ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড পর্ব-২৫+২৬+২৭

0
10

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_২৫
#সারিকা_হোসাইন

——-
বেলা কতো হয়েছে সেটা ঠাহর করাও যেনো বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে এই নরক তুল্য জঘন্য বাড়ী টিতে।চারপাশে ভ্যাপসা গরম,উটকো বিশ্রী গন্ধ সেই সাথে আলো আর বাতাসের নেই কোনো অস্তিত্ব।থেকে থেকেই অদ্ভুত দুই একটা পোকা মাকড় গায়ে এসে কামড়ে চলে যাচ্ছে।সেই কামড়ে কখনো শরীর চুলকে ঘা হয়ে যাবার উপক্রম হচ্ছে আবার কখনো বা বিষাক্ত কামড়ে ব্যাথায় শরীর অসাড় হয়ে যাচ্ছে।এদিকে সাইবেরিয়ান হাসকি কুকুরটির কথা না বললেই নয়।সতর্ক চতুর বিশ্বস্তু পাহাড়াদারের ন্যায় হিংস্র সবুজ চোখে প্রত্যেকটি বন্দি অপরাধীর কক্ষের সামনে পায়চারি করে চলেছে সমানে।কিন্তু শেরহামের কক্ষের সামনে এসেই কুকুরটি ভয়ানক স্বরে ডেকে উঠছে কিছুক্ষণ বাদে বাদেই।একদিকে চারপাশের মানুষের আহাজারি আরেক দিকে কুকুরটির বিদঘুটে সুর দুই মিলে শেরহামের মাথা পাগল করে তুললো আরো দ্বিগুন হারে।কুকুরের দিকে তাকিয়ে শেরহাম ভয়ঙ্কর দৃষ্টি দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো

“এখান থেকে তো আমি নিশ্চিত রূপেই বের হয়ে যাবো।কিন্তু যাবার আগে তোর র*ক্ত খেতে মোটেও ভুলবো না”

কুকুরটি কি বুঝলো কে জানে শেরহামের দিকে তাকিয়ে আরো বিশ্রী ভাবে দাঁত বের করে খেঁকিয়ে উঠলো।
নিজের উপর নিজেই রাগে ফুঁসছে শেরহাম।

“তুই আমাকে বোকা বানিয়ে বড় ভুল করে ফেললি যুবরাজ।এরজন্য তোকে সারাটা জীবন খুব করে পস্তাতে হবে।”

কথা গুলো বলে অজগর এর ন্যায় ফসফস করে শ্বাস টানলো শেরহাম।

যুবরাজ শেরহাম কে হাতে লম্বা একটা শিকল পরিয়ে শিকলটা দেয়ালে আটকানো একটা লোহার আংটার সাথে তালা দিয়ে রেখে চলে গিয়েছে।শুধু তাই নয় কক্ষটিতে না আছে বসার ব্যাবস্থা আর না আছে শোবার ব্যাবস্থা।এক বিন্দু পানি পানের ব্যাবস্থা পর্যন্ত রাখেনি কঠিন হৃদয়ের পুরুষ যুবরাজ শাহীর।পুরো কক্ষ ভর্তি বড় বড় কুচকুচে কালো কালো মশা।যেখানেই কামড়াচ্ছে সেখানটাই ফুলে বড় বড় চাকা উঠে যাচ্ছে।মুহূর্তের ব্যাবধানেই মশা,পোকা,মাকড় শেরহাম কে কামড়ে তার চেহারার নকশাই বদলে ফেললো।

———-
সাদাফ শাহীর এর বিশাল বড় বাংলোর সামনে দাঁড়িয়ে আছে যুবরাজ। দূতলার পানে দৃষ্টি পেতে রেখে পকেটে দুই হাত গুঁজে ঠোঁট কামড়ে এক মনে ভেবে চলেছে নানান ভাবনা।

“নিশ্চই মা পাপাকে শেরহাম সম্পর্কে সব কিছু খুলে বলেছে।পাপাকে আমি ভালো করেই চিনি।তিনি শেরহামের মোকাবেলা করার জন্য তামাম দুনিয়া উল্টে ফেলবে।যে করেই হোক শেরহামের পাঠ আগে চুকাতে হবে,ফুপার সাথে যা হয়েছে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমি পাপার সাথে কখনোই হতে দিবো না”

ফুঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দুই হাতের সহিত উলফ কাট চুল গুলোকে ঠেলে পিছনে নিয়ে ঘড়িতে সময় দেখে নিলো যুবরাজ।সবে রাত সাড়ে ন’টা বাজে।কিন্তু সাদাফ শাহীরের জন্য রাত ন’টা অনেক রাত।যদিও এতক্ষনে তার বিভোর ঘুমে থাকার কথা।কিন্তু আজ সে যুবরাজের জন্য অপেক্ষা করছে।হঠাৎই পিতৃ ভালোবাসায় যুবরাজের দুই চোখ ছলছল করে উঠলো।
শেষ কবে সে তার বাবার সাথে বসে খোলাখুলি কথা বলেছে সেটাই তার মনে নেই।

এদিকে যুবরাজের আসার প্রতীক্ষায় ড্রয়িং রুমে বসে বসে সময় গুনছে সামিনা ।প্রতিটা সেকেন্ড তার কাছে বিষাক্ত লাগছে।পায়ের ব্যাথায় পায়চারি পর্যন্ত করতে পারছেন না।ইদানিং একটু হাঁটলেই ঘুটনীতে প্রচুর ব্যাথা হয়।সামিনা এক মনে হাতের বুড়ো আঙুল কামড়ে চলেছেন আর ভাবছেন―

“কোথায় তুই যুবরাজ বাবা আমার?এতো সময় লাগছে কেনো আজকে তোর বাসায় ফিরতে?কোথাও কোনো অঘটন হয়নি তো?

অঘটন এর কথা হঠাৎ মনে পড়তেই চট করে উঠে দাঁড়ালেন তিনি।শেরহাম যুবরাজকে মা*রার জন্য সর্বক্ষণ তৎপর হয়ে আছে।কখন কি করে বসে কে জানে?ভালোবাসার স্বামীকে হারিয়ে কোনো মতে বেঁচে আছেন তিনি।এই ছেলেটাও যদি হারিয়ে যায় তখন কি আকড়ে ধরে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে শ্বাস টানবেন তিনি?

হঠাৎই কলিং বেলের টুং টাং আওয়াজ হলো।সামিনার ভাবনায় ভাটা পড়লো সেই সাথে দৌড়ে চলে গেলেন দরজা খুলতে।প্রায় মাস খানেক পর ছেলেটা এই বাড়িতে ধূলো দিতে যাচ্ছে।

দরজা খুলে যুবরাজকে দেখতে পেয়েই জাপ্টে ধরলেন সামিনা।যুবরাজের বুকে মুখ লুকিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন।

“তোর চিন্তায় দেখবি আমি ঠিক একদিন মরে যাবো।দিনে দিনে আমার বয়স বাড়ছে,আমি কি এতো এতো চাপ নিতে পারি?”

যুবরাজ সামিনার মাথায় চুমু খেয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো

“এহ বললেই হলো মরে যাবে?এতো সহজে তোমাকে মরতে দেবো নাকি?

