ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0
10

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৩৯
#সারিকা_হোসাইন

*********
আকাশের মস্ত বড় থালার ন্যায় রুপালি চাঁদটা কুয়াশার চাদরে লুকিয়ে হালকা ঘোলাটে ঝাপসা আলো বিলিয়ে দিচ্ছে ।আকাশে কোনো তারকারাজির দেখা মিলছে না আজকে।মাঝে মাঝেই কালচে রঙা কিছু মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিচ্ছে।কিন্তু ঘন বাতাসের তোড় এসে মুহূর্তেই সেই মেঘ গুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অদূরে।
ঘন গহীন গজারি বৃক্ষের বনের আঁকাবাঁকা কাঁচা রাস্তা দিয়ে সাইসাই গতিতে এগিয়ে চলছে যুবরাজের ব্র্যান্ডেড গাড়িটি।কাঁচা এটেলমাটির কর্দমাক্ত উঁচু নিচু রাস্তাতেও গাড়ির গতি একশত এর উপর।আর কিছুক্ষন বন পেরুলেই বড় হাইওয়ে ।
এই পুরোটা সময় রাজ্য নীরব ছিলো।এখনো যেনো সে সন্ধ্যা বেলার ঘোর থেকে বেরুতে পারেনি।কিন্তু গাড়ির স্পিডে কিছুটা ভীত হলো সে।অন্ধ মানুষের ন্যায় বাধন যুক্ত হাত নিয়ে কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো রাজ্য।

“যুবরাজ আমার ভয় করছে।কোথায় যাচ্ছি আমরা?

রাজ্যের কথা কর্ণপাত হতেই নিজের এক হাত দিয়ে রাজ্যের মাথায় মমতার পরশ বুলিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো

“যতক্ষন আমি তোমার পাশে থাকবো ততক্ষণ তুমি পৃথিবীর সবচাইতে সেইফ জোনে আছো এটা সব সময় মাথায় রাখবে।ভয়ের কিছুই নেই।অক্ষত অবস্থায় তোমার ভাইয়ের কাছে পৌঁছে দেবো তোমাকে”

“আমি কোত্থাও যেতে চাইনা ।আমি আপনার সাথেই থাকতে চাই যুবরাজ”

“কিন্তু আমি রাখতে চাই না জান”
শক্ত কন্ঠের সাবলীল স্বীকারোক্তি যুবরাজের।

রাজ্য আর কোনো কথা বাড়ালো না,দুই চোখ ফেটে তার অশ্রু কনারা আন্দোলন করে বেরিয়ে আসতে চাইছে।এই মুহূর্তে নিজের বাহুডোরে যুবরাজকে আবদ্ধ করতে বেশ ইচ্ছে হচ্ছে তার।যুবরাজকে দুই চোখ ভরে দেখার পিপাসায় অশান্ত হয়ে উঠেছে মন।কিন্তু তার দুই হাত শক্ত করে বেঁধে রেখেছে যুবরাজ।ভালোবাসার আপন মানুষটা কাছে থেকেও যেনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে।হঠাৎ যুবরাজ এভাবে কেনো রূপ বদলালো এটাও তার অজানা।যুবরাজকে না পেলে এই নিষ্ঠুর ধরনীতে শ্বাস নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকা কি সম্ভব হবে তার কাছে?

চিন্তা ভাবনার মাঝেই গাড়ির স্পিড কমে এলো সেই সাথে স্মুদলী গাড়ি চলতে লাগলো।নিজের মনের কথা গুলো আর বন্দি করে রাখতে পারলো না রাজ্য।তার কাছে বারবার মনে হচ্ছে এই বুঝি যুবরাজ তাকে একা ফেলে হারিয়ে গেলো।

“আপনাকে জড়িয়ে ধরতে খুব ইচ্ছে করছে যুবরাজ!আমাকে একবার আপনার বুকে মাথা রাখার জায়গা দিবেন?

আহত সিক্ত কন্ঠে কথাটি বলে যুবরাজের রিয়াকশন দেখার জন্য মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল রাজ্য।

মুহূর্তেই কড়া ব্রেকের শব্দে সচকিত হলো রাজ্য।গাড়ি থেমে গেছে,কোনো অস্থিরতা নেই কোনো শব্দ নেই।হালকা জানালার কাঁচ নামানোর কারনে দুই একটা বাদুর আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক কর্ণকুহরে এসে লাগছে।ঘটনা বোঝার জন্য অন্ধ মানুষের ন্যায় এদিক সেদিক মাথা ঘোরালো।হঠাৎই অজানা ভয় মনে জেঁকে বসলো।

“তবে কি যুবরাজ এখানেই তাকে ছেড়ে দেবে?

“চুপটি করে দুদন্ড বসতে পারো না?

আদুরে স্বরে কথাটি বলে রাজ্যের চোখের বাধন খুলে শক্ত করে জাপ্টে ধরলো যুবরাজ।এরপর হাতের বাধন উন্মুক্ত করে রাজ্যের গালে সিক্ত চুমু খেয়ে শুধালো

“এবার খুশি?”

দীর্ঘ সময় বাদে যুবরাজের হাসি মাখা মুখশ্রী দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রাজ্য।তৎক্ষণাৎ শক্ত হাতে যুবরাজের শার্টের কলার খামচে ধরে যুবরাজের চোখে চোখ রেখে রাজ্য শুধালো

“আমি আপনাকে এরেস্ট করবো এই ধারনা কিভাবে মাথায় এলো আপনার?পুরো দুনিয়া আপনার বিপক্ষে গেলেও তো আমি আপনাকে কখনো ভুল বুঝবো না!তবে কিসের এতো ভয় আপনার?

রাজ্যের কান্না জড়িত মুখশ্রী দেখে তোলপাড় শুরু হলো যুবরাজের বক্ষে।না চাইতেও বার বার সে মেয়েটিকে কষ্ট দিয়ে ফেলছে।নিজের হওয়া এতো এতো অপরাধের শাস্তি কিভাবে মওকুফ করবে সে?

