ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব-১৬+১৭

0
12

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_১৬
#সারিকা_হোসাইন

*****
রবিবার, সকাল দশটা বেজে একুশ মিনিট,নিউইয়র্ক সিটি।

নিউইয়র্ক শহরের আজকের সকালটা অদ্ভুত রকমের সুন্দর।শেষ রাতের দিকে ঝর ঝর করে ঝরে পড়া বরফ এর চাদর গুলো চিকচিকে সোনালী মিঠে রোদের তাপে আইসক্রিম এর মতো গলতে শুরু করেছে সবে।সেই সাদা সাদা গলিত বরফ গুলোকে পায়ে মাড়িয়ে নিউইয়র্ক শহরের কর্মব্যাস্ত মানুষগুলো দৌড়ে ছুটে চলেছে যার যার গন্তব্যে।যুবরাজের আজকে নাইট শিফটের ডিউটি রয়েছে।এজন্য তার কোনো প্রকার তাড়াহুড়ো নেই।গায়ে একটা ভারী ব্ল্যাঙকেট জড়িয়ে সুখের নিদ্রায় ডুবে আছে সে।
তার সমস্ত সুখ উধাও হলো এক নিমিষে।হঠাৎই বালিশের নিচে রাখা ফোনটির ভো ভো কাঁপনে চোখ মেলে তাকালো যুবরাজ।
কোনো পেশেন্টের কল হতে পারে কিংবা হসপিটালের জরুরি কল আসতে পারে ভেবে কোনরূপ বিরক্তি ছাড়াই চিন্তিত হয়ে ফোন কানে তুললো যুবরাজ।
“ক্যান উই মিট ডক্টর ইউভি?
হ্যালো বলবার আগেই সুমিস্ট রিনরিনে কন্ঠ স্বরে কিছুটা ভালো লাগার ফিনফিনে বাতাস বয়ে গেলো যুবরাজের উষ্ণ হৃদয়ে।যৌবনে পদার্পণ করা একজন সুপুরুষের জন্য এরকম অনুভূতি হওয়া অবশ্যই দোষের কিছু নয়।

ফোনের লাইন কাটতেই ধপ করে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে।কিছুক্ষন আগেও যেই ঘুম গ্লু এর মতো চোখের পাতায় লেগে ছিলো সেটা মুহূর্তের ব্যাবধানে গায়েব।হিম শীতল ঠান্ডা আবহাওয়া তেও যুবরাজ যেনো অস্থির হলো।
অস্থিরতা কমাতে দ্রুত শাওয়ার নিয়ে বাইরে যাবার জন্য ঝটপট রেডি হয়ে গেলো যুবরাজ।গায়ের ব্ল্যাক শার্টের উপর ধূসর রঙের ট্রেঞ্চকোট জড়িয়ে তার সাথে বাদামি মোটা উলের মাফলার প্যাচালো গলায়।ফরমাল কাট হেয়ার গুলো জেল দিয়ে সেট করে হাতে ডার্ক ব্রাউন রঙের ফিতা যুক্ত ঘড়ি পরে নিলো।পায়ে বেল্টের সাথে ম্যাচিং বুটস পরে কাঁধে একটা ব্যাগপ্যাক নিয়ে নিউইয়র্ক মেট্রো স্টেশনের দিকে ছুটে চললো যুবরাজ।

যুবরাজের বাসা থেকে মেট্রো স্টেশনে পৌঁছাতে প্রায় মিনিট দশেকের মতো সময় লাগলো।স্টেশনে পৌঁছে আশেপাশে চোখ বুলালো সে কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটির দেখা পেলো না।সাথে সাথেই অপ্রাপ্তির ধূসর মেঘ মন আকাশে হানা দিয়ে যুবরাজের সুমধুর লাজুক হাসি বিলীন করে মন ভার করে দিলো।

“হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে কোথায় লুকিয়ে আছে সেই অষ্টাদশী?”
মনে মনে কথাটি ভেবে পুনরায় চতুর্দিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলালো যুবরাজ।
হঠাৎই সমস্ত ভিড় ঠেলে ধবধবে ফর্সা সরু একটি হাত যুবরাজের উদ্দেশ্যে নাড়িয়ে নিজের অস্তিত্ব জানান দিলো এক অষ্টাদশী মানবী।
সেই অষ্টাদশীর পদ্মের পাপড়ির ন্যায় বাঁকা আঙ্গুলির সাধুবাদে মোহিত হলো যুবরাজ।কথা বলার সকল ক্ষমতা হারিয়ে অনুভূতি শূন্য হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে অষ্টাদশী মানবীর সৌন্দর্য সুধা পানে ব্যাস্ত হলো যুবরাজ।

