#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৩১
#সারিকা_হোসাইন
*******
দিনের সূর্ষ অস্তমিত হয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে কিছুক্ষন আগেই।জাহাজের ভো ভো শব্দ আর সমুদ্রের কলকল ধ্বনি ছাড়া আর কোনো শব্দ কর্ণপাত হচ্ছে না।থেকে থেকে জাহাজের ভেতর থেকে টুংটাং শব্দ ভেসে আসছে।জাহাজের কেবিনে সেরকম শীত অনুভূত হচ্ছে না।তবে বাইরে হালকা শরীর শিউরে উঠার মতো ঠান্ডা।পুরোটা আকাশ থালার মতো বড় রুপালি চাঁদ আর তারার ঝিকিমিকি তে পরিপূর্ণ।অনেক দূরে কয়েকটা মাছ ধরা জাহাজের ক্ষীন আলোর ঝলকানি চোখে লাগছে।
রেহানকে নিয়ে জাহাজের পপ ডেকে একটা কাঠের বেঞ্চিতে বসে আছে যুবরাজ।যুবরাজের হাতে ম্যাগানের দামি ফোন খানা ধরা।তাতে মেয়েটির হাস্যজল একটি ওয়ালপেপার।এতোক্ষন রেহান যুবরাজের থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে সব ঘটনা শুনে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো শুধু।
“”তেইক দ্যা কপি”
জাহাজের ভেতরে থাকা কোরিয়ান ছেলেটা দুই হাতে দুটো কফি মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে যুবরাজের উদ্দেশ্যে কথাটি বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
ছেলেটির নাম পার্ক সোক, ছেলেটি খুবই অমায়িক।জাহাজে এসেছে পর্যন্ত ছেলেটি রেহান আর যুবরাজের জন্য অনেক করেছে।ছেলেটির বয়স আর কতই বা হবে বাইশ কি তেইশ।কিন্তু কাজের বেলায় সে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষকেও হার মানাবে।
পার্ক সোক এর কন্ঠ শুনেই রেহান দুই হাতের আজলায় তার মুখ ঢেকে ফেললো।এই দৃশ্য দেখে যুবরাজের হৃদয় মুষড়ে উঠলো।রেহান অপ্রস্তুত হয়েছে ভেবে পার্ক সোক এর থেকে কফির মগ দুটো নিয়ে তাড়াতাড়ি ছেলেটিকে বিদায় করে দিতে চাইলো।
যুবরাজের হাতে একটা কফির মগ দিয়ে পার্ক সোক রেহানের সামনে এসে দাঁড়িয়ে রেহানের হাত টেনে মুখ থেকে সরিয়ে কফি মগ টি রেহানের হাতে দিতে দিতে ভাঙা ইংরেজি আর কোরিয়ান মিলিয়ে বলে উঠলো
“প্লিজ দোন্ত হাইড ইউর ফেস,কিসের লজ্জা তোমার?মনের সৌন্দর্যের কাছে বাহ্যিক সৌন্দর্য যে বড্ড ঠুনকো।মরে গেলে কিছুদিন বাদেই তোমার চেহারা মানুষ ভুলে যাবে।কিন্তু তোমার আচরণ,উদারতা,ভালো ব্যাবহার সবকিছু আজীবন মনে রাখবে।তোমাকে তো মোটেও আমার কাছে কুৎসিত লাগছে না।বরং তোমাকে দেখে আমার হিংসে হচ্ছে যে,কেনো গড আমাকে তোমার মত করে সৃষ্টি করলো না”
এক দমে কথা গুলো বলে রেহানের মুখের পানে অধীর আগ্রহ নিয়ে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে রইলো পার্ক সোক।
ছেলেটির মুখের এমন সুন্দর অর্থপূর্ণ কথায় রেহান তার আরেকটা হাত মুখ থেকে সরিয়ে ছেলেটির মুখের দিকে দৃষ্টি দিলো।
এরপর কফি মগে চুমুক দিয়ে নিজের চোখ ঠোঁট আর পুরো মুখমন্ডলে হাত বুলালো।
আফসোস এর সুর নিয়ে রেহান ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
“আমার ঝলসানো মোটা বিকৃত যেই ঠোঁট দুটো দেখতে পাচ্ছ এটা মোটেও এমন ছিলো না।এই হাড্ডিসার গাল গুলো ছিলো চকচকে মসৃন।আর চোখ টা……
কথা শেষ করার আগেই রেহানের গলা ধরে এলো।অনেক কিছুই বলতে চাইলো কিন্তু শারীরিক অসুস্থতা আর মনোকষ্টে কিছুই বলতে পারলো না।পাতা হীন পাপড়ি হীন চোখ দুটো দিয়ে ক্রমাগত জলের ফোয়ারা ঝরতে লাগলো শুধু।
রেহানের কান্না দেখে পার্ক সোক তার ওয়ালেট থেকে একটি ছবি বের করে রেহানের সামনে ধরলো।
চেহারা টা জঘন্য ভাবে নষ্ট হওয়া আর মাথার চুল গুলো পর্যন্ত ভয়ঙ্কর হয়ে রয়েছে।নাক,চোখ মুখ কিছুই অনুমান করা যাচ্ছে না।যুবরাজ জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে ছেলেটির দিকে তাকাতেই ছেলেটি সিক্ত আবেগ জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো
“সে আমার বোন” সো হি” গতো বছর নিউ ইয়ারের সময় বাজি ফুটাতে গিয়ে কাপড়ে আগুন ধরে সে এভাবেই বিশ্রী ভাবে পুড়ে গিয়েছিলো।আমার পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র।এজন্য আমরা তাকে ভালোকরে চিকিৎসা করাতে পারিনি।কিন্তু আমরা সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যেনো অলৌকিক ভাবে সে ভালো হয়ে উঠে।কিন্তু দরিদ্র মানুষের কপাল কি আর এতো ভালো হয়?সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রার্থনা শুনেননি।এবার জাহাজে আসার আগে আমার বোন এই দুনিয়া ত্যাগ করেছে।কিন্তু আমি আমার পরিবার কেউ তাকে আজো ভুলতে পারিনি।কারন সে মনের দিক থেকে ছিলো সৎ,ভালো,উদার আর তার হৃদয় ছিলো মানুষকে নিদারুণ ভালোবেসে যাবার মতো পরিপূর্ণ।আমরা সবসময় চাইতাম তার চেহারা বিকৃত হয়েছে তো কি হয়েছে তবুও সে বেঁচে থাক।কিন্তু সে থাকে নি।