সামিনাকে বুক থেকে টেনে তুলে তার দুই চোখের জল সযত্নে মুছিয়ে দিলো যুবরাজ।এরপর ফিসফিস কন্ঠে শুধালো

“তোমার জাঁদরেল ভাই কি জেগে আছেন?

সামিনা সহসাই যুবরাজের কান মলে দিয়ে বলে উঠলেন

“সব সময় শুধু দুস্টুমি তোর তাই না?উনি তোর জন্য অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছেন।ভাইজানের শরীরটা ভালো নেই।তাড়াতাড়ি দেখা করে আয় আমি নিচেই আছি।খাবার বাড়বো তোর জন্য”

সামিনার হাতের রান্না খাবার লোভে যুবরাজের চোখ চকচক করে উঠলো।
“এক্ষুনি যাবো আর আসবো”
কথাটি বলেই লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি ধরে সাদাফ শাহীরের কক্ষের দিকে দৌড় লাগালো।

——–
মিসেস তনুজার কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রায়াফ।কিছুক্ষন আগেই সে কেবিনের পাশের নার্স স্টেশনে থাকা ডিউটিরত নার্স থেকে তনুজার কেস হিস্টোরি জেনেছে।
উহু নার্স মোটেও এমনি এমনি মুখ খোলেনি।নিজের ডক্টরী আইডি কার্ড দেখানোর পর ধীরে সুস্থে মুখ খুলে সব উগলেছে।

অতিরিক্ত চিন্তা থেকে প্রেসার বেড়ে গেছে অনেকটা।শুধু তাই নয় বিভিন্ন মানসিক হাইপার টেনশনে বুকে চাপ দিয়েছে প্রচন্ড ভাবে।তার এই বুকের ব্যাথা একদিন দুদিনের নয় বরং দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে এই ব্যাথা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।শুধু তাই নয় ,হৃদযন্ত্রেও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।যখন তখন হার্ট এট্যাক করে মারাও যেতে পারেন।
মিসেস তনুজার এতোগুলো রোগের বর্ননা শুনে মাথা ঝিম ধরে গেলো রায়াফের।কি করবে না করবে কিছুই যেনো গুছিয়ে উঠতে পারছে না সে।

“আরে আপনি এখানে?”

কণ্ঠটি কার তা ঠাহর করতে বেশি সময় নিলো না রায়াফ।মেয়েটিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে নিজেকে দ্রুত ধাতস্থ করে বলে উঠলো
“জি আমি একটা দরকারে এসেছি”

“আপনার কোনো পেশেন্ট ভর্তি এখানে?

এনির এমন প্রশ্নে কিছুটা ঘাবড়ালো রায়াফ।এরপর চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলে উঠলো

“হেমাটোলজি কেবিনে এক পরিচিত আত্মীয় কে দেখতে এসেছিলাম,এখন চলে যাচ্ছি।তা আপনি এখানে কি করে?

“আমার ফ্রেন্ড প্লাস কলিগ রাজ্যের মা এই কেবিনে ভর্তি।রাজ্যের হসপিটালে আসতে একটু দেরি হবে তাই আমাকে পাঠিয়েছে দু ঘন্টার জন্য”

“কেনো উনার বাবা ভেতরে নেই,?

তাৎক্ষনিক প্রশ্নটি করে আকুল চিত্তে উত্তরের আশায় এনির পানে তাকিয়ে রইলো রায়াফ।

এনি সামান্য চিন্তা যুক্ত ভাব মুখশ্রী তে ফুটিয়ে বললো

“আসলে আংকেল আন্টির থেকে আরো বেশি অসুস্থ।”

“আচ্ছা আমি যদি আপনার সাথে উনার কেবিনে ঢুকি আপনি কি মাইন্ড করবেন?আমি প্রমিস করছি আমি কোনো শব্দ করবো না।চুপচাপ থাকবো”

রায়াফের এমন করুন আবদারে নিষেধ করতে পারলো না এনি।

“ঠিক আছে আসুন।

এনির পিছন পিছন স্পেশাল কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো রায়াফ।শীর্ন দেহের অবচেতন মানুষটিকে দেখেই বুকের ভেতর টা মুষড়ে উঠলো তার।এনির অগোচরে কোনো মতে নিজের বুক টা চেপে ধরে পাশে থাকা সোফায় ধপ করে বসে পড়লো রায়াফ।
চোখের কোনে জমা জল গুলোকে লুকাতে নীরবে দুই চক্ষু মুদে চুপচাপ দেয়ালে মাথা হেলান দিয়ে বসে রইলো।

হঠাৎই চোখের সামনে ছোট বেলার কিছু মধুর স্মৃতি এসে হানা দিলো।
“কতো মধুর দিনই না ছিলো সেগুলো তবে আজ কেনো সব তিক্ততায় ভরা?
ঘুমন্ত তনুজা হঠাৎই নড়ে চড়ে উঠলেন।হাতে তার ক্যানুলা লাগানো।সেটাতে স্যালাইন পাস হচ্ছে ধীর গতিতে।তনুজার নড়াচড়ার শব্দ হতেই রায়াফ চোখ মেলে তাকালো।অসাবধানতাবশত নড়ার কারনে স্যালাইন ড্রপ বন্ধ হয়ে পাইপে বেশ খানিকটা রক্ত উঠে গেলো তার।এটা দেখে এনি ঘাবড়াতেই রায়াফ দ্রুত উঠে খুব দক্ষ হাতে সেকেন্ডের ব্যাবধানে সব ঠিক করে দিলো।

তনুজা সবটাই অবলোকন করে অশ্রুসিক্ত চোখে রায়াফের পানে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন।এরপর হাতের ইশারায় এনিকে ডাকলেন।
কোনো প্রয়োজন ভেবে এনি তনুজার কাছে আসতেই তনুজা ফ্যাসফ্যাসে ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন
“তুমি বাইরে যাও, আমি এই ডক্টর এর সাথে একটু একাকী কথা বলতে চাই”

এনি কিছুক্ষন ইতস্তত করে বলে উঠলো
“আব আসলে আন্টি সে আমার বন্ধু,ডক্টর নয়”

কিন্তু এনির কথা মানতে নারাজ তনুজা।এনি মনে মনে ভাবল
“অসুস্থ মানুষ যা ভেবে খুশি থাকতে চায় থাকুক আমার কি?

রায়াফ কে হাতের ইশারায় দ্রুত কথা শেষ করার ইঙ্গিত দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো এনি।

এনি বাইরে বের হতেই রায়াফের হাত খামচে ধরে উঠে বসতে চাইলেন তনুজা।তনুজার অকুলিবিকুলি দেখে রায়াফ অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো
“ম্যাডাম আপনি প্লিজ শান্ত হোন, আপনার এমন উত্তেজিত হওয়া ঠিক নয়,আপনার খারাপ লাগছে?ডক্টর ডাকবো?

তনুজা রায়াফের দুই হাত নিজের করপুটে নিয়ে অজস্র চুমুতে ভরিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন

“মায়ের চোখ ফাঁকি দেবার সাধ্যি কার আছে খোকন সোনা?