মুখে প্রশস্ত হাসি ঝুলিয়ে অষ্টাদশী যুবরাজের সামনে এসে দাড়ালো।যুবরাজ যেনো মোমের তৈরি নিখুঁত একটা পুতুলের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।মেয়েটির শুভ্র শরীরে অন্যরকম একটা স্নিগ্ধতা বিরাজমান যা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা যুবরাজের নেই।
যুবরাজের কোনো হেলদোল না দেখে মেয়েটি নম্র মৃদু কন্ঠে স্মিত হেসে শুধালো
“আর ইউ ওকে ডক্টর ইউভি?

“আম নট ওকে মিস ম্যাগান, আম জাস্ট ডোমড(বরবাদ হওয়া)
কথাটি বলেই বুক হাত রেখে চোখ বুঝে ফেললো যুবরাজ।

যুবরাজের এমন বোকা বোকা কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো ম্যাগান গ্যাব্রিয়েলা।সেই হাসির মূর্ছনায় দ্বিতীয় দফায় নিজেকে হারালো যুবরাজ।মেয়েটির প্রতি অনিন্দ্য এক ভালো লাগায় তার তনু মন দুটোই ছেয়ে গেলো।
নিজেকে কোনো মতে ধাতস্থ করে গলা খাকরি দিয়ে ট্রেঞ্চ কোটের দুই পকেটে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো যুবরাজ।

“তা আমাকে এখানে ডাকার কারন টা কি জানতে পারি মিস ম্যাগান?

প্রশ্নটি করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রইলো যুবরাজ।

“হঠাৎই আপনাকে অনেক দেখতে ইচ্ছে করছিলো ডক্টর, যদিও এটা আমার জন্য অন্যায় আবদার তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি এবং আমি এর জন্য দুঃখিত।

নিচু মিনমিনে কণ্ঠে কথাটি বলে লজ্জায় মাথা নুইয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে রইলো ম্যাগান।

মেয়েটির সহজ স্বীকারোক্তিতে বেশ মুগ্ধ হলো যুবরাজ।মেয়েটি যুবরাজের থেকে কি চাচ্ছে এটা বুঝতে যুবরাজের এক সেকেন্ড সময়ও লাগেনি।তবে ভালোবাসা আদান প্রদানের ব্যাপারে যুবরাজ শতভাগ অনেস্ট থাকতে চায়।

“আমি জীবনে একজন কেই ভালোবাসবো মিস ম্যাগান।আর সেই ভালোবাসা কখনো কমবে না দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে।প্রতিদিন নতুন করে ভালোবাসবো আমি তাকে।এন্ড আই ডোন্ট ইভেন নো হু দ্যাট লাকি গার্ল ইজ!

নিজের মনের কথা মনে রেখে যুবরাজ ম্যাগানের উদ্দেশ্যে কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো
“আমার প্রতি আপনার জাস্ট মোহ জেগেছে মিস ম্যাগান।দুদিন পরেই এই মোহ কেটে যাবে।তখন আমাকে আর আপনার মনে ধরবে না।সম্পর্কে বিতৃষ্ণা আসবে।তার চাইতে লম্বা সময় ধরে দুজন দুজনের সম্পর্কে জেনে তবেই একটা নামযুক্ত সম্পর্কে আগানো উচিত বলে আমি মনে করি।

যুবরাজের এমন কঠিন কথায় ম্যাগান গ্যাব্রিয়েলার বড় পাপড়ি যুক্ত নীল চোখ দুটো থেকে ঝর ঝর করে মুক্তো দানার ন্যায় উষ্ণ জল ঝরে পড়লো।
মেয়ে মানুষের কান্না বরাবরই পুরুষ হৃদয়ের দুর্বলের কারন।যুবরাজের বেলায়ও তাই ঘটলো।তার বিগলিত মন বার বার আগ্রাসী হলো তরুণীর চোখের জল মুছিয়ে দিতে কিন্তু যুবরাজ কঠিন ভাবে নিজেকে শাসিয়ে আটকে রাখলো।