কথা গুলো বলতে বলতে ছেলেটি হুহু করে কেঁদে উঠলো।ছেলেটির কান্নায় যুবরাজের চোখ ভিজে উঠলো।দ্রুত হাতে নিজের চোখ মুছে ছেলেটিকে শান্তনার বাণী ছুড়ে আপাতত শান্ত করতে চাইল।সাগরের গর্জনে আর শূন্য নীলাকাশে পার্ক সোক আর রেহানের কান্না মিলেমিশে বিলীন হয়ে গেলো নিমিষেই।শুধু সাক্ষী হিসেবে রেখে দিলো দূর আকাশের চাঁদ আর যুবরাজকে।
*********
মাস খানিক গড়িয়ে গিয়েছে যুবরাজের কোনো খুজ পাত্তা নেই।শেরহাম তার ঢাকার বাড়িতে এসে পুরো শহর চষে বেরিয়ে যুবরাজকে খুঁজে চলেছে।নিজের টাকার পাওয়ার খাটিয়ে বিমানবন্দরে পর্যন্ত খুজ নিয়েছে।যুবরাজের ছবি দেখিয়ে মানুষ লাগিয়ে খুজা হয়েছে শহর থেকে গ্রামান্তরে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।নিজের গায়ের কোট রাগের তোড়ে মেঝেতে আছাড় মেরে হুইস্কির বোতল নিয়ে ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়লো শেরহাম ।হুইস্কির বোতলের ক্যাপ খুলে সেগুলো ঢকঢক করে গলায় চালান দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলো
“আমাকে ডজ দিয়ে তুই বড্ড ভুল করে ফেললি স্কাউনড্রেল।পাতাল থেকে হলেও তোকে খুঁজে বের করব আমি।তুই আমার আজকের শিকার নস।যেদিন তোর জন্ম হয়েছে না চাইতেও সেদিন থেকেই তুই আমার শিকার হয়েছিস।তোকে বারবার শেষ করতে যেয়েও করতে পারছি না।এই ব্যার্থতা এতো সহজে আমি মানব না”
আরো কিছু ধীর কন্ঠে বির বির করতে করতে ঘুমের কোলে ঢলে পড়লো শেরহাম।অনেক চোর পুলিশ খেলেছে সে।এবার একটু বিশ্রাম প্রয়োজন।খুব ক্লান্ত লাগছে, খুব।
কিন্তু চাইলেই কি সুখনিদ্রায় ডুব দেয়া যায়?যার জন্মই শয়তানের আতুর ঘরে তার আবার শান্তি কিসের?
শেরহাম ঘুমে তলানির সাথে সাথেই পকেটে থাকা ফোনটি বিকট শব্দে বাজতে লাগলো।ইচ্ছে থাকা সত্তেও সে ঘুমাতে পারলো না।নিভে যাওয়া কন্ঠে অস্ফুট বিশ্রী গালাগাল করে স্ক্রিনে নিজের বাপের নম্বর দেখে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে এলো তার।এক প্রকার বাধ্য হয়েই ফোন রিসিভ করে বললো
“হাই পপস”
“কি খবর ওই দিকের?শু*য়োর টার দেখা পেলে?
“নো, কোথায় গিয়েছে জানিনা।হয়তো ম*রে টরে গিয়েছে।বেঁচে থাকলে তো বাপের কাছেই ফিরত তাই না?।”
“কি বলছো যা তা!ইডিয়ট টা তার বাপের মতো কৈ মাছের প্রাণ পেয়েছে।এতো সহজে ম*র*বে না।মরে গিয়েছে সেই খুশিতে বসে বসে না ঘুমিয়ে চিরুনি তল্লাশি করো।অকর্মার ঢেকি কোথাকার”
শেরহামের নিভে যাওয়া রাগ এবার চিরবিড়িয়ে উঠে মস্তক ছেয়ে গেলো।নিজের বাবাকে বিশ্রী এক গালি দিয়ে হুংকার দিয়ে উঠলো
“তুই এসে মাতব্বরি করে যা না বুড়ো ভাম।বয়স তো কম হলো না এখনো অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি চালাচ্ছিস।আমার কাজ আমাকেই করতে দে শা*লীর ব্যাটা।ফোন দিয়ে আর এক বার বিরক্ত করলে তোর বউয়ের মতো তোর ও হাল করবো।ফোন রাখ”
শেরহামের কণ্ঠস্বরে বেশ করে কেঁপে উঠলো সুবহান শেখ।ছেলেকে আয়ত্তে আনতে কন্ঠে মধু ঢেলে আদুরে স্বরে বুলি আওড়ালো।কিন্তু শেরহাম সেসবে কান না দিয়ে আরো ভয়ংকর বিশ্রী গালি দিয়ে ফোন কেটে দিলো।
*******
চোখের পলকে কেটে গিয়েছে দুটো মাস,এই দুই মাসে ঘটে গিয়েছে অনেক ঘটনা।কিছু ঘটনা জানা কিছু অজানা।ম্যাকের সহায়তায় রেহানকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় আসতে সক্ষম হয়েছে যুবরাজ।এখানেই রয়েছে ডক্টর নিকোলাস এর ঠিকানা দেয়া সেই প্লাস্টিক সার্জন।এবার রেহানের চেহারা বদল হবে।আবার রেহান কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর অস্বস্তি ছাড়াই প্রকাশ্যে মানুষের মধ্যে ঘুরে বেড়াবে।যুবরাজের যেনো আর খুশি ধরছে না।কিন্তু রেহানের মনে ভয়ের শেষ নেই।তার চেহারা চিনে ফেলে শেরহাম যদি আবার তার উপর নৃশংসতা চালায় তখন?
যুবরাজের কাছে এতো কিছু ভাবার সময় নেই।তার একটাই চাওয়া রেহান তার চেহারা ফিরে পাবে,রেহান ভালোভাবে এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকবে এবং সব শেষে সে তার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাবে!রেহান ভালো থাকলে তার মনের মানুষটাও ভালো থাকবে।কিন্তু রেহানের কিছু হয়ে গেলে মেয়েটা কি সহ্য করতে পারবে?