_________
সাদাফ শাহীরের আলো ঝলমলে কক্ষে তার পা দুটোকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে মেঝেতে বসে সাদাফ শাহীরের কোলে মাথা রেখে বসে আছে যুবরাজ।যুবরাজের ঘন কেশ গুচ্ছে ধীর গতিতে আঙ্গুলি সঞ্চালনায় মজে আছেন সাদাফ শাহীর।
আজ যেনো তার কাছে কোনো ত্রিশ বছরের যুবক নয় সেই পাঁচ বছরের ছোট যুবরাজ বসে আছে।ছেলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে অশ্রু বিসর্জন দিলেন সাদাফ শাহীর।

“তোমার মায়ের মৃত্যুর পর আমি আর কেনো বিবাহ বন্ধনে জড়াইনি জানো?শুধু মাত্র তোমার আদরে ভাগ হবে বলে।তুমি আমার কাছে সত্যিকারের অর্থেই যুবরাজ হিসেবে ছিলে।আমি আমার সবকিছু উজাড় করে তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম বাবা।তাহলে কোন দুঃখে পাপার সাথে এতোটা দূরত্বের দেয়াল তৈরি করলে?তাহলে কি আমিও আর দশটা বাবার মতো শুধু বাবাই হয়ে রইলাম?ভালো বন্ধু হতে পারলাম না?

কথা গুলো বলতে বলতে সাদাফ শাহীরের গলা ধরে এলো।আরো কিছু বলতে চাইলেন কিন্তু কান্নার হিড়িকে কিছুই বলতে পারলেন না।

“পাপা আমি সব তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।শুধু একটা কারনেই বলিনি কারন বললে শেরহামের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে তুমি আর শেরহাম তোমার ক্ষতি করে দিতো।কারন ও আমাদের মতো সুস্থ মানুষ নয়।ওর জন্মগত ব্রেন ফাংশনে প্রবলেম আছে।সব সময় ও একটা কল্পনার দুনিয়ায় থাকে।

“তুমি যখন এতো করেই বলছো তাহলে তোমার মামার সাথে এবিষয়ে কথা বলি কি বলো?

যুবরাজ সহসাই সাদাফ শাহীরের পা শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো
“পাপা এই কাজ ভুলেও করো না।মা নিজেই এই খেলার মাস্টার মাইন্ড”

যুবরাজের মুখে নিজের ভালোবাসার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের এমন কুকীর্তির আলাপ শুনে অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেলেন সাদাফ শাহীর।

“কাদের ভরসা করেছি আমি এতোদিন?এদের কাছে আমি আমার ছেলের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিলাম?

আর ভাবতে পারেন না সাদাফ শাহীর।তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলেন
“এর একটা চূড়ান্ত বিহীত আমি করেই ছাড়বো।তার জন্য আমার যা হয় হোক।”

সাদাফ শাহীরের সাথে আরো কিছুক্ষণ বাক বিনিময় করে কড়া হুঁশিয়ারি জারি করে তাকে ভালোভাবে বিছানায় শুইয়ে লাইট নিভিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো যুবরাজ।

‘আপাতত শেরহাম কিছুদিন মশার কামড় খাক আমি শাশুড়িকে সুস্থ করে বউ নিয়ে একটু রোমান্স করি।

কথা গুলো আপন মনে ভাবতেই লাজুক হাসলো যুবরাজ।যদিও লজ্জা নারীর ভূষন।তবুও তার আজ হঠাৎই লজ্জা লাগার কারন সে নিজেই খুঁজে পাচ্ছে না।

———-
“কিরে আম্মুর দায়িত্ব তোকে দিলাম আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?

রাজ্যের হঠাত আগমনে হকচকিয়ে উঠে এনি।নিজের ফোন টিপা বন্ধ করে মোবাইল খানা ব্যাগে পুরতে পুরতে বলে উঠে

‘আর বলিস না আমার এক ফ্রেন্ডকে আন্টি ডক্টর ভেবে গুলিয়ে ফেলেছে।এখন আমাকে কেবিন থেকে বের করে দিয়ে উনারা দুজন কথা বলছে”

“তোর আবার কোন ফ্রেন্ড?
চিন্তিত ভঙ্গিতে শুধালো রাজ্য।

“ঐযে তোকে বলেছিলাম না”
মুখে লাজুকতার রক্তিম আভা নিয়ে মিইয়ে যাওয়া গলায় উত্তর দিলো এনি ।

রাজ্য এনির বন্ধু নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে নিজের মায়ের চিন্তায় ধাম করে দরজা খুলে কেবিনে প্রবেশ করলো।

কেবিনে ঢুকেই নিজের মায়ের বুকে জাপ্টে ধরে অশ্রু বিসর্জন দেয়া সকালের পরিচিত সেই ছেলেকে দেখে সারা দুনিয়া দুলে উঠলো রাজ্যের।
হাত থেকে ফলমূলের ব্যাগ গুলো নিঃশব্দে মেঝেতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলো।রাজ্য আহত কান্নারত কন্ঠে ডেকে উঠলো

“দাদা ভাইরে”!

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_২৬
#সারিকা_হোসাইন

——
নিস্তব্ধ হসপিটালের দামি কেবিন জুড়ে ফিনাইলের উটকো গন্ধের উপস্থিতি বিদ্যমান।জানালার সাদা পাতলা পর্দা গুলো স্থির হয়ে দেয়াল গড়িয়ে সটান হয়ে ঝুলে রয়েছে।নরমাল টেম্পারেচার এ এসি চলছে।দুজন মানুষের অতিরিক্ত আবেগ জড়ানো ঘন নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ পরিলক্ষিত হচ্ছে না।মিসেস তনুজা রায়াফের বা হাতটা শক্ত করে এখনো ধরে রয়েছেন আর নীরবে কেঁদে বুক ভাষাচ্ছেন।এখন আর তিনি শব্দ করে কাঁদতে পারেন না,সামান্য একটু কাঁদলেই বুকে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করেন।রায়াফ এবার তার চোখের কঠিন শাসনে আটকে রাখা জল গুলোকে ছেড়ে দিলো।মাথা নিচু করে রাখার কারনে রায়াফের উষ্ণ জলরাশি মিসেস তনুজার হাতে উপর পতিত হলো।

“তোর কাছে কোনো কিছুর ব্যাখ্যা আমি চাইবো না বাবা।তুই বেঁচে আছিস এটাই আমার কাছে অনেক।আমি শুধু চাই যেরকম ভাবেই হোক তুই ভালোভাবে বেঁচে থাক আমাদের সামনে থাক।আর কিছু চাওয়ার নেই রে বাবা”

তনুজার কথা খানা শেষ হবার সাথে সাথেই ছোট অবুঝ শিশু দীর্ঘ সময় ধরে তার মায়ের দেখা না পেয়ে ব্যাকুলতায় কেঁদে যখন বুক ভাষায় আর হঠাৎই মায়ের আগমনে সব ভুলে মাকে জাপ্টে ধরে মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে রাখে রায়াফ ও ঠিক সেভাবেই তনুজাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো।

