধন্যবাদ দিবে তা নয়!উল্টো কুলিদের মতো পারিশ্রমিক চেয়ে বসে আছে!ঠিক আছে দিয়ে দিব আপনার পঞ্চাশ টাকা!

তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল রওনক,

” মেনে নিলাম আমার জন্য পা ভেঙ্গেছে! পঞ্চাশ টাকা জরিমানা দিয়ে নিয়ে আসতাম।টাকা আমার যেত!তুমি অযথা আমার শক্তি অপচয় করালে কেন? এর মূল্য তো টাকা দিয়ে পরিমাপ করবো না আমি!

রওনকের কথায় চুপসে গেল কুহু।হাবভাব ভাল ঠেকছে না!কেন যে তখন কোলে তোলার কথা বলতে গেল!আঙ্গুল দিয়ে কুহুর কপালে পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিল রওনক।স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে কুহু।ধীরে ধীরে আঙ্গুল নামিয়ে কুহুর গাল স্পর্শ করল রওনক।মৃদু কেঁপে উঠলো কুহু।নাক স্পর্শ করতেই চোখের পাতা তিরতির করে কেঁপে উঠলো।মুহূর্তের জন্য শ্বাসরোধ হয়ে গেল কুহুর।কাঠের পুতুলের ন্যায় সটান হয়ে শুয়ে রইল।কিছু বলার জন্য ঠোঁট আলগা করতেই আঙ্গুল রেখে থামিয়ে দিল রওনক।এই মুহূর্তে তার দৃষ্টি কুহুর পেলব ওষ্ঠযুগলে!এবার বোধহয় কিছুটা ভয় লাগতে শুরু করেছে কুহুর।কি চাইছেন রওনক ভাই?বুকের ভেতর থাকা হৃদপিণ্ড টা যে কোনো সময় বেরিয়ে আসবে।চোখের মণি ঘুরিয়ে রওনককে দেখে যাচ্ছিল কুহু।ধীরে ধীরে আরো অনেকটা এগিয়ে গেল রওনক।ভয়ানক ভাবে চোখমুখ খিঁচিয়ে নিল কুহু।মুখের উপর ফুঁ পরতেই ফের চোখ মেলে তাকাল কুহু।ততক্ষণে রওনক উঠে দাঁড়িয়েছে।হাত ঘড়ি খোলায় ব্যস্ত!প্রলম্বিত শ্বাস ফেলল কুহু।উঠে বসল।কি হলো খানিকক্ষণ আগে?এগিয়ে গিয়ে কাবার্ড থেকে জামা বের করতে করতে বলল রওনক,

“হতাশ আমি খুবই হতাশ!

রওনকের কথা শুনে ভুরু কুঁচকে তাকাল কুহু।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল রওনক,

” যে মেয়ের টানা টানা হরিণীর মতো চোখ,বাঁশির মতো সরু নাক,আপেলের মতো গাল,গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট থাকে তাকে উপন্যাসিক ভাষায় রূপবতী বলে।আফসোস এর একটাও তোমার মধ্যে বিদ্যমান নেই!চুল চেরা বিশ্লেষণ করেও সৌন্দর্যের লেশটুকু পেলাম না!আমার মতো সুদর্শন যুবকের কপালে কিনা এরকম একটা মেয়ে ছিল!

রওনকের কথায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেল কুহু!এতক্ষণ তবে কুহুর রূপের গবেষণা চালাচ্ছিল লোকটা?দাঁত কিরমিরিয়ে বলল সে,

“যারা রাতকানা হয় তারা রাতে কিছুই দেখতে পায় না।আর আপনি তো দিনকানাও!মোটা চশমা ছাড়া যার চলেই না!আমার মতো মেয়ে যে আপনাকে বিয়ে করেছে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবুন।

ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বলে রওনক,

“হ্যাঁ খুব সৌভাগ্যবান পুরুষ আমি।রূপে কাঁচকলা,গুনে ঢেঁড়স আর জ্ঞানে মাথা মোটা পেয়েছি একটা।যার সামনে খোলা বইয়ের মতো সবকিছু স্পষ্ট থাকলেও পড়তে জানে না।বুঝতে পারে না কিছু।হুটহাট আজব কাজ করে বসে!আর রাগিয়ে তোলে।

রওনকের কথায় রাগ দ্বিগুণ হলো কুহুর।নিজে শিক্ষক বলে একেবারে জ্ঞানের ভান্ডার যেন।ফোঁসফোঁস করে দম ফেলল সে।