হসপিটালের ওয়েটিং চেয়ারে বসে যুবরাজ এক মনে ভেবে চলেছে এই কথা গুলো।এই মুহূর্তে তার অনেক টাকার প্রয়োজন।
“পাপার সাথে কথা বলে টাকা ম্যানেজ করতে গেলে শেরহাম ঠিক আমাকে ধরে ফেলবে সেই সাথে পাপার ও কিছু একটা হতে পারে।নিজের একাউন্ট ও ফ্রিজ হয়ে আছে।ম্যাগানের গহনা বিক্রির টাকা দিয়েই আপাতত কাজ চালাতে হবে।আর ম্যাকের কাছে কিছু সাহায্য চাইলে ম্যাক কখনো না করতে পারবে না।আগে রেহানের সার্জারি হোক।সবকিছু পরে গভীর ভাবে চিন্তা করে দেখা যাবে।
চিন্তাভাবনা শেষ না হতেই ডক্টর এর এটেন্ডেন্স যুবরাজের নাম ধরে হাক ছাড়লো।সাথে সাথেই যুবরাজ রেহানকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
ডক্টর নিকোলাস এর কার্ড আর একটা হ্যান্ড রাইটিং চিঠি ডক্টর কিম এর দিকে এগিয়ে দিতেই ভদ্রলোক সহাস্যে যুবরাজ আর রেহানের সাথে কুশলাদি বিনিময় করলেন।এরপর যুবরাজের থেকে সবকিছু হিস্টোরি শুনলেন।
যুবরাজ আর রেহান দুজন মিলে সুন্দর করে গুছিয়ে কেস হিস্টোরি জানিয়ে ডক্টর এর চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
ডক্টর কিম কিছুক্ষন মৌন থেকে বলে উঠলেন
“দেখুন ডক্টর রেহান আপনার ফেস নাইনটি সিক্স পার্সেন্ট ই ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে।আপনার আগের চেহারা ফিরে পাবার আর কোনো সম্ভাবনা নেই।তবে এটুকু বলতে পারি আমি আপনার চেহারা রিপেয়ার করতে পারবো।
ডক্টর এর কথা শুনে যুবরাজ আর রেহান খুব চিন্তিত হলো।তবুও যুবরাজ হাল ছাড়বার পাত্র নয়।সে ডক্টর এর হাত চেপে ধরে বলে উঠলো।
“আই ওয়ান্ট টু সি হিম এজ এ হ্যান্ডসাম ম্যান ডক্টর”
ডক্টর যুবরাজকে আশ্বস্ত করে বলে উঠলো
আ উইল ট্রাই মাই বেস্ট ডক্টর ইউভি,বাট ইউ হ্যাভ টু ওয়াইট ফর সিক্স মান্থ”
**********
আজকে রেহানের অপারেশন এর দিন।যুবরাজ বেশ উৎকণ্ঠা নিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে।বেশ সময় নিয়ে রেহানের অস্ত্রোপচার হবে।শুধু তাই নয় মৃত কোষ আর ড্যামেজ ত্বক সরিয়ে স্থায়ী স্কিন গ্রাফটিং করতে হবে।রেহানের আগের চেহারার সাথে মিলিয়েই কাজ করা হবে।কিন্তু কতটুকু সাকসেস হবেন তা ডক্টর জানে না।তবুও যুবরাজ একটা আইডিয়া দিয়েছে যাতে চেহারা টা তার আইডিয়া অনুযায়ী হয়।
ডক্টর ওটি তে ঢুকতেই যুবরাজ মনে মনে বলে উঠলো
“তোকে আমি কোনো ভাবেই জিততে দেবো না শেরহাম ফাইয়াজ।তোকে আমি মূল সমেত উপড়ে ফেলবো।খুব শীঘ্রই দেখা হবে তোর আর আমার।আমি তোর থেকেও ভয়ঙ্কর ভাবে ব্যাক করবো।
#চলবে
#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৩২
#সারিকা_হোসাইন
——–
নিষ্ঠুর এই বহুরূপী দুনিয়ায় সময়ের লাগাম টেনে ধরা যেনো খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার।চোখের পলকেই দিন ফুরিয়ে রাত নামে আবার রাত পেরিয়ে দিন।এভাবেই কেটে যাচ্ছে সপ্তাহ,মাস আর বছর।সময়ের ঘূর্ণিবাকে প্রত্যেকের জীবন থেকে কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই হারিয়ে গিয়েছে সাতটি মাস।এই সাত মাসে যুবরাজ বা রেহান কেউ তাদের স্বজনদের খবর জানেনা,দেশের খবর জানেনা এমনকি নিজের চেনা পরিচিত কর্মস্থলের খবর ও জানেনা।সেই বিভীষিকাময় অতীতের পর বর্তমানে কি হচ্ছে সেটা নিয়েও যুবরাজ বা রেহানের কোনো আগ্রহ নেই।তাদের ধ্যানে জ্ঞানে শুধু একটাই চিন্তা সেটা হচ্ছে শেরহামের পতন।
রেহানের চিকিৎসা শেষ হয়েছে আরো দেড় মাস আগে।চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করছে ম্যাক।উহু মোটেও এমনি এমনি দেয়নি।এর জন্য যুবরাজকে দিতে হয়েছে চূড়ান্ত মূল্য।কিন্তু যুবরাজ ম্যাকের মূল্য চুকাতে নির্দ্বিধায় সমস্ত চুক্তি মেনেই অন্ধকার পথে পা বাড়িয়েছে।যেই রেহান যুবরাজের জন্য নিজের সর্বস্ব খোয়াতে বসেছিলো সেই রেহানের জন্য যুবরাজ নিজের অর্ধেক টা উৎসর্গ করবে না তা কি করে হয়?
২০২০ এপ্রিল ১৪
দক্ষিণ কোরিয়াতে চলছে বসন্ত কাল।গাছে গাছে নানান ধরনের ফুল ফুটে পুরো শহরকে করেছে ফুলের রাজ্য।এর মধ্যে যেই ফুলটি মানুষকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে সেটা হলো চেরি বা সাকুরা।এই ফুল ফোটা কে কেন্দ্র করে শহর জুড়ে চলছে বিভিন্ন হলি ডেইজ,আর উৎসব।
রেহান কে নিয়ে যুবরাজ আজকে প্রথম বারের মতো শহর দেখতে বেরিয়েছে।বিভিন্ন চাপে আর নিজেদের দেশে ফেরার সব কিছু গুছাতে গুছাতে অনায়াসেই পেরিয়ে গিয়েছে এতো গুলো দিন।আর রেহানের প্লাস্টিক সার্জারির পর কিছু কঠিন নির্দেশনা ছিলো হসপিটালের পক্ষ থেকে যার জন্য সুযোগ হলেও রেহান বাইরে বের হতে পারেনি।
গায়ে একটা ব্ল্যাক হুডি জড়িয়ে তার সাথে ব্ল্যাক জিন্স পরে যুবরাজের সাথে বাইরে বেরিয়ে এলো রেহান। রাস্তায় আনমনে হাটতে হাটতে যুবরাজের দিকে সামান্য দৃষ্টি বুলালো সে।
এই যুবরাজ আর আগের যুবরাজের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ লাগছে তার কাছে।যুবরাজের ছোট করে কাঁটা চুল গুলো এখন মাফিয়াদের মতো ঘাড়ে এসে নেমেছে।কালো রঙের চুলের পরিবর্তে সেগুলো ডার্ক ব্রাউন রঙে লেপটানো হয়েছে।হাত গলা আর বুক জুড়ে হিংস্র সব ট্যাটু।পোশাক থেকে শুরু করে আচরণেও এসেছে আমূল পরিবর্তন।যুবরাজের চোখের দিকে তাকালেই কেমন বুক ঢিপঢিপে একটা অনুভূতি হয়।চোখ দুটো এখন আর আগের মতো মায়া ভরা নেই।তাতে সবসময় ক্রুর শুকুনি দৃষ্টি পরিলক্ষিত হয়।
“কি দেখছিস আমাকে এমন করে?”