“তোমাদের ছেড়ে এতো গুলো বছর থাকতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে মা।আমি তো মরেই গিয়েছিলাম।দ্বিতীয় বার যে আমার জন্ম হয়েছে গো মা”

মা ছেলের কান্নার দমকে ভারী হলো কেবিন রুম।হঠাৎ রাজ্যের আগমনে হকচকিয়ে উঠলেন তনুজা এবং রাগাফ দুজনেই।
রাজ্য তার হাতের সমস্ত কিছু ফেলে দৌড়ে গিয়ে রায়াফের পিঠ খামচে ধরে কাঁদতে লাগলো।রাজ্যের চোখের জলে রায়াফের পুরো শার্ট ভিজে উঠলো।ঘটনা কি হলো কিছুই বুঝতে পারলো না এনি।শুধু দরজায় দাঁড়িয়ে এতটুকুন বুঝলো

“কারো পার্সোনাল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো মানেই হয় না।ওরা ওদের মতো ভালো থাকুক।আমার উচিত ওদেরকে স্পেস দেয়া।”

এনি সন্তপর্নে দরজা চাপিয়ে দিয়ে লিফট ধরে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে এলো।এসে একটা টেক্সি ক্যাব ধরে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।।আর মনে মনে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।

রায়াফের পেট জড়িয়ে ধরে পিঠে মুখ গুজে জোরে জোরে শব্দ করে ক্রমাগত কান্না করে চলেছে রাজ্য।সকাল বেলা যখন সে রায়াফ কে দেখছিলো তখন থেকেই তার মনের মধ্যে খচখচনি শুরু হয়েছিলো।রায়াফ কে দেখার পর থেকে সারাদিন সে কোনো কাজেই মন বসাতে পারেনি।একটা মানুষের শরীরের গঠন থেকে শুরু করে কথা বলার ধরন,চুল আচড়ানোর স্টাইল হুবুহু কখনোই মিলে যাবার কথা নয়।আর তার চাহনি ই যেনো বারবার অন্য কিছু নির্দেশ করছিলো।একজন বিচক্ষণ স্পেশাল ফোর্সের অফিসারের কাছে এসব কিছুই কাকতলীয় মনে হবার প্রশ্নই আসে না।এইজন্যই তো সে মনে মনে ঠিক করেছিলো মিসেস তনুজাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেয়া মাত্র সে এই লোকের পিছনে স্পাই এর মতো লেগে থাকবে।কিন্তু তার মা ঠিক তার সন্তান কে চিনে নিয়েছে।তার দাদা ভাই তাদের সামনে জীবিত অবস্থায় আছে।এর চাইতে সুখের,আনন্দের আর কি হতে পারে?

“আমি জানতাম দাদা ভাই তুমি বেঁচে আছো।এভাবে তুমি আমাদের কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে কোথাও হারিয়ে যেতে পারো না।”

আরো অনেক কিছু বলার চেষ্টা করলো রাজ্য।কিন্তু কান্নার দমকে কন্ঠ রোধ হয়ে জিভ জড়িয়ে গেলো।

“তোমাদের কিছু কথা বলার বাকি আছে মা।আমাকে এখন যেতে হবে।নয়তো তোমরা বিপদে পড়ে যাবে”

কঠিন কন্ঠে কথা খানা বলে শক্ত হয়ে বসে রইলো রায়াফ।রায়াফের যাবার কথা শুনেই তনুজা এক হাতে রায়াফের গলা জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে চোখে মুখে মমতার পরশ বুলাতে বুলাতে উন্মাদের ন্যায় কেঁদে কেঁদে বলে উঠলেন

“কতো বছর পর তোকে কাছে পেলাম রে বাবা!আমার হাহাকার করা শূন্য বুকটা কেবলই ভরতে শুরু করেছে আর তুই চলে যাবার কথা বলছিস?এই অসহায় মা কে একা ফেলে কোথায় যেতে চাইছিস বাবা?এভাবে আমাকে ফেলে যদি তুই চলে যাস তাহলে আমি কিভাবে বাঁচবো বল?

“দাদা ভাই কেনো যাবে তুমি?আমাদের ফেলে কোত্থাও যেতে পারবে না তুমি।আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবো না।”

রাজ্যের পানে তাকিয়ে মুচকি হাসলো রায়াফ।এরপর রাজ্যের নরম তুলতুলে গাল টেনে ধরে কিছুটা মেপে হেসে বলে উঠলো

“পুচকি টা অনেক বড় হয়ে গেছে দেখছি!আমাকে শাসনের স্বরে কথা বলে হুম?

রায়াফের এমন হেঁয়ালি কথায় কোনো কান দিলো না রাজ্য।সে তার কথায় অনড়।দুনিয়া দু ভাগ হয়ে গেলেও সে আজ তার দাদা ভাইকে এখান থেকে এক পা ও যেতে দিবে না।
রাজ্য তার চোখের জল গুলো মুছে সিক্ত কন্ঠে আহত স্বরে বলে উঠলো

“বাড়ি ফিরে চলো দাদা ভাই।তোমাকে ছাড়া আমরা কেউ ভালো নেই।মা মৃত্যু পথযাত্রী,আমার জীবনটাও ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে আর বাবা?

“কি হয়েছে বাবার?

উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে হসপিটালের বেড ছেড়ে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে কথা খানা শুধালো রায়াফ।

রাজ্য হসপিটালের বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ধীর পদে রায়াফের সামনে এসে দাড়ালো।এরপর রায়াফের চোখে চোখ রেখে কাতর কন্ঠে বলে উঠলো

“বাবা আর আগের মতো নরম মনের মানুষ টি নেই দাদা ভাই।উনি হুটহাট রেগে যান,সকলের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেন,আর চুপি চুপি কাঁদেন।আমাদের সাথে ঠিক ঠাক কথা পর্যন্ত বলেন না।বাবা দিন দিন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে দাদা ভাই।”

রাজ্যের মুখে নিজ বাবা সম্পর্কে এমন কথা শুনে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে যেনো ভীষণ কষ্ট হলো রায়াফের।রাজ্যের কাছ থেকে শোনা কথা আর নিজ চোখে নিজের বাবাকে দেখা দুটোই যেনো রাত দিনের ফারাক মনে হলো তার কাছে।

একজন হাসিখুশি সহজ সরল শান্ত মেজাজের মানুষের হঠাৎ এমন পরিবর্তন যেনো তার কাছে চূড়ান্ত অবিশ্বাস্য।নিজের পরিবারের এমন ভঙ্গুর রূপ দেখে কিছুক্ষন নির্বাক হয়ে চকচকে সাদা টাইলসের মেঝেতে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রায়াফ।এরপর অপরাধীর কন্ঠে বললো

আমাকে যেতে দে রাজ্য।নয়তো আমাকে আবার হারিয়ে ফেলবি।এখন আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করে বিভ্রান্ত করিস না।সময় এলে আমি নিজেই সব কিছু খোলে বলবো ”

রায়াফের চোখের ভাষা পড়তে বেশি সময় লাগলো না রাজ্যের।অবিশ্বাসের চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু ফেলে গেলো শুধু।