রাতের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত শারমিন বেগম।রিশা বার কয়েক এসেছিল মাকে সাহায্য করতে।মেয়েকে ফিরিয়ে দিয়েছেন শারমিন বেগম।খানিকক্ষণ সময় নিয়ে আবারো রিশা আসলো।কুহুর জন্য খাবার নিয়ে যেতে হবে।ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে মেয়েটার।অবশ্য কুহুর উপর খানিকটা অভিমানই হলো রিশার।পা ভেঙ্গেছে একটাবার জানালো না পর্যন্ত!আজকে রওনকের সঙ্গে দেখা হবার পরেও তো বিষয়টা জানাল না।বিষয়টা খুব কষ্টই দিল তাকে।রিশার এরকম আধিখ্যেতা দেখতে ভাল লাগছে না শারমিন বেগমের।মেয়েটা পড়া রেখে সেবা নিয়ে পরেছে!কি দরকার ছিল এমন পা নিয়ে চলে আসার?এই সংসারে তো শারমিন বেগম একাই কাজ করেন,সামলান।বাড়তি সময় নেই অন্যের সেবা করবার জন্য।কিছু সময়ের মধ্যে রওনক আসলো।খাবারটা রিশা কতখানি গুছিয়ে নিয়েছে তদারকি করলো।পাশেই নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়ের কান্ড দেখছেন শারমিন বেগম।হাসিমুখে মায়ের সামনে আসলো রওনক।মন খারাপটুকু আসার পর থেকেই খেয়াল করেছে সে।মনের মতো কিছু না পেলে সেটা ভাল লাগে না এটাই স্বাভাবিক।মায়ের হাত দু’টো ধরে বলল রওনক,

“তুমি কি রাগ হয়ে আছ মা?আসলে পরিস্থিতি কখন কি হয় আমরা কেউ জানি না।আমি কি কখনো ভেবেছিলাম কুহুকে বিয়ে করবো? ওই পরিস্থিতিতে আমার বিবেকে যেটা সায় দিয়েছে আমি সেটাই করেছি।সঠিক-ভুল ভাববার মতো সময় পাইনি।মানিয়ে নেওয়ারই চেষ্টা করছি।কিন্তু তোমরা এভাবে কষ্ট পেতে থাকলে আমার কাছে খারাপ লাগে মা।আর দুদিন কুহুদের বাড়িতে আন্টির জোড়াজুড়ির কারণে থেকেছি।

ছেলের কথায় খানিকটা নরম হলেন শারমিন বেগম।সে যে রাগ এটা রওনক বুঝে ফেলেছে ভেবেই লজ্জিত বোধ হলো।হাসার চেষ্টা করে স্বাভাবিক হলেন তিনি।রওনকের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো।রিশা খাবার নিয়ে ততক্ষণে প্রস্থান করলো।মাকে এতগুলো মিথ্যা বলার কারণেও প্রচন্ড খারাপ লাগছে রওনকের।হতে পারে কুহুকে এখন তার অপছন্দ।সময়ের সাথে পছন্দ হতেও কতক্ষণ?যে কাউকে অপছন্দের তালিকাভুক্ত করার পূর্বে একবার সুযোগ দিতে হয়।হতে পারে একসময় সেই সবচেয়ে পছন্দের হয়ে গেল!একদিন হয়তো এই কুহুকে নিয়েই মায়ের গর্ব হবে।সেদিন আর এই মিথ্যের জন্য অনুশোচনা হবে না রওনকের।এগিয়ে গিয়ে ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে নিল রওনক।কুহুর পায়ে সেঁক দিতে হবে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন শারমিন বেগম।