রাজ্যের কপালে কপাল ঠেকিয়ে ধীর কন্ঠে যুবরাজ বলে উঠে

“যখন সকলে জানবে তোমার হাজব্যান্ড একজন কিলার তখন প্রশাসন তোমার দিকে আঙ্গুল তুলবে।তোমার চরিত্রে আর প্রফেশনে দাগ লাগবে।আমি আমার শত অপমান মেনে নির্লজ্জের মতো দিব্যি বেঁচে থাকতে পারবো।কিন্তু তোমার দিকে কেউ আড় চোখে তাকাবে সেটা আমি কখনোই মেনে নিতে পারবো না।আমার কুৎসিত ভালোবাসায় তোমাকে জড়িয়ে আমি অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি বউ”

যুবরাজের অনুতপ্তে ভরা মুখশ্রী দুই হাতের আজলায় ভরে রাজ্য বলে উঠে
“যদি আমি আমার প্রোফেশন টাই ছেড়ে দেই তখন?

যুবরাজ আর কথা বাড়ায় না।ঠান্ডায় শুষ্ক হওয়া নিজের দুই ঠোঁট চেপে ধরে রাজ্যের কোমল ঠোঁটে।যুবরাজের উষ্ণ ভালোবাসায় চোখ বুজে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দেয় রাজ্য।
যুবরাজকে কিভাবে সে বাঁচাবে সেই পথ তার জানা নেই।কিন্তু যেকোনো মূল্যে যুবরাজকে বাঁচাতে যে হবেই
দরকার পড়লে যুবরাজকে নিয়ে দূর কোনো দেশে বাসা বাধবে সে।তবুও যুবরাজকে হারাতে দেবে না রাজ্য।

“আমি আপনার অপকর্মে ঘেরা সাম্রাজ্যের রানী হয়েই সারাটা জীবন কাটাতে চাই যুবরাজ!আপনাকে শক্ত হাতে আগলে রাখার দায়িত্ব টা কি আমাকে দেবেন?

যুবরাজের খুশি যেনো আর ধরেনা।রাজ্যকে নিয়ে ভেবে রাখা সকল ধারণা ভুল প্রমাণিত হবার খুশি এটা।নিজের শক্ত বাহুর বন্ধনে রাজ্যকে আবদ্ধ করে রাজ্যের গলায় মুখ ডোবায় যুবরাজ।

“আমার আমিকে পুরোটাই তোমার দখলে দিয়ে দিলাম রানী সাহেবা”

মুহূর্তেই খুশির জোয়ারে ভেসে উঠলো ব্যাথিত দুই হৃদয়।স্কেলেটরে পা চাপতেই তরতর করে স্পিড বাড়তে থাকলো।

“কোথায় যাচ্ছি আমরা?আমি না বললাম আমি দাদা ভাইয়ের কাছে যেতে চাইনা?

অবাক ভীত কন্ঠে কথাটি শুধিয়ে যুবরাজের বাহু খামচে ধরে রাজ্য।

বিগলিত হেসে যুবরাজ বলে উঠে
“তোমার শশুর মশাই একবার দেখতে চেয়েছেন তোমাকে।রাত টুকুন থেকে সকালে তোমাদের বাড়িতে যেও।দুদিন পর আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।

“শশুর বাড়িতে আপনি যাবেন না?

“না”

“কেনো?

“শেরহাম তোমাকে ভালোবেসে বসে আছে যা আমার মোটেও সহ্য হচ্ছে না।তাই ওর সাথে একটু কাবাডি খেলতে যাবো ।

************
কয়েকদিন ধরে রাজ্যের কোনো খুজ খবর না পেয়ে এনি রেজোয়ান চৌধুরীর বাসায় এসেছে।মেইন গেটের সামনে এসে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে কাচুমাচু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সে।কলিং বেল দিবে কি দিবেনা সেই চিন্তা করতে করতেই কেটে গেলো কুড়ি মিনিট।

“ডক্টর রেহান নিশ্চয়ই বাড়িতে আছে।যদি তার সামনে পড়ে যাই তখন কি হবে?

দরজায় পিঠের সহিত হেলান দিয়ে এক মনে সেই চিন্তাই ভেবে চলেছে এনি।হঠাৎই খুট করে খোলে গেলো বিশাল দরজা খানা।তাল সামলাতে না পেরে চিৎ হয়ে পড়ে যেতে নিলো এনি।ভয়ে চোখ মুখ কুঁচকে চিৎকার করে উঠলো

“উড়ি মা রে”

কিন্তু কীয়তখন বাদে কোনো ব্যাথার উপস্থিতি টের না পেয়ে অল্প করে এক চোখ খুলে আশেপাশে নজর বুলালো।

“হে হে পড়িনি,কিন্তু হাওয়ায় ভাসলাম কিভাবে?

কৌতূহল নিয়ে দুই চোখ খুলে পিছনে নজর বুলাতেই রেহানের লাজুক মুখশ্রী দেখে চট করে সরে দাঁড়ালো এনি।

“সরি ডক্টর রেহান।আম রিয়েলি সরি।বুঝতে পারিনি এভাবে দরজা খুলে ফেলবেন।

রেহান কিছুক্ষন ইতস্তত করে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো

“আসলে বাসায় কেউ নেই।রাজ্য কাল আসবে”

কথাটি বলেই মাথা চুলকে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো রেহান।বুকের ধুকপুকুনি শব্দে স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছে না সে।এদিকে লজ্জায় বার বার হাসি এসে যাচ্ছে শুধু।কি এক আজব মুসিবত”

এনি রেহানের অস্বস্তি বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে বলে উঠলো

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাই তাহলে।আসলে কয়েক দিন ধরে ওকে ফোনে পাচ্ছিলাম না তো এজন্য ভাবলাম কোনো সমস্যা কি না।আচ্ছা ও আসলে আমাকে কল করতে বলবেন।আমি আসি”..