কিন্তু মিসেস তনুজা ছেলেকে ছাড়তে নারাজ।এক পর্যায়ে তিনি চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন।রায়াফ কে কাকুতি মিনতি করে বলে উঠলেন

“বাবারে একটা রাত মায়ের পাশে থাক না!একটা রাত তোকে দুই নয়ন ভরে আমাকে দেখতে দে।এরপর না হয় যাস”

মায়ের এমন পাগলামিতে দুই চোখ ফেটে জলের আনাগোনা হলো রায়াফের কপোল বেয়ে।অতঃপর রাজ্যকে চোখের ইশারা করতেই রাজ্যের ঠোঁটে প্রশস্ত হাসি ফুটে উঠলো।দুই হাতে নিজের চোখের জল মুছে উৎফুল্ল কন্ঠে বলে উঠলো

“মাকে বাড়িতে নেবার সকল ব্যাবস্থা আমি এক্ষুনি করে দিচ্ছি দাদা ভাই”

নিজের ফোনের স্ক্রিনে সময় দেখে নিয়ে কেবিন থেকে এক প্রকার দৌড়েই বেরিয়ে গেলো রাজ্য।উদ্দেশ্য একটাই মিসেস তনুজার রিলিজ নিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফেরা।

**********
রাজ্যের কক্ষে ঘন্টা খানেক সময় ধরে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে যুবরাজ।রাত প্রায় দেড়টা বাজতে চললো অথচ মেয়েটির কক্ষে আসার নাম গন্ধ নেই।এবার যেনো যুবরাজের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো।চারপাশে নজর বুলিয়ে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে শয়তানি হাসলো যুবরাজ

“আজ রাতে আমাকে এভাবে অপেক্ষা করানোর উচিত শিক্ষা দেবো তোমাকে আমি শ্রেয়সী!”

ঘড়ির কাঁটায় যখন রাত দুটো ছুই ছুঁই এমন সময়ে ক্লান্ত শরীরে কক্ষে প্রবেশ করলো রাজ্য।সুইচ টিপে কক্ষ আলোকিত করতেই নিজের অগোছালো কক্ষটাকে হঠাৎ গুছালো দেখে বেশ অবাক হলো সে। পুরো কক্ষ পরিপাটি করে সাজানো গুছানো।বিছানার চাদর পর্যন্ত টানটান করে পাড়া হয়েছে।কোথাও যেনো একটা ধূলিকনার অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই।

অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে তাড়াতাড়ি কক্ষের দরজা আটকে দিয়ে চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলালো রাজ্য।পুরো কক্ষ জুড়ে কারো কোনো অস্তিত্ব নেই।নিজের গায়ের পোশাক টেনে টুনে ঠিক করে বেলকনি তে নজর দিতেই অন্ধকার চিড়ে সিগারেট এর জলন্ত স্ফুলিঙ্গ নজরে এলো।মুহূর্তেই মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে জানান দিলো মানুষ টি কে হতে পারে।

ঠোঁটে প্রস্তুত হাসি ঝুলিয়ে নিজের একান্ত ব্যাক্তি গত পুরুষটির সামনে এসে দাড়ালো রাজ্য।
রাজ্যের উপস্থিতি টের পেয়ে সিগারেট পায়ে পিষে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো যুবরাজ।এরপর মেকি রাগ দেখিয়ে শুধালো

“ভাইকে পেয়ে জামাই ভুলে গেলে বুঝি”
যুবরাজের মুখে রায়াফ সম্পর্কে এমন কথা শুনে কেঁপে উঠলো রাজ্য।এক মুহূর্তের জন্য যুবরাজকেও তার অবিশ্বাস হতে লাগলো।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে উঠলো

“কিসের ভাই কার ভাই?কার কথা বলছো তুমি?

যুবরাজ স্মিত হেসে রাজ্যের থুতনি চেপে ধরে রসিকতা করে এক ভ্রু উঁচিয়ে চোখ টিপে বলে উঠলো

“ডক্টর রেহান চৌধুরী তোমার দাদা ভাই তাই না?

ভয়ে রাজ্যের কান্না পেয়ে গেলো নিমিষেই।এই মুহূর্তে যুবরাজকে তার মোটেও সুবিধার ঠেকছে না।

“যুবরাজ এই ভাবে কথা বলছে কেনো?তবে কি দাদা ভাইয়ের গুম হবার পেছনে ওর কোনো হাত আছে?

রাজ্যের মুখের ঘনঘন পরিবর্তনে ফিক করে হেসে দিয়ে শক্ত কন্ঠে যুবরাজ বলে উঠলো

“ঠিকই ধরেছো ,তোমার ভাইকে এতোগুলো বছর আমি ই গুম করে রেখেছিলাম,এবার তোমাকেও গুম করবো” রেহনুমা রাবাব রাজ্য”
কথাটি বলেই হো হো শব্দ তুলে হাসতে লাগলো যুবরাজ।

যুবরাজের এমন হাসিতে রাজ্যের বড় বড় নেত্র বেয়ে ভারী বর্ষনের সৃষ্টি হলো।মনে নানা কুচিন্তা এসে ধরা দিলো।

“তবে কি ভুল মানুষে মন বিনিময় হলো?দাদা ভাইকে কি আবার হারিয়ে ফেলবো আমরা?এবার কে বাঁচাবে আমার পরিবারকে?

যুবরাজ তার উষ্ণ হাতের আঙ্গুলির স্পর্শে রাজ্যের চোখের জল মুছিয়ে কপালে ঠোঁটের উষ্ণ পরশ একে বলে উঠলো

“এতোটাই অবিশ্বাস যখন, তখন আমাকে ভালোবাসলে কেনো জান?”

যুবরাজের কন্ঠে এমন আহত স্বর শুনে মুখ তুলে যুবরাজের মুখপানে তাকালো রাজ্য।এরপর তার চোখে চোখ রেখে সত্যি উদ্ঘাটনের চেষ্টা করলো সে।কিন্তু ওই বাদামি রঙা গভীর চোখের বিষাদে রহস্য উদ্ঘাটনের পরিবর্তে নিজেই বিষদিনী হলো।
সহসাই যুবরাজের পায়ের উপর পা রেখে উঁচু হয়ে গলা জড়িয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো রাজ্য।রাজ্যের সম্মোহনী স্পর্শে যুবরাজের সর্বাঙ্গ ভূমি কম্পের ন্যায় কেঁপে উঠলো সাথে দূর হলো সকল অভিমান।পায়ের রক্ত মাথায় ছলকে উঠে উত্তপ্ত শরীররে নিষিদ্ধ বাসনার জন্ম নিলো।নিজেকে সংযত করতে দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দুই চোখ বুজে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো যুবরাজ।

যুবরাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে রাজ্য বলে উঠলো

“আপনাকে চিনতে বড্ড দেরি হয়ে গেলো ডক্টর ইউভি”