,

রিশার সঙ্গে গল্পের ঝুড়ি খুলে বসেছে রিশা।কয়দিন পরেই তাদের ভর্তির কার্যক্রম শুরু হবে জানাল রিশা।ইতিমধ্যে বই কিনে নিয়েছে সে।আচমকাই চুপ হয়ে গেল কুহু।খাওয়ায় মনোযোগী হলো।রওনক ভাইয়ের খপ্পরে যখন এসে পরেছে পড়াশোনা থেকে ইহজন্মে রেহাই মিলবে না নিশ্চিত!রিশা উঠে গিয়ে ঔষধের প্যাকেট নিয়ে আসলো।যথাসম্ভব সাহায্য করলো কুহুকে।পড়া বিষয় নিয়ে আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলল না কুহু।রওনক রুমে প্রবেশ করলো।বরফের কেইস টা রিশার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল কুহুর পায়ে যেন সেঁক দেয়।কুহুকে আড় চোখে দেখে যাচ্ছিল।খানিক্ষন আগে কুহুর রূপ নিয়ে কথা বলায় বেজায় রেগে আছে মেয়েটা।রওনক কথা বললেও কোনোরকম উত্তর দিচ্ছে না।বাধ্য হয়ে রিশাকে ডেকেছে রওনক।দুজনের কান্ড দেখে মিটিমিটি হাসছে রিশা।সাপেনেউলে সংসারে তিনশত পয়ষট্টি দিনই মান অভিমান থাকবে জানবারই কথা।কুহুর খাওয়া শেষ হতেই শুভরাত্রি জানিয়ে চলে গেল রিশা।দীর্ঘশ্বাস ফেলে কয়েক কদম হেঁটে বেলকনিতে চলে গেল রওনক।মেয়েটাকে যত ব্যাথা বোঝাতে চায় উল্টো মনে ব্যাথা নিয়ে বসে থাকে নির্বোধ মেয়েটা!আকাশে আজ কোনো নক্ষত্রের দেখা নেই।কালো মেঘ টুকরো ভেসে বেড়াচ্ছে।বাতাস ছড়িয়েছে জোড়ে।লম্বা লম্বা দম নিল রওনক।বৃষ্টি আসার পূর্বের বাতাসটা মন ভাল করে দিতে ঔষধের মতো কাজ করে!বেশিক্ষণ প্রকৃতির সঙ্গে সন্ধি করতে পারল না রওনক।তার আগেই ঘর থেকে মায়ের ডাক আসলো।খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছেন।রওনক রুমে আসতেই দেখে বিছানায় কুহুর পাশে বসে আছেন শারমিন বেগম।পায়ের খোঁজ নিতে এসেছেন তিনি।ব্যাপারটা খুব ভাল লাগল রওনকের।মাথা নিচু করে কথার জবাব দিচ্ছিল কুহু।ছেলে আসতেই তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন শারমিন বেগম।দৃষ্টি তুলে তাকিয়ে রইল কুহু।এ বাড়িতে কেউ তাকে পছন্দ করে না।রওনক ভাইয়ের চাওয়ার মাঝেও হয়তো রূপসী কোনো রমনী ছিল!কুহু যে দেখতে খারাপ এমন টা নয়।অন্যের চোখেও তো তাকে ভাল লাগতে হবে।রওনকের বলা কথাগুলো তীরের মতো বুকে বিঁধেছে!এই লোকটা একটুখানি অপমান করলে,কটু কথা বললে এত কেন কষ্ট হয় বুঝে আসে না কুহুর।বারংবার ভাবে এড়িয়ে যাবে।বেহায়া মন ঠিক ওসব কথা গায়ে মেখে নিয়ে কষ্ট পায়!অথচ এসবের কোনো মূল্যই নেই রওনক ভাইয়ের কাছে।কথাগুলো ভাবতেই চোখ জলে ভিজে উঠলো।


কুহু ছাড়া সকলেই খাবার টেবিলে উপস্থিত আছে।খাওয়ার মাঝে রাশেদ জামাল জানালেন আর একবছর তার চাকরির মেয়াদ আছে।এরপরই অবসর প্রাপ্ত হবেন তিনি।এর আগে রিশার বিয়ের একটা বন্দোবস্ত করতে চান তিনি।বাবার কথা শুনে খাবার মুখে তুলতে গিয়ে থমকে গেল রিশা।সবে ব্যাথা ভোলার প্রচেষ্টায় আছে সে।এখন বিয়ে করা তার পক্ষে কখনই সম্ভব নয়।শুধু ঘুমানোর সময়টুকু বাদ দিয়ে বাকি সারাক্ষণই মাথায় ঘুরে আশফিকের চিন্তা।বাবার সঙ্গে সহমত পোষণ করলো রওনক।তবে তার একটা শর্ত,যেখানেই রিশার বিয়ে হোক তারা যেন ওকে পড়ায়।ছেলে বলার আগেই এই বিষয়টা ভেবে রেখেছেন রাশেদ জামাল।চাকরি রানিং অবস্থায় মেয়ে বিয়ে দিলে ভাল ঘরেই দিতে পারবেন।তবে কথাগুলোতে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না শারমিন বেগম।কাঠ গলায় বললেন তিনি,

“কুহু যদি এতিম আর মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে হয়ে এত ভাল জায়গায় বিয়ে হতে পারে, তাহলে তোমার অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে আমার রিশার কপাল পুড়বে না।অযথা দুশ্চিন্তা করো না।

মায়ের কথা শুনে খাবার খেতে গিয়ে থমকে গেল রওনক।কেন জানি কথাটা ভাল লাগল না তার।কুহু এখানে থাকলে খুবই কষ্ট পেত।এতক্ষণ যাবৎ রিশার মস্তিষ্কে জুড়ে ভাবনা ছিল।অন্য এক জগতে চলে গিয়েছিল সে।কারো কথাই তার কর্নকুহর অবধি পৌঁছায়নি।অর্ধাংশ খাবার রেখে উঠে দাঁড়াল সে।এই মুহূর্তে বিয়ে করবে না জানিয়ে কোনোরকম চলে গেল।বাকি খাবার আর শেষ করতে পারল না রওনক।সেও চলে গেল।একরাশ বিরক্তি নিয়ে বসে রইলেন শারমিন বেগম।ছেলেমেয়েদের উপর রাগ হলেন।তোরা যদি খাবিই না তাহলে কষ্ট করে এত রান্না করার কি প্রয়োজন ছিল?