এমন বিষন্ন পরিস্থিতি তে হঠাৎই যুবরাজের পকেটের মোবাইল নামক যন্ত্রটি কর্কশ স্বরে বেজে উঠলো।সেই শব্দে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো ম্যাগান।
দ্রুত ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন খুব সিরিয়াস ভাবে কিছু বলে চললো।যেটা শোনা মাত্র যুবরাজের চোয়াল শক্ত হয়ে কপালের শিরা ফুলে উঠলো।ওপাশের ব্যাক্তির কথা শেষ হতেই
যুবরাজ লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলে উঠলো
“ওটি রেডি করতে বল আমি এক্ষুনি আসছি”

ফোন কেটে পকেটে ভরতেই যুবরাজ ম্যাগানের দিকে আহত দৃষ্টি দিলো।
“মিস ম্যাগান হঠাৎই আপনার বাবার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে।এক্ষুনি অপারেশন করানো টা জরুরি।আপনি হসপিটালে চলুন আমার সাথে।

ম্যাগান কোনো বাক্য বিয়োগ না করে অবনত মস্তকেই যুবরাজের সাথে সাথে চলতে লাগলো।
সারাটা রাস্তা কেউ কারো সাথে কোনোরূপ কথা বলে নি।হসপিটালে এসেই গাড়ি থেকে নেমে ম্যাগান কে কিছু না বলে যুবরাজ দৌড়ে চলে যায় হসপিটাল ডিনের কাছে।

“সরি স্যার আমি কোনো ভাবেই ডক্টর ফাইয়াজের সাথে ওটি শেয়ার করতে পারবো না,আমি আমার সহকারী হিসেবে ডক্টর রেহান কে পাশে রাখতে চাই।

“লিসেন ডক্টর ইউভি,ডক্টর ফাইয়াজ অনেক ব্রিলিয়ান্ট একজন মেডিসিন স্পেশালিস্ট।আর জ্যাকব গ্যাব্রিয়েল এর যেই সমস্যা এটা চিকিৎসা বিজ্ঞানে হার্টের ক্ষেত্রে বিরল,এজন্য হসপিটাল কতৃপক্ষ বিশেষ অনুরোধে ডক্টর ফাইয়াজ কে লন্ডন থেকে এখানে এনেছে,তোমার চাইতে সে সিনিয়র ও বটে।অভিজ্ঞতা একটু বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।তাই আমি তোমাকে রিকোয়েস্ট করবো বেশি বাড়াবাড়ি না করে দ্রুত ওটি তে যেতে।তোমরা দুজনেই যদি জ্যাকব গ্যাব্রিয়েল কে সুস্থ করে তুলতে পারো এটা আমাদের হসপিটাল এর রেপুটেশন এর জন্য বেটার হবে।আর এই অপারেশন এর জন্য সে কোনো চার্জ পর্যন্ত নেবে না।এখন তুমি যদি তার সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে না পারো এটা তোমার ব্যার্থতা।

এক দমে কথা গুলো বলে হসপিটালের ডিন রবার্ট হ্যারিসন খটখট করে কম্পিউটার এর কীবোর্ড চেপে কাজে মনোযোগ দিলেন।

অসহায় ভঙ্গিতে যুবরাজ কিছুক্ষন ডিনের দিকে তাকিয়ে রইলো।এরপর আহত কন্ঠে বলে উঠলো
“হি ইজ এ ডেভিল স্যার,হি মে বি এ গুড ডক্টর বাট হি ইজ নট এ গুড সৌল।

*********
মাউন্ট সিনাই হসপিটাল এর বৃহৎ অপারেশন থিয়েটারে অস্ত্রোপচারের উদ্দেশ্যে অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে অচেতন অবস্থায় শুইয়ে রাখা হয়েছে জ্যাকব গ্যাব্রিয়েলকে।তার হৃদযন্ত্রের রক্ত নালিতে তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে।সেই সাথে সোরিয়াসিস এবং রিউমাটয়েড আথ্রাইটিসের প্রব্লেম রয়েছে।যেকোনো সময় পেশেন্টের যা কিছু হয়ে যেতে পারে।বিজ্ঞ প্রবীণ ডক্টর দের কপালে চিন্তার সূক্ষ্ণ ভাঁজ।শুধু নির্বিকার যুবরাজ।
ডক্টর রেহান সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে ওকে সিগনাল দিতেই নিজেদের জীবাণু মুক্ত করে হাতে গ্লাভস পরে একে একে ওটি তে প্রবেশ করলেন আটজন ডক্টর।দুজন নার্স এসে প্রত্যেকের সার্জারি এপ্রোন, মাস্ক এবং মাথার ক্যাপ পরিয়ে সাইডে সরে দাড়ালেন।
সকলের মাথায় যখন অপারেশন এর ঝুঁকি নিয়ে চিন্তার বোঝা সেই সময় যুবরাজের দিকে তাকিয়ে ডেভিল হাসি দিয়ে নিজের দুধর্ষতা জাহির করলো কেউ একজন।
স্যালাইনের ড্রপ পয়েন্ট ঠিক করতে করতে সেই ক্রুর হাসি ঠিক যুবরাজের নজরে ধরা দিলো।
সেই হাসিকে উপেক্ষা করে নিজের হেড সার্জিক্যাল লাইটস পরিধান করে অপারেশন শুরু করার নির্দেশ দিলো যুবরাজ।