ছোট ছোট কদম ফেলে রেহানের দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যেতে চাইলো এনি।কিন্তু হঠাৎই গাম্ভীর্য পূর্ণ মোটা কন্ঠে রেহান শুধালো

“আপনি কি সত্যি সত্যি রাজ্যের কাছে এসেছিলেন মিস এনি রহমান.??

রেহানের এরূপ প্রশ্নে ফ্লোরের সাথে এনির পা আঠার মতো লেগে গেলো।হাজার চেষ্টা করেও আর এক পা ও নড়তে সক্ষম হলো না।লজ্জায় ভয়ে চেহারা খানা ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করলো।

লম্বা লম্বা পা ফেলে রেহান এনির সামনে এসে দাড়ালো।লজ্জায় মুখায়ব অবনত রাখলো এনি।রেহানের জিজ্ঞাসা কৃত প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই।তবে কি উপায় হবে এবার?

হঠাৎই এনির ছোট মুখশ্রী নিজের বৃহৎ হাতের আজলায় ভরে নিলো রেহান।এনির লম্বা ঘন পাপড়ি যুক্ত কুচকুচে কালো চোখে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় রেহান বলে উঠলো

“লজ্জা পেলে আপনাকে অনেক আকর্ষণীয় লাগে এনি”.

সহসাই দুই চোখের পাতা বন্ধ করে চুপচাপ ঠোঁট টিপে দাঁড়িয়ে রইলো এনি।
লাজুক রেহান এক মস্ত সাহসী কাজ করে বসলো।
এনির বড় বড় দুই চোখে নিজের উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে গভীর এক চুমু একে দিয়ে বলে উঠলো

“আমাকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিতে গিয়ে নিজেই যে বেকাবু হয়ে যাচ্ছেন মিস এনি”

কোনো রূপ জবাব দিতে পারে না এনি।থরথর করে তার সর্বাঙ্গ কেপে যাচ্ছে সমানে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে হৃদপিন্ডে ধুপধাপ হাতুড়ি পেটাচ্ছে।ফিনফিনে চিকন ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপছে শুধু।
নিজের হাতের আঙ্গুলির সাহায্যে এনির ঠোঁট টিপে ধরলো রেহান।
এরপর মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো

“আমাকে বেসামাল হতে বাধ্য করবেন না প্লিজ”

রেহানের এমন কথায় চোখ মেলে তাকালো এনি।এর পর জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠলো

“ডক্টর রেহান আমার ভয় করছে।আমি আরেকটু হলে জ্ঞান হারাবো”

“হুঁশে ফেরানোর মেডিসিন যে আমার জানা আছে পুলিশ সাহেবা”!

এনিকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে রেহান।তার প্রশস্ত বুকে মেয়েটি নিতান্তই ছোট তুলতুলে বিড়াল ছানার মতো।এই বিড়াল ছানাটিকেই সে আদর যত্নে পুষে বড় করতে চায়।

“আমার বউ হবেন এনি?

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৪০
#সারিকা_হোসাইন

********
গভীর নিস্তব্ধ হেমন্তের রাত।চৌধুরী বাড়ির প্রত্যেকেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে আরো অনেক আগেই।ঘুম নেই শুধু যুবরাজের চোখে।মনে বেঁধেছে নানান দুশ্চিন্তার পোক্ত বাসা।কোথায় গিয়ে সব কিছুর শেষ হবে কিছুই তার জানা নেই।মরুভূমিতে সামান্য পানির আশায় ছুটে বেড়ানো উন্মাদ বেদুইন বৈকি নিজেকে আর কিচ্ছুটি মনে হচ্ছে না।কাছের মানুষ গুলোকেও আর এক দন্ড বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।কখন কোন দিক থেকে কে এসে ধারালো ছুড়ির ফলা বুক বরাবর বসিয়ে দেবে সেই চিন্তায় যুবরাজ হয়েছে দিশেহারা।চারদিক থেকে নানান বিপদ ধেয়ে আসছে।মুখ ফুটে সেই বিপদের কথা কাউকেই বলা পর্যন্ত যাচ্ছে না।

যুবরাজের বাহুডোরে ঘুম কুমারী শেহজাদীর ন্যায় নিশ্চিন্তে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে রাজ্য।এই মুহূর্তে যুবরাজের বাহুই যেনো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিরাপদ জায়গা মনে হচ্ছে তার কাছে। রাজ্যের ঘুমন্ত নিষ্পাপ ধবধবে ফর্সা মায়াবী মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো যুবরাজ।

“তোমাকে সর্বনাশের কারন জেনেও আমি তোমাকে আমার সাথে জড়িয়েছি।কারন একদিন না একদিন আমাকে শেষ হতেই হতো।”

শ্লেষত্বক হেসে নিজের বাহু থেকে রাজ্যকে সরিয়ে বালিশে মাথা ছোয়াতেই নড়েচড়ে উঠে রাজ্য।একপর্যায়ে ঘুমের ঘোর থেকে বেরিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে যুবরাজকে উদ্দেশ্য করে শুধায়

“এখনো ঘুমাও নি?কি হয়েছে তোমার বলোতো?

যুবরাজ কোনো উত্তর দেয়না কারন এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কি তা তার জানা নেই।অন্যদিকে পাশ ফিরে একটা বালিশ জড়িয়ে চোখ বুজে যুবরাজ।

“এমনি ঘুম আসছে না ,তুমি ঘুমাও।সকালে তোমাকে তোমার বাবার বাড়িতে রেখে আসবো।

যন্ত্রনা আর কষ্টে যুবরাজের কন্ঠনালী দিয়ে স্বর বেরুতে চায়না।তবুও নিজেকে যথেষ্ট সামলে ঝটপট কথা গুলো বলে বেড সাইড টেবিলের উপরে থাকা মৃদু আলোর ল্যাম্প টা নিভিয়ে রাজ্যের থেকে নিজের কষ্টটা লুকানোর প্রয়াস করে।