গম্ভীর মোটা গলার অদ্ভুত প্রশ্নে খানিকটা অপ্রস্তুত হলো রেহান।কি বলবে না বলবে ভেবে পেলো না।কিন্তু যুবরাজ উত্তর না পেয়ে আবারো ধমকের সুরে একই প্রশ্ন করলো।
“কি হলো শুনতে পাসনি?কি দেখছিলি এভাবে?
“তোকে ইদানিং খুব অদ্ভুত ভয়ংকর লাগে,আর সবসময় কেমন যেনো একটা অনুভূতি হয়”
খানিকটা নিচু গলায় ই কথাটি বলে দ্রুত পা চালিয়ে যুবরাজকে পিছন ফেলে সামনের দিকে অগ্রসর হলো রেহান।রেহান চলে যেতেই রাস্তার পাশেই একটা শপিং মলের গ্লাসের দেয়ালে নিজেকে একবার পরখ করে নিলো যুবরাজ।এরপর নিজের উপর অবজ্ঞা জনক হাসলো।
“তুই ঠিকই বলেছিস,আমি আসলেই ভয়ংকর হয়ে গিয়েছি।আগে এই হাতে মানুষের প্রাণ বাচঁত আর এখন প্রাণ যায়।তফাৎ এটুকুই।কারো ভয়ে আধমরা হয়ে বেঁচে থাকার চাইতে নিজেকে ভয়ঙ্কর ভাবে গড়ে তুলে তাকে ভয় দেখানোর মাঝেই নিজের জীবনের চরম সার্থকতা।এটা তোর মত নরম মনের মানুষকে কে বুঝাতে যাবে বল?
********
সাত মাস ধরে যুবরাজের কোনো খবর না পেয়ে সাদাফ শাহীর আর সামিনার অবস্থা পাগল প্রায়।এতবড় একটা ছেলে হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলো এটা কারোরই বোধগম্য হচ্ছে না।শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে সাদাফ শাহীর ইচ্ছে না থাকা সত্তেও সুবহান শেখের কাছে বেশ কয়েকবার ধন্যা দিয়েছেন।সুবহান শেখ তাকে খুশি হবার মতো কোনো খবর দিতে পারেননি উল্টো নানান আজেবাজে কথা শুনিয়ে দিয়েছেন।এদিকে সামিনার অবস্থা মৃতপ্রায়।একমাত্র ছেলের চিন্তায় খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে বিছানায় শয্যা নিয়েছেন তিনি।যদিও দুই দুইবার শেরহাম এসে সাদাফ শাহিরকে মিথ্যে শান্তনা দিয়ে গিয়েছে।কিন্তু সাদাফ শাহীর ছেলের চিন্তায় হসপিটালে ভর্তির উপক্রম। ভালোবাসার স্ত্রীকে হারিয়ে একমাত্র ছেলেটা কে আকড়ে ধরে এতদিন কোনোমতে বেঁচে ছিলেন তিনি।এখন সেই ছেলের কোনো খুজ মিলছে না।এটা কি কোনো সাধারণ ব্যাপার নাকি?এমন তো নয় ছেলে নতুন বিদেশ গিয়েছে!যার বেড়ে উঠা পড়াশোনা সবকিছুই ওখানে তাহলে সে হারালো কিভাবে?
রেজোয়ান চৌধুরীর বাড়িতেও একই অবস্থা।রাজ্য আর তনুজা রেহানের চিন্তায় দিন দুনিয়া খাওয়া দাওয়া ভুলে বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে শুধু।মাঝ বয়সী রেজোয়ান চৌধুরী মা আর মেয়েকে সামলিয়ে নিজেও অধৈর্য হয়ে পড়েছেন।অবশেষে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে ছেলের খুঁজ নেবার চেষ্টা করেছেন।ভদ্রলোক সব দিক থেকেই যখন ব্যর্থ হয়ে মুখ থুবড়ে পড়লেন এমন সময় হঠাৎই একটি ইমেইল আসে তার ফোনে।সেখানে স্পস্ট করে লিখা আছে
“ডক্টর রেহান ইজ নো মোর”
হঠাৎ এমন ইমেইলে রেজোয়ান চৌধুরী জ্ঞান হারিয়ে ড্রয়িং রুমে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন।নিকট আত্মীয়রা এসে হসপিটালে ভর্তি করে অবস্থা কিছুটা স্বভাবিক করে ঘটনা জানতে চাইলে সেই ইমেইলটি তিনি সবাইকে বের করে দেখান।তনুজা আর রাজ্য কোনো ভাবেই মানবে না রেহানের হঠাৎ মৃ*ত্যু ।সেদিন থেকেই তনুজা হার্টের সমস্যায় জর্জরিত হলেন আর রেজোয়ান চৌধুরী হারালেন তার মনের সকল কোমলতা।কিন্তু তনুজার বিশ্বাস এই বিশাল পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও তার ছেলে অবশ্যই বেঁচে আছে এবং একদিন না একদিন ঠিক সে ফিরে আসবে।
********
বিমানের ইকোনমি সিটে চোখ বুঝে হেলান দিয়ে বসে আছে যুবরাজ।দেশে ফেরার উচ্ছাসের চাইতে বিভিন্ন চিন্তা আর অবসাদ তাকে গ্রাস করে চলেছে সমানে।কিন্তু রেহানের খুশি যেনো আর ধরে না।
“বাড়িতে গিয়েই মায়ের হাতের চিংড়ি ভর্তা আর গরুর মাংসের ভুনা দিয়ে দু প্লেট ভাত খাবো বুঝেছিস?এদেশের স্যালাড আর মসলাবিহীন খাবার খেতে খেতে মুখের রুচি একদম চলে গিয়েছে”
রেহানের হাস্যজল মুখের খুশিতে গদগদ হওয়া কথায় চোখ মেলে তাকালো যুবরাজ।এরপর লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলে উঠলো
“তুই বড্ড সাদাসিধে মনের মানুষ রেহান।কিন্তু এই দুনিয়ায় সাদা মানুষের কোনো মূল্য নেই জানিস তো নাকি?