“এনেস্থেসিয়ার ডোজ বেশি ঠেকছে আমার কাছে ডক্টর ইউভি”
কথাটি বলেই সাইডে ফেলে রাখা ইনজেকশনটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো ডক্টর রেহান।

সাথে সাথেই একজন প্রবীণ ডক্টর বলে উঠলো
“ভুলে যেওনা যিনি ডোজ ঠিক করেছেন তিনি ওয়ার্ল্ড এর বেস্ট মেডিসিন স্পেশালিষ্ট।

ডক্টর রেহানের খুঁতখুঁতে ভাব তবুও যেনো গেলো না।

“প্রথমেই আমাদের বাইপাস করার জন্য শরীরের যেকোনো অংশ থেকে সচল রক্তনালী কালেক্ট করতে হবে এরপর সেটা হৃদযন্ত্রে প্রতিস্থাপন করতে হবে।এরপর আমরা বাকি অস্ত্রোপচার এর ট্রিটমেন্ট করবো।আমি সিউর করে বলতে পারছি না কতঘন্টা সময় লাগবে সকল কাজ কমপ্লিট করতে।তবে সবাইকে অনুরোধ করবো ধৈর্য সহকারে অপারেট করতে।

সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করে কথাগুলো বলে হাতে স্ক্যালপেল তুলে নিলো যুবরাজ।
জ্যাকব গ্যাব্রিয়েল এর চামড়া স্তর এক টানে স্ক্যালপেল এর সাহায্যে বুক থেকে পেট পর্যন্ত কেটে ফেললো যুবরাজ।এরপর বুকের খাঁচা মাঝ বরাবর ফাটিয়ে দু ভাগ করে পৌঁছে গেলো হৃদপিন্ড পর্যন্ত। চেস্ট রেট্রাক্টরস এর সাহায্যে বুকের দুই পাশের চামড়া সমেত খাঁচা শক্ত করে টাইট করে আটকিয়ে বিভিন্ন সার্জিক্যাল ইকুইপমেন্টস এর সহায়তায় চলতে লাগলো অপারেশন এর প্রসেস।
ডক্টর ফাইয়াজ একে একে কোথায় কতটুকু মেডিসিন প্রয়োগ করতে হবে সেটার দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
ডক্টর রেহান জ্যাকব গ্যাব্রিয়েল এর পায়ের থেকে সচল রক্তনালী কেটে নিয়ে যুবরাজের দিকে একটা ফোর্সেপ্স এর সহায়তায় এগিয়ে দিলো।
দক্ষ যুবরাজ একে একে তার কাজ শেষ করে সাকশন এর সাহায্যে যেই অতিরিক্ত ব্লাড,ফ্লুইড ক্লিন করার প্রসেস শুরু করতে নেয় ঠিক তখনই হার্টের সকল জয়েন্ট ছুটে ফিনকি দিয়ে রক্ত উপচে পরে যুবরাজের মুখে গিয়ে লাগে।
এই দৃশ্য দেখে সকল ডক্টরস দের মধ্যে ভয়াবহ আতঙ্ক পরিলক্ষিত হতে থাকে।মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাওয়া সাকসেস ফুল অপারেশনটি অদক্ষ ডাক্তারের ভুল অপারেশন এ রূপ নেয়।যুবরাজ দ্রুত হ্যামস্ট্যাট টুলস এর সহায়তায় রক্ত নালি গুলো রোধ করে ব্লিডিং ফ্লো কমানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু সেটা কমার পরিবর্তে দ্বিগুন ফোর্সে জ্যাকব গ্যাব্রিয়েল এর নাক মুখ দিয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসে।
মুহূর্তেই অপারেশন থিয়েটারে রক্তের বন্যা বয়ে যায়।পেশেন্ট পালস মনিটরের বিপ বিপ আওয়াজ যুবরাজের মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত করে তুলেছে।উন্মাদের ন্যায় যুবরাজ,ডক্টর রেহান এবং বাকি ডক্টর জ্যাকব গ্যাব্রিয়েলকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন কিন্তু ডক্টর ফাইয়াজ নীরব।
যেনো কোনো মজার তামাশা দেখতে বসেছেন তিনি।পাশের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে রক্ত যুক্ত হাত দুটো থুতনিতে ঠেকিয়ে আয়েশী ভঙ্গিতে মুখে তৃপ্তির হাসি ঝুলিয়ে রক্তের স্রোত দেখে যাচ্ছেন।তার কাছে মনে হচ্ছে এর চাইতে মজার এবং আনন্দের কোনো দৃশ্য পৃথিবীতে দ্বিতীয় হতেই পারেনা।