যুবরাজের এমন অদ্ভুত আচরণে বেশ মনোক্ষুণ্ণ হলো রাজ্য।ইদানিং যুবরাজ তাকে একপ্রকার এড়িয়েই চলছে ধরতে গেলে।কোনো নব দম্পতির মধ্যে এতটা দুরত্ব কি আদৌ সৃষ্টি হয়?ভেবে পায়না রাজ্য।নিজের মনের চিন্তা ভাবনা কে এক পাশে সরিয়ে রেখে যুবরাজকে সাময়িক আনন্দের ভেলায় ভাসাতে যুবরাজকে নিজের দুই উষ্ণ হাতের শক্তিতে তার দিকে ফিরায় রাজ্য।বেলকনি ডিঙিয়ে আসা চাঁদের ফকফকে আলোয় যুবরাজের মলিন মুখখানি সহজেই দৃষ্টি গত হচ্ছে।কোনো কিছু না ঘাটিয়ে নিজের লম্বা সরু আঙ্গুলি দিয়ে যুবরাজের কপাল থেকে থুতনি পর্যন্ত স্লাইড করে শিহরণ জাগাতে চায় রাজ্য।

কিন্তু মাঝ পথে বাধ সাধে যুবরাজ।এই মুহূর্তে তার এসবের মোড মোটেও নেই।যেখানে নিজের জীবনের এক সেকেন্ডের ভরসা নেই সেখানে এসব রঙ্গ তামাশা করার মানেই হয়না।ইদানিং না চাইতেও হুটহাট রাজ্যের উপর আকাশ সম রাগ আর জেদ হচ্ছে যুবরাজের।কিন্তু সেগুলো প্রকাশ না করে নিবিড়ে ধুকে ধুকে নিজেই বিষাক্ত হেমলকের মতো গিলে নিচ্ছে।

যুবরাজের বাধা দেয়া হাত সরিয়ে নাছোড় বান্দা রাজ্য নিজের আবেদনময়ী উন্মাদনায় যুবরাজকে ধরাশায়ী হতে বাধ্য করলো কিছু সময়ের ব্যাবধানেই।
একবার জলে উঠা বারুদ নিজেকে না জ্বালিয়ে যেমন ক্ষান্ত হয়না যুবরাজের হলো সেই দশা।নিজের চিন্তা চেতনা ভুলে রাজ্যের তুলতুলে নরম মাখনের মতো শরীরকে ভোগ দখলে মরিয়া হয়ে উঠলো।মুহূর্তেই দুজন মানব মানবী কঠিন আলিঙ্গনে সুখ সাগরের অথৈ জলে ডুব দিলো।

*********
পাগলের মতো রাজ্যকে সারা শহর চষে খুঁজে যাচ্ছে শেরহাম।যুবরাজ এতো বাধা পেরিয়ে বার বার কিভাবে জয়ী হয় সেটাই শেরহামের বৃহৎ মস্তিষ্কে ঢুকছে না।নিজের বাপের উপর আর যুবরাজের উপর ক্রোধে তার মাথা ফে*টে যাবার উপক্রম।

“দুটোকেই ধরে যদি বড় পাতিলে ক*ষাতে পারতাম তাহলে যদি মনের জ্বালা একটু কমে আর কি”

শেরহামের জানা চেনা সব মানুষকেই একে একে দুনিয়া ছাড়া করেছে যুবরাজ।যাদের সহায়তায় এক তুবড়িতে সকল জিনিস নখের ডগায় এসে হাজির হতো আজ তারা কেউ নেই শেরহামের পাশে।এই ঢাকা শহর শেরহামের কাছে গোলকধাঁধার ন্যায়।যার জন্ম বেড়ে উঠা দুই ই বিদেশের মাটিতে সে কি করে এই জনমানবে পরিপূর্ণ সাপের মতো প্যাচানো শহরের রহস্য খুঁজে বের করবে?

“হা*রা*মজাদা ডক্টর রেহানকে কেনো সেদিন একবারে শেষ করলাম না?গর্তের সাপ একদম ব্ল্যাক ম্যাম্বা হয়ে ফনা তুলেছে”!

নিজের কৃত গাধামোর উপর নিজেরই ধিক্কার আসছে বার বার।গুছানো জিনিস বার বার যুবরাজ এলোমেলো করে দিয়ে চলে যাচ্চে।আর সবকিছু মুখ বুজে ওই সুবহান শেখের জন্য সহ্য করতে হচ্ছে শেরহামের।বুড়ো ভাম টা সম্পদ সম্পদ করে একেবারে মুখের ফেনা ছুটিয়ে ফেলছে।আর যুবরাজের অপরাধের হিসেব?

“সকল প্রমাণাদি হাতে কলমে রাজ্যের অফিসে দিয়ে আসলাম তার কি হলো?মেয়েটা জেনে বুঝে একটা কিলার কে বিয়ে পর্যন্ত করে ফেললো?সব প্ল্যান ভেস্তে দিলো সা*লা”

আর ভাবতে পারেনা শেরহাম।রাগে দুঃখে বার বার তার ব্রেন নিজের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাচ্ছে।
শেষমেশ এক জঘন্য ভাবনা ভেবে কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো শেরহাম।সেই হাসিতে আশেপাশের মানুষ পর্যন্ত আড়চোখে দেখতে লাগলো শেরহাম কে।লোকটাকে নিতান্ত বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না তাদের কাছে।
হাসতে হাসতে নিজের গাড়িতে উঠে ফোন বের করে ডায়াল করলো কাঙ্খিত ব্যাক্তির নম্বর।
রিং হতেই ফোন রিসিভ করে গম্ভীর ভারী কন্ঠে বলে উঠলো।।

“হেই ব্রো ইটস এস্টন স্পিকিং”

বাঁকা হেসে আমোদ জড়ানো কণ্ঠে শেরহাম বলে উঠলো

“শুট হিম”

“এগেইন?