,

খাটের এক কোণায় গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে কুহু।হাতে মোবাইল।মনোযোগ নিয়ে কিছু করছে।একপলক তাকিয়ে থেকে ডায়েরি নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলো রওনক।ইতিমধ্যে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।রাতের আকাশ ঝাপসা লাগছে কেমন।ডায়েরি খুলে বেতের চেয়ারে বসল সে।বাতাসে আপনাআপনি পৃষ্ঠা উল্টে যাচ্ছে।তপ্ত শ্বাস ফেলে লিখতে বসলো রওনক।” কারো সরলতা আর বোকামো যে প্রেমে পড়ার কারণ হতে পারে সেটা জানা ছিল না!আমিই বোধহয় পৃথিবীর একমাত্র আশ্চর্য প্রেমিক পুরুষ!যে এমন অসঙ্গত কারণগুলোকে ভালবাসার সংজ্ঞা হিসেবে মেনেছে!”

লেখার মাঝেই রুমে কিছু পরার শব্দ হলো।দ্রুত ডায়েরি রেখে রুমে ছুটলো রওনক।কুহু মেঝেতে বসে আছে।এলবো সাপোর্ট স্টিক পরে আছে পাশেই।তারমানে মেয়েটা আবারও পরে গেছে!চোয়াল শক্ত করে এগিয়ে এসে চিলের মতো ছোঁ মেরে কুহুকে শূন্যে তুলে নিল রওনক।ব্যাথার অভিব্যক্তি ছড়িয়ে আছে কুহুর মুখাবয়বে।খাটে এসে কুহুকে নামিয়ে দিল রওনক।চোখ তুলে তাকাবার সাহস করলো না কুহু।বেশ যত্ন নিয়ে পা টা দেখলো রওনক।চিন্তার ছাপ তার চোখেমুখে।পরক্ষণে কুহুর দিকে তাকিয়ে শুধাল,

“ব্যাথা করছে?কেন নামতে গেলে?ডাকবে না আমায়?

কাঠ কাঠ গলায় বলল কুহু,

” স্টিকগুলো এনে দিন।আমি ওয়াশরুমে যাব।

কুহুর কথায় মাথায় ভয়ানক রাগ চেপে গেল রওনকের।দু’হাতে কুহুর বাহু চেপে ধরে শুইয়ে দিল বালিশে।চোখে স্পষ্ট ক্রোধ!কুহু হকচকিয়ে উঠলো!রওনকের মুখের দিকে তাকাতেই কেমন আড়ষ্ট হয়ে গেল।চোয়াল শক্ত করেই বলল রওনক,

“কি এমন অন্যায় করে ফেলেছি আমি?যার জন্য এরকম শাস্তি নির্ধারন করলে!একটা মানুষ এতটা নির্বোধ হয় কি করে?কোনটাতে নিজের ভাল আর কোনটাতে মন্দ সেটাই পার্থক্য করতে জানে না!উল্টো নিজেকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়!

পাল্টা রাগ নিয়ে বলল কুহু

” সরুন।আমার টা আমি বুঝে নিব আ…….

পুরো কথা শেষ করতে পারলো না কুহু।সামনে থাকা পুরুষটি তার অধরোষ্ঠ দখল করে নিল।ভয়ানক চমকে উঠলো কুহু!এমন কিছুর জন্য তার মস্তিষ্ক যেন প্রস্তুত ছিল না!রওনকের ফোপাঁনো ভারী নিশ্বাসের শব্দ কান ভার করছে কুহুর।পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেল।আচমকা ঠোঁটে দন্তাঘাত পেতেই ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে গেল কুহুর।হঠাৎই বাইরে বজ্রপাতের শব্দ হলো।চোখমুখ খিঁচিয়ে রওনকের টিশার্ট খামছে ধরল কুহু।

চলবে…….