মুহূর্তেই পালস রেটিং জিরো তে এসে মনিটরের বিপ সাউন্ড শিথিল হয়ে এলো।বাকি ডক্টরস হাল ছেড়ে নিজেদের সার্জিক্যাল মাস্ক খুলে ফেললেন।
কিন্তু যুবরাজ তার চেষ্টায় অনড়।চিকিৎসা বিজ্ঞানের সকল কৌশল ফলো করেও যুবরাজ ব্যার্থ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো।
তার ধবধবে সাদা এপ্রোন রক্তে লাল বর্ন ধারণ করেছে।শুধু তাই নয় সমস্ত শরীর চুইয়ে চুইয়ে রক্তের টগবগে ফোটা গড়িয়ে পড়ছে।
বাকি ডক্টরস নিজেদের অপারগতা স্বীকার করে বেরিয়ে যেতেই হাটু মুড়ে বসে পড়লো যুবরাজ।
এই প্রথম তার নিজেকে খুনি মনে হলো। নিজের দক্ষতা আর জ্ঞানের পরিধির বিশ্বাসে সকলের অমত অগ্রাহ্য করে অপারেশন পেপারে সাইন করেছিলো সে। তবে আজ কোথায় গেলো সেই জ্ঞান আর দক্ষতা?
“কি জবাব দেবো আমি ম্যাগান কে?

নিস্তব্ধ ওটি রুম মুহূর্তেই ভয়ঙ্কর হো হো হাসির শব্দে উত্তাল হলো।মেঝে থেকে দৃষ্টি তুলে হাস্যরসে মজে থাকা ব্যাক্তির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো যুবরাজ।

চেয়ারে বসে নিজের মাস্ক আর ক্যাপ খুলে রক্ত ভেজা হাতে এলোমেলো চুলে ব্যাকব্রাশ করে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো ডক্টর শেরহাম ফাইয়াজ।

“কেমন দিলাম ডক্টর ইউভি?তোমার ক্যারিয়ারে অবশেষে দাগ লাগাতে পারলাম আমি।

“কেনো করছো এমন জঘন্য কাজ?কি করেছি আমি তোমাকে?
কান্নাভেজা আহত কন্ঠে প্রশ্নবান ছুড়ে শেরহামের দিকে গভীর দৃষ্টি প্রয়োগ করলো যুবরাজ।

“তুমি কিছুই করোনি ডক্টর।এটা আমার নেশা।আমি এগুলোর মধ্যে আমার সুখ খুঁজে পাই এবং আমি সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখতে পছন্দ করি।পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য কি জানো?পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য।যেই মৃত্যু যতো কষ্টের সেই মৃত্যুর দৃশ্য ততো সুন্দর ।আহ বহু দিন বাদে তাজা রক্তের গন্ধ পেলাম।