“ইয়েস”
কথা শেষ করে ফোনের লাইন কেটে বাঁকা হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো শেরহাম।

“অনেক দৌঁড় করিয়েছিস, এবার একটু থামতে চাই।নিড সাম রেস্ট”

*********
“আচ্ছা এনি আপনি যদি কখনো জানতে পারেন যে আমি একজন ক্রিমিনাল তখন আপনি কি করবেন?

সন্দিহান কন্ঠে কথাটি বলে শ্যামবর্ন মুখের অধিকারী এনির দিকে উত্তেরের আশায় নজর রাখে রেহান।রিলেশন গাঢ় হবার আগে অবশ্যই কমিটমেন্ট এর প্রয়োজন আছে।যেই ভুল যুবরাজ করেছে সেই একই ভুল সে কখনোই করবে না।কারন যুবরাজের বেঁচে ফেরার হাজারটা পথ আছে কিন্তু তার সকল পথ অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
যুবরাজের কোনো পিছুটান নেই,কোনো ভাবান্তর নেই।যুবরাজ মানুষ হিসেবে খুবই শক্ত মনের অধিকারী।
কিন্তু রেহান?

তার অসহায় বাবা মা সব সময় তার পথ চেয়ে অপেক্ষায় রয়।বারবার তাদের আশাহত করতে চায়না রেহান।এক খেলা কতবার খেলা যায়?অনেক তো হলো।এবার নাহয় খেলার সমাপ্তি টা যুবরাজই টানুক।

রেহানের এমন প্রশ্নে বিগলিত হাসে এনি।এরপর ক্যাফেটেরিয়ার ছোট টেবিলে দুই হাত ভাঁজ করে রেখে রেহানের দিকে কিছুটা ঝুঁকে এসে কৌতুকের স্বরে বলে উঠে

“আমি জানি আপনি একজন ক্রিমিনাল ডক্টর রেহান।কিন্তু এতে আমার কোনো যায় আসে না।প্রত্যেকটা মানুষের ক্রিমিনাল হবার পিছনে একটা না একটা কারণ থাকে।আর আপনার কারণটা আমি জানি”

কথা গুলো এক দমে বলে এক ভ্রু উঁচু করে মুখে বাঁকা হাসির রেখা টেনে ঘাড় কাত করে এক দৃষ্টিতে রেহানের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রইলো এনি।

এনির এমন অদ্ভুত আচরণে বেশ ঘাবড়ালো রেহান।তবুও শক্ত কন্ঠে শুধালো

“কিভাবে জানেন আমি ক্রিমিনাল?

“কারন সিরাজ আর টিটু কে কি*ল করতে আমি নিজ চোখে দেখেছি আপনাকে”

অবাক চোখে এনির পানে তাকিয়ে রয় রেহান।তার কথা বলার ভাষা এলোমেলো হয়ে কন্ঠনালীর কাছে আটকে রইলো।মেয়েটির হাস্যরসাত্মক কথা গুলো একদম বিশ্বাস হচ্ছে না রেহানের।এই টুকুন মেয়ে এতোটা ধুরন্দর কিভাবে?শ্বাস গুলো ও বুকের কাছে থেকে থেকে আটকে ধরছে।

রেহানের এমন অবস্থা দেখে খানিক মেপে হাসলো এনি।এরপর একটা পানির বোতল এর ক্যাপ খুলে রেহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলো

“আরে রিল্যাক্স এতো ভয়ের কিছু নেই।ওরা অনেক দিন আগে থেকেই ওয়ান্টেড আসামি ছিলো।ডিপার্টমেন্ট ওদের প্রতি এতটাই বিরক্ত ছিলো যে দেখা মাত্র শুট এর ওর্ডার ছিলো উপর থেকে”
আমি নিজেই রাজ্যের বিয়ের দিন ওদের পিছু নিয়ে ছিলাম ।কিন্তু আপনাকে এমন ভয়ংকর ভাবে দেখবো স্বপ্নেও ভাবিনি।ইউ আর এ গ্রেট শুটার।আমি তো ওটা দেখে আরো ফিদা হয়ে গেছি আপনার উপর”

এনিকে এই মহুর্তে মোটেও ভরসা করতে পারছে না রেহান।মেয়েটা চূড়ান্ত বুদ্ধিমতী।এসব পুলিশের লোককে একদম বিশ্বাস করা যায়না।

রেহানের ঘাবড়ানো চেহারা দেখে রেহানের শীতল দুই হাত চেপে ধরে এনি বলে উঠলো

“চাইলে আরো সতেরো দিন আগেই আপনাকে এরেস্ট করতে পারতাম।সবটা দেখেও আমি ডিপার্টমেন্ট এর কাছে চেপে গিয়েছি।আপনার বোনের কাছে আমি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ।আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব যে আমি নিজে চেয়ে নিয়েছি ডক্টর রেহান।

**********
সাদাফ চৌধুরীর মুখোমুখি বসে আছেন সুবহান শেখ।দুজনের মুখেই ক্রুর হাসি।কিন্তু কার হাসির কি কারন তা দুজনেরই অজানা।

“শেষমেশ ছেলেকে খু*নী বানিয়েই ক্ষান্ত হলে সাদাফ?

বাঁকা হেসে কথাটি বলে পায়ের উপর পা তুলে সামান্য নড়ে চড়ে বসলেন সুবহান শেখ।

সুবহান শেখের এমন কথায় হো হো শব্দ তুলে হেসে উঠল সাদাফ চৌধুরী।
এরপর চায়ের পেয়ালা হাতে তুলে নিতে নিতে সাদাফ চৌধুরী বলে উঠলেন

“আমার ছেলে তবে তোমার পেছনে এক হাত দিতে পারলো!

সাদাফ চৌধুরীর এমন কটুকপূর্ন কথায় রাগে সর্বাঙ্গে জ্বালা ধরে গেলো সুবহান শেখের।সাদাফ চৌধুরীর হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে চোখ মুখ খিচে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো

“ছেলের জীবনের জন্য মায়া লাগে না?

“আমার কথা বাদ দাও তোমার ছেলের জন্য তোমার আফসোস হয়না?

“কি বলতে চাইছো তুমি সাদাফ?

“বলতে চাইছি পাগল ছেলেটাকে এভাবে মানুষের পিছনে আর কতদিন লেলিয়ে বেড়াবে?