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_২৭
#সারিকা_হোসাইন
——-
শুনশান নীরব স্তব্ধ রজনী,তারকাখচিত আকাশের নৈঋত কোন থেকে ধীরে ধীরে শুক্ল পক্ষের চাঁদ খানা বিদায় নিতে চলেছে।রাস্তার নেড়ি কুকুর গুলোর ঘেউঘেউ পর্যন্ত কর্ণ কুহরে আসছে না।চারপাশে এলোমেলো বাতাসের অস্তিত্ব খুব করে টের পাওয়া যাচ্ছে।রাজ্যের কক্ষের ভারী পর্দা গুলো সেই বাতাসের দাপটে সমান তালে উড়ে চলেছে সেই সাথে রাজ্যের ঝলমলে খুসবু যুক্ত চুল।ডিম লাইটের মৃদু নীলচে আলোয় শক্ত আলিঙ্গনে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানব মানবী একজন আরেকজন কে আবদ্ধ করে রেখেছে।তাদের উত্তপ্ত ভারী নিশ্বাস ব্যাতিত আর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
যুবরাজের প্রশস্ত বুকে চোখ বন্ধ করে পরম শান্তিতে মাথা রেখে যুবরাজকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে রাজ্য।যুবরাজের বুকের ধুপধাপ হার্টবিট এর প্রত্যেকটা হাতুড়ি পেটানো বাড়ি তার হৃদয়ের দরজায় কড়া নেড়ে চলেছে বিরামহীন ভাবে।সেই শব্দে বারবার শিউরে উঠছে রাজ্য আর থেকে থেকে যুবরাজের পিঠে শক্ত করে খামচে ধরছে।রাজ্যের হৃদয়ের উত্তাল বাসনা টের পেয়ে শব্দ করে হেসে ফেললো যুবরাজ।

যুবরাজের হাসি দেখে কিছুটা থতমত খেলো রাজ্য।এরপর বুক থেকে ঝটপট মাথা সরিয়ে যুবরাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।

“আপনি একটা খারাপ আর চূড়ান্ত অসভ্য লোক,আমারই ভুল হয়েছে আপনাকে প্রশ্রয় দেয়া,এক্ষুনি বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে ফাজিল লোক কোথাকার”

কথাটি বলেই অভিমান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো রাজ্য।এটা দেখে যুবরাজ আরো এক চোট হেসে নিজেকে স্বাভাবিক করে আদুরে কন্ঠে শুধালো

“আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেছিলে কেনো?

যুবরাজের এহেন প্রশ্নে ধক করে উঠলো রাজ্যের বুক।কি উত্তর দেবে সে এই প্রশ্নের?সে তো নিজেই জানেনা কি কারনে হঠাৎ এই বজ্জাত ছেলেকে সে এভোয়েড করেছে?

“কি হলো এনসার দিচ্ছ না কেনো সোনা মণি?ভালোবাসার ডোজ কি কম পড়েছিলো?

কথাটি বলে রাজ্যের দিকে সামান্য ঝুকে আবার ফিক করে হেসে দিলো যুবরাজ।এবার রাজ্য নিজেকে সাধু জাহির করতে মিন মিন করে বলে উঠলো

“আপনি কি বলেছিলেন আমাকে ফোনে মনে নেই?

“কি বলে ছিলাম?

“কি বলেন নি?

“আচ্ছা কি বলেছিলাম বলো তো শুনি?

“আমি বলতে পারবো না অমন অসভ্য কথা”

“কেমন অসভ্য কথা?

যুবরাজের সেই পুরোনো কথা মস্তিষ্কে হানা দিতেই লজ্জায় দুই গাল রক্তিম হয়ে কান দুটো গরম হয়ে উঠলো রাজ্যের।নিজের লাল হয়ে যাওয়া গাল দুটো দুই হাতের সহিত চেপে ধরে পুরোনো ভাবনায় ডুব দিলো রাজ্য।

রেহান আর রাজ্যের মধ্যে বয়সের ফারাক ছিলো মাত্র ছয়।তাদের দুই ভাই বোনের বয়সের ফারাক অল্প হওয়াতে দুজনের সখ্যতা ছিলো বেশ।ছোট বেলা থেকেই রেহান ছিলো শান্ত ঠান্ডা মেজাজের অধিকারী।এরকম ভদ্র বাচ্চার দেখা পাওয়া দুষ্কর এরকমটাই প্রশংসা করতো প্রতিবেশীরা রেহান সম্পর্কে।রেহান ছোট থেকেই খুবই নরম মনের মানুষ ছিলো।এদিকে রাজ্য ছিলো জেদি বুদ্ধিমতী আর কিছুটা ধূর্ত প্রকৃতির।রেহান যখন বাসায় জেদ শুরু করে ডক্টরী পড়তে বিদেশ যাবে তখন মিসেস তনুজা আর রেজোয়ান চৌধুরী রাজ্যের দিকে তাকিয়ে বুকে পাথর বেঁধেছিলেন।কারন মেয়েটা তাদের অন্ধের জষ্ঠীর মতো ।কোনো প্রকার বাছ বিচার না করেই রেজোয়ান চৌধুরী রাজ্যকে আকড়ে ধরে রেহান কে বিদেশে পড়তে পাঠান।রেজোয়ান চৌধুরী তার এক বন্ধুর সহায়তায় নিউইয়র্ক আলবার্ট আইনস্টাইন মেডিকেল কলেজ এন্ড মেডিসিন রিসার্স ইনস্টিটিউট এ রেহান কে এডমিট করতে সক্ষম হন।সে সময়ের সব কিছুই যেনো স্বপ্নের মতো সুন্দর ছিলো।রেহান নিয়ম করে সপ্তাহে তিন দিন বাড়িতে কল করতো।
হঠাৎই একদিন রেহান জানায় তার একজন দেশি রুম মেট এসেছে।কিন্তু ছেলেটা বিদেশেই বড় হয়েছে এমনকি দেখতে শুনতেও বিদেশিদের মতো।সবাই তাকে ইউভি নামে চিনে।মিসেস তনুজা আর রেজোয়ান চৌধুরী আগ্রহের বসে একদিন ছেলেটার সাথে কথা বললেন।ছেলেটার কথা বার্তায় প্রচন্ড ম্যাচিউরিটি বিদ্যমান।একজন সতেরো বছরের তরুণের কাছে এমন ম্যাচিউরিটি প্রত্যাশা করাও যেনো আশ্চর্যের বিষয়।শুধু তাই নয় ছেলেটি মানুষের উদাসী বিক্ষিপ্ত মন নিমিষেই ভালো করার উস্তাদ ও বটে।

এমবিবিএস শেষ করে রেহান যখন ইন্টার্নি করছিলো রাজ্য তখন ইন্টার বোর্ড এক্সামের প্রস্তুতি নিচ্ছে।পরীক্ষা একদম দরজায় এসে ঠকঠক করে কড়া নাড়ছে এরকম শ্বাস রুদ্ধকর অবস্থা।যে করেই হোক সবচাইতে ভালো রেজাল্ট করে তাকে তার দাদা ভাইয়ের সমকক্ষ হতেই হবে।

গভীর রাতে নিজের পড়াশোনা শেষ করে কেবলমাত্র বিছানায় শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য এমন সময় টুং করে একটা মেসেজ আসে তার ফোনে।
মেসেজের শব্দে বেশ অবাক হয় রাজ্য।

“এতো রাতে কে মেসেজ দিলো?দাদা ভাই তো এতো রাতে কখনোই মেসেজ দেবার কথা নয়,তবে?