#চলবে।

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_১৭
#সারিকা_হোসাইন

নিজের অসাড় হয়ে যাওয়া শরীরটাকে কোনোমতে টেনে হিচড়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বাইরের করিডোরে বেরিয়ে এলো যুবরাজ।রক্তে জবজবে ভেজা পেটানো শরীরটা তার কাছে ভর শূন্য ঠেকছে।মাথাটা ক্রমাগত ভো ভো শব্দে উদ্বেলিত করছে সবকিছু।চিন্তা ভাবনা সব কিছুই লোপ পেয়ে নিজেকে বড্ড ঘিলুহীন মানব ঠেকছে।কিছুক্ষন আগের বিভৎস ঘটনা বেমালুম ভুলে এলোমেলো পায়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ফাঁকা দৃষ্টিতে হেটে চলেছে যুবরাজ।পরিহিত ধবধবে সাদা রঙের ডক্টর এপ্রোন টা থেকে চুইয়ে চুইয়ে হালকা জমাট বাঁধা গাঢ় লাল রক্ত বিন্দু গুলো সারা করিডোর ময় ছড়িয়ে যাচ্ছে।সেদিকেও যুবরাজের কোনো হেলদোল নেই।

পুব আকাশের সোনালী সূর্য টা ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে অস্তমিত হচ্ছে।তার লালটকে আভা যেনো আলাদা একটা সৌন্দর্যের উপমা।গোধূলির এই লগ্নে সামান্য শিরশিরে হিম ধরানো বাতাস বয়ে যাচ্ছে মাউন্ট সিনাই হসপিটালের বৃহৎ করিডোর জুড়ে।
অপারেশন থিয়েটারের খোলা করিডোরে অস্থির চিত্তে চিন্তিত ভঙ্গিতে সমানে পায়চারি করছে জ্যাকব গ্যাব্রিয়েল এর একমাত্র কন্যা ম্যাগান।চিন্তায় তার নাকের ডগা পর্যন্ত রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে।কালচে বাদামি রঙের চুলগুলো একটু বেশিই বাতাসে উড়াউড়ি করছে যেনো আজকে কিন্তু মেয়েটি নিজের ব্যাপারে একদম উদাসীন।এদিকে তাপমাত্রা ও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।গায়ের পাতলা উষ্ণ পোশাকটি শিরশিরে ঠান্ডা বাতাসকে প্রতিহত করতে ব্যার্থ হচ্ছে।নিজের ঠান্ডা হাত দুটো মুঠো করে একহাত আরেক হাতের আলিঙ্গন এ বদ্ধ করে মুখের গরম ভাপে নিজেকে নিজেই উষ্ণ রাখার বৃথা প্রয়াস চালালো ম্যাগান।

হঠাৎই টাইলসে ঘষে ঘষে হেটে চলার অদ্ভুত শব্দে স্থির হয়ে দাঁড়ালো ম্যাগান।নিজের অবনত দৃষ্টি সম্মুখে পেতে যুবরাজকে এমন ভয়ংকর অবস্থায় দেখে থরথর করে কেঁপে উঠলো সে।যুবরাজের চুল থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত রক্তে রঞ্জিত।সারা মুখে দলা দলা রক্ত জমে ভয়ংকর জম্বি মানব ঠেকছে তাকে।
নিজের ভয়কে কোনোমতে গিলে খেয়ে অসহায় ভঙ্গিতে যুবরাজের সামনে এসে দাড়ালো ম্যাগান।

“ডক্টর ইউভি আপনি ঠিক আছেন তো?আপনার শরীরে এতো রক্ত কিসের?পাপার কন্ডিশন কেমন এখন??

কাঁপা কাঁপা জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে ঝটপট প্রশ্ন গুলো করে যুবরাজের দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইলো ম্যাগান।

ম্যাগানের এতোগুলো প্রশ্ন যুবরাজের কাছে ঠান্ডার স্ট্রম এর মত লাগলো।নিজের মস্তিষ্ক হাতড়ে ম্যাগানের আশানুরূপ কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না যুবরাজ।
অসহায় ম্যাগান যুবরাজের এপ্রোনের রক্তাক্ত দুই কলার শক্ত হাতে চেপে ধরে যুবরাজের চোখে চোখ রেখে কিছু অনুসন্ধান করার চেষ্টা চালালো।

মিনিট দুই ব্যায় করার পর যুবরাজের নিচু চাহনি দেখে কিছুই বুঝতে বাকি রইলো না ম্যাগানের।সহসাই তার বড় বড় দুই নেত্র বেয়ে সমানে অঝোর ধারায় উষ্ণ জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো।গলা দিয়ে সামান্যতম আওয়াজ করার ক্ষমতা টুকুও যেনো সে হারিয়ে ফেলেছে আজ।নিজের বাবার সাথে কাটানো এতোগুলো বছরের সমস্ত স্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠতেই ভুবন কাঁপানো চিৎকার করতে চাইলো ম্যাগান।
বুকের খাঁচার ভেতর সেই চিৎকার টাকে কে যেনো গলা টিপে রোধ করে ফেললো।হাজার চেষ্টা করেও ম্যাগান তার ভেতরের কষ্ট গুলো কে উজাড় করতে পারলো না।