“তোমার ছেলের বিনাশ হলেই পাগলটাকে মুক্ত করবো।

“তার আগে যে তোমাকে আমি জমের দুয়ারে পৌঁছে দেবো মামুজান”

হঠাৎ যুবরাজের কন্ঠ পেয়ে বসা থেকে লাফিয়ে উঠেন সুবহান শেখ।যুবরাজের ক্রুর হাসি যুক্ত হিংস্র নজরে দৃষ্টি রেখে সুবহান শেখ খেঁকিয়ে উঠেন

“বেশি বার বেরো না।তোমাকে বধ করার মানুষ কিন্তু তোমার ঘরেই বাস করে।

“আমাকে বধ করার মতো কারোর জন্মই হয়নি এখনো এই দুনিয়ায় সুবহান বুড়ো শু*য়ো*র ।
অবলিলায় কথাগুলো বলে সাদাফ চৌধুরীর পাশে ধপ করে বসে পড়লো যুবরাজ।
বাপ ছেলের থেকে চূড়ান্ত অপমানিত হয়ে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে চুপচাপ বসে রইলেন সুবহান শেখ।

“দুই মিনিটের মধ্যে আমার সামনে থেকে দূর না হলে হা*ড্ডি মাং*স চ*ট*কিয়ে ক*ফিনে ভরে ছেলের কাছে গিফট হিসেবে পার্সেল করবো মামুজান”

বিগলিত হেসে সুবহান শেখকে কথাটি বলে টেবিলের উপর রাখা নাস্তার ট্রে থেকে একটা বিস্কুট নিয়ে চিবুতে চিবুতে পুনরায় রাগী স্বরে যুবরাজ শুধালো

“এতো দামি বিস্কুট এই কুকুরটাকে কে খেতে দিয়েছে পাপা?এটা ঘিয়ে ভাজা বিস্কুট।কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় কখনো শুনেছো?

আর টিকতে পারলেন না সুবহান শেখ।দাঁত দিয়ে ঠোঁট কা*ম*ড়ে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে হনহন করে দরজার কাছে এসে পায়ের গতি শ্লথ করলেন।এরপর বাজ খাই গলায় বলে উঠলেন

“ভুলে যেওনা যুবরাজ আমার ছেলে একজন ন*র*খাদক”

কথাটি কর্ণপাত হতেই যুবরাজ গলায় তেজ এনে গর্জে উঠা স্বরে বলে উঠলো

“তোমার ছেলেকে গিয়ে কানে কানে বলে দিও আমিও একজন র*ক্ত পি*পা*সু!

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_৪১
#সারিকা_হোসাইন

*********
বেনজির আশফির সামনে স্যালুট ঠুকে তর তরে বাঁশের ন্যায় পেছনে হাত মুড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজ্য।আজকে তার বলার মতো কোনো ভাষা অবশিষ্ট নেই।সকল পথ নর পি*চাশ শেরহাম নামক মানুষটা রুদ্ধ করে রেখেছে।কীয়তখন হম্বিতম্বি করে হাতে থাকা স্থির চিত্র গুলো রাজ্যের সামনে থাকা টেবিলে শব্দ করে ছুড়ে মারলো বেনজির আশফী।শক্ত পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকা রাজ্য হঠাৎ শব্দে কিছুটা কেঁপে উঠলো সেই সাথে অশ্রুসজল হলো চোখ জোড়া।
কিন্তু সেসবে ধ্যান দিলেন না কঠিন হৃদয়ের চীফ বেনজির।গলার সর্বোচ্চ তেজ ঢেলে হুংকার দিলেন

“এক্সপ্লেইন ইট”

রাজ্য বেনজির আশফির থেকে নজর সরিয়ে টেবিলে দৃষ্টি দিতেই যুবরাজের অস্ত্র হাতে র*ক্ত মাখা শরীর আর ক্রুর মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে থরথরিয়ে উঠলো।
মুখে অনেক কিছুই বলতে চাইলো।কিন্তু অজানা কোন শক্তি যেনো আজ তার গলা টিপে কন্ঠনালী রোধ করেছে।খাঁচায় থাকা বন্দি পাখির ন্যায় গুছানো কথা গুলো বুকের ছাতিতে এসে পাখা ঝাপ্টালো।কিন্তু কন্ঠের শক্ত দুয়ার ডিঙিয়ে বাইরে বেরুতে পারলো না।কিন্তু উত্তর হীন কাউকে ছেড়ে দেবার পাত্র বেনজির নয়।
হনহন পায়ে রাজ্যের সামনে দাঁড়িয়ে রক্ত চক্ষু নিয়ে শুধালো

“জেনে শুনে একজন কিলার কে বিয়ে করেছো?হুয়াই?

নির্বাক রাজ্য শুধু উষ্ণ স্রোতের ধারা ঝরিয়ে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো।
রাজ্যের এমন বাক শূন্য অবস্থা বেনজির আসফিকে চরম রাগান্বিত করে তুলল মুহূর্তের ব্যাবধানে।
তপ্ত শ্বাস ছেড়ে গটগট পায়ে নিজের ডেস্কের সামনে গিয়ে টেলিফোন কানে তুলে আঙ্গুল চেপে চেপে কাঙ্খিত নম্বর ডায়াল করলো।

“টিম আলফা ,যুবরাজ শাহিরকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কাস্টুডিতে চাই ।এলাইভ ওর ডেথ”

বেনজির আশফির এমন কথায় বিস্ফারিত নেত্রে তার দিকে তাকালো রাজ্য।সে জানে বেনজির আশফী নিষ্ঠুর।তাই বলে এতোটা?

আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না রাজ্য।হাটু গেড়ে বেনজির আশফির সামনে দুই হাত জোড় করে বলে উঠলো

“এখানে অনেক বড় চক্রান্ত চলছে চীফ।।এই চিত্র গুলো যে আপনাকে পাঠিয়েছে সে ইচ্ছে করে যুবরাজকে ফাসিয়েছে।যুবরাজকে এরেস্ট করবেন না চীফ প্লিজ।প্রয়োজন পড়লে ওকে নিয়ে আমি অন্য কোথাও চলে যাবো।

রাজ্যের অহেতুক কান্নায় বেনজির আশফির শরীরে জ্বালা ধরে গেলো।

“এই মেয়ে পাগল নাকি?এতো বড় একটা ক্রিমিনাল কে কিভাবে ছেড়ে দিতে বলছে?আর যদি ছেড়ে দেই ও দেশের মানুষের সামনে কি জবাব দেবো?

রাজ্যকে পাত্তা না দিয়ে কঠিন কন্ঠে বেনজির আশফী বলে উঠলেন

“যাও নিজের কাজে যাও।আর একটা কথা মনে রেখো নিজের হাজব্যান্ড কে বাঁচাতে গিয়ে গাদ্দার হইও না।মুভ”

আজকে পৃথিবীর সবচাইতে অসহায় নিজেকে মনে হচ্ছে রাজ্যের কাছে।এতটা কঠিন পরিস্থিতি তাকে সামাল দিতে হবে এটা সে স্বপ্নেও ভাবে নি।সে জানে যুবরাজকে নিয়ে তাকে সাফার করতে হবে।তাই বলে এতো দ্রুত?

*********
চতুর এনি সবটাই জেনেছে রাজ্য অফিসে আসার আগেই।যুবরাজ ফেঁসে গেলে রেহানকেও ছাড় দেয়া হবে না এটা সে ভালো করেই জানে।সে জেনে বুঝে নিরপরাধ মানুষকে পুনরায় শেষ হতে মোটেও দেবে না।শেরহাম আর তার বাপের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা এখনো যে বাকি।
ওয়াশ রুমে ঢুকে নিজের প্রাইভেট ফোন বের করে রেহান এর নম্বরে সংক্ষিপ্ত এক বার্তা পাঠালো।এমন ভাবে বার্তা পাঠালো যে, কারো কাছে ধরা পড়লেও কেউ সেটা বুঝতে পারবে না।এই ট্রিক্স অবশ্য রেহান ই তাকে শিখিয়ে ছিলো।কিন্তু এতো দ্রুত এই ট্রিক্স ফলো করতে হবে এটা এনি স্বপ্নেও ভাবেনি।

********
নিজেদের ড্রয়িং রুমে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে শেরহাম।চোখ বুজে যুবরাজের কঠিন পরিণতি ভেবে ভেবে বেশ হাসি পাচ্ছে তার।

অবশেষে বাগে আনা গেলো তবে”
.
কিন্তু সেই হাসি মুহূর্তেই হিংসা আর ক্রোধে রূপ নিলো।মুহূর্তেই নিজেকে চরম বোকা মনে হলো।

“পুলিশ তোকে শাস্তি দিলে তো আমি সেই দৃশ্য উপভোগ করতে পারবো না।কিন্তু আমি যে তোর জীবন ভিক্ষা চাইবার দৃশ্য নিজ চোখে দেখতে চাই”

এদিকে এস্টন কেও বলা হয়েছে শুট করতে।
মহা ক্যাচাল নিজ হাতে বাধিয়েছে সে নিজে।সুবহান শেখ জানতে পারলে চরম কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।

“কি করি এখন?

দ্রুত হাতে পকেট থেকে নিজের ফোন খানা বের করে এস্টন এর নম্বর ডায়াল করলো শেরহাম।অনেক সময় রিং বেজে লাইন কেটে গেলো কিন্তু এস্টন ফোন রিসিভ করলো না।শেরহাম দমে যাবার পাত্র নয় সে একের পর এক সেই নম্বরে কল করতেই থাকলো।

বেশ কয়েক মিনিট পর ফোন ব্যাক করলো এস্টন।

“এভাবে কল করে বার বার বিরক্ত করছো কেনো?টার্গেট আমার সামনে”

টার্গেট সামনে শুনেই লাফিয়ে উঠলো শেরহাম।জিভ কেটে মাথা নাড়িয়ে বলে উঠলো

“হেই প্লিজ ডোন্ট শুট,ডোন্ট শুট।হোল্ড ইট”

এস্টন ভ্রু কুঁচকে সিউর হতে চাইলো

“হোল্ড?আর ইউ সিরিয়াস?

“ইয়েস হোল্ড।”আই ওয়ান্না কি*ল হিম”

আর কথা বাড়ালো না এস্টন।নিজের তাক করে রাখা রাইফেল ব্যাগে ভরে নিজের কর্মস্থলে পা বাড়ালো।

*********
এস্টন চলে যেতেই ক্রুর হাসলো যুবরাজ।চারপাশ থেকে ধেয়ে আসা বিপদ সম্পর্কে সে অবগত হয়েছে বহু আগেই।এরকম ভাড়াটে কি*লার তার একটা লোম ও বাঁকা করতে পারবে না সে বিষয়ে সে নিশ্চিত।কিন্তু সোয়াট পুলিশ?চারপাশ থেকে ঘিরে ফেললে বাঁচার পথ কোথায়?চোরের মতো পালানোর মানুষ সে নয়।ঘটনা মোকাবেলা অবশ্যই করবে সে।কিন্তু তার আগে বাপ ছেলের খেল খ*তম করা চাই।

শেরহামের কুৎসিত চিন্তা ভাবনা মাথায় আসতেই রাগে মস্তিস্ক ফেটে যাবার উপক্রম হলো যুবরাজের।না চাইতেও রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সজোড়ে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো সাদা রঙের দেয়াল বরাবর।কঠিন কংক্রিটের দেয়াল মুহূর্তেই যুবরাজের হাত র*ক্তা*ক্ত করতে ভুললো না।

হঠাৎই নিজের ফোন টা ভোঁ ভো শব্দে কেঁপে উঠলো।স্ক্রিনে তাকিয়ে রেহানের নম্বর দেখে ভ্রু কুঁচকে ফোন কানে তুলতেই রেহান বলে উঠলো

“তোকে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে জীবিত বা মৃ*ত অবস্থায় এরেস্ট করার পরোয়ানা জারি হয়েছে”