#তুমি_রবে_নীরবে (২২)
~নাদিয়া সাউদ

অসস্থি যেন আচমকা কেটে গেল! স্বাভাবিক মনে হলো সবকিছু। তবে রওনক ভাই যে ভয়ানক রেগে আছে এইটুকু কুহুর মস্তিষ্ক বুঝতে পারল। শক্ত হাতে কুহুর বাহু ধরে রাখা হাত ছেড়ে দিল রওনক। দৃষ্টি দেখাল করুণ। ঘন ঘন দম ফেলে উঠে দাঁড়াল সে। স্টিকগুলো কুহুর সামনে রেখে চলে গেল বেলকনিতে।একবারের জন্যও ফিরে তাকাল না বোকা মেয়েটার দিকে।এমনটা বোধহয় আশা করেনি কুহু।আচমকা তার বক্ষস্থলে কষ্ট হলো!মন বলছিল, শাসিয়ে কিছু বলবে রওনক ভাই।তারপর নিজেই ওয়াশরুম অবধি নিয়ে যাবে।খানিক্ষন আগের ঘটনাটা হুলের মতো মস্তিষ্কে বিঁ-ধে আছে।কেন জানি রাগ হতে পারলো না কুহু!তার বিবেক কোথাও একটা বলছে, অন্যায়ই করছে সে।রওনক ভাই সব মেনে নিলে কুহুরও কি মানিয়ে নিয়ে সংসার করা উচিৎ নয়? শত প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল কুহু।

,

তীব্র বর্ষণ নেমেছে।মাঝে থেমে থেমে বিদ্যুৎ পিষ্ট হয়ে আলোর ঝলকানি তুলে আলোকিত করছে গোটা শহর।ঝপঝপ বৃষ্টির শব্দে মুখরিত চারিপাশ।রওনক দাঁড়িয়ে আছে খোলা বারান্দার কার্নিশ ঘেঁষে।বৃষ্টির ছাট চশমা ঘোলাটে করে দিচ্ছে তার। আকাশী রঙা টিশার্ট ভিজিয়ে দিয়েছে বক্ষস্থলের বা পাশ।ডান হাত চুলের মাঝে হাত চালিয়ে নিয়ে লম্বা দম নিল সে।খানিক্ষন আগে অতিরিক্ত রাগ সামাল দিতে পারেনি।ফলস্বরূপ ওইরকম ভয়ানক আচরণ করে ফেলেছে কুহুর সঙ্গে!মেয়েটা কি রওনকের কেয়ার একটুখানিও বুঝতে পারে না?এর পেছনের কারণটুকু হদিস করতে পারে না?হয়তো বোঝে সবই!তবে কি ধরে নেবে রওনককেই চায় না সে? মনে হচ্ছে এত কৌশল খাটিয়ে বিয়ে করাটা বৃথাই হলো।যার মনে সারাজীবনেও অনুভূতির জন্ম দিতে পারবে না,তাকে এত বুঝিয়ে কি হবে? ঘুমের ভাব ধরা মানুষকে তো আর জাগ্রত করা সম্ভব নয়।এক তরফা নিজের মতো ভালবেসে কুহুকে আপন করে নেওয়াটা চরম বোকামি হয়েছে রওনকের। অপছন্দের মানুষের কাছ থেকে ভালবাসার সংকেত আসলেও কিছু যায় আসে না আমাদের।হয়তো সেটা পরোয়াই করি না আমরা! কুহুর জীবনেও রওনক ঠিক এমন অপছন্দ আর ফেলনাই! তীব্র কষ্ট থেকে রাগ হলো রওনকের।ধরে বেঁধে কাউকে ভালবাসার জন্য জোড় করা সম্ভব নয়।আর কুহুর সামনে নিজেকে খোলা বইয়ের মতো মেলে ধরবে না রওনক। টেবিলে পড়ে থাকা ডায়েরি টা ভিজে চুপচুপ হয়ে আছে। কিছুক্ষণ আগের লেখাগুলো জলের স্পর্শ পেতেই কালি ছড়িয়ে দিয়েছে। মুছে গেছে প্রতিটি অক্ষর! তপ্ত শ্বাস ফেলে ডায়েরি টা হাতে তুলে নিল রওনক। কুহুকে নিয়ে তার পূর্বের সমস্ত অনুভূতি লেখার পাতা গুলো এক এক করে ছিঁড়ে ফেলল। কুহু যদি কখনও তাকে বোঝে, ভালবাসে তবে সেদিন নতুন করে লিখবে সব!