যুবরাজের এমন প্যাচ মোচড় যুক্ত কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না রেহান।আর তার বুঝার দরকার ও নেই।সে এতোগুলো দিন পর বাড়ি ফিরছে এই অনেক।
হঠাৎই ফ্লাইট এনাউন্সমেন্ট বেজে উঠলো।অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বিমান টেইক অফ করবে।রেহানের উচ্ছাস যেনো দ্বিগুন বেড়ে গেলো।একবার তার মনে হলো যুবরাজের সাথে নিজের মনের খুশি গুলো শেয়ার করলে মন্দ হয়না!
পরক্ষণেই তার মনে পড়লো
“যুবরাজ আর আগের মতো নেই।ওর কাছে এসব বলে নিজের মোড নষ্ট করার কোনো মানেই হয়না ”
বাড়ির মানুষের খুশি খুশি মুখ কল্পনা করতে করতে নিমিষেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল রেহান।ঢাকা এয়ারপোর্ট এ এসে একবারে রেহানের ঘুম ভঙ্গ হলো।যুবরাজের তাড়ায় প্লেন থেকে নিজেদের ব্যাগপত্র নিয়ে ধীরে ধীরে নেমে এয়ারপোর্ট এর বাইরে বেরিয়ে এলো দুজনে।
এয়ারপোর্ট এর বাইরে বেরুতেই দুজনের চোখ কপালে উঠে যাবার উপক্রম।বিমানবন্দরের মূল গেটের সামনে শেরহাম নিজে দাঁড়িয়ে রয়েছে সাথে কয়েকজন ইয়ং বয়সের ছেলে নিয়ে।তারা প্রত্যেকটি যাত্রীর দিকে সতর্ক নজর বুলাচ্ছে।
শেরহামকে দেখেই রেহান ভয়ে কেঁপে উঠে যুবরাজের হাত চেপে ধরলো।
“আমি আমার বাবা মা আর বোনকে শেষবারের মতো দেখতে চাই ইউভি।আমি এই অমানুষ টার হাতে মরতে চাইনা।প্লিজ সেইভ মি”
“জাস্ট কিপ শাট ইউর মাইথ”
দাঁতে দাঁত চেপে কথা টি বলেই রেহানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে শেরহামের সামনে দিয়ে হনহন করে হেঁটে চলতে লাগলো যুবরাজ।হঠাৎই শেরহাম পিছন থেকে ডেকে উঠলো
“এক্সকিউজ মি”
শেরহামের ডাক শুনে রেহানের পা থেমে গেলো।অসাড় হয়ে এলো পুরো শরীর।যুবরাজ তাকে শক্ত হাতে টেনেও আর এক চুল নাড়াতে সক্ষম হলো না।
এদিকে শেরহাম একপা দু পা করে তাদের সামনে এসে দাড়ালো।এরপর রেহানের সামনে এসে প্ৰগাঢ় হারপি ঈগলের চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।
ভয়ে রেহানের গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল মুহূর্তেই কিন্তু যুবরাজ নির্বিকার।চিন্তিত ভঙ্গিতে রেহানের দিকে তাকিয়ে থুতনিতে আঙ্গুলি দিয়ে বার কয়েক ট্যাপ ট্যাপ করলো শেরহাম।এরপর সামান্য হেসে বলে উঠলো
“মনে হলো আপনাকে কোথাও দেখেছি,বাট কোথায় মনে পড়ছে না।”
রেহান নির্বাক হয়ে ফাঁকা ঢোক গিলে নিজের কাঁধে থাকা ব্যাগের ফিতা টেনে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।কিন্তু মাস্ক পরিহিত যুবরাজ কর্কশ গাম্ভীর্য পূর্ণ কন্ঠে বলে উঠলো
“পৃথিবী যেহেতু গোল দেখা হতেই পারে।কিন্তু আমার মনে হয়না আপনি এই চেহারা কখনো কোথাও দেখেছেন।কারো এটা যে একদম নতুন”
যুবরাজের এমন হেয়ালিপনা কথায় শেরহাম ভ্রু কুঞ্চন করে সামান্য যুবরাজের দিকে নজর বুলালো।এরপর যুবরাজের চোখে চোখ রেখে কিছু খোঁজার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়ে বলে উঠলো
“আই লাইক ইউর নেক ট্যাটুস”
শেরহামের কথার প্রতিউত্তর না করে রেহানের উদ্দেশ্যে তাড়া দিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো
“লেটস মুভ”
*********
যুবরাজ যখন সাদাফ শাহীরের বাড়িতে পৌঁছায় ঘড়িতে তখন বিকেল চারটা বেজে পঁচিশ মিনিট।ড্রয়িং রুমে বসে মিসেস শাহানা আর সাদাফ শাহীর যুবরাজের নিখুঁজ হবার বিষয়েই কথা বলছিলেন এমন সময় হঠাৎই কলিং বেল বেজে উঠলো।কলিং বেলের শব্দ পেতেই বাড়ির কাজের লোক নাসের দৌড়ে প্রধান দরজা খুলতেই যুবরাজকে দেখে বেশ অবাক হয়।নাসের কে অনুসরণ করে সাদাফ শাহীর আর সামিনা দরজার দিকে তাকাতেই যুবরাজকে দেখতে পেয়ে হুড়মুড় করে উঠে দাঁড়ায়।
সামিনা দৌড়ে গিয়ে যুবরাজকে জাপ্টে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
“এতদিন কোথায় ছিলি বাবা?কতো জায়গায় তোকে খুঁজেছি।কোত্থাও তোর কোনো খুজ খবর পাইনি।আর তোর চেহারার এই অবস্থা কেনো?শরীরে এসব এঁকেছিস কেনো?
ছেলের এরূপ অবস্থা দেখে খুশিতে বিহ্বল হবার পরিবর্তে রাগে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সাদাফ শাহীর।রাগে গর্জন করে ভারি কন্ঠে শুধালেন
“এমন বেশ ধরার কারন কি তা জানতে পারি ?এতদিন তোমার চিন্তায় আমরা বেহুশ হবার অবস্থা।আর এমন সঙ সেজে তুমি দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছ?কোথায় ছিলে এতদিন?