কৌতুহল বশত ফোন হাতে নিয়ে হুয়াটস এপ এ ঢুকতেই আগত মেসেজ দেখে সারা শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে যায় ষোড়শী বালিকার।সেই বার্তাটি ভালো করে নজর বুলানোর আগেই দ্বিতীয় বার্তা এসে হাজির।

“এতো রাত জেগে পড়াশোনা করে নিজের চেহারা কেনো খারাপ করছো বউ”

“তোমাকে বউ বলে সম্বোধন করছি,এজন্য আমার মোটেও অস্বস্তি হচ্ছে না এবং আমি এটার জন্য কাউকে কোনো জবাবদিহিতা করতেও রাজি নই। তুমি ই আমার ভবিষ্যৎ বউ।একবার যখন এমন অসভ্য পুরুষের নজরে পড়ে গেছো আমার থেকে আর তোমার নিস্তার নেই রাজ্য সোনা,অনেক দিন ধরে নিজেকে সামলে রেখেছি,আজকে আর সম্ভব হলো না।আমি যে বড্ড বেসামাল!”

নামের দিকে নজর দিতেই সংক্ষেপে চোখে পড়লো”YuV”।ভয়ে উচ্ছাসে কাঁপা কাঁপা হাতে মেসেজ দাতার নামের উপর ক্লিক করতেই গভীর দুইটি বাদামি চোখ নজর কাড়লো।ফোনের মধ্যে বিভিন্ন কারসাজি করেও মেসেজ দাতার পুরো কোনো ইমেজ খুঁজে পেলো না রাজ্য।ফিরতি বার্তা পাঠাবে কি না সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব করতে করতেই পুরোটা রাত কাভার হয়ে গেলো।সেদিন ভোর বেলায় রাজ্যের আর পড়াশোনা তে মন বসলো না।

“এতদিন জানতাম মেয়েরা তাদের প্রোফাইলে চোখের ছবি দিয়ে রাখে মানুষকে আকৃষ্ট করতে এখন দেখছি ছেলেরাও এই ট্রেন্ড ফলো করতে শুরু করেছে।কি অদ্ভুত লোকরে বাবা”

বেহুদা ভঙ্গিতে কলম কামড়ে আরো নানান ভাবনা ভেবে চলেছে রাজ্য।হঠাৎই সেই কক্ষে রেজোয়ান চৌধুরী প্রবেশ করলেন।

“কি রে মা এতো বেলা হলো এখনো রুম ছেড়ে বাইরে বের হলি না?আজ তোর কোচিং নেই?

আকস্মিক নিজের বাবার উপস্থিতি বেশ অস্বস্তিতে ফেললো রাজ্যকে।এদিকে অধিক চিন্তায় কলম কামড়ানোর ফলে সেটার দশাও বেহাল।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় রাজ্য ক্যাবলাকান্তের মতো হে হে করে হেসে কি প্রতিউত্তর করবে সেটাই যেনো খুঁজে পেলো না।শেষ মেষ নির্বোধ বালিকার ন্যায় শুধালো

“দাদা ভাইয়ের ওই বিদেশি বন্ধু আই মিন রুম মেট ছেলেটাকে তুমি কি কখনো দেখেছো বাপি?

রাজ্যের এমন প্রশ্নে কিছুক্ষণ মেয়ের দিকে মৌন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ভদ্রলোক।এরপর রুম থেকে প্রস্থান নিতে নিতে বলে উঠলেন
“একবার দেখেছিলাম তাও অনেক আগে,কিন্তু ওই ছেলেকে দিয়ে তোমার কি কাজ বলোতো মা?

রেজোয়ান চৌধুরীর পাল্টা প্রশ্নে খুঁক খুক করে কেশে উঠলো রাজ্য।এরপর মিছেমিছি পড়াশোনার ভান ধরে বলে উঠলো

“এমনি হঠাৎ জানতে ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞাস করলাম আর কি! ,দূর দেশ দাদা ভাই একা একা থাকছে তাই চিন্তা হলো,এর বাইরে আর কিছুই নয় বাবা”

খুবই কনফিডেন্স এর সাথে কথা গুলো বলে বইয়ে মুখ গুজে ফেললো রাজ্য।
রেজোয়ান চৌধুরী এই বিষয়ে আর কোনো গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলেন।

কিন্তু রাজ্যের খাওয়া দাওয়া ঘুম সব হারাম হয়ে গেলো।সব সময় ওই চোখ দুটো আর মেসেজ দুটো দেখেই তার রাত দিন সমান তালে কেটে যাচ্ছে।খাবার দেখলেই কেমন একটা বমি বমি ফিল হয়,গায়ে জ্বর জ্বর অনুভূত হয় আর অযথাই হাসি পায়।নিজের এহেন কাণ্ডে নিজেকে নিজেই কঠিন শাসালো রাজ্য।সব কিছুই যখন মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যাবার উপক্রম হলো তখন কোনো উপায় না পেয়ে রেহান কে ভিডিও কল করে বসলো রাজ্য।উদ্দেশ্য একটাই বাদামি চোখের মালিক কে এক নজর দেখা।

রাজ্য যখন রেহান কে কল করে রেহান তখন ল্যাবরেটরি তে কাজ করছিল।কাজের সময় হঠাৎ ফোন আসাতে বেশ বিরক্ত হয় রেহান।কিন্তু ফোনের স্ক্রিনে রাজ্যের নাম দেখে অবাক হয়ে ফোন তুলতেই রাজ্যের মলিন মুখ দেখে রেহান উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে

“কি ব্যাপার রাজ্য তোর চেহারার এই অবস্থা কেনো?কিছু হয়েছে?

রেহানের উদ্বিগ্নতা কমাতে চতুর রাজ্য পড়াশোনার বাহানা দিলো।

“এক্সাম এর টেনশনে প্রচুর ধকল যাচ্ছে দাদা ভাই,তুমি টেনশন করো না,আমি ঠিক আছে।

কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে রেহান শুধালো
“এমন অসময়ে তো কখনো ফোন করিস না,কোনো কিছু জরুরি বলবি নাকি?কোনো ম্যাথ সলভড করতে হবে?