সকাল হয়েছে বেশ অনেক্ক্ষণ আগে।জানালা ছুঁয়েছে পেলব কমলা রোদ।সারারাত বৃষ্টি হওয়ার ফলে প্রকৃতি একদম স্নিগ্ধ,স্বচ্ছ!রোদটাও যতেষ্ট মোলায়েম!জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে রিশা।সারারাত বৃষ্টি দেখে কাটিয়েছে সে।ছোটখাটো একটা ঝড় তার মনের উপর দিয়েও বয়ে গেছে।অতিরিক্ত মন খারাপের সময় তুমুল বর্ষণ হলে,ভেতরটা যেন আরও গুমোট হয়ে যায়। হাসফাস লাগে কেমন।বৃষ্টির শব্দ ভয়ানক সুর তোলে কানে! ভোরে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি পরার সময় বোধহয় খানিক চোখ লেগেছিল রিশার।ঘন্টাখানেক এর মাঝে আবারও ঘুম ছুটেছে।জীবন কেমন ছন্দ হারাচ্ছে।নিজের প্রতিই বিরক্ত হচ্ছে রিশা।আশফিক তো তার সঙ্গে কোনোরকম চিট করেনি,আর না তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল!তবে এতটা কেন উন্মাদ হয়ে আছে রিশা? অপরিচিতা মেয়েটাকে কোনোভাবেই আশফিকের সঙ্গে মানতে পারছে না মন।সে তো আশফিককে এই মেয়েটার আগে ভালবেসেছিল! তবে নিয়তি এত নিষ্ঠুর হলো কি করে তার সঙ্গে? এটাই মানতে পারছে না রিশা।

“এত গভীর ভাবে কি ভাবছিস রিশু?

কুহুর কথায় ঘোর কাটলো রিশার।তৎক্ষনাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল সে।স্টিকে ভর দিয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে কুহু।বিচলিত হয়ে এগিয়ে গেল রিশা।আশেপাশে ভাইকে না দেখে বেশ অবাকই হলো। কিছু একটা বুঝতে পেরে বলল কুহু,

রওনক ভাই চলে গেছে ভার্সিটিতে।

” তাহলে তুই আমাকে ডাকতি!একা চলে এলি কেন?

মৃদু হেঁসে রিশার খাটে গিয়ে বসলো কুহু।পাশে বসলো রিশা।কুহুর মুখাবয়ব জুড়ে অন্যরকম এক দুশ্চিন্তা!রিশা বোধহয় আন্দাজ করতে পেরেছে।আবারো কি দু’জনের মাঝে জগড়া বাঁধল কিনা কে জানে!জানালা গলিয়ে বাইরে দৃষ্টি ফেলে হতাশ স্বরে বলল কুহু,

“রওনক ভাইকে বিয়ে করাটা বোধহয় ঠিক হয়নি রিশা।আমাদের মধ্যে হয়তো কখনও বোঝাপড়া হবে না।আমি রওনক ভাইকে বুঝতে পারি না।হয়তো দায়িত্বের কারণে আমাকে দিনের পর দিন সহ্য করছেন তিনি।

” তুই ভাইয়াকে ভালবাসিস?

রিশার হঠাৎ করা প্রশ্নে থমকে গেল কুহু।ভাবনায় পরলো কিয়ৎক্ষণ। এই প্রশ্নর উত্তর তার কাছে নেই।গভীর মনোযোগ নিয়ে কুহুকে দেখে বলল রিশা,

“আমাদের সঙ্গে যখন যা ঘটে তার পরিপ্রেক্ষিতে সবকিছু ভাবি আমরা। হয়তো কারণ ভিন্নও হতে পারে কুহু। তুই যদি ভাইয়াকে বুঝতে চেষ্টা করিস তাহলে দেখবি তোর সামনে সব জলের মতো পরিষ্কার!তোদের বিয়ে হয়ে গেছে।এখন মূল উদ্দেশ্যে তোরা হ্যাপিলি সংসার করবি। দু’জন দুজনকে বোঝার চেষ্টা করলে ভালবাসা জন্মাতে বেশি সময় লাগে না।অহেতুক মন থেকে সব সন্দেহ,দোনোমোনো ভাব ঝেড়ে ফ্যাল।জীবনে যখন সত্যিকার অর্থে ভালবাসা ধরা দেয় তখন সম্পূর্ণ জীবনটাই পাল্টে যায়!আমি তো দেখছি ভাইয়া খুব সুন্দর ভাবেই মানিয়ে নিতে চাচ্ছে তোকে।অখুশি তো দেখছি না।তাহলে তুই মাথা ভর্তি এসব ফালতু চিন্তা ঠেসে রেখেছিস কেন?

চুপচাপ রিশার কথা শুনছে কুহু।সত্যিই রওনক ভাইকে কোনরকম বাজে আচরণ সে করতে দেখেনি।তাহলে মনে হাবিজাবি চিন্তা কেন আসে? তপ্ত শ্বাস ফেলে কুহুর চিন্তিত মুখে তাকিয়ে রইল রিশা।ভাইয়ের জন্য সত্যিই আফসোস হচ্ছে তার।কুহু এখনো ভালবাসাটা উপলব্ধি করেনি তাই হয়তো রওনকের অনুভূতি বুঝতে পারছে না।আগের আচরণ গুলোই মনে ধরে বসে আছে!রিশার পক্ষে সম্ভব হলে এক্ষুনি জানিয়ে দিত,রওনক কুহুকে ঠিক কতখানি ভালবাসে!এখন তো রিশারও মনে হচ্ছে আগে অনুভূতিটুকু উপলব্ধি করুক কুহু।সহজে পাওয়া কিছুর মূল্য মানুষ দিতে জানে না।