নিজের বাবার এমন আচরণে বেশ কষ্ট পেলো যুবরাজ।মুখে কিছুই প্রকাশ না করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো
“অনেক হাঁপিয়ে গিয়েছি পাপা,এবার একটু আরামের ঘুম ঘুমাতে ইচ্ছে করছে।আর কোনো প্রশ্ন করো না প্লিজ”
যুবরাজের ক্লান্তি মিশ্রিত কন্ঠে কিছুটা মন গললো সাদাফ শাহীরের।চুপচাপ যুবরাজের যাবার পানে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সাদাফ শাহীর বলে উঠলেন
“সামিনা ওকে সত্যি ই ক্লান্ত লাগছে,দেশে ফিরে এসেছে এই অনেক।পিছনের ঘটনা পরেও জানা যাবে।ওকে আর ঘাটাস না।”
********
ট্যাক্সিতে করে নিজের বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই বুক কেঁপে উঠলো রেহানের।বাড়িটির প্রধান ফটকে বিশাল বড় বড় দুটি তালা ঝুলছে।নিজের চিরচেনা বাড়িটি এমন তালাবদ্ধ দেখে হুহু করে বুক কেঁপে চোখ জলে ভরে উঠলো।কতো আশা নিয়ে সে এখানে এসেছে আর এখানে কেউ নেই?
“বাড়ি ছেড়ে বাবা মা যাবে কোথায়?আর এভাবে বড় বড় তালা ঝুলিয়েছে কোন কারনে?
আশেপাশে তাকিয়ে একজন মানুষের দেখা পেয়ে সিক্ত কন্ঠে রেহান শুধায়
“এটা রেজোয়ান চৌধুরীর বাড়ি না?উনারা কি বাড়িতে নেই?এরকম বড় বড় তালা ঝুলিয়ে উনারা কোথায় গেছে বলতে পারেন?
লোকটি পায়ের গতি শ্লথ করে রেহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো
“উনাদের ছেলে বিদেশের ডক্টর ছিলো।কয়েকমাস আগে হঠাৎ তারা জানতে পেরেছে ছেলেটি মা*রা গিয়েছে।এরপর তাদের পরিবার অনেক ভেঙে পড়ে।রেজোয়ান চৌধুরী একা হাতে তার পরিবার সামলাতে পারছিলেন না।এজন্য উনারা এখানকার বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে উনাদের কোনো এক আত্মীয়ের বাড়ির কাছে চলে গিয়েছেন।আহারে বেচারা,ছেলে হারিয়ে অনেক ভেঙে পড়েছেন।
কথা গুলো বলতে বলতে লোকটি দ্রুত প্রস্থান নিলেন।হাটু মুড়ে বসে রেহান শুধু লোকটির যাবার পানে তাকিয়ে তাকিয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিলো।
“আমি বেঁচে আছি বাবা ,তোমাদের ছেলে বেঁচে আছে।কতো স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরে এলাম কিন্তু তোমাদের খুশি এনে দিতে পারলাম না।বিধাতা আমাকে ব্যার্থ করে দিয়েছে সব দিক থেকেই”
কতোক্ষণ এভাবে পেরিয়ে গেছে রেহান জানেনা।হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠস্বরে মাথা উপরে তুলে তাকায়
“রাত হয়ে গিয়েছে চল আমার সাথে,ঘোলাটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে একটু সময় তো লাগবেই তাই না?,রাস্তায় বসে কান্নাকাটি করে কিছুই হবে না”
“সবাই জানে আমি মৃ*ত”!এখন এই চেহারায় আমি সামনে গেলে তারা আমাকে মেনে নিতে পারবে তো?
ধীর অসহায় কন্ঠে কথা খানি বলে রাস্তার চকচকে পিচের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো রেহান।
“না মানলে আমার কাছে থেকে যাবি সারা জীবন,তার আগে এই পরিস্থিতি যার জন্য সৃষ্টি হয়েছে তাকে একটু দেখে নেয়া যাক কি বলিস?
যুবরাজের ক্রুর হাসির দিকে তাকিয়ে রেহান শুধায়
“পারবো তো?
হঠাৎ কিছু পড়ে যাবার শব্দে চোখ মেলে টাকায় যুবরাজ।আসে পাশে নজর বুলাতেই নিজের আদরের একমাত্র বিড়াল “কাই”কে দেখতে পেয়ে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নেয় সে।এরপর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হ্যাঙ্গারে থাকা শার্ট গায়ে জড়িয়ে রুমের বাইরে বের হয়ে আসে যুবরাজ”
“তোমার বর্তমান অবস্থা জানতে খুব ইচ্ছে করছে মামাতো ভাই”
#চলবে
#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৩৩
#সারিকা_হোসাইন
*********
পুরোটা আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে চারপাশটা ঘুটঘুটে অন্ধকার করে রেখেছে।মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে থালার মতো বড় রুপালি চাঁদটা আলো বিলিয়ে দেবার চূড়ান্ত চেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু মেঘ এসে পুনরায় তাকে গ্রাস করে সকল আলো গিলে ফেলছে নিমিষে।হঠাৎই শুরু হলো এলোমেলো ভারী বাতাস সেই সাথে বিকট শব্দে বজ্র ধ্বনি।বাতাসের প্রকোপে গহীন জঙ্গলের গাছপালা গুলো মরমর শব্দে গা ছমছমে এক অনুভূতি তৈরি করলো।সেই বাতাসের তান্ডবে গাছের ডালে থাকা নিশাচর প্রাণী গুলো সামান্য নড়েচড়ে উঠলো।এবং চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে ভয়ঙ্কর শব্দ করতে করতে ঝাঁকে ঝাঁকে শিকার খুঁজতে কালো ডানা মেলে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটে চললো।
এমন ভয়ঙ্কর উগ্র অবহাওয়াতে পরিত্যক্ত বাড়িটির সামনে নিজের ব্র্যান্ডেড গড়ির সাথে হেলান দিয়ে দুই পায়ে ক্রস স্টাইলে দাঁড়িয়ে সমানে বিড়ি ফুকে চলেছে যুবরাজ।মুখে তার ক্রুর হাসি সেই সাথে ভয়ঙ্কর শিকারি দৃষ্টি।কিছুসময় এভাবেই অতিবাহিত হবার পর সিগারেট এর ফিল্টার পায়ে পিষে আঙুলের ডগায় চাবির ছড়া টিকে ঘুরাতে ঘুরাতে শীষ বাজিয়ে বাড়ির অভিমুখে পা ফেলতে লাগলো।বিকট ঘরঘর শব্দে লোহার ভারী দরজার পাল্লা খানা সরিয়ে সন্তপর্নে পুনরায় দরজার পাল্লা ঠেলে মোবাইলের টর্চ জেলে স্যাৎস্যাতে সিঁড়ি বেয়ে ঠক ঠক শব্দে উপরে উঠতে লাগলো যুবরাজ।চাবির সহায়তায় বড় বড় তালা খুলে নিজের বানানো হেল সেল এ প্রবেশ করলো সে।পকেট থেকে লাইটার বের করে দেয়ালে সেটে রাখা মশালে আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে দৃষ্টি বুলালো।
মুখে তার পরিতৃপ্তির হাসি।
উটকো দুর্গন্ধযুক্ত কক্ষ মশালের আলোয় আলোকিত হতেই যুবরাজের মুখের হাসি প্রশস্ত হতে লাগলো।
সকল নিস্তব্ধতা ভেঙে হো হো শব্দ তুলে পাগলের ন্যায় সহসাই হাসতে লাগলো যুবরাজ।এরপর বহু কষ্টে নিজের সেই হাসি বন্ধ করে গলার সর্বোচ্চ তেজ ঢেলে ডেকে উঠলো
“মাই ডিয়ার ফেঈদফুল ডগি স্মিথ,কাম টু মি”
যুবরাজের কন্ঠ কর্ণপাত হতেই সাইবেরিয়ান হাসকি দৌড়ে যুবরাজের সামনে এসে দাড়ালো।কুকুরটি কে দেখে যুবরাজের চোখ চকচক করে উঠলো।
হাটু মুড়ে বসে কুকুরটির মাথায় পরম যত্নে হাত বুলালো যুবরাজ।
কুকুরটির সারা গায়ে রক্তের মাখামাখি, মুখে তার তরতাজা র*ক্ত যুক্ত মানুষের মাংসল হাতের টুকরো।
কুকুরটির হিংস্র সবুজ চোখে যুবরাজ তার গাঢ় বাদামি দৃষ্টি পাতলো।এরপর মিনিট দুয়েক অতিবাহিত হতেই খিলখিলিয়ে দম বন্ধকর হেসে উঠলো যুবরাজ ।
“গুড জব ডিয়ার স্মিথ গুড জব”
হাসির তাড়নায় কথাই বলতে পারছে না যুবরাজ।এতো আনন্দ আগে কখনোই লাগেনি তার তবে আজ কেনো এতো আনন্দ হচ্ছে?শিকারকে জালে বন্দি করার আনন্দ বুঝি এতটাই সুখ কর?