রেহানের থেকে কথাটি শুনে যুবরাজের দুই চোখ ক্রোধে ফেটে পড়লো।সব কিছুই নিমিষের ব্যাবধানে হাতের বাহিরে চলে যাচ্চে।কোনটার ই লাগাম টানা যাচ্ছে না।তাহলে তো এবার শেরহামের মুখোমুখি হতেই হয়।

রায়াফকে নিজের গোপন বাড়ির ঠিকানা দিয়ে সাদাফ শাহীর আর সামিনা কে এই বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলার আদেশ দিয়ে খট করে ফোনের লাইন কেটে দিলো যুবরাজ।কাবার্ড থেকে কালো রঙের একটা শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিজের বহু পছন্দের রিভলবার টি কোমরে গুঁজে হাতে একটা হেলমেট নিয়ে নিজের কক্ষ থেকে বেরিয়ে এলো যুবরাজ।

“আজকে হয় বাপ ছেলে এই দুনিয়া ছাড়বে নয়তো সে”

পার্কিং এরিয়াতে এসে নিজের বাইক বের করে স্টার্ট দিয়ে মাথায় হেলমেট পরে নিলো যুবরাজ।গন্তব্য সুবহান শেখের পাপের আস্তানা।

********
দুদিন ধরেই মানুষ ভাড়া করে নিজের বাড়ির সকল পাপ ধুয়ে মুছে সাফ করে একদম চকচকে করে ফেলেছেন সুবহান শেখ।ছেলের কৃত অপরাধের বিন্দু মাত্র চিহ্ন তিনি রাখতে চান না।কোনো মতে যুবরাজের বাপের আর যুবরাজের খেলা সাঙ্গ করতে পারলেই স্বস্তির শ্বাস নেয়া যাবে।নিজের হাতে পিষে পিষে মা*রবেন দুই জনকে।বহুত জ্বালিয়েছে।এতো যন্ত্রনা আর নেয়া যাচ্ছে না।এদের বাপ ছেলের চিন্তায় আজকাল মাঝে মাঝেই প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে তার।বৃদ্ধ বয়সে এতো চাপ মানা যায় নাকি?

নিজ কক্ষে শুয়ে শুয়ে নানাবিধ চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছেন সুবহান শেখ।এমন সময় ধাম করে খুলে গেলো কক্ষের দরজা।হঠাৎ বিকট শব্দে চমকে শোয়া থেকে বসে পড়লেন সুবহান শেখ।

“ক ক কে ?কে ওখানে?

কন্ঠে খানিক রস লাগিয়ে যুবরাজ বলে উঠলো

“আমি তোমার ভাগ্নে মামুজান”

যুবরাজের কন্ঠ পেতেই ধরফড়িয়ে উঠলেন সুবহান শেখ।বালিশের নিচ হাতড়ে নিজের পি*স্ত*ল খানা বের করে যুবরাজের উপর আ*ক্রমন করতে তৎপর হলেন।
কিন্তু যুবরাজের ধুর্ততার সাথে পেরে উঠলেন না।মুহূর্তেই নিজের শক্তিশালী থাবার মতো হাতের সহায়তায় কাবু করে ফেললো সুবহান শেখকে।
অসহায় সুবহান ভীত কন্ঠে ডেকে উঠলেন

“শে শে শেরহাম?

সুবহান শেখের ডাকাডাকি তে হো হো শব্দ তুলে হাসলো যুবরাজ।

“তোর পাগল ছেলে দরজা খুলেই বাইরে চলে গিয়েছে।এই জন্যই তো তোর কাছে কোনো বাধা না ডিঙিয়েই পৌঁছাতে পারলাম।

সুবহান শেখ কে কথা বলার চান্স না দিয়ে মুখে স্কচটেপ আটকে হাত পা বেঁধে কাঁধে নিয়ে নীচে নেমে এলো যুবরাজ।এরপর পার্কিং এরিয়ায় এসে সুবহান শেখের গাড়িতেই উঠে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

গাড়ি স্টার্ট দেবার আগে যুবরাজ পিছনে মাথা ঘুরিয়ে বলে উঠলো

“আমার বাইক তোর বাড়ির গেটের সামনে রেখে যাচ্ছি।যাতে তোর পাগলা কু*ত্তা গন্ধ শুকে শুকে তোকে খুঁজতে চলে আসে।”

বিস্ফারিত নেত্রে সুবহান শেখ শুধু যুবরাজের ক্রুরতা দেখে যাচ্ছে আর উম উম শব্দ করছে।এই বুঝি তার জীবন লীলা সাঙ্গ হলো আজ!

*****―――*****

সারা শহর তন্ন তন্ন করে যুবরাজের সন্ধান চালাচ্ছে সোয়াট আর গোয়েন্দা বিভাগের কয়েকটা টিম।দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেলের পথে কিন্তু যুবরাজের সন্ধান পেতে ব্যার্থ হচ্ছে তারা।এদিকে রাজ্যকে রাখা হয়েছে স্পেশাল নজর বন্দিতে।না তাকে বাড়িতে যেতে দেয়া হচ্ছে না কারো সাথে যোগাযোগ।তার ব্যাক্তিগত সেল ফোন খানাও হেফাজতে নেয়া হয়েছে।মাঝে মাঝে দুই একটা কল এলেও সেগুলোর লোকেশন ট্র্যাক করে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।কিন্তু সারা দিনে যুবরাজের একটা কল বা মেসেজ পর্যন্ত পাওয়া গেলো না।

রাজ্য মনে মনে সৃষ্টিকর্তা কে সমানে ডেকে যাচ্ছে আর অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।বেহায়া নেত্রও যেনো আজ বাঁধ হীন নদীর মতো হয়েছে।যুবরাজের চিন্তায় নিজেকে বদ্ধ উন্মাদ মনে হচ্ছে তার।সব কিছু ভুলে মনে প্রানে একটাই চাওয়া

“যুবরাজ যেনো বেঁ*চে থাকে”

#চলবে