“তুই অহেতুক মন খারাপ করছিস।ভাইয়ার জীবনে কিন্তু তুই ছাড়া কোনো মেয়ে ছিল না কুহু।প্রথম তুই’ই।তাহলে তোকে অপছন্দ,অবহেলা করার তো কোনো কারণ দেখছি না আমি।বরং তুই মনে মনে আমার ভাইকে চাচ্ছিস না সেটা বল!

” না,না এমন কিছু নয়।আমার কখনো মনে হয় রওনক ভাই আমাকে পছন্দ করে আবার মনে হয় আমাকে সবচেয়ে অপছন্দ করে!তাই এই বিষয়টা তোর সঙ্গে শেয়ার করতে এসেছি আমি।

কপাল চাপড়ে বলল রিশা,

“আমি বলছি মন থেকে সব সংশয় ঝেড়ে ফ্যাল।ভাল করে বুঝতে চেষ্টা কর ভাইয়া কি চায়।তোর সঙ্গে সবসময় ক্ষ্যাপানো আচরণ করতো বলে কি এখনো করবে নাকি?এখন তো তুই তার ওয়াইফ!নিজেও খেয়াল করলে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবি!সেটা তো এমনি এমনি না।

” তাহলে তুই কি বলতে চাইছিস রওনক ভাই আমাকে ভালবাসে?

তীর্যক দৃষ্টি কুহুর।থতমত খেল রিশা।এই যা গরগর করতে করতে পেটের সব কথা উগড়ে দিচ্ছে!আমতাআমতা করে কোনোমতে বলল,

“ভাইয়ার মনের কথা আমি কি করে বলবো? তুই আসলেই একটা মাথামোটা! মনের ভেতর লুকায়িত কথা তো তোকে হদিস করতে হবে তাই না? আচ্ছা তুই আরেকটা কথা ভাব,ভাইয়া যদি তোকে এতই অপছন্দ করতো তাহলে কি বিয়ে করতো? তোর সম্মানের কথা ভাবত? ডাল ম্যায় কুচ কালা হ্যায়! তোকে এখন কাটা দিয়ে কাটা তুলতে হবে। লেগে পর ‘ভালবাসা’ নামক মিশনে।

রিশার কথায় থমকে বসে আছে কুহু।আদতে সে এভাবে ভাবেইনি। রওনক ভাই তাকে ভালবাসতে পারে এমন কিছু অবাস্তব,অকল্পনীয় তার কাছে! এখন মনে হচ্ছে সত্যিই মিশনে নামতে হবে তাকে। কুহুর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে অনুপ্রেরণা কাজে দিয়েছে। গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল রিশা।ভাইয়ের দুঃখ ঘুচলেই হলো এবার!


কুহু প্রথমে গাইগুই করলেই রওনকের ইচ্ছেতে শেষমেশ দ্বিতীয় বর্ষে ভর্তি হতে রাজি হয়েছে। রিশা ভীষণ খুশি! শারমিন বেগম বাদে কমবেশি সবারই মত ছিল কুহুর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে। বিশেষ করে রওনকের একহাত ইচ্ছে। কুহু ছিল শারমিন বেগমের পক্ষে। এই মাথা নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। কোন কুলক্ষণে যে টিচার বিয়ে করেছিল! পড়াশোনা বুঝি আর পিছুই ছাড়ল না! আজকে থেকেই কুহুদের ক্লাস শুরু।ঘড়িতে সকাল আটটা।খাওয়ার টেবিলে বসে আছে সবাই। খানিকক্ষণের মাঝে রিশা উপস্থিত হলো।কাঁধে ব্যাগ নিয়ে।রওনকের পাশে বসে বিরস মুখে খাবার গিলছে কুহু। সেদিনের পর থেকে কথা বলা একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন রওনক ভাই। যার কারণে হুটহাট কিছু বলতেও পারে না কুহু। দশটা কথা বললে একটা জবাব আসে না ঠিকঠাক! মনে হচ্ছে মিশন ফেইলই হবে সে। খাওয়া শেষ হতেই তাড়া দিল রওনক। রিশার তখনো কিছুটা খাবার বাকি। সিএনজি ডাকতে একাই বেরিয়ে গেল রওনক।কিছুক্ষণ পর রিশাকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো কুহু। হাঁটতে হাঁটতে মনমরা কুহুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো রিশা,

“কিরে আনন্দ হচ্ছে না তোর? আজকে প্রথম ক্লাস!