মশালের কেরোসিন প্রায় শেষের পথে।তাই আলো টাও নিভু নিভু।সেই ঝাপসা ঘোলাটে হলদেটে আলোয় যুবরাজের হেল সেল এর বিভৎস অবস্থা স্পষ্ট দৃশ্যমান।
সেখানে সকল কয়েদির টুকরো টুকরো ছিন্নবিচ্ছিন্ন শরীরের অংশ হুটোপুটি খাচ্ছে নোংরা মেঝেতে।কয়েদিদের কারো চোখ উপরে ফেলা হয়েছে তো কারো হাত ছিড়ে নেয়া হয়েছে।কারো বা আবার মুখের অবয়ব থেতলে দেয়া হয়েছে।টেনে টেনে ছেড়া হয়েছে ঠোট এবং পা।
নয়নাভিরাম সেই দৃশ্য পুনরায় নজরবন্দি করে নিজের সিংহাসনে গিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে বসলো যুবরাজ।
“তোমাকে এই পর্যন্ত আনতে বহুত কাঠখড় পোড়াতে হলো মামাতো ভাই,বহুত।তোমার গড়া পাপের সাম্রাজ্য তোমাকে দিয়েই শেষ করলাম।তোমার পালানোর পথ পর্যন্ত সুগম করে দিলাম কিন্তু ব্রেইনলেস তুমি বুঝতেই পারলে না।বড় মামা বড্ড বোকা।সারাদিন খুন খারাবীর ট্রেনিং না দিয়ে তোমাকে একটু কমপ্লেইন খাওয়ালে তার কি খুব লস হতো?
কথা গুলো উঁচু স্বরে বলতে বলতে আবারও কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো যুবরাজ।এরপর লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মুখে হিংস্রতা এনে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলো
“তোকে তোর ছেলেকে দিয়েই আমি শেষ করাবো সুবহান শেখ,এরপর তোর পাগল ছেলের তদবির করবো।আমাকে বরফ পানিতে চুবিয়ে মা*রার প্ল্যানিং টা তোর ই ছিলো নাই না?কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মজাই বেশ আলাদা।
কথা গুলো শেষ করে উঠে দাঁড়ালো যুবরাজ,এরপর সাইবেরিয়ান হাসকির নেক বেল্ট ধরে টেনে নিয়ে বাড়িটির বাইরে বেরিয়ে এলো।বাইরে বেরিয়েই কুকুরটি ভয়ানক স্বরে ডেকে উঠলো।সেই স্বরে ভয়ার্ত হয়ে গাছের ডালে বসে থাকা হুতুম পেঁচা পর্যন্ত ডানা ঝাপটিয়ে দূরে উড়ে পালালো।
যুবরাজ তার গাড়ি থেকে বড় বড় দুটো কেরোসিন এর গেলন নিয়ে বাড়িটির দিকে অগ্রসর হলো।এরপর সুনিপুণ ভাবে সেগুলো ঘরের ভেতর ছড়িয়ে দিয়ে পকেট থেকে লাইটার বের করে অভিনব কায়দায় আঙুলে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আগুন জ্বালিয়ে লাইটার ছুড়ে মারলো মেঝেতে গড়িয়ে যাওয়া কেরোসিন এর উপর ।মুহূর্তেই আগুনের লকলকে লেলিহান শিখা কেরোসিন এর উপর প্রভাব বিস্তার করে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো।
যুবরাজ আয়েশী ভঙ্গিতে গাড়িতে হেলান দিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে কুকুরটিকে সাথে নিয়ে মচ মচ শব্দে বাড়িটির দগ্ধ অবস্থা উপভোগ করতে লাগলো।কিছুক্ষন পরেই যখন মানুষ পোড়ার গন্ধে পুরো জঙ্গল আলোড়িত হলো ঠিক সেই মুহূর্তে কুকুরটি উন্মাদের ন্যায় ছোটাছুটি করতে লাগলো সে সাথে ভয়ংকর শব্দে ডাকতে লাগলো।কুকুরের ছটফটানি দেখে যুবরাজের হাসি যেনো আর ধরে না।কুকুরটির নেক বেল্ট শক্ত হাতে খামচে ধরে যুবরাজ হিসহিসিয়ে বলে উঠলো
“এখানে থাকা ঠিক হবে না আমাদের,চল আমার সাথে।এখানে বাতাসে লাশের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।এই গন্ধ তোর আর আমার দুজনের জন্যই ক্ষতিকর।এই গন্ধ তোকে ক্ষুধার্ত করে তুলছে আর আমাকে শিকার খুঁজতে পাগল করে তুলছে”
**********
রেজোয়ান চৌধুরীর সামনে সোফার উপর দুই পা তুলে বাবু হয়ে বসে আছে রায়াফ।সমানে সে আঙ্গুল কামড়ে চলেছে আর রেজোয়ান চৌধুরীর দিকে অপরাধীর দৃষ্টি দিচ্ছে।এভাবেই কিছু সময় পেরিয়ে যাবার পর রেজোয়ান চৌধুরী শুধালেন
“গোপনেও কি একটি বার তোমার বেঁচে থাকার খবর আমাদের পৌঁছাতে পারলে না?তোমাকে হারিয়ে কি অবস্থায় আমরা দিন যাপন করছি সেটাও জানার চেষ্টা করলে না?