“আই কিলড ইউর ফাদার মিস ম্যাগান,হি ডায়েড বিকজ অফ মাই ফল্ট,আম এ মার্ডারার।কল দ্যা পুলিশ ফর এরেস্ট মি! প্লিজ”

অনুভূতি হীন সোজা সাপ্টা অকপট স্বীকারোক্তিতে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো ম্যাগান।অবুঝ সিক্ত চাহনীতে যুবরাজের ঘোলাটে চোখের দিকে তাকিয়ে কথার সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা করলো কিছুক্ষণ সে।কিন্তু কথাগুলো বলে যুবরাজ অপরিবর্তিত শক্ত মুখে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।

ম্যাগান কিছু বলার আগেই লাইটস ক্যামেরা আর মানুষের চিৎকার চেঁচামেচিতে নিজেদের ধ্যান ছেড়ে সামনে তাকালো দুজনে।হঠাৎই চারপাশে এতো মানুষের সমাগম দেখে আতঙ্কে যুবরাজের রক্তে ভেজা হাত খামচে ধরলো ম্যাগান।
অপ্রস্তুত যুবরাজকে আরো বেকায়দায় ফেলতে রিপোর্টার্সরা নানান ধরনের বিকৃত মস্তিষ্কের প্রশ্ন সমূহ ছুড়তে লাগলো।

“শুনেছি আপনি হসপিটালের সকল ডক্টরস দের কথার অবাধ্য হয়ে এই অপারেশনের জন্য সাইন করেছেন?

“অপনি কি ডাক্তার নাকি নর পিচাষ?

“জ্যাকব গ্যাব্রিয়েল এর সাথে আপনার কি পুরোনো কোনো শত্রুতা ছিলো যার জের ধরে আপনি তার জীবন প্রদীপ এভাবে নিভিয়ে দিলেন?

নিউইয়র্ক শহরের টিভি চ্যানেলের প্রত্যেকটি রিপোর্টার্স এর কাছ থেকে এমন ভয়াবহ ইংরেজি প্রশ্নবানে যুবরাজ যেনো পায়ের নিচের মাটি হারিয়ে ফেললো।নিজের কাছে নিজেকেই তার বদ্ধ উন্মাদ মনে হচ্ছে।সকল প্রশ্নের সুন্দর বিস্তৃত ব্যাখ্যা জনিত উত্তর গলার কাছে তালগোল পাকিয়ে আটকে রইলো।বোকা অবুঝ জরাজীর্ণ মানুষের মতো ফ্যালফ্যাল করে রিপোর্টার গুলোর দিকে শুধু নীরবে তাকিয়ে রইলো যুবরাজ।

শুনশান নীরব হাসপাতাল নিমিষের ব্যাবধানে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠলো।আশেপাশের কেবিনের পেশেন্ট থেকে শুরু করে অন্যান্য ডাক্তার এবং বাইরের মানুষে ভরে গেলো হসপিটাল করিডোর।
নিজেদের ক্ষোভ ধরে রাখতে না পেরে যুবরাজকে উদ্দেশ্য করে কেউ নিজের স্যন্ডেল ছুড়ে মারলো কেউ বা গরম কফি ছুঁড়লো।কেউ কেউ ভিড় ঠেলে যুবরাজকে আঘাত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলো।কেউ কেউ বিশ্রী গালাগাল দিতেও ভুল করলো না।
নিজের ডাক্তারি পেশার তিন বছরের ক্যারিয়ারের সকল সম্মান যেনো নিমিষেই খুইয়ে ফেললো যুবরাজ।যেই মানুষ গুলো সম্মানের শ্রেষ্ঠ সিংহাসনে তাকে বসিয়েছিলো এতোদিন আজ তারাই তাকে টেনে হিচড়ে পদদলিত করছে।আজকের এই দুঃস্বপ্ন ময় অভিজ্ঞতায় যুবরাজ যেনো অনুভূতি হীন অদ্ভুত জন্তু হয়ে সকলের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে রইলো।
চারপাশের বিক্ষুব্ধ জনতা যখন যুবরাজের থেকে মুখ ফিরিয়ে ঘৃণা প্রদর্শন করতে লাগলো ঠিক সেই সময়ে যুবরাজের হাত শক্ত করে চেপে ধরলো ম্যাগান।নিজের বুক চিরে ঠেলে বেরিয়ে আসা কান্নাকে বহু কষ্টে রোধ করে সকলের উদ্দ্যেশে মিহি কন্ঠে চিৎকার করে উঠলো
“প্লিজ স্টপ ডিজ ননসেন্স”!