চোখমুখ কুঁচকে বলল কুহু,

” দূর! তোর ভাইকে বিয়ে করা আসলেই উচিত হয়নি। জোড় করে পড়াশোনা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে! সারাক্ষণ কথা বললেও শোনে না। বধিরের মতো বসে থাকে। বিয়ে হয়েছে কোথায় সংসার করবো, ঘর ভর্তি বাচ্চা-কাচ্চা পালন করবো তা নয়! বই খাতা নিয়ে ছুটছি!

কুহুর শেষের কথাটা বোধহয় রওনকের কানে গিয়েছে স্পষ্ট! অবাক হয়ে কিছু পল তাকিয়ে রইল সে। কোনো উত্তর দিল না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো।রিশা ঠোঁট টিপে হাসল।গাড়িতে উঠে বসতেই কুহুর কানে ফিসফিস করে বলল,

” আরও বেশি করে ঝগড়া কর। তুই যদি ভাইয়াকে ভালবাসতি তাহলে তোর এসব স্বপ্ন কবেই পূরণ হয়ে যেত। আর আমি ডজন খানেক বাচ্চাকাচ্চার ফুপি হতে পারতাম!

শেষের কথাটা আফসোসের স্বরে কিছুটা জোড়েই বলে ফেলল রিশা।সামনে বসা রওনক হঠাৎ কেশে উঠল। মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে ফিসফিস করে উত্তর দিল কুহু,

“তোর রগচটা, কলহপ্রিয় ভাইকে বিয়ে করেছি! জীবনে মা ডাক শুনতে পারব কিনা সেই চিন্তায় আছি।পড়াশোনা করিয়েই মেরে ফেলবে আমাকে।

বহুকষ্টে হাসি দমিয়ে রাখল রিশা। কুহু যেন সিরিয়াস হয়ে গেছে একটু বেশিই!

,

সিএনজি ভার্সিটির সামনে আসতেই ভাড়া মিটিয়ে চলে গেল রওনক। রিশা নেমে দাঁড়াল। কুহু হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে আছে। রওনক ভাইয়ের অবজ্ঞা ঠিক হজম হলো না তার! কেমন নির্দয়ের মতো ফেলে চলে গেল! চোখমুখ শক্ত করে নেমে দাঁড়াল কুহু। সম্মুখে দৃষ্টি পরতেই তার চোখ দু’টো রসগোল্লার মতো হয়ে গেল! যুবতী বয়সের এক মেয়ে গাঢ় নীল রঙের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে রওনকের হাত ধরে। ফর্সা, পাতলা গড়নের শরীর। মুখে সাজ বলতে ভালই আছে!ন্যুড শেডের ঠোঁটে চওড়া হাসি। ঈষৎ হাসি রওনের ঠোঁটেও! এই মেয়েটাকে ঠিক চিনতে পারলো না কুহু। রিশাও হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। পরক্ষণে পাশ থেকে একটা স্টুডেন্ট কে ডেকে জিগ্যেস করতেই বলল,ভার্সিটির নতুন ম্যাম শাহিনূর মাহি। প্রথম বর্ষে থিওরি বিষয়ে ক্লাস নেন তিনি। ব্যাষ্টিক অর্থনীতি।

ছেলেটা যাবার পূর্বে হেসে কিছুটা রসিয়ে বলল, রওনক স্যারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালই। আমরা তো তাদের নাম দিয়েছি রোমিও-জুলিয়েট! দারুণ মানিয়েছেও তাদের!

পাশ থেকে একটা মেয়ে হ্যাচকা টানে সরিয়ে নিল ছেলেটাকে। কড়া গলায় বলল রিশা রওনক স্যারের বোন হয়। নিমেষে ছেলেটার মুখ চুপসে গেল।আর মুখাবয়ব জুড়ে নামলো ভয়ের আঁধার! কুহু তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল। দাঁত চিবিয়ে বলল রিশাকে,

“কি বলেছিলি তুই? ভালবাসার মিশনে নামতে? এদিকে তোর সুশীল ভাই পরকীয়া করে বেড়াচ্ছে! ভার্সিটির সবাই নাকি জানেও এটা! কত বড়ো সাহস দেখেছিস? ঘরে বউ রেখে বাইরে কিসব করে বেড়াচ্ছে! তোর ভাইয়ের একদিন কি আর আমার যতদিন লাগে!

কথা বলার সময় অতিরিক্ত রাগে কুহুর গলা কাঁপছিল। শাহিনূর মাহি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রওনকের সাথে সেলফি তুলছে। আচমকা রিশার হতবাক মস্তিষ্কে ঠাওর হলো আজ রওনকের জন্মদিন!

চলবে…….