“আহ ছেলেটাকে এভাবে বকছো কেনো?জানায়নি মানে অবশ্যই কোনো কারণ ছিলো তাই না?সকাল সকাল তাকে সামনে বসিয়ে জেরা জেরা না করলে তোমার পেটের ভাত হজম হচ্ছে না নাকি?
কঠিন কন্ঠে কথা গুলো বলে মিসেস তনুজা রায়াফের সামনে জুসের গ্লাস মেলে ধরলেন।
“নে বাবা জুস খা,তোর বাবার মাথা দিনে দিনে একদম নষ্ট হয়ে গিয়েছে।ওসব কথা কানে তুলিস না!
“বাবা প্লিজ দাদা ভাইকে এতো জেরা করোনা।সময় সুযোগ বুঝে সব জানা যাবে।দাদাভাই ভালো আছে সুস্থ আছে এই অনেক।এতো প্রশ্ন করে সবকিছু ঘোলা করার কি দরকার বলো?”
সকালের নাস্তা চিবুতে চিবুতে কথাটি বলে রাজ্য পুনরায় খাবারে মনোযোগ দিল।
জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে রায়াফ এক চুমুক খেয়ে চোখ বন্ধ করে পুনরায় খোলে রেজোয়ান চৌধুরীর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।এরপর ধীর কন্ঠে বলতে লাগলো
“আমি একজনের ব্যাক্তিগত লাইফে ঢুকে পড়েছিলাম বাবা।আর ঢুকে পড়ার জন্য আমার বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই।আজকে তার জন্যই আমি তোমাদের সামনে।ডক্টর ইউভি না থাকলে তোমরা তোমাদের ছেলের মৃ*ত্যুর খবর পর্যন্ত পেতে না!সামনে থেকে দেখা তো দূর।সময় এলে আমি নিজেই সব খোলাসা করবো।আজ আমাকে যেতে হবে।মাঝেমধ্যে আমি এসে দেখা করে যাবো।অনুরোধ থাকবে কারো কাছে আমার বেঁচে থাকার কথা প্রকাশ করবে না প্লিজ।
“নিজের সন্তানকে নিজের বাড়িতে রাখতে পারবো না,কারো কাছে তার বেঁচে থাকার কথা শেয়ার করতে পারবো না এ কেমন রীতি?তুমি কি কোথাও কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত রেহান?
বেশ উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথাটি বলে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন রেজোয়ান চৌধুরী।
রায়াফ বসা থেকে উঠে ভদ্রলোকের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে বলে উঠলো
“আমি জেনে বুঝে কখনো কোনো অন্যায় করিনি বাবা।আমি আমার আগে তোমাদের সেফটির কথা চিন্তা করছি।কারন তোমার বন্ধু সুবহান শেখের একমাত্র ছেলে আমাকে পৃথিবীর সব চাইতে কঠিন শাস্তিতে খু*ন করতে চেয়েছিলো বাবা!
রায়াফের মুখের এমন ভয়ংকর কথায় রেজোয়ান চৌধুরী বিস্ফারিত নয়নে রায়াফের দিকে তাকিয়ে রইলেন সেই সাথে রাজ্য আর তনুজা থরথর করে কেঁপে উঠল।
খাওয়া থামিয়ে রাজ্য টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো
“কিহ”!
“এসব তুই কি বলছিস বাবা?তোর বাবা তো আরো ওই ছেলের সাথে রাজ্যের বিয়ের কথা ভাবছে”
“আমি সব জানি মা।সে একটা সাইকো ক্রিমিনাল, সে রাজ্যকে বিয়ে করে কখনো সুখের সংসার পাতবে না।রাজ্যকে চূড়ান্ত শাস্তি দিয়ে দিয়ে সে সুখ উপভোগ করবে।কারন মানুষের আহাজারি আর কান্নায় তার সুখ লুকায়িত।সে মানসিক ভাবে অসুস্থ”
“তোমাকে আমি বলেছিলাম না মা ?ওই লোকের চোখের চাহনি বড্ড অদ্ভুত?কিছুতো একটা অবশ্যই আছে।কিন্তু সেটা কি?আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে।
সকলের কথা বলার মাঝামাঝি সময়ে কলিং বেল বেজে উঠলো বিকট শব্দে।সেই শব্দে ভীত হয়ে রায়াফকে খামচে ধরলেন তনুজা।এরপর চোখ চাওয়া চাওয়ি করে নিজের অসাড় হয়ে আসা শরীরকে কোনোমতে টেনে হিচড়ে দরজার সামনে এসে দাড়ালেন তনুজা।কম্পনরত হাতে দরজা খুলে নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।
“কে এসেছে তনু?
মাঝবয়সী রেজোয়ান প্রশ্নখানি করে আগত ব্যাক্তির চেহারা দেখতে দরজায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন।কিন্তু তনুজার পক্ষ থেকে কোনো উত্তর এলো না।
তনুজা কে পাশ কাটিয়ে হাস্যজল মুখে লম্বা লম্বা পা ফেলে প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুঁজে রেজোয়ান চৌধুরীর সামনে এসে দাড়ালো আগত ব্যাক্তি।
“আমি আংকেল,আপনার মেয়ের হবু জামাই ডক্টর শেরহাম ফাইয়াজ”
শেরহামকে দেখে বাড়ির প্রত্যেক সদস্য আতঙ্কে ভর শূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।প্রত্যেকের পাংশু মুখের দিকে তাকিয়ে শেরহাম বলে উঠলো
“আমি কি ভুল টাইমে এসে আপনাদের বিরক্ত করলাম?
কারো পক্ষ থেকে যখন কোনো উত্তর এলো না তখন শেরহামের নজর গেলো রায়াফের দিকে।
রায়াফকে দেখে তার চিনতে একটুও বেগ পোহাতে হলো না।রায়াফকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মুখে মায়াবী হাসি ঝুলিয়ে শেরহাম নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো
“হেই ডুড অনেক দিন পর দেখা,সেই যে এয়ারপোর্ট এ দেখেছিলাম।তা এখানে কি করছো তুমি?আর তোমার সেই ট্যাটু ওয়ালা হাঙ্ক কোথায়?
“আমি এখানে ডক্টর ফাইয়াজ ওপস সরি, মামাতো ভাই”
#চলবে