“আমার বাবা আগে থেকেই অনেক অসুস্থ ছিলো।অপারেশন জটিলতায় উনি মারা যাবে এটা আমরা আগে থেকেই জানতাম,সব কিছু জেনে বুঝেই আমরা বন্ড সাইন করেছি।কারন পাপা শেষ চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন।এখানে ডক্টর ইউভির কোনো দোষ নেই।তাই আমি আপনাদের করজোড়ে অনুরোধ করবো আপনারা প্লিজ উনাকে ব্লেইম করা বন্ধ করবেন।আজকের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমরা দুজনেই ভেঙে পড়েছি।প্লিজ আমাদের একটু স্পেস দিন।”

কান্না ভেজা উঁচু কন্ঠে এক বাক্যে কথা গুলো শেষ করে যুবরাজের থাবার ন্যায় হাত ধরে টেনে ভিড় ঠেলে বেরিয়ে গেলো ম্যাগান।জ্ঞান শূন্য যুবরাজ অন্ধের জষ্ঠীর মতো ম্যাগানকে অনুসরণ করে চলতে লাগলো।

এই দৃশ্য দেখে দূর থেকে শেরহাম দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে উঠলো।যুবরাজের অপদস্থ হবার দৃশ্য খুব কঠিন ভাবে তাকে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু মেয়েটির সাংঘাতিক স্পর্ধায় নিজের আনন্দের ব্যাঘাত ঘটতেই মুখের হাসি মিলিয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো।
নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে হাতে থাকা জুসের ক্যান হাত থেকে ফ্লোরে ফেলে পায়ের সহিত পিষে কচলে গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো

“যুবরাজের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর জন্য তোকে চূড়ান্ত দাম চুকাতে হবে ব্লাডি হুয়াইট বিচ।এমন আযাব দেবো তোকে রূহ পর্যন্ত কেঁপে উঠবে।তোকে আমি খুব করে আমার আসল চেহারা চিনিয়ে ছাড়বো।

*************
যুবরাজের মুখ থেকে এই টুকুন ঘটনার বর্ণনা শুনে ডুকরে কেঁদে উঠলেন সামিনা।যেই ছেলেকে নিজের সব টুকু দিয়ে আদর ভালোবাসায় বড় করেছেন সেই ছেলের জীবন মুহূর্তেই এমন বিষাদের কালো মেঘে ঢেকে গেছে মা হয়েও এটা তিনি বুঝতেই পারেননি?
এতো বড় ব্যার্থতা নিয়ে কিভাবে বেঁচে আছেন তিনি?

নিজের সকল ব্যার্থতা ঘুচাতে শক্ত হাতে যুবরাজকে বুকে টেনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন সামিনা।

“বাবারে ও বাবা।আমার সোনা বাবা।মাম্মা তোর কষ্ট বুঝতে পারিনি রে বাবা।না বুঝে সব সময় তোর উপর অনেক কিছু চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেছি আমি।আমাকে মাফ করে দে আব্বা”!

সামিনার কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হলো।সামিনার পিঠ জড়িয়ে কাঁধে থুতনি রেখে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগলো যুবরাজ।

“ও আমার ভালোবাসার মানুষ গুলোকে আমার থেকে কেড়ে নিবে মাম্মা।আমাকে বরবাদ করতে এটাকেই সে শক্ত হাতিয়ার হিসেবে বারবার ব্যাবহার করতে চাইছে”

কথাগুলো বলে দ্রুত দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো যুবরাজ।

নিজের চোখের ঝরে যাওয়া অশ্রু দানা নরম হাতের করপুটে মুছে যুবরাজের উদ্দেশ্যে সামিনা শুধালো

“তুই কি কাউকে ভালবেসেছিস কখনো?

সামিনার প্রশ্ন শুনে বাইরের খোলা জানালায় শূন্য দৃষ্টি মেললো যুবরাজ।এরপর লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ধরে আসা গলায় বললো―
“ডক্টর রেহানের বোনকে বিগত আট বছর ধরে আমি ভালোবাসি মাম্মা”

#চলবে