রাজ্য কি বলবে না বলবে কিছুই গুছিয়ে উঠতে পারলো না।কিছুক্ষন মাথা চুলকে ডানে বায়ে চোখ ঘুরিয়ে চট করে বলে উঠলো

“তোমার রুম মেট বিদেশি ছেলেটা কি তোমার খেয়াল রাখে না দাদাভাই?তুমি একদম শুকিয়ে যাচ্ছ।”

কথাটা শোনা মাত্র পাশ থেকে চট করে উঠে দাঁড়ায় যুবরাজ এরপর ক্যামেরার সামনে এসে রসিকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে

“আমার যতটুকু দায়িত্ব আমি সেটা অফকোর্স পালন করছি টুনটুনি। বাকিটা পূরণের জন্য ওর একটা বউ দরকার।আমি আবার বউয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবো না দুঃখিত”

ধবধবে সাদা ডাক্তারি ইউনিফর্ম পরিহিত হ্যাঙলা পাতলা গড়নের ফর্সা ছেলেটিকে এক নিমিষের জন্য দেখে হার্টবিট মিস করলো রাজ্য।যদিও মুখমন্ডল মাস্কে ঢাকা।তবুও তার চোখ দুটিই তার সৌন্দর্য প্রকাশ করে চলছে বাধাহীন ভাবে।ঘন মোটা বাঁকানো ভ্রু আর ঘন ঘন ঝলমলে কালচে বাদামি রঙের চুল।পুরো চেহারা না দেখলেও রাজ্য বুঝে গেলো ছেলেটি সাংঘাতিক সুদর্শন।যুবরাজের কন্ঠ আর চেহারার অকৃষ্টতায় মুগ্ধ হয়ে সব মিলিয়ে কথার তালগোল পাকিয়ে ফেললো রাজ্য।

প্রথম বারের মতো চোখে চোখে দেখা হলো দুজনার।রাজ্য দ্রুত চোখ নামিয়ে কিছু না বলেই হুট করে ফোনের লাইন কেটে সুইচড অফ করে গাঁয়ে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
এদিকে রেহান কোনো কিছুই বুঝতে না পেরে আরো বার দুয়েক ট্রাই করলো কিন্তু ফোন ঢুকলো না।

দুপুর গড়াতেই শরীর কাঁপিয়ে 102 ডিগ্রি জ্বর এলো রাজ্যের।প্যারাসিটামল খেয়েও কোনো ভাবেই জ্বরের লাগাম টানা যাচ্ছে না।রাত বাড়তে বাড়তে জ্বর আরো বাড়তে লাগলো।উপায় না পেয়ে কেঁদে কেটে রেহানের কাছে সবটা খুলে বললেন তনুজা।

হঠাৎ জ্বরের কারন কারোরই বোধগম্য হলো না।এক পর্যায়ে জ্বরের ঘোরে আবোল তাবোল বকতে শুরু করলো রাজ্য।
রেজোয়ান আর তনুজা রাজ্যকে হসপিটালে এডমিট করলেন রেহানের পরামর্শ অনুযায়ী।
তিনদিন পর সেই জ্বর কমে কিছুটা সুস্থ হলো রাজ্য।
বাসায় ফিরে দিন রাত যুবরাজের মেসেজের দিকে তাকিয়ে চোখের নিচে কালি পরে গেলো।তবুও সেই কঠিন হৃদয়ের পুরুষের কোনো ফোন বা মেসেজ কিছুই এলো না।

একপর্যায়ে যুবরাজের প্রত্যাশা বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হলো রাজ্য।দেখতে দেখতে পরীক্ষা চলে এলো।পড়াশোনার চাপে যুবরাজকে এক প্রকার ভুলেই গেলো সে।
শেষ পরীক্ষার দিন এক্সাম শেষ করে বাড়ি ফিরতেই ফোন হাতে নিয়ে রেহান কে কল করতে ডাটা অন করলো রাজ্য।সাথে সাথেই মেসেজ নোটিফিকেশন আসলো।

মেসেজ ওপেন করতেই চক্ষু বিস্ফারিত হবার উপক্রম।

“আমাকে দেখেই যদি হসপিটালে এডমিট হতে হয় তবে দেশে ফিরে যখন পেটে একটা বাচ্চা দিয়ে দেবো তখন কি উপায় হবে চাঁদু?

মেসেজ দেখে রাগে,দুঃখে, অভিমানে,জেদে আগ্রাসী হয়ে উঠলো রাজ্য।কোনো কিছুর বাছবিচার না করেই ব্লক করে দিলো যুবরাজের নম্বর।সেদিনই তনুজাকে সাথে নিয়ে কিনে আনলো নতুন সিম।রেহানকে পর্যন্ত সেই নম্বর দিলো না।এভাবেই এক পর্যায়ে যুবরাজকে বেমালুম ভুলে গেলো রাজ্য।আর আজ এতোগুলো বছর পরে সেই মানুষটি তার সামনে।যাকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছে।রেহান হারিয়ে যাবার পর অবশ্য পুরোনো সেই নম্বরে অনেক ট্রাই করেছে রাজ্য।কিন্তু কোনো ভাবেই তার নাগাল পাওয়া যায়নি।।

রাজ্যের ধ্যান ভাঙলো যুবরাজের আঙ্গুলির তুড়ি বাজানোর শব্দে।ভাবনা থেকে হকচকিয়ে বের হয়ে যুবরাজের দিকে লাজুক দৃষ্টি পাতে রাজ্য।
রাজ্যের লাজুক মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে প্রশান্তিতে হৃদয় ভরে ওঠে যুবরাজের।যুবরাজ রাজ্যের কাছে এসে গলা খাকরি দেয়।

“এহেম,এহেম।কল্পনা করতে করতে তো রাত কাবার দিয়ে ফেললে।আমার আর আজ ঘুম হলো না।”

কথাটি বলেই অসহায় মুখশ্রীতে প্যান্টের পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো যুবরাজ।
রাজ্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদুরে কন্ঠে যুবরাজ বলে উঠলো

“তোমাকে আমি শাস্তি দেবো রাজ্য,কঠিন শাস্তি,তুমি কি শাস্তির জন্য প্রস্তুত?

যুবরাজের এমন শীতল কথায় মোমের মতো গলে গিয়ে রাজ্য শুধায়

“কি শাস্তি?

“লাইট অফ করো তোমাকে ঘুঘু পাখি দেখাবো।”

“ছি ছি আমি ওসব দেখবো না,নির্লজ্জ্ব লোক কোথাকার”

“দেখতে তোমাকে হবেই।

“আমি কিন্তু চিৎকার করবো”

“করো”

মৃদু কন্ঠে কথাটি বলে ডিম লাইট অফ করে পুরো কক্ষ অন্ধকার করে ফেললো যুবরাজ।
ভয়ে রাজ্য চোখ বন্ধ করে নিজের জামা খামচে ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

যুবরাজ সামান্য হেসে পকেট থেকে একটা ডায়মন্ড এর পেন্ডেন্ট বের করে রাজ্যের গলায় পরিয়ে দিতেই যুবরাজের উষ্ণ হাতের স্পর্শে কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠে রাজ্য।

রাজ্যের কানের কাছে মাদকতা মিশ্রিত কণ্ঠে ফিসফিস করে যুবরাজ বলে উঠলো

“তোমাকে পাবার বাসনার আট বছর পূর্তি হলো আজ।তুমি শুধু আমার রাজ্য।তোমার উপর একমাত্র যুবরাজ শাহীরের দখলদারি ছাড়া আর কারো আধিপত্য চলবে না।তোমার ত্রি সীমানায় আমি একটা পিপিলিকার আগমন পর্যন্ত বরদাস্ত করবো না।
তুমি আমার একান্ত ব্যাক্তি গত সম্পত্তি।তুমিই আমার ময়না,টিয়া,চড়ুই,ঘুঘু সব সব সব……..

#চলবে